08/06/2025
🎗️অপ্রত্যাশিত আর্থিক সংকটে পড়েছেন? আপনার আয় কমে গেছে, খরচ কমেনি। দুশ্চিন্তা করবে ভেবে পরিবারকে এই বিপর্যয়ের কথা বলেননি। পুরো চাপ একাই মাথা পেতে নিয়েছেন। খাবার টেবিলে হেসেছেন, সে হাসির পেছনে যে বেদনা লুকিয়ে আছে তা কাউকে বুঝতে দেননি। ভেতরে ভেতরে আপনি শেষ হয়ে গেছেন। আপনি দিশেহারা, বিধ্বস্ত। চাপ সইতে না পেরে হয়তোবা হঠাৎ করেই একদিন হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবেন।
এ পরিস্থিতি যে কি ভয়াবহ তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না। আর্থিক সংকট মোকাবিলায় আপনার করণীয় কি? এখানে ১০ টি পরামর্শ তুলে ধরা হলো যা আপনার কাজে লাগবে।
১. দয়া করে পরিবারের সাথে সমস্যা শেয়ার করুন। তারা আজ বা কাল ব্যাপারটা জানবেনই, তাই গোপন না করে তাদের নিয়েই পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।
২. প্রয়োজনে নাটকীয়ভাবে জীবনযাত্রার খরচ নামিয়ে আনুন। মিডল ক্লাসের প্রচলিত 'ইগো'র কারণে আমরা অযথা অনেক খরচ বাড়িয়েছি, যেগুলো চাইলে বাদ দেয়া যায়। কম দামের বাড়িতে শিফট করুন, গাড়ি বিক্রি করে দিন, অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিন। কে কি বলল সেদিকে পাত্তা দিবেন না, এখন টিকে থাকাটাই আসল।
৩. বাচ্চাদের স্কুল খরচ খুব বেশি হলে সেটাও বদলে ফেলুন। স্কুলের পরিচয়ে ছাত্রছাত্রীদের আখেরে কোনো লাভ হয় না, কাজ হয় তার রেজাল্টে, সেটা যে কোনো ধরনের স্কুল থেকেই করা যায়। টিউশন খরচ অতিরিক্ত হলে টিউটর বাদ দিন। তুলনামূলক কম খরচের স্কুলে বাচ্চাদের শিফট করে আপনি নিজেই সন্ধ্যার পর ২/৩ ঘন্টা বাচ্চাকে পড়ান।
৪. সময়টা খারাপ, আপনার হার্টের ওপর চাপ পড়ছে, তাই কোনো সমস্যা না থাকলেও মাঝে মাঝে ইসিজি করিয়ে হার্ট স্পেশালিস্টের সাথে আলাপ করুন।
৫. সমস্যা নিয়ে ভাইবোনের সাথে আলোচনা করুন। পরিবারের যে ভাই বা বোন বিপদে পড়েছেন, তাকে অন্যরা আগলে রাখুন। টাকা গেলে টাকা আসবে, ভাই-বোন গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। এই কঠিন সময়ে সবাই এক ছাতার নিচে আশ্রয় নিন। একজনের উষ্ণতা দিয়ে আরেকজনকে রক্ষা করুন।
৬. এই দুঃসময়ে পরিবারের সদস্যরা যুথবদ্ধ থাকুন। পরিবারের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে সবাই উপকৃত হবেন। স্থায়ী বেদনাকে আমন্ত্রণ জানানোর চেয়ে এটা অনেক ভালো। মনে রাখবেন, যে মেষ শাবক পালছুট হয়, সে-ই বাঘের কবলে পড়ে। পরিবারের সমস্যাগ্রস্ত সদস্যকে রক্ষা করার জন্য যুথবদ্ধ পরিবারের একতাবদ্ধ আর্থিক পরিকল্পনা অনেক বড় ওষুধ হিসেবে কাজ করবে।
৭. দয়া করে সমস্যার কথা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বলুন। আর যেসব বন্ধুরা ভালো আছেন, তারা বিপদগ্রস্ত বন্ধুকে আগলে রাখুন। প্রয়োজনে তার জন্য "বেইল আউট" প্ল্যান করুন। সবাই হাত লাগালে বিপন্ন বন্ধুটিকে আবার দাঁড় করিয়ে দেওয়া মোটেও অসম্ভব নয়।
৮. মধ্যবিত্তের যে ইগোর কথা বলছিলাম তা বাদ দিয়ে আয়ের বিকল্প উৎস বের করুন। যেমন, ছাত্রজীবনে যিনি টিউশনি করতেন, তিনি প্রয়োজনে তাতে ফিরে যান। যাদের বাড়িতে জায়গা আছে, তারা কৃষি থেকে আয়ের ব্যবস্থা করুন। পুকুর থাকলে মাছ চাষ করুন, হাঁস-মুরগি পালন করুন। বাড়ির মহিলারা সেলাইয়ের কাজ, হোম মেইড ফুড এধরনের ছোটো ছোটো উদ্যোগ নিন।অনলাইন/অফলাইনে বিক্রি করুন। সততাকে পুঁজি করলে ক্রেতার অভাব হবে না।
৯. প্রতি বছর পুনর্মিলনী/ রিইউনিয়নের বন্যা আমরা দেখি। লাখ লাখ টাকা এসব অনুষ্ঠানে খরচ হয়ে। এসব অ্যালামনাই এসোসিয়েশন বিপদগ্রস্ত সদস্যর পাশে দাঁড়াতে পারেন। নয়ত এসব মিলনমেলা একটি লোক দেখানো মূল্যহীন ব্যাপার বলে প্রমাণিত হবে।
১০. সবশেষে বলি, বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য হচ্ছেন নিঃসঙ্গ শেরপা। তাকে একাই লড়াই করতে হয়। এ একাকী যোদ্ধাকে বাড়ির সবাই স্বস্তি দিন, যত্ন করুন, মায়ায় ডুবিয়ে রাখুন। তিনি যাতে অযথা চাপে না পড়েন সেদিকে নজর দিন। দশ মিনিটের বুকে ব্যথায় যিনি মারা যাচ্ছেন, তা আসলে দশ মিনিটের ব্যথা নয়, দিনের পর দিনের জমানো কষ্ট। অনিশ্চয়তার দীর্ঘ ব্যথার চাপ আসলে তিনি আর নিতে পারেননি। একমাত্র আমাদের সম্মিলিত হাত সে বুকে রাখলেই তার ব্যথা কমবে।