22/08/2025
বাঙালি ইনফ্লুয়েন্সার ( ইনফ্লুয়েঞ্জা )
বেশ ঘেটে দেখলাম বাংলায় একটা এমন Influencer নেই যে ইয়ং-জেনারেশনকে একটু সঠিক দিশা দেখাবে,পুরো কলপাড়-কালচার হয়ে উঠেছে, কেউ এমন নেই যে ক্যারিয়ার নিয়ে বলে, জীবনে কিছু Achieve করার কথা বলে, Skill Upscale বা বর্তমান ইন্ডাস্ট্রি কি ডিমান্ড রাখে সেসব নিয়ে কথা বলে ।
কিভাবে তারা জীবনে একটা উচ্চতর জায়গায় পৌঁছাবে তা নিয়ে কথা বলে । খুবই হতাশাজনক।
তারা কি ইনফ্লুয়েন্স করছে বর্তনাম যুব সমাজকে? বাংলায় চাকরি নেই জানি, কিন্তু দেশে কিন্তু আছে, ইন্ডাস্ট্রিও আছে, এই সরকার শিক্ষাব্যবস্থা তথা রাজ্যের শিল্পকে খোকলা করে দিয়েছে, কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কী শিখছে? কিভাবে ফুড ব্লগার হয়ে কোন নতুন দোকান পেলে মাছির মতো হামলে পরতে হয়? না রাজুদার মতোই পরোটা বেঁচে ভাইরাল হবে?
নাহ! অল্পবয়সেই বিয়ে করে সারাদিন ক্যামেরা অন করে মিথ্যে সংসার-খুনসুটি দেখাতে হয়? ভাই! ওরা ক্যামেরা অন করে স্ক্রিপ্ট পড়ছে, তোমায় ফিড করছে, ওদের আলাদা করে কাজ নেই, তুমি কনজিউমার, ওরা তোমার দ্বারা ইনকাম করে, তুমি করো না, তোমাকে খেটে খেতে হবে। Focus On your Career. দয়া করে এদের দ্বারা ইনফ্লুয়েন্স হয়ে ২২-২৩ বিয়ে করে কাপেল Vlog বানাতে শুরু করো না,
কয়েক হাজার লোকের মধ্যে কজন ভাইরাল হয় ? এদের কজনের স্ট্যাবল ইনকাম আছে? এই ক্যারিয়ারের জব সিকিউরিটি কি?
বাংলায় চাকরি নেই, তাই হয়তো জনগন বেশি ইজি-মানিতে বেশী ভরসা এসে গেছে, তাই ভাইরাল হতে যে যা ইচ্ছে পারছে করছে, নাইটি বৌদির কোমর দোলানো vlog থেকে "ফেসবুক মিটাব", তাতে আবার চাঁদা দিয়ে Award পাওয়া যায়, পাওয়া যায় টিফিন, আসে ফেসবুক সেলিব্রিটি! আহা! সেলিব্রিটি কারা? যারা খাঁজ দেখিয়ে ফলোয়ার গেইন করেছে, কি কালচার বানাচ্ছি আমরা এই প্লাটফর্মটাকে । ফেসবুক মনিটাইজেশন অন করে যে কি ভুল করেছে, সারাদিন মানুষ-পাগলের মতো তাদের পরিবারে যুক্ত হয়ে ফুলবাসা-স্টার - এসব দিতে বলছে । কেউ বলছে লাইভ জয়েন করলেই স্টার দেবে, এসব করে একটা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে?
আজকাল ভালো জিনিস ভাইরাল হয়না, ভুলভাল জিনিস নেগেটিভ পাবলিসিটি পেয়ে ভালোই কামায়, তাই ফেসবুকটা এদের কন্টেন্ট-এ দূষিত হচ্ছে রোজ রোজ । কে এসে কি খিস্তি দিল? টাকা তো আসছে, তাই মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে মানুষ রীতিমতো পাগলে গেছে । যাচ্ছেতাই করে বেড়াচ্ছে গোটা ফেসবুক-ইন্সটা জুড়ে ।
চারিদিকে শুধু উল্লাস, নাচন-কোদন, মচ্ছব! যা বুঝলাম বাঙালি আগামী প্রজন্ম শুধু Vlog বানাবে আর বিরিয়ানি খাবে ও বানাবে, বাংলার মূল ইনকাম উৎস? মদ, বিরিয়ানি আর Vlog । Industry সেটা আবার কি? শিক্ষা সেটা আবার কি? Stable Career এসব কি? Skill Development আবার কি?
মহারাষ্ট্রে কর্মসূত্রে দেখেছি, এক-একটা MIDC ( Maharashtra Industrial Development Corporation) Area থাকে, সেখানে শুধু ইন্ডাস্ট্রিই থাকে, যেটা বাংলায় Exist-ই করে না, সেখানে থাকে হাজার হাজার ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট, Assembling Plant, অফিস, হাজার হাজার Qualified Engineer, Employees কত কি! হাজার হাজার ছেলেমেয়ে আসে তাতে চাকরি করতে, রোজ সকালে রীতিমতো জ্যাম লেগে যায় সেই অঞ্চলে, কত কেরিয়ার ওরিয়েন্টেড তারা, মাধ্যমিকের পরেই কোন স্কীল আপগ্রেড করে, টেকনিক্যাল হোক বা নন-টেকনিক্যাল, চাকরি করতেও করতেও পড়াশুনো চালায়, অল্প বয়েস থেকেই মানি-মনিটরিং করে, সেই টাকা ইনভেস্ট করে, অল্প বয়েস থেকেই জানে Stock market, SIP, Mutual Fund ইত্যাদির গল্প । মহারাষ্ট্রের Per Capita GDP ভারতবর্ষের সমস্ত রাজ্যের থেকে বেশী এমনি এমনি নয়, ওরা ভাবে সেভাবে, ওদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার সেরকম, তাই বিদেশি থেকে দেশী কোম্পানিরা ওখানেই ইন্ডাস্ট্রি বিস্তারও করে ।
একটা সেনসিবল ইনফ্লুয়েন্সর নেই বাংলার বুকে, বা আমার জানা নেই, যে এসব হুল্লাবাজি ছেড়ে Sensible বাস্তববাদী কন্টেন্ট বানিয়ে নতুন প্রজন্মকে দিশা দেখায় ।বাংলার হাল সত্যি খারাপ, সরকার দুটো প্রজন্মকে নষ্ট তো করেই দিয়েছে, কিন্তু আমাদেরও দোষ কম নেই, আমরাও এই বেহাল দশার জন্যে দায়ী । কনটেন্ট ক্রিয়েটররা সেটাই করে যেটা পাবলিক খায়, সেটা খাঁজ হোক, ইন্সট্রাগ্রাম থেকে অনলি-ফ্যানস হোক, যেটায় ক্লাউট আসে, যেটায় ইজি মানি আসে, মানুষ সেটাই করে । তাই সমান দোষী পাবলিকও ।পাতি বাংলায়, আপনি খাচ্ছেন, তাই ওরা দিচ্ছে ।
আগামী দিনে কি অবস্থা হবে বাংলার ভেবে হতাশ হই, অন্ধকার ঘেরা দুর্দিন আসছে । তৈরি হন, যখন আপনার বাচ্চাটা বড় হয়ে কি হতে চাও এর উত্তরে "ফুড ব্লগার হব " বলবে, তারপর রাজুদার দোকানের সামনে পরোটা খাওয়ার ক্লিপ তোলার জন্য সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকবে।
লেখা-অপূর্ব রায়