24/04/2025
"চিল্কিগড়ের রঙ্কিনী দেবী"
************************
দেবী "রঙ্কিণী"র কথা প্রথম জানতে পারি সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ছোট গল্পের মাধ্যমে, "রঙ্কিণী দেবীর খড়্গ"এবং রেডিও মিরচি সানডে সাসপেন্স এর গল্পের মাধ্যমে। কিন্তু দেবী রঙ্কিনী এবং "রঙ্কিনী দেবীর খড়্গ" এই গল্পের একটা ইতিহাস বা কিংবদন্তি প্রচলিত আছে।
সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় গল্পটি ছোটনাগপুর মালভূমের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘাটশিলার প্রেক্ষাপটে একটি প্রাচীন জনপ্রিয় লোকদেবীর কিংবদন্তি অবলম্বনে রচনা করেছেন। এখানে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ সেই দেবীর খর্গের মাধ্যমে সেই অঞ্চলের অশুভশক্তির প্রভাব সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
এবার দেখা যাক রঙ্কিনী দেবী আসলে কে ছিলেন এবং কোথায় তাঁর আদি বাসস্থান ছিল। রঙ্কিনী দেবীর আদি বাসস্থান ঘাটশিলা না, তিনি আগে অবস্থান করতেন মেদিনীপুরের গভীর জঙ্গলের খড়গপুর অঞ্চলে এবং সেখানেই আদিবাসী সাঁওতাল এবং বিভিন্ন উপজাতির উপাস্য দেবী ছিলেন। ইতিহাস গবেষকদের মতে সেই অঞ্চলের সর্দার রাজারা অনেক সময় দেবীর সামনে শত্রুদের মুন্ডচ্ছেদও করতেন। এছাড়া, কিংবদন্তি এই যে দেবী সেখানে নিত্য নরবলি না পেলে তুষ্ট হতেন না এবং এভাবে নরবলির মাধ্যমে দেবীকে তুষ্ট করা হতো। কিন্তু একদিন এক বিধবার একমাত্র পুত্রকে বলি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে সেই বিধবা সেখানকার পীরের কাছে কান্না করে তার দুঃখের কথা জানান। নর বলি নিয়ে দেবী রঙ্কিনী এবং পীর লৌহানির মধ্যে যুদ্ধ হয় এবং দেবী পরাজিত হয়ে ধল ভূমের জঙ্গলে চলে আসেন। তারপর ধল রাজারা দেবীকে প্রতিষ্ঠিত করে নরবলির ব্যবস্থা করে দেন। এই অঞ্চলের রাজাদের রাজানুগ্রহে তিনি সেখানকার রাজাদের প্রতিষ্ঠাত্রী দেবী রূপে বিরাজ করেন। ধল ভূমের পার্শ্ববর্তী মেদিনীপুর ঝারগ্রাম মধ্যবর্তী অঞ্চল চিল্কিগড় নামে বিখ্যাত সর্দার রাজাদের আরেক দেবী ছিলেন মূলত আদিবাসীদের বন দেবী, পরবর্তীকালে বনদুর্গা হয়ে কনক মন্ডিত শোভা প্রাপ্তা হয়ে কনক দুর্গা নাম ধারণ করেছেন। সেখানকার বিখ্যাত দোলুং নদীর পাশে পাহাড়ের উপর কনক দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠিত। পাশাপাশি দুই দেবী এই অঞ্চলে অবস্থান করছেন এবং রাজা অনুগ্রহে দুই দেবীর এখানকার অধিষ্ঠাত্রী দেবী এবং তার মধ্যে কনক দুর্গা রাজবাড়ীর কুলদেবী হিসেবে পূজিতা হয়ে আসছেন। এখানে কনক দুর্গার জাঁকজমক এবং জনপ্রিয়তায় রঙ্কিনী দেবীর মহিমা কিছুটা ম্লান হয়ে আছে।
প্রকৃতিপ্রেমী এবং অনুসন্ধিৎসু ব্যাক্তিরা যদি সেই গভীর নির্জন আরণ্যে অবস্থিত দোলুং নদীর পাড়ে কনক দুর্গার মন্দির এবং রঙ্কিনী দেবীর দর্শন করেন তাহলে হয়তো আজও কয়েক শত বছরের আগের ইতিহাস তাদের মনে জাগরুক হয়ে উঠতে পারে। 🙂🙂
(বি. দ্র. এখানকার রাজবংশের বংশপরিচয় নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে দ্বিমত আছে)