03/11/2023
'আর পারছি না', 'সময় কি কঠিন', 'হতাশ লাগছে', 'হে ভগবান', 'কেন এমন হল আমার সঙ্গে' ইত্যাদি, ইত্যাদি। জীবনে চলার পথে হতাশ হয়ে যাওয়া, হতাশ হতে চলা মানুষের সংখ্যা আমাদের চারপাশে কম নয়, যাদের মুখ থেকে প্রায়শই বেরিয়ে আসে এসব শব্দবন্ধ। দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশের বাতাস। লড়তে লড়তে ক্লান্ত হয়ে হেরে যেতে বসেছেন যাঁরা, তাঁদের উদ্দেশে বলা, যদি এই প্রতিবেদন আপনি/আপনারা দেখছেন/পড়ছেন, প্লিজ মন দিয়ে পড়ুন একটিবার। আপনার হতাশার 'হত' হয়তো সরে যাবে দূরে। অন্ধকারের ভিতর থেকে আবার প্রাণ ফিরে পাবে আশা। সূর্য উঠবে নতুন। মুখ আর মন একসঙ্গে বলে উঠবে, জীবন তুমি কত সুন্দর।
সুরজ তিওয়ারি (Suraj Tiwari)। যার লড়াই উপলব্ধি করার পর এটা মনে না হয়ে যায় না যে কত তুচ্ছ আমাদের কষ্টগুলো, তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে তো যাওয়াই যায়। সুরজ। পা নেই। দুটো হাত আছে বটে, তবে না থাকাই। মুখে লেগে আছে সবসময়ের প্রশান্তির, যুদ্ধজয়ের একটা হাসি। যার কাছে জীবনের যে কোনও চ্যালেঞ্জ সামনে দাঁড়াতে ভয় পাবে।
শুয়ে নয়, ঘুমিয়ে নয়, রাত জেগে স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, তাই আজ তিনি বেজায় খুশি। আর UPSC-র স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন দুহাজার উনিশ সালে। কিন্তু তার আগে সুরজের সঙ্গে যে ঘটনাটা (Train Accident) ঘটে গিয়েছিল, তার পর আর পাঁচটা মানুষের আর বোধহয় ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু হেরে যাননি সুরজ।
ফ্ল্যাশব্যাক
২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি। এক ট্রেন দুর্ঘটনায় বদলে গিয়েছিল চারপাশের সবকিছু। পা হারিয়ে, হাত হারিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইটাই তখন ছিল সবকিছু। মে মাসে আসে আরও এক ধাক্কা। মারা যান সুরজের বড়দা। প্রকৃত অর্থেই কঠিন পরিস্থিতি তখন। সুরজের কথায় "চারিদিকে অন্ধকার লাগছে। রাস্তা যেন দেখতে পাচ্ছিলাম না।" আর এখন আলোই আলো।
লড়াইটা অবশ্য এখানেই শুরু নয়। দর্জির কাজ করে অতিকষ্টে সংসার চালাচ্ছেন বাবা। আর নুন আনতে পান্তা ফুরনো সেই সংসারে স্বপ্ন দেখা এক কিশোরের লড়াইটা যে কত কঠিন সুরজের কথায় ফুটে উঠছিল তা। ক্লাস টুয়েলভে পড়েছেন স্থানীয় স্কুলে। CBSE বোর্ড। অবাক করার মতো তথ্য দিয়ে সুরজ জানিয়েছেন, ক্লাস টুয়েলভে পাশ করেননি তিনি। পরে ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশ থেকে বোর্ডের পরীক্ষা দেন ও পাশ করেন। তবে সংসারের অবস্থা দেখে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কাজ নিয়ে নেন বেসরকারি সংস্থায়। দিল্লিতে। চাকরি করছিলেন। ছোট ছোট শখ ছিল। সংসারে সাহায্য করার আর্তি ছিল। সব মিলিয়ে যা বেতন পাচ্ছিলেন, খুশি ছিলেন, জানিয়েছেন সুরজ।
২০১৭ সালে ট্রেন দুর্ঘটনার পর পুরোপুরি বদলে যায় জীবন। একবছর বাড়িতেই ছিলেন সুরজ। কোনও কিছুই করতে পারতেন না তিনি। কারো সাহায্য ছাড়া। সব অন্ধকার ছিল। তারপর ভেবে নেন, ছোট ঘটনাই তো। হেরে যাওয়া কেন ? শুরু করেন আবার। প্রথমে স্নাতক হোন। JNU থেকে। আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু। UPSC-র স্বপ্ন দেখাও এভাবেই। JNU - থেকেই UPSC-র কথা জেনেছিলেন তিনি। তাঁর কাজ, তিনি করবেনই। একথাটা বারংবার নিজেকে বলেছেন। পাঁচবছরের চেষ্টা। আর সবকিছু ভুলে গিয়ে লেগে থাকা। তারই ফল আজকের এই ফল। UPSC -তে ৯১৭ ক্রমতালিকায় রয়েছেন। এতেই খুব খুশি সুরজ। তবে প্রথমবারের চেষ্টায় নয়। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় পেয়েছেন। আর সুরজ কতটা আত্মবিশ্বাসী আর খুশি, তা বলে দেয় তাঁর মুখের হাসিই।
©ABP ANANDA