অহর্নিশ - Ahornish

অহর্নিশ - Ahornish Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from অহর্নিশ - Ahornish, Digital creator, North 24 Parganas, KOLKATA.
(3)

আমরা ঘুরে বেড়াই ইতিহাসের সেই সব ঘনঘটায় যাদের হয়তো জায়গা দেওয়া হয়নি বইয়ের পাতায়। চেষ্টা করি এমন অনেক অজানা তথ্য ও গল্প তুলে আনার যা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। শক্তি দেয় ইতিবাচক নতুন কিছু ভাবার কিংবা অভাবনীয় কিছু করার।

আট-দশ বছর বয়েস থেকে ‘গুরু’ বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত। তাঁরই সাইকেলে চেপে ঘুরতেন। বুকের আড়ালে নিষিদ্ধ বই, টিফিন বক্সে রিভলভার...
26/08/2025

আট-দশ বছর বয়েস থেকে ‘গুরু’ বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত। তাঁরই সাইকেলে চেপে ঘুরতেন। বুকের আড়ালে নিষিদ্ধ বই, টিফিন বক্সে রিভলভার। চলত পাচার করা।
তিনি বলেছিলেন, "আমার দৃঢ় বিশ্বাস দীনেশদা, বিনয়দা যদি বিদেশে জন্মাতেন, তবে তাদের জীবনী পাঠ্যপুস্তক হত - আমাদের দেশে খাঁটি মানুষ তৈরী হত | সকলে জানতেন কি জাতের দামাল ছেলে সোনার বাংলায় জন্মেছিল |"

ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালে ডাক্তারির ছাত্র বিনয় বসু-কর্তৃক কুখ্যাত আইজি প্রিজন লোম্যান-হত্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ, রোমহর্ষক বিবরণ ভানু নিজেই লিখে গিয়েছিলেন। যে বাঙালি কন্ট্র্যাক্টর পলায়নরত বিনয়কে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য হাসপাতালের মাঠে জাপটে ধরেছিল, বিনয়ের বলিষ্ঠ ঘুঁষিতে তার দাঁতের ‘অকালে খসে পড়া’র ঘটনা তিনি লিখেছেন সেখানে। হাসপাতালের মেথর সুষেন পাঁচিলের ছোট্ট দরজা খুলে তাঁর ‘বিনয়দা’কে পালাতে সাহায্য করেছিল, পরে পুলিশের অকথ্য অত্যাচারেও সে মাথা নোয়ায়নি। ‘সাধারণের চোখে ছোটলোক’ এই মানুষটির প্রতি তাঁর অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ঝরে পড়েছে। দীনেশ গুপ্তর ফাঁসির পরদিন ভানু দেখেছেন, ঢাকার কুখ্যাত গুণ্ডা ভোলা মিঞা, যাকে অসামাজিক কাজের জন্য বেদম পেটাতেন দীনেশ গুপ্ত ও তাঁর ছেলেরা, দীনেশের মৃত্যুতে সেই লোকটাই রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে কাঁদছে।
দীনেশ গুপ্ত মারা যাওয়ার পর জড়িয়ে পড়েন ঢাকায় ‘অনুশীলন সমিতি’র কাজে। ’৪১ সালে, যখন বিএ পড়ছেন, কোনও এক ব্রিটিশ ইনফর্মার খুন হল অনুশীলন সমিতির হাতে। সে দলের পাণ্ডা ছিলেন উনি। ফলে হুলিয়া জারি। পালিয়ে আসতে হল পুব বাংলা ছেড়ে। তা’ও আবার কীসে? না, বন্ধু গোপাল মিঞার গাড়িতে, সিটের নীচে পাটাতনে লুকিয়ে।

চল্লিশের দশকের শেষ। পুববাংলা থেকে তখন দলে দলে উদ্বাস্তু আসছে। মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে ‘ইস্টবেঙ্গল রিলিফ কমিটি’ তাঁদের সাহায্য করতে সীমান্তে, স্টেশনে শিবির গড়ছে। শয়ে শয়ে স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত এক করে কাজ করছেন। সেই দলে ছিলেন ভানুও। তখন একটি অপেশাদার নাটকের দলও গড়েছিলেন। তারই এক সদস্য সলিল সেন উদ্বাস্তুদের নিয়ে লেখেন ‘নতুন ইহুদী’। সেই নাটকে ভানুর অভিনয় অভিভূত করে দেয় তখনকার তাবড় শিল্পীদের। লোকে বলে, এই সাফল্যই ওঁকে পুরোদস্তুর অভিনয়ে ফিরিয়ে দেয়।
মাস্টারদার সহযোদ্ধা বিপ্লবী অনন্ত সিংহকে তিনি খুব ভক্তি করতেন । অনন্ত সিংহ তাঁর ছবির প্রযোজকও হয়েছিলেন। প্রথম দুটোই ডাহা ফ্লপ। ‘শেষ পরিচয়’, ‘নতুন প্রভাত’। পরেরটা অবশ্য ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’। গল্পটা হলিউডি ছবি থেকে ধার করা। ছবির প্ল্যান-প্রোগ্রাম যখন সারা, তখনই খবর এল, ওই একই গল্প নিয়ে বিকাশ রায়ও ছবি করছেন। তখন পরিচালক আর প্রযোজকের সঙ্গে বসে গল্পটা আমূল বদলে দিয়েছিলেন তিনি । আর বাকিটা ইতিহাস | এর মধ্যে কয়েকটি ছবিতে শুধুমাত্র অনন্তের সম্মানে বিনা পারিশ্রমিকেও কাজ করে দিয়েছিলেন তিনি, যিনি কিনা কৌতুকাভিনেতাদের ‘লোক-হাসানো অভিনেতা’ তকমায় অভিহিত করা হতো বলে বরাবর যোগ্য সম্মান ও উপযুক্ত পারিশ্রমিক দাবি করে বহু প্রযোজকদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন।

১৯৭০-এর দশকে অনন্ত সিংহ গ্রেপ্তার হন। তাঁর মত বিপ্লবীর এহেন অবস্থা অনেককেই ব্যথিত করেছিল। এই সময় এক সাংবাদিক অনন্ত সিংহকে ডাকাত বললে তিনি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে তাঁকে গালাগাল দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। অনন্ত সিংহ তখন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি তখন তাঁর মেয়ে বাসবীর বিবাহ সম্পন্ন হল। মেয়ের বিয়ের ভোজ নিজের হাতে জেলবন্দি অনন্তের জন্য পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি।
তিনি সাম্যময় ওরফে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় | ভানুর সম্পর্কে অনন্ত সিংহ বলতেন – ‘ছায়াছবির মাধ্যমে সামাজিক দুষ্কর্ম, সরকারের অক্ষমতা ও তথাকথিত নেতাদের প্রবঞ্চনার বিরুদ্ধে তাঁর শ্লেষপূর্ণ ও বিদ্রুপাত্মক অভিনয় যাঁরা দেখেছেন তাঁরা বলবেন, ভানুবাবুর অন্তরে দেশপ্রেমের আগুন প্রজ্জ্বলিত আছে।’ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

জন্মদিনে বিনম্র প্রণাম ।
© অহর্নিশ

তথ্য - আনন্দবাজার পত্রিকা, লেখালিখি(ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়)

===============
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা সিনেমা জগতে এক চিরকালের নাম। অভিনেতা হিসাবে অবিকল্প। কিন্তু ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুই কি নিছক একজন কমেডিয়ান? স্বাধীনতা সংগ্রামী, রস সাহিত্যস্রষ্টা থেকে একজন দরদী মানুষ 'ভানু'কে কতজনই বা জানেন! ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আত্মকথা' এক সার্থক জীবন-স্মৃতি। অসাধারণ কলমে সেই সময়ের সমাজ, দেশভাগ ও ছিন্নমূল মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-বেদনা থেকে শুরু করে যাত্রা-নাটক-সিনেমা জগতের এক প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, ফুটে উঠেছেন মানুষ 'ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।' পাশাপাশি তাঁর সম্পর্কে বরেণ্য মানুষদের স্মৃতিচারণ, কার্টুন, দুষ্প্রাপ্য ছবি...এই সবকিছু নিয়ে 'ভানু সমগ্র'। এক অদ্বিতীয় গ্রন্থ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3HOBAsh

তখন তিনি লখনউয়ের ডাকসাইটে ব্যারিস্টার | সারাদিন তাঁর কোর্টের কাজ থাকত। কোর্ট থেকে বাড়ি ফিরেও রেহাই ছিল না। সাক্ষাৎপ্রার...
26/08/2025

তখন তিনি লখনউয়ের ডাকসাইটে ব্যারিস্টার | সারাদিন তাঁর কোর্টের কাজ থাকত। কোর্ট থেকে বাড়ি ফিরেও রেহাই ছিল না। সাক্ষাৎপ্রার্থী আসতেন অগুনতি। তাঁর বাড়ির দরজা সকলের জন্যে খোলা | প্রতি দিন কোর্ট থেকে বাড়ি ফেরার পর গানের মজলিশ বসতই বসত। এমনই এক মজলিশে এক মহিলা তাঁকে এক বার প্রশ্ন করে বসেছিলেন, ‘‘এত যে সুন্দর সুন্দর সব গান বাঁধেন, সময়ই বা পান কখন, কোথায়ই বা বাঁধেন? এ গান তো বাঁধতে কোনও নির্জন সাগরের ধার, নয় ফুলের বাগান চাই। আপনিও কি তেমনই কোথাও যান?’’ একটু ভেবে তিনি হেসে বললেন ‘‘সারাদিন বাড়িতে মক্কেলের ভিড়। আবার কোর্টে যাবার তাড়া। তার মধ্যেই স্নান করতে গিয়েছি। ঘটি নিয়ে বারবার জল ঢালছি গায়ে। ঘটির ওই কল কল শব্দে একটা কলি ভেসে উঠল মনে। কোর্টে যেতে যেতে, কোর্ট থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে গানটি লিখে ফেললাম, ‘জল বলে চল মোর সাথে চল/ তোর আঁখি জল হবে না বিফল।’ …’’ | উপস্থিত সকলে হতবাক |

একবার তিনি ভেনিসে নৌকাভ্রমণে বেড়িয়েছেন | চারিদিকে বাড়ির আলো, আকাশে তারা | হঠাৎ অন্য এক নৌকা থেকে বেহালার সুর ভেসে এল। সুরটা মনে লাগল তাঁর । ফিরে এসেই লিখে ফেললেন ওই গানটা – ‘ওঠো গো ভারত লক্ষ্মী’।’’
একবার গোমতী নদী ধরে যেতে যেতে চোখে পড়েছিল এক কুমারী মেয়ে নদীর পাড়ে উদাস হয়ে বসে রয়েছে। ঐ উদাসী মেয়েকে দেখেই কবি অতুলপ্রসাদ নৌকায় বসেই লিখেছিলেন – ‘কে তুমি বসি নদীকূলে একেলা’।

একবার লখনউয়ের রাস্তায় এক ভিখারিণী করুণ সুরে ভৈরবী রাগে গান গেয়ে চলেছিলেন | ওই গান শুনে চমকে উঠেছিলেন তিনি । লোক দিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁকে দেখে ভিখারিণী লজ্জায় জড়সড় । আর তিনিও সেই ভিখারিণীকে চিনে ফেলেছিলেন | সেই ভিখারিণী এককালের লখনউ শহরের বিখ্যাত বাইজি ছিল। শুনেছিলেন একজনের প্রেমে পড়েছিল সে। ওই প্রেমিকের জন্য সর্বস্ব পণ করেছিল ওই বাইজি। বিনিময়ে প্রেমিকের মিথ্যা প্রতারণায় ভুলে শেষে হয়েছিল রাস্তার ভিখারিণী। ওই ভিখারিণীকে মোটা টাকা দিয়ে বিদায়ের পর ব্যথিত চিত্তে বেহাগ রাগে লিখেছিলেন – ‘এত হাসি আছে জগতে তোমার, বঞ্চিলে শুধু মোরে। বলিহারি বিধি, বলিহারি যাই তোরে।’

চিনতে পারলেন এই সঙ্গীত সাধককে ? তিনি কিংবদন্তি অতুলপ্রসাদ সেন | অতুলপ্রসাদ সেনের গানের বহুল প্রচারক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র ‘দিলীপকুমার রায়’‌ মনে করতেন, ‘‌‘‌তিনি ছিলেন বাংলার শ্রেষ্ঠ সুরকারত্রয়ীর কনিষ্ঠ, রবীন্দ্রনাথ–‌দ্বিজেন্দ্রলাল–‌অতুলপ্রসাদ।’‌’‌ অন্যদিকে স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘‌‘দিল বঙ্গবীণাপাণি অতুলপ্রসাদ,/ তব জাগরণী গানে নিত্য আশীর্বাদ।’‌’‌
প্রয়াণদিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা |

© অহর্নিশ
তথ্যসূত্র:
অতুলপ্রসাদ সেন, বিশ্বজিৎ ঘোষ, বেঙ্গল পাবলিকেশন্‌স (২০১৯)

=================

অজস্র মণি মাণিক‍্যে পরিপূর্ণ শ্রী তরুণ মজুমদার এর বই সিনেমাপাড়া দিয়ে। বিভিন্ন বিখ্যাত সিনেমা র শ‍্যুটিং এর ঘটনা থেকে শুরু করে ,বিখ্যাত সব অভিনেতা,অভিনেত্রী, পরিচালক , সুরকার,গীতিকার, প্রযোজক এঁদের বিভিন্ন ব‍্যক্তিগত মূহুর্ত যেন সামনে থেকে দেখতে পেলাম, বইটি পড়তে গিয়ে।
অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন তরুণ মজুমদারের "সিনেমাপাড়া দিয়ে"
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3MEGtm7

১৯৬৮ সালের ৮ ডিসেম্বর l অনেক সরকারি টালবাহানার পর সেদিন রাইটার্স বিল্ডিঙের অলিন্দে অমর শহীদ বিনয় বাদল দীনেশের প্রতিকৃতি ...
26/08/2025

১৯৬৮ সালের ৮ ডিসেম্বর l অনেক সরকারি টালবাহানার পর সেদিন রাইটার্স বিল্ডিঙের অলিন্দে অমর শহীদ বিনয় বাদল দীনেশের প্রতিকৃতি স্থাপনের দিন ঠিক করা হয়েছে l বহু নেতা, সাংবাদিক, আমলা, লেখক উপস্থিত হয়েছেন l সেখানে গেছেন প্রতিষ্ঠিত লেখক শৈলেশ বসুও l সভায় কোনো চিত্র বা নাট্য জগতের প্রতিনিধি আসেননি l শৈলেশ বসু চেয়ে আছেন ভিড়ের দিকে l হঠাৎ চোখ পড়ল ভিড়ের এককোনায় শেষ প্রান্তে চুপচাপ বসে আছেন ভানু বন্দোপাধ্যায় l শৈলেশ ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তাঁর বাল্যবন্ধু তথা প্রখ্যাত অভিনেতাকে l

- 'ভানু , তুই এসেছিস ?'
ভানু একটু আনমনা.......
- 'আসব না ? আজ আমার দীনেশদার প্রতিকৃতি স্থাপন করা হচ্ছে l এমন দিনে আমি দূরে থাকতে পারি ? শ্যুটিং ক্যানসেল করে চলে এলাম অনুষ্ঠানে যোগ দিতে l'
বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গেলেন ভানু l দৃষ্টি চলে গেলো অলিন্দ ছাড়িয়ে দূরে - অনেক দূরে.... দেখে মনে হলো ভানু যেন চেনা পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে চলে গেছেন দূরান্তরে.... নিঃশব্দ নিশ্চুপ ....
শৈলেশ বসু প্রশ্ন করলেন 'কি দেখছিস বাইরের দিকে তাকিয়ে ?'
আনমনা ভানুর উত্তর ভেসে এলো, 'একটা সাইকেল.... কিন্তু ক্যারিয়ারটা একদম ফাঁকা l ছোটবেলায় দীনেশদাকে আমার সাইকেলের পিছনে চেপে কত জায়গায় ঘুরিয়েছি | কেউ আজ আর বসে নেই ওখানে l'

বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত ছিলেন তাঁর আদর্শ | যতদিন বেঁচে ছিলেন প্রতি বছর দীনেশ গুপ্তের আত্মবলিদান দিবসে একদম সকালে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত হতেন দীনেশ গুপ্তের শহীদ স্তম্ভের কাছে | সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করে চুপচাপ শহীদ স্তম্ভের কাছে বসে থাকতেন তিনি | অনেক পরে তিনি লিখেছিলেন- ‘ভগবান, তোমার লীলা বোঝা ভার। একটা ব্যাপারে তোমার উপর আমার ভীষণ রাগ। তুমি আত্মার নিজস্ব কোনও শক্তি দিলে না কেন! দিলে দীনেশদার আত্মা এখনকার বাকসর্বস্ব, অসৎ রাজনীতিওয়ালাদের মুণ্ড ছিঁড়ে ফেলতেন।’

শিল্পী-কলাকুশলীদের জন্যে একটানা আন্দোলন করেছেন শিল্পী সংসদের ব্যানারে | পাঁচ বছর ব্ল্যাক লিস্টে ঢোকানো হয় তাঁকে | কার্যত একঘর করে দেওয়া হয়েছিল | কারও কাছে মাথা নত করেননি | ভুলে যাননি শহীদ দীনেশদার আদর্শকে | গ্রামে গ্রামে ঘুরে যাত্রা করে পেট চালিয়েছেন কিন্তু তিনি হার মানেননি |

ঢাকা বিক্রমপুরের ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় তর্কযোগ্য ভাবে বাঙালির সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা যিনি চিরকাল দাঁড়়িয়ে থেকেছেন আদর্শের জমিতে। জন্মদিনে প্রণাম !

© অহর্নিশ
তথ্য : ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী অবলম্বনে,রাহুল ভট্টাচার্য্য-র লেখা

===============

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা সিনেমা জগতে এক চিরকালের নাম। অভিনেতা হিসাবে অবিকল্প। কিন্তু ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুই কি নিছক একজন কমেডিয়ান? স্বাধীনতা সংগ্রামী, রস সাহিত্যস্রষ্টা থেকে একজন দরদী মানুষ 'ভানু'কে কতজনই বা জানেন! ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আত্মকথা' এক সার্থক জীবন-স্মৃতি। অসাধারণ কলমে সেই সময়ের সমাজ, দেশভাগ ও ছিন্নমূল মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-বেদনা থেকে শুরু করে যাত্রা-নাটক-সিনেমা জগতের এক প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, ফুটে উঠেছেন মানুষ 'ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।' পাশাপাশি তাঁর সম্পর্কে বরেণ্য মানুষদের স্মৃতিচারণ, কার্টুন, দুষ্প্রাপ্য ছবি...এই সবকিছু নিয়ে 'ভানু সমগ্র'। এক অদ্বিতীয় গ্রন্থ।

আমাজন লিংক : https://amzn.to/3HOBAsh

শিল্পী-কলাকুশলীদের জন্যে একটানা আন্দোলন করেছেন শিল্পী সংসদের ব্যানারে | পাঁচ বছর ব্ল্যাক লিস্টে ঢোকানো হয় তাঁকে | কার্যত...
26/08/2025

শিল্পী-কলাকুশলীদের জন্যে একটানা আন্দোলন করেছেন শিল্পী সংসদের ব্যানারে | পাঁচ বছর ব্ল্যাক লিস্টে ঢোকানো হয় তাঁকে | কার্যত একঘর করে দেওয়া হয়েছিল | কারও কাছে মাথা নত করেননি | ভুলে যাননি শহীদ দীনেশদার আদর্শকে | গ্রামে গ্রামে ঘুরে যাত্রা করে পেট চালিয়েছেন কিন্তু তিনি হার মানেননি |

ঢাকা বিক্রমপুরের ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় তর্কযোগ্য ভাবে বাঙালির সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা যিনি চিরকাল দাঁড়়িয়ে থেকেছেন আদর্শের জমিতে। জন্মদিনে প্রণাম !

© অহর্নিশ

===============

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা সিনেমা জগতে এক চিরকালের নাম। অভিনেতা হিসাবে অবিকল্প। কিন্তু ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুই কি নিছক একজন কমেডিয়ান? স্বাধীনতা সংগ্রামী, রস সাহিত্যস্রষ্টা থেকে একজন দরদী মানুষ 'ভানু'কে কতজনই বা জানেন! ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আত্মকথা' এক সার্থক জীবন-স্মৃতি। অসাধারণ কলমে সেই সময়ের সমাজ, দেশভাগ ও ছিন্নমূল মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-বেদনা থেকে শুরু করে যাত্রা-নাটক-সিনেমা জগতের এক প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, ফুটে উঠেছেন মানুষ 'ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।' পাশাপাশি তাঁর সম্পর্কে বরেণ্য মানুষদের স্মৃতিচারণ, কার্টুন, দুষ্প্রাপ্য ছবি...এই সবকিছু নিয়ে 'ভানু সমগ্র'। এক অদ্বিতীয় গ্রন্থ।

আমাজন লিংক : https://amzn.to/3HOBAsh

"যে শহরটাতে থাকতাম, আগেই বলেছি, করতোয়া নদীর ধারে ছোট্ট সুন্দর একটা জায়গা । শহর বটে, কিন্তু তার গলিঘুঁজিতে গ্রামের গন্ধ...
25/08/2025

"যে শহরটাতে থাকতাম, আগেই বলেছি, করতোয়া নদীর ধারে ছোট্ট সুন্দর একটা জায়গা । শহর বটে, কিন্তু তার গলিঘুঁজিতে গ্রামের গন্ধ। যে বাড়িটায় থাকতাম তার দেওয়ালগুলো ইটের হলেও মাখার ওপরে হেলানো টিনের চাল। বাড়িতে ছেলে বলতে আট বছরের আমি আর তিন বছরের ছোট ভাইটা। বাকি সব পুরুষ সদস্যরা জেলে। স্বাধীনতার লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার সাজা। বাবা তো বটেই, একান্নবর্তী পরিবারের আপন অথবা সম্পৰ্কীয় কাকারা—সবার এক অবস্থা। জ্যাঠামশাইকে দু হাত বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল একটা খোড়ো চালের তলায় এমনভাবে যাতে ওঁর দু পায়ের বুড়ো আঙুলদুটো কোনোরকম মাটি ছুঁতে পারে। এই অবস্থায় চালা ভিজিয়ে অবিরাম টুপটাপ জলের ফোঁটা ঝরানোর ব্যবস্থা। তখনকার দিনে যক্ষ্মা মারণ-রোগ। সেটাই বুকে নিয়ে জেলে ঢুকেছিলেন। আর ফেরেননি।

বাড়িতে শুধু মা আর আমরা দু ভাই। মা খদ্দর পরতেন। কী করে যে সংসার চালাতেন, তার সঙ্গে আমার পড়াশোনার খরচ, তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। বাড়ির ঠিক মাঝখানের ঘরটা আড়ে-দিঘে একটু বড়–সেই কারণে ওকে বলা হত ‘বড় ঘর। সেই ঘরের খাটে আমরা দু ভাই মাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতাম। একদিন মাঝরাতে মা আমাদের জাগিয়ে দিয়ে বললেন, 'ওই শোনো, কেমন বাজনা বাজছে।'

বাজনাই বটে। আজও সেই বাজনা আমার রক্তে ঢুকে বসে আছে। বেরোতে পারেনি। তুমুল বর্ষার একধরনের মাদকতা আছে। কাগজের নৌকো ভাসাবার মতো ভাসিয়ে নিয়ে আসে অনেক স্মৃতি। আজ, বৈদরার ফার্ম হাউসের এই ঘরে টিনের চালার নীচে প্রকৃতির ওই বাজনা শুনতে শুনতে অনেকগুলো কাগজের নৌকো ভেসে ভেসে আমার কাছে এসে থেমে গেল।"

- সিনেমাপাড়া দিয়ে (তরুণ মজুমদার)

এইরকম ই অজস্র মণি মাণিক‍্যে পরিপূর্ণ শ্রী তরুণ মজুমদার এর বই সিনেমাপাড়া দিয়ে। বিভিন্ন বিখ্যাত সিনেমা র শ‍্যুটিং এর ঘটনা থেকে শুরু করে ,বিখ্যাত সব অভিনেতা,অভিনেত্রী, পরিচালক , সুরকার,গীতিকার, প্রযোজক এঁদের বিভিন্ন ব‍্যক্তিগত মূহুর্ত যেন সামনে থেকে দেখতে পেলাম, বইটি পড়তে গিয়ে।

===================

সিনেমার অজানা গল্প যদি জানতে চান তাহলে অবশ্যই পড়ুন পরিচালক তরুণ মজুমদার মহাশয়ের বই সিনেমাপাড়া দিয়ে | এক অসাধারণ বই |
তরুণ মজুমদার দেখুন। তরুণ মজুমদার পড়ুন।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3MEGtm7

আমার উত্তম ছোটবেলা থেকেই খুব শান্ত স্বভাবের। কোনদিন আমার কথার অবাধ্য হয়নি। ওর স্বভাবটাই এমন ছিল যে ওর ওপর বেশিক্ষণ রাগ ...
25/08/2025

আমার উত্তম ছোটবেলা থেকেই খুব শান্ত স্বভাবের। কোনদিন আমার কথার অবাধ্য হয়নি। ওর স্বভাবটাই এমন ছিল যে ওর ওপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা যেত না। আমার মন খারাপ হয়েছে জানলে গুটি গুটি চলে আসতো আমার ঘরের দরজায়। শুধু একটি ডাক, মা-মাগো! মুখ তুলে চাইতে না চাইতেই এসে ঝাঁপিয়ে পড়ত আমার বুকে। এ স্বভাবটা বড় হয়েও যায়নি। চাকরী পেয়ে প্রথম মাসের মাইনে থেকেই আমার জন্যে কিনে আনলে একখানা শাড়ি। আমি বললাম, একি! আমার জন্যে শাড়ি কেন ? উত্তম আমায় জড়িয়ে ধরে বলল, প্রথম রোজগারের টাকায় আমার ভগবানের পূজো দিলাম। তুমিই তো আমার ভগবান। প্রথম যেবার মোটরগাড়ি কিনল, গাড়ি কিনেই সোজা এল আমার ঘরে। বলল, মা তোমায় নিয়ে আর নতুন গাড়ি নিয়ে হাজারীবাগ যাবো। তুমি না চড়লে আমার গাড়ি কেনা সার্থক হবে না। শুধু আমার জন্যই নয়, সবার জন্যেই ও খুব ভাবত। ছোটভাইদের বুক দিয়ে আগলে রাখতো। ওর জন্যে ছোটদের অন্যায় করলেও মারতে পারতুম না। উত্তম ঠিক ভাইদের আড়াল করে রাখত। বিয়ের আগে পর্যন্ত কী ভূতের ভয়ই না ছিল উত্তমের। তাই নিয়ে এই সেদিনও হাসি-ঠাট্টা করতাম।

উত্তমের ছবি? প্রায় সবই তো দেখেছি। না দেখলে ছেলে রাগ করত। ভাল ছবি ? ভাল-মন্দ জানি না, আমার সব ছবিই ভালো লাগত। অগ্নিপরীক্ষা, সবার উপরে, হারানো সুর সব ছবিতেই উত্তমকে আমার ভাল লেগেছে। ওর শেষ ছবি দেখেছি দর্পচূর্ণ; তাও ভালো লেগেছে। ছবি দেখা হলে আমার কাছ থেকে মতামত নিত। কলকাতায় থাকলে রোজই একবার করে আসতো। আমায় প্রণাম করে স্টুডিওতে যেত, নতুন ছবির শুটিং শুরু করতো আমার আশীর্বাদ নিয়ে। মাসের প্রথমে এসে আমায় টাকা দিয়ে যেত। প্রায়ই বলতো, এই সেদিনও বলেছিল, মা, তুমি তো কখনও আমার কাছে কিছু চাইলে না? আমার বুঝি ইচ্ছে করে না।

আমি বলেছিলাম, চাইবার সুযোগ তো তুই কখনো দিলি না। তবুও ছেলে বায়না ধরে বললে, না, মা, তুমি আমায় ভালবাস না। তুমি আমার কাছে কিছু চাইলে আমার কত আনন্দ হয়!
ভেবেছিলাম, সত্যিই ওর কাছে, শুধু ওর আনন্দের জন্য একদিন কিছু, একটা চাইবো। কিন্তু ছেলে আমায় সেই চাইবার সংযোগ দিল না। আমায় কাঁদিয়ে নিজে হাসতে হাসতে চলে গেল....... কথা শেষ করতে পারলেন না চপলা দেবী-ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগলেন।

- - মহানায়ক উত্তমকুমারের মা চপলাদেবীর স্মৃতিচারণ (১৬ই আগস্ট,১৯৮০ আনন্দলোক উত্তম সংখ্যা)
=============================
বিস্তারিত জানতে আরও পড়ুন মহানায়ক উত্তমকুমারের আত্মজীবনী - নিজের লেখা বই - আমার আমি । এই বইতে পাবেন মহানায়ক সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3QyRcle
============================
বিস্তারিত জানতে আরও পড়ুন সুপ্রিয়া দেবীর লেখা বই আমার জীবন আমার উত্তম । এই বইতে পাবেন মহানায়ক সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য । উত্তমকুমারকে নিয়ে এরকম বই আর একটিও নেই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/4bVaavn
=======================
উত্তমকুমার প্রয়াত হওয়ার ঠিক পরেই ১৬ই আগস্ট,১৯৮০ আনন্দলোক উত্তম সংখ্যা বেরিয়েছিল ওনার স্মরণে । অতি স্বল্পমূল্যে দুষ্প্রাপ্য পত্রিকাটির পিডিএফ চাইলে হোয়াটস্যাপ করুন
Whatsapp Link : https://wa.me/9831930921

১৯ জুন, ১৯৮১ | ঠিক ৪১ বছর আগের কথা | স্কুল থেকে ফিরছিলেন শিক্ষিকা নমিতা মুখোপাধ্যায় | কলকাতার দক্ষিণ অ্যাভিনিউয়ে ছয় তলার...
25/08/2025

১৯ জুন, ১৯৮১ | ঠিক ৪১ বছর আগের কথা | স্কুল থেকে ফিরছিলেন শিক্ষিকা নমিতা মুখোপাধ্যায় | কলকাতার দক্ষিণ অ্যাভিনিউয়ে ছয় তলার এক ফ্লাটে ডাক্তার স্বামীর সাথে থাকতেন তিনি | কিন্তু ফ্ল্যাটের দরজা খোলার পর যা দেখলেন তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না নমিতাদেবী | সিলিং থেকে ঝুলছে গলায় ফাঁস দেওয়া স্বামীর ঝুলন্ত লাশ | সঙ্গে পেলেন একটি সুইসাইড নোট | তাতে লেখা “হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর জন্য আর অপেক্ষা করতে পারলাম না”।
কে ছিলেন এই ডাক্তারবাবু ?
ঠিক ৪৫ বছর আগে বাংলার মাটিতে ঘটেছিল এক নিঃশব্দ বিপ্লব ! সেই বিপ্লবের মূল কান্ডারি ছিলেন সেই ডাক্তারবাবু | নাম ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায় | ভারতবর্ষ তথা এশিয়ার প্রথম টেস্ট টিউব বেবি বা আই ভি এফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) এর জনক তিনি | জন্ম ১৯৩১ সালের ১৬ই জানুয়ারী বিহারের হাজারিবাগে | ছাত্রজীবন কেটেছিল প্রথমে স্কটিশ চার্চ কলেজে । পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে । ওই বছরেই শারীরবিদ্যা বিষয়ে সান্মানিক স্নাতক হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন প্রজনন শারীরবিদ্যা (অর্থাৎ রিপ্রোডাকটিভ ফিজিওলজি) বিষয়ে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে । এরপর এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লিউটিনাইজিং হরমোন পরিমাপের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে দ্বিতীয়বার পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে । এরপর কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন তিনি |
সারাবিশ্বের বিভিন্ন পরীক্ষাগারে তখন নলজাতক নিয়ে গবেষণা চলছে জোরকদমে । ডাঃ মুখোপাধ্যায়ের কাছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বা আদর্শ পরীক্ষাগার কিছুই ছিল না | শুধু ছিল মেধা ও নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্যে অদম্য জেদ | পাশে পেলেন ক্রায়োবায়োলজিস্ট ডাঃ সুনিত মুখার্জী এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সরোজ কান্তি ভট্টাচার্যকে | ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৬— দীর্ঘ ন’বছর ধরে তিল তিল করে এন আর এসেই গবেষণাগার তৈরি করেছিলেন সুভাষবাবু । সর্বক্ষণ সেখানে যুগান্তকারী আবিষ্কারের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন | বন্ধুসূত্রে পরিচয় হল বনেদি মাড়োয়ারি পরিবারের আগরওয়াল দম্পতির সঙ্গে | বিবাহের বারো বছর পরেও তারা ছিলেন নিঃসন্তান | কিছু দিন চিকিৎসার পরেও অবশ্য বেলাদেবী গর্ভবতী হতে পারেননি। পরীক্ষা করে সুভাষবাবু দেখেছিলেন, বেলাদেবীর দু’টি ফ্যালোপিয়ান টিউবই অবরুদ্ধ। তখনই নিজের নতুন গবেষণা ‘টেস্ট টিউব বেবি’র পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ওই দম্পতির উপরে করতে চেয়েছিলেন তিনি |
অক্টোবর ৩, ১৯৭৮ | দুর্গাপুজোর ঠিক আগে সাফল্য পেলেন ডাঃ মুখোপাধ্যায় । জন্ম নিল দুর্গা ওরফে কানুপ্রিয়া আগরওয়াল । ভারত তথা এশিয়ার প্রথম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় নলজাতক সন্তান। যার জনক এক বঙ্গ সন্তান । প্রথম নলজাতক লুইস ব্রাউন অবশ্য মাত্র ৬৭ দিন আগে জন্ম নিয়েছে ইংল্যান্ডে । সেখানকার আধুনিক সরঞ্জামের বিপরীতে কলকাতায় এক সাধারণ রেফ্রিজারেটর , অপরিসর গবেষণাগার | সম্পূর্ণ গবেষণাপত্র পাঠিয়ে দিলেন আন্তর্জাতিক হরমোন স্টেরয়েড কংগ্রেস (নতুন দিল্লী) ও ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ক্রায়োজেনিক্সের দরবারে । তখন তোলপাড় পড়ে গেল চিকিৎসা মহলে |
কিন্তু এরপরেই শুরু হল ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের উপর লাঞ্ছনা | নিজের কাজের বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি পাননি তিনি | কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সমাজেও একপ্রকার একঘরে করে দেওয়া হল তাঁকে | ২০১০ সালে রবার্ট এডওয়ার্ডস তার আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার পেলেও আবিষ্কারের পর নিজের দেশেই অবহেলা আর অপমানের মুখোমুখি হতে হয় সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে। ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের উপর অভিযোগ ছিল গুরুতর - তিনি দপ্তরের আমলাদের না জানিয়ে কেন মিডিয়াকে তার গবেষনার বিষয় জানিয়েছেন | তিনি কি করে তার ছোটো গবেষণাগারে সামান্য উপকরণ নিয়ে এই কাজ করেছেন, যেখানে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়েও অন্যেরা পারছে না | পশ্চিমবঙ্গে তখন বামফ্রন্ট সরকার | ১৯৭৮ সালের ১৮ই নভেম্বর সরকার মেডিক্যাল এস্যোসিয়েশনের অধীনে একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে | এর শীর্ষে ছিল Radio physicist এবং সদস্যদের মধ্যে ছিল একজন গাইনোকোলজিস্ট, একজন সাইকোলজিস্ট, একজন ফিজিসিস্ট এবং একজন নিউরোলজিস্ট | এই সদস্যদের আধুনিক রিপ্রডাক্টিভ টেকনোলজি সমন্ধে কোনও ধারণা ছিল না | বিশেষঞ্জ কমিটি ডাঃ মুখার্জীকে অনেক অবান্তর প্রশ্ন করে কার্যত অপমান ও হেনস্থা করে | শেষ পর্যন্ত কমিটি রায় দেয় যে “Everything that Dr. Mukhopadhyay claims is bogus.” |
জাপানের আন্তর্জাতিক এক সন্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার ডাক এলেও সরকারের বাধায় যেতে পারলেন না ডাঃ মুখার্জী | কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁর পাসপোর্ট । যাতে তিনি গবেষণা চালাতে না পারেন তাই তাঁকে বদলি করা হল বাঁকুড়া সন্মিলনী মেডিকেল কলেজে । সুভাষবাবুর বহু অনুরোধ সত্ত্বেও তৎকালীন স্বাস্থ্যকর্তারা সেই নির্দেশ রদ করেননি। অগত্যা বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে যোগ দিলেও সপ্তাহান্তে কলকাতার বাড়িতে ফিরে হাসপাতালের ছোট পরীক্ষাগারেই গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন সুভাষবাবু | বাঁকুড়ায় থাকাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন তিনি | এরপর কলকাতা আর জি কর মেডিকেল কলেজে ফিরিয়ে আনা হল তাঁকে | তবে তাঁকে সবচেয়ে বড় অপমান করা হয় তার আত্মহত্যার মাত্র কিছুদিন আগে। ১৯৮১ সালের জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাকে বদলি করা হয় চক্ষু বিষয়ক এক ইনস্টিটিউটে, ইলেক্ট্রো-ফিজিওলজির প্রফেসর হিসেবে। অথচ তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি কিংবা গবেষণা দুটোই ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ে। আর এই অপমানের ভার বইতে না পেরেই ১৯ জুন আত্মহত্যা করেন প্রতিভাধর এই বিজ্ঞানী | ১৯৮১ এর ১৯শে জুন সহধর্মিণী নমিতা মুখোপাধ্যায় কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি ফিরে দেখলেন সব গবেষণাকে ছুটি দিয়ে চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তাঁর জীবনসঙ্গী । এই ঘটনার পর নমিতাদেবী পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে বাকি জীবন শয্যাশায়ী হয়ে কাটান ।
শেষের গল্পটা একটু ভিন্ন।১৯৮৬ সালের ১৬ আগস্ট ভারতেরই আরেক বিজ্ঞানী টি. সি. আনন্দ কুমারের গবেষণার ফলে জন্ম নেয় আরেক টেস্ট টিউব শিশু হর্ষবর্ধন রেডি। ভারত সরকার আনন্দ কুমারকেই ভারতের প্রথম টেস্টটিউব শিশু নিয়ে সফলতার স্বীকৃতি হয়। তবে সবকিছু পাল্টে যায় ১৯৯৭ সালে, যখন আনন্দ কুমার কলকাতায় যান এক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যোগ দিতে। কলকাতায় আনন্দ কুমারের হাতে আসে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কাজের বিভিন্ন ডকুমেন্ট। সেই ডকুমেন্টগুলো দেখে আর দুর্গার পরিবারের সাথে কথা বলে আনন্দ কুমার বুঝতে পারেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়ই ভারতে টেস্ট টিউব শিশু নিয়ে গবেষণার প্রথম সফল ব্যক্তি। দীর্ঘদিনের অবহেলা আর অপমানের পর আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা পায় সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের গবেষণা। আনন্দ কুমারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ডক্টর সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের প্রথম সফল টেস্টটিউব শিশুর গবেষক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আনন্দ কুমারের ভাষায়, "ডক্টর সুভাষকে অবশ্যই ভারতে প্রথম সফল টেস্টটিউব শিশু আবিষ্কারের কৃতিত্ব দিতে হবে। তার আবিষ্কারের তুলনায় অন্যগুলো একেবারেই ছোট।" আনন্দ কুমার ১৯৭৮ সালে গঠিত সেই তদন্ত কমিটির কড়া সমালোচনা করেছেন তার লেখায়। আনন্দ কুমারের বলেন এই চার সদস্যের তদন্ত কমিটির কারোরই আধুনিক প্রজননবিদ্যা বিষয়ক গবেষণা নিয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না, যার ফল ভোগ করতে হয় সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে।
বর্তমান কালে কলকাতায় গড়ে উঠেছে ‘ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায় মেমোরিয়াল রিপ্রোডাকটিভ বায়োলজি রিসার্চ সেন্টার’ । মৃত্যুর ৪০ বছর পর তাঁর কর্মক্ষেত্র নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের নামকরণ হয়েছে মহান এই বিজ্ঞানীর নামে , আবক্ষ মূর্তি বসেছে সেখানে । যে ঘরে তিনি গবেষণারত থাকতেন তার বাইরে লাগানো হয়েছে স্মৃতিফলক । এছাড়াও তাঁর মূর্তি স্থাপন হয়েছে সুদূর হাজারিবাগ শহরে । আজও ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের দেখানো পথেই মা বাবা ডাক শুনতে পান বহু দম্পতি | কিন্তু এমন এক মানুষকে কত কষ্ট নিয়ে চলে যেতে হয়েছে, তা হয়ত আমাদের কল্পনার বাইরে |
২০১০ সালে সারা পৃথিবীর ১০০ টি দেশের ১১০০ জন চিকিৎসাবিজ্ঞানীর আবিষ্কার লিপিবদ্ধ করে প্রকাশিত হয়েছিল ‘দ্য ডিকশনারি অফ মেডিকেল বায়োগ্রাফি’ । সেই বইতে দুইজন বাঙালি চিকিৎসাবিজ্ঞানীর আবিষ্কারও স্থান পায় | তারা হলেন ডাঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী , ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায় ।
ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য |
© অহর্নিশ
তথ্য : আনন্দবাজার, রোর বাংলা, সপ্তর্ষি নাগের লেখা

ছোট্ট ঘরের মধ্যেই বাবা-মা, ভাই-বোনদের নিয়ে ছেলেবেলা কেটেছে। অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে পড়াশোনা করে বেড়ে ওঠা। তিনিই এখন নাসার গ...
25/08/2025

ছোট্ট ঘরের মধ্যেই বাবা-মা, ভাই-বোনদের নিয়ে ছেলেবেলা কেটেছে। অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে পড়াশোনা করে বেড়ে ওঠা। তিনিই এখন নাসার গবেষণা, বিজ্ঞানের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। শুধু তাই-ই নয়, নাসার তরফে এবার তাঁকে সম্মানিত করা হচ্ছে। নাসার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্মান 'নর্থস্টার' পুরষ্কার পাচ্ছেন বাঙালি গবেষক ডঃ গৌতম চট্টোপাধ্যায়। নাসার আকাশে বাংলার ধ্রুবতারা! এই খবর জানার পরেই হুগলির কোন্নগরের বাড়িতেও খুশির জোয়ার।

কোন্নগরের নবগ্রাম এলাকায় বাড়ি গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের। ছোটবেলায় আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। অত বড় সংসার সামলাতে সমস্যা হলেও বাবা কিছু বুঝতে দিতেন না। জানা গিয়েছে, ছোটবেলায় অনেক দিনই ঘরে ইলেকট্রিক না থাকায় হ্যারিকেন জ্বালিয়ে পড়তে হয়েছে গৌতম চট্টোপাধ্যায়-সহ ভাই-বোনদের। ছোটবেলা থেকে গৌতমের বিজ্ঞানের প্রতি অসীম আকর্ষণ। শিবপুর বিই কলেজ থেকে ইলেক্ট্রনিক্স টেলি কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারলিশ নিয়ে বিদেশযাত্রা।

পড়শোনা শেষে টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফাউন্ড মেডেল রিসার্চ সংস্থায় কাজ শুরু করেন গৌতম চট্টোপাধ্যায়। তবে তাঁর অনেক আগে থেকেই লক্ষ্য ছিল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায় গবেষক হিসেবে কাজ করার। একসময় তিনি পড়াশোনার জন্য পাড়ি দেন বিদেশে। ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন গৌতমবাবু। এরপর নাসায় কাজের সুযোগও এসে যায়। একসময় আমেরিকার নাসা থেকেই ডাক পেলেন তিনি। কালবিলম্ব না করে সেখানে কাজে যোগ। গত ২৫ বছর ধরে নাসার একাধিক গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। একসময় এই বাঙালি বিজ্ঞানী, গবেষক হিসেবে নাসায় অন্যতম অগ্রণী হয়ে ওঠেন। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবটারির এক উজ্জ্বল নাম। শুধু গবেষণা নয়, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জগতেও তিনি ইতিমধ্যে অসামান্য সম্মান পেয়েছেন। গত বছর নিউইয়র্ক থেকে তিনি পেয়েছেন আমস্ট্রং মডেল রেডিও ওয়ালসের বিজ্ঞান বিজ্ঞানের অসামান্য অবদানের জন্য বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্মান। আরও একজন বাঙালি বিদেশে কৃতিত্বের অধিকারী হলেন।

এই খবর পাওয়ার পর হুগলির কোন্নগরের বাড়িতেও আনন্দ, উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে। কোন্ননগরে তাঁর দিদি ও অন্যান্যরা থাকেন। বাঙালি বিজ্ঞানীর সাফল্যে খুশি এলাকার বাসিন্দারাও।

- সংবাদ প্রতিদিন (সুমন করাতি)

উত্তমকুমারকে আমি প্রথম দেখেছিলাম আমাদেরই বাড়িতে। আমার বোনের বিয়ের বরযাত্রী হয়ে এসেছিলেন। ভগ্নীপতি রঞ্জিত সিন্হার বন্ধ...
25/08/2025

উত্তমকুমারকে আমি প্রথম দেখেছিলাম আমাদেরই বাড়িতে। আমার বোনের বিয়ের বরযাত্রী হয়ে এসেছিলেন। ভগ্নীপতি রঞ্জিত সিন্হার বন্ধু হিসেবে। ফিল্মের পরিচয়ের বাইরে আলাপ বলেই শুধু নয়, উত্তমকুমারের ব্যবহারের মাধুর্যের জন্যই আমাদের সম্পর্ক'টা কখনই কাজের জায়গায় আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের পর্যায়ে থেমে থাকেনি। বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে, পরস্পরের বাড়িতে, কাজে-অকাজে, নিমন্ত্রণে, আড্ডায় ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল, সেটা প্রায় পারিবারিক সম্পর্কের রূপ নিয়েছিল। এ সম্পর্ক' ছাড়াও আমাদের দু'জনের মধ্যে নিতান্ত ব্যক্তিগত একটা সম্বন্ধ গড়ে উঠেছিল একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে। তাই বন্ধুত্ব হতে একেবারেই সময় লাগেনি ।

সেদিনের কথা আজ বড় বেশি করে মনে পড়ছে। আমরা দুজনে একসঙ্গে প্রথম যে ছবিতে কাজ করি, সেই ছবির স্মৃতি। সেই ছবি 'ঝিন্দের বন্দী। আউটডোর শুটিং হয়েছিল উদয়পুরে। বেশ দীর্ঘদিন ধরে। সবাই মিলে দারুণ হৈ হৈ করে সময় কাটাত। প্রত্যেকদিন শুটিং পর বিকেলে
আমরা দু'জনে একসঙ্গে বেড়াতে বেরোতাম। ঘণ্টা খানেক আমরা আলাদা করে বেড়াতাম। অজস্র সুখ-দুঃখের কথা হতো। বেড়াতে বেড়াতে আমরা এসে পড়তাম বাজারে। ইউনিটের সকলেই বেড়াতে বেরোতো। পুরো দলটার সঙ্গে আমাদের দেখা হ'তো বাজারে। তারপর আমরা সকলে গাড়ি ভাড়া করে. একসঙ্গে ফিরতাম। ক্যাম্পে ফিরে এসে হাসি, গান আর গল্পের আসর জমে উঠতো। সময় যে কিভাবে উধাও হয়ে যেতো টের পেতাম না। দেখতে দেখতে আমার শ্যূটিং শেষ হ'ল। আমার কাজ কয়েকদিন আগেই শেষ হয়ে গেল। যেদিন চলে আসছি, খুব খারাপ লাগছিল। ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল সকলকে ছেড়ে চলে আসতে। বিশেষ করে মানুষ উত্তমকুমারকে ছেড়ে চলে আসতে। সেদিন আমাকে বিদায় জানাবার জন্য সকলে সার বেধে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে উত্তমকুমারও ছিলেন। হঠাৎ নজরে পড়ল তাঁর চোখে জল। আমিও আমার চোখের জল আটকে রাখতে পারলাম না।

সেদিন দেখেছিলাম আসল মানুষটাকে যে আর পাঁচ জনের মতোই খুশি হলে হাসে, ব্যথা পেলে কাঁদে, বন্ধুর সববেদনার জন্য যার মন তৃষিত হয়ে থাকে। আজ মানুষ উত্তমকুমারের কথাই বেশি করে মনে পড়ছে। অভিনেতা উত্তমকুমারের সমন্ধে বিচার-বিশ্লেষণ করার সময় এটা নয়। পরে কখনও করা যাবে।

মানুষের যে খণ্ড খণ্ড পরিচয় দিনে দিনে জানা হ'তে থাকে তাকে এক জায়গায় করলে একটা কথা স্পষ্টই বুঝতে পারি যে আদতে আমরা সকলেই দোষে-গুণে আর পাঁচজনের মতোই মানুষে। এমন কি উত্তমকুমারও। দোষে-গুণে মানুষ হওয়া সত্বেও তাঁর, মানষের কাছে প্রিয় হওয়ার অসামান্য ক্ষমতা ছিল। তার জন্যই আমাদের দীর্ঘ পচিশ বছরের বন্ধুত্ব।

তবে এটা ঠিক, অভিনেতা উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ করা খুবই আনন্দের ছিল। কারণ ভাল অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করে আমি সব সময়ই আনন্দ পাই। আরেকটা কারণে অভিনেতা উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ করা আনন্দের ছিল- আমাদের দুজনের অভিনয় স্টাইলের পার্থক্য ছিল।

- অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (১৬ই আগস্ট,১৯৮০ আনন্দলোক উত্তম সংখ্যা)
=============================
বিস্তারিত জানতে আরও পড়ুন মহানায়ক উত্তমকুমারের আত্মজীবনী - নিজের লেখা বই - আমার আমি । এই বইতে পাবেন মহানায়ক সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3QyRcle
============================
বিস্তারিত জানতে আরও পড়ুন সুপ্রিয়া দেবীর লেখা বই আমার জীবন আমার উত্তম । এই বইতে পাবেন মহানায়ক সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য । উত্তমকুমারকে নিয়ে এরকম বই আর একটিও নেই ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/4bVaavn
=======================
উত্তমকুমার প্রয়াত হওয়ার ঠিক পরেই ১৬ই আগস্ট,১৯৮০ আনন্দলোক উত্তম সংখ্যা বেরিয়েছিল ওনার স্মরণে । অতি স্বল্পমূল্যে দুষ্প্রাপ্য পত্রিকাটির পিডিএফ চাইলে হোয়াটস্যাপ করুন
Whatsapp Link : https://wa.me/9831930921

১৯৯৫ সাল | বেনারসের SSB-র ইন্টারভিউ দিতে এসেছে এক ১৯ বছরের যুবক | সামনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তাবড় তাবড় অফিসাররা | এক অফিসা...
24/08/2025

১৯৯৫ সাল | বেনারসের SSB-র ইন্টারভিউ দিতে এসেছে এক ১৯ বছরের যুবক | সামনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তাবড় তাবড় অফিসাররা | এক অফিসার সেই যুবককে জিজ্ঞেস করলেন,
- সেনাবাহিনী কেন জয়েন করতে চাও?
- পরমবীর চক্র পাওয়ার জন্য স্যার।
- পরমবীর চক্র কে কি খেলনা মনে করো?
- No sir, I will surely win it by my courage...

সেনা অফিসারেরা বুঝেছিলেন এই যুবক এক জ্বলন্ত আগুন | NDA পাশ করে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন সেই যুবক | নাম মনোজ কুমার পান্ডে | ১৯৯৭ সালের ৭ জুন মনোজ কুমার পান্ডে ১১তম গোর্খা রাইফেলসের প্রথম ব্যাটালিয়নে লেফটেন্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন |

১৯৯৯ সালের মে মাস | কার্গিল সেক্টরে পাক হানাদার বাহিনীর অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া যায় | ১১তম গোর্খা রাইফেলসের প্রথম ব্যাটালিয়নকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কার্গিলের বাটালিক সেক্টরে স্থানান্তরিত করা হয় | ইউনিটটিকে জুবার, কুকার্থাম এবং খালুবার এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর ছিল ইয়েলডোরে।

বাটালিক সেক্টরে তখন কনকনে ঠান্ডা | সেনাবাহিনীর ছাউনির ভিতর বসে রয়েছেন মনোজ পান্ডে | হাতে ডায়েরি | কিছুটা দূর থেকে গুলি গ্রেনেডের শব্দ এসে ধাক্কা দিচ্ছে কানে। পকেট থেকে পেন হাতে নিয়ে নিজের মায়ের উদ্দেশ্যে একটা ছোট কবিতা লিখলেন মনোজ। আর তার নীচেই দু'টো লাইন...
'If death strikes before I prove my blood, I swear I will kill death.'
'দেশের হয়ে লড়াইয়ে নিজেকে প্রমাণ করার আগে মৃত্যু এলে, আমি মৃত্যুকে মেরে ফেলব।'

ততদিনে অপারেশন বিজয়ে মৃত্যুকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছে ক্যাপ্টেন মনোজের টিম। মনোজ পান্ডে সম্পর্কে ততদিনে একটা প্রবাদ প্রচলিত হয়ে গেছে সেনাবাহিনীতে,
' IF not Manoj, then who? '
এরই মাঝে খবর এল | বাটালিক সেক্টরে ফাঁকা জুবার-টপ পোস্ট চুপিসারে দখল করে নিয়েছে পাকসেনা | গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টা পাকসেনার কাছ থেকে উদ্ধারের দায়িত্ব পড়ে ১/১১ গোর্খা রাইফেলসের উপর। জুলাই মাসের ১ তারিখ | মনোজ পান্ডের নেতৃত্বে জুবার টপের দিকে এগোতে থাকে গোর্খা রাইফেলস। কিন্তু সমস্যা হল পাক সেনা উঁচুতে পাথরের বাঙ্কারের আড়ালে, আর ভারতীয় সেনাবাহিনী নীচ থেকে উপরে ওঠার চেষ্টা করছে। ফলে পাক-সেনার গুলি ভারতীয় সেনাদের খুঁজে পেলেও উল্টো প্রায় হচ্ছে না! কিন্তু তাতে কি ? ভারতীয় সেনা খাড়া পাহাড়ে চড়তে শুরু করল | বোল্ডারের আড়ালে আড়ালে ভারতীয় সেনা পৌঁছে গেল উপরে |

৩ জুলাই, ১৯৯৯ | গভীর রাত। ভোরের আলো তখনও ফোটেনি | চারিদিকে চাঁদের আলো | উপর থেকে গুলি বৃষ্টি চলছে। খালুবারের দিকে একটু করে এগোচ্ছে মনোজ অ্যান্ড টিম। চাঁদের আলো শত্রুর সামনে উন্মুক্ত করে দিতে পারে তাদের। তাই চাঁদ মেঘে ঢাকা পড়লে এগোনো, আর চাঁদ বাইরে বেরিয়ে এলেই পাথরের আড়ালে চলে যাওয়া। অনেকটা উঠে এসেছিলেন মনোজরা। তবে শেষ রক্ষা হল না। পাক সেনার চোখে ধরা পড়ল ১/১১ গোর্খা রাইফেলসের জওয়ানদের গতিবিধি। শুরু হল গুলি, গ্রেনেড বর্ষণ। পাল্টা শুরু করলেন মনোজরাও ৷ উপরে থাকা প্রথম শত্রুবাঙ্কার ধ্বংস করা গেল। চারজন পাক সেনাকে হত্যা করে দ্বিতীয় শত্রুবাঙ্কারটিও গুড়িয়ে দেন মনোজ |

ইতিমধ্যেই টিমের একেবারে সামনে থাকা মনোজ গুলিবিদ্ধ হলেন | ঘাড়ে ও পায়ে বুলেটের আঘাত |
কিন্তু যে ছেলেটা পরমবীর চক্র পেতে আর্মিতে এসেছে ১৯ বছরে, তাকে কি আর এত অল্প আঘাত থামাতে পারে? বরং মনোজ তখন আহত বাঘ, পাক সেনার তৃতীয় বাঙ্কারটাও গুড়িয়ে দিলেন। চতুর্থ বাঙ্কার দখল করার সময় গ্রেনেডের আঘাতে মারাত্মক জখম হন মনোজ কুমার পান্ডে | পাহাড়ের বুকে লুটিয়ে পড়েন তিনি | তার টিমের উদ্দেশ্যে তার শেষ কথা ছিল "Na chhornu" (তাদের রেহাই দিও না) | শহীদ হন ক্যাপ্টেন মনোজ পান্ডে |

ক্যাপ্টেন মনোজ পান্ডের পান্ডের এই অনন্য সাহসী পদক্ষেপ কার্গিল যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয় | কয়েকদিনের মধ্যেই জুবার টপে ভারতের জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিল ভারতীয় সেনা। শত্রুমুক্ত হয় খালুবার |
কয়েক মাস পর রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুত্রের মরণোত্তর পরমবীর চক্র নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন মনোজ পান্ডের বাবা শ্রী গোপীচাঁদ পান্ডে।

মনোজ কুমার পান্ডে ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন ভারতের উত্তর প্রদেশের সীতাপুর জেলার রুধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা গোপী চাঁদ পান্ডে ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি লখনউয়ের উত্তর প্রদেশ সৈনিক স্কুল এবং রানী লক্ষ্মী বাই মেমোরিয়াল সিনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন । ছোট থেকেই বক্সিং এবং বডি বিল্ডিংয়ের উপর মনোজ কুমার পান্ডের গভীর আগ্রহ ছিল।

ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিল ক্যাপ্টেন মনোজ কুমার পান্ডে-র | ডায়েরির প্রথম পাতায় একটাই লাইন লেখা ছিল " Some goals are so worthy, it's glorious even to fail!"

জয় হিন্দ ক্যাপ্টেন মনোজ কুমার পান্ডে |

© অহর্নিশ

তথ্য : উইকিপিডিয়া

=================

ক্যাপ্টেন মনোজ কুমার পান্ডের জীবন সম্পর্কে জানতে অবশ্যই পড়ুন তাঁর বন্ধু পবন কুমার মিশ্রর লেখা বই Hero of Batalik: Kargil War 1999 । এই বইতে পাবেন ক্যাপ্টেন মনোজ কুমার পান্ডের লেখা বহু চিঠি এবং তাঁর জীবনের বহু অজানা ঘটনা ।
আমাজন লিংক : https://amzn.to/3U1cXv4

===================

Twenty-one riveting stories about how India's highest military honor was won. Rachna Bisht Rawat takes us to the heart of war, chronicling the tales of twenty-one of India's bravest soldiers. Talking to parents, siblings, children and comrades-in-arms to paint the most vivid character-portraits of these men and their conduct in battle and getting unprecedented access to the Indian Army, Rawat has written the ultimate book on the Param Vir Chakra.

Amazon Link : https://amzn.to/3IKXKff

Address

North 24 Parganas
Kolkata

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when অহর্নিশ - Ahornish posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to অহর্নিশ - Ahornish:

Share