
19/07/2025
Keonjhar Road Trip
কলকাতা থেকে বালাসোর পৌঁছে হাইওয়ে ছেড়ে ক্ষীরা চোরা গোপীনাথ মন্দির, ইমামী জগন্নাথ মন্দির ও নৈসর্গিক ব্লু লেক দেখে রাতে ছিলাম ভদ্রকের হোটেল কল্যাণী তে। ভদ্রক ছেড়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি সাথে করে বেরিয়ে পড়লাম সকাল সকাল।
কলকাতা থেকে কেওনঝর যাওয়ার মুলরাস্তা খড়গপুর বাংরিপসি জশিপুর হয়ে কেওনঝর। তবে আমরা যাচ্ছি খড়গপুর থেকে বলাসর ঘুরে ভদ্রক থেকে ডানদিক হয়ে তুলনামূলক সুন্দর রাস্তা দিয়ে।হাইওয়ে থেকে ইউটার্ন নিয়ে আন্ডারপাস ক্রস করে ডানদিক থেকে বাঁদিক উঠলাম। এই রুটের দূরত্ব 100 কিলোমিটার বেশি হলেও রাস্তার কন্ডিশন প্রথম অপশনের থেকে অনেকটাই ভালো। এছাড়াও কেওনঝরের ঘুরতে যাওয়ার অনেক জায়গা গুলো এই রাস্তার দুদিকে থাকায়, সেগুলো দেখতে দেখতেই কেওনঝর পৌঁছে যাবো।
Video Link:
https://youtu.be/TnkMOQYAtdI
তাহলে চলুন হাইওয়ে ছেড়ে দেন দিকে আমাদের প্রথম গন্তব্যে হাদগড় বা হাদাগরঃ ড্যাম। বৃষ্টি ভেজা জঙ্গল চিরে রাস্তা উঠে গেছে ড্যামের দিকে।আমরা এক্কেবারে ড্যামের গেটের পাশে এসে দাঁড়ালাম। বার্ডস আই ভিউতে বাঁদিকে বিস্তীর্ণ জলরাশি আর ডানদিকে সবুজ টিলার নীচে ড্যামের গেট। কিছুক্ষণ বসে জলের গর্জন শুনে বেরিয়ে পড়লাম। এই রাস্তা নিয়ে এলো আনন্দপুরে বৈতরণী নদীর ওপরের ব্রীজে। বিস্তীর্ণ বালুচর আর তার একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে শান্ত বৈতরণী নদী। আজকের ট্রিপে আবারো বেশ কয়েকবার দেখা হবে এই নদীর সাথে ভিমকুন্ড ও বৈতরণী তীর্থ মন্দিরে। নদী পেরিয়ে ডান দিকে শুরু কেওনঝরের হাইওয়ে, টিপ টিপ বৃষ্টির সাথে গাড়ি ছুটে চলেছে। পথ চলতি আর ৪-৫টি ধাবার থেকে আলাদা কোনো কিছুই নেই, ভিতরে একটু সাজানো ফ্যামিলি ডাইনিং রুমে বসলাম। শালপাতায় ম্যারিনেট করা চিকেন মুড়িয়ে, আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করে কাঁচা শালপাতায় পরিবেশন করা হয়। পেঁয়াজ, লঙ্কা, মশলা আর সর্ষের তেলের ঝাঁঝে ভরপুর এই হারওয়ালা চিকেনের টুকরো গুলো যেমন জুসি, আর ততটাই ভালো খেতে।
খাওয়া দাওয়া সেরে এলাম ঘাটগাঁও এর বিখ্যাত তারাতারিণী মাতার মন্দিরে। আমরা ভিতরে ঢুকে মন্দির দর্শন করে বেরোতেই গেট ঝপ করে বন্ধ হয়ে গেলো। বাইরে তখন প্রচুর ভক্তের ভিড়।
মন্দির ছেড়ে এগিয়ে যাচ্ছি ঘাটগাঁও এর বিখ্যাত গুন্ডিচা ঘাগী ওয়াটারফল দেখতে। জঙ্গল চিরে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছি। সেই রাস্তা টিও কম সুন্দর নয়। মন্দির থেকে বারো কিলোমিটার মিনিট কুড়ির পথ পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম ঝর্নার পার্কিং এ। কেওনঝরের ট্রিপে আমাদের দেখা প্রথম ঝর্ণাই বাম্পার হিট। এখানে এসে বুঝলাম কেনো ভরা বর্ষায় কেওনঝর টুরিস্ট দের কাছে এত জনপ্রিয়। তবে দেখে খারাপ লাগলো ঝর্নার কাছে একঝাঁক প্লাস্টিকের বোতল ঘুরপাক খাচ্ছে। খুব বৃষ্টি হলে এইদিকে নদী ছাপিয়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।
ধেননিকোট থেকে চললাম বৈতরণী তীর্থ দেখতে। একদম নদীর পাশেই সুন্দর এই সাদা মন্দিরটিতে শিবের উপাসনা হয়। মন্দিরের ভিতরে ছবি তোলা যায়না। মন্দিরের পাস দিয়ে নদীর পাশে এলাম। এখানে বৈতরণী আগের তুলনায় অনেকটাই কম চওড়া হলেও স্রোত অনেক বেশি। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরে বেরিয়ে পড়লাম ভিমকুণ্ডের দিকে।
Video Link:
https://youtu.be/TnkMOQYAtdI
যদিও যাওয়ার রাস্তাটি তখন তৈরি হচ্ছে। তাই কন্ডিশন অত ভালোনা। ওদিকে আবার আকাশ কালো, দেখে মনে হলো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। তাই সময় নষ্ট না করে এগিয়ে যেতে হলো। পৌঁছে গেলাম কেওনঝরের সাইডের ভিমকুণ্ডে। টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকলাম। এইখানে বৈতরণী নদীর পাথুরে নদীখাত দিয়ে বসে গেলে এক অপরূপ শোভার সৃষ্টি হয়, সেটা দেখতেই আসা। নদীর ওদিকে ময়ূরভঞ্জ জেলা, সেদিকেও এরকমই আরেকটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। কাছেই সিমলিপালের জঙ্গল, রামতীর্থ, সারান্দার ঘুরতে এলেও কোনো অজানা কারণে এই জায়গা বাদ রয়ে গেছে। আকাশ কালো মেঘে ঢাকতে শুরু করছে, আর নীচে নদীর সেই তেজি রূপ ভোলার নয়। ভাবলেও অবাক লাগে কয়েক ঘন্টা আগেই শান্ত বৈতরণী নদীর বালুচরে রূপ দেখে এলাম, আর এখানে সবই কতোটা আলাদা।
এখানে আরো সময় কাটাতে মন্দ লাগতোনা, কিন্তু ক্ষিদে পাচ্ছে, এছাড়াও আমাদের বুক করে রাখা সানাঘাগড়া নেচার ক্যাম্পে লাঞ্চ দেবে, তাই বেরিয়ে পড়লাম। ধেননিকোট এসে ভাবলাম, যাওয়ার আগে কাছেই সীতাবিনজি তা ঘুরেই আসি, নাহলে আবার এদিকে আসতে হবে। সামনে ভালো রাস্তা থাকলেও, গুগল ম্যাপের ভরসায় মেন হাইওয়ে থেকে টোল বাঁচিয়ে বাঁদিকের শর্ট কার্ট দিয়ে একটু যেতেই গেট দেখতে পেলাম। কিন্তু একটু যেতেই কাঁদায় ভরা রাস্তা দেখে থমকে গেলাম, নেপালের মুক্তিনাথে এরকম রাস্তায় অভিজ্ঞতা, তাই সাহস করে চালিয়ে দিলাম।
সিতাবিনজি বা রাবন ছায়া ম্যুরাল রকে চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতকে আঁকা ম্যুরাল ও শিলালিপি দেখা যায়। ১৯৫০সালে খননকার্যের ফলে এই জায়গাটিযে কিছু হিন্দু মন্দির ও ভঞ্জ রাজাদের রাজবংশের শিল্পকলার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল।
অদ্ভুত আকারের পাথর গুলো কেউ যেন এখানে এনে বসিয়ে দিয়েছে। এটা আবার ব্যাঙের ছাতার মতন দেখতে। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে গিয়ে প্রাচীন ফ্রেস্কো দেখতে পেলাম, তবে খুবই আবছা। এখানে অবহেলার চাপ স্পষ্ট, সেভাবে বোর্ড ও নেই, আবার লোকজন ও নেই। তাই পাশেই সীতার মন্দির খুঁজেই পেলাম না, কথিত সেখানেই নাকি উনি লব কুশের জন্ম দিয়েছেন। এগিয়ে চললাম ২৫কিলোমিটার দূরে কেওনঝরের দিকে। আমরা গাড়ির রুট তো আগেই বলেছি। এখানে ট্রেনে আসলে হাওড়া থেকে বারবিলে এসে, সেখান থেকে ৬০-৭০কিলোমিটার গাড়ি ভাড়া নিয়ে এখানে আসা যায় খুব সহজেই। বারবিলের মতন এখানেও অনেকগুলো লৌহ আকরিক খনি আছে, তাই চারদিকে লালচে মেরুন ভাব। তবে মিষ্টি কেওনঝরের প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেল। আজকে এখানেই থামলাম, পরের পর্বে থাকবে সানাঘাগড়ার ট্যুর আর বাকি জায়গা গুলো। আমাদের সিরিজ কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না।
Video Link:
https://youtu.be/TnkMOQYAtdI