Koch-Rajbongshi Youth

Koch-Rajbongshi Youth News | Viral Videos | Comedy | Songs News & Updates of Koch-Rajbongshis Of Bihar!

07/09/2025
05/09/2025

কোচ জনগোষ্ঠীর জাতিগত অস্তিত্ব ও পরিচয় সংকট।

কোচ- রাজবংশী কিংবা বর্মন জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশর ইতিহাসের রংপুর বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী জনগোষ্ঠী। স্থানীয় ভাবে পলিয়া নামত সমধিক পরিচিত এই জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য কিংবা আলাদা জীবন ব্যবস্থা বিশ্লেষন করলেই আদিবাসী হিসেবে এই জনগোষ্ঠীর বৈচিত্রতা বাঙ্গালী দের থেকে সম্পুর্ণ আলাদা। রংপুর বিভাগের নৃতত্ত্ব বিশ্লেষন করলে, এই জনপদে কোচ-রাজবংশীদের অবস্থান একদম স্পষ্ঠ।

কোচ-রাজবংশী-বর্মন এই তিনটা শব্দ আলাদা হলেও, এর মুল একই সুত্রে সীমাবদ্ধ। অনেকে তিনটা আলাদা জাতিসত্ত্বা মনে করলেও, আসলে এই তিনটা শব্দ দিয়ে একটা কমিউনিটিকেই বুঝায়। যার মুল ভিত্তি কোচ। ব্রিটিশ শাসনামলে অর্থাৎ ১৯০০ সনের পুর্বে রাজবংশী শব্দটির প্রচলন ছিল না। ২০১০ সালে বর্মন সম্প্রদায় হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৮০ সনের ব্রিটিশ দের করা আদমশুমারীতে এই অঞ্চলের কোচ জাতির অবস্থান স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। পরবর্তীতে ১৯১২ সালে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার নেতৃত্বে, রংপুর বিভাগের বর্তমান পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জের করতোয়া নদীর তীরে ক্ষত্রিনায়ন আন্দোলনের মাধ্যমে রাজবংশী শব্দটির গোড়াপত্তন ঘটে। মুলত, উচ্চ বর্ণীয় হিন্দুদের বর্ণপ্রথার বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয়ে কোচ জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে পৈতা ধারন করে ক্ষত্রিয় বর্ণে অন্তভুক্ত করার একটা প্রয়াস পঞ্চানন বর্মা করেছিলেন। তবে বড় ব্যাপার, দরিদ্র আর অশিক্ষিত হওয়ার কারনে এই ক্ষত্রিনায়ন আন্দোলনের মাধ্যমেও রংপুর বিভাগের কোচেরা নিজেদের ক্ষত্রিয় পরিচয় দিলেও খুব বেশি উপকার হয়নি। বরং তাড়া তাদের পরিচয় সংকট তৈরি করে নিজেদের অলিখিতভাবে বাংগালী বানিয়ে ফেলেছে। ( যেই উদ্দ্যেশ টা ছিল ততকালীন বাংগালী হিন্দুদের)

আপনারা জেনে অবাক হবেন, এই পঞ্চানন বর্মার অধিকাংশ কার্যক্রম রংপুরে সংঘটিত হলেও বর্তমান রংপুর বিভাগে বসবাসরত ৭-৮ লাখ কোচ রাজবংশী এর মধ্যে হাতে গোনা কিছু মানুষ ছাড়া কেউ ই পঞ্চানন বর্মাকে চিনেন না। বর্তমান প্রজন্মের তো কোন ধারনাই নেই। যদিও ক্ষত্রিয় সমিতির কিছু বায়োজ্যষ্ঠ প্রতিবছর দেবীগঞ্জের করতোয়া নদীর তীরে একটা অনুষ্ঠান করে এবং এখনো ক্ষত্রিয় সমিতির রংপুর বিভাগে অনেক বড় প্রোপার্টি রয়েছে। আমি জানি না, এই প্রোপার্টি এর দায়িত্বে কারা রয়েছে কিংবা তারা আদো রাজবংশী জনজাতির জন্য কোন কিছু করে কিনা। প্রত্যক্ষভাবে, আমার মনে হয়েছে রংপুরের ক্ষত্রিয় সমিতির বর্তমান কোন ভুমিকাই এই রাজবংশী জনগোষ্ঠীর প্রতি নেই। বাংলাদেশের ক্ষত্রিয় সমিতির বছরে, একটা অনুষ্ঠান আয়োজন ছাড়া তেমন কোন কাজ কখনো চোখে পড়েনি। পঞ্চানন বর্মা তো দুরের কথা, ক্ষত্রিয় সমিতির নাম পর্যন্ত অনেকে শুনেনি।

তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষত্রিয় সমিতির কার্যক্রম অনেক সক্রিয়। তারা নানা রকম কার্যক্রম পরিচালনা করে। ঠাকুর পঞ্চানন বর্মাকে নতুন পুরাতন সব প্রজন্মই চিনে। রাস্তা ঘাটে পঞ্চানন বর্মার মুর্তি দেখতে পাবেন। অনেক প্রতিষ্ঠান উনার নামে রয়েছে।

পাকিস্তান শাসনামলে ও তার পূর্বে নির্বাচনে তফসিল জাতি হিসেবে এই কোচ-রাজবংশীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ছিল। তার মধ্যে একটা উদাহরণ হলো- তৎকালীন বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা। আরো অনেক আসন তফসিল জাতির জন্য সংরক্ষিত ছিল। কোচ-রাজবংশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অনেক S.C. (তফসিল জাতি) নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাও জেলায় তারও পূর্বে আমাদের কোচ রাজ্যের কোচ রাজাদের অনেক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান/স্থাপত্য এখন দৃশ্যমান।

একটু ঘাটাঘাটি করলেই, এ অঞ্চলের কোচ-রাজবংশীদের ইতিহাস খুব সহজেই আপনারা পেয়ে যাবেন।

হতাশাজনক ব্যাপার হল, ভারত থেকে যেভাবে পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে- ঠিক একই ভাবে ধর্মীয়/সামাজিক/রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক সকল পরিস্থিতির শিকার হয়ে ক্ষত্রিনায়ন আন্দোলন এর মাধ্যমে কোচ জনগোষ্ঠীর মানুষেরা রাজবংশী ক্ষত্রিয় থেকে বর্তমানে বাঙ্গালী হয়ে গেছে।

ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার উদ্দ্যেশ্য সময়ের প্রেক্ষিতে অবশ্যই অনেক প্রশংসনীয় ছিল। কিন্ত, সেই উদ্দ্যেশ্যে সফল হয়নি। বরং এই কোচ-রাজবংশীদের আজকের এই পরিচয় সংকট ও অস্তিত্বহীন হওয়ার পিছনে সেই উদ্যেগ টা অনেক ভুল ছিল। শুধু যে বাঙ্গালী পরিচয় দেয় এমন না, অসংখ্য কোচ-রাজবংশী তাদের ধর্মীয় মতাদর্শ পরিবর্তন করে বিভিন্ন সময় ধর্ম পরিবর্তন করেছে।

আর এটা হওয়ার ই কথা ছিল। কারন ইতিহাস বলে, কেউ যদি তার শেকড়কে তার পূর্বপুরুষদের অস্বীকার করে, তাহলে একদিন তার পরিণতি এমন ই হবে। আপনি আপনার শেকড়কে অস্বীকার করলে, পরিচয় দিতে দ্বিধা বোধ করলে আপনি একদিন পরিচয় সংকটে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক।

বিশ্বসিংহ, বীর চিলারায়ের মত কোচ রাজাদের, কোচ জনগোষ্ঠীর গৌরবজ্জ্যল ইতিহাসকে যারা অস্বীকার করেছে, মুছে ফেলতে চেয়েছে। সময়ের বিবর্তনে আজ তারাও বিলুপ্তির পথে।

দেখুন, একদম সহজ ভাবে বলি। আমি কোচ। আমি আদিবাসী। আমার পূর্ব পুরুষের ইতিহাস আমি অস্বীকার করতে পারিনা। কোনদিন করবো ও না। এতে কেউ যদি আমাকে বলে- আমি নিচুজাত। আমি বর্ণীয় ভাবে ছোট, তাতে আমার কিছু এসে যায় না। কারন, আমাকে নিচুজাত বানানোর সক্ষমতা পৃথিবীর কারো নেই। এক বীর চিলারায়ের ইতিহাস ঘাটলেই সেটা স্পষ্ট হয়।

যারা অন্যের অযৌক্তিক,মনগড়া স্বিদ্ধান্ত বা কথার ভিত্তিতে নিজের পিতাকে- নিজের পূর্বপুরুষদের অস্বীকার করে তাড়া হলো কাপুরুষ।

রংপুর বিভাগের কোচ-রাজবংশীদের পজিটিভ দিক হলো, এত শত বিবর্তনের পরেও এখনো সাধারণ কোচ-রাজবংশী গ্রামগুলোতে আপনি সেই পুরনো জীবনব্যবস্থা, নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য খুজে পাবেন। একটি পৃথক জাতিগোষ্ঠী হিসেবে তাদের স্বকীয়তা, তাদের অস্তিত্ব তাড়া এখনো ধরে রেখেছে।

শুধুমাত্র না জানার কারনে কিংবা ভুল ইতিহাসের সেই মিথ্যা আদর্শকে ধারন করার কারনেই তাড়া তাদের জাতিগত অস্তিত্ব, জাতিগত পরিচয় উপস্থাপন করছে না।

তবে আমাদের বাংলাদেশ কোচ-রাজবংশী-বর্মন সংগঠনের মাধ্যমে যে বিপ্লব শুরু হয়েছে, নিজেদের জাতিগত অস্তিত্ব রক্ষার্থ ও শেকড়ের সন্ধানে বর্তমান শিক্ষিত তরুন প্রজন্ম যেভাবে লড়াই শুরু করেছে তার সফলতা বলতে গেলে নিশ্চিত। শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।

আপনারা জানেন সত্য কখনো চাপা থাকে না, ইতিহাস কখনো কেউ বদলাতে পারেনা। জাতিগত অস্তিত্ব কেউ নিশ্চিহ্ন করতে পারেনা। যদি একটি জাতির সবাইকে হ-ত্যা করে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়, তবেই সেটা সম্ভব।

২০১৬ সাল থেকে শেকড়ের সন্ধ্যানে, জাতিগত অস্তিত্ব রক্ষার্থে, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বাংলাদেশের কোচ-রাজবংশী জনগোষ্ঠীর এক ঝাক তরুন প্রজন্মের এই বাংলাদেশ কোচ-রাজবংশী-বর্মন সংগঠনের মাধ্যমেই তাদের জাতিগত অস্তিত্ব ও পরিচয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আদিবাসী হিসেবে অধিকার নিশ্চিত করবে এবং সেটা করতেই হবে।

যে ষড়যন্ত্র, যে বৈষম্য, যে বঞ্চনার শিকার আমাদের মানুষেরা এতদিন হয়ে এসেছে, তার চুড়ান্ত সমাপ্তি এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

আমাদের নব প্রজন্মের উচিত নিজেদের সম্পর্কে, নিজেদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে জানা, সেই ভয়ংকর ইতিহাস সম্পর্কে জানা। রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক ভাবে নির্যাতন, শোষন ও বৈষম্য করে নানা ভাবে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করে আমাদের কোচ জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব কে কিভাবে ধবংস করার চেষ্ঠা করা হয়েছে, তার কারন অনুসন্ধান করা।

এটা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের কর্তব্য।

- বকুল চন্দ্র বর্মন।

03/09/2025
29/08/2025
29/08/2025

Address

Kishanganj

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Koch-Rajbongshi Youth posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Koch-Rajbongshi Youth:

Share