06/08/2025
এক কাস্টমারের বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে কাটানো তার স্ত্রীর কিছু ডায়েরী অংশ তুলে ধরলাম।
আজকের রাতে আকাশ পরিষ্কার, কিন্তু আমার মনটা মেঘে ঢাকা। ঠিক দশ বছর আগের এই রাতের মতোই। আমার স্ত্রী, রাধা, চলে গিয়েছিল। এই শহরের রাস্তায় যতবার আমার গাড়ি চলে, ততবারই তার স্মৃতিগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে।
রাধা সবসময় বলত, "গাড়ির বদলে তুমি আমাকে নিয়ে একটা সাইকেল কিনে দাও, রোজ সন্ধ্যায় আমরা দুজন মিলে ঘুরতে যাব।" আমি তখন হাসতাম, "এখন তো আমরা গাড়ি চেপে ঘুরতে যাই, তাতে কী সমস্যা?" রাধা মুখ ভার করে বলত, "গাড়ির কাঁচের ভিতর দিয়ে শহরটা দেখা আর খোলা হাওয়ায় শহরটাকে অনুভব করা, দুটো কি এক হলো?"
আমার গাড়িতে আজও সেই পুরনো টেপটা লাগানো আছে, যেখানে রাধার পছন্দের গানগুলো রেকর্ড করা। মাঝে মাঝে গাড়ি চালাতে গিয়ে হঠাৎ করেই সেই গানগুলো বেজে ওঠে, আর আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সেদিনও এমনটা হয়েছিল। আমি তখন গাড়ি চালাচ্ছিলাম। এক হাতে স্টিয়ারিং, আরেক হাতে রাধার হাত। কিন্তু আজ আমি একা।
দশ বছর আগে রাধা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ডাক্তার বলেছিল, "সময় বেশি নেই।" আমি আর রাধা সারা রাত গাড়িতে বসে শহরের রাস্তায় ঘুরেছিলাম। রাধা জানালা দিয়ে মাথা বের করে বলছিল, "দেখো, শহরটা কী সুন্দর! মনে হয়, আমরা দুজন মিলে যেন একটা নতুন জীবনে পা রেখেছি।" সেই রাতটা ছিল আমাদের শেষ রাত।
সকাল হতেই রাধা আমার কাঁধে মাথা রেখে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমি আজও সেই দিনটাকে ভুলতে পারি না। আমার গাড়ির ড্যাশবোর্ডে রাধার একটা ছবি আছে। রোজ সকালে গাড়ি স্টার্ট করার আগে আমি ছবিটা দেখি আর বলি, "আবারও দেখা হবে, রাধা।"
এই শহরের রাস্তায় আমার গাড়ি চলে, কিন্তু আমার মনটা পড়ে আছে সেই পুরনো দিনে, যেখানে আমি আর রাধা মিলে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতাম।