23/06/2025
খোদাই করা আছে নাম আজও
----------------------------------------------------------------
আচ্ছা আজ হঠাৎ আবার মাথা কুর কূর করতে শুরু করছিল। দুপুরে রাস্তায় এক প্লেট ছোলে বোটুরে খেয়ে হঠাৎ ই আমার লুচি আর আলুর দম খেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু সেই জন্য কোথায় যাবো?? বাড়িতে খাবো?? না ইচ্ছে হয় না। ইচ্ছে হচ্ছিল অতীতে চলে যাই, সেই পুরানো দিনের মধ্যে। কিন্তু সেও তো বিধি বাম।
যাক এবার বলি একটু ছোটো একটা গল্প, বেশি বলব না, না হলে গল্পের স্বল্পতা নষ্ট হবে। ছোট গল্প ছোট ই থাকুক, বড় হতে হবে না। গল্প টা আজ বলি, সত্যি কারের। বাড়ি আমার ছিল বেলঘরিয়া তে। ওই এরিয়াতে অনেক পুরানো পরিবার আমরা। আজ পাবলিকলি বলছি কারণ আর পরোয়া করি না। আমাদের পরিবার ওই খানে প্রায় 200 বছরের ওপরের। একদা ওখানে লাল বাড়ি বললে সবাই এক নামে চিনিয়ে দিত। যদিও আমার বাবার দিকের ফ্যামিলি এসেছিল লখনউ থেকে। একান্নবর্তী পরিবার বলতে যা বোঝায়। জগদ্ধাত্রী মন্দির ছিল যেটাতে পুজো হয় এখনো হয়ত, 180 বছরের ইতিহাসে, নর্থ কলকাতার দিকে অতি পুরানো পুজোর মধ্যে একটি। না আমি ওতে জড়িত নয়, এটলিস্ট 2018 সাল থেকে। আমি ওখানে পা ও দি নি। দিতে চাই না। ঘেন্না করি প্রত্যেক টা মানুষকে ওখানে। প্রত্যেক জনকে। কারণ হলো, এর আগেও বলেছি বাবার একটা বড় ব্যাংক ডাকাতির পর বাবা সব হারিয়েছিল। সঙ্গে আরও পরিবার গত কারণে নিজের 3 টে ফ্ল্যাট বাড়ি হাতছাড়া হয়। কর্পদক শুন্য অবস্থায় দক্ষিণেশ্বর এ একটু ছোট ফ্ল্যাট এ থাকতে হয়। যতদিন না আমি বাবা মা কে দিল্লী নিয়ে আসি। যায় হোক অতীত তো অতীত ই।
বাবা না হয় হারিয়েছিল নিজের সম্মান, মাথার ছাদ, আংশিক ভাবে অর্থনৈতিক ভারসাম্য যা বাবা কে মানসিক বা শারীরিক ভাবে শেষ করে দেয়। বাবার শেষ বাড়ি টুকু বিক্রির সময় ওখানকার নিজের লোকজন পেছনে কলকাঠি নেড়ে টাকা দেয় নি বেশি। পরে জানতে পারি। আশেপাশের লোকজন আমার ও আমার মা এর নামে টাকা নয়ছয় করার কথা রটাই। যেটা কোনোদিন মা ও সহ্য করেনি। এর মাঝে আমি হারিয়েছিলাম নিজের so called বন্ধুদের। আমার যখন সব ছিল, আমার বাড়িতে আমার বন্ধুদের আগমন ছিল অবিরত, আমার মা কোনোদিন কাউকে না খাইয়ে ছাড়েনি। কিন্তু পরে দেখি সব সার্থপর, কারণ তারা সরে গেছে, কোনোদিন ফিরেও তাকায় নি। কোনোদিন জিজ্ঞাসাও করেনি, বেঁচে আছিস?? না খেয়ে পড়ে আছিস।
আমি বা আমার বাবা মা বেঁচে ছিলুম শুধু jimbow কে সম্বল করে। ওই আমাদের সম্পত্তি ছিল। ওই আমাদের সবকিছু ছিল। কিন্তু সেটাও অনেক লোক দেখতে পেত না। আমি মা কে বলেছিলুম আমি যখন সব কিছু সামলে নেব তখন আমাকে ময়দার লুচি আর আলুরদোম সঙ্গে একটু বেগুন ভাজা করে দিও, তাহলে আমি সব অতীতের কষ্ট ভুলে যাব, কিন্তু ভাগ্যের ফেরে মা এর হাত থেকে সেটা কোনোদিন আর পেলাম না। আজ রাস্তাতে chole bature খেতে গিয়ে সেটা মনে পড়ল। হ্যাঁ আমি পারতাম এখন সেখানে মানে বেলঘরিয়া তে গিয়ে লোকজনদের ভালোমত শিক্ষা দিয়ে আসতে, কিন্তু না আমি আর কোনোদিন ওই জায়গা তে পা ফেলতে চাইনি। যে জায়গা আমার জীবনের 5 বছর কেড়ে নিয়েছে সেখানে গিয়ে সেখানকার হাওয়া থেকে নিঃশ্বাস নেওয়ায় টাও যে সম্ভব নয়।
আমি জানি ওখানের অলমোস্ট সবাই ছিল খারাপ, কারণ কেউ আসেনি তখন বাবা মা বা আমার সমর্থনে, শুধু পেয়েছিলাম ওই এক চারপেয়ে ভাই এর ভালোবাসা।
হ্যাঁ তবে একদিন যাব। কারণ অতীত আমাকে ভুলে গেলেও ওখানে নাম আমার এ খোদাই করা আছে। কিছু জিনিস মানুষ ভুলবে না, তেমনি আমি যতদিন বেঁচে আছি, ওখানকার লোকজন যারা জানে, যারা ওই ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল, যারা আমাকে ভুলে গেছিল, যারা আমার পরিবারকে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল, সবসময় মনে রাখবে, ভয় পাবে, কোনোদিন না কোনোদিন সত্যি যদি কেউ হেঁটে চলে আছে সেই জগদ্ধাত্রী মন্দিরের সামনে, সেই পুকুরের সামনে, সে রাস্তার সামনে। তখন কি জবাব থাকবে।
হিন্দীতে একটা প্রবাদ আছে, ভগবানকে ঘর পে দের হে, পর অন্ধেরা নেহি।
শুধু সমস্যা হলো, আমি নিজেও জানি না সেই ফেরা কবে হবে। কারণ দেশ তো ছাড়ছি, কারও বাপের পয়সায় নয়, নিজে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পারব কি ফিরতে। আর যদিও বা ফিরি, জানি না প্রতিহিংসার আগুন যেটা এখনো জ্বলছে সেটা কি বুজিয়ে দেব না ধিক ধিক করে জ্বলতে দেব, কারণ ওটাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।তারওপর যেটা অনেকে জানে না, আমি কোন কাজে যুক্ত হচ্ছি লন্ডন এ। বলতে তো পারব না কিন্তু হয়ত আর 7 কি 10 বছর পর পাবলিক এমনি ই জানতে পারবে। তখন ই না হয় ফিরব। না ফেরার দেশে। নিয়ে নিতে সেই খোদাই করা বাড়ির ফলক, যেটা হয়ত ঐখানে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে মীরজাফরদের পায়ের তলায়, ধুলো ধূসরিত হয়ে।