10/09/2025
❤️পুজোর আলোয় প্রেমের রঙ ❤️
কলকাতার শরৎ মানেই এক অন্যরকম আবহ। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, কাশফুলের দোলা, বাতাসে সেই চেনা গন্ধ। চারদিকে তখন মণ্ডপ সাজানোর ব্যস্ততা, লাইটিং-এর হুড়োহুড়ি—শহর যেন নতুন করে বাঁচতে শেখে। এই ভিড়ের মাঝেই থাকে ঈশানী আর তীর্থ। স্কুলজীবনের বন্ধু, বন্ধুত্ব থেকে আস্তে আস্তে অন্যরকম টানে বাঁধা। আর দুর্গাপুজো এলেই সেই টান আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
মহালয়ার ভোর। রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী বাজছে। আধো ঘুমে ফোন ধরতেই ঈশানী শুনল তীর্থর খুশি গলা—
“ঘুম ভাঙল? শুনছিস তো?”
ঈশানী হেসে বলল, “শুনছি রে, মা-কে নিয়ে বসেছি।”
“মা যেমন আসছেন, তুইও আমার কাছে আসিস,” তীর্থ খুনসুটি করে বলল।
কথাটা শুনে ঈশানীর গাল লাল হয়ে গেল। ফোন কেটে দিলেও মনে মনে খুশি হয়ে রইল।
ষষ্ঠীর বিকেল। আবার ফোন।
“আজ রেডি তো? সন্ধে থেকে প্যান্ডেল হপিং।”
ঈশানী মজা করে বলল, “হ্যাঁ, তবে আগে মাকে বলে দিস, আমি দেরি করব।”
“আচ্ছা বাবা, বলে দেব,” তীর্থ হেসে বলল।
সন্ধ্যা নামতেই তারা বেরোল। চেতলা অগ্রণীর মণ্ডপ দেখেই ঈশানী অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল—পুরো জাহাজের মতো সাজানো। আলো ঝলমল, মানুষদের ভিড়। তারপর সুরুচি সংঘে গিয়ে অবাক—গ্রামবাংলার থিম, খেজুরগাছ, কুঁড়েঘর, মাটির ঘ্রাণ, সব যেন জীবন্ত।
“দেখলি, আমি হলে গ্রামের কৃষক হতাম,” তীর্থ মজা করে বলল।
“আর আমি ধান কাটতে সাহায্য করতাম,” ঈশানী হেসে উত্তর দিল।
দেশপ্রিয় পার্কে প্রতিমার ভিড়ে ঈশানী হাত ছাড়াতে চাইছিল। তীর্থ শক্ত করে ধরে বলল, “হাত ছাড়লে হারিয়ে যাবি।”
ঈশানী মুচকি হেসে বলল, “হারালেও তোকে খুঁজে নেব।”
রাস্তার ধারে পুচকার দোকান। প্রতিযোগিতা শুরু হল। ঈশানী ছ’টা খেয়ে ফেলল, তীর্থ পাঁচটাতেই থেমে গেল।
“দেখলি, আমি জিতলাম,” ঈশানী খুশি হয়ে বলল।
“ঠিক আছে, রিভেঞ্জ নেব,” তীর্থ মুখ গোমড়া করে বলল।
ঈশানী হেসে বলল, “আগে আমাকে খাওয়াতে হবে।”
রাতে বাড়ি ফেরার সময় দেরি হয়ে গেল। দরজায় মা রাগী চোখে দাঁড়িয়ে। ঈশানী চুপ। তীর্থ এগিয়ে বলল, “আন্টি, আমি ছিলাম সঙ্গে। দোষটা আমার।” ঈশানীর মনটা হঠাৎ নরম হয়ে গেল।
সপ্তমীর সকালে নতুন জামায় সাজল দুজন। ঈশানীর লাল-সাদা সালোয়ার, তীর্থর নীল পাঞ্জাবি।
“আজ তোকে একেবারে নায়িকার মতো লাগছে,” তীর্থ বলল।
ঈশানী মুচকি হেসে বলল, “নায়িকা তো আছি, নায়ক কোথায়?”
অষ্টমীর অঞ্জলির ভিড়ে, ধূপের গন্ধে, ঢাকের তালে ঈশানী দেখল, তীর্থ শুধু তাকিয়ে আছে।
“কী হয়েছে, এত তাকাচ্ছিস?” ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল ঈশানী।
“প্রার্থনা করেছি—প্রতি বছর যেন তুই আমার সঙ্গেই পুজো কাটাস,” তীর্থ আস্তে বলল।
নবমীর মেলায় নাগরদোলা। উঠতে চাইছিল না ঈশানী। তীর্থ জোর করায় উঠতেই ভয়ে তার হাত শক্ত করে ধরল।
“দেখলি, হাত ধরতে বলার দরকার নেই, পরিস্থিতিই শেখায়,” তীর্থ হেসে বলল।
দশমীর সিঁদুর খেলায় হঠাৎ ভিড়ে তীর্থ ঈশানীর গালে সিঁদুর মেখে দিল। ফিসফিস করে বলল, “শুধু পুজো নয়, পুরো জীবনটা তোর সঙ্গে কাটাতে চাই।” ঈশানীর চোখে জল চিকচিক করল, ঠোঁটে লাজুক হাসি ফুটল।
সন্ধ্যায় ঢাকের শেষ আওয়াজ ভেসে আসছিল। ঈশানী বলল, “পুজো শেষ হয়ে গেল, মন খালি খালি লাগছে।”
“পুজো শেষ হতে পারে, কিন্তু আমাদের সময় শেষ হবে না। তুই থাকলেই প্রতিটা দিন উৎসব,” তীর্থ হেসে বলল।
ঈশানী শুধু হেসে মাথা নাড়ল। চারপাশে আলো, ভিড়, কোলাহল—শহর উৎসবের রঙে ভরা। আর সেই রঙের মাঝেই তাদের প্রেম আরও গভীর হয়ে উঠল, আরও চিরন্তন হয়ে গেল।
লেখা - মেঘা দাস