অহর্নিশ - Ahornish

অহর্নিশ - Ahornish Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from অহর্নিশ - Ahornish, Digital creator, North 24 Parganas, KOLKATA.
(2)

আমরা ঘুরে বেড়াই ইতিহাসের সেই সব ঘনঘটায় যাদের হয়তো জায়গা দেওয়া হয়নি বইয়ের পাতায়। চেষ্টা করি এমন অনেক অজানা তথ্য ও গল্প তুলে আনার যা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। শক্তি দেয় ইতিবাচক নতুন কিছু ভাবার কিংবা অভাবনীয় কিছু করার।

নিয়মিত পচা মাছ আনতেন। তা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলাও হত। শুধু বলতেন, ওঁর (যাঁর কাছ থেকে মাছ কিনেছেন) বউনি হচ্ছিল না। তাই ...
08/07/2025

নিয়মিত পচা মাছ আনতেন। তা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলাও হত। শুধু বলতেন, ওঁর (যাঁর কাছ থেকে মাছ কিনেছেন) বউনি হচ্ছিল না। তাই এনেছি। না হলে ওঁদের চলবে কী করে। মানুষের সঙ্গে এই সহজ সম্পর্ক ঘুরে-ফিরে এসেছে তাঁর লেখায়, কবিতায়। সক্রিয় বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, পার্টি করেছেন দীর্ঘ বছর।
তিনি সুভাষ মুখোপাধ্যায় | একাধিক বার জেলে গিয়েছেন তিনি। স্বাধীনতার পরে এ রকম সৌভাগ্য কোনও বাঙালি কবির কপালে আর জোটেনি। ‘টোটো কম্পানি’তে লিখছেন, ‘‘যখন জেলে গেলাম, মনে হল সেও এক ভ্রমণ… দড়িচালী থেকে ঘানিঘর ঘুরে ঘুরে দেখা। মানুষগুলো প্রত্যেকেই যেন রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের বই। পড়ে শেষ করা যায় না। মামলা থাকলে জাল দেওয়া গাড়িতে রাস্তা দেখতে দেখতে কোর্টে পৌঁছনো। ভ্রমণ বৈকি। রীতিমতো ভ্রমণ। তার ওপর আছে এক জেল থেকে অন্য জেলে যাওয়া। শুনলে অনেকে হিংসে করবে। জেলে থাকার সুবাদেই আমার জীবনে প্রথম এরোপ্লেন চড়া।’’ হাজতবাসকে এত সহজ করে নিতে পারে কেউ? যে সব তরুণ কবি আজকাল কথায় কথায় ডিপ্রেশনে চলে যান, তাঁরা তাঁর জেলজীবন পড়ে দেখলে তাঁদের আর ঘুমের বড়ি খেতে হবে না।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে ।পিতা ক্ষিতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি আবগারি বিভাগের কর্মচারী | মা ছিলেন যামিনী দেবী | নিজের বাল্যকাল সম্পর্কে এক চিঠিতে সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘আমার শৈশব কেটেছে রাজশাহীর নওগাঁয়। বাবা ছিলেন আবগারির দারোগা। নওগাঁ শহর ছিল চাকরি, ব্যবসা, নানা বৃত্তিতে রত বহিরাগতদের উপনিবেশ। হিন্দু-মুসলমান এবং বাংলার নানা অঞ্চলের মানুষজনদের মেলানো-মেশানো দিলদরাজ আবহাওয়ায় আমরা একটু অন্যরকমভাবে মানুষ হয়েছিলাম। একদিকে প্রকৃতি, অন্যদিকে যৌথ জীবন। সব সম্প্রদায়েই এমন সব মানুষের কাছে এসেছি যাঁরা স্বধর্মে গোঁড়া, কিন্তু মানুষের সম্বন্ধে উদার। আমার অক্ষরপরিচয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা নওগাঁয়। পড়েছি মাইনর স্কুলে। পাঠ্যবইয়ের চেয়েও বেশি পড়েছি পাঠাগারের বই। সেই সঙ্গে আমাকে শিক্ষা দিয়েছে খেলার মাঠ, গান আবৃত্তি অভিনয়ের মঞ্চ। নওগাঁ শহরের জীবন আমার ব্যক্তিত্বের গোড়া বেঁধে দিয়েছিল।’
সুভাষ মুখোপাধ্যায় ভবানীপুরের মিত্র স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন | এরপর ১৯৪১ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে অনার্স-সহ বিএ পাস করেন। ১৯৩২-৩৩ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিশোর ছাত্রদল-এর সক্রিয় সদস্যরূপে যোগ দেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। এই সময় কবি সমর সেন তাকে দেন হ্যান্ডবুক অব মার্কসিজম নামে একটি গ্রন্থ। এটি পড়ে মার্কসীয় রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন কবি। সঙ্গে চলতে থাকে সাহিত্য | ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ পদাতিক।
শ্রেণিবিভক্ত সমাজে মানুষের বৈষম্যলাঞ্চিত দুর্দশার বিরূদ্ধে দ্রোহ তাঁর কবিতার মূল সুর। ‘পদাতিক’ প্রারম্ভে ছিল ‘প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য কাঠফাঁটা রোদে সেঁকে চামড়া’। পদাতিক কাব্যগ্রন্থের মে দিবসের কবিতা কেবল শ্রমিক শ্রেণির এক বিজয়কাব্য নয়, এতে ব্যক্ত হয়েছে ঔপনিবেশবাদের উচ্ছেদসাধনের ঋজু প্রত্যয় –
“শতাব্দী লাঞ্ছিত আর্তের কান্না
প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা;
মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা, আর না –
পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা।
প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা,
দুর্যোগে পথ হয়, হোক দুর্বোধ্য
চিনে নেবে যৌবন আত্মা।
পরে লেবার পার্টি ত্যাগ করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। তারপর মাসিক ১৫ টাকা ভাতায় সর্বক্ষণের কর্মীরূপে যোগ দেন পার্টির জনযুদ্ধ পত্রিকায়। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে বহু কমিউনিস্ট বন্দীর সঙ্গে দু-বার কারাবরণ করেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও।
কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েন তিনি | মাত্র ৭৫ টাকা বেতনে সাব-এডিটর নিযুক্ত হন তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থায়। ১৯৫১ সালে পরিণয়-সূত্রে আবদ্ধ হন সুলেখিকা গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হলে তিনি থেকে যান পুরনো পার্টিতেই। ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেওয়া হলে আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে দ্বিতীয়বার কারাবরণ করেন। এই দফায় ১৩ দিন কারারুদ্ধ ছিলেন কবি। মাঝে কিছুকাল সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে একযোগে সন্দেশ পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন তিনি। সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে একে একে লিখে গেছেন অগ্নিকোণ, চিরকুট, কাল মধুমাস, ফুল ফুটুক, যত দূরেই যাই, ছেলে গেছে বনে, জল সইতে, একটু পা চালিয়ে ভাই প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ; হাংরাস, অন্তরীপ, হ্যানসেনের অসুখ বা ঢোলগোবিন্দের আত্মদর্শন প্রভৃতি গদ্যরচনা | চিঠি জুড়ে জুড়ে লেখা চিঠির দর্পণে-এর মতো অপ্রচলিত কাঠামোর উপন্যাস। অনুবাদ করেছেন নাজিম হিকমত, পাবলো নেরুদা ও হাফিজ-এর কবিতা, চর্যাপদ ও অমরুশতক ইত্যাদি।
চল্লিশের যুদ্ধ-দাঙ্গা-তেভাগা-মন্বন্তর সঙ্কুলিত রাজনৈতিক টালমাটালের যুগসন্ধিক্ষণে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন—
“আমি আসছি—
দুহাতে অন্ধকার ঠেলে ঠেলে আমি আসছি।
সঙীন উদ্যত করেছ কে? সরাও।
বাধার দেয়াল তুলেছ কে? সরাও।
সমস্ত পৃথিবী জুড়ে আমি আনছি
দূরন্ত দুর্নিবার শান্তি।’
চল্লিশের যুদ্ধ-দাঙ্গা-তেভাগা-মন্বন্তর সঙ্কুলিত রাজনৈতিক টালমাটালের যুগসন্ধিক্ষণে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন—
“আমি আসছি—
দুহাতে অন্ধকার ঠেলে ঠেলে আমি আসছি।
সঙীন উদ্যত করেছ কে? সরাও।
বাধার দেয়াল তুলেছ কে? সরাও।
সমস্ত পৃথিবী জুড়ে আমি আনছি
দূরন্ত দুর্নিবার শান্তি।”
“প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তার অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য। পরিণত বয়সে গায়ে খদ্দরের পাঞ্জাবি, পরনে সাদা পায়জামা, মাথাভর্তি ঘন কোঁকড়ানো চুল, বুদ্ধিদীপ্ত ঝকঝকে চোখ, চোখে চশমা, বামে চশমার নিচে বড় একটা আঁচিল – একটি প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিলেন তিনি। যকৃৎ ও হৃদপিণ্ডের অসুস্থতার কারণে দীর্ঘকাল রোগভোগের পর ২০০৩ সালের ৮ জুলাই কলকাতায় তার প্রয়াণ ঘটে। মৃত্যুকালে তিনি রেখে যান স্ত্রী ছাড়াও তার তিন পালিতা কন্যাকে।
মুখ থুবড়ে পড়তে তো হয়ই, কিন্তু ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়ানোর নাম সুভাষ মুখোপাধ্যায়।
প্রয়াণদিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য ।
তথ্য : আনন্দবাজার পত্রিকা
© অহর্নিশ
অবশ্যই পড়ুন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/43lLpT8

রাত্রি গভীর | কলকাতার রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা | তারই মাঝে প্রেমিক প্রেমিকা হেঁটে চলেছে | চলছে প্রেমালাপ | হঠাৎ তারা লক্ষ্য...
08/07/2025

রাত্রি গভীর | কলকাতার রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা | তারই মাঝে প্রেমিক প্রেমিকা হেঁটে চলেছে | চলছে প্রেমালাপ | হঠাৎ তারা লক্ষ্য করল একটি সাদা গাড়ি তাদের ফলো করছে | তারা হাঁটতে শুরু করলে গাড়িটিও চলতে শুরু করছে | তারা দাঁড়িয়ে গেলে গাড়িটিও থেমে যাচ্ছে | এইভাবে কিছুক্ষণ চলল | একসময় তরুণ প্রেমিকের এবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গল | সে পিছনে দৌড়ে গেল | গাড়ির লোকটাকে উচিত শিক্ষা না দিলেই নয় | গাড়ির কাছে আসতেই গাড়ির কাঁচ নেমে এল | ভিতর থেকে ব্যারিটোন কণ্ঠে কে যেন বলে উঠল, "কি হে বিপ্লব,এতো রাতে রাস্তায় কি করছো?" তরুণটি হতভম্ব | গাড়িতে বসে রয়েছেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায় | তরুণটি অস্ফুট কণ্ঠে বলে উঠল "মানিকদা" |

আরেকদিনের ঘটনা | বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাঁকে দেখে এক মা তাঁর সন্তানকে চেনাচ্ছিলেন, “ওই যে, ওই যে দুষ্টুলোক, তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে…”। একবার নয়, দু’বার নয়… এই ঘটনা বারবার ঘটেছে। বারবারই বিপ্লবকে দেখিয়ে অনেক মা তাঁর সন্তানকে দুষ্টুলোক চিনিয়েছিলেন। বিষয়টিতে খুবই ব্যথা পেয়েছিলেন বিপ্লব। তিনি কুঁকড়ে যেতেন লজ্জায়। বাচ্চা তাঁর অত্যন্ত প্রিয়। বাচ্চারা তাঁকে দুষ্টুলোক হিসেবে চিনবে, জানবে, একদমই মানতে চাননি। বলেছেন, “আমি এরকম এক মাকে এবার নিজেই বলেছিলাম, ওরকম করে কেন বলছেন বাচ্চাটাকে? আসলে আমি তো বাচ্চাদের বড্ড ভালবাসি। তাই ওদের কাছে আমি ভিলেন কিংবা দুষ্টুলোক হয়ে থাকতে চাননি। কিন্তু বড়রা নিজেদের মধ্যে আমাকে নিয়ে বলাবলি করলে আমার সেটা ভালই লাগে। সেটাকে নিজের পরম প্রাপ্তি হিসেবে মেনে নিই আমি।”
এক কালে ‘বহুরূপী’-তে থিয়েটার করতেন। তখন ‘কিংবদন্তী’ নাটকে বিপ্লবের গানের গলা শুনে চমকে গিয়েছিলেন শম্ভু মিত্র। সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ (১৯৭০) ছবি দিয়ে অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের সিনেমা জীবন শুরু। এরপর একে একে মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার, তপন সিংহ, পূর্ণেন্দু পত্রী, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, সন্দীপ রায়ের মতো বরেণ্য পরিচালকদের ছবিতে কাজ করেছেন | ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ অভিনয়ের পর সত্যজিৎ রায় নিজে ‘বহুরূপী’-র কুমার রায়কে বলেন, “বিপ্লবের চোখমুখে এমন একটা ক্যারেকটার আছে, ওকে দিয়ে অনেক কিছু করিয়ে নেওয়া যায়।” সিনেমা ছাড়াও তাঁর অবাধ বিচরণ ছিল থিয়েটার, টেলিভিশন, যাত্রা ও রেডিও নাটকে। কয়েকটি ছবিও পরিচালনা করেছেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের বয়স হয়ে গেল প্রায় ৫8 বছর। অভিনয় করেছেন দুশোর বেশী সিনেমায় | আশির দশকে বাংলা সিনেমার খলনায়ক বললেই উঠে আসে তাঁর নাম। তবে পেয়েছেন বহু বঞ্চনা | স্পষ্টবাদী হওয়ার জন্যে বাদ পড়েছেন বহুবার | অজানা কারণে বাদ গিয়েছিলেন অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘পাকা দেখা’ থেকে | মতি নন্দীর গল্প নিয়ে তৈরি এক সময়ের সাড়া জাগানো ছবি ‘স্ট্রাইকার’। শেষ পর্বে বাদ যান সেখানেও | কিন্তু লড়াই ছিল বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের রক্তে | যখনই সুযোগ পেয়েছেন নিজেকে প্রমাণ করেছেন | বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখে এক সময় উত্তমকুমার বলেছিলেন, “তুই যদি এই অভিনয়টা ধরে রাখিস, অনেক দূর যাবি।” ‘দুশমন’ করার সময় পালি হিলে দাঁড়িয়ে শক্তি সামন্ত বলেছিলেন, “তুমি বম্বে চলে এলে আমার একটা ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে পারি।”

তবে আজকাল খুব বেশী কাজ পান না বিপ্লববাবু | কিন্তু তাঁর মতো অভিনেতা সত্যিই ক্ষণজন্মা। তিনি যে কত্ত বড় একজন অভিনেতা তা বলে বোঝানো যাবে না | শুধু অ্যাক্টিং-এর জোড়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন | ভিলেনে তিনি যেমন ভয়ঙ্কর,কমেডিতে তিনি তেমনই সিদ্ধহস্ত।আর ক্যারেক্টার রোলেও তিনি সমান পারদর্শী। কিন্তু হায় ! আমাদের টলিউড তাঁকে ঠিক মতো ব্যবহারই করতে পারেনি। একবার আক্ষেপের সুরে তিনি বলেছিলেন-বলিউডে বা দক্ষিণে হিরো-হিরোইন ছাড়াও শক্তিশালী অভিনেতাদের মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে...?
স্পষ্টবক্তা মানুষটি চিরকালই বামপন্থায় বিশ্বাসী। ‘আমি বিপ্লব’ বইটি তাঁর আত্মকথন --- তিনি অকপট, আন্তরিক, আপোষহীন ও বিস্ফোরক। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যদি ভাল রোলে ডাক না পাই,তাহলে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে বিকিয়ে দিতে পারবো না | অ্যাক্টিং করা ছেড়ে দিলে মিষ্টির দোকান খুলবো, তবুও নো কম্প্রোমাইস !

আজও একটা স্বপ্নের চরিত্র পেতে চান। প্রযোজক পেলে, ফিরতে চান পরিচালনায়। গল্পটাও বাছা আছে।
আরও একবার অন্তত দেখিয়ে দিতে চান, তাঁকে ভ্যানিশ করে দেওয়া অত সহজ না।

আজ বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে আমাদের প্রণাম !
© অহর্নিশ
তথ্য : দুষ্টু বিপ্লবটা ভ্যানিশ (আনন্দবাজার পত্রিকা), ‘ইন্ডাস্ট্রিতে কলকাঠি করে আমার কাজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে’, ক্ষুব্ধ বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় (আনন্দবাজার পত্রিকা), সুদীপ্ত দাসের পোস্ট
===================

কখনও সুখস্মৃতি, কখনও গভীর দুঃখবোধ আবার কখনও চাপা অভিমান ঝরে পড়েছে সু-বৃহৎ এই বইয়ের পাতায় পাতায়। বিপ্লব তাঁর বর্ণময় অভিনয় জীবন ও রাজনৈতিক জীবনের কথা বলতে গিয়ে সত্যকে গোপন করেননি একবারও। অকপট, আন্তরিক ও বিস্ফোরক বিপ্লব তাঁর আত্মকথন শুনিয়েছেন অটুট আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করেই।
অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী "আমি বিপ্লব" । এই বই সংগ্রহে রাখার মত বই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3QPz32c

এই ছবি দেখে সত্যিই চোখে জল চলে আসে, ময়দানের চেনা নাম তারক হেমব্রম। বর্তমানে রেলওয়েজের হয়ে খেলে, আজ কলকাতা লিগে খেলছিল মো...
07/07/2025

এই ছবি দেখে সত্যিই চোখে জল চলে আসে, ময়দানের চেনা নাম তারক হেমব্রম। বর্তমানে রেলওয়েজের হয়ে খেলে, আজ কলকাতা লিগে খেলছিল মোহনবাগানের বিরুদ্ধে, খেলার মাঝেই লিগামেন্টে চোট পায়, রেলওয়েজের মেডিক্যাল টিম না থাকায় তার ট্রিটমেন্ট করে মোহনবাগানের মেডিকেল দলই। আয়োজকদের তরফে কোন ডাক্তারের ব্যবস্থা নেই।
অথচ প্লেয়ারের ট্রিটমেন্ট ফুটবলের একটা বেসিক চাহিদা, একটা মানুষের বেসিক চাহিদা। এই ফুটবল মাড়িয়ে কী লাভ হচ্ছে? যারা কলকাতা লিগ চালায় তারা কতখানি অপদার্থ? এই দৃশ্য দেখেও আমরা রেগে যাচ্ছি না ভাংচুর করে দিচ্ছি না, আমরা কি রাগতে ভুলে গেলাম?

ঋণ: অভিজিৎ

সাত জন বিশ্বকাপার নিয়ে ডিসিএমে এসেছিল ডক রো গ্যাং। দীর্ঘ ৪১ বছর পরেও স্পষ্ট মনে করতে পারছি, ফিরতি ফাইনালের একেবারে শেষে...
07/07/2025

সাত জন বিশ্বকাপার নিয়ে ডিসিএমে এসেছিল ডক রো গ্যাং। দীর্ঘ ৪১ বছর পরেও স্পষ্ট মনে করতে পারছি, ফিরতি ফাইনালের একেবারে শেষের দিকে আমার ইস্টবেঙ্গলের দুই সাইডব্যাক প্রবীর মজুমদার আর সুধীর দুজনই ওভারল্যাপে উঠে গিয়েছে। যেটা আমার একেবারে ম্যান্ডেটরি নিষেধ ছিল যে, দুজন সাইডব্যাক কখনো একসময় একসঙ্গে ওপরে উঠবে না। না তো না।

পরপর দুদিন ফাইনালে সেটা মনে রাখলেও ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট বাকি থাকতে সেটা হয়তো আমার ছেলেরা ভুলে গিয়েছিল। সুধীর ওভারল্যাপে গিয়েছে দেখেও প্রবীর আমার নিষেধ ভুলে ওভারল্যাপে উঠে গিয়েছিল। আর সেই সুযোগে ওদের সেন্টার ফরওয়ার্ড তার রাইট আউটকে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সিভ থার্ডে ফাঁকায় বল পাঠিয়েছে। প্রবীর তখন কোথায়?

রাইট ব্যাক সুধীর সেই দেখে চকিতে পিছন ঘুরে লেফট উইং ধরে বিদ্যুতের গতিতে নামতে শুরু করেছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল পেনাল্টি বক্সে কোরিয়ান সেন্টার ফরওয়ার্ড আর রাইট আউটের মাঝে সুধীর। ততক্ষণে ওদের লেফট আউটও ঢুকে পড়েছে। তিনের বিরুদ্ধে এক। রাইট আউট থেকে বল সেন্টার ফরওয়ার্ডের পায়ে। সামনে গোল। গোটা স্টেডিয়াম ধরে নিয়েছে সে-ই গোলে মারবে। সুধীর দোনোমোনো করছে ট্যাকল করবে কি করবে না।

কিন্তু ধূর্ত সেন্টার ফরওয়ার্ড আরো নিশ্চিত গোল পাওয়ার জন্য নিজে না মেরে বক্সে আরো সুবিধাজনক পজিশনে থাকা তার লেফট আউটকে স্কোয়ার পাস করল। আর করেই হতবাক হয়ে আবিষ্কার করল, তার ঠিক আগের সেকেন্ডেই সুধীর অন্য দুজনকে ছেড়ে লেফট আউটকেই ধরে নিয়েছে। এবং লেফট আউট বল স্পর্শ করতেই তাকে দুর্দান্ত ট্যাকল করে বল কেড়ে নিয়ে লম্বা ক্লিয়ার করে দিয়েছে সুধীর। কি অবিশ্বাস্য রকমের ফুটবল সেন্স থাকলে তবে কেউ এরকম বল পজিশনে বিজয়ী হতে পারে।

গোটা স্টেডিয়াম সেই মুহূর্তে উঠে দাঁড়িয়ে সুধীরকে হাততালিতে ভরিয়ে দিচ্ছে আর সাইড লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মত হাউ হাউ করে কাঁদছি আমি। আহা! এ কি দেখিলাম, জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না। সাড়ে পাঁচ ফুট নয় সুধীরের উচ্চতা আসলে পাঁচশো ফুট।

দেশের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্টের হাত থেকে ট্রফি নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে এসে যখন সুধীরের কাছে জানতে চাইলাম, কি করে ও ওই মোক্ষম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিল, সুধীর বরাবরের মত মিনমিনে গলায় বলেছিল "আমার মনে হল"। সেদিন ওকে বলেছিলাম, তোকে সোনা দিয়ে মুড়ে দিলেও কম হবে। তার উত্তরে সুধীর কি বলেছিল জানেন? " আমাদের তো সোনার দোকান আছে। বাবা সেখানে চাকরি করে।"

- প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

তথ্য : গুরু (প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়)

সুধীর কর্মকারকে কি মনে আছে আপনাদের ?

========================

পিকে ছিলেন ভারতের অলিম্পিক ফুটবল দলের অধিনায়ক, ৬২ র এশিয়াড জয়ী দলের অন্যতম সদস্য এবং শেষবারের মত দেশকে এশিয়াড পদক এনে দেওয়া কোচ। এছাড়া কলকাতার ক্লাব ফুটবলের সফলতম প্রশিক্ষক তো বটেই যাঁর গোটা জীবনটা ই একটা মোটিভেশন, ডিসিপ্লিন এবং ম্যানেজমেন্ট দিয়ে মোড়া। গৌতম ভট্টাচার্য এবং সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় বইটি এক অনন্য মাত্রায় উন্নীত হয়েছে।
প্রকাশের পরেই অতিক্রম করেছে দুটি সংস্করণ। পিকে ব্যানার্জি কে নিয়ে লেখা বই "গুরু"।

আমাজন লিংক : https://amzn.to/3W8hsFv

===============================

ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাস জানতে অবশ্যই পড়ুন ইস্টবেঙ্গল : প্রথম একশো বছর । এই বই সংগ্রহে রাখার মত বই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3OKknAy

মোহনবাগানের ইতিহাস জানতে অবশ্যই পড়ুন মোহনবাগান : সবুজ ঘাসের মেরুন গল্প । এই বই সংগ্রহে রাখার মত বই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/42BJ73J

================

ইস্টবেঙ্গল শুধু একটা ক্লাবের নাম নয়, ইস্টবেঙ্গল শুধুমাত্র সাফল্যের নাম নয়, ইস্টবেঙ্গল কেবলমাত্র একটা জাতির ইতিহাস নয়। ইস্টবেঙ্গল এক চিরাচরিত ধ্রুব সত্য। ইস্টবেঙ্গল একটা সভ্যতা, ইস্টবেঙ্গল হাজার প্রতিকূলতার মধ্যে বেঁচে থাকার কারণ, ইস্টবেঙ্গল একটা ইনস্টিটিউশন। সংঘর্ষ, প্রতিকূলতা, অপমান-লাঞ্ছনা আর ব্যর্থতার দাগ মুছতে মুছতে সাফল্যের সোনালি ডানায় উড়াল দিয়ে ভারতীয় ফুটবলের ‘বেঞ্চমার্ক’ হয়ে ওঠার রূপকথার নামই ইস্টবেঙ্গল। শতাব্দীপ্রাচীন এই ক্লাবের সমর্থকরা আজও ‘ছিন্নমূল উদ্‌বাস্তু’ তকমায় গর্বিত হয়। পিঠের চামড়ায় লেগে থাকা কাঁটাতারের দাগের যন্ত্রণা প্রশমিত হয় বিপক্ষের জালে চামড়ার গোলক জড়িয়ে দেওয়ার আদিম উল্লাসে। শতাব্দীপ্রাচীন এই ক্লাবের আবেগ, উচ্ছ্বাস, ভালোবাসা, অপমান, ব্যর্থতা-সাফল্যের গল্পগাছা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়দানের আনাচে-কানাচে, খবরের কাগজের পুরোনো এডিশনে, স্মৃতির পাতায়, বাস্তবের রুক্ষতায়, আগামীর স্বপ্নে। ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাস এতটাই বিস্তৃত যে তা একটামাত্র বইতে লিখে ফেলা কার্যত অসম্ভব। তবুও নিরলস প্রচেষ্টায়, সাংবাদিক জীবনের অভিজ্ঞতায় না-জানা, অজানা, স্বল্প-জানা সেই সব গল্পগাছা একত্রিত করে বিশিষ্ট সাংবাদিক অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায় লিখে ফেলেছেন 'লাল-হলুদের ডায়েরি'।

আমাজন লিংক : https://amzn.to/3RtpndL

শুভমন গিল ক্যাচ ধরতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে দু’হাত ছড়িয়ে দিলেন আকাশদীপ। এজবাস্টনে দু’ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে তিনি ম্যাচের নায়...
07/07/2025

শুভমন গিল ক্যাচ ধরতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে দু’হাত ছড়িয়ে দিলেন আকাশদীপ। এজবাস্টনে দু’ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে তিনি ম্যাচের নায়ক। একগাল হাসি নিয়ে সতীর্থদের জড়িয়ে ধরছেন। নজিরের ম্যাচে স্মারক হিসাবে তুলে নিয়েছেন উইকেট। কিন্তু সেই সাফল্য, সেই হাসির মধ্যে লুকিয়ে ছিল এক যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণার কথাই বললেন তিনি ।

খেলা শেষে মাঠেই ভারতের টেস্ট ক্রিকেটার (এই সিরিজ়ে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় রয়েছেন) চেতেশ্বর পুজারার সঙ্গে কথা বলেন আকাশ। সেখানেই উঠে আসে তাঁর পরিবারের কথা। পুজারা আকাশকে জিজ্ঞাসা করেন, “খেলা শেষে স্মারক হিসাবে স্টাম্প আর বল নিয়েছ। এটা নিশ্চয়ই বাড়ি ফিরে সকলকে দেখাবে।” জবাবে আকাশ বলেন, “একটা কথা আমি কাউকে বলিনি। আমার বড় দিদি আজ দু’মাস ধরে ক্যানসারে ভুগছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি ওর মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলাম। প্রত্যেকটা বলের সময় আমার চোখের সামনে ওর মুখটা ভেসে উঠছিল। আমি ওর জন্য উইকেট পেতে চেয়েছিলাম। ওর কথা ভাবছিলাম। ওর মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। এই জয়টা ওর জন্য।” আকাশ যখন এই কথা বলছেন, তখন তাঁর চোখে জল। সেই সঙ্গে মুখে হাসি। তাঁকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পুজারাও। তিনি প্রার্থনা করেন, যাতে আকাশের দিদি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

ফাঁসির আগের সন্ধ্যায় গর্ভধারিণীকে লেখা দীনেশ গুপ্তর চিঠি---আলিপুর সেন্ট্রাল জেল,কলিকাতাসন্ধ্যা পাঁচটা৬.৭.৩১মা,তোমার সঙ্গ...
07/07/2025

ফাঁসির আগের সন্ধ্যায় গর্ভধারিণীকে লেখা দীনেশ গুপ্তর চিঠি---
আলিপুর সেন্ট্রাল জেল,
কলিকাতা
সন্ধ্যা পাঁচটা
৬.৭.৩১
মা,
তোমার সঙ্গে আর দেখা হইবে না। কিন্তু পরলোকে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করিব।
তোমার জন্য কিছুই কোনদিন করিতে পারি নাই। সে না-করা যে আমাকে কতখানি দুঃখ দিতেছে, তাহা কেউ বুঝিবে না, বুঝাইতে চাই-ও না।
আমার যত দোষ, যত অপরাধ দয়া করিয়া ক্ষমা করিও।
আমার ভালবাসা ও প্রণাম জানিও।
- তোমার নসু
আত্মবলিদান দিবসে শহীদ দীনেশ গুপ্তকে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য ।
(ছবিটি ৬ জুলাই ১৯৩১ সালের | আলিপুর জেলে ফাঁসির আগের দিন তোলা দীনেশ গুপ্তর শেষ ছবি | দীনেশ গুপ্তর ফাঁসি হয়েছিল ১৯৩১ সালের ৭ জুলাই )

---------------------
আইপিএস সুপ্রতিম সরকার বাংলার বিপ্লবীদের নিয়ে এই তথ্যসমৃদ্ধ সিরিজটি লিখেছেন কলকাতা পুলিশের সংগ্রহশালায় মজুত নথি থেকে, যত্নবান গবেষণা করে।কাহিনীগুলি থেকে বোঝা যায়, ভারতবাসী যাতে নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারে তার জন্য কী অপরিসীম ত্যাগস্বীকার করেছিলেন তরুণ বিপ্লবীরা।
আমাদের মনে হয়েছিল, এই মহাপ্রাণ বিপ্লবীদের প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানানোর একটি উপায় হল বর্তমান প্রজন্মের কাছে তাঁদের ত্যাগের কাহিনী পৌঁছে দেওয়া।
পড়তেই হবে আইপিএস সুপ্রতিম সরকার মহাশয়ের "স্বাধীনতা যুদ্ধে অচেনা লালবাজার" | এই বই সংগ্রহে রাখার মত বই |
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3oRIbsm

আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের কনডেমড সেলে বসে প্রায় ১০০ এর উপর চিঠি লিখেছিলেন দীনেশ গুপ্ত | তার মধ্যে বেশ কিছু চিঠি হারিয়ে যায় ...
07/07/2025

আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের কনডেমড সেলে বসে প্রায় ১০০ এর উপর চিঠি লিখেছিলেন দীনেশ গুপ্ত | তার মধ্যে বেশ কিছু চিঠি হারিয়ে যায় | কিন্তু আজও প্রায় ৯২ টি চিঠি গুপ্ত পরিবারের কাছে রয়েছে | দীনেশ গুপ্তের ফাঁসির পর তাঁর সেই চিঠিগুলি বেনু পত্রিকায় প্রকাশিত হয় | সেই চিঠিগুলি পড়ে কেঁদে ফেলছিলেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু | চিঠিগুলি পড়লে বোঝা যায় মাত্র ১৯ বছর বয়সেও কতটা সুস্পষ্ট জীবনদর্শন ছিল দীনেশ গুপ্তের | দীনেশ গুপ্তের নিজের হাতে লেখা একটি চিঠি রইল পেজের দর্শকদের জন্যে |
রইল কিছু চিঠির নিদর্শন :
আলিপুর সেন্ট্রাল জেল
১. ৭. ৩১. কলিকাতা ।
মা,
যদিও ভাবিতেছি কাল ভোরে তুমি আসিবে, তবু তোমার কাছে না লিখিয়া পারিলাম না।
তুমি হয়তো ভাবিতেছ, ভগবানের কাছে এত প্রার্থনা করিলাম, তবুও তিনি শুনিলেন না! তিনি নিশ্চয় পাষাণ, কাহারও বুক-ভাঙা আর্তনাদ তাঁহার কানে পৌঁছায় না।
ভগবান কি আমি জানি না, তাঁহার স্বরূপ কল্পনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তবু এ-কথাটা বুঝি, তাঁহার সৃষ্টিতে কখনও অবিচার হইতে পারে না। তাঁহার বিচার চলিতেছে। তাঁহার বিচারের উপর অবিশ্বাস করিও না, সন্তুষ্ট চিত্তে সে বিচার মাথা পাতিয়া নিতে চেষ্টা কর। কি দিয়া যে তিনি কি করিতে চান, তাহা আমরা বুঝিব কি করিয়া?
মৃত্যুটাকে আমরা এত বড় করিয়া দেখি বলিয়াই সে আমাদিগকে ভয় দেখাইতে পারে। এ যেন ছোট ছেলের মিথ্যা জুজুবুড়ির ভয়।
যে মরণকে একদিন সকলেরই বরণ করিয়া লইতে হইবে, সে আমাদের হিসাবে দুই দিন আগে আসিল বলিয়াই কি আমাদের এত বিক্ষোভ, এত চাঞ্চল্য?
যে খবর না দিয়া আসিতো । খবর দিয়া আসিল বলিয়াই কি আমরা তাহাকে পরম শত্রু মনে করিলাম ? ভুল একদম ভুল, মৃত্যু ‘মিত্র’ রূপেই আমার কাছে দেখা দিয়াছে।
আমার ভালোবাসা ও প্রণাম জানিবে।
- তোমার নসু
আলিপুর সেন্ট্রাল জেল
কলিকাতা
১৮ই জুন, ১৯৩১
বৌদি,
তোমার দীর্ঘ পত্র পাইলাম। অ-সময়ে কাহারো জীবনের পরিসমাপ্তি হইতে পারে না। যাহার যে কাজ করিবার আছে, তাহা শেষ হইলেই ভগবান তাহাকে নিজের কাছে টানিয়া লন। কাজ শেষ হইবার পূর্বে তিনি কাহাকেও ডাক দেন না।
তোমার মনে থাকিতে পারে, তোমার চুল দিয়া আমি পুতুল নাচাইতাম। পুতুল আসিয়া গান গাহিত, “কেন ডাকিছ আমার মোহন ঢুলী?” যে পুতুলের পার্ট শেষ হইয়া গেল, তাহাকে আর স্টেজে আসিতে হইত না। ভগবানও আমাদের নিয়া পুতুল নাচ নাচাইতেছেন। আমরা এক একজন পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে পার্ট করিতে আসিয়াছি। পার্ট করা শেষ হইলে প্রয়োজন ফুরাইয়া যাইবে। তিনি রঙ্গমঞ্চ হইতে আমাদের সরাইয়া লইয়া যাইবেন। ইহাতে আপশোস করিবার আছে কি?
ভারতবাসী আমরা নাকি বড় ধর্মপ্রবণ। ধর্মের নামে ভক্তিতে আমাদের পণ্ডিতদের টিকি খাড়া হইয়া উঠে। কিন্তু তবে আমাদের মরণকে এত ভয় কেন? বলি ধর্ম কি আছে আমাদের দেশে? যে দেশে মানুষকে স্পর্শ করিলে মানুষের ধর্ম নষ্ট হয়, সে দেশের ধর্ম আজই গঙ্গার জলে বিসর্জন দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত। সবার চেয়ে বড় ধর্ম মানুষের বিবেক। সেই বিবেককে উপেক্ষা করিয়া আমরা ধর্মের নামে অধর্মের স্রোতে গা ভাসাইয়া দিয়াছি। একটা তুচ্ছ গরুর জন্য, না হয় একটু ঢাকের বাদ্য শুনিয়া আমরা ভাই-ভাই খুনোখুনি করিয়া মরিতেছি। এতে কি ‘ভগবান’ আমাদের জন্য বৈকুন্ঠের দ্বার খুলিয়া রাখিবেন, না ‘খোদা’ বেহেস্তে স্থান দিবেন?
যে দেশ জন্মের মত ছাড়িয়া যাইতেছি, যার ধূলিকণাটুকু পর্যন্ত আমার কাছে পরম পবিত্র, আজ বড় কষ্টে তার সম্বন্ধে এসব কথা বলিতে হইল।
আমরা ভাল আছি। ভালবাসা ও প্রণাম লইবে।
স্নেহের ছোট ঠাকুরপো।
আলিপুর সেন্ট্রাল জেল
৩০. ৬. ৩১. কলিকাতা।
স্নেহের ভাইটি,
তুমি আমাকে চিঠি লিখিতে বলিয়াছ, কিন্তু লিখিবার সুযোগ করিয়া উঠিতে জীবন-সন্ধ্যা হইয়া আসিল।
যাবার বেলায় তোমাকে কি বলিব? শুধু এইটুকু বলিয়া আজ তোমাকে আশীর্বাদ করিতেছি, তুমি নিঃস্বার্থপর হও, পরের দুঃখে তোমার হৃদয়ে করুণার মন্দাকিনী-ধারা প্রবাহিত হউক।
আমি আজ তোমাদের ছাড়িয়া যাইতেছি বলিয়া দুঃখ করিও না, ভাই। যুগ যুগ ধরিয়া এই যাওয়া আসাই বিশ্বকে সজীব করিয়া রাখিয়াছে, তাহার বুকের প্রাণস্পন্দনকে থামিতে দেয় নাই। আর কিছু লিখিবার নাই। আমার অশেষ ভালবাসা ও আশিস জানিবে।
তোমার দাদা
বৌদির কাছে তিনি 'স্নেহের ঠাকুরপো'। ছোট ভাইয়ের কাছে স্নেহশীল দাদা। আর মায়ের কাছে আদরের 'নসু'।
দীনেশ চন্দ্র গুপ্ত।
আত্মবলিদান দিবসে শহীদ দীনেশ গুপ্তকে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য ।
© Ahornish
---------------------
আইপিএস সুপ্রতিম সরকার বাংলার বিপ্লবীদের নিয়ে এই তথ্যসমৃদ্ধ সিরিজটি লিখেছেন কলকাতা পুলিশের সংগ্রহশালায় মজুত নথি থেকে, যত্নবান গবেষণা করে।কাহিনীগুলি থেকে বোঝা যায়, ভারতবাসী যাতে নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারে তার জন্য কী অপরিসীম ত্যাগস্বীকার করেছিলেন তরুণ বিপ্লবীরা।
আমাদের মনে হয়েছিল, এই মহাপ্রাণ বিপ্লবীদের প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানানোর একটি উপায় হল বর্তমান প্রজন্মের কাছে তাঁদের ত্যাগের কাহিনী পৌঁছে দেওয়া।
পড়তেই হবে আইপিএস সুপ্রতিম সরকার মহাশয়ের "স্বাধীনতা যুদ্ধে অচেনা লালবাজার" | এই বই সংগ্রহে রাখার মত বই |
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3oRIbsm

১৯৩১ সালের ৭ জুলাই । আজ থেকে ঠিক ৯৩ বছর আগের কথা । স্থান আলিপুর সেন্ট্রাল জেল ।- এই নাও | মা আর বৌদিকে লেখা চিঠিগুলো সার...
07/07/2025

১৯৩১ সালের ৭ জুলাই । আজ থেকে ঠিক ৯৩ বছর আগের কথা । স্থান আলিপুর সেন্ট্রাল জেল ।
- এই নাও | মা আর বৌদিকে লেখা চিঠিগুলো সার্জেন্টের হাতে তুলে দিলেন দীনেশ | এটা তুমি অফিস জমা দিও | এবার আমি প্রস্তুত |
কিছুদূর গিয়েই এক জায়গায় গোল হয়ে দাঁড়াল রক্ষী বাহিনী | সামনেই স্নানের জায়গা | বন্দিকে ফাঁসির আগে স্নান করানো হয় | এটাই নিয়ম |
- স্নান করতে হবে বুঝি |
হাসলেন দীনেশ |
-কি আশ্চর্য নতুন পোশাকও আছে দেখছি | ঠিক আছে তুমি আমার চশমাটা ধর সার্জেন্ট | আমি স্নান সেরে নিচ্ছি |
মনের আনন্দে গায়ে জল ঢালতে ঢালতে দীনেশের কণ্ঠে ধ্বনিত হল -
" ও জবাকুসুম সংকাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম |
ধানতয়ারিং সর্বপাপঘঙ প্রণতোহস্মি দিবাকারাম | "
অবাক হয়ে যায় শেতাঙ্গ সার্জেন্ট | বন্দি জীবনে ফাঁসি বহু দেখেছেন কিন্তু এই ছেলেটি ব্যতিক্রম | এত নির্বিকার সে | শেষ কমাসে তাঁর ওজন অবধি বৃদ্ধি পেয়েছে | এই বয়সে মৃত্যুকে জয় করার এমন শক্তি পেলেন কি করে ?
-তোমার ভয় করে না ইয়ংম্যান ?
-ভয় কিসের ভয় | হেসে উঠলেন দীনেশ | আমাদের গীতায় কি বলেছে জানো ?
" বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গ্রিনহাতি নরহপরানি
তথা শরিরানি বিহায় জীর্ণা
নন্যটি সংযাতি নবানি দেহি "
অর্থাৎ মানুষ যেমন জীর্ণবস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র ধারণ করে , সেইরূপ আত্মা জীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করে অন্য নতুন শরীরে আসবে |
- তাহলে ভয় কিসের | এ দেহ পরিত্যাগ করে অন্য নতুন শরীরে পরিগ্রহ করে | আপনার সাথে আবার দেখা হবে সার্জেন্ট |
- আমার সাথে দেখা হবে ? কোথায় দেখা হবে?
-বোধহয় এখানেই | সেইদিনও হয়তো তোমাকেই এই অপ্রিয় কাজটার দায়িত্ব আবার নিতে হবে |
এটা বলেই প্রাণখোলা হাসিতে হেসে উঠলো দীনেশ |
- যাক আমার হয়ে গেছে | স্নান শেষে পোশাক পরিচ্ছদ পরে হাসতে হাসতেই বলে দীনেশ | আমি প্রস্তুত | এবার যাওয়া যেতে পারে |
ধীর বলিষ্ঠ পদে ফাঁসির মঞ্চের উপর উঠে দাঁড়ালেন দীনেশ | কোন ভয়, ক্ষোভ , শঙ্কা কিছুই নেই |
- তোমার কিছু বলার আছে বন্দী ?
- প্লিজ স্টপ | আমাদের বলার অধিকার যারা কেড়ে নিয়েছে , সেকথা তো তোমরা ভালো করে জানো | তাহলে কি লাভ এসব মিথ্যা ফর্মালিটি দেখিয়ে | ডু ইওর ডিউটি | আই এম রেডি |
মুখের উপর জবাব দিয়েই বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করলেন "বন্দেমাতরম" |
নিমেষে একটা ঝড় বয়ে গেল আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে | হাজার হাজার বন্দী বিপ্লবীদের মুখেও ধ্বনিত হল "বন্দেমাতরম | দীনেশ গুপ্ত জিন্দাবাদ |" সুর মেলাল সাধারণ কয়েদীরাও | সেই আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ল দূর থেকে দূরান্তরে |
সকলের মুখে একটাই কথা - দীনেশ গুপ্ত জিন্দাবাদ |
আলিপুর জেলে ১৯৩১-এর ৭ই জুলাই ভোর পৌনে চারটেয় ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়েছিলেন উনিশ বছরের দীনেশ গুপ্ত |
বন্ধ হয়ে গেল কোর্ট , অফিস আদালত, স্কুল কলেজ, দোকান পাট , যানবাহন |
বিকেলে হাজার হাজার লোক জমা হল মনুমেন্টের নীচে | সেখানেও সকলের মুখে একটাই কথা - দীনেশ গুপ্ত জিন্দাবাদ |
পরের দিন সকালে দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের ‘Advance’ কাগজের শিরোনাম, "Dauntless Dinesh Dies at Dawn!”
একধাপ এগিয়ে গেল মাসিক "বেণু" পত্রিকা | নিমেষে শেষ হয়ে গেল হাজার হাজার "দীনেশ সংখ্যা" | কলকাতা কর্পোরেশন সরকারি ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে দীনেশ গুপ্তর স্মৃতির উদ্দেশ্যে পাস করল শোক প্রস্তাব |
দীনেশের ফাঁসির আদেশ বঙ্গজ বিপ্লবীদের ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করেছিল। মেদিনীপুর এর দীনেশ গুপ্তের প্রশিক্ষিত বিপ্লবীরাই ডগলাস, বার্জ এবং জেমস পেডি - এই তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করে এর বদলা নিয়েছিল |
দীনেশের মৃত্যুদণ্ডের নেপথ্যে যিনি ছিলেন পুরোধা, সেই রালফ রেনল্ডস গার্লিক কে অচিরেই প্রাণ দিতে হয়েছিল। জয়নগরের বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য ১৯৩১-এর ২৭শে জুলাই, দীনেশের ফাঁসির কুড়ি দিনের মধ্যে, ভরা এজলাসে গুলি করে খুন করেছিলেন গার্লিককে।

আত্মবলিদান দিবসে শহীদ দীনেশ গুপ্তকে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য ।

© অহর্নিশ
ছবি - বর্ষা কর্মকার ঘোষ
তথ্যসূত্র - আমি সুভাষ বলছি

---------------------
আইপিএস সুপ্রতিম সরকার বাংলার বিপ্লবীদের নিয়ে এই তথ্যসমৃদ্ধ সিরিজটি লিখেছেন কলকাতা পুলিশের সংগ্রহশালায় মজুত নথি থেকে, যত্নবান গবেষণা করে।কাহিনীগুলি থেকে বোঝা যায়, ভারতবাসী যাতে নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারে তার জন্য কী অপরিসীম ত্যাগস্বীকার করেছিলেন তরুণ বিপ্লবীরা।
আমাদের মনে হয়েছিল, এই মহাপ্রাণ বিপ্লবীদের প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানানোর একটি উপায় হল বর্তমান প্রজন্মের কাছে তাঁদের ত্যাগের কাহিনী পৌঁছে দেওয়া।
পড়তেই হবে আইপিএস সুপ্রতিম সরকার মহাশয়ের "স্বাধীনতা যুদ্ধে অচেনা লালবাজার" | এই বই সংগ্রহে রাখার মত বই |
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3oRIbsm

ঐতিহাসিক টেস্ট জয় ভারতের ! শুভমন গিলের অধিনায়কত্বে এজবাস্টনে টেস্ট জয় ভারতের ❤শুভমন গিলের মোট ৪৩০ রান (২৬৯ ও ১৬১), আকাশদ...
06/07/2025

ঐতিহাসিক টেস্ট জয় ভারতের ! শুভমন গিলের অধিনায়কত্বে এজবাস্টনে টেস্ট জয় ভারতের ❤

শুভমন গিলের মোট ৪৩০ রান (২৬৯ ও ১৬১), আকাশদীপের ১০ উইকেট (৪/৮৮ ও ৬/৯৯)

প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই জানিয়েছিলেন, ‘এনসি ক্লাসিক’ নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন রয়েছে। নিজের নামাঙ্কিত সেই প্রতিযোগিতা জিতলেন ন...
06/07/2025

প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই জানিয়েছিলেন, ‘এনসি ক্লাসিক’ নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন রয়েছে। নিজের নামাঙ্কিত সেই প্রতিযোগিতা জিতলেন নীরজ চোপড়াই। শনিবার বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে নীরজের ছোড়া ৮৬.১৮ মিটারের জ্যাভলিন কেউই টপকাতে পারলেন না। দ্বিতীয় স্থানে শেষ করলেন কেনিয়ার জুলিয়াস ইয়েগো। তিনি ৮৪.৫১ মিটার ছুড়েছেন। তৃতীয় স্থানে শেষ করা শ্রীলঙ্কার রুমেশ পাথিরাগে ৮৪.৩৪ মিটার দূরে জ্যাভলিন ছুড়েছেন।

অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন

যেদিন তিনি চির ঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন, ঠিক তার দুই দিন পরে, ১৯৮০ সালের ২৬শে জুলাই, তাঁর স্মৃতিচারণে আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘...
06/07/2025

যেদিন তিনি চির ঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন, ঠিক তার দুই দিন পরে, ১৯৮০ সালের ২৬শে জুলাই, তাঁর স্মৃতিচারণে আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘নায়ক’ স্রষ্টা ‘শ্রী সত্যজিৎ রায়’ লিখেছিলেন,
‘‘উত্তমকুমারকে যখন প্রথম ছবিতে দেখি তখনও আমি নিজে ছবির জগতে আসিনি। নতুন একটি হিরোর আবির্ভাব হয়েছে বলে শুনছিলাম, ছবিটিও নাকি ভাল, তাই স্বাভাবিক তাগিদেই গেলাম ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ দেখতে। নির্মল দে-র ছবি, পরিচ্ছন্ন পরিচালনা, আঁটসাট চিত্রনাট্য। এই বিশেষ পরিচালকের কাজ ভাল লেগেছিল বলেই পরে দেখলাম ‘বসু পরিবার’ ও ‘চাঁপাডাঙার বউ’। তিনখানা ছবি পর পর দেখে, মনে হল উত্তমকুমারের অভিনয় ও ব্যক্তিত্বে সত্যিই একটা স্বাতন্ত্র্য আছে। ত্রিশ ও চল্লিশের দশকের দুর্গাদাস, প্রমথেশ, ধীরাজ, জহর গাঙ্গুলী প্রমুখের কাজের সঙ্গে এর বিশেষ মিল নেই। মনে হল ছেলেটি হলিউডের ছবি-টবি দেখে। অভিনয়ে থিয়েটারের গন্ধ নেই, চলায়-বলায় বেশ একটা সাবলীল স্বাচ্ছন্দ্য। ক্যামেরা বস্তুটিকে যেন বিশেষ তোয়াক্কা করে না। তার উপরে চেহারায় ও হাবেভাবে বেশ একটা মন টেনে নেওয়ার ক্ষমতা আছে। উত্তমকুমারের ভবিষ্যৎ আছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
এর দশ-বারো বছর পর উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ আসে আমার। ইতিমধ্যে উত্তম-সুচিত্রার রোম্যান্টিক জুটি দর্শকদের মন জয় করেছে। লেখক পরিচালক প্রযোজক দর্শক সকলের চাহিদা চলে গেছে প্রেমের গল্পের দিকে। ‘অগ্নিপরীক্ষা’ বা ‘হারানো সুর’ দেখে এটা বুঝেছিলাম যে এই জুটির সাফল্যের পিছনে লেখক প্রযোজক পরিচালক দর্শক সমালোচক ফিল্ম-পত্রিকা সম্পাদক ইত্যাদি সকলের যতই অবদান থাকুক না কেন, এদের দু’জনের মধ্যেই এমন সব গুণ বর্তমান, যার রাসায়নিক সংমিশ্রণে সোনা ফলতে বাধ্য। শুধু উত্তমের কথা বলতে গেলে এটা বলা যায় যে, নায়িকার সান্নিধ্যে এলেই অনেক নায়কের মধ্যেই সিঁটিয়ে যাওয়ার ভাবটা ক্যামেরায় অব্যর্থ ভাবে ধরা পড়ে, উত্তমকুমারের মধ্যে সেটি নেই। বরং প্রেমের দৃশ্যে এঁর অভিনয় খোলে সবচেয়ে বেশি। নারী-পুরুষের সম্পর্ক যেখানে চিত্রকাহিনির অন্যতম প্রধান উপাদান, সেখানে এটা যে কত বড় গুণ সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।
‘নায়ক’-এর গল্প আমি লিখি উত্তমকুমারের কথা ভেবেই। সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের এক অভিনয়-পাগল যুবক ছবিতে নেমে তরতরিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে। এই অবস্থায় এই যুবকের মনে কী ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে, তার মূল্যবোধে কী পরিবর্তন হতে পারে, এও ছিল গল্পের বিষয়।
চিত্রনাট্য শুনে উত্তম খুশি হয়। তার একটা কারণ হতে পারে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে কাহিনির সাদৃশ্য। আলোচনা করে বুঝলাম যে গল্পের গভীরে প্রবেশ করতে না চাইলেও, বা না পারলেও, তাঁর চরিত্রটি কীভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে সেটা উত্তম মোটামুটি বুঝে নিয়েছে। তাঁকে আগেও বলে রেখেছিলাম যে, সে যে ধরনের প্রেমের গল্পে অভিনয় করতে অভ্যস্ত, এটা সে ধরনের গল্প নয়। সুতরাং তাঁকে গতানুগতিক পথ কিছুটা ছাড়তে হবে। এতে যে প্রেম আছে, তা প্রচ্ছন্ন। এতে নায়কের দোষ-গুণ দুই আছে, এবং তা যে শুধু অন্তরে তা নয়। তাঁকে বললাম যে তোমার গালে যে সাম্প্রতিক পানবসন্তের দাগগুলি রয়েছে, সেগুলি ক্যামেরায় বোঝা যাবে, কারণ তোমাকে মেকআপ ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
এই সব প্রস্তাবে তাঁর সামান্য প্রাথমিক দ্বিধা উত্তম সহজেই কাটিয়ে উঠেছিল।
এটা বলতে পারি যে – উত্তমের সঙ্গে কাজ করে যে তৃপ্তি পেয়েছিলাম, তেমন তৃপ্তি আমার এই পঁচিশ বছরের ফিল্ম জীবনে খুব বেশি পাইনি। উত্তম ছিল যাকে বলে খাঁটি প্রোফেশনাল। রোজকার সংলাপ সে সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত করে কাজে নামত। তাঁর অভিনয় ক্ষমতা ছিল সহজাত। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর দখল ছিল ষোলো আনা। ফলে স্বভাবতই তাঁর অভিনয়ে একটা লালিত্য এসে পড়ত। রোজই দিনের শুরুতে সেদিনকার বিশেষ কাজগুলি সম্পর্কে একটা প্রাথমিক আলোচনার পর আমাকে নির্দেশ দিতে হত সামান্যই। সবচেয়ে বড় কথা এই যে, নিছক নির্দেশের বাইরেও সে মাঝে মাঝে কিছু সূক্ষ্ম ডিটেল তাঁর অভিনয়ে যোগ করত যেগুলি সম্পূর্ণ তাঁর নিজস্ব অবদান। এই অলংকরণ কখনই বাড়াবাড়ির পর্যায় পড়ত না; এটা সব সময়েই হত আমার পক্ষে একটা অপ্রত্যাশিত উপরি প্রাপ্তি। বড় অভিনেতার একটা বড় পরিচয় এখানেই। ‘নায়ক’-এর পর ‘চিড়িয়াখানা’ ছবিতে উত্তমের সঙ্গে কাজ করেও একই তৃপ্তি পেয়েছি। ‘চিড়িয়াখানা’ ছিল নায়িকা-বর্জিত ছবি, ফলে বলা যেতে পারে উত্তমের পক্ষে আরও বড় ব্যতিক্রম।
আজ কাগজে পড়ে জানলাম যে উত্তমকুমার নাকি আড়াইশোর উপর ছবিতে অভিনয় করেছিল। এর মধ্যে অন্তত দুশো ছবি যে অচিরেই বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। যে দেশে সৎ অভিনেতার সদ্ব্যবহার করতে জানা লোকের এত অভাব, সেখানে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শিল্পীর বিচার সবসময়ই হয় তার শ্রেষ্ঠ কাজের উপর। উত্তমের অভিনয়ের পরিধি যে খুব বিস্তৃত ছিল তা নয়, কিন্তু তার এই নিজস্ব পরিধিতে ক্রমান্বয়ে ত্রিশ বছর ধরে সে যে নিষ্ঠা ও ক্ষমতার পরিচয় দিয়ে গেল, তার তুলনা নেই। তাঁর অভাব পূরণ করার মতো অভিনেতা আজ কোথায়?’’
মহানায়কের ‘দক্ষতা’ নিয়ে এর থেকে বড় শংসাপত্র আর কি হতে পারে? যেভাবে জুহুরী হীরা চেনে, সেইভাবেই চলচ্চিত্র জগতের এক কিংবদন্তি চিনেছিলেন আরেক কিংবদন্তি কে।
======================
বই আর সিনেমা এই দুটোই আমার পছন্দের জিনিস। আর বাংলা সিনেমার মহানায়ক কে নিয়ে লেখা বই যে আমার ভালো লাগবে সেটা তো সন্দেহের অবকাশ রাখে না। তাও আবার যখন সেই বই লিখেছেন তাঁর অনুজ তরুণ কুমার।
মহানায়কের জীবনের বিভিন্ন অজানা ঘটনা জানতে পড়তেই হবে অনুজ তরুণ কুমারের লেখা "আমার দাদা উত্তমকুমার"
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3NxCqdr
=============================
বিস্তারিত জানতে আরও পড়ুন মহানায়ক উত্তমকুমারের আত্মজীবনী - নিজের লেখা বই - আমার আমি । এই বইতে পাবেন মহানায়ক সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3QyRcle
============================
বিস্তারিত জানতে আরও পড়ুন সুপ্রিয়া দেবীর লেখা বই আমার জীবন আমার উত্তম । এই বইতে পাবেন মহানায়ক সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য । উত্তমকুমারকে নিয়ে এরকম বই আর একটিও নেই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/4bVaavn
=======================
উত্তমকুমার প্রয়াত হওয়ার ঠিক পরেই ১৬ই আগস্ট,১৯৮০ আনন্দলোক উত্তম সংখ্যা বেরিয়েছিল ওনার স্মরণে । অতি স্বল্পমূল্যে দুষ্প্রাপ্য পত্রিকাটির পিডিএফ চাইলে হোয়াটস্যাপ করুন
Whatsapp Link : https://wa.me/9831930921

♦️কবরে মৌলবি, স্তোত্র পাঠে পণ্ডিতমশাই ♦️এ রকমই ছিল আমার ছেলেবেলা। অঙ্কের স্যর জসিমউদ্দিন আহমেদ নিজে থাকতেন সরস্বতী পুজোর...
06/07/2025

♦️কবরে মৌলবি, স্তোত্র পাঠে পণ্ডিতমশাই ♦️
এ রকমই ছিল আমার ছেলেবেলা। অঙ্কের স্যর জসিমউদ্দিন আহমেদ নিজে থাকতেন সরস্বতী পুজোর তদারকিতে।
ছেলেবেলা কাকে বলে? কোন সুর জলতরঙ্গের মতো টুংটাং বেজে ওঠে শব্দটা শুনলেই? নিজের কথা বলতে পারি। আমার কাছে ছেলেবেলার ছবি মানেই গোবেচারা আঁকাবাঁকা একটা নদী— করতোয়া— জীবনে কোনও দিন বন্যা এনে সব কিছু ভাসিয়ে দেওয়ার দম্ভ যে দেখাতে পারেনি। তারই এক পাশে, উঁচু পাড়ের ওপর সাজানো-গোছানো বগুড়ার ছোট্ট একটা শহর। রাস্তায় ধুলো, খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে ইশকুলে যাতায়াতই রেওয়াজ। জায়গাটা মুসলমানপ্রধান হলেও এই তথ্যটির আদৌ কোনও গুরুত্ব আছে বলে ছেলেবেলায় কোনও দিনই মনে হয়নি। বাড়ির কর্তা— মানে আমার বাবা— স্বদেশি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে বেশির ভাগটাই জেলে জেলে। আমার অভিভাবকত্বের ভার ছিল প্রতিবেশী বয়স্কদের ওপর। তাঁদের স্নেহ, তাঁদের শাসনে বড় হতে হতে এক দিন আবিষ্কার করলাম, এঁদের অধিকাংশই মুসলমান।
ইশকুলেও একই অবস্থা। অঙ্কের স্যর জসিমউদ্দিন আহমেদ ধুতি-পাঞ্জাবি পরতেন বরাবর। সরস্বতীপুজোয় চেয়ার পেতে বসে সব কিছুর খবরদারি করতেন। ফাইনাল পরীক্ষার আগে অঙ্কে-কাঁচা ছেলেদের, যেমন আমি— জোর করে পাকড়ে নিজের বাড়ি এনে শাসন, তর্জন আর স্নেহ দিয়ে রগড়ে রগড়ে কিঞ্চিৎ ভদ্রস্থ করে তোলার চেষ্টা করতেন। বদলে ‘সম্মানদক্ষিণা’ কথাটা তোলার মতো হিম্মত কারও ছিল না।
ইশকুলের শিক্ষকদের মধ্যে দু’জন— সংস্কৃতের পণ্ডিতমশাই আর আরবির মৌলবি সাহেব— সব থেকে কম মাইনে পেতেন সম্ভবত। সেই জন্যেই, কী করে জীবনযুদ্ধে কোনও রকমে টিকে থাকা যায় তার টেকনিক নিয়ে শলা-পরামর্শ করতে করতে নিবিড় বন্ধুত্ববন্ধনে জড়িয়ে নিয়েছিলেন নিজেদের। হেঁটে হেঁটে বহু দূর থেকে ইশকুলে আসতেন তাঁরা, খালি পায়ে। এঁদের প্রাক্তন ছাত্ররা, কেউ এখন উকিল, কেউ অফিসার, কেউ বা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী— হয়তো টাঙা চড়ে উলটো দিকে চলেছেন। এঁদের দেখামাত্র গাড়ি থামিয়ে কাছে এসে প্রণাম বা কদমবুসি জানাতেন। আশীর্বাদ পেয়ে আর দিয়ে যে যার আবার নিজের পথে।
এক ভরা শ্রাবণে ইশকুলে গিয়ে খবর পেলাম, আগের রাতেই মৌলবি সাহেব হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছেন। একটু পরেই তাঁর দেহ এসে পৌঁছবে। তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁকে গোর দেওয়া হবে ইশকুল-মাঠের শেষ প্রান্তে উঁচু ঘাসজমিতে। জায়গাটা শহরের শেষ সীমানা ছাড়িয়ে, যার পর অবারিত ধানখেত আর দূরে দূরে ছোট ছোট গাঁ।
কবর খোঁড়া হল। মৌলবি সাহেবকে শুইয়ে দেওয়ার পর আপনজনেরা কয়েক মুঠো করে মাটি ফেলবেন তার ওপর। মাটি চাপানো শেষ হলে আর ফিরে দেখতে নেই নাকি। এটাই প্রথা। অতএব, আমরা সবাই উলটোমুখো হাঁটা শুরু করলাম। এমন সময় আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অজয়— ডানপিটেমিতে যে বরাবরই ফার্স্ট বয়, চাপা গলায় বলল, ‘‘দূর, কী হবে ফিরে তাকালে? কচু হবে।’’
বলে, সে ফিরে তাকাল। সেই সঙ্গে আমিও। যে দৃশ্য দেখতে পেলাম তা না দেখলে আমার ছেলেবেলার সোনার ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটাই অদেখা থেকে যেত।
আকাশ জুড়ে থরে থরে কালো পাশবালিশের মতো মেঘের সারি অনেক নীচে নেমে এসেছে। হাওয়া দিচ্ছে শনশন। একটু আগে হয়ে-যাওয়া বৃষ্টির ফোঁটা ঝরঝর করে ঝরে পড়ছে ঘাসজমির লম্বা লম্বা ঘাসের ডগা থেকে। যেখানে মৌলবি সাহেবকে রেখে আসা হল সেখানে আর কেউ নেই এখন। শুধু এক জন ছাড়া। আমাদের পণ্ডিতমশাই।
হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে তাঁর খাটো উত্তরীয়টা। পইতেটা আঙুলের ডগায় তুলে, আমাদের দিকে পিছন ফিরে, তিনি কী যেন বলে চলেছেন তাঁর সদ্যপ্রয়াত বন্ধুকে। ভাল করে কান পাতলে বোঝা যায়—
‘আকাশস্থ নিরালম্ব বায়ুর্ভূত নিরাশ্রয়
অত্র স্নাত্বা ইদং পীত্বা স্নাত্বাপীত্বা সুখি ভবেৎ।’
ধুলোয় ছড়ানো শল্‌মা-চুমকির মতো এমন কত সব চকচকে ছবি, আমার ছেলেবেলা।
শহরে দু-দু’টো সিনেমা-হল। ‘উত্তরা’ আর ‘মেরিনা’। ‘মেরিনা’ আবার বিশাল একটা পার্কের ঠিক মাঝখানটায়, চার দিকে ফুলের মেলা। ছবি আসত নিউ থিয়েটার্স আর বম্বে টকিজ-এর। সেই সঙ্গে চার্লি চ্যাপলিনের।
চার্লির ছবি মানেই অফুরন্ত মজা। কিন্তু শুনতাম, এ সব ছবির পিছনে নাকি দুর্দান্ত সব ‘হাই থট’ লুকনো থাকে। শহরে মনোয়ার বলে একটা লোক ছিল। খুন-জখম জাতীয় ব্যাপারে খুবই সুনাম তার। সে-ই প্রথম বলেছিল আমাকে, ‘‘চাল্লির ছবি বোঝা অত সোজা না। বাড়িৎ গিয়া ভাব।’’
এ বার সেই ছোট্ট শহরটার দুর্গাপুজোর কথা। এ-পাড়া ও-পাড়া মিলে পুজো হত বেশ কয়েকটা। কিন্তু আমাদের প্রধান আকর্ষণ সাবেকি দত্তবাড়ির দুই তরফের দু’টো জমকালো পুজো। সদ্য-পাওয়া নতুন জুতোজোড়ার কল্যাণে দু’পায়ে বড় বড় ফোস্কা নিয়ে এ-পুজো ও-পুজো করে বেড়াচ্ছি সর্ব ক্ষণ। নহবতখানা থেকে সানাইয়ের সুর। পথের দু’পাশে হল্লাদার মেলা। চরকি থেকে শুরু করে ‘দিল্লি দেখো বোম্বাই দেখো’-র উঁকি-মারা বাক্স, জিলিপি-গজা-রসগোল্লার দোকান। কাঠের বারকোশে স্তূপীকৃত খুরমার পসরা। চুলের ফিতে, কাচের চুড়ি, সোহাগ-আয়না। আদমদিঘির তাঁতিদের বোনা শাড়ি-গামছা। বাদুড়তলার কুমোরদের গড়া রকমারি পুতুল, ঘাড়-দোলানো বুড়োবুড়ি।
বড় তরফের নাটমন্দিরে কত রকম যে অনুষ্ঠান! বাইরে থেকে বড় বড় ওস্তাদদের আনাগোনা। বড়ে গোলাম আলি, তারাপদ চক্রবর্তী, সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়, তুলসী লাহিড়ী। লখনউ ম্যরিস কলেজের সোনার মেডেল পাওয়া ছাত্র, অতুলপ্রসাদ সেনের প্রিয় শিষ্য পাহাড়ী সান্যাল (পরবর্তী কালে আমার পাহাড়ীদা) এক বার এসে ‘কে তুমি নদীকূলে বসি একেলা’ গেয়ে মফস্‌সলি শ্রোতাদের এমন মনোহরণ করেছিলেন যে পর পর তিন বার একই গান গেয়ে তবে তাঁর রেহাই।
এক দিন হত আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। শহরের ‘চ্যাংড়াপ্যাংড়া’দের, অর্থাৎ ছোটদের জন্য। বড়দের নাটক নামত নবমীর রাতে। বঙ্গে বর্গি, পিডব্লিউডি, তটিনীর বিচার। রিহার্সাল দিতে দিতে গলার বারোটা। গিন্নিরা তটস্থ। ঘন ঘন তুলসীর পাতা দেওয়া চা, গোলমরিচ-তালমিছরির ক্বাথ পাঠাতে পাঠাতে হয়রান। হে মা দুগ্‌গা, মান যেন থাকে।
বিজয়ার বিকেলে করতোয়ার পাড়ে লোকারণ্য। ডবল-নৌকো জুড়ে তার ওপর দেবী ভেসে বেড়াচ্ছেন এ দিক থেকে ও দিক, ও দিক থেকে এ দিক। সন্ধে হল তো হাউই, তুবড়ি, রংমশাল। নিরঞ্জনের পর ঘাট থেকে শুরু হয়ে গেল প্রণাম, কোলাকুলি, আশীর্বাদের পালা।
একটু দূরেই রেলের ব্রিজ। সকাল-সন্ধেয় দু’জোড়া ট্রেনের গুমগুম শব্দে যাতায়াত। তার পর সব চুপচাপ।
এক কোজাগরী রাতের কথা বলি। শহর ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা তফাতে রেলের প্ল্যাটফর্ম। আমার সেই ডানপিটে বন্ধু অজয় হঠাৎ এসে বলল, ‘‘চল, ইস্টিশনটা ঘুরে আসি।’’
‘‘এখন?’’
‘‘তো?’’
‘‘সে যে অনেকটা পথ। মাঝখানে ওই জলাটা। সাপের বাসা একেবারে...’’
‘‘কিচ্ছু হবে না। চল তো। ফুটফুটে জোছনা, দেখবি কেমন মজা।’’
সাপের ভয়ে কাঁটা হয়ে মজা দেখতে দেখতে শেষ অবধি পৌঁছনো গেল। ছোট্ট প্ল্যাটফর্ম, বড় বড় শিরিষের ছায়ায় ঝিমোচ্ছে। কাছে পৌঁছতেই একটা আওয়াজ কানে এল। আওয়াজ নয় ঠিক। বাতাসে কাঁপতে কাঁপতে ভেসে আসা একটা খালি গলার গান: ‘ঘরবাড়ি ছাড়লাম রে, নদীর চরে বাসা রে—’
এই জনহীন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শুধু ঝিঁঝিঁ আর কটকটি ব্যাঙের আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই থাকবার কথা নয়, সেখানে গান গায় কে?
গুটিগুটি কাছে আসতেই থই পাওয়া গেল। অদূরে মাল ওজন করার যন্ত্রটার ওপর পিছন ফিরে বসে এক ভদ্রলোক জ্যোৎস্না-ধোওয়া জলার দিকে চেয়ে আপনমনে গেয়ে চলেছেন। পরনে ধুতি-শার্ট, ওপরে সুতির ইংলিশ কোট।
প্রৌঢ় স্টেশনমাস্টারমশাই তাঁর ঘরের দরজার কাছে চুপ করে দাঁড়িয়ে। ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে আমাদের শব্দ করতে বারণ করেন। একটু পরে, গায়কের গান শেষ হলে, কাছে এসে
তিনি ফিসফিসিয়ে বলেন, ট্রেন ফেল করেছেন ভদ্রলোক। গিয়ে পা ছুঁয়ে প্রণাম করো। আব্বাসউদ্দিন আহমেদ সাহেব!
এই স্টেশন, এই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আরও একটা স্মৃতি আছে। সেটা মজার।
আমাদের ইশকুলের পুরনো অঙ্ক স্যর হরলালবাবু রিটায়ার করার পরে তাঁর জায়গায় নতুন এক জন এলেন। রোগাপটকা, মাথায় খাটো, রোদে-ঝলসানো ফরসা গায়ের রং। সব সময় কেমন যেন আনমনা, কী যেন ভাবেন সর্বদা। নাম মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা ডাকতে শুরু করলাম ‘মণি স্যর’ বলে। আগের অঙ্ক স্যর হরলালবাবুর মতো হাঁকডাক নেই। কেউ তাঁকে দেখে ভয় পায় না। শহর থেকে খানিক দূরে ইস্টিশনের কাছে গোটা কয়েক টালি-ছাওয়া ঘর— তারই একটায় ভাড়াটে হয়ে উঠেছেন। অজয় এক দিন এসে বলল, ‘‘চল, স্যরের ডেরাটা একটি ভিজিট মেরে আসি।’’
গিয়ে দেখি, বিচিত্র ব্যবস্থা। একটা খাটিয়া, একটা ট্রাঙ্ক আর একটা হারমোনিয়াম— ব্যস, সংসার বলতে এই। না ওঁর বউ, না ছেলেপুলে। স্টেশনে যে লোকটা পান-বিড়ি, চা-শিঙাড়া বিক্রি করে সেই রামটহল, রামটহল মিশি। সে জানাল, মাস্টারজি নাকি এই রকমই। বিয়ে-থা করেননি। বাড়িতে কোনও উনুন নেই। মাসচুক্তিতে দু’বেলা খাবার পাঠায় রামটহলই। মাস্টারমশাইয়ের ঘরের চাবি, মাসমাইনের টাকা, সবই নাকি থাকে ওর কাছে।
‘‘আজিব আদমি!’’ রামটহল বলে।
কিন্তু কী করে কী করে অজয় আর আমার সঙ্গে স্যরের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। খুব কাছের সম্পর্ক। মনে আছে, সেটা শ্রাবণ মাস। ক’দিন ধরে ঝমঝম করে তুমুল বৃষ্টি। চতুর্থ দিন সন্ধেয় হঠাৎ মেঘের ফাটল দিয়ে চাঁদ উঁকি দিল। নরম জ্যোৎস্নায় ভেসে গেল চারদিক।
অজয় আর আমি চলেছি ইস্টিশনের দিকে বেড়াতে। পৌঁছে দেখি হুলস্থুল কাণ্ড। স্টেশনমাস্টার মশাই, রামটহল আর ট্রলিম্যানরা ঘিরে আছে মণি স্যরকে। মণি স্যর কাঁদো কাঁদো হয়ে বলছেন, ‘‘ও রে! কী হবে এখন? আমি যে কথা দিয়ে কথার খেলাপ করে ফেললাম। এক নিরীহ ভদ্রলোককে এমন বিচ্ছিরি বিপদে ফেলে দিলাম!’’
‘কথার খেলাপ’, ‘নিরীহ ভদ্রলোক’, ‘বিচ্ছিরি বিপদ’— একটা কথারও মানে পরিষ্কার হল না আমাদের কাছে। শেষ পর্যন্ত এর-ওর মুখ থেকে শুনলাম ঘটনাটা।
দিন পাঁচেক আগে সকালের ডাউন ট্রেনটা সবে এসে দাঁড়িয়েছে প্ল্যাটফর্মে, এমন সময় মাঝবয়েসি এক ভদ্রলোক, কাঁচাপাকা চুল, গাড়ি থেকে নেমে একেবারে হইচই করে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কাঁদেন আর বুক চাপড়াতে থাকেন।
কী ব্যাপার?
জানা গেল, বাড়ি ওঁর চার ইস্টিশন পরে, আদমদিঘিতে। সামনে মেয়ের বিয়ে। গয়না গড়াতে দিয়েছিলেন কলকাতায়। পাত্রপক্ষের খাঁই অনেক। শুধুমাত্র মেয়ে, ওর শ্যামলা রং সত্ত্বেও, দেখতে ভাল বলে এই বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছেন, কমের ওপর দিয়ে। ‘কম’ মানে মেয়েটির বাবার যথাসর্বস্ব।
সেই গয়না নিয়ে ফিরছিলেন ট্রেনে, সারা রাত সাবধানে আগলাতে আগলাতে। ভোরের দিকে একটু তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। সেই ফাঁকে ওঁর গয়নার বাক্স উধাও।
কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে ভদ্রলোক এক সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান প্ল্যাটফর্মে। জল, বাতাস, এ সব দিয়ে জ্ঞান ফেরানো হলে ভদ্রলোক বলেন, তিনি আর ফিরবেন না আদমদিঘিতে। কোন মুখে গিয়ে দাঁড়াবেন নিজের একমাত্র মেয়ের সামনে! তার চেয়ে বরং লাইনে গলা দিয়ে মরবেন।
কান্নাকাটি, হা-হুতাশ, বুক চাপড়ানো— সবই মণি স্যর দেখছিলেন চোখের সামনে। এমন সময় হঠাৎ নাকি এগিয়ে এসে বলেন, ‘‘কী জাত আপনারা?’’
‘‘বামুন। চক্কোত্তি। আদমদিঘির বিশ্বনাথ চক্কোত্তি।’’
‘‘মেয়ের বয়েস?’’
‘‘এই একুশ পেরোবে সামনের মাসে।’’
‘‘দেখুন, রাজি হওয়ার কথা নয় আপনার। বিশেষ, যখন অমন পাত্রী। তবু যদি একান্ত মনে করেন, আমিও বামুন, মণিময় বাঁড়ুজ্যে, কম মাইনের মাস্টার এক জন। আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে পারি। ম্যাচিংটা ভাল হবে না। কিন্তু বিয়েটা তো হবে।’’
‘‘দেনাপাওনা?’’
‘‘নট এ সিঙ্গল পাইস। এই এরা সবাই সাক্ষী।’’
ভদ্রলোক, বলা বাহুল্য, হাতে চাঁদ পান। বিয়ের তারিখ, লগ্ন, এ সব জানিয়ে পরের ট্রেন ধরেন। মণি স্যর কথা দেন, সময়ের আগেই পৌঁছে যাবেন।
আজই সেই রাত। লগ্ন রাত দশটায়। আদমদিঘি যাওয়ার শেষ ট্রেন ছেড়ে গিয়েছে অনেক আগেই। এখন উপায়?
হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। স্টেশন মাস্টারমশাইকে বলি, ‘‘এক কাজ করলে হয় না?’’
‘‘কী?’’
‘‘আপনি যদি একটা ট্রলির ব্যবস্থা করে দেন, ট্রলিম্যানরা তো এখানেই আছে, সেই ট্রলি চেপে স্যর যদি বিয়ে করতে চলে যান? পনেরো-কুড়ি মাইল তো রাস্তা। ঠিক পৌঁছে যাবেন।’’
সবাই সমস্বরে ‘‘হ্যাঁ, হ্যাঁ’’ বলে ওঠেন।
অতঃপর ট্রলি। বরবেশে মণি স্যর। বরযাত্রী বলতে তিন জন। অজয়, আমি আর রামটহল। হাওয়া দিচ্ছে। মেঘ সরে যাচ্ছে ক্রমশ। তারই ছায়া পড়েছে দু’পাশের খোলা মাঠে জমা জলের বুকে। কচি কচি ধানচারা যেখানে হাওয়ায় দুলছে।
কাহালু, তালোড়া, নসরতপুর পেরিয়ে আদমদিঘি।
আমরা চলেছি মাস্টারমশাইয়ের বিয়ে দিতে।

- তরুণ মজুমদার (আনন্দবাজার পত্রিকা)

==============

সিনেমার অজানা গল্প যদি জানতে চান তাহলে অবশ্যই পড়ুন পরিচালক তরুণ মজুমদার মহাশয়ের বই সিনেমাপাড়া দিয়ে | এক অসাধারণ বই |
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3MEGtm7

Address

North 24 Parganas
Kolkata

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when অহর্নিশ - Ahornish posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to অহর্নিশ - Ahornish:

Share