Wayfarers' FoodPrint

Wayfarers' FoodPrint We DruPal, the Wayfarers', you can follow our travel and food experience here as our foodprint in 4K.

Keonjhar Road Tripকলকাতা থেকে বালাসোর পৌঁছে হাইওয়ে ছেড়ে ক্ষীরা চোরা গোপীনাথ মন্দির, ইমামী জগন্নাথ মন্দির ও নৈসর্গিক ব্লু...
19/07/2025

Keonjhar Road Trip

কলকাতা থেকে বালাসোর পৌঁছে হাইওয়ে ছেড়ে ক্ষীরা চোরা গোপীনাথ মন্দির, ইমামী জগন্নাথ মন্দির ও নৈসর্গিক ব্লু লেক দেখে রাতে ছিলাম ভদ্রকের হোটেল কল্যাণী তে। ভদ্রক ছেড়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি সাথে করে বেরিয়ে পড়লাম সকাল সকাল।

কলকাতা থেকে কেওনঝর যাওয়ার মুলরাস্তা খড়গপুর বাংরিপসি জশিপুর হয়ে কেওনঝর। তবে আমরা যাচ্ছি খড়গপুর থেকে বলাসর ঘুরে ভদ্রক থেকে ডানদিক হয়ে তুলনামূলক সুন্দর রাস্তা দিয়ে।হাইওয়ে থেকে ইউটার্ন নিয়ে আন্ডারপাস ক্রস করে ডানদিক থেকে বাঁদিক উঠলাম। এই রুটের দূরত্ব 100 কিলোমিটার বেশি হলেও রাস্তার কন্ডিশন প্রথম অপশনের থেকে অনেকটাই ভালো। এছাড়াও কেওনঝরের ঘুরতে যাওয়ার অনেক জায়গা গুলো এই রাস্তার দুদিকে থাকায়, সেগুলো দেখতে দেখতেই কেওনঝর পৌঁছে যাবো।
Video Link:
https://youtu.be/TnkMOQYAtdI

তাহলে চলুন হাইওয়ে ছেড়ে দেন দিকে আমাদের প্রথম গন্তব্যে হাদগড় বা হাদাগরঃ ড্যাম। বৃষ্টি ভেজা জঙ্গল চিরে রাস্তা উঠে গেছে ড্যামের দিকে।আমরা এক্কেবারে ড্যামের গেটের পাশে এসে দাঁড়ালাম। বার্ডস আই ভিউতে বাঁদিকে বিস্তীর্ণ জলরাশি আর ডানদিকে সবুজ টিলার নীচে ড্যামের গেট। কিছুক্ষণ বসে জলের গর্জন শুনে বেরিয়ে পড়লাম। এই রাস্তা নিয়ে এলো আনন্দপুরে বৈতরণী নদীর ওপরের ব্রীজে। বিস্তীর্ণ বালুচর আর তার একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে শান্ত বৈতরণী নদী। আজকের ট্রিপে আবারো বেশ কয়েকবার দেখা হবে এই নদীর সাথে ভিমকুন্ড ও বৈতরণী তীর্থ মন্দিরে। নদী পেরিয়ে ডান দিকে শুরু কেওনঝরের হাইওয়ে, টিপ টিপ বৃষ্টির সাথে গাড়ি ছুটে চলেছে। পথ চলতি আর ৪-৫টি ধাবার থেকে আলাদা কোনো কিছুই নেই, ভিতরে একটু সাজানো ফ্যামিলি ডাইনিং রুমে বসলাম। শালপাতায় ম্যারিনেট করা চিকেন মুড়িয়ে, আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করে কাঁচা শালপাতায় পরিবেশন করা হয়। পেঁয়াজ, লঙ্কা, মশলা আর সর্ষের তেলের ঝাঁঝে ভরপুর এই হারওয়ালা চিকেনের টুকরো গুলো যেমন জুসি, আর ততটাই ভালো খেতে।

খাওয়া দাওয়া সেরে এলাম ঘাটগাঁও এর বিখ্যাত তারাতারিণী মাতার মন্দিরে। আমরা ভিতরে ঢুকে মন্দির দর্শন করে বেরোতেই গেট ঝপ করে বন্ধ হয়ে গেলো। বাইরে তখন প্রচুর ভক্তের ভিড়।

মন্দির ছেড়ে এগিয়ে যাচ্ছি ঘাটগাঁও এর বিখ্যাত গুন্ডিচা ঘাগী ওয়াটারফল দেখতে। জঙ্গল চিরে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছি। সেই রাস্তা টিও কম সুন্দর নয়। মন্দির থেকে বারো কিলোমিটার মিনিট কুড়ির পথ পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম ঝর্নার পার্কিং এ। কেওনঝরের ট্রিপে আমাদের দেখা প্রথম ঝর্ণাই বাম্পার হিট। এখানে এসে বুঝলাম কেনো ভরা বর্ষায় কেওনঝর টুরিস্ট দের কাছে এত জনপ্রিয়। তবে দেখে খারাপ লাগলো ঝর্নার কাছে একঝাঁক প্লাস্টিকের বোতল ঘুরপাক খাচ্ছে। খুব বৃষ্টি হলে এইদিকে নদী ছাপিয়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।

ধেননিকোট থেকে চললাম বৈতরণী তীর্থ দেখতে। একদম নদীর পাশেই সুন্দর এই সাদা মন্দিরটিতে শিবের উপাসনা হয়। মন্দিরের ভিতরে ছবি তোলা যায়না। মন্দিরের পাস দিয়ে নদীর পাশে এলাম। এখানে বৈতরণী আগের তুলনায় অনেকটাই কম চওড়া হলেও স্রোত অনেক বেশি। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরে বেরিয়ে পড়লাম ভিমকুণ্ডের দিকে।

Video Link:
https://youtu.be/TnkMOQYAtdI
যদিও যাওয়ার রাস্তাটি তখন তৈরি হচ্ছে। তাই কন্ডিশন অত ভালোনা। ওদিকে আবার আকাশ কালো, দেখে মনে হলো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। তাই সময় নষ্ট না করে এগিয়ে যেতে হলো। পৌঁছে গেলাম কেওনঝরের সাইডের ভিমকুণ্ডে। টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকলাম। এইখানে বৈতরণী নদীর পাথুরে নদীখাত দিয়ে বসে গেলে এক অপরূপ শোভার সৃষ্টি হয়, সেটা দেখতেই আসা। নদীর ওদিকে ময়ূরভঞ্জ জেলা, সেদিকেও এরকমই আরেকটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। কাছেই সিমলিপালের জঙ্গল, রামতীর্থ, সারান্দার ঘুরতে এলেও কোনো অজানা কারণে এই জায়গা বাদ রয়ে গেছে। আকাশ কালো মেঘে ঢাকতে শুরু করছে, আর নীচে নদীর সেই তেজি রূপ ভোলার নয়। ভাবলেও অবাক লাগে কয়েক ঘন্টা আগেই শান্ত বৈতরণী নদীর বালুচরে রূপ দেখে এলাম, আর এখানে সবই কতোটা আলাদা।

এখানে আরো সময় কাটাতে মন্দ লাগতোনা, কিন্তু ক্ষিদে পাচ্ছে, এছাড়াও আমাদের বুক করে রাখা সানাঘাগড়া নেচার ক্যাম্পে লাঞ্চ দেবে, তাই বেরিয়ে পড়লাম। ধেননিকোট এসে ভাবলাম, যাওয়ার আগে কাছেই সীতাবিনজি তা ঘুরেই আসি, নাহলে আবার এদিকে আসতে হবে। সামনে ভালো রাস্তা থাকলেও, গুগল ম্যাপের ভরসায় মেন হাইওয়ে থেকে টোল বাঁচিয়ে বাঁদিকের শর্ট কার্ট দিয়ে একটু যেতেই গেট দেখতে পেলাম। কিন্তু একটু যেতেই কাঁদায় ভরা রাস্তা দেখে থমকে গেলাম, নেপালের মুক্তিনাথে এরকম রাস্তায় অভিজ্ঞতা, তাই সাহস করে চালিয়ে দিলাম।

সিতাবিনজি বা রাবন ছায়া ম্যুরাল রকে চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতকে আঁকা ম্যুরাল ও শিলালিপি দেখা যায়। ১৯৫০সালে খননকার্যের ফলে এই জায়গাটিযে কিছু হিন্দু মন্দির ও ভঞ্জ রাজাদের রাজবংশের শিল্পকলার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল।
অদ্ভুত আকারের পাথর গুলো কেউ যেন এখানে এনে বসিয়ে দিয়েছে। এটা আবার ব্যাঙের ছাতার মতন দেখতে। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে গিয়ে প্রাচীন ফ্রেস্কো দেখতে পেলাম, তবে খুবই আবছা। এখানে অবহেলার চাপ স্পষ্ট, সেভাবে বোর্ড ও নেই, আবার লোকজন ও নেই। তাই পাশেই সীতার মন্দির খুঁজেই পেলাম না, কথিত সেখানেই নাকি উনি লব কুশের জন্ম দিয়েছেন। এগিয়ে চললাম ২৫কিলোমিটার দূরে কেওনঝরের দিকে। আমরা গাড়ির রুট তো আগেই বলেছি। এখানে ট্রেনে আসলে হাওড়া থেকে বারবিলে এসে, সেখান থেকে ৬০-৭০কিলোমিটার গাড়ি ভাড়া নিয়ে এখানে আসা যায় খুব সহজেই। বারবিলের মতন এখানেও অনেকগুলো লৌহ আকরিক খনি আছে, তাই চারদিকে লালচে মেরুন ভাব। তবে মিষ্টি কেওনঝরের প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেল। আজকে এখানেই থামলাম, পরের পর্বে থাকবে সানাঘাগড়ার ট্যুর আর বাকি জায়গা গুলো। আমাদের সিরিজ কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না।
Video Link:
https://youtu.be/TnkMOQYAtdI


Wayfarers foodprint - এর এবারের সফর Mr. Greyhound কে সিল্ক রুটের সেল্ফ ড্রাইভ। গ্যাংটকের থেকে শুরু করে মাঝে একরাত ছিলাম ...
06/01/2025

Wayfarers foodprint - এর এবারের সফর Mr. Greyhound কে সিল্ক রুটের সেল্ফ ড্রাইভ। গ্যাংটকের থেকে শুরু করে মাঝে একরাত ছিলাম জুলুকের ওপরেই লুংথু গ্রামে এই অপরূপ সুন্দর সূর্যোদয়ের সাক্ষী হতে।
https://youtu.be/jU4k1V_VRhE

গত পর্বের শেষে আমরা ছানগু লেক, নতুন বাবা মন্দির দেখে ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছেছিলাম কুপুপ গ্রামের বর্ডারে। রংলী বা গ্যাংটকের থেকে করা পারমিটের একটি জেরক্স এখানে জমা করে, অরিজিনাল কপিতে স্ট্যাম্প মেরে তবেই আগে যাওয়ার অনুমতি মেলে। পারমিটের নিয়ম আগের পর্বে বিস্তারিত জানিয়েছি।

চেকপোস্ট থেকে এগিয়েই প্রথমেই কুপুপের বিখ্যাত এলিফ্যান্ট লেকের দেখা মিলবে। লেকের পাশে যাওয়ার রাস্তা থাকলেও, সেটা শুধুই মিলিটারির জন্য। আমাদেরকে পাহাড়ের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভিউ পয়েন্ট থেকেই দেখতে হয়।
লেকের শেষে হাতির শুরের মতন অংশ থাকায় একে সবাই এলিফ্যান্ট লেক নামেই চেনেন।

সিল্ক রুটের এই অঞ্চলের উচ্চতা অনেকটাই বেশি তাই বছরের বছরের বেশিরভাগ সময়ই এখানে অল্প বিস্তর বরফের দেখা মেলে। আমরাও একটা সুন্দর টুকলা ভ্যালির পাশে কিছুটা বরফ দেখেই গাড়ি থামালাম। তবে গাছপালা ও অক্সিজেনের অভাব বোধ হয়, তাই উত্তেজনায় বেশি দৌড়াদৌড়ি করলে শ্বাসকষ্টের সম্ভাবনা প্রবল। অক্টোবরের শেষে বরফের মজা নিয়ে এগিয়ে চললাম।
মার্চ এপ্রিলে এই রাস্তা পুরোটাই বরফে ঢেকে থাকে। আরো এগিয়ে এলাম বাবা হরভজন সিংহের পুরোনো মন্দির আর বানকার দেখতে।

গাড়ি পার্ক করে, উঁচু সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় সেই বানকারে। এছাড়াও নীচে রয়েছে ইন্ডো চায়না বর্ডারের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে একটি চিত্র প্রদর্শনী। পাশেই আছে ওনার সাজানো মন্দির, ও গিফ্ট শপ। মন্দিরে ওনার ছবি, মিলিটারি পোশাক, আরো কত কিছু রয়েছে। মন্দিরে প্রসাদ হিসাবে ছিল কিসমিস। এই জায়গাটি খুবই সুন্দর, একটু বসে চারপাশটা দেখলাম, নিচে রয়েছে nathang ভ্যালি, সময় হলে আমরা সেই গ্রামটি ঘুরে ও যাবো, সেখানেও রাত্রি বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। মিষ্টি পতাকা ও দিক নির্দেশক দেয়া সেলফি পয়েন্টে ছবি তুললাম নিজেদের।
শেষে মিলিটারি ক্যান্টিনের গরম চা, কফি,ম্যাগি বা ধোসা খেতে একদম ভুলবেন না।

প্রসঙ্গে জানাই, এই ন্যাশনাল হাইওয়ে 717B রাস্তার পুরোটাই মিলিটারির ব্যবহারের জন্য তৈরি, তাই তাদের সন্মান করবেন, প্রয়োজন হলে রাস্তা ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষা করতেও হতে পারে।
খানিকটা এগোতেই চোখে পড়লো heart লেকের। গাড়ি থামিয়ে এলাম দেখতে। একবার ইচ্ছে আছে শীতকালে আসার, তখন চারদিকে সাদা বরফের মাঝে নীল জলের এই লেকের সৌন্দর্য দেখবো।

এবারে পাহাড়ের নীচে দেখা মিলল, নাথ্যাং ভ্যালির। কুপুপ থেকে নাথ্যাং ভ্যালির যাওয়ার দুটো রাস্তা, একটি সোজাসুজি নাথ্যাং ভ্যালি দিয়ে। আমরা যাচ্ছি, ওল্ড বাবা মন্দির ঘুরে নাথ্যাং ভ্যালির উল্টো দিকে দিয়ে ঢুকবো বলে। এখানে দেখার মতন একটি ব্রিটিশ কবরখানা, মোনাস্ট্রি ও মিস্টি নাথ্যাং গ্রাম। তবে ঘুরতে ঘুরতে এতই দেরি হয়ে গেল যে না থেমে, ১০কিলোমিটার দূরে লুংথু গ্রামে আমাদের হোম স্টের দিকে এগোলাম। প্রসঙ্গে জানাই, অনেকক্ষন পরে এখানে একটি ক্যাফে দেখি, যেখানে সবাই লাঞ্চ করছিল। আমাদের ইচ্ছে হলে এখানে লাঞ্চ করতে পারেন, আমরা যদিও হোম স্টে গিয়েই লাঞ্চ করবো। আমরা প্রথমে একরাত এখানে থাকবো ভাবলেও, অতিরিক্ত উচ্চতায় শ্বাসকষ্টের ভয়ে ও জুলুকের বিখ্যাত জিগজাগ রাস্তার সুন্দর ভিউ দেখার লোভে লুংথু গ্রামের সব থেকে উঁচু হোম স্টে বুক করি। নাথ্যাং ভ্যালির পরেই রাস্তা সরু হয়ে যাচ্ছে, আর শুরু হয় সেই আকর্ষণীয় বাঁক গুলো। সোনালীর গুল্মের রং এর মেঘের আনাগোনা দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছি। মাঝে লুংথু সানরাইজ পয়েন্ট পরে, যা নাথ্যাং ভ্যালি ও লুংথু গ্রামের ঠিক মাঝে। একটু থমকে, কিরকম ভিউ আসবে সেটার কল্পনা করে এগিয়ে চললাম। কালকে সকালে এখানেই আসবো।

এখন এডভেঞ্চারের নেশায় আমি জুলুকের জিগজাগ রাস্তা উপভোগ করে নীচে নামছি। একবার ডান দিকে আবার বা দিকে হেলে পড়ছি। আমরা নিচের দিকে নামছি তাই রাস্তা অপেক্ষাকৃত কম কঠিন, তবে জুলুকের থেকে ওপরে উঠতে ভালো রকমের ড্রাইভিং স্কিলের পরীক্ষা দিতে হয়। পাঁচ - ৬টি বাঁক পেরিয়ে নীচে নামতেই, ওই দেখুন দূরে আমাদের আজকে আস্তানা লুংথু গ্রাম দেখা যাচ্ছে। অবশেষে আমরা নীচে লুংথু গ্রামে এসে বুঝলাম, আমাদের হোম স্টে গ্রামের ঠিক ওপরে, তাই গাড়ি ঘুরিয়ে ওপরে উঠতে লাগলাম।
আমরা আগেই জানিয়েছিলাম এখানে মিলিটারি ট্রাকের আনাগোনা আছে, তাই খুবই সাবধানে গাড়ি চালানোর অনুরোধ রইল।

রাস্তার পাশে পার্ক করতে হয়, তারপরে কিছু সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে হবে। সামনেই খাদের পাশে জুলুকের আঁকা বাঁকা রাস্তার দারুন ভিউ। গ্রামে ঢুকে কনকনে ঠান্ডা হওয়া জাঁকিয়ে বসেছে। দূরের ওই উঁচু পাহাড় হলো প্রায় কিলোমিটার দূরের জুলুক গ্রাম।

পৌঁছেই ঘরে ফ্রেশ হয়ে আগে এলাম লাঞ্চ করতে, আগেই বলা ছিল, তাই গরম গরম খাবার চলে এলো। খাওয়া দাওয়া তো হলো, এবার চলুন হোম স্টে ঘুরিয়ে দেখাই। তবে আগেই জানিয়ে রাখি, লাক্সারি কিছু খুঁজলে এই জায়গা আপনার জন্য নয়। তারজন্য নীচে জুলুকে বা পদমচেনে থাকতে পারেন। এখানে ঘরে আছে বড় খাট আর লেপ কম্বল আর আছে একটি বিশাল কাঁচের জানলা, যেখান থেকে একটু আগেই জুলুকের রাস্তা দেখা গেলেও এখন কুয়াশার চাদরে ঢাকা। পরিস্কার ওয়েস্টার্ন টয়লেট রয়েছে, তবে গিজার নেই। গরম জল চাইলে ওনারা দিয়ে যান। রাতে তাপমাত্রা শূন্যের নীচে নেমে যায়, অক্সিজেনের অভাব বোধ হয়। তাও কেন এখানে থাকলাম, সেটা জানাবো কালকে সকালের ভিউ দেখিয়ে। ওহ! আমরা ঘরে লেপ মুড়ি দিয়ে বসে মেঘের আনাগোনা দেখতে থাকলাম। রাতে রুম হিটার চাইলে এক্সট্রা ৪০০টাকা লাগবে, শীতের সময় থাকলে অবশ্যই সেটা নেবেন রাতে ভালো করে ঘুমাতে।

সূর্যাস্তের সময় রান্নাঘরের পাশে এলাম। সোনালী রঙের কয়েকটি টাইমলাপ্স তুলে রাখলাম। ওদিকে দিগন্তরেখায় সূর্য মিলিয়ে যাচ্ছে। বাঁদিকে উঁকি দিচ্ছেন মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা। মাঝে দু কাপ চায়ের চুমুক দিয়ে, অনেকক্ষণ সেখানেই বসে রইলাম। বিকেলে প্যাকেজের পেয়াজি আর আলাদা করে বলা চিকেন পাকোড়া ফ্রাই নিয়েছিলাম। রাতে নিচের পাহাড়ে জোনাকির আলো জ্বলে উঠল। মাঝে মাঝে লাল, হলুদ গাড়ির লাইট একে বেঁকে চলে যাচ্ছে। ডিনার করতে এসে ডাইনিং রুমের কাঠের আগুনের হিটারে একটু আগুনের আঁচে হাত সেকে নিলাম। রাতের খাবার ভাত, মুরগির মাংস আর পাঁপড়। রাতে ঠান্ডায় ভালো ঘুম হয়নি, তাও সকাল ৫টায় গাড়িতে বসে দেখি কাঁচের ওপরে কুয়াশার বরফ জমে। গাড়ি স্টার্ট নিলেও, চালানো কঠিন। তাও সানরাইজ পয়েন্টের দিকে যেতেই একটা বাঁক ঘুরতেই সামনে দেখি মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘার পুরো রেঞ্জ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। তাও একটু এগোলাম। তবে আর একটা বাঁক ঘুরে সিদ্ধান্ত নিলাম, নাহ, সানরাইজ পয়েন্ট যেতে গেলে উল্টে বিপদ ডেকে আনবো। কাঁচের ওপরের বরফে রাস্তার শেষ দেখা যাচ্ছে না। তাই এখানে দাঁড়িয়েই সূর্যোদয়ের শোভা উপভোগ করবো। আমার সামনে ২০০° উন্মুক্ত ভিউ। ডানদিকে কোনায় মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘার পুরো রেঞ্জ আর বা দিকে সূর্যোদয় হচ্ছে। সূর্যের দেখা না পাওয়া গেলেও তার আলো চারিদিকে আসতে আসতে ছড়িয়ে পড়ছে। স্লিপিং বুদ্ধের মাথা থেকে পাও আস্তে আস্তে সোনালী রঙে সেজে উঠছে। কালকে সারারাত ঠান্ডায় ভালো ঘুম হয়নি। -৩℃ এর নীচে চলে গিয়েছিল তাপমাত্রা, অক্সিজেনের অভাবে মাথা ধরে গেছিল, তাও এখানে দাঁড়িয়ে থেকে সব কষ্ট লাঘভ হয়ে যায়।
পূর্ণিমায় চাঁদের আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘার পুরো রেঞ্জ সারা রাত মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে, তার সৌন্দর্য অন্য রকমের। আবার অমাবস্যায় একটু ওপরে উঠলে নাকি দুর্দান্ত এস্ট্রো ফটোগ্রাফি করা যায় এখান থেকে। তাই সিল্ক রুটে ঘুরতে আসলে এই জায়গায় থাকা মাস্ট।
মোটা জ্যাকেট, লেয়ার করে জামা, গ্লাভস পরেও হাড় কনকনে হাওয়ার দাপটে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল।

ওদিকে আবার সিল্ক রুটের জুলুকের মাথায় দিনের প্রথম আলো ছড়িয়ে পড়েছে। কি অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য। চারদিকে নাম না দেওয়া পাহাড়ের লাইন, সবাই নীল রঙের পোশাক পরে সেজে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়। প্রচুর ছবি তুললাম, তুললাম অনেক টাইম লাপ্স তবে তারপরেও শুধু বেঁচে রইলো আমাদের মনের মেমোরি কার্ডেই। ফিরে এলাম হোম স্টে, ব্রেকফাস্ট সেরে নীচে নামবো।
জুলুক, পদমচেনে ঘুরে রংলি থেকে যাবো আরিতার। সিল্ক রুটের শুরু করেছিলাম ডোবান ভ্যালি দিয়ে শেষ হবে আবার সেদিকেই। আগামী পর্বে ফিরে আসবো মায়াবী আরিতারকে নিয়ে তাহলে পর্বটি মিস না করতে চাইলে এখুনি সাবস্ক্রাইব করে নিন, আর দেখা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি।
https://youtu.be/jU4k1V_VRhE

Oct, 2023

#ভালোখেয়েভালোথেকো

01/01/2025

Happy New Year 2025

বান ঝাঁকরী জলপ্রপাত ও পার্ক, গাংটকের কাছে দারুন একটা ঘোরার জায়গা। পার্কে অনেকটা সময় কাটিয়ে লাঞ্চ করে পাশেই রুমটেক ও রানক...
17/07/2024

বান ঝাঁকরী জলপ্রপাত ও পার্ক, গাংটকের কাছে দারুন একটা ঘোরার জায়গা। পার্কে অনেকটা সময় কাটিয়ে লাঞ্চ করে পাশেই রুমটেক ও রানকা মোনাস্ট্রি দেখে একটা দিন দুর্দান্ত ফর্মে কাটানোর জন্য পারফেক্ট।

টিকিট: ৭০টাকা

https://yt.openinapp.co/c9e49

आपकी जात्रा मंगलमय होTVF TRIPLING দেখে একটা স্বপ্ন ছিল, এখানে ছবি তুলবো। শেষমেশ হয়েছে অনেকগুলো টেক নেওয়ার পরে।On the way...
08/07/2024

आपकी जात्रा मंगलमय हो

TVF TRIPLING দেখে একটা স্বপ্ন ছিল, এখানে ছবি তুলবো। শেষমেশ হয়েছে অনেকগুলো টেক নেওয়ার পরে।

On the way to North Sikkim via Gangtok ~
Oct, 2023

03/07/2024

Join us for the epic road trip to offbeat North Sikkim and Silk Route via Gangtok with Wayfarers' FoodPrint

মুর্শিদাবাদে ঘোরাঘুরি পর্ব -২Day 2১) কাঠগোলা প্যালেস২) জগৎ শেঠের বাড়ি৩) নশিপুর রাজবাড়ী৪) নশিপুর আখড়া৫) নমকহারাম দেউড়ী/জা...
21/04/2024

মুর্শিদাবাদে ঘোরাঘুরি পর্ব -২

Day 2
১) কাঠগোলা প্যালেস
২) জগৎ শেঠের বাড়ি
৩) নশিপুর রাজবাড়ী
৪) নশিপুর আখড়া
৫) নমকহারাম দেউড়ী/জাফরাগঞ্জ প্যালেস (বাইরে থেকে)
৬) জাফরাগঞ্জ সিমেট্রি
৭) আজিমুন্নিসা বেগমের সমাধি

ভিডিও লিংক: https://yt.openinapp.co/oshp2

ট্যুরিস্ট লজে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম কাঠগোলা প্যালেস ও হাজারদুয়ারী সহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে। গঙ্গার পাড় বরাবর মতিঝিল বাইপাস রোড ধরে ত্রিপলিয়া গেট পেরিয়ে চলে এলাম একদম হাজারদুয়ারীর কাছে। হাজারদুয়ারী ঠিক উল্টোদিকে একটি ভাতের হোটেলে 50টাকায় সারাদিনের জন্য গাড়ি পার্ক করে টাঙ্গায় চড়ে চললাম এই শহরের অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান কাঠগোলা প্যালেস দেখতে। চড়া রোদ্দুরে টাঙ্গার ছায়ায় বসে ফুরফুরে হাওয়া খেতে বেশ লাগছিলো। ৩০টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকে বিশাল এক আম বাগানে দেখতে পেলাম। সেখানে এই জৈন দুগার পরিবারের চার ভাই লক্ষীপৎ, জগপৎ, মহীপৎ ও ধনপৎ এর ঘোড়ায় চড়া মূর্তি দেখা পেলাম। এই চার ভাই জগৎশেঠের সহযোগিতায় তৎকালীন নবাবের কাছ থেকে ১২শ টাকায় ৩২ বিঘার এই বাগানটি কিনে নেন মন্দির নির্মাণের জন্য।

বাগান পেরিয়েই চোখে পরে এক বিশাল গোলাপি রঙের তোরণ আর ভিক্টরিয়ান আমলের সাদা সিংহের এক মূর্তি। এই তোরণের নিচেই দেখা মেলে প্রাচীন গুপ্তপথের, এই পথ নাকি এক সময় ভাগীরথী নদীর সাথে যুক্ত ছিল, অনেকে বলেন এই গোপন পথে নাকি মাত্র ২কিলোমিটার দূরে জগৎ শেঠের বাড়িতেও যাতায়াত করা যেত। তবে এখন জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় দরজা বন্ধই থাকে। গুপ্তপথের পাশেই রয়েছে সাদা মার্বেলের মাইকেলেঞ্জেলোর মূর্তি।

উল্টোদিকেই আছে ছোট্ট এক চিড়িয়াখানা। যেখানে দেখা মেলে রঙ বেরঙের বিদেশি পাখিদের- ম্যাকাও, কাকাতুয়া, লাভ বার্ডস, টার্কি, রেড নেকড ফিজ্যান্ট, এছাড়াও আছে একোয়ারিয়াম ভর্তি রঙিন মাছেদের সংগ্রহ।

এই জৈন ব্যবসায়ীরা 19 শতকের শেষের দিকে প্রাসাদের একটি অংশ সংস্কার করার জন্য একজন ফরাসি স্থপতিকে নিয়োগ করেছিল এবং উনি ভিক্টোরিয়ান সিংহ এবং মাইকেলেঞ্জেলো মূর্তিটি এখানে যুক্ত করেছিলেন। এই প্রাসাদটি শিল্প এবং স্থাপত্যের একটি নিখুঁত সংমিশ্রণ।
প্রাসাদ চত্বরের ভিতরে চিড়িয়াখানা ও সুড়ঙ্গ ছাড়াও আদিনাথ মন্দির ও কয়েকটি হিন্দু ধর্মের মন্দির দেখতে পাবেন। তবে এই কাঠগোলা বাগানের আসল আকর্ষণ এই হলুদ সবুজ প্রাসাদ। নামে কাঠগোলা হলেও এই নাম আসলে একসময় এই বাগান জুড়ে থাকা কাঠগোলাপের থেকে অপভ্রংশ হয়ে এসেছে। প্রাসাদের সামনের পুকুরে খেলা করে বেড়াচ্ছিল হাঁসের দল। এই সুন্দর মনোরম জায়গায় আমরা নিজেদের বেশ কিছু ছবি তুলে নিয়ে এলাম নাচের প্রাঙ্গন দেখতে।
একটু এগিয়ে সাজানো বাগানের পাশে সাদা রঙের আদিনাথ মন্দির দেখতে এলাম। বাগান ঘেরা মন্দিরের দুপাশে আছে কিছু মার্বেলের মূর্তি, ফোয়ারা, হাতি ও আরও অনেক সুন্দর শৈল্পিক নিদর্শন।
এই মন্দির 1933 সালে লক্ষ্মীপত সিং দুগার দ্বারা নির্মিত,মন্দিরের দেওয়াল ও মেঝে জুড়ে রয়েছে নানা রঙের ফুল ও নকশার অপূর্ব কারুকাজ। মন্দিরে রয়েছে জৈন তীর্থঙ্কর এবং অন্যান্য দেবতার 17 টি মূর্তি, এছাড়াও আরো অনেক মূর্তিতে সাজানো মন্দির দেখে অভিভূত হয়ে গেলাম।

এরপর এলাম অন্যান্য হিন্দু দেবতার মন্দির দেখতে। এখানে ভিতরে ঢুকতে পারিনি, তাই চলে এলাম মূল প্রাসাদের মিউজিয়াম দেখতে।
এই প্রাসাদের ভিতরে যাওয়ার সাথে সাথে মূল্যবান পেইন্টিং, আয়না এবং অমূল্য ভিনটেজ আসবাব দেখে বিস্মিত হতে হয়। কিন্তু সেখানে ছবি তোলার অনুমতি নেই, তাই দেখাতে পারলাম না। এই প্রাসাদের দ্বিতীয় তলে আরো সুন্দর মূল্যবান জিনিস থাকলেও সেখানে সাধারণ পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
কাঠগোলা প্যালেসের পর্ব মিটিয়ে চলে এলাম জগৎ শেঠের বাড়ি। কুড়ি টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
অষ্টাদশ শতকে বাংলার ইতিহাসে বিখ্যাত ধনী ‘জগৎ শেঠ’ কোনও এক জন ব্যক্তি নন। ‘জগৎ শেঠ’ একটি পারিবারিক উপাধি। বিপুল ধনসম্পদ ও সেই সুবাদে প্রভূত রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগকারী এই পরিবারটির আবাস ছিল সেই সময়কার সুবা বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে।

এই বংশের হীরানন্দ সাহু নামে এক ব্যক্তি যোধপুর থকে ভাগ্য অন্বেষণে পটনায় আসেন। সেখানে প্রচুর গুপ্তধন পান, তার মধ্যে নাকি ছিল প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা। এই সোনাই হীরানন্দের বংশকে ধনী করে তোলে। হীরানন্দ তাঁর সাত ছেলেকে ভারতের সাতটি জায়গায় গদিয়ান করে দেন। কনিষ্ঠ পুত্র মানিকচাঁদ আসেন মুর্শিদাবাদে। তিনিই জগৎ শেঠ বংশের প্রতিষ্ঠাতা
কথিত আছে, মুর্শিদকুলি বাংলা-বিহার উড়িষ্যার নিজামতি পদ লাভ করে মুর্শিদাবাদে টাঁকশাল স্থাপন করেছিলেন। সেই টাঁকশালের প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন মানিকচাঁদ।
মুর্শিদকুলিই মানিকচাঁদের জন্য ‘শেঠ’ উপাধি জোগাড় করে দেন তৎকালীন দিল্লির বাদশা ফারুখশিয়রের কাছ থেকে। বিনিময়ে মানিকচাঁদ মুর্শিদকুলিকে বিপুল অর্থ দিয়েছিলেন বলে কথিত আছে। তিনিই ভাগীরথীর পূর্ব তীরে প্রাসাদ নির্মাণ করেন, যা আজও একটি দ্রষ্টব্য স্থান।
ভিতরের সব অংশেই ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞা আছে তাই মিউজিয়ামে ও মাটির নিচের সংগ্রহশালার সংরক্ষিত সোনা রুপার মুদ্রা, ঢাকাই মসলিন কাপড়, দামি বাসনপত্র ও আসবাব, অস্ত্র ও মন্দিরটিও দেখাতে পারলাম না।
ইতিহাসে এই জগৎ শেঠের বংশধরের বিশাল প্রতিপত্তির সুনাম আছে, সেরকমই দুর্নাম আছে ব্রিটিশদের সাথে হাত মিলিয়ে সিরাজের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার। এই বাড়ি, ও অদূরের কাঠগোলা প্যালেসেই চলতো সেই রাজদ্রোহের আলোচনা।

তারপর এলাম নশিপুর রাজবাড়ী। টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকলাম।
রাজা দেবী সিংহ এই রাজবংশের পত্তন করেন। নবাবি আমলের অবসানের পর ব্রিটিশ শাসনকালে যে সব ব্যক্তি জমিদারিত্ব লাভ করেছিলেন তাদের অন্যতম রাজা দেবী সিংহ|

পর্যটকদের উদ্দেশ্যে রাজবাড়ী ও মন্দির খুলে দেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে ঐতিহাসিক নাটমন্দির সহ আট বিঘা এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হনুমান মন্দির, কালী মন্দির ও লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির। লাইব্রেরিতে রয়েছে প্রাচীন দলিল-দস্তাবেজ। রয়েছে ডাইনিং রুমের দেওয়ালের পাশে মেঝের ওপর মেহগনি কাঠের কারুকার্যময় ৮ ফুট উচ্চতার 'গ্র্যান্ড ফাদার ক্লক'। আরও আছে নিমকাঠের তৈরী দুশো বছরের প্রাচীন বিশালাকৃতি দেবদেবীর কয়েকডজন মূর্তি, ৬ফুট উচ্চতার কাঠের তৈরী রামগরুড়ের বিস্তৃত দু'টি ডানার ওপর অধিষ্ঠিত লক্ষ্মীনারায়ণের যুগলমূর্তী। সময়ের অভাবে আমরা ওপরের তলায় গেলাম না, সেখানে স্থায়ী আর্ট গ্যালারিতে চক, মাটি, এলুমিনিয়ামের তার ও টুকরো, কাগজের মণ্ডের তৈরী বিভিন্ন শিল্প সামগ্রী ছাড়াও ওই গ্যালারিতে রয়েছে প্যাস্টেল, অয়েল পেইন্টিং ও স্কেচের প্রায় ৫০টি চিত্রকর্ম।

নশিপুর আখড়া ভাগীরথী নদীর পূর্বে নশিপুর রাজবাড়ির কাছে অবস্থিত । আখরার এখানেই প্রতি বছর ঝুলন যাত্রা ও বিখ্যাত মেলা বসে। এই শুভ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত নাটকগুলি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখানে জড়ো হয়। নশিপুর আখড়ায় অনেক পুরানো জিনিসপত্র যেমন বিশাল বাসন-কোসন এমনকি একটি ভিনটেজ গাড়িও একটি ছোট গ্যারেজে রাখা হয়েছে, আছে একটি রুপার রথ-কিন্তু সেগুলোর কোনোটিরই যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নেই।

পরবর্তী গন্তব্য ছিল মীরজাফরের বাড়ি, তবে সেটি আজ অবশিষ্ট নেই, শুধু বেঁচে আছে ভগ্নপ্রায় গেট। তাই এখানে না থেমে এগিয়ে এলাম ওনাদের পারিবারিক কবরস্থানে।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই এখানে কবরস্থানে কোনো নাম বা সালের উল্লেখ পেলাম না। আগাছায় ভরপুর কবরস্থানে এদিক ওদিক ঘুরে খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম মীরজাফরের কবরটি। গম্বুজাকৃতি কয়েকটি কবর স্থাপত্যের কারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার নজর কাড়বে।
নাম না লেখা থাকলেও খুব সম্ভবত এই ঘেরাটোপের ভিতরের কবরটিই তাঁর।
একটু ইতি উতি ঘুরে চলে এলাম টাঙ্গাসফরের শেষ দ্রষ্টব্যঃ আজিমুন্নেসা বেগমের কবরস্থনে।। জনশ্রুতি রয়েছে, কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় নবাবি হাকিম দৈনিক একটি মানবশিশুর কলিজা দিয়ে ওষুধ তৈরি করে দিতেন। অসুখ সেরে গেলেও আজিমুন্নেসা বেগম মানবশিশুর কলিজা ভক্ষণের নেশাগ্রস্ত হয়ে গোপনে নিয়মিত ভাবে শিশুদের কলিজা খেতে থাকেন। এই ঘটনা মুর্শিদকুলি খাঁ জানতে পেরে তাকে জীবন্ত কবর দেওয়ার নির্দেশ দেন। একতলা পাকা মঞ্চের উপর মসজিদে ওঠার সিড়ির নিচে আজিমুন্নেসার সমাধি। মঞ্চের উপরিভাগে বাম পাশে একটা দেয়াল ছাড়া মসজিদের আর কোন চিহ্নই বর্তমানে নেই। কথিত আছে সাধারণ মানুষের পদধূলিতে তার শিশু হত্যার পাপ মোচনের জন্য মসজিদে উঠার সিড়ির নিচে তাকে জীবন্ত সমাহিত করা হয়।
এরপর লাঞ্চ করতে এলাম হোটেল সাগ্নিকে। অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুব্যবস্থাসম্পন্ন এই হোটেলে অনেকে রাত্রিবাসও করেন। তবে আমরা ওনাদের মাটন ও বিরিয়ানির সুখ্যাতি শুনেই এখানে আসি। ভাতের সাথে দুর্দান্ত চিকেন ও মাটন খেয়ে ফিরে চললাম।

দ্বিতীয় ভাগে হাজারদুয়ারী প্যালেস ও তৎ সংলগ্ন বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান দেখতে।
Wayfarers' FoodPrint সাথে ঘোরাঘুরির এই পর্ব এখানেই শেষ করলাম। ফিরে আসবো আগামী পর্বে
বাকি রয়ে যাওয়া মুর্শিদাবাদ এর ঘোরাঘুরির দেখতে এখনই সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। ভিডিও টি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেননা।
https://yt.openinapp.co/oshp2

14/04/2024
মুর্শিদাবাদে খাওয়া দাওয়াপর্ব -১ কাশিমবাজার রাজবাড়ীআমাদের যারা চেনেন তারা জানেন যে আমরা ঘুরতে ঘুরতে স্হানীয় খাবারের খোঁজ ...
02/04/2024

মুর্শিদাবাদে খাওয়া দাওয়া

পর্ব -১ কাশিমবাজার রাজবাড়ী

আমাদের যারা চেনেন তারা জানেন যে আমরা ঘুরতে ঘুরতে স্হানীয় খাবারের খোঁজ করে থাকি, সেই খোঁজ থেকেই সন্ধান পেলাম মুর্শিদাবাদী রাজকীয় খাওয়াদাওয়ার।

আমরা রোড ট্রিপে মুর্শিদাবাদ যাবার আগের দিন ফোন করে কাশিমবাজার রাজবাড়ীর রেস্টুরেন্টে অর্ডার করে দিয়েছিলাম, কি কি খাবো সেই লিস্ট।
হ্যাঁ এখানে আগে থেকে অর্ডার করা প্রয়োজন, নাহলে অর্ডার দিয়ে ঘন্টা দেড় অপেক্ষা করতে হবে।
যদিও তাতেও সমস্যা নেই, অর্ডার দিয়ে আরামসে এই রাজবাড়ি ঘুরে নেওয়া যাবে। এই ঘোরারঘুরির বর্ণনা আগেই দিয়েছি, চাইলে পড়তে পারেন।

আমরা একটু অপেক্ষা করতেই খাবার এসে হাজির। ততক্ষণে ছবি তুলতে তুলতে সুন্দর রেস্তোরাঁর এদিক ওদিক দেখে নিলাম।
আমরা অর্ডার করেছিলাম:
Golda Chingri
Mutton Nawabi Korma
Cossimbazar Chicken
Rui Kalia
Navaratna Veg
Sobji Dal
Jhuri Aloo Vaja
Mango Chutney

মাছ, মাংস, গলদা চিংড়ি হোক বা মিক্সড ভেজ, চাটনি সব খাবারের স্বাদই দুর্দান্ত। অবশ্যই দামি, আমাদের ৫ জনের প্রায় ₹৩০০০ পড়েছে।

এখানে থাকার ব্যবস্থা ও আছে। সম্ভবত ₹৬০০০ টাকা থেকে ভাড়া শুরু। বিশেষ করে পুজো বা রথের সময় চাইলে এখানে এক- দুরাত থাকতেই পারেন। কারণ তাহলে রাজবাড়ীর একজন হয়ে পুজোর সাক্ষী হতে পারেন। এছাড়াও বিশেষ ভোগ পাওয়া যায়।
আমরা যদিও ছিলাম বহরমপুর ট্যুরিস্ট লজে, তাই এখানে থাকিনি।

কাশিমবাজার সহ পুরো বহরমপুর শহরের রাস্তা খুবই সরু। তাই এখানে নিজের গাড়ি নিয়ে খেতে আসায় একটা সুবিধা হয়েছিল। সেটা পার্কিং, আমরা রেস্টুরেন্টের পার্কিংয়ে গাড়ি রেখেই ঘুরেও নিলাম।

মুর্শিদাবাদ ভালো করে ঘুরতে চাইলে ও আরো অনেক খাবার ও বিশেষ খোঁজ পেতে ভিডিও লিংক দিলাম চাইলে দেখতে পারেন।
Video Link👇
https://yt.openinapp.co/xb521

আজ রোববার, তাই আমারও তো ইচ্ছে হয় একটু ঘুরতে, সময় হচ্ছেনা তাই একটু এভাবেই ব্রেকফাস্ট করলাম।ডিম তড়কা, আলুর পরোটা আর চা    ...
18/02/2024

আজ রোববার, তাই আমারও তো ইচ্ছে হয় একটু ঘুরতে, সময় হচ্ছেনা তাই একটু এভাবেই ব্রেকফাস্ট করলাম।
ডিম তড়কা, আলুর পরোটা আর চা

শীতের মরশুমে কলকাতা থেকে মাত্র একশো কিলোমিটার দূরে টেরাকোটা মন্দির, পুরোনো রাজবাড়ী, ঠাকুর দালান, দেউল ও দামোদর নদ দেখে দ...
07/01/2024

শীতের মরশুমে কলকাতা থেকে মাত্র একশো কিলোমিটার দূরে টেরাকোটা মন্দির, পুরোনো রাজবাড়ী, ঠাকুর দালান, দেউল ও দামোদর নদ দেখে দুর্দান্ত বাঙালি খাবার খেয়ে একদিনেই ঘুরে আসবেন চলুন Wayfarers’ foodprint এর সাথে গুরাপ - দশঘরা - সাত দেউল

https://yt.openinapp.link/42hm8

24শে ডিসেম্বর ক্রিসমাস ইভের আমেজে সকাল 8টা নাগাদ বেড়িয়ে পড়লাম কলকাতা থেকে 80কিলোমিটার দূরে গুরাপের উদ্যেশ্যে। (চাইলে হাওড়া বর্ধমান কর্ড লোকাল ধরে গুরাপ থেকে অটো বা গাড়ি ভাড়া করে ঘুরতে পারেন।) তবে আমরা তো রোড ট্রিপ ভালোবাসি তাই কলকাতা থেকে গাড়িতেই বেড়িয়ে পড়লাম। সিক্স লেনের কাজ চলায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে ডাইভার্সনে ভরা হলেও রাস্তা বেশ মসৃন আর গড় গতিবেগ ও ভালোই ছিলো। ঘন্টা দুয়েক সময়ে পৌঁছে গেলাম গুরাপ। আমাদের ব্রেকফাস্ট স্টপ হিন্দুস্তান ধাবা। এখানের কচুরি আমাদের বড্ড প্রিয়। এখন শীতকালে পেলাম গরম গরম করাইশুঁটির কচুরি সাথে কাজু কিসমিস দেওয়া তরকারি ও মসলা ধোসা খেয়ে হাইওয়ে ছেড়ে গুরাপ স্টেশনের দিকে ঢুকলাম। প্রথম গন্তব্য ছিলো নন্দদুলাল জিউ মন্দির।
মূল মন্দিরের পাঁচিলের বাইরে একটি রথ ও আরেকটি ছোট্ট মন্দিরও রয়েছে। মন্দিরটি ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান রাজের অমাত্য রামদেব নাগ প্রতিষ্ঠা করেন। আটচালা টেরাকোটার এই মন্দিরটি পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম মন্দিরগুলির অন্যতম। ২৭৫ বছরের পুরনো এই মন্দিরের অপূর্ব সুন্দর কারুকাজ কিছুটা নষ্ট হয়ে গেলেও ভালোমতো সংরক্ষন করায় তার বেশিরভাগই মন্দির দেওয়ালে অবশিষ্ট রয়েছে। খিলানের দুপাশে বারোটি করে মোট চব্বিশটি শিবমন্দিরের টেরাকোটার কাজ রয়েছে, এছাড়াও রয়েছে রাজা, নর্তকী ও দেবী সরস্বতী সহ প্রচুর দেবদেবী, সাপ, পাখিদের সূক্ষ্ম কারুকাজ।

মূল মন্দিরে রাধা কৃষ্ণের নিয়মিত পূজা হয়, সামনেই রয়েছে নাট মন্দির, রবিবার সকালে সেখানে আঁকার ক্লাস চলছিল।
এছাড়াও পাশেই রয়েছে আরো শিব মন্দির, সেখানে খুবই সামান্য নিদর্শন রয়েছে। গুরাপের এই মন্দিরের অদূরেই আছে গনিতজ্ঞ কেশব চন্দ্র নাগের বাড়ি, সেটাও চাইলে দেখতে পারেন, তবে আমরা এগিয়ে গেলাম দশঘরা ঘুরতে।

সুন্দর তারকেশ্বর গুরাপ রোড ধরে দশঘরায় প্রথমেই এলাম বিশ্বাসদের জমিদার বাড়ি। উড়িষ্যার জগমোহন বিশ্বাস, তাঁর হাত ধরেই হুগলী জেলার দশঘড়ায় জমিদারবাড়ি বা বিশ্বাস বাড়ি গড়ে ওঠে।
দশঘড়া বিশ্বাস বাড়ির দেবীতে দুর্গাপূজায় উড়িষ্যার জয়দুর্গা মূর্তির আদলে নির্মিত চতুর্ভূজা
দুর্গা মায়ের পুজো হয়, যার চার হাতে থাকে তরোয়াল, ঢাল, সাপ ও খোঁচ। মায়ের দেবী মূর্তির কাছে থাকে কার্তিক-গণেশ এবং লক্ষ্মী-সরস্বতী থাকে একটু দূরে। বিশ্বাস বাড়িতে মহালয়ার পরের দিন দেবীর বোধন হয় এবং ষষ্ঠীর দিন থেকে শুরু হয় মূর্তিপুজা। সপ্তমী অষ্টমী সন্ধিক্ষণে হয় পাঠা বলি আর এরসঙ্গে ছাঁচি কুমড়ো, লেবু, আখ বলি দেওয়ার প্রথা এই বাড়িতে রয়েছে।
দেবী মা শাক্ত মতে এখানে পূজিত হন।
এই বাড়িতে পুজোর সময় ছাড়া ঢোকা যায়না।
তবে পিছনের সরু রাস্তা দিয়ে বিশ্বাস বাড়ির কুলদেবতা গোপীনাথ জিউর এবং রাধারানীর মন্দির দেখা যায়। যেখানে টেরাকোটার কাজ দেখতে পাওয়া যায় এবং প্রতিবছর দোল পূর্ণিমার দিন রাধাকৃষ্ণ এখানে পূজিত হন। দোল মঞ্চের পাশেই রয়েছে রাসমঞ্চ যেখানে কার্তিক পূর্ণিমায় রাধাকৃষ্ণের পুজো করা হয়।

যে কারণে এই বিশ্বাস পরিবারের পুজো এত জনপ্রিয় সেই বলির বিশেষত্ব হল বলির সময় তাঁদের কুলদেবতা গোপীনাথ জিউর ও রাধারানীকে কানে তুলো দিয়ে শয়নে রাখা হয়। কারণ এই বলির আর্তনাদ নাকি বিশ্বাস পরিবারের কুলদেবতা সহ্যকরতে পারেন না। কাছারি বাড়ির পাশে রয়েছে আটচালা শিবমন্দির। প্রতিটি মন্দিরের গায়ে অসম্ভব সুন্দর টেরাকোটার কাজ দেখতে পাওয়া যায়।

রায়বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা শ্রী বিপিন কৃষ্ণ রায়। বিপিনবাবু কর্মসূত্রে কলকাতা বন্দরে যুক্ত ছিলেন। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে প্রভূত ধন সম্পত্তির মালিক হন এবং এই বিশাল বাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন। রায়পাড়া ঢুকতেই চোখে পড়বে বিশাল তোরণদ্বার।
দ্বারের বাম দিকে একটি অষ্টভুজাকৃতি ঘড়িঘর। ওপরে বিদেশি মূর্তি সহ চারদিকে চারটি বিশাল লোহার ঘড়ি এবং বাকি চারটি দেওয়ালে সেই আমলের চারটি খড়খড়ি দেওয়া জানালা। কোলকাতার ঘড়ি নির্মাতা J. M Dass এই বিশাল ঘড়িটির নির্মাণ করেন, যার ঢং ঢং আওয়াজ কিছু বছর আগেও প্রায় 4-5 কিলোমিটার দূরথেকেও শোনা যেত। তোরণদ্বার পেরিয়ে সরু পথ দিয়ে একটু এগিয়েই দেখবেন রাস মঞ্চ ও চাতাল। এর পরেই এক চমৎকার দ্বিতল বাড়ি। বাড়ির ভিতরেই দুর্গামন্দির। সামনে প্রকাণ্ড ঝিল। এই বাড়িতে হয়েছে একাধিক বাংলা সিনেমার শুটিং। তারমধ্যে অন্যতম হলো হীরের আংটি, বাড়িওয়ালী ও বাঞ্ছারামের বাগান। তবে এখানেও পুজোর সময় ছাড়া ভিতরে ঢোকা যায়না। তাই বাইরে থেকেই দেখে ফিরে চললাম।

এই পাশেই আছে হুগলীর ম্যাজিস্ট্রেট বার্ডলি বার্টের বাংলো, ভগ্নপ্রায় বাড়ির ফলকে প্রতিষ্ঠাতা বিপিন কৃষ্ণ রায়ের নাম লেখা।, সামনে একটা পুকুর ও আছে, তবে এখন সম্ভবত স্থানীয় লোকজন থাকেন এখানে।

দশঘরা থেকে সুন্দর রাস্তা দিয়ে এলাম চকদিঘী জমিদার বাড়ি। সিংহ রায় বাড়ির ইতিহাস আমরা সেভাবে জানতে পারলে ও সুদৃশ্য বাড়ি আর সামনের তারকার ন্যায় ফোয়ারা দেখে তাক লেগে যায়। যদিও এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাব স্পষ্ট। ব্রিটিশ বড়লাট লর্ড কার্জন ও অনেকবার এসেছিলেন এখানে, সিংহরায় পরিবারের সাথে পরিচয় ঘনিষ্ঠ থাকার জন্য।
এই অংশে পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়, সিংহ রয় পরিবারের সাথে লাইব্রেরী ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, তবে এখন সবই নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়ির পিছনে দুর্গা দালান ও আছে, এখানে এখনো পুজো হয়। শুনেছি বাইরে এরকম হলেও, ভিতরে বেলজিয়াম কাঁচে সাজানো এই বাড়িতে এখনো নিয়মিত সিনেমা ও সিরিয়ালের শুটিং হয়। এখানে সত্যজিৎ রায়ের ঘরে বাইরের শ্যুটিং হয়েছিল, সম্প্রতি দেবের গোলন্দাজ সহ অনেক শুটিং হয়েছে। এর পরে এগিয়ে গেলাম জামালপুরের দিকে। পাশ দিয়েই বয়ে গেছে দামোদর নদ, তাই আমরা গাড়ি ঘুরিয়ে গ্রামের মধ্যে দিয়ে এলাম নদের বাঁধের ওপরে, এই গাছের ছায়াতে আলো আঁধারীর নদের রূপ অনেকদিন মনে থাকবে। নদের বুকে প্রচুর পাখি ভেসে বেড়াচ্ছে। কিছু মাছ ধরার নৌকা ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাঁশের সাঁকো দিয়ে মানুষ পারাপার করছে। এই জায়গা আমাদের এতই পছন্দ হল, যে অনেকটা সময় এখানেই বসে থাকলাম। চাইলে সূর্যাস্তের সময় এখানে আসতে পারেন, বা একটু এগিয়ে বেগর মুখে যেতে পারেন। তবে আমরা ফিরে চললাম হাইওয়ে, এবার দেখবো সাত দেউল।

NH2 পেরিয়ে এলাম আঝাপুরের সাত দেউল। কথিত প্রায় ১০০০বছর আগে পাল যুগের রাজা শালিবাহন এই অঞ্চলে সাতটি জৈন মন্দির বা দেউল নির্মাণ করেন। দেউল শব্দের অর্থ দেবালয়, ৬০০-১০০০ খ্রিস্টাব্দের মাঝে বাংলার পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বর্ধমান এলাকায় জৈন ধর্মে অপরিসীম প্রভাবে এই দেউলগুলো গড়ে ওঠে। যদিও তার বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। উড়িষ্যার রেখা দেউল স্থাপত্য শৈলীর অনুপ্রেরণায় প্রাচীন বাংলার জৈন কৃষ্টির এই অমূল্য সম্পদ আজ বয়সের ভারে জরাজীর্ণ।

Asi সংরক্ষিত এই মন্দিরটির ভিত পঞ্চ রত্ন আলেখ্যতে তৈরি, এর বিশেষত্ব হলো চারদিকে বিশাল বাঁকানো সুউচ্চ টাওয়ার ও মাঝের প্রবেশদ্বারে ধনুকাকৃতি গেট। প্রবেশদ্বারের উপরে বাইরের দেওয়ালে সুন্দর কারুকাজ করা চৈতন্য জানলা। যদিও এখন এই ভিতরে কোনো বিগ্রহ নেই।
আমরা পড়ন্ত বিকেলে ছবি তুলে আজকের ঘোরাঘুরি শেষ করে এবার চললাম লাঞ্চ করতে। এই রাস্তায় বেশ কয়েকটি ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা তার অনেকগুলোতেই খেয়েছি। আজকে যাবো নতুন একটা জায়গায়, হাইওয়ের পাশেই ফুড এক্সপ্রেসের সর্ষে পোস্ততে। অনেকদিন ধরে নাম শুনেই আসা সুন্দর সাজানো এই রেস্টুরেন্টে। মেনু কার্ডে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে অর্ডার দিলাম।এখানে নানারকমের থালি ছাড়াও ala carte মেনু আছে। অনেক রকমের মাছ যেমন ইলিশ, গলদা চিংড়ি, পাবদা থেকে আমরা ভেটকি পাতুরি আর পমফ্রেট সর্ষে নিলাম আর ভেজ মিল। খাবার আসার আগে গন্ধরাজ ঘোল খেয়ে ঘোরাঘুরির ক্লান্তি কেটে গেল।সেদিন ভেজ মিলে ছিল বাসমতি চালের সুন্দর ভাত, ঝুরঝুরে আলুভাজা, গন্ধরাজ লেবু, স্যুক্ত, মুগের ডাল, আলু পোস্ত, চাটনি, পাঁপড় ও স্যালাড। এ বলে আমায় দেখে ও বলে আমায়, যেমন ভালো সুক্ত আরো ভালো ডাল আর আলু পোস্ত। এর সাথে এলো প্রমাণ আকারের মাছ। মশলাদার পাতুরি মুখে লেগে থাকবে, খুবই দারুন স্বাদ ও গুনমান, পমফ্রেট তাও কোনো অংশে কম নয় একদম তাজা মাছের রান্নাটাও জম্পেশ হয়েছে। হাইওয়েতে এত ভালো বাঙালি খাবার বিরল।
তারপরে ইচ্ছে ছিল আরো কিছু ঘুরতে যাওয়ার তবে আলো পরে আসায় ফিরে এলাম কলকাতায়।

আবার নাহয় একদিনের ট্রিপের খোঁজ নিয়ে wayfarers ফুডপ্রিন্ট ফিরে আসবে। পাশে থাকবেন আর ভালো লাগলে সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না।
https://yt.openinapp.link/42hm8

অচেনা সমুদ্র সৈকত দাগারা থেকে ঘুরে বাড়ি ফেরার সময় ঘুরতে গিয়েছিলাম মোঘলমারি ও কুরুমবেড়া ফোর্ট দেখতে।https://yt.openinapp....
08/12/2023

অচেনা সমুদ্র সৈকত দাগারা থেকে ঘুরে বাড়ি ফেরার সময় ঘুরতে গিয়েছিলাম মোঘলমারি ও কুরুমবেড়া ফোর্ট দেখতে।
https://yt.openinapp.co/qdck7

আমরা অনেকেই কাছে পিঠে এক-দুদিনে ঘুরতে যাওয়া যায় এমন জায়গা খুঁজি, তাদের জন্য আদর্শ এই জায়গা।

দুদিন নিরিবিলিতে ঝাউবন ঘেরা সমুদ্র দেখে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে ফেরার পথে একদম হাইওয়ে থেকে ১৫০মিটার গিয়েই মোঘলমারীর দেখা পেলাম। সেই পর্বের লিংক রইলো https://yt.openinapp.co/dri73

দাগাড়া থেকে বালিয়াপাল-কামারদা হয়ে জ্বলশ্বরে ওঠার রাস্তাটি বেশ সুন্দর, মসৃণ ও চওড়া। হাইওয়ে উঠে ডানদিক ঘুরে আমরা যাবো বেলদার কাছে মগোলমারী ও কুরুমবেড়া ফোর্ট দেখতে। চাইলে ট্রেনে করে হাওড়া থেকে বেলদা বা নেকুরসেনি নেমে একদিনেই ঘুরে আসা যায় এই দুটি জায়গা। কিংবা একদিনে ঘণ্টা চারেক ড্রাইভ করে ১৭৬ কিলোমিটার দূরের এই জায়গা দুটি ঘুরে আসতে পারেন।
প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি এই রাস্তায় টোল পরে ৩৮০ টাকা।
টোল প্লাজায় একদল দোলের আবির মাখা লোক দেখে প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেছিলাম। সামনে যেতেই বুঝলাম রং মাখানোর আশঙ্কা মিথ্যে, ওনারা আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আমাদের গ্রিটিংস কার্ড, চকোলেট ও ফুল উপহার দিলেন। ওনাদের এই সৌহার্দ্যে বেশ ভালো লাগলো।
মসৃন হাইওয়ে ছেড়ে সরু গ্রামের রাস্তা ধরে পৌঁছাতে হয় মগোলমারী।
এখানে আলাদা কোনো পার্কিং নেই, রাস্তার পাশেই কোনোরকমে পার্ক করে চলে এলাম। এখনো অব্দি এখানে টিকিট লাগেনা।

মোগোলমারীর এই প্রাচীন স্থাপত্য টি গুপ্ত পরবর্তী ষষ্ঠ থেকে সপ্তম যুগে নির্মিত বলে অনুমান করা হয়। ২০০২-২০০৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অশোক দত্তের নেতৃত্বে প্রথম খনন কার্যে ঐতিহাসিক মগোলমারীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরে ২০১৩ সালে state archeological department এর সহায়তায় উনি পুনরায় খননকার্য চালিয়ে প্রচুর মূল্যবান ভাস্কর্য ও মূর্তির সন্ধান পান।

চোখের সামনে এইরকম জলজ্যান্ত ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখে আমাদের শিহরিত লাগছিলো।

তাম্রলিপ্তের এই বৌদ্ধ বিহারের উপস্থিতি নিয়ে ভূপর্যটক হিউয়েন সাং এর লেখায় তার বিবরণ পাওয়া যায়।
এই মোগলমারী নামটি সম্ভবত ১৬শতকে এই অঞ্চলে স্থানীয় রাজার সাথে মোগল সেনার যুদ্ধের ফলে মোঘল সেনার মৃত্যুর কারণে নামকরণ হয়।

এখানে খনন করে বৌদ্ধ বিহার, বৌদ্ধ স্তুপ, রাজা সমাচার দেবের ধাতুর মুদ্রা, সোনার লকেট ও মুকুট, বুদ্ধ ও বৌদ্ধ দেবদেবীর কালো পাথর, স্ট্যাকো ও ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য। অপূর্ব কারুকার্য খোচিত দেওয়ালের অলংকরণ, সেই সময়ের ব্রাহ্মী অক্ষরযুক্ত শিল ও সীলমোহর আবিষ্কৃত হয়েছে। ইতিহাসবিদ দের মতে উত্তরপূর্ব ভারতে অবস্থিত বৃহৎ ও প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্য গুলির মধ্যে এটি অন্যতম।

কাঁচ ও কাঠের পাটাতনে ঘেরা এই অংশের নাম শশী সেনের ঢিবি, সেখানে বেশ কিছু প্রাচীন মূর্তি আছে। যদিও এখনো এই খনন কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে।

এখানে একটি ছোট্ট ঘরের মধ্যে বেশ কিছু ছবি, ভাঙা বাসন, ইট, পাথর রাখা আছে। এছাড়াও অশোক দত্তের একটি ছবিও রাখা আছে।

এখানের ঘোরাঘুরি শেষ করে আবার হাইওয়ে ধরে চললাম, কুরুমবেড়া ফোর্ট দেখতে। কিছু দূর গিয়ে হাইওয়ে ছেড়ে অনেকটা ভিতরে ঢুকতে হলো।

কুরুমবেড়া এমন একটি প্রাচীন সেনানিবাস যেখানে হিন্দু ও ইসলামিক স্থাপত্যের চিহ্ন এখনো বর্তমান। কালের নিয়মে অনেক কিছুই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। মোগল আমলে কুরুমবেড়া দুর্গ থেকে বানিজ্যকেন্দ্রকে নিরাপত্তা দেওয়া হতো।

স্বাধীনতা পরবর্তী কালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ কুরুমবেড়া দুর্গটিকে জাতীয় সংরক্ষিত সৌধের মর্যাদা প্রদান করে। বর্তমানে আয়তাকার সেনানিবাসের উত্তর দিকের দরজাটি খোলা রাখা হয়েছে পর্যটকদের প্রবেশের জন্য।

‘কুরুম’ শব্দের অর্থ কচ্ছপের খোলের ন্যায় দুর্ভেদ্য শক্তিশালী পাথরের প্রাচীর। অর্থাৎ পাথরদ্বারা ঘেরা স্থানকে বলা হয় ‘কুরুমবেড়া’। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ওড়িশার রাজা কপিলেন্দ্র দেব (১৪৩৪-১৪৬৭) এই সেনানিবাসটি নির্মাণ করেন। উত্তর ভারত থেকে আগত মোগল আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এই আশ্রয়স্থলটি নির্মাণ করা হয়েছিল। স্থানীয় মাঁকড় পাথর দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

কুরুমবেড়ার মধ্যবর্তী আয়তাকার ফাঁকা জমির পূর্বভাগে একটি শিবমন্দির নির্মাণ করেছিলেন রাজা কপিলেন্দ্র দেব। কুরুমবেড়া এলাকার মধ্যে থাকা শিবের নাম ছিল গগনেশ্বর। মোগল আক্রমনের সময় মন্দিরের পূজারীরা বিগ্রহটিকে কুঁয়োর মধ্যে ফেলে চলে যান। পরবর্তী কালে গ্রামের অধিবাসীরা বিগ্রহটিকে উদ্ধার করে গ্রামের ভিতরে স্থাপন করেন। বিগ্রহের নামেই গ্রামের নাম গগনেশ্বর।
১৬৯১ খ্রীষ্টাব্দে মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে জনৈক সেনাপতি তহির খাঁ কুরুমবেড়া দখল করেন। বিজয়ী সেনাপতি নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য আশ্রয়স্থলের মধ্যে থাকা মন্দিরটি ধ্বংস করেন। বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরটির ভিত্ অক্ষত রয়েছে, যা দেখে মন্দিরটি আয়তন সম্পর্কে অনুমান করা যায়। সেনানিবাসটির মধ্যবর্তী প্রান্তরের পশ্চিমাংশে মন্দিরের ভেঙে ফেলা পাথর দিয়ে ঠিক মন্দিরের বিপরীত দিকে একটি সুদৃশ্য মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মিত মসজিদটির তিনটি গম্বুজ। যা ইসলামিক স্থাপত্যের ক্ষেত্রে একটি বৈচিত্রপূর্ণ উদাহরণ। সেনাপতি তহির খাঁ এই আশ্রয়স্থল কে দুর্গে পরিণত করেন। মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর মারাঠা দস্যুরা কুরুমবেড়া দখল করে নেয়।

একে চড়া রোদ্দুর তার উপরে খুব ক্ষিদে পাচ্ছিল তাই বেরিয়ে পড়লাম। খেতে এলাম বেলদার কাছেই হোটেল অন্নপূর্ণা তে, দারুন সেফ পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে ঢুকলাম ওনাদের এসি ডাইনিং হলে। ছিমছাম অন্দরসজ্জা, প্রচুর মানুষের ভিড়, বেশিরভাগ লোকজন দুপুরে মিল খাচ্ছেন। আমরাও তাই ভেজ মিল নিলাম, ভাত, ডাল, আলু ভাজা, আলু সেদ্দ, শুক্তো, চাটনি, ফুলকপি আলুর তরকারি, স্যালাড পাঁপড় দইসাথে কড়াই চিকেন। ফাটাফাটি লাঞ্চ করে কোলকাতায় ফিরে এলাম। দারুন ঘুরলাম দুদিনের ছোট্ট ট্রিপে। আপনারাও ঘুরে এসে জানাবেন কেমন লাগলো এই অফবিট ট্রিপ Wayfarers' FoodPrint এর সাথে।

https://yt.openinapp.co/qdck7

Address

Kolkata

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Wayfarers' FoodPrint posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category