09/06/2025
সে দেখতে আপনার-আমার পাড়ার মেয়ের মতো। খুবই সাদামাটা, আটপৌরে। চোখে মুখে নেই কোনো জাঁকজমক।
অথচ, ঠিক এই সাধারণ মুখটির আড়ালেই লুকিয়ে আছে এক অতিমানবী বুদ্ধিমত্তা ও অসীম ধৈর্য্য।
ড. মাধবী লতা, যিনি আজ ভারতের গর্ব, বিশ্বের বিস্ময়, এবং নারীর ক্ষমতায়নের এক অনন্য উদাহরণ।
যিনি প্রমাণ করেছেন নারীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করলে, তাঁরাও সমান দক্ষতায় দেশগঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন।
অন্ধ্রপ্রদেশের একটি ছোট গ্রাম Yedugundlapadu-তে জন্ম। বাবা-মা ছিলেন কৃষক। আর সেই মাটির ঘর থেকেই শুরু তাঁর যাত্রা — কঠিন অধ্যবসায় আর একরাশ স্বপ্নকে সঙ্গী করে।
পড়াশোনায় সবসময় প্রথম। গোল্ড মেডেলিস্ট হয়ে পাশ করেছেন NIT থেকে, তারপর PhD করেছেন IIT মাদ্রাস থেকে। আজ তিনি ভারতের সেরা গবেষণা প্রতিষ্ঠান IISc বেঙ্গালুরু-তে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর।
আর গত ১৭ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করেছেন বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু চেনাব ব্রিজ-এর নেপথ্যে।
চেনাব ব্রিজ — যার উচ্চতা ৩৫৯ মিটার, আইফেল টাওয়ারের থেকেও ৩৫ মিটার উঁচু!
এর নির্মাণশৈলী ও প্রযুক্তিগত কাঠামো এতটাই জটিল যে, শুরুতেই স্থির ডিজাইন ছিল না।
প্রকল্পটি পরিচালিত হয়েছে “Sketch as you go” পদ্ধতিতে — যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে ধাপে ধাপে বদলে গিয়েছে পরিকল্পনা, বদলেছে কাঠামো। আর এই বিশাল কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে ছিলেন ড. মাধবী লতা।
সেই পাথুরে পর্বতমালায়, যেখানকার ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত নাজুক, যেখানে প্রতি মুহূর্তে মাটি সরে যাওয়ার ঝুঁকি, যেখানে ভূমিকম্পের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি — সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এই সেতুটি কেবল ইঞ্জিনিয়ারিং কীর্তি নয়, এক মানসিক জেদ, এক বিজ্ঞানভিত্তিক ধৈর্য্যের জ্বলন্ত প্রমাণ।
ড. মাধবীর নেতৃত্বে স্লোপ স্ট্যাবিলাইজেশন, রক অ্যাঙ্করিং, সাবস্ট্রাকচারের ডিজাইন এবং ভূকম্পন সহনশীলতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই সেতু ১২০ বছর ধরে টিকে থাকবে এমনভাবেই গঠন করা হয়েছে — এমনকি ২৬৬ কিমি/ঘণ্টার ঝড় বা ভূমিকম্পও তাকে নাড়াতে পারবে না।
বিপদ বুঝলেই সেতুর নিজস্ব সেন্সর ব্যবস্থা ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেবে — সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়।
এই সব কিছুই হয়েছে তাঁর মতো অসাধারণ বিজ্ঞানীদের হাত ধরে।
আজ, ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই ব্রিজ কেবল একটি সংযোগ নয়, এটি কাশ্মীরের সঙ্গে দেশের আত্মিক বন্ধনেরও প্রতীক।
এটি একটি সা' ম রিক ও কৌ'শলগত জয়, যার পেছনে
সে' নাবাহিনীর মতোই লড়েছেন ইঞ্জিনিয়ারদের এক বাহিনী — যাঁদের এক সুপ্রশংসিত মুখ ড. মাধবী লতা।
তাঁকে দেখে বোঝা যায় না তিনি একজন “সুপার-ইঞ্জিনিয়ার”।
চুলে বিনুনি, মুখে বিনয় আর চোখে স্বপ্ন — একেবারে এক সাধারণ ভারতীয় নারী। কিন্তু তিনিই সেই নারী, যাঁর হাতে তৈরি হয়েছে এমন এক সেতু, যা পৃথিবীর বুকে ভারতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার জয়গান গেয়ে চলেছে।
তিনি কেবল একটি সেতু নির্মাণ করেননি, তিনি আমাদের ভবিষ্যতের ওপর রেখেছেন স্থায়ী ছাপ। তিনি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন, “বিশ্বকর্মা” কেবল পুরুষ নন, নারীও হতে পারেন।
এবং নারীর উপর বিশ্বাস রাখলে নারীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করলে, তাঁরাও সমান দক্ষতায় দেশগঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন।
তাই আজকের দিনে, যখন গোটা বিশ্ব ভারতের দিকে সম্মানের চোখে তাকাচ্ছে, তখন এই “মাধবী লতা”-দের কথা আমাদের আরো জোর গলায় বলা উচিত।
আমাদের সন্তানদের, আমাদের ছাত্রদের, আমাদের সমাজকে বলা উচিত — “তোমরা যদি সত্যি স্বপ্ন দেখো আর মন দিয়ে পরিশ্রম করো, তাহলে পাহাড়ের গায়ে চেনাবের মতো সেতু তৈরি করাও সম্ভব।”
ড. মাধবী লতা এবং তাঁর মতো হাজারো ভারতীয় বিজ্ঞানীর প্রতি আজ আমাদের কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও স্যালুট।
চেনাব ব্রীজের প্রতিটি পাথরে, প্রতিটি নাটবল্টুতে লেখা থাকবে তাঁর নাম — হয়তো অদৃশ্য কালিতে, কিন্তু চিরস্থায়ী ভাবে।
জয় ভগবান, জয় ভারত 🧡🇮🇳
🖋️ Uttam
#তিলোত্তমাkolkata