22/10/2025
দেবী মনসা, যিনি সর্পের দেবী (সর্পদেবী) হিসেবে পরিচিত, তাঁকে ভক্তিভরে পূজা করার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রধানত বাংলা, আসাম এবং পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর পূজা প্রচলিত।
মানুষের মনসা ঠাকুরকে পূজা করার প্রধান কারণগুলি হলো:
১. সর্পভয় থেকে মুক্তি ও রক্ষা: মনসা হলেন সাপের দেবী। বর্ষাকালে, বিশেষত গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক সমাজে, সাপের উপদ্রব খুব বেড়ে যায়। মানুষ সাপের কামড় বা সর্পভয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেবী মনসার আরাধনা করেন। বিশ্বাস করা হয়, তিনি তুষ্ট থাকলে ঘরে সাপের উপদ্রব হয় না এবং সাপের কামড়েও অনিষ্ট হয় না।
২. সমৃদ্ধি, উর্বরতা ও সন্তান কামনা: অনেক লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, দেবী মনসা উর্বরতার দেবী। তাঁকে পূজা করলে কৃষিকাজ ভালো হয়, শস্য ভালো ফলে। এছাড়া, সন্তান লাভের আশায় বা সন্তানের মঙ্গল কামনায়ও বহু মানুষ নিষ্ঠাভরে দেবীর পূজা করেন।
৩. রোগ নিরাময়: প্রাচীনকালে সাপের বিষ নিরাময়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ, বিশেষত জলবসন্ত বা পক্স জাতীয় চর্মরোগ নিরাময়ের দেবী হিসেবেও মনসাকে পূজা করা হতো। তিনি আরোগ্য দান করেন বলে বিশ্বাস।
৪. পৌরাণিক মাহাত্ম্য (বেহুলা-লখিন্দরের উপাখ্যান): মনসা পূজার মাহাত্ম্য সবচেয়ে বেশি প্রচারিত হয়েছে বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনীর মাধ্যমে। চাঁদ সওদাগর মনসার পূজা করতে অস্বীকার করলে দেবী তাঁর ছয় পুত্রকে সর্পদংশনে হত্যা করেন। শেষে কনিষ্ঠ পুত্র লখিন্দরকেও বাসরঘরে কালনাগিনী দংশন করে। লখিন্দরের স্ত্রী বেহুলা তাঁর মৃত স্বামীকে নিয়ে ভেলায় ভেসে স্বর্গে যান এবং নিজের সতীত্ব, ভক্তি ও কঠোর তপস্যার জোরে দেবতাদের সন্তুষ্ট করেন। এর ফলেই মনসা স্বর্গে দেবীর মর্যাদা পান এবং বেহুলা তাঁর স্বামী ও ভাইদের ফিরে পান। বেহুলার এই একনিষ্ঠ ভক্তি (ভক্তি) মনসা পূজাকে মহিমান্বিত করেছে। মানুষ এই ভক্তির আদর্শকে অনুসরণ করেই দেবীর পূজা করেন।
মূলত শ্রাবণ মাসে নাগপঞ্চমী তিথিতে বা শ্রাবণ সংক্রান্তিতে (যা মনসা পূজার প্রধান দিন) দেবীর পূজা সবচেয়ে বড় আকারে অনুষ্ঠিত হয়।