25/04/2025
বর্ধমান, এপ্রিল ২৫ঃ
আদালতে নির্দেশ কার্যকর করার নাম করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও এলাকায় ‘গুন্ডা’ বলে পরিচিত ব্যক্তিদের নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢোকার যৌক্তিকতার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষজন এবং স্থানীয় বুদ্ধিজীবীরা।
জেলা আদালতের নির্দেশকে কার্যকর করতে এদিন গোবিন্দপুর শেফালী সমাজ সেবা সমিতির ভিতর বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং স্থানীয়ভাবে গুন্ডা বলে পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে ঢোকেন সমিতির পূর্বতন সম্পাদক সুভাষ ঘোষ ও তার সঙ্গীরা।
বিশাল পুলিশ বাহিনী দেখে স্বাভাবিকভাবেই বিভ্রান্ত হয়ে, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক মন্ডলীরদের একটা বড় অংশ। পঠন-পাঠনে ব্যাঘাত ঘটে। যদিও যে আদালতের নির্দেশকে কার্যকর করতে এদিন পুলিশ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকেছেন সুভাষ বাবু ইতিমধ্যেই সেই আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার শুনানি রয়েছে আগামী ২৮ তারিখ।
হাইকোর্টের নির্দেশ বা পর্যবেক্ষণ এর আগেই এইভাবে পুলিশ নিয়ে ঢোকার বিষয়টি মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না স্থানীয় ব্যক্তিরাও।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, সুভাষ ঘোষ, যিনি পূর্বে গোবিন্দপুর শেফালী সমাজ সেবা সমিতির সম্পাদক ও সদস্য হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন, তিনি পুর্ব বর্ধমান জেলার জেলা বিচারকের আদালতে (TS 2/2025 নং) একটি মামলা দায়ের করেন। দাখিল করা ‘মিথ্যা তথ্য এবং ভুয়ো নথির’ভিত্তিতে আদালত ঘোষকে সমিতির চত্বরে প্রবেশের অনুমতি দেন। এর পরেও সুভাষ ঘোষ সিভিল প্রসিডিউর কোডের ১৫১ ধারা অনুযায়ী আরেকটি আবেদন দাখিল করেন, যেখানে আদালত পুনরায় সেই ভুয়ো নথির উপর ভিত্তি করে তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন।
সেই নির্দেশের উপর ভিত্তি করে এদিন হঠাত করে বিশাল পুলিশ বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে কলেজে এসে হাজির হন তিনি।
অন্যদিকে গোবিন্দপুর শেফালী সমাজ সেবা সমিতির সভাপতি জানিয়েছেন যে, সুভাষ ঘোষকে অবৈধ এবং আইন বিরুদ্ধ কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগে সমিতির সম্পাদক ও সদস্য পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর কার্যকলাপ সমিতির স্বার্থের পরিপন্থী ছিল বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এরপরে জেলা আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে আপিল করা হয়েছে। গোবিন্দপুর শেফালী সমাজ সেবা সমিতির পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে যে সুভাষ ঘোষ যে সব মিথ্যা তথ্য এবং ভুয়ো নথি দিয়ে জেলা আদালতকে বিভ্রান্ত করছে, সে গুলো উচ্চ আদালতে তুলে ধরা হবে।
এদিকে পুলিশ ও স্থানীয়ভাবে গুন্ডা বলে পরিচিত ব্যক্তিদের নিয়ে ঢোকাকে মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না কেউই।
স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের মতে, “যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক, সেখানে পুলিশ নিয়ে ঢোকা আইন বিরুদ্ধ। এমনকি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে, সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অনুরোধ বা অনুমতির ভিত্তিতে পুলিশ প্রবেশ করতে পারে। এক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি। কি এমন ঘটলো যে পুলিশ নিয়ে যেতে হল?”
আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়ে কোন বাধারও সৃষ্টি হয়নি। তাহলে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কি? – এনিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানালেন, সুভাষ বাবু পুলিশ নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠানে এক অচল অবস্থায় সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন, যা কোন ভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়।
*******