04/11/2025
তাঁকে নিয়ে বাঙালির চায়ের কাপে আজও তুফান ওঠে... তাঁর বর্ণময় জীবন, উত্থান, সোশ্যাল স্ক্যান্ডাল, মৃত্যু সব আজকেও সিনেমাপ্রেমী বাঙালির আলোচনার কেন্দ্রে, তাঁকে নিয়ে আলোচনা করতেও উৎসাহী অনেকেই, যা লেখিকা প্রমান পেয়েছেন বহুবার গত তিন বছরে বইটি নিয়ে কাজ করার সময়। অথচ অদ্ভুত ভাবে এরা কেউ চাননা তাঁদের নাম প্রকাশ্যে আসুক।
আমাদের মনে বেশ কিছু প্রশ্ন জেগেছিল....যেগুলোকে ধরে একটা অন্য আঙ্গিকে এগোনো হয়েছে এই সুবিশাল উপন্যাসে....তার কিছুটা, অল্প কিছুটা তুলে ধরা হল নিচে...কিন্তু এটা শুধুই হিমশৈলের চূড়া....
(নিচে উল্লিখিত সমস্ত ঘটনা এবং চরিত্র কাল্পনিক এবং বাস্তবের সাথে কোনো মিল থাকলে তা অনিচ্ছাকৃত)
মর্গের হিমশীতল আবহে সাদা চাদরে মুখ ঢেকে শুয়ে আছে। যে মুখ গতকালও কোনও যুবকের বুকে ঝড় তুলেছে, সে মুখের দিকে আর তাকানো যাচ্ছে না। আগুন নির্মমভাবে সে মুখের সব লালিত্য সব সুষমা কেড়ে নিয়েছে।
ফরেনসিকের ছাত্রটির চোখে ঘনিয়েছে সন্দেহের মেঘ। যদিও মুখের অধিকাংশই পুড়ে গিয়েছে, তবুও বাম চোখের কোনায়, পিঠে, যেখানে আগুন অপেক্ষাকৃত কম ছোবল বসিয়েছে, সেখানে গভীর ক্ষত। তা ছাড়াও শরীরে এমন কিছু অন্তর্লীন আঘাত রয়েছে, যার প্রমাণ আগুনও মুছে দিতে পারেনি। তা ছাড়া…
“স্যার?” ছাত্রটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের দিকে তাকাল।
“ক্ষতচিহ্নগুলির কথা বলবে তো?” প্রৌঢ় মোটা ফ্রেমের চমশাটা মুছে নিয়ে আবারও চোখে পরে নেন।
“সন্দেহজনক কি একেবারেই নয় স্যার? তা ছাড়া মুখের পোড়াটা তো…”
“অ্যাসিড বার্নের চিহ্ন আছে। দেখেছি। তা ছাড়া লেদারি স্টমাক। তবে ক্ষতচিহ্নগুলোর মধ্যে কিছু আঘাত পুরোনো। অ্যান্টিমর্টেম আঘাত। পিঠের দিকে সিগারেটের ছ্যাঁকার চিহ্ন… না, সিগারেট না, সম্ভবত সিগার…”
“অ্যাসিড তো স্যার…” ছাত্রটি মাথা নামিয়ে বলে, নায়িকা কি তবে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার?”
“নায়িকা তো সেলুলয়েডের পর্দায়,সব্যসাচী। রূপালি পর্দার বাইরে হয়তো সে নিতান্তই স্বামীর আজ্ঞাবহ স্ত্রী। আর এক অসহায় নারী।”
“পুলিশের কাছে যাবেন না?”
“কোনও লাভ নেই। মৃত্যুর খবরটা অবধি যারা বাইরে জানাতে দেয়নি, তাদের কাছে গিয়ে কী বলব? ওর বাবা হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে প্রেসকে বলেছেন, মেয়ে নাকি আকণ্ঠ মদ খেয়েছিল। সেই অবস্থায় দুধ গরম করতে গিয়ে গায়ে আগুন ধরে গেছে। তুমি তো অটোপ্সির সময় ছিলে সব্যসাচী। তোমার মনে হয়েছে মহুয়া ইনটক্সিকেটেড?”
“স্যার অটোপ্সি রিপোর্টটা…”
“জানি, ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। কারণ হিসেব মতো মহুয়া এখনও জীবিত। সুতরাং এই রিপোর্ট ভিত্তিহীন। তা ছাড়া… আমি জানি না… কিন্তু বারবার আমার ইনটিউশন বলছে এই ঘটনায় মহুয়ার বাড়ির লোকও জড়িত।”
“এটা কেন বলছেন স্যার?”
“একটা মেয়ে পঁচানব্বই শতাংশ পুড়ে গেল অথচ বাড়ির লোকের ঘুম ভাঙল না? যদি বাড়ির লোকের ঘুম ভাঙত সব্যসাচী, তবে তো তাদের মহুয়াকে বাঁচানোর চেষ্টা করা উচিত ছিল। সেটাই তো স্বাভাবিক। আর গায়ে আগুন লাগা একটা মানুষকে বাঁচাতে গেলে কারুরই অক্ষত থাকার কথা নয়। ওর বাবা বা স্বামীর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন দেখলে?”
“কিন্তু স্যার, গায়ে আগুন লাগা মানুষ… সে যে অসম্ভব যন্ত্রণার স্যার। মানুষটা চিৎকার করবে না? তাহলে তো পাড়ার লোকেদের জড়ো হয়ে যাওয়া উচিত।”
“করবে না, যদি সে চিৎকার করার মতো অবস্থায় না থাকে। তা ছাড়া মুখ সম্ভবত স্টিকিং প্লাস্টার বা কাপড় দিয়ে বন্ধ করা ছিল।”
“কী করে বুঝলেন স্যার?” এ প্রশ্ন একেবারেই ফরেনসিকের ছাত্রের।
“বাঁ গালের কিছুটা চামড়া ব্লেড বা ধারালো কিছু দিয়ে কেটে নেওয়া হয়েছে। কেন? নিশ্চয়ই কিছু লেগেছিল। আর… এটা কী?” অধ্যাপক ফরসেপ দিয়ে মুখের ভিতর থেকে কিছু বের করে আনলেন। গজ কাপড়ের টুকরো, “দেখেছ সব্যসাচী, মুখে গজ কাপড় পুরে দেওয়া হয়েছিল, যাতে চিৎকার করতে না পারে।”
“তাহলে স্যার ঘুরে ফিরে যে ইনটক্সিকেশনের কথা নায়িকার বাবা বলছেন… মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে ছিলেন বলে নাকি…”
“উনি মিথ্যে বলছেন সব্যসাচী। নিজের কথাকে নিজেই কন্ট্রাডিক্ট করছেন। স্টমাকে যে পরিমাণ মদ পাওয়া গিয়েছে তাতে এমন বেহুঁশ কারুর হওয়ার কথা নয় যে গায়ে আগুন লেগে পঁচানব্বই শতাংশ পুড়ে যাওয়ার পরও তার হুঁশ ফিরবে না। বড্ড বেশি সরলীকরণ হয়ে যাচ্ছে। আর যদি ধরেও নিই যে মহুয়া মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়েছিলেন, তাহলে দুধ গরম করতে গেলেন কেন? তাঁর তো জ্ঞানই থাকার কথা নয়। উঠে স্টোভ অবধি যাবেন কী করে? সবচেয়ে বড়ো কথা, ভোররাতে দুধ গরম করার প্রয়োজন হল কেন? তখন তো ঘুমোনোর সময়। তা ছাড়া অ্যাসিড ইনজুরির কথাটাও ভাবো একবার।”
আসছে #আগুনেঢেকেছিমুখ
Smell of Books Publication মালবিকা দাশগুপ্ত