21/08/2025
নিজস্ব সংবাদদাতা, রামপুরহাট:
মাড়গ্রামে দুই তৃণমূল কর্মীকে বোমা মেরে খুনের ঘটনায় ১২ জন সিপিএম ও কংগ্রেস নেতাকর্মীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন রামপুরহাট আদালতের বিচারক।
বীরভূমের মাড়গ্রামে দুই তৃণমূল কর্মী নিউটন শেখ ও লাল্টু শেখকে বোমা মেরে খুন করার ঘটনায় রামপুরহাট দ্রুত নিষ্পত্তি (ফাস্ট ট্র্যাক) আদালত ১২ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। বিচারক সন্দীপ কুন্ডু বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন। দোষীদের প্রত্যেককে ২ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে, যা অনাদায়ে আরও ছয় মাস জেল খাটতে হবে।
দোষী সাব্যস্তদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস নেতা সুজাউদ্দিন আহমেদ এবং তাঁর দুই ছেলে লাকি আহমেদ ও বাপি আহমেদ। এছাড়া গব্বর শেখ, আইনাল শেখ, আকবর শেখ, ছোট্ট মাল, আনারুল শেখ, জহির শেখ, হীরক শেখ, সফিকুল শেখ ও ফটিক শেখও যাবজ্জীবন দণ্ড পেয়েছেন।
২০২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মাড়গ্রামের ধুলফেলা মোড়ের কাছে বোমা মেরে খুন করা হয়েছিল নিউটন ও লাল্টুকে। ঘটনাস্থলেই নিউটনের মৃত্যু হয়, আর গুরুতর জখম লাল্টু মারা যান পরদিন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। নিহত লাল্টু মাড়গ্রাম ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রোশনে আরা খাতুনের দেওর, অর্থাৎ মহুবুল আলি ওরফে ভুট্টুর ভাই। পুলিশ সূত্রে অভিযোগ, ঘটনার দিন ভুট্টুর অনুগামীদের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা সুজাউদ্দিনের অনুগামীদের কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এরপর মীমাংসার জন্য ভুট্টুর অনুগামী নিউটন ও ভুট্টুর ভাই লাল্টু আইনালের বাড়ির সামনে গেলে তাঁদের লক্ষ্য করে বোমা মারা হয়। সেখানেই প্রাণ হারান নিউটন, আর লাল্টুর মৃত্যু হয় হাসপাতালে।মামলার তদন্তে পুলিশ ডিএনএ রিপোর্ট, মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং জুতোর ছাপসহ একাধিক ফরেনসিক প্রমাণ হাতে পায়। সেইসব তথ্যের ভিত্তিতেই আদালতে অভিযুক্তদের দোষ প্রমাণিত হয়। প্রথমে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হলেও পরে আরও পাঁচজনের নাম যুক্ত হয়। ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ৮ জন এখনও ফেরার, যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও হুলিয়া জারি করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর আদালতে ভিড় জমে যায়। ভুট্টুর অনুগামীরা রায়ে খুশি প্রকাশ করেন, অন্যদিকে দোষীদের পরিবারের লোকজনকে কাঁদতে দেখা যায়। আদালত থেকে বেরোতে গিয়েও চোখের জল আটকাতে পারেননি সুজাউদ্দিন। নিহত লাল্টুর ভাই ভুট্টু শেখ বলেন, “আমাদের শান্ত এলাকা যেভাবে অশান্ত করা হয়েছিল, তার বিচার হয়েছে। তবে ফাঁসি হলে আরও সন্তুষ্ট হতাম।”
মামলার বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটার বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই মামলা বীরভূমের রাজনীতিতে অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিল। খুন, বিস্ফোরক রাখা ও বিস্ফোরক দিয়ে হত্যা এবং ষড়যন্ত্র চারটি ধরার মামলা রুজু করেছিল পুলিশ" ২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও পর্যাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতেই দোষীরা সাজা পেয়েছে। "পুলিশ জানিয়েছে, এখনও যাঁরা ফেরার রয়েছেন তাঁদের গ্রেফতারে তৎপরতা চলছে।
ছবি হাবিব তানভির