19/10/2025
ছোটোগল্প, বড়োগল্প, উপন্যাসিকা মিলিয়ে ৫২ টি কাহিনি, আড়াই লাখ শব্দ! এই অনুবাদ করতে গিয়ে আমি নিজেও সমৃদ্ধ হয়েছি অনেক। সাধারণ পাঠের তুলনায় এরকম কাজ করতে গেলে লেখার আরো অনেক গভীরে প্রবেশ করতে হয়। প্রচুর তথ্য, লেখার মেজাজ, ভাষা প্রয়োগ এগুলো তো আছেই। অনুবাদ কর্মে আমার এটা প্রথম কাজ না হলেও এত বড়ো কর্মযজ্ঞ তো প্রথম বটেই। তাও আমার মতো অলস মানুষের ক্ষেত্রে। যাঁরা নিয়মিত অনুবাদ করেন, তাঁদের নিশ্চয়ই এসব ব্যাপারে অনেক অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু আমি মাঝে মাঝেই চমকে উঠেছি, ইংরেজি ভাষা থেকে বাংলা ভাষা কত বেশি সমৃদ্ধ সে কথা ভেবে। একই ইংরেজি শব্দ প্রয়োগভেদে আলাদা আলাদা মনের ভাব প্রকাশ করে, বাংলায় কিন্তু প্রায় সর্বত্রই কোনো না কোনো সমার্থক শব্দ পেয়ে যাচ্ছি। না, কোনো অচেনা শব্দ নয়, একদম মুখের ভাষাই। অর্থাৎ বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার ইংরেজির তুলনায় কত এগিয়ে। আগে কখনও এই অনুভূতি হয়নি। তারপর ধরুন সম্পর্কের ব্যাপারে, ইংরেজিতে uncle লিখলে লেখককে সম্পর্কটা ভালো করে বোঝানোর জন্য আরো দুটি বাক্য লিখতে হবে। কিন্তু বাংলায় কাকা, জ্যাঠা, মামা-- শুধু একটা সম্বোধনেই সম্পর্ক জলের মতো পরিষ্কার। সিস্টার ইন ল মানে বউদি, নাকি শ্যালিকা এ নিয়ে ইংরেজিতে ধন্দ থেকেই যায়। কিন্তু সম্পর্কের ব্যাপারে আমরা বাঙালিরা অনেক পরিষ্কার। 😊 তারপর তুমি, আপনি, তুই এসব তো আছেই। কখন কোন চরিত্র কাকে কেমন সম্মান জানাচ্ছে, সেটা শুধু সম্বোধন দিয়েই বাংলায় বুঝিয়ে দেওয়া যায়। শুধু একটি ক্ষেত্রে ইংরেজি দেখলাম বেশ সুবিধে পায়। তা হল সর্বনামের ব্যবহার। যেমন কোনো দৃশ্যে হয়তো একটি পুরুষ ও একটি মহিলা চরিত্র আছে। ইংরেজিতে ন্যারেশনে he আর she দিয়ে দিব্যি পাতার পর পাতা লিখে পরিষ্কার চালানো যায়। কিন্তু বাংলায় সে উপায় নেই। কিছু পরেই "সে", "তার" বলতে কোন চরিত্রকে বোঝানো হচ্ছে সেটা পাঠকের গুলিয়ে যাবেই। তাই মাঝে মাঝেই বাংলায় নাম বিশেষ্যতে ফিরে আসতে হয়। এরকমই অনেক অভিজ্ঞতা লাভ হল, যা অবশ্যই প্রাজ্ঞ লেখক বা অভিজ্ঞ পাঠকের কাছে কোনো নতুন বিষয় নয়।
#এরকুল_পোয়ারো_গল্পসমগ্র