
05/07/2025
#মেঘালয়ে_কালো_ছায়া
ভ্রমণ কাহিনী (পর্ব - ২)
টানা ছাব্বিশ ঘন্টা বাইক চালানোর ফলে শরীর খুব দুর্বল ছিল। গতকাল রাতে শুধু বিছানায় শুয়েছিলাম, এইটুকুই মনে আছে। ইচ্ছা করেই আজ বেশি সকালে অ্যালার্ম দিইনি। আজ সকালে ঘুম ভাঙলো আটটায়।
আজ সকালে কামাখ্যা মায়ের মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তাড়াতাড়ি স্নান করে, পরিষ্কার জামা প্যান্ট পড়ে বেরিয়ে পড়লাম পুজো দেওয়ার উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে মন্দিরের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার হওয়ায়, খালি পায়েই হেঁটে মন্দিরে পৌঁছে গেলাম।
কিন্তু মন্দিরের সদর দরজার সামনে এসেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। এখানেও সেই একই ব্যবসায়িক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। আপনি পকেট থেকে টাকা বার করে দিতে পারলেই, আপনি হয়ে যাবেন স্বঘোষিত VIP। আর তা না হলে আপনি একান্তই সাধারন মানুষ। সাধারণ মানুষদের এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দিতে কমপক্ষে সময় লাগবে চার ঘন্টা। এই পরিস্থিতিতে স্বঘোষিত VIP-দের সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট।
এই ব্যবস্থাপনা আমি মেনে নিতে পারি না। যার কারণে আমি দূর থেকেই ভগবানের আশীর্বাদ প্রার্থনা করি।
প্রত্যেক মন্দিরের মতোই এখানেও বাইরে প্রচুর পুজোর সমগ্রির দোকান। আমি এখান থেকে এক বাক্স প্যারা প্রসাদ কিনে মন্দির চত্বরে প্রবেশ করলাম। অনেকটা জায়গা জুড়ে বিশাল মন্দির নয় যদিও। কিন্তু মন্দিরের প্রত্যেক জায়গায় যেন এক অভাবনীয় পবিত্র শান্তি বিরাজ করছে। কঠোর মানসিকতার মানুষও এখানে নমনীয় হয়ে যেতে বাধ্য।
মন্দিরের পিলারের খাঁজে খাঁজে প্রচুর পায়রা বসবাস করে। একমাত্র শান্তি ও পবিত্র জায়গাতেই পায়রা বসবাস করে। এখানে এত পায়রা থাকার আরো একটা কারণ আছে। মা কামাখ্যার কাছে অনেকে পায়রা মানসিক করে। এবং এই মন্দির চত্বরে পায়রা দান করে যায়। এই মন্দিরে অতীতে বলি প্রথার চল থাকলেও, বর্তমানে মনে হয়েছে তা বন্ধ আছে।
মন্দিরের ভিতরে ঢোকার অনেক রাস্তা আছে। কিন্তু মা কামাখ্যাকে স্পর্শ করতে হলে লাইনে দাঁড়াতেই হবে। লাইনে না দাঁড়ালে শুধুমাত্র দূর থেকে মা কামাখ্যাকে দর্শন করা যাবে। দূর থেকেও মা কামাখ্যাকে যথেষ্ট সুন্দরভাবে দর্শন করা যায়।
আমার নীতি অনুযায়ী, আমি দূর থেকেই নিজে নিজে মায়ের পুজো দিয়ে মায়ের আশীর্বাদ প্রার্থনা করলাম।
মেইন মন্দিরের আশেপাশে আরো ছোট ছোট অনেকগুলি মন্দির আছে। যেখানে বিরাজ করছেন বিভিন্ন দেব দেবী। মন্দিরের ডান দিকের দেওয়ালে আছে একটা গণেশ মূর্তি। মানুষজন তাতে টাকা-পয়সা দিয়ে এমন ভাবে অলঙ্কারিত করেছে, যা সত্যিই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
মন্দির চত্বরের পশ্চিম দিকে রয়েছে আর একটা দরজা। সেই দরজা দিয়ে কিছুটা গেলে দূর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদী দেখা যায়।
এখন বাজে ৯.৩০। কিন্তু এখনো বিপ্লবদাদের কোন খবর নেই। আমি যখন হোটেল থেকে মন্দিরের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলাম, তখন একবার ফোন করেছিলাম। তখনো ওরা ঘুমাচ্ছিল। আমি আবার পুনরায় ফোন করলাম।
১৫ মিনিটের মধ্যে ওরাও মন্দিরে প্রবেশ করলো। ওদের সঙ্গেও বেশ কিছুটা সময় কাটালাম মন্দির চত্বরে। তারপর একসঙ্গে বেরিয়ে আসলাম মন্দির থেকে। আজ আমাদের পরিকল্পনা আছে শিলং পর্যন্ত যাওয়ার।
এই মুহূর্তে বিপ্লবদা বললো, "চলো ব্রেকফাস্ট করে নিই।"
আমিও সকাল থেকে কিছু খাইনি। খুব খিদে পেয়েছিল। এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। একটা বড় রেস্টুরেন্ট দেখে ভিতরে প্রবেশ করলাম। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করতেই বিপ্লবদা বললো, "তুমি ব্রেকফাস্ট করে নাও। আমাদের এখনো ব্যাগ গোছানো হয়নি। আমরা বরং ব্যাগ গুছিয়ে, বেরোনোর সময় ব্রেকফাস্ট করে নেবো।"
অগত্যা ওদের বিদায় দিয়ে আমাকে একা একাই ব্রেকফাস্ট করতে হলো। এখানে একটা মজার জিনিস হলো, এরা পেঁয়াজকেও নিরামিষ ধরে। এই রোড ট্রিপ একসঙ্গে করার কথা থাকলেও, কোনো কিছুই যেন একসঙ্গে হচ্ছে না।
ব্রেকফাস্ট করে হোটেলে ঢুকতেই বিপ্লবদার ফোন। এর মধ্যেই ওরা বেরিয়ে পড়েছে। এত তাড়াতাড়ি ওদের কি করে হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। বাধ্য হয়ে আমি তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছাতে লাগলাম।
ব্যাগ গুছিয়ে বাইকের কাছে এসে বিপ্লবদাকে ফোন করলাম। জানতে পারলাম ওরা এর মধ্যেই পাহাড় থেকে নেমে গেছে। মেইন রোডে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমিও তাড়াতাড়ি বাইকে ব্যাগ বেঁধে রওনা দিলাম।
গতকাল সন্ধ্যাবেলা অন্ধকারের কারণে পাহাড়ে বাইক চালানো উপভোগ করতে পারিনি। এখন সেই ঘাটতি সুদে আসলে পূরণ করে নিচ্ছি। যদিও এই পাহাড়টা খুব বড় নয়।
মেইন রোডে এসে ওদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গুয়াহাটি শহর থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। কারণ দুপুরবেলা এখানে বড্ড গরম। গুগল মাসির ভরসায় আমরা বাইক ছুটিয়ে দিলাম।
বেশ কিছুক্ষণ সময় আমরা ব্রহ্মপুত্র নদী ধার দিয়ে বাইক চালালাম। তারপর হঠাৎ একটা বাজারে ওরা দাঁড়িয়ে গেল।
ওরা এই ট্রিপে বাইকেই ছোট গ্যাস ওভেন,চাল, ডাল সব নিয়ে এসেছে। গতরাতে ওরা রান্না করে খেয়েছিল। কিছুটা ভাত বেচে গেছিলো, ওটা সকালে ভিজা ভাত করে খেয়ে নিয়েছে। ওতেই ওদের ব্রেকফাস্ট হয়ে গেছে। এখন ওরা লাঞ্চ করবে।
আমি খুবই হতাশ হলাম। আমি জাস্ট কিছুক্ষণ আগেই ব্রেকফাস্ট করেছি। এখন কোনো মতেই লাঞ্চ করা সম্ভব নয়। ভালোমতোই বুঝতে পারছি আজ আর লাঞ্চ ভাগ্যে জুটবে না। বাধ্য হয়েই ফুটপাতে গরমের মধ্যে ওদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
প্রায় ৩০ মিনিট পর আবার শুরু হলো আমাদের রাইড। এদিকে আমার বাইক লো ফুয়েল ইন্ডিকেট করছে। বুঝতে পারলাম এবার বাইককে পেট্রোল খাওয়াতে হবে।
ইন্ডিকেটর দিয়ে পেট্রোল পাম্পে প্রবেশ করতেই, হুশ করে ওরা বেরিয়ে গেলো। আমি বেশ কিছু বার হর্ন বাজালাম। কিন্তু কোন লাভ হলো না।
বাইকে তেল ভরে আবার শুরু হলো আমার একাকী রাইড। গুয়াহাটি শহরের গায়েই মেঘালয় বর্ডার। যার কারণে গুয়াহাটি শহর থেকে বেরোতেই ঢুকে গেলাম মেঘালয় রাজ্যে।
গুয়াহাটি শহরটা ছিল পাহাড়ে ঘেরা একটি উপত্যকা শহর। গুয়াহাটি থেকে বেরোতেই শুরু হয়ে গেল ছোট ছোট পাহাড়। এবার ধীরে ধীরে পরিবেশ মনোরম হতে শুরু করল। শুরু হয়ে গেল পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা। ধীরে ধীরে তাপমাত্রাও হ্রাস পেতে শুরু করলো।
এখানে পাহাড় খুব একটা বড় বড় নয়। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই চিত্তাকর্ষক। রাস্তার ধারের কিছু কিছু ফরেস্ট এলাকা থেকে অদ্ভুত একরকম ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের মতো শোনা যাচ্ছে। যা এক নৈসর্গিক পরিবেশ সৃষ্টি করছেন।
এমনই এক রাস্তার বাঁকে বিপ্লবদা দের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। শুরু হলো আবার একসঙ্গে পথ চলা। হঠাৎ রাস্তার বাঁদিকে দেখলাম মেঘালয় বায়োলজিক্যাল পার্কের একটা বড় দরজা। ভিতরে কি আছে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। কিছুটা খাড়াই পথ অতিক্রম করে আমরা পৌঁছে গেলাম মেইন বিল্ডিং এর টিকিট কাউন্টারের সামনে। এখানে পার্কিংয়ের কোন সমস্যা নেই। যথেষ্ট বড় ফ্রী পার্কিং।
এখানে ঢোকার টিকিট মাথাপিছু ২৫ টাকা। কিন্তু ভেতর থেকে আগত টুরিস্টদের থেকে জানতে পারলাম, ভিতরে তেমন কিছুই নেই। শুধু নামেই বায়োলজিক্যাল পার্ক।ভিতরটা জাস্ট একটা নর্মাল পার্কের মত। জীব বৈচিত্র দেখার সৌভাগ্য এখানে হবে না।
প্রায় বিকাল হয়ে গেছে। আমাদের হাতে সময় কম আছে। এখনো যেতে হবে অনেকটা রাস্তা। যার কারণে শুধুমাত্র পার্ক দেখে সময় নষ্ট করতে একদমই ইচ্ছা হল না। আশেপাশের এলাকাটা একটু ঘুরে, পুনরায় নেমে আসলাম মেইন রোডে।
কিছুটা এগোতেই দেখলাম, রাস্তার বাঁদিকে এক জায়গায় এস্কাভেটরের মাধ্যমে পাহাড়ের গা থেকে লালমাটি কেটে লরিতে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। এটা দেখে খুবই হতাশ হলাম। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো ভবিষ্যতে এখানে কোন পাহাড়ই দেখতে পাবে না।
হতাশা নিয়ে কিছুটা এগোতেই ডান দিকের দৃশ্য দেখে মনটা পুনরায় বিস্ময়ে আবিষ্ট হলো। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি পাহাড়ে ঘেরা এক বিশাল জলাধার।
এটার নাম উমিয়াম লেক। এটা পাহাড়ে ঘেরা একটা কৃত্রিম লেক। এটি উমিয়াম-উমট্টু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অংশ। উমিয়াম নদীর জল থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করার উদ্দেশ্যে এই উমিয়াম লেক তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে যা টুরিস্টদের বিশেষ আকর্ষণ।
সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি, এই লেকের জলের কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়। জাস্ট উপরের রাস্তা থেকেই এই লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হবে। কিন্তু আমার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া কোনমতেই সম্ভব নয়। যেমন করেই হোক আমাকে জলের কাছে পৌঁছাতেই হবে। তা না হলে এর পরিপূর্ণ সুষমা অধরা থেকে যাবে।
আমি লেকের গা বরাবর ডান পাশের রাস্তা দিয়ে এগোতে লাগলাম। রাস্তা ও লেকের মাঝে রয়েছে বেশ কিছুটা ফরেস্ট এলাকা। হঠাৎ আমার নজরে পড়ল গাছপালার বেশ কিছুটা গভীরে একটা লাল রেখা। এর অর্থ এখান দিয়ে লোকজন যাতায়াত করে। আমি এবার সেই রাস্তাটা অনুসরণ করে ফরেস্টের ভেতর ঢুকে পড়লাম। রাস্তাটা যথেষ্ট এবড়ো খেবড়ো। মানুষের যাতায়াত করার জন্য কোনরকমে এই রাস্তা বানিয়েছে। বড় বড় পাথর মাথা বার করে রয়েছে। আবার কোথাও রয়েছে মাটির বড় গর্ত।
আমার পিছনে পিছনে বিপ্লবদাও সাহস করে আসছে। এই ভয়ানক রাস্তায় আমাদের বাইক লংজাম্প, হাইজাম্প মারতে মারতে অবশেষে এসে পৌছালাম লেকের জলের কাছে। এখানে এসে দেখলাম আমাদের মত আরও অনেকেই এখানে আছে। তবে কেউ টুরিস্ট নয়। সবাই এখানকার লোকাল। এরা সবাই এসেছে এখানে মাছ ধরতে। কয়েকশো ছিপ বা তারও বেশি এখানে বসানো আছে মাছ ধরার জন্য। এ এক অদ্ভুত কর্মযজ্ঞ। বুঝতে পারলাম এটাই এদের প্রফেশন।
সারাদিন এরা এখানেই থাকে। রান্নাবান্নার হাঁড়ি, কড়াইও এখানে রয়েছে। এক অদ্ভুত লাইফ স্টাইল এদের। যদিও আমাদের দেখে এরা কেউই বিরক্ত হলো না। বরং বিস্মৃত হল, আমরা কিভাবে এই রাস্তা খুঁজে পেলাম ভেবে।
এখান থেকে পড়ন্ত বিকালের এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সাক্ষী থাকলাম আমরা। পাহাড়ে ঘেরা এই মনোরম লেকের জলের পাশে বসে, পশ্চিমের কমলা আকাশে লাল টকটকে সূর্যের অস্তাগমণ এক আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।
পুরোপুরি সূর্যাস্ত হওয়ার পূর্বেই আমরা পুনরায় ফরেস্ট থেকে বেরিয়ে আসলাম। কিছুটা এগোতেই লেকের পাশে দেখতে পেলাম বেশ কিছু স্ট্রীট ফুডের স্টল। পাশেই রয়েছে একটা ব্রিজ। এই ব্রিজ পার হয়েই আমাদের যেতে হবে শিলং।
শিলং পৌঁছাতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে। সকালে ব্রেকফাস্টের পর এখনো পর্যন্ত পেটে কোন দানাপানি পড়েনি। এখানে কিছু খেয়ে না নিলে সমস্যা হতে পারে। ডিনার কখন হবে, কি হবে তারও কোনো ঠিক নেই।
আমি একটা ভুট্টার অর্ডার দিলাম। ওদিকে বিপ্লবদা আর ওর বান্ধবী ব্রিজে গেল ফটোশুট করতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা ফিরে আসলো। এখানে সবুজ রঙের গোল গোল এক ধরনের ফল পাওয়া যাচ্ছে। বিপ্লব দা একটা ফল মুখে দিয়েই কেমন একটা শরীর ঝাঁকিয়ে লাফিয়ে উঠলো। মনে হলো হাতির কানে কেউ সুড়সুড়ি দিয়ে দিয়েছে। বুঝতে পারলাম ফলটা ভীষণ টক।
এরপর বীরত্ব দেখাতে এগিয়ে আসলো বিপ্লবদার বান্ধবী। সেও স্মার্টলি হাতে তুলে নিলো একটা ফল। এরপর দিলো এক কামড়। তারপরেই চোখ বড় বড় করে "এই যাআআআ" বলে দৌড় লাগলো ব্রিজের দিকে। অকস্মাৎ এই ঘটনায় আমরা হতবম্বের মতো দু সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে, আমরাও দৌড়ালাম ওর পিছনে। ফল খেয়ে কি মাথার তার কেটে গেলো!
ব্রিজে পৌঁছে বুঝতে পারলাম একটা কান্ড ঘটে গেছে। এখানে ছবি তোলার সময় বিপ্লবদার বান্ধবী কাঁধের ব্যাগটা সাইনবোর্ডের রডে আটকে রেখেছিল। যেটা এখন মিসিং। বেশ কিছুক্ষণ চলল খোঁজাখুঁজি। অবশেষে ব্যাগের মায়া ত্যাগ করে পুনরায় বাইকের কাছে ফিরে আসলাম। বিপ্লবদার বান্ধবীর চোখে মুখে কাঁদো কাঁদো ভাব।
এখানেই অন্ধকার হয়ে গেল। এখনো আমাদের যেতে হবে প্রায় ১৮ কিলোমিটার। শিলং পৌঁছে হোটেল বুক করতে হবে। তারপর একটু রেস্ট নিতে পারবো।
মাঝ রাস্তায় বেস্ট কিছু গেস্ট হাউস পেলাম। কিন্তু বিপ্লবদা বলল শিলং-এর পুলিশ বাজারে থাকবে। ওখানে প্রচুর হোটেল আছে।
শিলং পৌঁছাতেই যথেষ্ট ঠান্ডা লাগছে। হঠাৎ করে তাপমাত্রা যেন অনেকটাই নেমে গেছে। মোটা জ্যাকেট ব্যাগের মধ্যে আছে। আর ব্যাগ বাঁধা রয়েছে বাইকে। এখন ব্যাগ থেকে জ্যাকেট বার করাও কষ্টকর ব্যাপার। বাধ্য হয়ে তাড়াতাড়ি হোটেল খুঁজতে লাগলাম।
পুলিশ বাজারে প্রচুর হোটেল আছে ঠিক কথাই, কিন্তু কোন হোটেলেই বাইক রাখার সুন্দর ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়েই পুনরায় পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। মাঝ রাস্তায় ইউথ হোস্টেল পেলাম। কিন্তু বিপ্লবদার সঙ্গে বান্ধবী থাকায় ওখানে আমাদের রুম দিলো না।
প্রায় ৮ কিলোমিটার পিছিয়ে এসে একটা সুন্দর গেস্ট হাউস পেলাম। এখানে বিপ্লবদাদের ঘরের ভাড়া বললো ১৬০০ টাকা। আর আমার একার জন্য বললো ১২০০ টাকা। বিপ্লবদা অনেক চেষ্টা করলো রাউন্ড ফিগারে দুটো রুমের জন্য ২৬০০ টাকা করার। কিন্তু গেস্ট হাউসের মালিক রাজি হলো না।
বিপ্লবদা খাবার বানানোর কিছু সামগ্রী বাইকে করে নিয়ে এসেছে। ঠিক হলো আজকে নিজেরাই রান্না করে নেব। ওরা রান্নার ব্যবস্থা করতে লাগলো। আমি নিচের দোকান থেকে জল ও ডিম কিনে আনলাম। সুন্দরভাবে হয়ে গেল আমাদের ডিনার প্রস্তুত। ভাত আর ডিমের ঝোল। সারাদিন তেমন কিছু না খেয়ে পেটে ব্যথা শুরু হয়ে গেছিল। এই খাবার যেন অমৃত লাগলো।
খাওয়া দাওয়া শেষে নিজের ঘরে চলে আসলাম। এখানে যথেষ্ট ঠান্ডা আছে। শরীরও খুব ক্লান্ত। বুঝতেই পারছি একটা দারুণ ঘুম হবে। ঘুমের লোভে মোবাইলে আর অ্যালার্ম দিলাম না। কম্বলটা টেনে নিয়ে বিছানায় শুতেই মাথাটা যেন হালকা হয়ে গেল।
** আমার ভ্রমণ কাহিনী ভিডিও ফর্মে পেতে "Arindam NBD" ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করুন।
** এই ভ্রমণ সিরিজের প্রত্যেকটা পার্ট সহজে পেতে #মেঘালয়ে_কালো_ছায়া বা লিখে সার্চ করুন।
#ভ্রমণকাহিনী #শিলং #কামাখ্যা_মন্দির