30/07/2025
কেন ভালো লাগে বৃষ্টির গন্ধ?
বৃষ্টির গন্ধ—যাকে আমরা বাংলায় প্রায়ই বলি ‘মাটির গন্ধ’, আসলে এক জটিল রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফল। এই গন্ধের প্রতি মানুষের ভালোলাগা শুধু নাকের অনুভূতি নয়, এর পেছনে আছে বিজ্ঞান, স্মৃতি আর মনোজগতের এক মিশ্র সুর।
বিজ্ঞান কী বলে?
বৃষ্টির গন্ধের মূল কারণ তিনটি জিনিস:
1. জিওস্মিন (Geosmin):
এটা একধরনের জৈব যৌগ যা স্ট্রেপ্টোমাইসিস (Streptomyces) নামক ব্যাকটেরিয়া মাটিতে তৈরি করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো শুষ্ক সময়ে মাটিতে ঘুমিয়ে থাকে, আর বৃষ্টি পড়লে সক্রিয় হয়ে যায়। তখন এরা জিওস্মিন নির্গত করে। মানুষের নাক এই গন্ধের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল—even এক বিলিয়ন ভাগ পানিতেও জিওস্মিন থাকলে আমরা টের পাই!
2. ওজোন (Ozone):
বজ্রসহ বৃষ্টির সময় বাতাসে বিদ্যুৎচমক (lightning) ওজোন উৎপন্ন করে। এটি একধরনের তীব্র, পরিষ্কার গন্ধ দেয়। অনেকেই এই গন্ধকে "ঝড়ের আগে বা পরে আসা বৃষ্টির গন্ধ" হিসেবে চিনে।
3. পেট্রিকোর (Petrichor):
এটি একটি শব্দ যা ১৯৬৪ সালে বিজ্ঞানীরা তৈরি করেন। Petra (গ্রিক শব্দ, অর্থ: পাথর) + ichor (দেবতাদের রক্ত)। যখন বৃষ্টির জল শুষ্ক মাটিতে পড়ে, তখন মাটির ভেতরকার তেলজাতীয় পদার্থ ও জিওস্মিন বাতাসে মিশে এক অপূর্ব গন্ধ তৈরি করে—এটাই পেট্রিকোর।
---
মানুষের মনে এই গন্ধ কেন ভালো লাগে?
1. স্মৃতি ও আবেগ:
ছোটবেলায় প্রথম বর্ষার স্মৃতি, স্কুল ছুটি, কাদা-মাটি, বা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো—এই সব স্মৃতি এই গন্ধের সঙ্গে মিশে থাকে। তাই গন্ধটা নাকে আসলেই মন ভালো হয়ে যায়।
2. প্রাকৃতিক প্রশান্তি:
বৃষ্টির শব্দ, ঠান্ডা বাতাস আর এই বিশেষ গন্ধ মিলে একধরনের শান্তির অনুভূতি তৈরি করে। এটা আমাদের স্ট্রেস কমায়, মন শান্ত করে।
3. জৈবিক টান:
মানবসভ্যতা গড়ে উঠেছে কৃষিভিত্তিক সমাজে। তাই শুষ্ক মৌসুম শেষে বৃষ্টির আগমন ছিল জীবনের প্রতীক। সেই টান এখনো মস্তিষ্কের গভীরে রয়ে গেছে।
---
সংক্ষেপে, বৃষ্টির গন্ধ ভালো লাগা শুধুই ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের কাজ নয়, এটা স্মৃতি, মনোজগৎ আর প্রাকৃতিক টানের এক জাদু যা মানুষকে বারবার টানে। 🌧️💙
#বৃষ্টি #মাটিরগন্ধ #পেট্রিকোর #জিওস্মিন
#বিজ্ঞান