
16/05/2024
সময়টা ৭০ দশকের শুরুর দিকের। উত্তাল বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। দেয়ালে দেয়ালে হাতে লেখা পোস্টার লাগানো । ১৭ বছরের আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল একটি স্লোগান - “When Order stands for Injustice, Disorder is the Beginning of Justice”। এই রকম একটা অস্থির সময়ে, সালটা ১৯৭১, একদিন একটা সিনেমার পোস্টার চোখে পড়ল। সিনেমাটির নাম ‘ইন্টারভিউ’, পরিচালনায় মৃণাল সেন । কি মনে করে দেখতে গেলাম। আজ ও আমার একটা সিনের কথা মনে আছে যেখানে মানসিক ভাবে জর্জরিত গল্পের মূল চরিত্র, (যিনি স্যুট পড়ে যাননি বলে চাকরি হয়নি) একটা ইট দিয়ে শোকেসের কাঁচ ভেঙে ম্যানেকুইন এ পরানো বিলিতি স্যুইট টি ছিঁড়ে ফেলে। সেই মানসিক যন্ত্রণা ও রাগের দৃশ্যায়ন এবং তৎকালীন উত্তাল সময়কে তিনি যেভাবে দেখিয়েছেন – সেটা শুধু মাত্র উনি পারতেন আর সেই জন্য উনি মৃণাল সেন । আপসহীন, স্বতন্ত্র , প্রতিবাদী এক প্রতিষ্ঠান এর নাম হল মৃণাল সেন। কোনদিন কল্পনাও করতে পারিনি, ওনার সান্নিধে আসতে পারবো। কিন্তু বিধাতার লিখন খণ্ডাবে কে ? ১৯৮০ সালের কথা। আমার স্ত্রী নন্দিতা আমাকে জানালো মৃণাল বাবু আমাকে খুঁজছেন । আমি তাই সময় নষ্ট না করে, সত্ত্বর ওনার সাথে যোগাযোগ করলাম । উনি ওই সময় খারিজ নামক একটি সিনেমার কথা ভাবছিলেন । নিজেই আমাকে গল্পের কিছুটা অংশ পড়ে শোনালেন এবং উনি ঠিক কি রকম সেট চাইছেন তাও খানিকটা বললেন …….. এবং তৈরি হল একটি ইতিহাস। ওনার হাত ধরে চলচিত্র জগতে আমার প্রথম জাতীয় পুরষ্কার । সেই শুরু হল ওনার সাথে আমার ‘যাত্রাপথের আনন্দগান’ । কখন যে মৃণাল বাবু থেকে মৃণাল দা হয়ে গেলেন, বুঝতেই পারিনি। তারপর ওনার সাথে জেনেসিস এ শিল্প নির্দেশক ও কস্টিউম ডিজাইনার এর কাজ করলাম। কত কাজ করেছি ওনার সাথে - খান্দাহার, তাসভির আপনি আপনি। অনেক কিছু শিখেছি ওনার থেকে। সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা, মূল্যবোধ আর সব থেকে যে ব্যাপারটা আমাকে নাড়া দিয়েছিল সেটা হল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা এবং কোন কিছুর জন্য নিজেকে বিকিয়ে না দেওয়া। আমরা অর্থাৎ যাঁদের ওনার সান্নিধ্যে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে, তাঁরা আশা করি এই ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারবেন। ওনার জন্মশতবর্ষে আমার অন্তরের শ্রদ্ধা জানাই। ওনার উপস্থিতি আমার কাছে আজও আছে এবং থাকবে। এই রকম মানসিকতার মানুষ এখন খুবই দুর্লভ ।