অহর্নিশ - Ahornish

অহর্নিশ - Ahornish Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from অহর্নিশ - Ahornish, Digital creator, North 24 Parganas, KOLKATA.
(2)

আমরা ঘুরে বেড়াই ইতিহাসের সেই সব ঘনঘটায় যাদের হয়তো জায়গা দেওয়া হয়নি বইয়ের পাতায়। চেষ্টা করি এমন অনেক অজানা তথ্য ও গল্প তুলে আনার যা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। শক্তি দেয় ইতিবাচক নতুন কিছু ভাবার কিংবা অভাবনীয় কিছু করার।

অঙ্কের মাস্টারমশাই ক্লাস নিচ্ছেন।আজ ছাত্রদের ভাগ শেখাবেন। মাস্টারমশাই বললেন, " যে কোন সংখ্যা কে সেই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে...
22/12/2025

অঙ্কের মাস্টারমশাই ক্লাস নিচ্ছেন।আজ ছাত্রদের ভাগ শেখাবেন। মাস্টারমশাই বললেন, " যে কোন সংখ্যা কে সেই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে সর্বদা ১ হয়" ।
ক্লাসের সবাই ভাবল হ্যাঁ সত্যিই তো 1 কে ১ দিয়ে ভাগ করলে ১, ২ কে ২ দিয়ে ভাগ করলে ১ ।
ঠিক তখনই এক ছাত্রের প্রশ্ন, " স্যার শূণ্য কে শূণ্য দিয়ে ভাগ করলেও কী ১ হবে?"
এমন প্রশ্ন পেয়ে মাস্টারমশাই রীতিমত চমকে গিয়ে ভাবলেন, সত্যিই তো এটা তো ভেবে দেখিনি, কোনো সদুত্তর দিতে না পেরে ধমক দিয়ে সেদিনের সেই বাচ্চা ছেলেটাকে বসিয়ে দেন ।
কিন্তু সে তো বসে থাকার ছেলে নয়, যার ধ্যান জ্ঞান বিজ্ঞান সবকিছুই গণিত, তার মাথায় সর্বদাই ঘুরছে শূণ্য কে শূণ্য দিয়ে ভাগ করলে তো ১ হয় না! কিন্তু এর সমাধান কী?
ব্রিটিশ শাসন তখন গাঢ় থেকে গাঢ়তর, তামিলনাড়ুর এক ছোট্ট শহরে কমলালতার গর্ভে জন্ম রামানুজনের । বাবা কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন , মধ্যবিত্ত পরিবার । মা কমলালতাই তার সবচেয়ে কাছের ছিলেন ।
স্কলারশিপের টাকায় পড়াশোনা বেশ ভালোই এগোচ্ছিল । কিন্তু গণিতের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি ছন্দপতন ঘটায় । Fellow of arts পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয় রামানুজন । ফলে তার স্কলারশিপ বন্ধ হয়ে যায় । তাই অর্থের অভাবে তাকে কলেজ ছাড়তে হয় । কিন্তু সে তো নাছোড়বান্দা, বাড়ি তে থেকেই নিজে নিজে গণিতের রিসার্চ শুরু করেন ।
বারবার শারীরিক অসুস্থতা তাকে দূর্বল করে, টাকা পয়সার অভাব, ক্ষুধার্ত পেট সবকিছু তাকে বাধ্য করে একটা চাকরি খোঁজার জন্য । কিন্তু সে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে ।শোনা যায় মা কমলালতা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন, এবং এটাও শোনা যায়, এক স্বপ্নে তার মা ভগবানকে বর চায়, এবং ঈশ্বর বলেন, " তোমার সন্তানের দীর্ঘায়ু চাও নাকি তোমার সন্তানকে সারা বিশ্ব চিনুক, কোনটা তুমি চাও ?" কমলালতা দ্বিতীয় টাই বেছে নেন ।
গণিতের যে সমস্ত থিওরেম সে নোটবুকে লিখে রাখত তা বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি তে পাঠালে তাকে "পাগল" অ্যাখ্যা দিয়ে বাতিল করা হত । কারণ সে থিওরি লিখলেও তার কাছে নির্দিষ্ট কোনো সমাধান ছিল না ।
কোনো প্রতিবন্ধকতাই মানুষটাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি, Ramanujan theta function, Ramanujan prime, Mock theta function এ ছাড়াও Number theory Infinite series সবকিছুই তার মস্তিষ্কের আবিস্কার । গণিতের সুবিশাল মহাকাশে রামানুজনের বিস্তার প্রতিটা ক্ষেত্রে ।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রামানুজনকে ডেকে পাঠান হার্ডি আর লিটলহুড । প্রায় ১২০ টা থিওরেম হার্ডি মনোযোগ দিয়ে দেখেন । বুঝতে পারেন এই ছেলেটার মধ্যে এক অনন্য বিরল ক্ষমতা আছে গণিতের দুনিয়ায় । প্রায় পাঁচ বছর কেমব্রিজে থাকেন এবং সেখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি পান, লণ্ডন ম্যাথামেটিকাল সোসাইটি থেকে তাকে " Fellow of the royal society " দেওয়া হয় ।
৩২ বছর বয়সে তাকে আবার টিউবারকিউলেসিস আক্রমণ করে । এবার আর শেষরক্ষা হয়নি । হসপিটালে ভর্তি থাকাকালীন হার্ডি তাকে দেখতে যান, এবং গিয়ে বলেন , "রামানুজন এমন একটা ট্যাক্সি তে এলাম যার নম্বর ১৭২৯, আমার মনে হয় নাম্বার টা মোটেই ভালো নয়, ফালতু নাম্বার একটা । রামানুজন হার্ডি কে বলেন, " কী বলছ এসব, 1729 is very interesting number, it is the smallest number expressible as the sum of two cubes in two different ways" ।
1^3+12^3=9^3+10^3
1729 নম্বর টা রামানুজন হার্ডি নম্বর হিসেবেই গণ্য করা হয় । এছাড়াও তাকে বলা হয়, " The man who knew infinity "....
এভাবে মানুষটাকে নিয়ে লিখলে শেষ হবে না । ৩২ বছরে তিনি গণিত শাস্ত্র কে ভরিয়ে দিয়ে গেছেন, বদলে নিজের দেশ থেকে কিছুই পাননি । আজ এই মানুষটার জন্মদিন । ন্যাশনাল ম্যাথামেটিকস ডে হিসেবে দিনটি পালন করা হয় ।
লেখা - বিভাস চন্দ্র মিত্র

রামানুজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অবশ্যই পড়ুন MAN WHO KNEW INFINITY by Robert Kanigel (Author)....এই বই সংগ্রহে রাখার মত বই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3GUBviQ

♦️বিজয়া না হলে সত্যজিৎ হয় না -পুত্রবধূ ললিতা রায়♦️দিনটা খুব এলোমেলো লাগছে। মায়ের মুখটা ভেসে বেড়াচ্ছে সারা বাড়িতে। আজ য...
21/12/2025

♦️বিজয়া না হলে সত্যজিৎ হয় না -পুত্রবধূ ললিতা রায়♦️
দিনটা খুব এলোমেলো লাগছে। মায়ের মুখটা ভেসে বেড়াচ্ছে সারা বাড়িতে। আজ যেন মা বড্ড বেশি মনের ভেতর আনাগোনা করছেন। মনে পড়ে যাচ্ছে বাবার কথা। এ বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর খুব কম সময়ই একসঙ্গে ওঁদের দু’জনকে দেখেছি। বাবা তত দিনে বেশ অসুস্থ, আর মাও বাবার রুটিনে নিজের জীবনটাকে বইয়ে দিয়েছিলেন। কী অসম্ভব বন্ডিং ছিল দু’জনের। আজ তো মনে হচ্ছে, বাবার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন মা। চিত্রনাট্য লেখা থেকে বাবাকে সময় মতো ওষুধ খাওয়ানো, সবেতেই মায়ের ভূমিকা ছিল অনিবার্য।
মায়ের পরামর্শে ফেলুদার গল্পে বদল
আসলে ওই রকম বিদুষী, দেশি বিদেশি সাহিত্যানুরাগী মহিলা আমি খুব কম দেখেছি। ইংরেজি-বাংলা দুই ভাষার গোয়েন্দা গল্পের ছিলেন একনিষ্ঠ পাঠক। সেই কারণে শুধু চিত্রনাট্যই নয়, ফেলুদা লেখার সময় মায়ের মতামতের ওপর বাবা পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিলেন। মা ছিলেন এক দিকে প্রচণ্ড মাতৃসুলভ, কিন্তু নিজের বিশ্বাস থেকে, পড়াশোনা থেকে যখন কোনও মতামত দিতেন, সেই মতামতেই নিজে অটুট থাকতেন। এবং সত্যজিৎ রায়ের মতো মানুষও ফেলুদার লেখা বা গোয়েন্দা গল্প নিয়ে ‘মঙ্কু’ কোনও মতামত দিলে সেটা দ্বিতীয়বার ভাবতেন। এমনও হয়েছে মায়ের জন্য বাবা বহু গল্প পাল্টেছেন।
মা না পড়লে বাবার চিত্রনাট্য ফাইনাল হত না
যত দূর মনে পড়ছে ‘আগন্তুক’ ছবিতে একটি দৃশ্য ছিল, যেখানে মমতাশঙ্করের হাতে বাবা আগাথা ক্রিস্টির এমন একটা বই ধরাতে চেয়েছিলেন যাতে উইল নিয়ে নানা কথাবার্তা আছে। বাবা তো ভেবেই পাচ্ছেন না কোন বইটা ধরাবেন। এই রকম একটা সময়ে মায়ের শরণাপন্ন হলেন বাবা। মাকে জিজ্ঞাসা করাতে মা ফস করে বলে দিলেন ‘পেরিল অ্যাট এন্ড হাউস’ বইয়ের নামটা। আগাথা ক্রিস্টির পুরো সিরিজটাই মায়ের মুখস্থ ছিল। বাবাকে এই রকম নানা ছোটোখাটো বিপদ থেকে মা বহুবার বাঁচিয়েছেন।
ভুলে যাওয়া সুর মনে করিয়ে দিতেন মা
একটা ঘটনার কথা বলি। বেশ রাত হয়েছে। দেখলাম বাবা বেডরুমে শুয়ে কোনও একটা ছবির সুর করছেন, খুব সম্ভবত সেটা ‘গুপী বাঘা ফিরে এলো’। বাবা হামিং করে সুরটা মাকে শুনিয়েছিলেন। কিন্তু পরের দিন সকালে উঠে দেখলেন সেই সুরটা তিনি কিছুতেই মনে করতে পারছেন না। বাবা তো পড়লেন বেজায় সমস্যায়। ব্যস আবার মায়ের ডাক পড়ল। মাকে বলতেই মা গেয়ে দিলেন সেই সুর—‘মোরা আসি ধেয়ে ধেয়ে’। এতটাই প্রখর স্মৃতি ছিল মায়ের। আর কণ্ঠস্বরে তো মধু ঢালা ছিল। বাবাও তাঁর মিউজিকের যাবতীয় কাজে মায়ের ওপর নির্ভর করতেন। বাবুর(সন্দীপ রায়) কাছে শুনেছি ‘চারুলতা’য় কিশোরকুমারকে দিয়ে বাবা যখন রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করার কথা ভাবেন তখন কিশোরকুমার চেয়েছিলেন গানটি মুম্বইতে যেন তাঁকে আগে রেকর্ড করে পাঠানো হয়, যাতে গানের গায়কি ও সুর সম্পর্কে তাঁর একটি ধারণা জন্মায়। এই অবস্থায় মাকে দিয়ে বাবা গানটি রেকর্ড করান। মা কিন্তু নিজের গান রেকর্ড করতে একটুও পছন্দ করতেন না। হিন্দুস্তান থেকে মায়ের রেকর্ডও বেরিয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্য! মা সেই রেকর্ড কোনও দিন শোনেননি। এত যে সুন্দর গানের গলা, বাবার কোনও ছবিতেই মায়ের গান নেই কিন্তু। নিজের কোনও গুণকেই প্রকাশ্যে আনেননি কখনও। বাবাও সেটা চাননি। দু’ জনের এই অসম্ভব পরিমিতি বোধ আজও আমায় অবাক করে।
বাবার ওষুধের জন্য রুপোর কৌটো
বেশ কয়েক বছর ধরে টানা অসুস্থ ছিলেন মা। বলতে গেলে বিছানাতেই কাটাতেন সারা দিন। কিন্তু এই অসুস্থতা নিয়ে কোনও দিন ওঁকে বিরক্ত হতে দেখিনি। অথচ এই মানুষটাই বাবার অসুস্থতার সময়ে, বাবা যাতে একটুও বিরক্ত না হন সেই কথা ভেবে ওষুধ খাওয়ানো থেকে স্নান করানো সব দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। আমরা সচরাচর ওষুধটসুধ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতেই অভ্যস্ত। অথচ মা এমন শৌখিন ছিলেন বাবার সাত দিনের ওষুধ সাতটা আলাদা রুপোর কৌটোয় রাখতেন। এ দিক ও দিক গেলেই রুপোর কৌটো কিনে ফেলতেন। কোনও নার্স বা আয়া ছিল না। বাবাও বেশি দিন নার্সিং হোমে থাকতে হলে ছটফট করতেন, থেকে থেকেই মাকে বলতেন, ‘‘তুমি আমায় বাড়ি নিয়ে চলো’’। শেষ বয়সে ওঁদের দু’জনের মধ্যে ছিল আশ্চর্য বন্ধন।
বিমলার জন্য ঢাকাই শাড়ি
শৌখিন ব্রাহ্ম মহিলা বলেই হয়তো মায়ের রুচির ওপর বাবার ছিল অগাধ আস্থা। নিজে অসুস্থ হলেও বাড়িতে কোনও দিন অগোছালো পোশাকে মাকে দেখিনি। বাবার অধিকাংশ ছবিরই সাজপোশাকের দিকটা মা-ই দেখতেন। ‘ঘরে বাইরে’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময় মা নিজের লোভনীয় ওয়ার্ড্রোব থেকে স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে একটি চমৎকার ঢাকাই শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন। চারুলতা থেকে বিমলা— সকলের লুকেই মায়ের পরামর্শ ছিল খুব বেশি।
আমার তো মনে হয় মা যে ভাবে বিশপ লেফ্রয় রোডের এই বাড়িটাকে নিজের হাতে বাবার ইচ্ছেমতো সাজিয়েছিলেন, বাবাও তেমনই নিজের ছবির আর্ট ডিজাইনে মায়ের রুচির ছোঁয়া রাখতেন।
বাবার প্রিয় মায়ের হাতের বেকিং
বাড়িতে থাকলে মায়ের হাতের বেকড করা যে কোনও রান্না খেতে বাবা খুব ভালবাসতেন। মায়ের বেকিংয়ে একটা জাদু ছিল। শত চেষ্টা করেও একই রেসিপির ওই স্বাদ আমি আনতে পারি না। অসম্ভব ভাল রান্না করতেন। রান্নার মধ্যে মায়ের মায়া মাখানো থাকত।
বাবার লেখা উদ্ধার হল মায়ের জন্য
আসলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে জানতেন মা। ‘মাই ডেট উইথ অপু’, বাবার এই লেখাটা আমরা পেতামই না যদি না মা সেটা উদ্ধার করতেন। বাবা চলে যাওয়ার পর লেখাটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমাদের খোলামেলা বাড়িতে কোন লেখা যে কোথায় গিয়ে পড়ে... ভাগ্যিস মায়ের কাছে এই লেখার একটা রাফ কপি ছিল। বাবার হাতের লেখা অসম্ভব স্টাইলিশ এবং ক্যালিগ্রাফিক। মা কি অনায়াসে সেটা পড়ে ফ্রেশ কপি করে দিলেন। মনে হল, এই লেখাটার সঙ্গে মা পুরোটাই পরিচিত। বললেই হুবহু বাবার লেখাটা আবার লিখে ফেলতে পারতেন।
বাবাকে লুকিয়ে মায়ের শপিং
বাবা বাড়িতে থাকলে দিনের বেশির ভাগ সময়ই স্টাডি রুমে কাটাতেন। আর মা, নিজের ঘরে বারান্দার গাছেদের সঙ্গে, কখনও বা রান্নাঘরে। সামনে থেকে দেখলে এই বন্ডিংটার মধ্যে খুব বাড়াবাড়ি কিছু খুঁজে পাওয়া যেত না। তবে আমরা একসঙ্গে প্রচুর বেড়াতে যেতাম। আর মা বেড়াতে গেলে সকলের জন্য মনে করে আলাদা আলাদা উপহার কিনতেন। উপহারের তালিকায় নামের সংখ্যা কখনও কখনও পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যেত।
এই পুরো কেনাকাটাটা বাবাকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে আমি আর মা সারতাম। বাবা এই সব পছন্দ করতেন না। আমার মনে আছে হোটেলের ঘরে বাবা ওপাশ ফিরে ঘুমোচ্ছেন, আমি আর মা পা টিপে টিপে কত জিনিস ঝটপট স্যুটকেসের মধ্যে পুরে ফেলছি। তখন কখনও মনে হয়নি উনি আমার শাশুড়ি, আমি ছেলের বৌ। মনে হত আমরা যেন খেলার সাথি।
বাবা চলে যাওয়ার পর অনেক সময় মায়েরও মনে হত হঠাৎ করে তিনিও একদিন আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। সন্ধ্যায় হয়তো কোথাও বেরিয়েছি আমরা। রাতে মা ডেকে পাঠালেন। আমরা তিনজন ঘরে ঢুকলাম। বাবার স্মৃতি জড়ানো ওই খাটে শুয়ে আমাদের দিকে
তাকিয়ে বললেন, ‘একটু কাছে আয়। তোদের একটু আদর করে নিই। বলা তো যায় না সকালে উঠে দেখলি আমি আর নেই।’
- আনন্দবাজার পত্রিকা (০৫ জুন ২০১৫)
=========================

ছোটবেলা থেকে সত্যজিৎ রায়কে নানা ভূমিকায় দেখেছিলেন সন্দীপ রায়। কখনও তিনি স্নেহশীল পিতা। ছেলের জন্মদিনের কার্ডের ডিজ়াইন করছেন। কখনও আবার গুরুগম্ভীর পরিচালক। একের পর এক কালজয়ী ছবি পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। জিতে নিচ্ছেন পুরস্কার। আবার সেই মানুষই নিজের ঘরে বসে এক মনে লিখছেন ফেলুদা, শঙ্কুর কাহিনি। আঁকছেন বইয়ের প্রচ্ছদ। ছবির পোস্টার। সুর দিচ্ছেন। সম্পাদনা করছেন ‘সন্দেশ’ পত্রিকার। পরবর্তীকালে যখন বাবার ইউনিটে কাজ করছেন, তখন আবার সত্যজিৎ রায়কে আর-একভাবে তিনি চিনেছিলেন। সেই সব অভিজ্ঞতা নিয়ে এই বই। এখানে সত্যজিৎ রায় এবং তাঁর পারিপার্শ্বিক জগৎকে তুলে ধরেছেন সন্দীপ রায়। সেই সূত্রে এসেছে বিভিন্ন ছবির শুটিংয়ের ঘটনা। ছবি বিশ্বাস, উত্তমকুমার, কিশোরকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ থেকে মার্লন ব্র্যান্ডো, রিচার্ড অ্যাটেনবরো, জ়েরার্ড দেপারদিউ, আকিরা কুরোসাওয়া, ফ্র্যাঙ্ক কাপরা, রোমান পোলানস্কি, আর্থার সি ক্লার্ক এবং আরও অনেকের কথা। ‘আনন্দমেলা’য় ধারাবাহিক হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময়ই এই লেখা সাড়া ফেলে দিয়েছিল। এই বইয়ে লেখার সঙ্গে আরও কয়েকটি দুষ্প্রাপ্য ছবি সংযোজিত হয়েছে।

"আমার বাবা সত্যজিৎ রায়" সংগ্রহে রাখার মত বই
আমাজন লিংক : https://amzn.to/4lxLA7b

=========================
জীবনের প্রান্তসীমায় এসে হাতে কলম তুলে নিয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্রস্রষ্টা সত্যজিৎ রায়-এর সহধর্মিণী বিজয়া রায়। অন্তরের গভীরে থাকা বহু মানুষের মুখ, বহু ঘটনা, বহু জানা-অজানা কাহিনি তাঁকে এই অনন্য স্মৃতিকথা লেখার প্রেরণা দিয়েছে । এই বইয়ের পরতে পরতে ব্যাপ্ত রয়েছে যে বহুবর্ণী কাহিনি যা না জানলে মানুষ ও স্রষ্টা সত্যজিৎ রায় ও বিজয়া রায় সম্পর্কিত অনেক কথা অজানা থেকে যেত। অবলুপ্ত হত অজস্র দিকচিহ্ন। সত্যজিৎ রায় এর অনেক অজানা তথ্য ও সুন্দর ছবি পাঠকের কাছে রত্ন।
বিজয়া রায়ের লেখা "আমাদের কথা" সংগ্রহে রাখার মত একটি বই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3oDozba
==========
কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের সাক্ষাৎকার সমগ্র সংগ্রহে রাখার মত বই । এই বইতে পাবেন সত্যজিৎ রায়ের সকল সাক্ষাৎকার । সত্যজিৎ প্রেমীরা অবশ্যই সংগ্রহ করুন এই বই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3QkMffA
================
🔖 সত্যজিৎ রায়ের লেখনী নিয়ে নতুন করে বলবার নেই, চলচ্চিত্রের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দারুণ বই। এক চলচ্চিত্রকারের সংগ্রাম, একটা সেটের সাথে মায়ায় জড়িয়ে যাওয়া কিংবা অর্থ সমস্যা। পাঠক একাত্ম হবেন চলচ্চিত্র নির্মাণের সংগ্রামে।
অবশ্যই পড়ুন সত্যজিৎ রায়ের "একেই বলে শুটিং" ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3q8EP52
=================================

২৮ মার্চ ১৯৯২ দেশ ও ২ মে ১৯৯২ দুটি সত্যজিৎ রায় সংখ্যা বেরিয়েছিল ওনার স্মরণে ।
অতি স্বল্পমূল্যে পত্রিকাটির পিডিএফ চাইলে whatsapp করুন এই লিংকে
Whatsapp Link : https://wa.me/9831930921

শনিবার বিকেলে দপ্তরে বসে একটি সদ্য পাওয়া পাণ্ডুলিপির পাতার উপর মুগ্ধদৃষ্টি রেখে ঘাড় গুঁজে বসে আছি। আড্ডাধারী বন্ধুরা এ...
21/12/2025

শনিবার বিকেলে দপ্তরে বসে একটি সদ্য পাওয়া পাণ্ডুলিপির পাতার উপর মুগ্ধদৃষ্টি রেখে ঘাড় গুঁজে বসে আছি। আড্ডাধারী বন্ধুরা একে-একে হাজির হয়েছেন, সে-দিকে ভ্রূক্ষেপ নেই।
আমার তন্ময়তা ভঙ্গ করবার জন্য আড্ডার সব্যসাচী লেখক বললেন—
'রাবীন্দ্রিক ধাঁচের হাতের লেখার পাণ্ডুলিপি কি না, তাই এত মনোযোগ, আমাদের দিকে আর চোখ তুলে তাকাবার ফুরসত হচ্ছে না।'

আড্ডার গাল্পিক লেখক বললেন— 'রাবীন্দ্রিক হাতের লেখার প্রতি আশ্রমিকদের কেমন যেন একটা দুর্বলতা আছে। কোন পাণ্ডুলিপি যদি রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখার ধাঁচে হয়, তাহলে আর তা পড়ে দেখারও প্রয়োজন হয় না। সে-লেখা সরাসরি প্রেস-এ চলে যায়। রবীন্দ্রনাথের মত হাতের লেখা যখন, তখন লেখার হাত থাকতেই হবে।'

আমাকে একটু কটাক্ষ করেই সব্যসাচী লেখক বললেন-- 'ওঁর ভাবটা হচ্ছে প্রহ্লাদের মত। হাতে খড়ির সময় 'ক' লিখতে গিয়ে কৃষ্ণ বলে কেঁদে আকুল।' '

কিন্তু তাঁর একটা অভ্যাস হচ্ছে টু দি পয়েণ্ট থাকা। অর্থাৎ যে প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনার শুরু সে-প্রসঙ্গ যদি গল্পের তোড়ে ডালপালা বিস্তার করতে করতে প্রসঙ্গান্তরে চলে যাবার চেষ্টা করে তাকে আবার মূল কাণ্ডে ফিরিয়ে আনা। তাই বিরক্তির ভাব প্রকাশ করে বললেন – 'যে কথা শুরুতে হচ্ছিল সেই কথাই হোক । রাবীন্দ্রিক হাতের লেখার যে বিরাট পাণ্ডুলিপিটার উপর আপনি এতক্ষণ হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন সে-বস্তুটি কী জানতে পারি?'

‘ভ্রমণ কাহিনী।'

আমার কথা শুনে সব্যসাচী সাহিত্যিক গাল্পিক-সাহিত্যিককে একটু ভরসা দেবার সুরে বললেন - '‘যাক্, বেঁচে গেলেন। উপন্যাস তো নয়। উপন্যাস হলেই ভয় আবার একজন প্রতিদ্বন্দ্বী দেখা দিল। '

আমি বললাম- 'না-ই বা হল উপন্যাস। এ-লেখার জাতি-পাঁতি স্বতন্ত্র। উপন্যাস এর ধারে কাছে লাগে না।দশ জোড়া বড় বড় চোখে একরাশ বিস্ময়ভরা প্রশ্ন জেগে উঠল -
‘লেখকটি কে?'
—'আপনারা চিনবেন না। সৈয়দ দা ।
আবার প্রশ্ন—‘সৈয়দ দা, তিনি আবার কে?'
আমি বললুম—'ডক্টর সৈয়দ মুজতবা আলী। শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্র। সেই সুবাদে আমার সৈয়দ দা।'

সব্যসাচী লেখক বললেন—'তাহলে তো আর কিছু বলা যাবে না। রাবীন্দ্রিক হস্তাক্ষর তদুপরি শান্তিনিকেতনিক। এ-লেখা তো অবশ্য প্রকাশিতব্য।'
আমি বললাম- 'আগামী সপ্তাহ থেকেই লেখাটি প্রকাশিত হবে। আপনারাই তখন বিচার করবেন লেখাটি প্রকাশিতব্য কিনা। তবে এটুকু আপনাদের বলে রাখছি, এই এক বই লিখেই ইনি বাংলা সাহিত্যে পাঠকচিত্র জয় করবেন।'

গাল্পিক বন্ধু বললেন— 'আচ্ছা, বেশ কিছুকাল আগে পরিচয় পত্রিকায় ভাষাতত্ত্ব নিয়ে এর একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম মনে পড়ছে। তিনি কি ইনি ?'
আমি বললাম—'আপনি ঠিকই ধরেছেন তিনিই ইনি। সেখানে তিনি পণ্ডিত। কিন্তু এ লেখায় পাণ্ডিত্যের সঙ্গে সাহিত্যরসের অপূর্ব যোগাযোগ দেখতে পাবেন।'

এই এক লেখাতেই বাংলা সাহিত্যজগতে সৈয়দ মুজতবা আলীর পাকা হয়ে গেল। আজ তিনি সর্বশ্রেণীর পাঠকদের প্রিয় লেখক। তার নিজের লেখা সম্বন্ধে তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি আনাতোল ফ্রাঁসের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে বলতেন, If you wish to travel more travel light.—তোমার লেখাকে তুমি যদি সর্বত্রগামী করতে চাও, হালকা হয়ে লেখ, পণ্ডিতী ফলিও না।"

(সম্পাদকের বৈঠকে)
সাগরময় ঘোষ

>

শুভ জন্মদিন সৈয়দ মুজতবা আলি

দেশে বিদেশে -র থেকে উচ্চাঙ্গের ভ্রমন কাহিনী আমি জীবনে পড়িনি । অবশ্যই পড়ুন সৈয়দ মুজতবা আলির লেখা বই দেশে বিদেশে । এই বই সংগ্রহে রাখার মত বই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3PHhUHO

কমেডি তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আর শুধু 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' নয়, মানুষের অধিকার, অঙ্গার, কল্লোল এক একটি হীরক খণ্...
21/12/2025

কমেডি তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আর শুধু 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' নয়, মানুষের অধিকার, অঙ্গার, কল্লোল এক একটি হীরক খণ্ডে তাঁর দ্যুতি ঝলসে উঠেছে বারবার। নাট্য শিক্ষক হিসেবে উৎপল দত্তর মতো জনপ্রিয় শিক্ষক এদেশে আর নেই। নিখুঁত ও সঠিক অভিনয়ের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি অভিনেতাদের তালিম দিতেন। অম্লান্ত পরিশ্রম করতেন। সামান্য ভুলচুকও তাঁর চোখ এড়াত না। একজন মানুষ কতরকম ভাবে হাঁটতে পারে তাঁর যে নমুনা উৎলপদা অভিনয় করে দেখাতেন, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। মাঝে মাঝে শিক্ষানবীশ ছাত্রদের জন্য আমায় বলতেন, রবি, ওদের একটু করে দেখাও তো। এইরকম ক্ষমতাসম্পন্ন ঋজু বাঙালি বড় একটা দেখা যায় না।

আমি তো ইদানিংকার বহু নাট্য পরিচালককে বলেছি, আপনারা একবার গিয়ে উৎপল দত্ত কীভাবে রিহার্সাল দেয় দেখে আসুন। নাটকের মতো উৎপল দত্তর সমান প্রতিপত্তি ছিল ফিল্মে। ভুবনসোম থেকে শুরু করে আগন্তুক - কী সব অভিনয়। 'ভুবনসোম' তো বড় পরিচালকের ছবি। কমার্শিয়াল ছবিতেও সমান জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। সুদূর গ্রামাঞ্চলে গিয়েও দেখেছি উৎপলদাকে সবাই চেনেন। যখন যেখানে যেমন দরকার ঠিক তেমনটি অভিনয় করার দক্ষতা তাঁর ছিল। যে পুজোর যে মন্ত্র। গৌতম ঘোষের 'পদ্মা নদীর মাঝি' তো একসঙ্গে অভিনয় করেছি। তখন ওঁর শরীর ভাঙছে। তবুও শুটিংয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো লক্ষ্য করেছি কিছুতে দমবার পাত্র ছিলেন না উৎপল দত্ত। জটিল শরীরী অভিনয়েও পিছপা হতেন না। হয়ত নৌকোও উঠছেন। কেউ এগিয়ে এসে হাত ধরলে এক ঝটকায় সরিয়ে দিতেন। কোনওরকম সাহায্য নিতেন না, এত আত্মবিশ্বাস। গৌতম তরুণ পরিচালক। ওঁর যাতে মনোবল কোনওভাবে ভেঙে না যায়, সেটা দেখতেন।

এবার আসি 'আগন্তুক' এর প্রসঙ্গে। সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি। উৎপল দত্ত মুখ্য চরিত্রে। ভারতীয় চলচ্চিত্রে এক অসামানা চরিত্র। উৎপল দত্তর জীবনের অন্যতম সেরা অভিনয়। মানিকাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এই চরিত্রের জন্য উৎপল দত্তকে নিলেন কেন? মানিকদা পাল্টা
প্রশ্ন করেছিলেন। ফ্রেঞ্চ, ল্যাটিন, ইংরেজি এর একটাও সঠিকভাবে উচ্চারণ করার মতো উৎপল ছাড়া আর একজন অভিনেতাও এদেশে আছেন? এ চরিত্র উৎপল দত্ত ছাড়া হয় না। 'আগন্তুক'-এ আমিও অভিনয় করেছি। স্টুডিওতে দুই মাস্টারের কাজ বসে বসে দেখতাম। মানিকদা অভিনয় করে দেখিয়ে দিতেন। উৎপলদা আমার দিকে ফিরে বললেন, কি রবি পারব তো? অনেকেই জানেন না, মানিকদার মতো অভিনেতাও হয় না। উনি যেভাবে অভিনয় করে দেখাতেন তার পঞ্চাশ শতাংশও যদি একজন অভিনেতা করতে পারত, তাহলেই তাঁর অভিনয় হত দুর্দান্ত ।

আগন্তকের সময় উৎপলদা বেশ অসুস্থ। তবুও মনমোহনের চরিত্রে ওঁর ব্রিলিয়ান্ট কাজ মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। মাস্টার চলে গেলে দেশের কতটা ক্ষতি হয় জানি না। কিন্তু শিক্ষক চলে গেলে পরবর্তী প্রজন্ম সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর যেখানে উৎপলদার মতো শিক্ষক যিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। ভীষণ আধুনিক ছিলেন। শিশির ভাদুড়ী, যোগেশ চৌধুরী, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যর পর আরেক স্তম্ভ। পরিণত বয়সে উৎপলদা কেবলমাত্র রাজনৈতিক থিয়েটারে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন। বলতেন, শোষক ও শোষিতের সংঘাত ছাড়া নাটক হয় না।

হিন্দি, ইংরেজি আর বাংলায় এমন অনায়াস দক্ষতা এ দেশে আর কোনও অভিনেতার নেই। উৎপল দত্ত এক নবযুগের স্রষ্টা। অনেকেই জানেন না উৎপলদা এমন সব যাত্রা করেছেন যা আজকের দিনেও ভাবা যায় না। কী সব বৈপ্লবিক নাটক। ছবিও পরিচালনা করেছেন। নাটকে, চলচ্চিত্রে সাহিত্যে যতদিন বেঁচে ছিলেন দাপটে বিচরণ করেছেন। তিনি আমার গুরু। আমি আজ যতটুকু শিখেছি, তাঁর প্রশিক্ষণে। পরে নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছি। তুলসী চক্রবর্তীর কমেডি অভিনয়ের পর উৎপল দত্ত-র অভিনয় যা আমাকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

- - অভিনেতা রবি ঘোষ (১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত টেলিভিশন উৎপল দত্ত সংখ্যা থেকে প্রাপ্ত)

===================
চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে সত্যজিৎ রায় এক প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। পাশাপাশি সাহিত্যে, চিত্রশিল্পে, সংস্কৃতির অন্যান্য ধারায় তাঁর উজ্জ্বল অবদানের কথাও অবিস্মরণীয়। অমিত প্রতিভাধর মানুষটিকে নিয়ে আগ্রহের অন্ত নেই। সত্যজিৎ রায়ের বৈদগ্ধ্য ও মননশীলতার পরিচায়ক তাঁর অমূল্য সব প্রবন্ধ। গ্রন্থে, পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সেই রচনাগুলি একত্রিত করে প্রকাশিত হল ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’। অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন্য নিবেদিত সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’ রচনাগুণে যেমন অনন্য, শিল্পের ইতিহাসের অংশ হিসেবে তেমনই জরুরি।
‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’ - সত্যজিৎ রায় আমাজন লিংক : https://amzn.to/3VV2SAu

==================
উৎপল দত্ত প্রয়াত হওয়ার কয়েকমাসের মধ্যেই ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টেলিভিশন উৎপল দত্ত সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ওনার স্মরণে ।
অতি স্বল্পমূল্যে দুষ্প্রাপ্য পত্রিকাটির পিডিএফ চাইলে whatsapp করুন এই লিংকে
Whatsapp Link : https://wa.me/9831930921

১৯৫৬ সাল । ফণিভূষণ চক্রবর্তী তখন পশ্চিমবঙ্গের অস্থায়ী রাজ্যপাল । ক্লিমেন্ট এটলি সেই সময় ভারত সফরে আসেন এবং কলকাতার রাজভব...
21/12/2025

১৯৫৬ সাল । ফণিভূষণ চক্রবর্তী তখন পশ্চিমবঙ্গের অস্থায়ী রাজ্যপাল । ক্লিমেন্ট এটলি সেই সময় ভারত সফরে আসেন এবং কলকাতার রাজভবনে দুদিন ছিলেন । ফণিভূষণ চক্রবর্তী সঙ্গে ক্লিমেন্ট এটলি-র দীর্ঘ আলোচনা হয় । ফণিভূষণ চক্রবর্তী এটলিকে প্রশ্ন করেছিলেন, গান্ধীর ভারত ছাড়ো আন্দোলন ১৯৪৭ সালের অনেক আগেই শেষ হয়েছিল, তাহলে ১৯৪৭ সালে এমন কি পরিস্থিতি তৈরী হল যাতে ইংরেজরা দেশ ছেড়ে চলে গেল ? ক্লিমেন্ট এটলি জবাব দিয়েছিলেন - সুভাষ চন্দ্র বসু এর প্রধান কারণ, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম আজাদ হিন্দ বাহিনীর মরণপণ লড়াইয়ের পর ভারতের সেনাবাহিনীর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি আনুগত্য শিথিল হয়ে গেছে, এই সেনাবাহিনীর উপর ভর করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দুর্গ রক্ষা আর সম্ভব ছিল না । ফণিভূষণ চক্রবর্তী এরপর জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইংরেজদের ভারত ছাড়ার পিছনে গান্ধীর ভূমিকা কতটা ? ক্লিমেন্ট এটলি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে একটাই শব্দ বলেছিলেন, " Minimal " ।

নেতাজির অন্যতম শত্রু ব্রিটিশ জেনারেল হিউ টয় পরবর্তী সময়ে নেতাজিকে নিয়ে লিখেছিলেন বিখ্যাত বই "The Springing Tiger " । সেখানে স্পষ্টতই বলেছেন, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি ভারতে ব্রিটিশ শাসন দ্রুত শেষ করে দিয়েছে । ব্রিটিশ ঐতিহাসিক মাইকেল এডওয়ার্ড লিখেছেন, ভারত নেতাজি বোসের কাছে যতটা ঋণী আর কারও কাছে নয় ।

© অহর্নিশ
তথ্য : ক্ষমা কর সুভাষ (ডক্টর জয়ন্ত চৌধুরী)

===========
তিনি কি আদৌ অধ্যাপক ওটেনকে প্রহার করেছিলেন? প্রদর্শিত গাড়িটি কি গৃহত্যাগের সঙ্গে যুক্ত ? নেতাজি ফাইলে স্পষ্ট এমিলি, অ্যানিটা নেতাজির কেউ নয় তবু কেন অপ্রচার ? বিমান দুর্ঘটনাই হয়নি তবু চিতাভস্মের গল্প কেন? রাশিয়ায় নেতাজি হত্যার কোনাে প্রমাণ নেই তবু হইচই কেন? ফরমােজা থেকে ফৈজাবাদ—এত প্রমাণ তবু বারংবার মৃত্যু পরােয়ানা কেন? আজাদি অর্থসম্পদ লুঠ হল কেন? কেন প্রকাশ্যে এলেন না অখন্ড ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী? নেতাজি নিয়ে এমন নানা বিভ্রান্তির উত্তর—নেতাজি গবেষক ডক্টর জয়ন্ত চৌধুরীর বই ‘ক্ষমা করাে সুভাষ ' স্বাধীনতার সূর্যসারথি বাংলার বড় আপনজন সুভাষ’কে সর্বভারতীয় স্তরে উপযুক্ত প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি আজও। নেপথ্যে রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, প্রাদেশিকতা, আর্থিক লেনদেনের কলঙ্কময় গােপন রসায়ন।
তার সৌরদীপ্ত দেশপ্রেম, পবিত্র চরিত্র ও জীবনগাথাকে আড়াল করতে নানা অপচেষ্টা এবং নানাস্তরে গভীর চক্রান্ত চলেছে দিনের পর দিন। এ ব্যাপারে সম্প্রতি পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নতুন প্রজন্ম যুক্তি, তর্কও তথ্যের আলােয় নেতাজি সম্পর্কে সত্য জানতে এগিয়ে আসছে। তাদের সেই স্বপ্নপূরণের তাগিদে লেখকের এই নিবেদিত অর্ঘ্য নেতাজির প্রতি 'ক্ষমা করাে সুভাষ।। সত্যের সূর্যস্নাত যে পথে সুভাষচন্দ্রকে খুঁজে পাবে আজ ও আগামী।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/48VG7Se

================

"কিছু সময় পরে , তুমি হয়তো একটি আশ্চর্য এবং ভয়ঙ্কর বিষাদের খবর শুনবে ; কিন্তু সে সব শুনে বিষাদগ্রস্ত হয়ো না , মুষড়ে পোড়ো না । আবার দেখা হবে । .......এসো পবিত্র !"
নেতাজির সাথে শেষ দেখায় এমনি নির্দেশ পেয়েছিলেন ড: পবিত্র মোহন রায় ।
[সূত্র : " নেতাজীর সিক্রেট সার্ভিস " - লেখক - ডঃ পবিত্র মোহন রায়]
আমরা কতজন জানি যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নেতাজীর সিক্রেট সার্ভিস টেক্কা দিত মিত্রশক্তির সিক্রেট সার্ভিসকে ? জানি না আমরা কারণ আমাদের জানতে দেওয়া হয়নি । আসল ইতিহাস জানতে গেলে পড়তেই হবে নেতাজীর আজাদ হিন্দের ইন্টেলিজেন্স অফিসার ড: পবিত্র মোহন রায়ের লেখা বই " নেতাজীর সিক্রেট সার্ভিস " ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/46oc3hI

কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, গায়িকাদের মধ্যে কার গলাটি তাঁর সবচেয়ে সুরে...
21/12/2025

কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, গায়িকাদের মধ্যে কার গলাটি তাঁর সবচেয়ে সুরেলা লাগে, তিনি এক ঝটকায় বলে দিলেন, ‘‘প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ সাংবাদিক এ বার বিস্মিত, ‘লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চেয়ে আপনি প্রতিমাদিকে এগিয়ে রাখছেন!’ সোনা বাঁধানো স্বরযন্ত্রে হাসি আলতো ঢেউ তুলল। ‘‘প্রতিমার গানের কলি লতা নিজের বিশেষ সংগ্রহে রেখেছে। ওরা বলে, প্রতিমা মানুষই নয়। ও তো পাখি!’’
জন্মদিনে নতমস্তকে প্রণাম জানাই প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ।

এরই মধ্যে আরেকদিন আরেকটা অবাক করে দেবার মত ঘটনা ঘটে গেল। সেটা রবিকে নিয়ে।সকাল ১০ টা থেকে শুটিং প্রোগ্রাম। শিল্পীদের অন্...
21/12/2025

এরই মধ্যে আরেকদিন আরেকটা অবাক করে দেবার মত ঘটনা ঘটে গেল। সেটা রবিকে নিয়ে।
সকাল ১০ টা থেকে শুটিং প্রোগ্রাম। শিল্পীদের অন্য সবাই যথারীতি মেকাপ নিয়ে তৈরি কিন্তু রবির দেখা নেই।। বাড়িতে বার কয়েক ফোন করেও কোন ফল হল না। শুধু ক্রিং ক্রিং করে বেজেই গেল, কেউ ফোন তুলল না। আমরা তখন একই সঙ্গে অবাক আর অথৈ জলে। কেলেঙ্কারি, রবি না হলে শুটিং হবে কি করে? ওকে ঘিরেই তো আজকে দৃশ্য।
এমন সময় ঝড়ের বেগে একটা ট্যাক্সি এসে স্টুডিও চত্বরে ঘ্যাস করে থেমে গেল। ভাড়া মিটিয়ে যে লোকটা নেমে এলো, সে রবি ই। কিন্তু ওর এমন পোশাক কেন? ওরা ধুতি পরনে, খালি পা, গায়ে একটা কোরা মার্কিন কাপড়ের উত্তরীয়। চুল উসকো খুসকো, চোখ লাল।
--'কি হয়েছে রবি?' প্রায় সবাই এসে ঘিরে ধরে ওকে।
একটু চুপ করে থেকে রবি সংক্ষেপে বলে
--"মা.. "
-- "মা? কি হয়েছে?"
--" কাল মাঝরাতে সি এক্সপায়ার্ড। দাহ কাজ সেরে স্ট্রেট এখানে "
আমরা থ '। রবিই তাড়া দেয়
--" কই চলুন। আমি পাঁচ মিনিটে তৈরি হয়ে আসছি। জাস্ট ৫ মিনিট। "
- সিনেমাপাড়া দিয়ে (তরুণ মজুমদার)

=======
এইরকমই অজস্র মণি মাণিক‍্যে পরিপূর্ণ শ্রী তরুণ মজুমদার এর বই সিনেমাপাড়া দিয়ে। বিভিন্ন বিখ্যাত সিনেমা র শ‍্যুটিং এর ঘটনা থেকে শুরু করে ,বিখ্যাত সব অভিনেতা,অভিনেত্রী, পরিচালক , সুরকার,গীতিকার, প্রযোজক এঁদের বিভিন্ন ব‍্যক্তিগত মূহুর্ত যেন সামনে থেকে দেখতে পেলাম, বইটি পড়তে গিয়ে।
অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন তরুণ মজুমদারের "সিনেমাপাড়া দিয়ে"
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3MEGtm7

আমায় সিগারেট খাওয়া ধরিয়েছিল সুরজিৎ সেনগুপ্ত। একসঙ্গে বেঙ্গল খেলার সময়। তখন কে জানত, আমার প্রতিবেশী এবং ফুটবলার বন্ধু নিজ...
20/12/2025

আমায় সিগারেট খাওয়া ধরিয়েছিল সুরজিৎ সেনগুপ্ত। একসঙ্গে বেঙ্গল খেলার সময়। তখন কে জানত, আমার প্রতিবেশী এবং ফুটবলার বন্ধু নিজেই কোভিডের শিকার হয়ে ছাই হয়ে যাবে?
সত্তরে পা দিয়েও এই বয়সে সবসময় বাড়িতে বসে থাকতে পারি না অস্বস্তি লাগে। নিজেই একটা রুটিন বানিয়ে নিয়েছি বাইরে বেরোনোর। শনি রবি বাদ দিয়ে হপ্তায় পাঁচদিন রোজ নিয়ম করে ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে একঘন্টা রবীন্দ্র সরোবরে ট্রেনিং করি। খুব বেশি বৃষ্টি না হলে বর্ষাকালেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না। শীতে শুধু টাইমটা আধ ঘন্টা এগিয়ে যায়। রবিবারটা রাখি শ্যামনগরে আমার একাডেমির বাচ্চাদের সঙ্গে মাঠে সময় কাটাতে।
এছাড়াও সোম বুধ শুক্র এই তিনটি দিন বাঁধা, আমার পুরনো অফিস স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক স্ট্রীট ব্রাঞ্চের লাগোয়া কার্নানি ম্যানসনের ভেতরে রেস্টুরেন্টে বসে দুপুরটা কাটানো। তারপর বিকেল হলে ওখান থেকে কোন কোন দিন সটান মোহনবাগান ক্লাব। কিছু সময় কাটিয়ে তারপর বাড়ি ঢুকি।
ষোলো আনা বাবলু
বিতর্কিত আত্মজীবনী
সুব্রত ভট্টাচার্য

সুব্রত ভট্টাচার্যের বিতর্কিত আত্মজীবনী "ষোলো আনা বাবলু" সংগ্রহে রাখার মত বই ♥️
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3PIOgBv

[কলকাতা ফুটবলের সুপারস্টারদের একটি ভিনটেজ ছবি৷ 1982 সালে কলকাতা লিগের ডার্বি ম্যাচ-শ্যাম থাপা, সুব্রত ভট্টাচার্য, শিবাজী ব্যানার্জি এবং কৃষ্ণেন্দু রায় মোহনবাগানের হয়ে খেলতে আসছেন৷ ছবিটি বিখ্যাত ফুটবলার আলোক মুখার্জীর ফেসবুক পেজ থেকে প্রাপ্ত ]

প্রায় পাঁচশো বছর আগেকার কথা। বিহার থেকে এসে নদীয়ার চাকদহ গ্রামে বসতি স্থাপন করলো একটি কায়স্থ পরিবার। পদবী ছিল ‘দেও’ যা ব...
20/12/2025

প্রায় পাঁচশো বছর আগেকার কথা। বিহার থেকে এসে নদীয়ার চাকদহ গ্রামে বসতি স্থাপন করলো একটি কায়স্থ পরিবার। পদবী ছিল ‘দেও’ যা বাংলায় এসে হয়ে যায় ‘দেব’। সাধারণ বাঙালি কায়স্থদের মতন শাক্ত হবার বদলে এঁরা ছিলেন বৈষ্ণব। ষোড়শ শতকে এই পরিবারের সদস্য, সুপুরুষ, তীক্ষ্ণধী রামসুন্দর দেব ভাগ্যান্বেষণে ঘুরতে ঘুরতে পুব বাংলায় এসে নজরে পড়ে যান যশোদলের রাজার। ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেল তারপরেই। অতএব, রাজার জামাই হয়ে যশোদলে বাস শুরু করলেন রামসুন্দর। কয়েক পুরুষ বাদে বাস উঠিয়ে এই পরিবার চলে এল ব্রহ্মপুত্রের ধারে ময়মনসিংহ জেলার মসুয়া গ্রামে। ততদিনে মুঘল রাজসরকারে কাজ করবার সুবাদে পাওয়া 'রায়' উপাধিকেই পদবি করে নিয়েছেন তাঁরা। গড়ে তুলেছেন জমিদারী।
মসুয়ার সেই অভিজাত পরিবারে সরস্বতী অধিষ্ঠিত হলেন লোকনাথ রায়ের আমলে। বহুভাষাবিদ এই সাধক পন্ডিতের পুত্র কালীনাথও ছিলেন পিতার মতই বহুভাষাবিদ পন্ডিত। কালীনাথের পাঁচ ছেলে। সারদারঞ্জন, কামদারঞ্জন, মুক্তিদারঞ্জন, কুলদারঞ্জন, প্রমদারঞ্জন। এই দ্বিতীয় পুত্রটিকে পাঁচ বছর বয়সে রায়বংশের আরেক শাখার প্রসিদ্ধ উকিল ও জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরি দত্তক নিয়ে নাম বদলে রাখলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। এর কয়েক বছর পরে হরিকিশোরের নিজের একটি ছেলে হয়। ইনি নরেন্দ্রকিশোর।
1863 সালে জন্ম হয়েছিল উপেন্দ্রকিশোরের। ছোট থেকেই পড়াশোনাতে ছিলেন চৌখস। 1879 সালে বৃত্তিসহ এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করে ময়মনসিংহ থেকে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে এলেন তিনি। সেখানে কিছুদিন কাটিয়ে তারপর 1884 সালে স্নাতক হলেন মেট্রোপলিটন কলেজ (এখনকার বিদ্যাসাগর কলেজ) থেকে।
ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সাহিত্যের আঙিনায় পা পড়ে উপেন্দ্রকিশোরের; 1883 সালে, শিক্ষক প্রমদাচরণ সেনের ‘সখা’ পত্রিকায় ‘মাছি’ নামে একটা লেখার মধ্যে দিয়ে। ঐ বছরই সখা পত্রিকায় আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চালালেন উপেন্দ্রকিশোর। ছোটদের সাহিত্যে প্রথম চলিত ভাষার প্রয়োগ করে লিখলেন ''নিয়ম ও অনিয়ম'' নামের এক অনুবাদ প্রবন্ধ। এই সময়েই উপেন্দ্রকিশোরের জীবনে আরো একটি গভীর পরিবর্তন আসে। তিনি ব্রাহ্মধর্ম অবলম্বন করে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে যোগ দেন। এর ফলে পরিবারের অনেকেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলেও পালকপিতার পরিবারের সঙ্গে কোন বিচ্ছেদ ঘটেনি তাঁর। হরিকিশোর তাঁর সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী উপেন্দ্রকিশোরকেই করে গেলেন। উপেন্দ্রকিশোর অবশ্য তাঁর ভাই নরেন্দ্রকিশোরকে বঞ্চিত করেননি। ময়মনসিংহের সমস্ত সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ ভাইয়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে নরেন্দ্রকিশোর যে ভাগ তাঁকে দিতেন তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতেন।
1886 সালে ব্রাহ্মসমাজের আর এক বিখ্যাত মানুষ দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা বিধুমুখীকে বিয়ে করে কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিটের লাহাদের বাড়ির কয়েকটা ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু হল সংসারজীবন। একে একে জন্ম নিল সুখলতা, সুকুমার, পুণ্যলতা সুবিনয়, শান্তিলতা ও সুবিমল। সেসময় বাংলা শিশুসাহিত্যের জগতে একে একে আবির্ভূত হচ্ছে সখা, সাথী, মুকুল এবং বালকের মত পত্রিকা। ভরা সংসার চালাবার পাশাপাশি এইসব পত্রিকায় তাঁর লেখার দিগন্ত ক্রমশই প্রসারিত হচ্ছিল নানা বিচিত্র বিষয়ের তথ্যমূলক লেখার পরিসর ছেড়ে অলংকৃত গল্পে, কবিতায়। আর এইভাবেই শিশুসাহিত্যের জগতে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের জন্ম দেখছিল বাংলা।
1897 সাল। সিটি বুক সোসাইটি থেকে ‘ছেলেদের রামায়ণ’ নামে উপেন্দ্রকিশোরের লেখা ও অলংকরণ করা একটা সচিত্র বই প্রকাশিত হল। সে সময় বইতে ছবি ছাপার জন্যে কাঠের ব্লকের গায়ে ছবি অনুযায়ী দাগ কেটে ব্লক তৈরির কাজ করা হত। সেটা অনেকটাই নির্ভর করতো কারিগরের দক্ষতার ওপরে। ফলে একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই ছবি খারাপ হয়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। ছেলেদের রামায়ণের ক্ষেত্রেও দেখা গেল সেই ব্যাপারটাই ঘটে গেছে। ফলে গোটা প্রথম সংস্করণটাই একেবারে বিগড়ে গেল বইটার। বইয়ের ছবির দশা দেখে উপেন্দ্রকিশোর ঠিক করলেন পদ্ধতিটাই বদলে ফেলতে হবে। সে দশকের শুরুর দিক থেকেই পশ্চিমে একটা নতুন আবিষ্কৃত চিত্রমুদ্রণ পদ্ধতির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হচ্ছিল। সেটি হল হাফটোন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে যেকোনো ছবিকে ছোট ছোট ফোঁটায় বিভক্ত করে ফেলে তারপর বিভিন্ন উপায়ে সেগুলোকে ফুলটোন ছবিতে পরিণত করা হত। তাছাড়া, এই পদ্ধতিতে ছবির টোন বা আলোআঁধারির বিভিন্ন ঘনত্বও ধরা পড়ত নিখুঁতভাবে। ফলে ছবি অনেকটাই বাস্তবসম্মত হত। ছাপা যেত ফটোগ্রাফও। উপেন্দ্রকিশোরের তখন বেশ কিছুদিন হল নজর পড়েছে ফটোগ্রাফি আর মুদ্রণের মধ্যে সেতুবন্ধনকারী সেই হাফটোন মুদ্রণ পদ্ধতির দিকে। কিছু পড়াশোনাও শুরু করেছেন সেই নিয়ে। ছেলেদের রামায়ণের এই গন্ডগোলটা ঘটবার পর তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেন যে এইবারে এই নতুন পদ্ধতিটাকেই বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগাতে হবে এদেশে। কিন্তু মুশকিল হল, গোটা দক্ষিণ এশিয়াতেই তখন এ পদ্ধতিতে কেউ মুদ্রণ করেন না। এইখানেই উপেন্দ্রকিশোর বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নিলেন। হাফটোন পদ্ধতি নিয়ে কিছুকাল যাবতই তাঁর পড়াশোনা চলছিল। এইবার পৈতৃক জমিজিরেতে তাঁর অংশের অনেকখানি বিক্রি করে সেই টাকায় বিলেতের পেনরোজ কম্পানি থেকে বইপত্র, রাসায়নিক, ক্যামেরা, যন্ত্রপাতি আনিয়ে নিয়ে শুরু হল হাফটোন পদ্ধতিকে ভালো করে জেনে বুঝে নিয়ে তার উন্নতিসাধনের চেষ্টা। বাড়ি বদলে উঠে এলেন শিবনারায়ণ দাস লেন-এর অপেক্ষাকৃত বড় একটা বাড়িতে। সেখানে নতুন সব যন্ত্রপাতি বসিয়ে শুরু হল তাঁর মুদ্রণসংস্থা 'ইউ রে আর্টিস্ট'-এর জয়যাত্রা। হ্যাঁ, রায়, কারণ তিনি 'চৌধুরী' শব্দটি লিখতে চাইতেন না। বলতেন 'জমিদার' 'জমিদার' গন্ধ আছে। যাই হোক, ছাপাখানার পাশাপাশি সেখানে একটা ঘরে গড়ে তুললেন হাফটোন নিয়ে তাঁর স্টুডিও তথা গবেষণাগার। একটা স্নানঘর বদলে গেল তাঁর ডার্ক রুম-এ। প্রতিষ্ঠিত হল দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধুনিক প্রিন্টিং প্রেস। শুরুতে সীমিত ক্ষমতার হাফটোন ব্লকের কাজ হত সেখানে। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল, নিজস্ব পদ্ধতিতে সাত রকম ডিটেইলযুক্ত হাফটোন ব্লকে ছবি ছাপাইয়ের বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করেছেন তরুণ উদ্ভাবক। ''75 থেকে শুরু করে 266 লাইনের হাফটোন ব্লক—যার যেমন পকেটের জোর তিনি তেমন মানের ব্লক নিয়ে নিন ইউ রায় আর্টিস্টের থেকে।''
ছাপাখানার ব্যবসার পাশাপাশি, সেই 1897 থেকেই ব্রিটেনের গ্রাফিক আর্টের বিখ্যাত জার্নাল পেনরোজ অ্যানুয়ালে একের পর এক প্রবন্ধে প্রকাশিত হতে শুরু করল হাফটোন মুদ্রণপদ্ধতি নিয়ে তাঁর মৌলিক গবেষণার ফলাফল। 1911 সালের মধ্যে তাঁর নটা গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নালে। প্রবন্ধগুলোর নাম নিম্নরূপ-
ফোকাসিং দ্য স্ক্রিন (1897)
দা থিওরি অব হাফটোন ডট (1898)
দা হাফটোন থিওরি গ্রাফিক্যালি এক্সপ্লেইনড (1899)
অটোম্যাটিক অ্যাডজাস্টমেন্ট অব দা হাফটোন স্ক্রিন (1901)
ডিফ্র্যাকশান ইন হাফটোন (1902-03)
মোর অ্যাবাউট হাফটোন থিওরি(1903-04)
দা সিক্সটি ডিগ্রি ক্রস লাইন স্ক্রিন (1905-06)
মালটিপল স্টপস্‌ (1911-12)
হাফটোন প্রযুক্তিতে উপেন্দ্রকিশোরের প্রধান অবদান দুটো। আবিষ্কার করেন হাফটোন ক্যামেরার জন্য অটোমেটিক স্ক্রিন অ্যাডজাস্টমেন্ট ইন্ডিকেটর, যার সাহায্যে হাফটোন ক্যামেরার ফোকাসিং-এর জন্যে পর্দার সঠিক অবস্থানটা যান্ত্রিক নির্ভুলতায় নির্ধারিত হয়ে যেত। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি বের হয় পেনরোজ পত্রিকার 1901 সালের সংস্করণে। সে যন্ত্র তাঁর পদ্ধতি মেনে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি শুরু হল ব্রিটেনে। ''পেনরোজ'' তার 1904-05 সংখ্যার সম্পাদকীয়তে, হাফটোনের জন্য নিখুঁত নেগেটিভ তৈরি করবার ক্ষেত্রে তাঁর আবিষ্কারের মৌলিক গুরুত্বকে সশ্রদ্ধে স্বীকারও করে নিল। ইতিমধ্যে 1902 সালে তিনি তৈরি করেছেন রে’জ টিন্ট প্রসেস। 1903 সাল থেকেই সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে ম্যাগাজিনে হাফটোন রঙিন ছবি ছাপাইয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। রঙিন হাফটোন ছাপার এই পদ্ধতিটা তখন ব্রিটেনের বেশ কিছু প্রযুক্তি শিক্ষালয়ে ব্যবহৃতও হতে শুরু করেছে।
ঘরে বাইরে দু জায়গাতেই স্বীকৃতি পেয়েছিল তাঁর এইসমস্ত অসাধারণ বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন। রবীন্দ্রনাথ 1898 সালে ভারতী পত্রিকায় সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোরের এই নতুন পরিচয়টি সগর্বে ঘোষণা করে বলেন, ''অনেকেই হয়তো জানেন না হাফটোন লিপি সম্বন্ধে উপেন্দ্রবাবুর নিজের আবিষ্কৃত বিশেষ সংস্কৃত পদ্ধতি বিলাতের শিল্পীসমাজে খ্যাতিলাভ করিয়াছে---------সর্বপ্রকার পরামর্শ ও সহায়তার অভাব সত্ত্বেও এই নূতন শিল্পবিদ্যা আয়ত্ত এবং তাহাকে সংস্কৃত করিতে যে পরিমাণ অধ্যবসায় ও মানসিক ক্ষমতার প্রয়োজন তাহা অব্যবসায়ীর পক্ষে মনে আনাই কঠিন।''
লন্ডনের প্রসেস ওয়ার্ক অ্যান্ড ইলেক্ট্রোটাইপিং নামের জার্নালে দেখছি, ''কলকাতার উপেন্দ্রকিশোর রায় গবেষণার মৌলিকত্বে ইউরোপ ও আমেরিকার গবেষকদের থেকে অনেক এগিয়ে আছেন। এ জাতের কাজের প্রধান কর্মকেন্দ্রগুলোর থেকে এত দূরে বসে এমন সাফল্য অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার।'' একই প্রতিধ্বনি শোনা গেল বাংলার জনশিক্ষা দফতরের প্রধানের মুখেও। এদেশি স্কুলের বইগুলোকে অলংকরণের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে উপেন্দ্রকিশোরের ছাপাই পদ্ধতি নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ''বাংলায় এত ভালো ছবি ছাপা হয় সে কথা আমার কল্পনাতেও আসে নি।''
ভাবলে বিস্মিত হতে হয় যিনি মুদ্রণ সম্পর্কিত এই গুরুগম্ভীর প্রবন্ধগুলি লিখেছিলেন, তিনিই আবার একই স্বচ্ছন্দতায় লিখেছিলেন 'টুনটুনির বই'। তবে তার আগেও আছে খানিক কথা। কিছুকাল যাবৎ ‘মুকুল’ পত্রিকায় প্রাচীন পৃথিবী ও প্রাগৈতিহাসিক জীবজন্তুদের নিয়ে ছোটদের জন্য আকর্ষণীয় সব লেখা বের হচ্ছিল উপেন্দ্রকিশোরের। সেগুলোকে একত্রে সংকলন করে 1903 সালে প্রথম এ জাতীয় বাংলা বইটি প্রকাশিত হল। নাম ''সেকালের কথা।'' 1897 সালের সেই ব্যর্থ বই 'ছেলেদের রামায়ণ' নবকলেবরে নিখুঁত ভাবে পুনঃপ্রকাশিত হল 1907 সালে। এ বইয়ের পান্ডুলিপি আর প্রুফ সংশোধন করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। 1908 সালে বের হল 'ছেলেদের মহাভারত'। 1909 সালে প্রকাশিত হল মহাভারত নিয়ে নিজস্ব ঢঙ-এ গল্পাকারে 'মহাভারতের গল্প'। ছেলেদের রামায়ণ আর ছেলেদের মহাভারতের জনপ্রিয়তা শতবর্ষ পার করে আজও অব্যাহত রয়ে গেছে। তবে এই অবধি প্রাচীন ভারত ও পৃথিবীর দিকেই মুখ ফেরানো ছিল সৃজনশীল লেখকের। 1910 সালে এসে লেখার গতিমুখ বদলে গিয়ে দৃষ্টি ফেরালেন তিনি জীবন্ত অতীতের দিকে। গ্রামবাংলার মা ঠাকুমাদের মুখে মুখে প্রচলিত বেশ কিছু গল্প একত্রে সংগ্রহ করে লেখা হল তাঁর শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যকীর্তি, চিরকালীন গ্রামবাংলার পটভূমিতে সাজানো অনবদ্য সংগ্রহ ''টুনটুনির বই''। অসাধারণ গল্পকথন আর ততোধিক সুন্দর ছবিতে সাজানো এ বই প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর নিজস্ব প্রকাশনা থেকে। সে ছাপাখানার তখন নাম বদলে গেছে। 1910 সালে ছেলে সুকুমার সঙ্গে যোগ দিতে তার নাম বদলে হয়েছে 'ইউ রায় অ্যান্ড সন্স'। কাজের পরিধি বেড়েছে বহুগুণ। সাদাকালো ও রঙিন হাফটোনের মৌলিক ডিজাইন তৈরি করছেন তাঁরা তখন বই, পত্রিকা, ক্যাটালগ লেটারহেড, এইসমস্ত যাবতীয় মুদ্রণবিষয়ক ক্ষেত্রেই। 1911 সালে এই ইউ রায় অ্যান্ড সন্স থেকে বের হল কবিতা আকারে “ছোট্ট রামায়ণ”।
পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় চলছিল অজস্র গল্প, প্রবন্ধ রচনার কাজ, পুরাণ, বিজ্ঞান, ইতিহাস, জীবনী। আবিষ্কারের কথা, দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প, মৌলিক গল্প, কবিতা—সহজ সরল কৌতুকদীপ্ত ভাষায় তাদের কাছে বৃহত্তর দুনিয়ার নানা দিকের খবর তুলে ধরছিলেন ঋষিপ্রতীম মানুষটি।
এরই মধ্যে 1913 সালের গ্রীষ্মকালে উপেন্দ্রকিশোরের সম্পাদনায় ইউ রায় অ্যান্ড সন্স থেকে প্রকাশিত হল ছোটদের জন্য ঝকঝকে পত্রিকা 'সন্দেশ'। তিন পুরুষের সুনাম পেরিয়ে চতুর্থ পুরুষে এসেও যা নিজস্ব মহিমায় আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে বাংলা শিশু সাহিত্যের আসরে। প্রচ্ছদ, অলংকরণ, অজস্র লেখা, সম্পাদনা মুদ্রণ—পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকেই সন্দেশের সমস্ত এলাকাতেই তাঁর বিদগ্ধ সৃজনশীলতার সেই ছাপটা যে এঁকে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, আজও তা ম্লান হল না বাঙালি পাঠকের চোখে। ১৯১৫ সালে গিরিডিতে ডায়াবেটিস রোগভোগে মৃত্যুর আগে অবধি সন্দেশের মোট 33টা সংখ্যার সম্পাদনা করে যেতে পেরেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর। তৈরি করে গিয়েছিলেন সন্দেশ-এর মূল ভিত্তিটি। চেয়েছিলেন, এ পত্রিকা তার নির্মল সুস্বাদ উপাদান দিয়ে শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে বড়োদেরও সমান আনন্দ দিক। সন্দেশের প্রথম সংখ্যায় এ বিষয়ে তাঁর এই কথাকয়টি বিষয়টাকে পরিষ্কার করে দিয়েছিল— ''ইহা পড়িয়া যদি সকলের ভালো লাগে আর কিছু উপকার হয় তবেই ইহার 'সন্দেশ' নাম সার্থক হইবে।'' এই 'সকলের' শব্দটা এইখানে বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। এই সন্দেশেই 1914 সালে প্রকাশিত হয় উপেন্দ্রকিশোরের শেষ উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম গুপিগাইন বাঘা বাইন।
ইতিমধ্যে 'সন্দেশ'-এর প্রকাশনের বছরেই ইউ রায় অ্যান্ড সন্স উঠে আসে 100 নম্বর গড়পার রোডের তেতলা বাড়িতে। তার সমস্ত নকশাও উপেন্দ্রকিশোরের নিজের হাতে করা। বাড়ির ছাদে ছিল উপেন্দ্রকিশোরের তারা দেখবার ঘর। নিচের তলায় প্রেস, দোতলায় ব্লক বানাবার আর টাইপসেটিঙের বন্দোবস্ত। বাড়ির পেছনদিকের মহলে পরিবারের বসবাস। এই গড়পাড়ের বাড়িতেই ছবি আঁকায় হাতেখড়ি সত্যজিত রায়ের। একটুকরো কাগজে কিছু একটা হিজিবিজি এঁকে নিয়ে প্রসেস ক্যামেরার মূল চালক রামদীনের কাছে গিয়ে শিশু মানিক দাবী করত, ''এটা সন্দেশের জন্য।'' উপেন্দ্রকিশোরের নিজের হাতে তৈরি ক্যামেরাম্যানটি একগাল হেসে শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে দেখাত ক্যামেরার পর্দায় কেমন দেখায় তার ছবির উলটো প্রতিরূপটি। বালকটির মনে হয়ত সেই থেকেই বাসা বেঁধেছিল ক্যামেরার প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ! কে জানে! হয়ত সেই বীজটিই অংকুরিত হয়ে আমাদের উপহার দিয়েছে সত্যজিত রায়ের মতন প্রতিভাধর চলচ্চিত্রকারকে।
আসলে খ্যাতি ও কর্মব্যস্ততার মধ্যগগনে থেকেও উপযুক্ত উত্তরাধিকারী গড়ে তোলার ব্যাপারে পরিপূর্ণ মনোযোগী পিতা ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর। মেয়েদের পড়বার জন্যে স্কুল বানিয়ে দিয়েছিলেন বাড়ির মধ্যে। বাবার কাছে জ্ঞানবিজ্ঞানের, পুরাণের গল্প শোনা, বাবার সাথে এগজিবিশান দেখতে গিয়ে মহাযত্নে সবকিছু বুঝে নেয়া, বেড়াতে যাওয়া, নিভৃত সন্ধ্যায় বাড়িতে বাবার বেহালার সুর শোনা, তাঁর কাছে ছবি আঁকতে শেখা, এই সমস্ত মধুর স্মৃতির ভান্ডারের সন্ধান মেলে তাঁর মেয়ে পুণ্যলতার আত্মজীবনীটিতে। ছেলে সুকুমারকে মুদ্রনশিল্পের প্রশিক্ষণ দিতে বিলেত পাঠিয়েছিলেন। নিজের সৃজনশীল জীবনের প্রতিটা ধাপে বেড়ে ওঠা সন্তানদের পরম স্নেহে জড়িয়ে নিয়ে বেড়ে ওঠবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন স্বাধীনভাবে। এর সুফল ভোগ করেছে দেশের পরবর্তী প্রজন্ম। সাফল্যের সঙ্গে বহুসংখ্যক প্রতিভার এক দীর্ঘস্থায়ী সঞ্চয় রেখে গেলেন তিনি, যাঁরা তাঁর দেখানো পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বাংলা সৃজনশিল্পকে। নিজে হাতে লালন করেছিলেন সুকুমারের প্রতিভাকে। তার সমস্ত সৃজনশীল ক্ষ্যাপামোকে সযত্নে বাড়তে দিয়ে, ন’বছর বয়স থেকে তাকে সাহিত্যের আঙিনায় টেনে এনে, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে বিজ্ঞানসাধনায় ও প্রকাশনাশিল্পে নিজের উত্তরসূরী হিসেবে গড়ে তুলে, এবং সবশেষে মুদ্রণ ব্যবসা এবং সন্দেশের পরিচালনভার ধীরে ধীরে তার হাতে তুলে দিয়ে।
সুকুমার, সুখলতা, পুণ্যলতা, শান্তিলতা, সুবিমল, সুবিনয়, ভাইঝি লীলা এবং পরবর্তী প্রজন্মে এসে সত্যজিত রায়, নলিনী দাশ, এবং তারও পরে বর্তমান প্রজন্মের সন্দীপ রায়—ধারাটি ক্রমশ প্রবহমানই রয়ে চলেছে শিল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্রের নানান সৃজনশীল ধারায়। এঁদের অনেকেরই সাহিত্যজীবনেরও হাতেখড়ি তাঁদের ঘরের পত্রিকা উপেন্দ্রকিশোরের তৈরি সন্দেশের জমিতেই। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী বাস্তবে এক মহীরূহ সমান, যে বৃক্ষের ডালপালা ক্রমশই বিকশিত হয়ে সিঞ্চিত করে চলেছে বাংলার সাংস্কৃতিক ভূমিকে ; প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে।
প্রয়াণ দিবসে এই মহান স্রষ্টাকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম। 🙏
~ শ্রেয়সী সেন
তথ্যসূত্র : ছেলেবেলার দিনগুলি, পুণ্যলতা চক্রবর্তী
লীলা মজুমদারের বিভিন্ন লেখা
উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য
===================
উপেন্দ্রকিশোর রচনা সমগ্র সংগ্রহে রাখার মত বই : https://amzn.to/44QB1VD
======================
জীবনের প্রান্তসীমায় এসে হাতে কলম তুলে নিয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্রস্রষ্টা সত্যজিৎ রায়-এর সহধর্মিণী বিজয়া রায়। অন্তরের গভীরে থাকা বহু মানুষের মুখ, বহু ঘটনা, বহু জানা-অজানা কাহিনি তাঁকে এই অনন্য স্মৃতিকথা লেখার প্রেরণা দিয়েছে । এই বইয়ের পরতে পরতে ব্যাপ্ত রয়েছে যে বহুবর্ণী কাহিনি যা না জানলে মানুষ ও স্রষ্টা সত্যজিৎ রায় ও বিজয়া রায় সম্পর্কিত অনেক কথা অজানা থেকে যেত। অবলুপ্ত হত অজস্র দিকচিহ্ন। সত্যজিৎ রায় এর অনেক অজানা তথ্য ও সুন্দর ছবি পাঠকের কাছে রত্ন |
বিজয়া রায়ের লেখা "আমাদের কথা" সংগ্রহে রাখার মত একটি বই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3oDozba

Address

North 24 Parganas
Kolkata

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when অহর্নিশ - Ahornish posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to অহর্নিশ - Ahornish:

Share