15/02/2024
১৯০২ সালের ঘটনা। মিসিসিপির গভর্নর অ্যান্ড্রু লংলিনোর আমন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট গেছেন সেখানের জঙ্গলে শিকার করতে। শিকার দলের সবাই কিছু না কিছু শিকার করেছেন, পারেন নি প্রেসিডেন্ট নিজে। কিন্তু যার সম্মানে এই অভিযান, তিনিই যদি শিকারে ব্যর্থ হন, তবে কি করে চলে? প্রত্যেক বড় বড় নেতার অতি উৎসাহী একজন সঙ্গী থাকেন। এক্ষেত্রেও ছিলেন। তাঁর নাম হোল্ট কোলিয়ার। সে করল কি, কোথা থেকে একটা ছোট্ট, কালো ভালুকের বাচ্চাকে ডান্ডা পেটা করে, গলায় দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে এসে বলল" এই নিন প্রেসিডেন্ট। প্রায় মেরে এনেছি। এবার এটাকেই গুলি করে মারুন"। রুজভেল্টের দয়া হল।
বললেন " এ তো একেবারে শিশু! আমি একে মারতে পারব না।" ততক্ষণে অবশ্য দড়ির ফাঁসে সে বেচারার মরমর দশা। তাই প্রেসিডেন্টের এক সঙ্গী অবশেষে বেচারী ভালুক শিশুটির ভবযন্ত্রণা ঘুচালো।
১৯০২ সালের ১৬ নভেম্বর, ওয়াশিংটন পোস্টে এই ঘটনা নিয়ে দারুন একটা কার্টুন আঁকলেন ক্লিফোর্ড ব্যারিম্যান। তাতে দেখাই যাচ্ছে কোলিয়ার দড়ি দিয়ে ভালুকের গলা টেনে ধরে আছেন আর প্রেসিডেন্ট পিছন ফিরে “ না, না” করছেন। ভালুকের মুখে বেশ একটা হতভম্ব ভাব। গোটা আমেরিকা জুড়ে বেশ হইহই পড়ে গেল এটা নিয়ে। বাচ্চাদের অনেকেই ভালবেসে ফেলল ওই ভালুকটাকে।পুতুল ব্যবসায়ী মরিস মিচটম দেখলেন এ তো বেশ মজা। তিনি ঠিক সেই ভালুকটার মত দেখতে একটা পুতুল বানিয়ে দোকানের শো-কেসে সাজিয়ে রাখলেন। তলায় একটা কার্ড। যাতে লেখা " টেডি'স বিয়ার"। থিওডোর রুজভেল্টকে ভালবেসে আমেরিকাবাসী টেডিই ডাকতো।
আমেরিকার শিশুরা এই খেলনা পেয়ে যেন পাগলপারা হয়ে গেল। লাখে লাখে বিক্রি হতে লাগল এই “টেডি বিয়ার”। মিচটমের আইডিয়াল নভেলটি এন্ড টয় কোম্পানি রাতারাতি বড়লোক হয়ে গেল এই একটি পুতুল বিক্রি করে।
তবে টেডিকে অমর বানিয়ে দিলেন যিনি তিনি কিন্তু কোন পুতুল ব্যবসায়ী নন- অ্যালান আলেকজান্ডার মিলনে নামের এক ইংরেজ লেখক। মিলনের ছেলে ক্রিস্টোফার রবিনের বড় সাধের একটা টেডি বিয়ার ছিল। লণ্ডন চিড়িয়াখানার ছোট্ট ভালুকের নামে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল উইনি। প্রতি রাতে ছেলেকে ঘুম পাড়াতে সেই উইনিকে নিয়েই গপ্পো শোনাতেন মিলনে। একদিন ভেবে দেখলেন “ আরে! এই গল্পগুলো তো ছেপে প্রকাশ করলেই হয়!” যেমন ভাবা তেমন কাজ। ১৯২৫ সালে বড়দিনের ঠিক আগের দিন লন্ডন ইভিনিং নিউজে প্রকাশ পেল সেই গল্প। ভালুকের নামটা একটু বদলে “উইনি দ্য পুহ” করে দিলেন শুধু।
বাকিটা ইতিহাস...
টেডি নিয়ে আর দুখানি দরকারি কথা বলে যাই-
পৃথিবীর প্রথম টেডি বিয়ার মিউজিয়াম তৈরি করা হয় ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ারে ১৯৮৪ সালে। পরে আমেরিকার ফ্লোরিডাতেও এ রকম একটা মিউজিয়াম খোলা হয় ১৯৯০ সালে। এই দু'টো মিউজিয়ামই পরে বন্ধ হয়ে যায় এবং এখানে রাখা টেডি বিয়ারগুলো নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এখন অবশ্য পৃথিবীর অন্য অনেক জায়গায় টেডি বিয়ারের মিউজিয়াম আছে।
টেডি বিয়ার হাতে পেলেই বাচ্চাদের মন ভাল হয়ে যায় লক্ষ করে মার্কিন প্রশাসন ১৯৯৭ সালে 'টেডি বিয়ার কপস প্রোগ্রাম' বলে এক কর্মসূচি হাতে নেয় যাতে সে দেশের পুলিশ, দমকল-সহ বিভিন্ন এমারজেন্সি সার্ভিসে কর্মরত কর্মচারীদের টেডি বিয়ার দেওয়া হতে থাকে নিয়মিত ভাবে। এর কারণ একটাই, কোনও বিশেষ জরুরি পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের শান্ত করতে, তাদের মন ভাল করতে এই সব পুলিশ, দমকল কর্মীরা যাতে এই টেডি বিয়ারগুলো বাচ্চাদের মধ্যে বিলি করতে পারেন।
অনেক হল। আজ এখানেই থামি। ওবেলা বুক ফার্মে যাব। তৈরি হতে হবে তো? বন্ধুরা গেলে দেখা হবে। আড্ডা হবে।