20/10/2025
❖ শিরোনাম:
WHO -অনুমোদিত না হলে আর বিক্রি করা যাবে না ORS: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশ।
❖প্রতিবেদনঃ-
বিভিন্ন কোম্পানি এতদিন যেভাবে পানীয় দ্রবণ কে ‘ORS’ নামে বিক্রি করছিল, তাতে ছিল না বৈজ্ঞানিক অনুপাত — ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল মানবদেহ।
দেশজুড়ে গরমে পানিশূন্যতা, ডিহাইড্রেশনের সময় অনেকেই হাত বাড়ান সহজলভ্য ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন বা ORS -এর দিকে। কিন্তু এতদিন বাজারে যে অসংখ্য পানীয় ORS নামে বিক্রি হচ্ছিল, তার বেশিরভাগই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমোদিত নয় বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, এখন থেকে WHO অনুমোদিত সূত্রে তৈরি নয় এমন কোনো পানীয় বা দ্রবণ কে ‘ORS’ নামে বিক্রি করা যাবে না।
ভুল অনুপাতেই তৈরি হচ্ছিল অনেক তথাকথিত ORS
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ORS -এর জন্য নির্দিষ্ট একটি রাসায়নিক অনুপাত নির্ধারণ করেছে — যেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্লুকোজ, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, সাইট্রেট ও ক্লোরাইড থাকতে হবে।
এই অনুপাত হলো (প্রতি লিটার জলে)
সোডিয়াম: ৭৫ mmol
গ্লুকোজ: ৭৫ mmol
পটাশিয়াম: ২০ mmol
ক্লোরাইড: ৬৫ mmol
সাইট্রেট: ১০ mmol
মোট অসমোলারিটি: ২৪৫ mOsm/L
এই অনুপাত মানবদেহের স্বাভাবিক ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স পুনঃস্থাপনে সাহায্য করে। কিন্তু বাজারে পাওয়া অনেক "ORS" এই অনুপাত একেবারেই ছিল না। কিছু পণ্যে চিনি ও সোডিয়ামের পরিমাণ ছিল বিপজ্জনকভাবে বেশি, আবার কিছুতে প্রয়োজনীয় খনিজ ছিলই না।
ফলে দীর্ঘদিন এসব পণ্য খাওয়ার ফলে অনেকের শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য নষ্ট, কিডনি ও স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছিল বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
❖ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তা
কেন্দ্রের নির্দেশে বলা হয়েছে —“WHO-অনুমোদিত মানদণ্ড অনুযায়ী প্রস্তুত নয় এমন কোনো দ্রবণকে ‘ORS’ নামে বাজারজাত করলে তা ভোক্তা প্রতারণা ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের শামিল।”
এমনকি যারা এই ধরনের পানীয় বাজারজাত করবে তাদের বিরুদ্ধে ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স অ্যাক্ট অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
WHO ও UNICEF-এর যৌথ অবস্থান
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও ইউনিসেফ (UNICEF) দীর্ঘদিন ধরেই বলছে — ORS একটি চিকিৎসাগত দ্রবণ, সাধারণ পানীয় নয়। এটি ব্যবহারের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র ডায়রিয়া, বমি, গরমে ঘামজনিত ডিহাইড্রেশন বা ইলেকট্রোলাইট ঘাটতি পূরণ করা।
WHO ২০০২ সালে তাদের সর্বশেষ অনুমোদিত ORS ফর্মুলা প্রকাশ করে, যেটিকে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ‘Reduced Osmolarity ORS’ নামে চেনেন।
❖ সাধারণ মানুষের করণীয়
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন থেকে বাজার থেকে ORS কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে “WHO approved formula”লেখা আছে কিনা তা ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত।
এছাড়া নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি:
প্যাকেটের উপাদান তালিকায় গ্লুকোজ ও সোডিয়ামের পরিমাণ WHO -এর নির্ধারিত অনুপাতের মধ্যে আছে কিনা দেখুন।
প্যাকেটজাত ORS না পেলে বাড়িতেও সহজেই WHO মান অনুযায়ী তৈরি করা যায় —
পরিষ্কার জলে ১ লিটার
৬ চা চামচ চিনি
আধা চা চামচ লবণ
ভালোভাবে মিশিয়ে এই দ্রবণ টি স্বল্প মেয়াদে ব্যবহার করা যেতে পারে।
❖ বিশেষজ্ঞের বক্তব্য
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)-এর এক বিশেষজ্ঞ বলেন,“ORS কোনও এনার্জি ড্রিংক নয়। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানভিত্তিক এক ধরনের ফর্মুলেশন, যার উদ্দেশ্য শরীরের পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করা। তাই এটি অবশ্যই WHO অনুমোদিত মান মেনে তৈরি হতে হবে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশ কার্যকর হলে বাজারে চলতে থাকা নকল ও ক্ষতিকর ORS বিক্রির অবসান ঘটবে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের। এখন থেকে সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেরই দায়িত্ব হবে ORS কেনার সময় WHO অনুমোদিত লেখা দেখে নেওয়া।