Arindam NBD

Arindam NBD Stories,Novels,Travel stories,Personal Blogs,Photography,Videography,Personal opinions etc.

 #মেঘালয়ে_কালো_ছায়া ভ্রমণ কাহিনী (পর্ব - ২)টানা ছাব্বিশ ঘন্টা বাইক চালানোর ফলে শরীর খুব দুর্বল ছিল। গতকাল রাতে শুধু বি...
05/07/2025

#মেঘালয়ে_কালো_ছায়া
ভ্রমণ কাহিনী (পর্ব - ২)
টানা ছাব্বিশ ঘন্টা বাইক চালানোর ফলে শরীর খুব দুর্বল ছিল। গতকাল রাতে শুধু বিছানায় শুয়েছিলাম, এইটুকুই মনে আছে। ইচ্ছা করেই আজ বেশি সকালে অ্যালার্ম দিইনি। আজ সকালে ঘুম ভাঙলো আটটায়।

আজ সকালে কামাখ্যা মায়ের মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তাড়াতাড়ি স্নান করে, পরিষ্কার জামা প্যান্ট পড়ে বেরিয়ে পড়লাম পুজো দেওয়ার উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে মন্দিরের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার হওয়ায়, খালি পায়েই হেঁটে মন্দিরে পৌঁছে গেলাম।

কিন্তু মন্দিরের সদর দরজার সামনে এসেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। এখানেও সেই একই ব্যবসায়িক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। আপনি পকেট থেকে টাকা বার করে দিতে পারলেই, আপনি হয়ে যাবেন স্বঘোষিত VIP। আর তা না হলে আপনি একান্তই সাধারন মানুষ। সাধারণ মানুষদের এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দিতে কমপক্ষে সময় লাগবে চার ঘন্টা। এই পরিস্থিতিতে স্বঘোষিত VIP-দের সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট।

এই ব্যবস্থাপনা আমি মেনে নিতে পারি না। যার কারণে আমি দূর থেকেই ভগবানের আশীর্বাদ প্রার্থনা করি।

প্রত্যেক মন্দিরের মতোই এখানেও বাইরে প্রচুর পুজোর সমগ্রির দোকান। আমি এখান থেকে এক বাক্স প্যারা প্রসাদ কিনে মন্দির চত্বরে প্রবেশ করলাম। অনেকটা জায়গা জুড়ে বিশাল মন্দির নয় যদিও। কিন্তু মন্দিরের প্রত্যেক জায়গায় যেন এক অভাবনীয় পবিত্র শান্তি বিরাজ করছে। কঠোর মানসিকতার মানুষও এখানে নমনীয় হয়ে যেতে বাধ্য।

মন্দিরের পিলারের খাঁজে খাঁজে প্রচুর পায়রা বসবাস করে। একমাত্র শান্তি ও পবিত্র জায়গাতেই পায়রা বসবাস করে। এখানে এত পায়রা থাকার আরো একটা কারণ আছে। মা কামাখ্যার কাছে অনেকে পায়রা মানসিক করে। এবং এই মন্দির চত্বরে পায়রা দান করে যায়। এই মন্দিরে অতীতে বলি প্রথার চল থাকলেও, বর্তমানে মনে হয়েছে তা বন্ধ আছে।

মন্দিরের ভিতরে ঢোকার অনেক রাস্তা আছে। কিন্তু মা কামাখ্যাকে স্পর্শ করতে হলে লাইনে দাঁড়াতেই হবে। লাইনে না দাঁড়ালে শুধুমাত্র দূর থেকে মা কামাখ্যাকে দর্শন করা যাবে। দূর থেকেও মা কামাখ্যাকে যথেষ্ট সুন্দরভাবে দর্শন করা যায়।

আমার নীতি অনুযায়ী, আমি দূর থেকেই নিজে নিজে মায়ের পুজো দিয়ে মায়ের আশীর্বাদ প্রার্থনা করলাম।

মেইন মন্দিরের আশেপাশে আরো ছোট ছোট অনেকগুলি মন্দির আছে। যেখানে বিরাজ করছেন বিভিন্ন দেব দেবী। মন্দিরের ডান দিকের দেওয়ালে আছে একটা গণেশ মূর্তি। মানুষজন তাতে টাকা-পয়সা দিয়ে এমন ভাবে অলঙ্কারিত করেছে, যা সত্যিই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

মন্দির চত্বরের পশ্চিম দিকে রয়েছে আর একটা দরজা। সেই দরজা দিয়ে কিছুটা গেলে দূর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদী দেখা যায়।

এখন বাজে ৯.৩০। কিন্তু এখনো বিপ্লবদাদের কোন খবর নেই। আমি যখন হোটেল থেকে মন্দিরের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলাম, তখন একবার ফোন করেছিলাম। তখনো ওরা ঘুমাচ্ছিল। আমি আবার পুনরায় ফোন করলাম।

১৫ মিনিটের মধ্যে ওরাও মন্দিরে প্রবেশ করলো। ওদের সঙ্গেও বেশ কিছুটা সময় কাটালাম মন্দির চত্বরে। তারপর একসঙ্গে বেরিয়ে আসলাম মন্দির থেকে। আজ আমাদের পরিকল্পনা আছে শিলং পর্যন্ত যাওয়ার।

এই মুহূর্তে বিপ্লবদা বললো, "চলো ব্রেকফাস্ট করে নিই।"

আমিও সকাল থেকে কিছু খাইনি। খুব খিদে পেয়েছিল। এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। একটা বড় রেস্টুরেন্ট দেখে ভিতরে প্রবেশ করলাম। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করতেই বিপ্লবদা বললো, "তুমি ব্রেকফাস্ট করে নাও। আমাদের এখনো ব্যাগ গোছানো হয়নি। আমরা বরং ব্যাগ গুছিয়ে, বেরোনোর সময় ব্রেকফাস্ট করে নেবো।"

অগত্যা ওদের বিদায় দিয়ে আমাকে একা একাই ব্রেকফাস্ট করতে হলো। এখানে একটা মজার জিনিস হলো, এরা পেঁয়াজকেও নিরামিষ ধরে। এই রোড ট্রিপ একসঙ্গে করার কথা থাকলেও, কোনো কিছুই যেন একসঙ্গে হচ্ছে না।

ব্রেকফাস্ট করে হোটেলে ঢুকতেই বিপ্লবদার ফোন। এর মধ্যেই ওরা বেরিয়ে পড়েছে। এত তাড়াতাড়ি ওদের কি করে হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। বাধ্য হয়ে আমি তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছাতে লাগলাম।

ব্যাগ গুছিয়ে বাইকের কাছে এসে বিপ্লবদাকে ফোন করলাম। জানতে পারলাম ওরা এর মধ্যেই পাহাড় থেকে নেমে গেছে। মেইন রোডে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমিও তাড়াতাড়ি বাইকে ব্যাগ বেঁধে রওনা দিলাম।

গতকাল সন্ধ্যাবেলা অন্ধকারের কারণে পাহাড়ে বাইক চালানো উপভোগ করতে পারিনি। এখন সেই ঘাটতি সুদে আসলে পূরণ করে নিচ্ছি। যদিও এই পাহাড়টা খুব বড় নয়।

মেইন রোডে এসে ওদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গুয়াহাটি শহর থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। কারণ দুপুরবেলা এখানে বড্ড গরম। গুগল মাসির ভরসায় আমরা বাইক ছুটিয়ে দিলাম।

বেশ কিছুক্ষণ সময় আমরা ব্রহ্মপুত্র নদী ধার দিয়ে বাইক চালালাম। তারপর হঠাৎ একটা বাজারে ওরা দাঁড়িয়ে গেল।

ওরা এই ট্রিপে বাইকেই ছোট গ্যাস ওভেন,চাল, ডাল সব নিয়ে এসেছে। গতরাতে ওরা রান্না করে খেয়েছিল। কিছুটা ভাত বেচে গেছিলো, ওটা সকালে ভিজা ভাত করে খেয়ে নিয়েছে। ওতেই ওদের ব্রেকফাস্ট হয়ে গেছে। এখন ওরা লাঞ্চ করবে।

আমি খুবই হতাশ হলাম। আমি জাস্ট কিছুক্ষণ আগেই ব্রেকফাস্ট করেছি। এখন কোনো মতেই লাঞ্চ করা সম্ভব নয়। ভালোমতোই বুঝতে পারছি আজ আর লাঞ্চ ভাগ্যে জুটবে না। বাধ্য হয়েই ফুটপাতে গরমের মধ্যে ওদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

প্রায় ৩০ মিনিট পর আবার শুরু হলো আমাদের রাইড। এদিকে আমার বাইক লো ফুয়েল ইন্ডিকেট করছে। বুঝতে পারলাম এবার বাইককে পেট্রোল খাওয়াতে হবে।

ইন্ডিকেটর দিয়ে পেট্রোল পাম্পে প্রবেশ করতেই, হুশ করে ওরা বেরিয়ে গেলো। আমি বেশ কিছু বার হর্ন বাজালাম। কিন্তু কোন লাভ হলো না।

বাইকে তেল ভরে আবার শুরু হলো আমার একাকী রাইড। গুয়াহাটি শহরের গায়েই মেঘালয় বর্ডার। যার কারণে গুয়াহাটি শহর থেকে বেরোতেই ঢুকে গেলাম মেঘালয় রাজ্যে।

গুয়াহাটি শহরটা ছিল পাহাড়ে ঘেরা একটি উপত্যকা শহর। গুয়াহাটি থেকে বেরোতেই শুরু হয়ে গেল ছোট ছোট পাহাড়। এবার ধীরে ধীরে পরিবেশ মনোরম হতে শুরু করল। শুরু হয়ে গেল পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা। ধীরে ধীরে তাপমাত্রাও হ্রাস পেতে শুরু করলো।

এখানে পাহাড় খুব একটা বড় বড় নয়। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই চিত্তাকর্ষক। রাস্তার ধারের কিছু কিছু ফরেস্ট এলাকা থেকে অদ্ভুত একরকম ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের মতো শোনা যাচ্ছে। যা এক নৈসর্গিক পরিবেশ সৃষ্টি করছেন।

এমনই এক রাস্তার বাঁকে বিপ্লবদা দের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। শুরু হলো আবার একসঙ্গে পথ চলা। হঠাৎ রাস্তার বাঁদিকে দেখলাম মেঘালয় বায়োলজিক্যাল পার্কের একটা বড় দরজা। ভিতরে কি আছে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। কিছুটা খাড়াই পথ অতিক্রম করে আমরা পৌঁছে গেলাম মেইন বিল্ডিং এর টিকিট কাউন্টারের সামনে। এখানে পার্কিংয়ের কোন সমস্যা নেই। যথেষ্ট বড় ফ্রী পার্কিং।

এখানে ঢোকার টিকিট মাথাপিছু ২৫ টাকা। কিন্তু ভেতর থেকে আগত টুরিস্টদের থেকে জানতে পারলাম, ভিতরে তেমন কিছুই নেই। শুধু নামেই বায়োলজিক্যাল পার্ক।ভিতরটা জাস্ট একটা নর্মাল পার্কের মত। জীব বৈচিত্র দেখার সৌভাগ্য এখানে হবে না।

প্রায় বিকাল হয়ে গেছে। আমাদের হাতে সময় কম আছে। এখনো যেতে হবে অনেকটা রাস্তা। যার কারণে শুধুমাত্র পার্ক দেখে সময় নষ্ট করতে একদমই ইচ্ছা হল না। আশেপাশের এলাকাটা একটু ঘুরে, পুনরায় নেমে আসলাম মেইন রোডে।

কিছুটা এগোতেই দেখলাম, রাস্তার বাঁদিকে এক জায়গায় এস্কাভেটরের মাধ্যমে পাহাড়ের গা থেকে লালমাটি কেটে লরিতে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। এটা দেখে খুবই হতাশ হলাম। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো ভবিষ্যতে এখানে কোন পাহাড়ই দেখতে পাবে না।

হতাশা নিয়ে কিছুটা এগোতেই ডান দিকের দৃশ্য দেখে মনটা পুনরায় বিস্ময়ে আবিষ্ট হলো। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি পাহাড়ে ঘেরা এক বিশাল জলাধার।

এটার নাম উমিয়াম লেক। এটা পাহাড়ে ঘেরা একটা কৃত্রিম লেক। এটি উমিয়াম-উমট্টু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অংশ। উমিয়াম নদীর জল থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করার উদ্দেশ্যে এই উমিয়াম লেক তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে যা টুরিস্টদের বিশেষ আকর্ষণ।

সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি, এই লেকের জলের কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়। জাস্ট উপরের রাস্তা থেকেই এই লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হবে। কিন্তু আমার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া কোনমতেই সম্ভব নয়। যেমন করেই হোক আমাকে জলের কাছে পৌঁছাতেই হবে। তা না হলে এর পরিপূর্ণ সুষমা অধরা থেকে যাবে।

আমি লেকের গা বরাবর ডান পাশের রাস্তা দিয়ে এগোতে লাগলাম। রাস্তা ও লেকের মাঝে রয়েছে বেশ কিছুটা ফরেস্ট এলাকা। হঠাৎ আমার নজরে পড়ল গাছপালার বেশ কিছুটা গভীরে একটা লাল রেখা। এর অর্থ এখান দিয়ে লোকজন যাতায়াত করে। আমি এবার সেই রাস্তাটা অনুসরণ করে ফরেস্টের ভেতর ঢুকে পড়লাম। রাস্তাটা যথেষ্ট এবড়ো খেবড়ো। মানুষের যাতায়াত করার জন্য কোনরকমে এই রাস্তা বানিয়েছে। বড় বড় পাথর মাথা বার করে রয়েছে। আবার কোথাও রয়েছে মাটির বড় গর্ত।

আমার পিছনে পিছনে বিপ্লবদাও সাহস করে আসছে। এই ভয়ানক রাস্তায় আমাদের বাইক লংজাম্প, হাইজাম্প মারতে মারতে অবশেষে এসে পৌছালাম লেকের জলের কাছে। এখানে এসে দেখলাম আমাদের মত আরও অনেকেই এখানে আছে। তবে কেউ টুরিস্ট নয়। সবাই এখানকার লোকাল। এরা সবাই এসেছে এখানে মাছ ধরতে। কয়েকশো ছিপ বা তারও বেশি এখানে বসানো আছে মাছ ধরার জন্য। এ এক অদ্ভুত কর্মযজ্ঞ। বুঝতে পারলাম এটাই এদের প্রফেশন।

সারাদিন এরা এখানেই থাকে। রান্নাবান্নার হাঁড়ি, কড়াইও এখানে রয়েছে। এক অদ্ভুত লাইফ স্টাইল এদের। যদিও আমাদের দেখে এরা কেউই বিরক্ত হলো না। বরং বিস্মৃত হল, আমরা কিভাবে এই রাস্তা খুঁজে পেলাম ভেবে।

এখান থেকে পড়ন্ত বিকালের এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সাক্ষী থাকলাম আমরা। পাহাড়ে ঘেরা এই মনোরম লেকের জলের পাশে বসে, পশ্চিমের কমলা আকাশে লাল টকটকে সূর্যের অস্তাগমণ এক আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।

পুরোপুরি সূর্যাস্ত হওয়ার পূর্বেই আমরা পুনরায় ফরেস্ট থেকে বেরিয়ে আসলাম। কিছুটা এগোতেই লেকের পাশে দেখতে পেলাম বেশ কিছু স্ট্রীট ফুডের স্টল। পাশেই রয়েছে একটা ব্রিজ। এই ব্রিজ পার হয়েই আমাদের যেতে হবে শিলং।

শিলং পৌঁছাতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে। সকালে ব্রেকফাস্টের পর এখনো পর্যন্ত পেটে কোন দানাপানি পড়েনি। এখানে কিছু খেয়ে না নিলে সমস্যা হতে পারে। ডিনার কখন হবে, কি হবে তারও কোনো ঠিক নেই।

আমি একটা ভুট্টার অর্ডার দিলাম। ওদিকে বিপ্লবদা আর ওর বান্ধবী ব্রিজে গেল ফটোশুট করতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা ফিরে আসলো। এখানে সবুজ রঙের গোল গোল এক ধরনের ফল পাওয়া যাচ্ছে। বিপ্লব দা একটা ফল মুখে দিয়েই কেমন একটা শরীর ঝাঁকিয়ে লাফিয়ে উঠলো। মনে হলো হাতির কানে কেউ সুড়সুড়ি দিয়ে দিয়েছে। বুঝতে পারলাম ফলটা ভীষণ টক।

এরপর বীরত্ব দেখাতে এগিয়ে আসলো বিপ্লবদার বান্ধবী। সেও স্মার্টলি হাতে তুলে নিলো একটা ফল। এরপর দিলো এক কামড়। তারপরেই চোখ বড় বড় করে "এই যাআআআ" বলে দৌড় লাগলো ব্রিজের দিকে। অকস্মাৎ এই ঘটনায় আমরা হতবম্বের মতো দু সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে, আমরাও দৌড়ালাম ওর পিছনে। ফল খেয়ে কি মাথার তার কেটে গেলো!

ব্রিজে পৌঁছে বুঝতে পারলাম একটা কান্ড ঘটে গেছে। এখানে ছবি তোলার সময় বিপ্লবদার বান্ধবী কাঁধের ব্যাগটা সাইনবোর্ডের রডে আটকে রেখেছিল। যেটা এখন মিসিং। বেশ কিছুক্ষণ চলল খোঁজাখুঁজি। অবশেষে ব্যাগের মায়া ত্যাগ করে পুনরায় বাইকের কাছে ফিরে আসলাম। বিপ্লবদার বান্ধবীর চোখে মুখে কাঁদো কাঁদো ভাব।

এখানেই অন্ধকার হয়ে গেল। এখনো আমাদের যেতে হবে প্রায় ১৮ কিলোমিটার। শিলং পৌঁছে হোটেল বুক করতে হবে। তারপর একটু রেস্ট নিতে পারবো।

মাঝ রাস্তায় বেস্ট কিছু গেস্ট হাউস পেলাম। কিন্তু বিপ্লবদা বলল শিলং-এর পুলিশ বাজারে থাকবে। ওখানে প্রচুর হোটেল আছে।

শিলং পৌঁছাতেই যথেষ্ট ঠান্ডা লাগছে। হঠাৎ করে তাপমাত্রা যেন অনেকটাই নেমে গেছে। মোটা জ্যাকেট ব্যাগের মধ্যে আছে। আর ব্যাগ বাঁধা রয়েছে বাইকে। এখন ব্যাগ থেকে জ্যাকেট বার করাও কষ্টকর ব্যাপার। বাধ্য হয়ে তাড়াতাড়ি হোটেল খুঁজতে লাগলাম।

পুলিশ বাজারে প্রচুর হোটেল আছে ঠিক কথাই, কিন্তু কোন হোটেলেই বাইক রাখার সুন্দর ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়েই পুনরায় পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। মাঝ রাস্তায় ইউথ হোস্টেল পেলাম। কিন্তু বিপ্লবদার সঙ্গে বান্ধবী থাকায় ওখানে আমাদের রুম দিলো না।

প্রায় ৮ কিলোমিটার পিছিয়ে এসে একটা সুন্দর গেস্ট হাউস পেলাম। এখানে বিপ্লবদাদের ঘরের ভাড়া বললো ১৬০০ টাকা। আর আমার একার জন্য বললো ১২০০ টাকা। বিপ্লবদা অনেক চেষ্টা করলো রাউন্ড ফিগারে দুটো রুমের জন্য ২৬০০ টাকা করার। কিন্তু গেস্ট হাউসের মালিক রাজি হলো না।

বিপ্লবদা খাবার বানানোর কিছু সামগ্রী বাইকে করে নিয়ে এসেছে। ঠিক হলো আজকে নিজেরাই রান্না করে নেব। ওরা রান্নার ব্যবস্থা করতে লাগলো। আমি নিচের দোকান থেকে জল ও ডিম কিনে আনলাম। সুন্দরভাবে হয়ে গেল আমাদের ডিনার প্রস্তুত। ভাত আর ডিমের ঝোল। সারাদিন তেমন কিছু না খেয়ে পেটে ব্যথা শুরু হয়ে গেছিল। এই খাবার যেন অমৃত লাগলো।

খাওয়া দাওয়া শেষে নিজের ঘরে চলে আসলাম। এখানে যথেষ্ট ঠান্ডা আছে। শরীরও খুব ক্লান্ত। বুঝতেই পারছি একটা দারুণ ঘুম হবে। ঘুমের লোভে মোবাইলে আর অ্যালার্ম দিলাম না। কম্বলটা টেনে নিয়ে বিছানায় শুতেই মাথাটা যেন হালকা হয়ে গেল।

** আমার ভ্রমণ কাহিনী ভিডিও ফর্মে পেতে "Arindam NBD" ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করুন।

** এই ভ্রমণ সিরিজের প্রত্যেকটা পার্ট সহজে পেতে #মেঘালয়ে_কালো_ছায়া বা লিখে সার্চ করুন।

#ভ্রমণকাহিনী #শিলং #কামাখ্যা_মন্দির

 #মেঘালয়ে_কালো_ছায়াভ্রমণ কাহিনী (পর্ব - ১)একটানা অফিস করে যাচ্ছি। যাতে কিছুদিন ছুটি ম্যানেজ করে কোথাও ঘুরতে যেতে পারি।...
28/06/2025

#মেঘালয়ে_কালো_ছায়া
ভ্রমণ কাহিনী (পর্ব - ১)
একটানা অফিস করে যাচ্ছি। যাতে কিছুদিন ছুটি ম্যানেজ করে কোথাও ঘুরতে যেতে পারি। কিন্তু কিছুতেই কোন প্ল্যান সঠিকভাবে হয়ে উঠছে না। সবার কর্মব্যস্ত জীবন। একসঙ্গে সবার সময় বার করাটাই সব থেকে কঠিন কাজ।

সন্ধ্যাবেলায় ঘরে বসে কাজ করছি, এমন সময় মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। মোবাইলের স্ক্রিনে দেখি বিপ্লবদার নাম্বার। শেয়ার মার্কেটের ডিলার হিসাবে আমি প্রথম চাকরি জীবন শুরু করেছিলাম। সেই সময়ে বিপ্লবদা আমার ক্লায়েন্ট ছিল। খুব ভালো সম্পর্ক ছিল সেই সময়। কিন্তু আমি কলকাতায় চলে আসার পর, অনেক বছর দেখা-সাক্ষাৎ নেই। কিন্তু মাঝেমধ্যে কথাবার্তা হয়।

আমি ফোনটা তুলে কয়েকটা কথা বলার পরেই বিপ্লবদা বলল, "মেঘালয় রাইড প্ল্যান করছি। চলো এক সঙ্গে ঘুরে আসি।"

আমিও কিছুদিনের জন্য কোথাও যাওয়ার জন্য ছটফট করছিলাম। যার কারনে বিপ্লবদার প্রস্তাব এক কথায় মেনে নিলাম।

কিছুদিন পরেই আমাদের রাইডিং গ্রুপের অরুণাচল যাওয়ার প্ল্যান আছে। সেই সময় আমরা মেঘালয়ও কিছুটা কভার করবো। তা সত্ত্বেও আমি বিপ্লবদার সঙ্গে মেঘালয় যেতে রাজি হয়ে গেলাম।

সমস্ত পরিকল্পনা প্রস্তুত। এমন সময় জানতে পারলাম বিপ্লবদা সঙ্গে ওর বান্ধবীকেও নিয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে নিজেকে "কাবাব মে হাড্ডি" ফিল হলো। বিপ্লবদা প্রতিশ্রুতি দিল কোন অসুবিধা হবে না। ওর বান্ধবীও খুব মিশুকে। তবুও মনের মধ্যে একটা কিন্তু থেকে গেল। যেহেতু কথা দিয়ে ফেলেছি, তাই আর না করতে পারলাম না।

মেঘালয় রাইড শুরুর আগের দিন আমার নাইট ডিউটি ছিল। অফিস থেকে ফিরে সকাল দশটায় আমাদের বেরোনোর কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাকে সারারাত জেগে কাজ করতে হয়। যার কারনে সকালে প্রচন্ড দুর্বল লাগছিল।

আমি বিপ্লবদাকে অনুরোধ করলাম, তোমরা শিলিগুড়ি চলে যাও। আমি সন্ধ্যা বেলায় কলকাতা থেকে বেরিয়ে সকালের মধ্যে শিলিগুড়ি পৌঁছে যাব। তারপর একসঙ্গে গুয়াহাটি চলে যাব। কিন্তু বিপ্লবদাও পরিকল্পনা পাল্টে সন্ধ্যাবেলায় বেরোতে ইচ্ছে প্রকাশ করলো। আমার মতো একটানা ২৪ ঘন্টা বাইক চালানো সবার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু বিপ্লবদা আমার কথা শুনল না।

এবারের মেঘালয় রাইডের সিডিউল আছে খুব টাইট। একটা দিনও সময় অতিরিক্ত নষ্ট করা যাবে না। একদিন সময় নষ্ট হওয়ার অর্থ, কিছু জায়গা পরিকল্পনা থেকে বাদ দিতে হবে। যেটার ইচ্ছা একদমই নেই।

আমি পরিকল্পনা মত সন্ধ্যে সাতটায় বাড়ি থেকে রওনা দিলাম। বাইকের পিছনে বাঞ্জি কর্ড দিয়ে রুকস্যাকটা বেঁধে, হেলমেটে অ্যাকশন ক্যামেরা লাগিয়ে বাইক ছুটিয়ে দিলাম গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে।

বিপ্লবদা দের সঙ্গে আমার দেখা হবে বহরমপুরে। কিন্তু এখন কলকাতায় অফিস ফেরত ভিড়। যার কারণে কলকাতা থেকে বেরোতেই আমার অনেকটা সময় লেগে গেল। বারাসাতের পর থেকে কল্যাণী টোল প্লাজার কিছুটা আগে পর্যন্ত রাস্তা খুবই খারাপ। গাড়ির স্পিড কমিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করাই এখানে ভালো।

কল্যাণী টোল প্লাজা থেকে ডালখোলা পর্যন্ত রাস্তা মাখনের মত মসৃণ। এই রাস্তাটা ফোর লেন হাইওয়ে। এবার বাইক ছুটে চলল দুরন্ত গতিতে। বহরমপুর পৌঁছাতে আমার এগারোটা বেজে গেল। এখানেই ডিনারটা সেরে দিলাম।

এবার শুরু হলো আমাদের একত্রে রাইড। রাত্রিবেলায় বাইক বা গাড়ি চালানো অনেকটাই সহজ। এই সময় রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা থাকে। বাজার, টোটো, মোটরসাইকেল, সাইকেল, মানুষের ভিড় এই সময় থাকে না। যার কারণে কম সময়ে অনেক বেশি দূরত্ব অতিক্রম করা যায়। আমাদের বাইকও ছুটে চলল দুরন্ত গতিতে।

আমাদের ডালখোলা পৌঁছাতে প্রায় ভোর হতে চলেছে। পূর্ব আকাশে সূর্যিমামার হালকা কিরণ দেখা দিতে শুরু করেছে। অপূর্ব কমলা রঙের খেলা। যদিও মামা এখনো মুখ তুলে তাকাননি।

ডালখোলা থেকে কিষাণগঞ পর্যন্ত রাস্তা মাঝে মাঝেই খুব খারাপ। ভোরের আলো ফুটে যাওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু অন্ধকার হলে সত্যিই এখানে একটু অসুবিধা হতো। তবে এই সময় বেশি যানবাহন না চলায়, ধুলোর হাত থেকে বেঁচে গেলাম। তা না হলে এখানে প্রচন্ড পরিমাণে ধুলো ওরে।

কিষাণগঞ্জ -এর পর থেকেই রাস্তার দুই ধারে বড় বড় চা বাগান। চোখ জুড়ানো দৃশ্য এখান থেকেই শুরু বলা যেতে পারে। চা বাগানে ছবি তোলার লোক সামলাতে পারলাম না। বাইক সমেত ঢুকে গেলাম চা বাগানের মধ্যে। বেশ কিছু ছবি ভিডিও তুলে নিলাম স্মৃতির পাতায় তুলে রাখার জন্য।

একটানা অনেকক্ষণ বাইক চালিয়ে আসছি। এখানে দাঁড়ানোর ফলে অনেকটা বিশ্রামও হয়ে গেল। মোটামুটি ৩০ মিনিট সময় কাটিয়ে আবার রওনা হলাম।

এই প্রথম শিলিগুড়ি শহরে না ঢুকে, বাইপাস হয়ে ছুটে চললাম জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে। জলপাইগুড়ি শহরে ঢুকতেই বাইকে লো ফুয়েলের ইন্ডিকেটর দিতে শুরু করল। তার মনে এবার বাইকের খিদে পেয়েছে। সামনে একটা সুন্দর পেট্রোল পাম্প দেখা যাচ্ছে। আমি কন্টিনিউ কয়েকবার হর্ন দিলাম, যাতে বিপ্লবদা দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু ও বাইকের গতি না কমিয়ে, দুরন্ত বেগে বেরিয়ে গেল।

পেট্রোল পাম্পে বাইকের তেল ভর্তি করে বিপ্লবদা কে ফোন করলাম। ও বললো কিছুটা এগিয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমি এখানেই ব্রাশ করে, ফ্রেশ হয়ে একটু বিস্কুট জল খেয়ে নিলাম। তারপর আবার বাইকে চেপে বসলাম।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আর বিপ্লবদা দের আর দেখা পেলাম না। ফোন করে যা বুঝলাম, আমরা আলাদা আলাদা রাস্তায় যাচ্ছি। যদিও দুটো রাস্তাই গুয়াহাটি যাবে। রাস্তায় আবার মিষ্টির দোকানে পরোটা ও মিষ্টি সহযোগে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম।

জলপাইগুড়ির পর প্রায় ১০০ কিলোমিটার রাস্তা বোথ ওয়ে। মাঝে মাঝে রাস্তাও খারাপ।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো সূর্যিমামার শক্তি প্রদর্শন। একদিকে অসহ্য গরম, অন্যদিকে একা একা চুপচাপ বাইক চালানো, অসহ্য লাগছে শুরু করলো। সবথেকে দুঃখের বিষয়, আসামে ঢোকার পর থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বলতে আর কিছুই নেই। শুধু মাঠঘাট আর লোকালয়। দুপুরে একটা সুন্দর হোটেল দেখে লাঞ্চ করে নিলাম।

এখনো গুগল মাসি দেখাচ্ছে গুয়াহাটি পৌঁছাতে আমার সন্ধ্যা সাতটা বাজবে। সময় নষ্ট না করে ছুটিয়ে দিলাম বাইক। এখন ৩০-৪০ কিলোমিটার অন্তর কিছুক্ষণ রেস্ট নিতে হচ্ছে। তা না হলে বাইকে বসে থাকা যাচ্ছে না। আর শরীরও যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়েছে। এবার দরকার একটা সুন্দর বিছানা।

গুয়াহাটি ঢোকার ঠিক পূর্বে বিপ্লবদার ফোন। গুয়াহাটিতে না ঢুকে সরাসরি কামাখ্যায় যাওয়ার জন্য বলছে। আমারও ইচ্ছা সকালে কামাখ্যা মায়ের মন্দিরে পুজো দেওয়ার।

ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর ব্রিজ পার হয়ে, কিছুটা এগিয়ে গুয়াহাটি শহরে না ঢুকে বাঁদিকে টার্ন নিলাম। এখান থেকে এখনো সাত কিলোমিটার।

কামাখ্যা মায়ের মন্দির পাহাড়ের উপরে। পাহাড়ে বাইক চালানোর এই সুন্দর মুহূর্তটা অন্ধকার হয়ে যাওয়ার কারণে একদমই উপভোগ করতে পারছি না। যদিও উচ্চতা খুব বেশি নয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম কামাখ্যা মায়ের মন্দিরের কাছে।

এখানে পুনরায় বিপ্লবদা দের সঙ্গে দেখা। ওরা আমার থেকেও আরো বেশি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। এখন তাড়াতাড়ি একটা হোটেল দেখতে হবে। কিন্তু বাধ সাধলো বরুণদের। হঠাৎ করে শুরু হয়ে গেল মুষলধারে বৃষ্টি। বাইক থেকে নামতে নামতে কিছুটা ভিজে গেলাম।

বৃষ্টি ১০ মিনিটের মধ্যেই থেমে গেল। কিন্তু শুরু হলো আসল সমস্যা। কোথাও ভালো ঘর পাওয়া যাচ্ছে না। বিপ্লবদা এই পরিস্থিতিতে একটা অনুষ্ঠান হলের উপরে ঘর বুক করলো অনেকটা সস্তায়। সবকটা ঘর নন এ.সি। নীচে চলছে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান। উচ্চস্বরে বাজছে গান।

সূর্যি মামার আক্রমণে যুদ্ধ বিধ্বস্ত শরীরে এই জায়গায় আমার পক্ষে থাকা কোনো মতেই সম্ভব না। এখন দরকার নিস্তব্ধ ঠান্ডা ঘরের নরম বিছানা। কিন্তু বিপ্লবদা আর ওর বান্ধবী এখানেই থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করলো। কিন্তু আমি এই উচ্চস্বরে বক্সের আওয়াজ নিতে পারলাম না। বাধ্য হয়ে বিপ্লবদার অনুমতি নিয়ে অন্য হোটেলে চলে গেলাম। ১৬০০ টাকায় পেয়ে গেলাম একটা সুন্দর এসি রুম।

প্রায় ছাব্বিশ ঘন্টা বাইক চালানোর পর খুঁজে পেলাম সুখের ঠিকানা। ভালো করে স্নান করে, কোন রকমে ডিনার করে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। চোখের সামনে সবকিছু কেমন যেন অসচ্ছ হয়ে। মোবাইলটাও মনে হচ্ছে হাত থেকে পড়ে যাবে। এবার আপনাদের অনুমতি নিয়ে, শুভরাত্রি জানিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে আগামীকাল। সবাই ভালো থাকবেন।

**আমার ভ্রমণ কাহিনী ভিডিও ফর্মে পেতে "Arindam NBD" ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করুন।

**এই ভ্রমণ সিরিজের প্রত্যেকটা পার্ট সহজে পেতে #মেঘালয়ে_কালো_ছায়া বা লিখে সার্চ করুন।

#ভ্রমণকাহিনী #ছোটগল্প

মা তারার আশীর্বাদ না থাকলে বিপদে পড়তাম 🙏[উত্তেজনাময় ভ্রমণ কাহিনী] শুক্রবার রাতে ফোনের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল। ফোনের স্...
16/06/2025

মা তারার আশীর্বাদ না থাকলে বিপদে পড়তাম 🙏
[উত্তেজনাময় ভ্রমণ কাহিনী]
শুক্রবার রাতে ফোনের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল। ফোনের স্ক্রিনে সায়নের নাম্বার। ফোন ধরতেই বলে উঠলো "আগামীকাল তারাপীঠ চলো। আমরা এখান থেকে বাইক নিয়ে চারজন যাব ঠিক করছি।"

আমিও বেশ কিছুদিন থেকে তারাপীঠ যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছিলাম। কিন্তু কিছুতেই সময় বার করতে পারছিলাম না। আগামীকাল মুসলিম পরবের কারণে অফিসে ছুটি নিয়েছি। শনি, রবি দুদিন ছুটি আছে আমার। সুতরাং এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। যার ফলে আমিও এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম।

ওরা কলকাতা থেকে বিকাল চারটেয় রওনা হবে। কিন্তু আমি এই মুহূর্তে রয়েছি নবদ্বীপে। ঠিক করলাম আমি গাড়ি নিয়ে যাব। আমার ছোটবেলার বন্ধু মাধাই-ও রাজি হয়ে গেল আমার সঙ্গে যাওয়ার জন্য।

পরিকল্পনা মত আমরা বিকাল ৫.৩০ মিনিটে রওনা হলাম তারাপীঠের উদ্দেশ্য। ওরাও কলকাতা থেকে বেরোতে লেট করেছে। আমাদের যাত্রা পথ কাটোয়া, কান্দরা, ফুটিসাঁকো হয়ে তারাপীঠ।

বিকালের পশ্চিম আকাশে সূর্যিমামার কমলা তুলির মনোরম টানে মায়াবী রং ধরেছে। এর মধ্যে ফাঁকা রাস্তায় ছুটে চলেছে আমাদের সিলভার হর্ষ। আমরা মাঝে মাঝেই গাড়ি থেকে নেমে পড়ছি ছবি ভিডিও তুলতে।

কাটোয়া পৌঁছাতেই সূর্যিমামা তার ক্যানভাস নিয়ে যাত্রা করলেন পৃথিবীর অন্য প্রান্তে। চতুর্দিকে অন্ধকারের নীরবতা আমাদের যাত্রাপথকে একঘেঁয়ে করে তুললো।

কিন্তু আজকের স্ক্রিপ্টের রচয়িতা আমাদের জন্য রেখেছেন টানটান উত্তেজনা। জীবনের কিছু কিছু দিন স্মৃতিপটে চিরকালের জন্য অক্ষত থেকে যায়। আজকের দিনটাও হয়তো তেমন ভাবেই রচনা করা হয়েছে।

মাধাইয়ের ব্লুটুথ গাড়িতে কানেক্ট করা ছিল গান শোনার কারণে। এমন সময় মাধাইয়ের ফোন বেজে উঠল। মাধাইয়ের মুখ ক্ষনিকেই পানসে হয়ে গেলো। ফোন করেছে মধাইয়ের বউ। মাধাইয়ের বউ বাপের বাড়ি থাকায়, ও বউকে না জানিয়ে চলে এসেছে। বুঝতেই পারছি এবার একটা কুরুক্ষেত্র হবে।

আমি ইচ্ছা করেই গাড়ির ব্লুটুথ অফ করলাম না। মাধাইয়ের মৌখিক মুণ্ডচ্ছেদনের এত সুন্দর যাত্রাপালা আমি স্বকর্ণে উপভোগ করতে চাই।

ফোন ধরতেই মাধাইয়ের বউ নিক্ষেপ করতে শুরু করলো উত্তপ্ত বাক্য বাণ। মাধাই গরু চোরের মত নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু ওর বউ আজ রণং দেহি মেজাজে।

প্রায় ৩০ মিনিটের চেষ্টায় আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা হলো। কিন্তু আমি উত্তপ্ত আবহাওয়াই উপভোগ করছিলাম। এই পরিস্থিতিতে আমি একটু আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলাম, "মাধাই, ওরা আমাদের আগে পৌঁছে যাবে না তো?"

ব্যাস আগুনে 'ঘি' পরে গেলো। শুরু হয়ে গেলো চিল চিৎকার। মাধাইয়ের বউয়ের সন্দেহ "ওরা" নিশ্চয়ই মেয়ে। এই পরিস্থিতিতে মাধাই পারলে ড্যাসবোর্ডে মাথা ঠোকে। আরো ৩০ মিনিট সময় ধরে চলে নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করার চেষ্টা। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে ফোনের সুইচ অফ করে দেয়।

গাড়িতে এই মুহূর্তে যুদ্ধ পরবর্তী নীরবতা। আমার গরুচোর সৈনিক চুল খাড়া খাড়া করে নেতিয়ে পড়েছে গাড়ির সিটে। সৈনিককে চাঙ্গা করার জন্য কান্দরা বাজারে গাড়ি থামালাম চা বিরতির উদ্দেশ্যে।

চা বিস্কুট খেতে খেতে ওখানকার লোকাল মানুষজনের সঙ্গেও বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম। তারা আমাদের পরামর্শ দিল ফুটিসাঁকো থেকে ডানদিকের জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়ার।

সায়নদের লাইভ লোকেশন এখনো দেখাচ্ছে পানাগড়। বুঝতেই পারছি ওদের আগে আমরা পৌঁছে যাবো। চা বিরতির পরে আবার আমাদের গাড়ি ছুটে চললো তারাপীঠের উদ্দেশ্যে।

ফুটিসাঁকো থেকে ডানদিকের জাতীয় সড়ক ধরে এগিয়ে চললো আমাদের গাড়ি। পাঁচ কিলোমিটার মতন এগোতেই দেখি বিশাল রোড জ্যাম। বাঁ দিকে ট্রাক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ভাবলাম সামনে হয়তো এক্সিডেন্ট হয়েছে। ডান দিকের লেন ফাঁকা ছিল। আমরা ধীরে ধীরে ওই লেন ধরে এগিয়ে চললাম। অনেক চওড়া রাস্তা হওয়ার কারণে আমাদের এগিয়ে যেতেও কোন সমস্যা হলো না। কিন্তু সামনে পৌঁছাতেই আমাদের চক্ষু চড়কগাছ।

প্রায় ৫০ জন মানুষ ঘিরে ফেলল আমাদের গাড়ি। তারা এক ইঞ্চিও এগোতে দেবে না আমাদের গাড়ি। কারো কারো হাতে আছে লাঠি। চেষ্টা করলেই শুরু হবে গাড়ি ভাংচুর।

কি হয়েছে জানার জন্য আমি গাড়ির কাঁচ খুললাম। দুজন মাথা ঢুকিয়ে সবার আগে দেখলো আমার ড্যাশবোর্ড। তৎক্ষণাৎ একজন মাথা বার করে ঘোষণা করে দিলো কিছু নেই। উত্তেজিত ভিড় কিছুটা নমনীয় হলো। আমি "কি হয়েছে" জিজ্ঞাসা করায়, ওরা জানালো "আজ পরবের দিনে দুপুর 12 টা থেকে ওখানে বিদ্যুৎ নেই। যতক্ষণ বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ থাকবে।"

এই পরিস্থিতিতে মাধাইয়ের অবস্থা খারাপ। ভয়ে মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে। আমাকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে পিছনে যাওয়ার জন্য বলতে লাগলো। ও ভয় পাচ্ছে, যে কোন সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। আমি ওকে আশ্বস্ত করলাম, তেমন কিছু হলে গাড়ি ঠিক বার করে নিয়ে চলে যাব। তবুও ও ধৈর্য ধরে বসে থাকতে পারছে না। মাঝে মাঝে ও গাড়ি থেকে নেমে পরিস্থিতি দেখতে যেতে চাইছে। কিন্তু আমি ওকে জোর করে গাড়িতেই বসিয়ে রাখলাম।

আমি গাড়ির কাঁচ তুলে লোকাল থানায় ফোন করলাম। আমাকে থানা থেকে জানানো হলো, "পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ফোর্স এর মধ্যেই বেরিয়ে পড়েছে।"

মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই দুই গাড়ি ভর্তি র‍্যাফ ও কিছু পুলিশ আধিকারিক চলে আসলেন। আর ম্যাজিকের মতই এক মিনিটে রাস্তা খালি। একজন পুলিশ আধিকারিক উদ্যোগ নিয়ে উল্টোদিকের গাড়ি সাইড করিয়ে তাড়াতাড়ি আমার গাড়ি বার করে দিলেন।

ধর্মীয় খুশির দিনে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট অবশ্যই দুঃখজনক। কিন্তু এর থেকে সৃষ্ট রাগের প্রয়োগ সাধারণ মানুষের উপর, কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়।

বাকি রাস্তা যথেষ্ট ফাঁকা ও ভালো ছিলো। যার কারণে আমরা ৯ টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম তারাপীঠ। কিন্তু আসল অ্যাডভেঞ্চার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এখানেই।

তারাপীঠে ঢুকে মেইন রোড থেকে একটা রাস্তা বাঁদিকে বিভক্ত হয়ে মন্দিরের দিকে চলে যাচ্ছে। ওই রাস্তায় প্রচুর হোটেল আছে। তাছাড়া মেইন রোডের উপরেও অনেক হোটেল আছে। আমাদের পরিকল্পনা, গাড়ি পার্কিং স্পটে রেখে যেকোনো হোটেলে রুম নিয়ে নেবো। আমি গাড়ি বাঁদিকে সাইড করে রেখে মাধাইকে হোটেল দেখতে পাঠালাম।

আজ তারাপীঠ যেন জনস্রোতে ভেসে যাচ্ছে। চতুর্দিকে শয়ে শয়ে মানুষ। এর মধ্যেই কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর মাধাইয়ের ফোন আসতে লাগলো। কোন হোটেলে রুম ফাঁকা পাচ্ছে না। এইরকম পরিস্থিতি এর আগে কখনো তারাপীঠে হয়নি।

আমি বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। আমিও সামনের কয়েকটা হোটেলে কথা বললাম। কিন্তু কোথাও রুম ফাঁকা নেই। হতাশ হয়ে পুনরায় গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। গাড়ির সামনের হোটেলের মালিকের সঙ্গে একটু গল্প করতে, জানতে পারলাম একটা রুম রাত ১১ টার সময় ফাঁকা হবে। যথেষ্ট বড় ঘর। দুটো ডবল বেড আছে। আমরা ৬ জন স্বাচ্ছন্দে থাকতে পারবো। কিন্তু এখনো ১১:০০ টা বাজতে দু'ঘণ্টা বাকি।

এরই মধ্যে মাধাই ফিরে আসলো। কোনো হোটেলে রুম ফাঁকা পায়নি। এই পরিস্থিতিতে আমি সামনের হোটেলের রুমটা ৫০০ টাকা দিয়ে বুক করে রাখলাম। হাতে এখনো দু ঘন্টা সময়। আমরা দুজনে ঠিক করলাম আরো কিছু হোটেলের রুম খুঁজে দেখার। প্রত্যেক হোটেলের রিসেপশনে ঘাড় নাড়া বুড়োর মতো টিংটং, টিংটং করে দুদিকে ঘাড় নাড়াতে শুরু করলো। আমরা রুম খুঁজতে খুঁজতে এক প্রকার তারাপীঠের বাইরে চলে গেলাম। তবুও কোথাও কোন রুম ফাঁকা পেলাম না। ওখানকার সব থেকে বড় হোটেল গুলোতেও কোন রুম নেই।

বাধ্য হয়ে আমরা পুনরায় আগের হোটেলে ফিরে আসলাম। আমাদের গাড়ি দেখে হোটেল মালিক এগিয়ে এসে বললেন, "আপনাদের রুম রেডি হয়ে গেছে।" এখন দশটা বাজে। এক ঘন্টা আগেই আমরা রুম পেয়ে গেলাম।

রুমটা যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও বড়। কিন্তু সমস্যা একটাই। আমাদের ছয় জনার জন্য বাথরুম একটাই। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে রুম পাওয়াটাও মা তারার আশীর্বাদ।

হোটেলের সামনেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। সুতরাং গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো অসুবিধা হলো না। সায়ন বাবুরা ১০.৩০ এ এসে হাজির হলেন। ওদের আসার কথা ছিল চারজনার। কিন্তু এসেছে পাঁচ জন। ভালোমতোই বুঝতে পারছি আজ সারারাত ঘুমের বারোটা বাজলো।

আমি তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে দু কেজি মাংস রান্নার ও রুটির অর্ডার দিয়ে আসলাম। খাবার রেডি হতে বারোটার উপর সময় লাগবে।

ফ্রেশ হয়ে গল্পগুজব করতে করতেই বারোটা বেজে গেল। খাবার এনে, খাবার খেতেই বেজে গেলো ১.৩০। এবার সবার ঝোঁক উঠল তারাপীঠের শ্মশানে যাওয়ার। এখনো রাস্তায় যত্রতত্র মানুষজন ঘোরাঘুরি করছে। এদের মধ্যে বেশ কিছু মানুষ এখনো হোটেল খুঁজে চলেছে। তাদের জন্য মন থেকে খুবই দুঃখ হলো। কিন্তু এটাও সত্যি কথা, আজ মা তারার আশীর্বাদ না থাকলে আমাদেরও এই একই অবস্থা হতো।

রাতের শ্মশান এই মুহূর্তে ফাঁকা। ছাইয়ের গাদায় একজন সন্ন্যাসী ধ্যান করছে। বেশ কিছু ছাউনির ভিতর সন্ন্যাসীরা এই রাতে তন্ত্রসাধনা করছে। পরিবেশটা সত্যিই গা ছমছম করার মত।

কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমরা পুনরায় হোটেলে ফিরে আসলাম। তারপর দিলাম ছোট্ট একটা ঘুম।

ঘুম ভাঙলো সকাল ৮:০০ টায়। তাড়াতাড়ি স্নান করে নতুন জামা কাপড় পড়ে বেরিয়ে পড়লাম তারাপীঠ মন্দিরের উদ্দেশ্য। মন্দির চত্বর আজ লোকে লোকারণ্য। আমার মত সাধারন মানুষদের লাইন দেখে বিস্ময়ের অবকাশ থাকলো না। যদিও এখানে স্বঘোষিত VIP দের একটা আলাদা লাইন আছে। পকেট থেকে ৫০০ টাকা বার করে দিতে পারলেই আপনিও VIP হয়ে যাবেন। পুজো দিতে পারবেন খুবই অল্প সময়ের মধ্যে।

সাধারণ মানুষদের বঞ্চিত করে টাকার গরমে ভগবানের আশীর্বাদ পাওয়া কোনমতেই সম্ভব নয়। একইসঙ্গে কিছু মানুষ মন্দিরটাকে বাজারে পরিণত করে দিয়েছে। মানুষের আস্থা ও ধৈর্য নিয়ে চলছে চরম ব্যবসা। এই পরিস্থিতিতে মা তারার কাছে আশীর্বাদের বদলে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হলাম। এই লেখার মাধ্যমে তারাপীঠের ব্যাবসায়িক প্রথার বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই প্রথার প্রতিবাদ করা। আমরা প্রত্যেকে মা তারার সন্তান। আমাদের মধ্যে কখনোই বিভেদ থাকতে পারে না।

এই পরিস্থিতিতে দূর থেকেই মা তারাকে দর্শন করে, প্রণাম করে নিলাম। মন্দিরের বাইরে থেকে কিনে নিলাম প্রসাদ। মনে ভক্তি থাকলে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়েও ভগবানের পূজো দেওয়া যায়।

এরপর আরো কিছুক্ষণ সময় বামাক্ষ্যাপার সমাধি, শ্মশান প্রভৃতি জায়গা ঘুরে হোটেলে ফিরলাম দুপুর বারোটার সময়।

এবার আমাদের ফেরার পালা। ফ্রেশ হয়ে, লাঞ্চ করে আমাদের বেরোতে সময় লেগে গেলো প্রায় তিনটে। ঠিক করলাম সবাই একসঙ্গে ফুটিসাঁকো পর্যন্ত যাবো। তারপর আমি আর মাধাই কাটোয়ার দিকে চলে যাবো। আর বাকিরা বর্ধমান হয়ে কলকাতা ফিরে যাবে।

আগের দিন যেখানে পথ অবরোধে আটকে গেছিলাম, সেখানে আসতেই মাধাই শুরু করলো ভয়ংকর ভয়ংকর সাধু ভাষার প্রয়োগ। যে টুকু পূর্ণ অর্জন করেছিলাম, সব বিফলে চলে গেল মাধাইয়ের উপদ্রবে। আগে জানলে কানে তুলো গুঁজে নিতাম।

ফুটিসাঁকোতে বাকিদের বিদায় জানিয়ে আমাদের গাড়ি ছুটে চলল বাড়ির উদ্দেশ্যে। অত্যাধিক লম্ফো ঝম্ফো করে ক্লান্ত হয়ে মাধাই ঘুমিয়ে পড়েছে। গাড়ি চালাতে চালাতে আমি ২৪ ঘণ্টার স্মৃতি মন্থন করছি আর হতাশ হচ্ছি। সত্যি, আরো যদি কিছুটা সময় আমরা একসঙ্গে কাটাতে পারতাম!!!!!!!!!

আমার সমস্ত লেখা পড়তে অবশ্যই "Arindam NBD" পেজ লাইক ও ফলোও করুন।
এবং ভিডিও ফর্মে দেখতে ইউটিউব চ্যানেল "Arindam NBD" সাবস্ক্রাইব করুন।


#তারাপীঠ
#ভ্রমণকাহিনী

14/06/2025

তারাপীঠ- এ মা তারার আশীর্বাদ নিতে চলে এলাম।
নতুন করে সবকিছু শুরু করার আগে, ভগবানের আশীর্বাদ অবশ্যই প্রয়োজন।
#অরিন্দম

কলকাতা থেকে দুর্গম লাদাখ (পঞ্চম পর্ব) *আগস্ট মাস*অমৃতসর থেকে জম্মু ও বৈষ্ণোদেবী**পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী পর্ব সহজে পেতে স...
11/12/2024

কলকাতা থেকে দুর্গম লাদাখ (পঞ্চম পর্ব)
*আগস্ট মাস*
অমৃতসর থেকে জম্মু ও বৈষ্ণোদেবী
**পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী পর্ব সহজে পেতে সার্চ করুন এবং #দুর্গমলাদাখ লিখে।

গতকাল রাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে গেছিল। প্রায় রাত্রি দুটোর সময় ঘুমিয়েছি। যার কারণে আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠতে প্রায় দশটা বেজে গেল। আজ আমাদের গন্তব্য জম্মু। তাড়াতাড়ি স্নান ও ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম।

এখানে আরও দুটো জায়গা আমাদের দেখার খুব ইচ্ছা আছে। প্রথমটা হলো জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যান। আর দ্বিতীয় জায়গা হল ওয়াগা বর্ডার।

আজ যেহেতু ঘুম থেকে অনেকটা দেরি করে উঠেছি, সেই কারণে টাইম ম্যানেজমেন্টটা খুব বড় ব্যাপার। আমরা প্রথমেই ব্যাগ পত্র পার্কিং স্পটে গিয়ে, গাড়িতে ঢুকিয়ে দিলাম। এখান থেকে জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যান গুগল বাবা দেখাচ্ছে মাত্র ২০০ মিটার। আমরা গাড়ি পার্কিং স্পটেই রেখে হাঁটা দিলাম জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যানের উদ্দেশ্যে। জালিয়ানওয়ালাবাগের সামনে গিয়ে দেখি, আর মাত্র কয়েক পা দূরেই স্বর্ণমন্দির। পার্কিং স্পট থেকে স্বর্ণমন্দির এত কাছে হওয়া সত্বেও, না জানার কারণে, অযথা দালাল চক্রে পড়ে দূরে হোটেল নিয়েছিলাম। যদিও হোটেল থেকে আমাদের টোটো সার্ভিস দেয়া হয়েছিল। তবুও জানা থাকলে আমরা খুব ভালোভাবে এখানেই হোটেল নিতে পারতাম। এখানে যথেষ্ট হোটেল আছে।

অর্থাৎ আপনারা যদি ঘোড়াওয়ালা চকে গাড়ি পার্কিং করেন, তাহলে আশেপাশেই হোটেল নিন। অযথা দালাল চক্রে পড়বেন না।

জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যানের গেটের সামনে হাল্কা আওয়াজে দেশাত্মবোধক গান চলছে। ভিতরে প্রবেশ করতেই পরিবেশটা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেল। মনে হচ্ছে আমরা পৌঁছে গেলাম আজ থেকে ১০০ বছর আগে। ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল এই জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যানে ইংরেজ সেনা নায়ক ব্রিগেডিয়ার ডায়ারের নির্দেশে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। দেওয়ালে ঘেরা এই উদ্যানের গেটটি খুবই সরু। এই সরু গেট অবরুদ্ধ করে সাধারণ নিরস্ত্র মানুষের উপর গুলি বর্ষণ করেছিল ইংরেজ ব্রিগেডিয়ার। যার ফলে প্রচুর মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। মনুষ্যত্ব নামক শব্দটিকে সেদিন অপমানিত ভুলুন্ঠিত করা হয়েছিল। আজও সেই ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এই জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যান। এখনও দেওয়ালের বিভিন্ন স্থানে গুলির ক্ষত বিদ্যমান ।

এখানে অনেকগুলো মিউজিয়াম আছে। সেখানে ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ আছে। এখানেই একটি মিউজিয়ামে রয়েছে সর্দার উধম সিং -এর অস্থি। সর্দার উধম সিং ইংল্যান্ডে ষড়যন্ত্রী জেনারেল ও.ডায়ারকে হত্যা করেছিলেন এই ঘটনার প্রতিবাদে। যার ফলে তাঁর ফাঁসি হয়েছিল। এবং তাঁর অস্থি ইংল্যান্ড থেকে ভারতে নিয়ে এসে, এই উদ্যানের মিউজিয়ামে রাখা হয়। সর্দার উধম সিং -এর অস্থির কলস দেখে একজন ভারতীয় তথা মানুষ হিসাবে যেমন গর্বে বুক ফুলে উঠবে, তেমনি চোখে জল আসতেও বাধ্য। জীবনের উদ্দেশ্য সর্বদা মহৎ হওয়া দরকার, তা এখানে আসলে অনুভব করা যায়। উদ্যানটি খুব বড় না হলেও, এই জায়গার অনুভূতি নিতে কয়েক ঘন্টা সময় খুবই কম।

সময় কম থাকার কারণে আমরা আর স্বর্ণ মন্দিরে প্রবেশ করলাম না। ওখানে আরও একটি মিউজিয়াম আছে। সেটিও বহন করছে অমৃতসরের বিভিন্ন ইতিহাস। সেটিও ঘুরে দেখলাম। এই মিউজিয়ামের ভিতরে ছবি তোলা নিষেধ থাকায়, কোন ছবি বা ভিডিও তোলা গেলো না।

আমাদের আজ গন্তব্য অনেক দূর। তাড়াতাড়ি এখান থেকেই লাঞ্চ করে, পার্কিং থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের এখন প্রথম গন্তব্য জম্মু। আমরা চাইলে ওয়াগা বর্ডার যেতে পারতাম। কিন্তু সময়ের অভাবে এই ইচ্ছাটা এখানেই রেখে যেতে হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে অমৃতসর এলে অবশ্যই এই ইচ্ছাটা পূরণ করব।

আমাদের এখন প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। ইচ্ছা আছে জম্মু হয়ে কাটরা যাওয়ার। ওখানে মানুষ যায় বৈষ্ণোদেবী দর্শনের জন্য। লাদাখ যাওয়ার পূর্বে বৈষ্ণোদেবীর আশীর্বাদ খুবই প্রয়োজন। আমাদের গাড়ি ছুটে চলল পাঞ্জাবের রাস্তায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাব জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে। জম্মু ও কাশ্মীরে আমাদের এখানকার প্রিপেইড মোবাইল কানেকশন অফ হয়ে যাবে। একমাত্র পোস্টপেড কানেকশন ওখানে কাজ করবে। তা না হলে ওখান থেকে নিতে হবে টুরিস্ট সিম। কিন্তু সেই কানেকশন আবার লাদাখে কাজ করবে না।

আমি পোস্টপেড কানেকশন সঙ্গে নিয়ে আসিনি। সেই কারণে আমি কাশ্মীর ও লাদাখের অফলাইন ম্যাপ ডাউনলোড করে নিলাম। এক্ষেত্রে আমার ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলেও আমি গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে পারবো। আর যেকোনো অচেনা জায়গায় গুগল ম্যাপ খুবই সাহায্যকারী।

প্রায় ছ’টার সময় দূরে দেখতে পেলাম পাহাড়। এত রাস্তা অতিক্রম করার পর পাহাড় দর্শন একটা আলাদা মাত্রার অনুভূতি। বুঝতে বাকি থাকল না, এবার আমরা কাশ্মীরে প্রবেশ করতে চলেছি।

কাশ্মীরে ঢুকতেই একটা অন্যরকম অনুভূতি হল। এক বছর আগেও ভাবি নি, নিজে গাড়ি চালিয়ে এইভাবে কাশ্মীরে আসবো। এটাও একটা স্বপ্নপূরণ বলা যেতে পারে।

আমাদের একটা ভুল ধারণা ছিল। এতদিন ভাবতাম কাশ্মীর মানেই পাহাড়ি এলাকা। কিন্তু বাস্তবে সেটা মোটেও নয়। কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ এলাকা সমভূমি। তবে এখানকার মাটির প্রকৃতি আলাদা। এখানে সর্বত্র পাথুরে মাটি।

আমরা কলকাতায় থাকলে এতক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে যেত। কিন্তু এখানে এখনো রোদ আছে। এখানে সন্ধ্যা হয় আট’টার সময়। অর্থাৎ অন্ধকার হতে এখনো অনেক সময় বাকি। পাহাড়ের দর্শন পেলেও, পাহাড়ে ওঠার সৌভাগ্য হলো না। সমতলের জাতীয় সড়ক দিয়েই ছুটে চললো আমাদের গাড়ি। কিছুটা রিফ্রেশমেন্টের জন্য গাড়ি দাঁড় করালাম জম্মুর একটু আগে। বুঝতে পারলাম গুগল এখানে একটু ঘেঁটে দিয়েছে। এই রাস্তা সামনে বন্ধ আছে। ওখানে লোকাল লোকের কাছ থেকে জম্মুর রাস্তা বুঝে নিলাম। তারপর আরো কয়েকবার ওখানকার লোকাল মানুষের সাহায্য নিয়ে পৌঁছে গেলাম জম্মু।

ঘুরে ঘুরে জম্মু পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। জম্মুতে ট্রাফিকের পরিমাণ অনেক বেশি। যার কারণে গাড়ি ধীর গতিতে চলছিলো। এখান থেকে কাটরার দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। জম্মুতে দেখার তেমন কিছু নেই। যার কারণে কাটরা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। গুগল বাবার অনুমান অনুযায়ী আমাদের পৌঁছাতে দশটা বেজে যাবে।

জম্মু থেকে বেরোতেই শুরু হলো পাহাড়ি রাস্তা। সারাটা দিন পাহাড়ে গাড়ি চালানোর ইচ্ছা পূর্ণ হল না। এখন অন্ধকারে পাহাড়ে গাড়ি চালাচ্ছি। মন থেকে কিছুটা রাগও হল। কারণ অন্ধকারে পাহাড়ের সৌন্দর্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

গুগল বাবার অনুমান অনুযায়ী আমরা ঠিক রাত দশটায় পৌঁছে গেলাম কাটরা। পাহাড়ের গায়ে বৈষ্ণোদেবী ওঠার রাস্তায় আলো জ্বলছে। অপূর্ব লাগছে সামনের পাহাড়টা। পাহাড়ের চূড়াতেও একটা মন্দির দেখা যাচ্ছে।

কাটরার বাস স্ট্যান্ড ছাড়িয়েও বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলাম। যাতে আগামীকাল সকালে যাত্রা শুরু করতে পারি পাহাড়ের কাছ থেকে। এখানে প্রচুর মানুষ বৈষ্ণোদেবী দর্শন করে ফিরে আসছেন। তাদের শরীর ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে গেলেও, চোখে মুখে একটা আনন্দের ছাপ প্রকাশ পাচ্ছে।

এখানেও ছোট ছোট পার্কিং স্পট আছে। পার্কিং স্পটে গাড়ি রেখে পাশেই হোটেল নিয়ে নিলাম। এখানে হোটেল ভাড়া খুবই কম লাগলো। মাত্র ৮০০ টাকায় সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এসি ঘর। পাশেই আছে প্রচুর খাওয়ার জায়গা। তন্দুরি রুটি, তড়কা ও পনির বাটার মশলা সহযোগে ডিনার করে নিলাম। এখানে খাবারের দামও তুলনামূলক কম।

এখানে অনেক পূর্ণার্থী বৈষ্ণোদেবী দর্শন-এর জন্য রাতেও যাত্রা শুরু করছেন। কিন্তু আমার এখন একটু বিশ্রাম দরকার। আমি যাত্রা শুরু করবো আগামীকাল সকালে।

এখানে যাত্রা শুরুর আগে রেজিস্ট্রেশন করে আইকার্ড বানাতে হয়। কিন্তু সেই অফিস রাত্রি ন'টায় বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমাকে আগামী কাল সকালেই বানাতে হবে আইকার্ড। তারপরেই শুরু করতে পারবো যাত্রা।

আগামীকাল প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। সুতরাং বেশি রাত জাগা ঠিক হবে না। এখন আপনাদের কাছ থেকে ছুটি নিচ্ছি। আবার দেখা হবে আগামীকাল। সবাই ভালো থাকবেন।

**আমার সমস্ত ভ্রমণ কাহিনী ভিডিও ফর্মে পেতে আমার ইউটিউব চ্যানেল "Arindam NBD" ভিজিট করুন।

আপনাদের ভালোবাসা সর্বদা কাম্য।

#অরিন্দমের_ডাইরি #ভ্রমণকাহিনী #বৈষ্ণোদেবী #অমৃতসর #স্বর্ণমন্দির

Address

Garia
Kolkata
700084

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Arindam NBD posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share