23/08/2025
ইতিহাসে উপেক্ষিতা বীরাঙ্গনা বিপ্লবীদের জীবনালেখ্য গ্ৰন্থ প্রকাশ অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়া :- আগষ্ট মাস মানেই স্বাধীনতার মাস।আগষ্ট মাস এলেই ভারতবাসীর হৃদয় আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির ইতিহাস লেখা হলেও সেই ইতিহাসকে পূঙ্গাঙ্গ বলা যায় না।যে ইতিহাস শুধুমাত্র পুরুষদের অগ্ৰাধিকার দেয়, সেই ইতিহাস অসম্পূর্ণ। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামে পুরুষরা যেমন এগিয়ে এসেছেন - তেমন পুরুষদের এগিয়ে দিয়েছেন বীরাঙ্গনারা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষদের সঙ্গে নারীদের ও অবদান সমান। তবু ও ভেবে দেখার অবকাশ পাই নি , পরাধীনতার অভ্যস্থ মানুষ, স্বাধীনতার মর্ম কতটুকু উপলব্ধি করছি। যাঁদের রক্তঝরা আত্মত্যাগের সংগ্ৰামে যতটুকু স্বাধীনতা পেয়েছি, তাঁদের কেউ বেঁচে আছেন কিনা, থাকলেও কোথায়, কেমন,কী অবস্থায় তাঁদের খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব ও করি নি।সংগ্ৰামী পুরুষদের সঙ্গে নারী বীরাঙ্গনা, বিপ্লবী বঙ্গবালারা কতখানি আত্মত্যাগ, লাঞ্ছিতা,অপমানিতা,নারীত্ব খুইয়ে ও সংগ্ৰাম থেকে তাঁরা কখনও বিচ্যুত হন নি।এত সত্বেও ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁদের সবার স্থান হয় নি। অনেক বীরাঙ্গনা বিপ্লবী বঙ্গবালারা শেষ জীবনে ও স্বাধীন বাংলায় উপেক্ষিতা - অবহেলিত থেকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁরা স্থান না পেলেও তাঁরা রয়েছেন সবার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে । থাকবেন আগামী প্রজন্মের অন্তরে জীবন্ত উজ্জ্বল নক্ষত্রসম রুপে। ইতিহাসে উপেক্ষিতা বীরাঙ্গনা বিপ্লবী বঙ্গবালাদের ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দিতে এগিয়ে এসেছেন " ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশন " নামক এক পরিবেশ রক্ষাকারী সংগঠনের সদস্য - সদস্যাও স্বেচ্ছাসেবকরা। তাঁদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাসে উপেক্ষিতা বীরাঙ্গনা বিপ্লবী বঙ্গবালাদের ইতিহাস বর্তমান প্রজন্ম ও আগামী প্রজন্ম, গবেষকদের কাছে তুলে ধরতে " ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী " ঐতিহাসিক গ্ৰন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা মন্ত্রী, নাট্যব্যক্তিত্ব, অভিনেতা ব্রাত্য বসু। ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কলকাতার ' বিদ্যাসাগর মেট্রোপলিটন কলেজ ', ' ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশন ' -র উদ্যোগে কলকাতা মেট্রোপলিটন কলেজ এ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হল ঐতিহাসিক গবেষণাধর্মী গ্ৰন্থ সংকলন " ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামে নারী" ।গ্ৰন্থ প্রকাশে বিশেষ সহযোগিতা করেছেন ' বঙ্গভূমি ' সাহিত্য পত্রিকা ও ' বিদ্যাসাগর মেট্রোপলিটন কলেজ।অরিজিৎ মিত্র কতৃক বর্ণাক্ষর সাহিত্য প্রকাশন থেকে বিদ্যাসাগর মেট্রোপলিটন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মহিতোষ গায়েন ও ড . অর্ণব দত্ত - র যুগ্ম সম্পাদনায় এই ঐতিহাসিক গবেষণাধর্মী গ্ৰন্থ " ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামে নারী " প্রকাশিত হল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. মধুপর্ণা রায় চৌধুরী, ইতিহাস গবেষক ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সর্বজিৎ যশ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপিকা ড. পল্লবী মিত্র,সিটি কলেজ কলকাতার উপাধ্যক্ষ ও সহ সভাপতি ওয়েবকুপা রাজ্য কমিটির ড. মহিতোষ গায়েন, ব্রিগেডিয়ার তুষার কান্তি মুখার্জী , কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার গৌতম দাস , শিক্ষক ও সাহিত্যিক নিমাই চন্দ্র ঘোষ ,' বঙ্গভূমি ' সাহিত্য পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক ড. সহদেব দলুই , শিক্ষক রাজদূত সামন্ত, মহাশ্বেতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ কুমার প্রামাণিক, দেব নারায়ন দাস,দীপক কুমার মৃধা,ড. দীপ্তি মুখার্জী সহ বিশিষ্টজন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যাসাগর মেট্রোপলিটন কলেজের অধ্যক্ষ ড. অর্ঘ্য সরকার। এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের প্রায় ১৮ টি জেলা থেকে শতাধিক সাহিত্য প্রেমী উপস্থিত ছিলেন। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে ৩০ জন কবির স্বরচিত কবিতা পাঠের মাধ্যমে কবি সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হল। এই ঐতিহাসিক ও গবেষণাধর্মী গ্ৰন্থে ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাসে উপেক্ষিতা বীরাঙ্গনা বিপ্লবী বঙ্গবালাদের জীবনালেখ্য লেখা ৪২ জন লেখককে উত্তরীয়,মানপত্র, মেমেন্টো ও একটি করে ' ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামে নারী ' প্রকাশিত গ্ৰন্থ দিয়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ' ফিউচার ফর নেচার ফাউন্ডেশন ' এর সভাপতি পরিবেশ বিজ্ঞানী ড.স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, ' ৪২ জন লেখকের প্রবন্ধে সমৃদ্ধ ২৭২ পৃষ্ঠার এই গ্ৰন্থে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের অবদানকে বিশেষ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে " । সংগঠনের সম্পাদক শুভ্রদীপ ঘোষ বলেন," আমরা এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করলাম। স্বাধীনতার ইতিহাস সাধারণ নারীদের আত্নবলীদানকে প্রায়শই অদৃশ্য করে রাখা হয়েছে।আমরা চাই এই ঐতিহাসিক ও গবেষণাধর্মী গ্ৰন্থের মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রী ও গৃহবধূ সহ সাধারণ মানুষ সেই অজানা কাহিনী গুলো জানুক " । ড. মহীতোষ গায়েন বলেন, " ' স্বাধীনতা সংগ্ৰামে নারী ' এই ঐতিহাসিক ও গবেষণাধর্মী গ্ৰন্থের প্রথম খন্ড প্রকাশ হল। খুব শীঘ্রই আমরা লেখকদের অমূল্য লেখনী সমৃদ্ধ দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ করব " । এই দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশের জন্য লেখকরা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই অনুষ্ঠান ঘিরে উম্মাদনা ছিল তুঙ্গে। ঐতিহাসিক,গবেষক, লেখক, কবি, ইতিহাস অনুরাগীদের উপস্থিতি ছিল প্রশংসনীয়।