সাপ্তাহিক মীযান - Weekly Mijan

সাপ্তাহিক মীযান - Weekly Mijan Weekly Mizan Update Every Saturday - Sunday

28/04/2025

সম্পাদকীয় ২৭/৪/২০২৫
পহেলগাঁওয়ের ঘটনা

এমন একটা সময় পহেলগাঁওতে হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক, সহিংস ঘটনা ঘটল, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই ঘটনার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশ বিহ্বলচিত্ত। যারা নিহত হলেন তারা ছিলেন নিরপরাধ। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মনোরম শোভার টানে সপরিবারে গিয়েছিলেন বেড়াতে। নিয়তির কাছে হলেন তারা অসহায়। প্রত্যেক মানুষের মৃত্যু দুঃখের ও বেদনার। স্বজনহারার বেদনায় শুধু পরিবারের লোকেরা নয়; অনুভূতিপ্রবণ সব মানুষই বেদনাহত হয়। যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল, তাতে কাশ্মীরের মানুষেরা সারা দেশবাসীর সঙ্গে কিন্তু একাত্মতা দেখিয়েছেন। সর্বাত্মক বনধ পালিত হয়েছে গোটা কাশ্মীরজুড়ে এবং তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়েছে। সৈয়দ আদিল শাহ, যিনি টাট্টু ঘোড়ার সহিস, তিনি শহিদ হলেন।

মানবতাবোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি রেখে গেলেন। ভিডিয়ো ফুটেজে তার স্ত্রী ও সন্তানদের কান্না বিজড়িত কণ্ঠ সমাজ মাধ্যমের বদৌলতে অনেকেই দেখেছেন। সেই কাশ্মীরের মানুষ, যিনি এক পর্যটককে নিজের পিঠের ওপর চড়িয়ে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই যে কাজ, তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। পুরো কাশ্মীরের সমস্ত মসজিদ থেকে এই নৃশংস ঘটনার বিরুদ্ধে আওয়াজ ভেসে উঠেছে। কাশ্মীরবাসীদের মনে যুগ যুগ ধরে অনেক দুঃখ, বেদনা পুঞ্জীভূত হয়ে রয়েছে। রক্তাক্ত এই কাশ্মীরের মানুষেরা ইনসানিয়াত তথা মানবতাকে ভুলে যাননি। তাদের চরিত্রের এই মূল্যায়ন সঠিক হওয়া দরকার। আজ অন্যান্য রাজ্যে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের ওপর যে আক্রমণ হচ্ছে, তা ন্যক্কারজনক। এ হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে মানবতাবাদীদের এগিয়ে আসতে হবে।

পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় যারা ঘোলা জলে মাছ ধরতে অভ্যস্ত, তারা মানবতার বিরুদ্ধেই জেহাদ ঘোষণা করেছে। রাজনীতির তুচ্ছ স্বার্থ তাদের কাছে সবসময়ই বড়। যারা ২৬-এর বদলে ২৬০ চান, তাদের রাজনীতির সবকটাই এমন ধরনের। প্রগলভতা, আত্মপ্রবঞ্চনা, পাওয়ার পলিটিক্স – ক্ষমতার রাজনীতির নেশায় তারা মনোবিকারগ্রস্ত। তাদের চোখের চাহনি, কথা বলার ভঙ্গি, মুখের অভিব্যক্তি সবই একটি মানুষের পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারকে স্মরণ করিয়ে দেয়। পারভার্সান তথা বিকৃতি তাদের মজ্জাগত হয়ে গেছে। এরা ক্ষমতায় গেলে যে কী করবে তা সহজেই অনুমেয়। মনুষ্যত্বের সবক এদের নেই বলেই এমন আচরণ দেখা যাচ্ছে।

পুলওয়ামার ঘটনার পর আবার পহেলগাঁও। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানা প্রশ্ন উত্থাপিত। যে প্রশ্নগুলির সঠিক জবাব সরকারের কাছে নেই। এতবড় একটা ঘটনা ঘটল প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটা সাংবাদিক সম্মেলন হল না। প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল না। সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিত থাকলেন। তিনি চলে গেলেন আসন্ন বিহার বিধানসভার প্রচার অভিযানে মধুবনিতে। দেখলেঙ্গে – এই 'অমীয় বাণী' শুনালেন। অতীতেও নানা বিপর্যয়ের সময় এসব শোনা গেছে। রাজনীতিটাই এমন বিষম বস্তু!

পহেলগাঁওয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে ছিল না, সে বিষয়টি ষোলআনা খাঁটি। যারা ঘটনার জন্য দায়ী, তারা এত সময় পেল কী করে? সংঘটিত ঘটনার পর পালাতে পারল কীভাবে? সীমান্ত থেকে পহেলগাঁও ১৭০ কিলোমিটারেরও বেশি। এতটা পথ পাড়ি দিয়ে কোথা থেকে এল? আর পালিয়ে কোথায় চলে গেল? কোন সদুত্তর নেই।
কলকাতার বিতানের মৃত্যু শোকে তার স্ত্রী সোহিনীকে নিয়ে যারা রাজনীতি করছে, তাদের মুখ পুড়ল নাকি? বিতানের দাদা সোহিনীর বিরুদ্ধে নানা জালিয়াতির যে প্রশ্ন তুলেছেন, তা এখন সমাজ মাধ্যমে ঘুরছে। বিতানের দাদার কথাগুলির সত্যতার যাচাই হওয়া দরকার। যাহোক, পুলওয়ামার পর ভারত-পাক উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। আবার পহেলগাঁওয়ের পর একই অবস্থা।
বিহার নির্বাচন, ওয়াকফ আন্দোলন, ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের শাসানি – এমন সময় এই নৃশংস ঘটনা ঘটল।

পাশ্চাত্যের আগমার্কা রাজনীতিতে আসলেই মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা বলে কিছু আছে কি? এখানে ক্ষমতাটাই আসল। যখনই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে, তখনই ধর্মের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে সেক্যুলার লোকেরা আত্মসুখ অনুভব করেন। আসলে আগমার্কা নানা মতবাদের কোলে-পিঠে মানুষ আর রাজনীতিটাই যে কদর্য, নোংরা হয়ে পড়েছে, সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। সব দোষ ধর্মের ওপর চাপিয়ে ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী, সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের আক্রমণে জর্জরিত সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন – এমন সহিংস ও কদর্য রাজনীতির মোকাবিলা না করতে পেরে ধর্মের ঘাড়ে দোষ চাপায়। নানা সংঘাতের কারণ ও তার প্রতিকারে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের পথে না গিয়ে, ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠিত না করে পৃথিবীতে কোন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান হওয়া দুষ্কর।

ধর্ম মানুষের চরিত্র গঠনে যে পথ দেখিয়েছে, তা সূর্যের মতো দেদীপ্যমান। যদি ধর্মের এই গুণ না থাকত, পৃথিবী একেবারে এবং আরো রসাতলে চলে যেতই।

24/03/2025

সম্পাদকীয় ২৩/০৩/২০২৫
২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন

গত পনের বছরে আরএসএস-এর শাখা পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেড়েছে। বাম আমলে আরএসএস-এর হাতে যত শাখা সংগঠন ছিল, তার থেকে কয়েকগুণ শাখা সংগঠন এখন বেড়েছে বলে তথ্যসূত্রে জানা যাচ্ছে। পাঁচগুণ না-কি বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

সিপিএম রাজনৈতিকভাবে শহর, গ্রামে আরএসএস-এর সংগঠন যাতে না বাড়তে পারে তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছে। তৃণমূল সরকারের আমলে আরএসএস-এর মোকাবিলা রাজনৈতিকভাবে ও আদর্শিকভাবে না হওয়ার জন্য আরএসএস-এর সংগঠন বিস্তারের পথ খুলে গেছে।

আরএসএস-এর এই প্রভাব বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কতটা ফায়দা তুলতে পারবে – সেটাই এখন প্রশ্ন। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সাফল্যের অন্যতম কারণ হল আরএসএস-এর নীরব প্রচার। পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় আরএসএস। এই জন্য মোহন ভাগবত কয়েকদিন আগে পশ্চিমবঙ্গে তের দিন মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। ছক ও কৌশল রচনা করার জন্যই তার এই পশ্চিমবঙ্গ সফর। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের জন্য আরএসএস ও বিজেপি সেই হিন্দুত্বের চেনা ছকেই এগোবে। হিন্দুত্ববাদ, বিদ্বেষ ছড়ানো, সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্রতি ঘৃণার বাতাবরণ সৃষ্টি এসব করা যে হবে তা বলাবাহুল্য। এই জন্য সুকান্ত মজুমদার, বিশেষ করে শুভেন্দু অধিকারীকে মাঠে নামানো হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর মুখে এখন লাগাম বলে কিছুই নেই। মুসলিম বিধায়কদের প্রতি অশোভন, অভব্য ও অত্যন্ত নিন্দনীয় শব্দ খরচ করেছেন। বিধানসভা থেকে মুসলিম বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে ছুড়ে ফেলার হুমকি দিয়ে রেখেছেন।

আরএসএস বাজার গরম করার পথে হাঁটবে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিপীড়নের ইস্যুকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আবার আনবে। যদিও বাংলাদেশে ওখানকার সংখ্যালঘুদের প্রতি সাম্প্রদায়িক ঘৃণা-বিদ্বেষ ও জিঘাংসামূলক অত্যাচার জুলাই বিপ্লবের পরে তেমন হয়েছে, তার সুস্পষ্ট কোন প্রমাণ নেই। কোন নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে একথা প্রমাণিত হয়নি যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন নির্দিষ্ট কোন চেনা ছকে হাসিনার মহাপতনের পর হয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দু ঐক্য পরিষদের নেতা গোবিন্দ প্রামানিকদের মতো ব্যক্তিরা হিন্দু নির্যাতনের বিষয়ে সোচ্চার নন, বরং তারা ইতিবাচক কথাই বলছেন। দুর্গা পুজোর সময় সারা বাংলাদেশে যেভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে, তার প্রশংসা করেছেন। ওখানে জামায়াত, ছাত্র শিবির এবং অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের কর্মীরা রাত জেগে এবং সারাদিন ধরে নিরাপত্তার কাজে যত্নবান ছিলেন। বংলাদেশের ইস্যুকে সামনে রেখে আরএসএস যে গেমপ্ল্যান করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিতব্য আরএসএস-এর জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে আরএসএস – এমন সংবাদ আসছে।

হিন্দু রাষ্ট্র গঠন, হিন্দুত্ববাদের চ্যাম্পিয়ন সেজে আরএসএস ও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক প্রচার করবে। সংখ্যালঘু মানুষদের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টির প্রয়াস চালাবে। হিন্দুদের মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেই।

'সংখ্যালঘু তোষণ', আওরঙ্গজেবের ইস্যু ও দুর্নীতি নিয়ে মাঠ গরম করতে চাইবে। অন্যান্য রাজ্যে যেমন প্রচার করে এসেছে, তেমনই করবে। তার সঙ্গে বাংলাদেশ ইস্যুকে নিয়ে বাজার গরমটা বেশি করতে চাইবে।

এই সময় সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে ইতিবাচক ভূমিকায় আসতে হবে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান হওয়া দরকার। বিভিন্ন বৈঠকী আলোচনার বন্দোবস্ত নিরপেক্ষ সামাজিক সংগঠনগুলিকে করতে হবে। সুশীল সমাজের লোকদের ময়দানে ব্যাপক হারে নামাতে হবে। অমুসলিম মহল্লায় সুশীল সমাজের অমুসলিম ব্যক্তিত্বদের মাধ্যমে বিজেপির আক্রমণের জবাব দিতে হবে। বাংলাদেশে, ওখানকার সংখ্যালঘুদের প্রতি নিপীড়ন কতটা হয়েছে, তার জন্য টিম ওখানে গিয়ে ময়নাতদন্ত করতে পারে। প্রকৃত সত্যটা কি, তা দেখতে হবে। তাকে তুলে ধরতে হবে। যদি হিন্দুদের ওপর কোথাও নিপীড়ন হয়ে থাকে, তার কারণ ধর্মীয় বিদ্বেষ, না-কি রাজনৈতিক, তার তথ্য আসা দরকার।

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে, এখানে সাম্প্রদায়িক গণ্ডগোল করার অপপ্রয়াস হতে পারে। এর জন্য শাসক দল, প্রশাসনকে সদা সতর্ক থাকতে হবে। প্রত্যেকটা জেলায় সদভাবনার প্ল্যাটফর্ম কায়েম করে ব্যাপক প্রচারের কাজ করতে হবে। যাতে সম্প্রীতি বজায় থাকতে পারে।

প্রতিটি এলাকায় পাল্টা প্রচার করতে হবে নীরবে এবং প্রকাশ্যে। তরুণ-যুবকদের মধ্যে যুব ফোরাম কায়েম করে সাম্প্রদায়িক প্রচারের পাল্টা কাজে সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলিকে এগিয়ে আসা দরকার। রাজ্যস্তরে ধার্মিক জনমোর্চার মতো মঞ্চের মাধ্যমে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের নিয়ে মিটিং মিছিল করলে ফলপ্রদ হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক নিউজের মোকাবিলায় ইউটিউবার ও সোশ্যাল মিডিয়ার কর্মীদের সক্রিয়করণ করা দরকার। মুসলিম সংখ্যালঘু সমাজকে দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের জন্য বৈঠকী আলোচনা এলাকায় এলাকায় করা দরকার। পশ্চিমবাংলার মানুষ শান্ত প্রকৃতির। সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে বাংলার মানুষ তেমন পছন্দ করেন না। তাদের এই মানসিক গড়নকে কাজে লাগাতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ সমস্ত দলগুলির মধ্যে একটা সামঞ্জস্যমূলক ভোট দানের কৌশলও রপ্ত করা দরকার। সেটা করতে গেলে ভোট ভাগাভাগি না করে কেন্দ্র ও প্রার্থী দেখে ভোট দানের কৌশল অবলম্বন করা দরকার। তার শিক্ষা ও প্রচারও দরকার।

19/02/2025

সম্পাদকীয় ১৬/২/২৫
জুলুমতন্ত্র ও সুবিচার

একটি মহৎ সমাজের নিদর্শন হল মানুষের মধ্যে সুবিচারকে প্রতিষ্ঠিত করা। যখন মানুষেরা সামষ্টিকভাবে বসবাস করে এবং একটি সংস্কৃতি-সভ্যতার নির্মাণ করে, তখন সুবিচারের সিস্টেমটা একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ গ্রহণ করে থাকে। সক্রেটিস এথেন্স শহরকে জাস্টিস বা ইনসাফের উপরে কায়েম করার দূরদৃষ্টি রাখতেন।
একবিংশ শতাব্দীতে বর্তমানে সুবিচারের যে ধারণা তা থেকে সক্রেটিসের ধারণার পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু সুবিচারের একটি বুনিয়াদী ধারণা সর্বত্র বিরাজিত ছিল। আর তা হল আগ্রাসনকারীদের হাত থেকে মানুষদের রক্ষাকবচ দেওয়া। যদি আগ্রাসনকারী অন্যায়-জুলুম করে থাকে তাকে সমুচিত শাস্তি দেওয়া একান্ত আবশ্যক। আগ্রাসনের হাত থেকে মানুষদের হেফাজত করা সুবিচারের দাবি। ভারতের ইতিহাস সুবিচারের ধারণা থেকে মুক্ত ছিল না। এখানে মুঘল যুগে সুবিচারের পদ্ধতিগত প্রাতিষ্ঠানিক রূপটি কাজীদের মাধ্যমে সম্পন্ন হত। এটি এটি একটি পৃথক প্রতিষ্ঠান ছিল। সুবিচার পেতে গেলে আদালতকে প্রশাসন থেকে পৃথক রাখতে হবে। প্রশাসন ও আদালত স্বতন্ত্রভাবে কাজ করবে।
কাজীরা স্বাধীনতা পেতেন। তারা বিচারিক কাজ সম্পন্ন করার জন্য চাপ-মুক্ত পরিবেশে কাজ করতেন। অনেক সম্রাট কাজীদের সুবিচার প্রদানে প্রভাব রাখতেন। ভারতে ব্রিটিশ যুগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিচারিক সিস্টেম চালু করে। তারপরে ইংল্যান্ডের রাজকীয় ফরমান বলে দেশ শাসিত হতে শুরু করলে সেই ধারা অব্যাহত থাকে।

বর্তমানে ভারত ব্রিটিশ ব্যবস্থাপনাকে অনুসরণ করে চলছে। ঔপনিবেশিক যুগে অবশ্য মানুষ নানাভাবে অত্যাচারের শিকার হয়েছে, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে কলঙ্কিত করছে। যাইহোক, জাস্টিস সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল সংবিধান। সংবিধান সুবিচার কায়েমে গাইডলাইন হিসেবে কাজ করে থাকে। ভারতীয় সংবিধানের মহত্ব হল যে, নির্যাতিত শ্রেণিকে সুবিচার প্রদানে এতে যে সকল ধারাগুলি উল্লেখিত হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু দেশবাসী কি সেই সুযোগ সত্যিকার অর্থে ভোগ করছেন? না এখন ইটালিয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির অনুসরণ করা হচ্ছে?

ম্যাকিয়াভেলির বিখ্যাত বই হল 'দ্য প্রিন্স'। এই বইয়ে তিনি এমন কিছু বিষয়ের অবতারণা করেছেন, যার ফলে রাজনীতিকগণ পথভ্রষ্ট হতে বাধ্য। নৈতিকতা বিবর্জিত চিন্তাভাবনা তার লেখাতে সুস্পষ্ট। ভারতের জাস্টিস সিস্টেমের মধ্যে জনগণ সুবিচার পেতে পারে এমন বিষয়াবলীকে সংবিধান প্রণেতাগণ দিয়ে গেছেন। এইদৃষ্টে পৃথিবীতে ভারতীয় সংবিধানের সুনাম আছে। কিন্তু রাজনীতিকরা নৈতিকতা বিবর্জিত চিন্তাভাবনার অনুশীলন করার জন্য জনগণ সুবিচার পাচ্ছে না। যে সকল মানুষেরা সুবিচার পাচ্ছেন না, তাদের মধ্যে নারী সমাজ বিশেষভাবে পড়ে। কলকাতার আরজি কর কাণ্ডে অভয়া ধর্ষিতা ও খুন হলেন। প্রকৃত অর্থে সুবিচার কি পাওয়া গেল? সমাজ কি সত্যিই তা পেল? উত্তর দেবার তেমন প্রয়োজন নেই।

গুজরাটের বিলকিস বানু, জম্মু কাশ্মীরের আসিফা, হাথরাসের ধর্ষিতা নারীটি-সহ এমন অনেক অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। নারীরা আজো এই একবিংশ শতাব্দীতে সুবিচার পাচ্ছে কই? নারীবাদী আন্দোলন এই ক্ষেত্রে ব্যর্থ। নারী স্বাধীনতার ধ্বজাধারীরা নানা সওয়াল করে এসেছেন, তারাও ব্যর্থ। ব্যর্থ যদি না হবে তাহলে বধূ নির্যাতন, পণ প্রথার বলি, নারী খুন, আত্মহত্যার ঘটনা, ধর্ষণ ও পারিবারিক সহিংসতা এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি সবই বহাল তবিয়তে চলছে। উন্নত দেশগুলিও এ থেকে রেহাই নেই। আমেরিকার সামরিক বিভাগে নারী কর্মীদের যৌন হেনস্থার শিকার অহরহ ঘটে চলেছে। ভারতে নারী সংক্রান্ত অপরাধ দিন দিন বাড়ছে।

অন্যদিকে, ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘু সমাজ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, দুর্বল শ্রেণি, পশ্চাদপদ সমাজের মানুষেরা এবং আদিবাসী সম্প্রদায় ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘু জনসমাজ সুবিচার পাচ্ছেন না। এখন এর মাত্রা আরো বেড়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে ক্রমবৃদ্ধিমান।

বুলডোজার পলিসির শিকার হচ্ছে মুসলিমরা সবথেকে বেশি। ব্যুরোক্র্যাসি তথা আমলাদের সহায়তায় রাজনীতিকরা এমন জঘন্য কাজ করছেন। কারা করছে, কোন শক্তি করছে – তা বলার আবশ্যকতা নেই। কিন্তু এই ধরনের আগ্রাসন জাস্টিস সিস্টেমের সম্পূর্ণ বিরোধী। মানবীয় মূল্যবোধের সম্পূর্ণ খেলাফ। বাংলাদেশে হাসিনার আমলে ও তার পিতার শাসনামলে মানুষ অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে হাসিনার সময়ে খুন, গুম, আয়নাঘরে রেখে অমানুষিক অত্যাচার এবং পুলিশের গুলিতে তাজা তাজা প্রাণের নিঃশেষ বিশ্বসমাজ আজ জানতে পারছে। গোটা দুনিয়া জানতে পারছে যে, হাসিনা কত ভয়ঙ্কর, অত্যাচারী ও জালেম মহিলা। তার প্রতিশোধ পরায়ণতা কতই না নির্মম ও নিষ্ঠুর!

ভারতে বুলডোজার করে মুসলিমদের ঘর-বাড়ি ভাঙার বিষয়ে শীর্ষ আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নোটিশে বিষয়টিকে এনেছেন। এতে কতটা সফল হওয়া যাবে, আগ্রাসী চরিত্রকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে, তা দেখার বিষয়। তবে কোন জালেমকে বিশ্বনিয়ন্তা বেশিদিন ছাড় দেন না। ইতিহাস তাই বলে। তাঁর নৈতিক আইন তথা মোরাল ল' অনুসারে জালিম, তানাশাহির পতন হওয়া অনিবার্য।

তবে নাগরিক সমাজকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সজাগ হতে হবে। জালেমের জুলুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠাতে হবে। ভারত যদি বিশ্বসভ্যতায় নিজের আসন লাভ করতে চায়, তাহলে জাস্টিস সিস্টেম বা বৈচারিক পদ্ধতিকে যথাযথ অনুসরণ করতেই হবে। নচেৎ তা লাভ করা সম্ভব নয়।

19/02/2025
যুব শক্তির জাগরনে ক্রিকেট টুর্নামেন্টে রানীনগর-২ ব্লকের জয়মীজান ডেস্ক: সলিডারিটি ইয়ুথ মুভমেন্টের আয়োজনে “যুব শক্তির জা...
02/02/2025

যুব শক্তির জাগরনে ক্রিকেট টুর্নামেন্টে রানীনগর-২ ব্লকের জয়
মীজান ডেস্ক: সলিডারিটি ইয়ুথ মুভমেন্টের আয়োজনে “যুব শক্তির জাগরন, মানবতার উন্নয়ন” ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ডোমকল মহকুমার সমস্ত ব্লকের যুবাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো একটি প্রাণবন্ত ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে রানীনগর-২ ব্লক ডোমকল ব্লককে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়নের শিরোপা লাভ করে। পাশাপাশি, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় (ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট) নির্বাচিত হন সৌমেন মহাশয় এবং ফাইনাল ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় (ম্যান অব দ্য ম্যাচ) হন জিসান।
নাজিরপুর এসেরপাড়া হাই স্কুলের মাঠে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয় ব্লকের যুব দলগুলি। খেলাধুলার পাশাপাশি যুব সমাজের মধ্যে ঐক্য, শৃঙ্খলা এবং সমাজসেবার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
সলিডারিটি ইয়ুথ মুভমেন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, “যুবাদের মাঝে ইতিবাচক প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তোলা এবং সমাজের জন্য কাজের অনুপ্রেরণা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। এই টুর্নামেন্ট তারই প্রতিফলন।
ফাইনাল শেষে ট্রফি ও মেডেল বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জামাতে ইসলামী হিন্দের রানীনগর ১ ব্লক সভাপতি ওসমান মন্ডল, রুকনে জামাত ইসমাইল মন্ডলসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সলিডারিটি ইয়ুথ মুভমেন্টের এই উদ্যোগ শুধু ক্রিকেটের সীমায় থাকেনি, বরং এটি যুবাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি এবং সম্প্রীতি বাড়াতে সাহায্য করছে। ভবিষ্যতে এরকম সামাজিক-সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে যুব শক্তিকে দেশ ও মানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ করার পরিকল্পনা জানিয়েছে সংগঠনটি।

**মিল্লি ঐক্য পরিষদের ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষায় ডোমকালে সমাবেশ**  **প্রতিবাদে মুখর মুর্শিদাবাদ: কেন্দ্রীয় সরকারের আইন সংশোধন...
02/02/2025

**মিল্লি ঐক্য পরিষদের ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষায় ডোমকালে সমাবেশ**
**প্রতিবাদে মুখর মুর্শিদাবাদ: কেন্দ্রীয় সরকারের আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলনের ডাক**

ডোমকল, মুর্শিদাবাদ, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ওয়াকফ আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শনিবার ডোমকল জনকল্যাণ ময়দানে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছে মিল্লি ঐক্য পরিষদ। "ওয়াকফ সম্পত্তি সংরক্ষণ" এর দাবিতে এই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

জামায়াতের রাজ্য সভাপতি ডাঃ মসিউর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে আইনী কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার হরণের সমতুল্য। এরই প্রতিক্রিয়ায় দেশজুড়ে চলছে বিক্ষোভ ও আইনি লড়াই।

মিল্লি ঐক্য পরিষদের পক্ষে জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য পরামর্শ পরিষদের সদস্য মোঃ আসরাফুল ইসলাম বলেন, "ওয়াকফ সম্পত্তি ধর্মীয় ও সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়। সরকারের এই পদক্ষেপ মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থের পরিপন্থী। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।"
ওয়াকফ আইন-১৯৯৫ অনুযায়ী, ওয়াকফ সম্পত্তি ধর্মীয় ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলির তত্ত্বাবধানে থাকে। তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার এই আইন সংশোধনের প্রস্তাব এনেছে, যা ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা হ্রাস করে সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে। মুসলিম সংগঠনগুলির মতে, এটা সম্প্রদায়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব করার চক্রান্ত। পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে মামলা ও বিক্ষোভ চলছে।
মিল্লি ঐক্য পরিষদের পক্ষে জানানো হয়েছে, এই সমাবেশ শুধু প্রতিবাদই নয়, বরং আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি ও গণসচেতনতা তৈরির মঞ্চ। অংশগ্রহণকারীরা সরকারের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন: "ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তক্ষেপের লক্ষ্য নয়। সংশোধনী প্রত্যাহার করতে হবে।"
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় অনুরূপ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডোমকালের এই সমাবেশে হাজারো মানুষের উপস্থিতি আন্দোলনকে নতুন গতি দেবে বলে আশাবাদী আয়োজকরা।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি ডাঃ মসিহুর রহমান, রাজ্য সম্পাদক মোঃ মসিউর রহমান, জামাআতে ইসলামী হিন্দ জেলা সভাপতি শামসুল আলম, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লীগের সর্বভারতীয় সভাপতি প্রফেসর মোঃ সুলাইমান, অল বেঙ্গল ইমাম মোয়াজ্জেন অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক মাওলানা নিজামুদ্দিন বিশ্বাস, এবং সম্ভাবনা মঞ্চের সভাপতি সমরেন্দ্র ভট্টাচার্যের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও মিল্লি ও মুলকী মাসায়েলের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, জমিয়তে আহলে হাদিসের ডোমকল ব্লক সম্পাদক মাওলানা আলি হোসেনসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জামাতে ইসলামী হিন্দের ডোমকল ব্লক সভাপতি ব্লক সভাপতি মাসুদ করিম।

26/01/2025

সম্পাদকীয় ২৬/০১/২০২৫
সঙ্ঘ কেন ১৫ আগস্ট-কে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে মানতে চাচ্ছে না?

রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সর্বভারতীয় প্রধান মোহন ভাগবত ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতার বয়স কত, তা নির্ধারণ তার ভাষায় করতে চেয়েছেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্টকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে মান্যতা দিতে নারাজ। ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি স্বাধীনতার দিন হিসেবে ধার্য্য করতে দেশব্যাপী একটা বিতর্ক ছুঁড়ে দিতে চেয়েছেন। স্মরণে থাকার কথা যে, ওই দিনে রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়। তাই এই দিনটিকে স্বাধীনতার প্রাণপ্রতিষ্ঠা ধরে নিয়ে দেশের স্বাধীনতাকে মান্যতা দেওয়া হোক – এই কথাটি ভাবগত বলতে চেয়েছেন।

যদি তার কথাকে মেনে নিতে হয়, তাহলে ভারতের ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশ সরকারের যে প্রায় দু'শ বছরের রাজত্ব এই দেশে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল, সেই দিনগুলিতে কি পরাধীনতা ও দাসত্বের শৃঙ্খলবন্দি হিসেবে ধরা হবে না? মোহন ভাগবত যদি ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারিকে ভিত্তি করে স্বাধীনতার ভিত্তিবর্ষ হিসেবে ধরেন, তাহলে তার কাছে ব্রিটিশ গোলামীর যুগকে গোলামী বলতেই নারাজ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

কেন ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধনের দিনকে স্বাধীনতার দিন হিসেবে নির্ধারণ করতে চাইছেন, তা বুঝতে অসুবিধার নয়। রামমন্দিরের সঙ্গে বাবরী মসজিদের রাজনৈতিক টানাপড়েনের সম্পর্ক সুবিদিত। বাবরের শাসনামলে তার সেনানায়ক মীর বাকী তারই নির্দেশে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন। বাবরের শাসনামল থেকেই মোঘল যুগ শুরু হয়। তাই সুনির্দিষ্টভাবে মোঘল যুগ অর্থাৎ মুসলিম শাসনামলকে দাসত্বের যুগ হিসেবে চিহ্নিত করতে হিন্দুত্ববাদীরা চাইছেন। বাবরি মসজিদ, রাম মন্দির দ্বৈরথে বাবরি মসজিদের শাহাদাত এক ঐতিহাসিক কলঙ্কিত ইতিহাস। মোঘল শাসক বাবর হিন্দু মন্দির ভেঙে উক্ত মসজিদ যে নির্মাণ করেননি, তা প্রমাণিত। এই জন্য যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পরিষ্কার করে রায় দিতে গিয়ে বলেছে, প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল মূলত ব্রিটিশরাই বিভাজনের রাজনীতি করতে গিয়ে উদ্ভট এই ইতিহাস তৈরি করে বসে।

বেভারিজ বাবরনামা-র অনুবাদ করেন। তাতে স্বীয় টীকায় স্বকপোলকল্পিতভাবে রাম মন্দিরের কল্পিত গল্প ফাঁদে। সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ কেন্দ্রিক রাজনীতি ও সংখ্যাগরিষ্ঠের 'আস্থা'-র প্রশ্নে শীর্ষ আদালত রায় দিয়ে বসল রামমন্দিরের পক্ষে। এটি সম্পূর্ণরূপে ইনসাফের খেলাফ।

এখন প্রশ্ন হল, মোহন ভাবগত কেবল রামমন্দিরের উদঘাটনের দিন, ২২ জানুয়ারি কেন স্বাধীনতার নির্ণায়ক দিন বলতে চাচ্ছেন। যদি বাবরের যুগ থেকে গোলামীর সূচনা হয়, তাহলে ভারতে দিল্লিতে সুলতান যুগের প্রশ্নে কি বলা হবে। মহম্মদ ঘোরীর যুগ থেকেই পরাধীনতার যুগ ধরা হবে না কেন? আসলে রামমন্দির ইস্যুকে এখনো রাজনীতিতে জিইয়ে রাখার জন্য ২২ জানুয়ারিকে স্বাধীনতার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন বলা হচ্ছে। এটাই আরএসএস-এর নোংরা রাজনীতি।

ভারতে মুসলিম শাসনামলকে হিন্দুত্ববাদীরা ছাড়া কেউ পরাধীনতার ইতিহাস বলে তুলে ধরেননি। এই জন্য যে, মুসলিম শাসকরা এই দেশকে তাদের আপন করে নিয়েছিলেন। এ দেশের এমন অনেক সংস্কৃতিকে মুসলিমরা গ্রহণ করেছেন; যা দেশীয় ছিল, আর তাদের মৌল বিশ্বাসের পরিপন্থী নয়, তাকে গ্রহণ করে নিয়েছিল। দেশে বিভাজনের রাজনীতি তারা করেননি। হিন্দু-মুসলিম সুসম্পর্ক বজায় ছিল প্রশংসনীয়ভাবে।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদান ছিল অনবদ্য। আওরঙ্গজেবের শাসনামলে সারা বিশ্বের মোট অভ্যন্তরীণ আয়ের ২৭ শতাংশ কেবল ভারতে ছিল। তাহলে ভারত সেই সময় অর্থনৈতিক উন্নয়নে কতটা উন্নত ছিল। সম্পদের পাচার মুসলিম শাসনামলে হয়নি। যা ব্রিটিশরা করেছিল। এ দেশের সম্পদে ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লব সম্ভব হয়েছিল। না হলে হতেই পারত না। নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, সম্পদের বহিঃনিষ্ক্রমণ ব্রিটিশরাই করেছিল। দেশ শাসন করে তারা তল্পিতল্পা নিয়ে পলায়ন করেছিল। শোষণ, অত্যাচার, জুলুম, খুন-হত্যা, নারকীয় তাণ্ডব, জেল জরিমানা, ফাঁসি, দ্বীপান্তর এবং নানা কালাকানুনের দ্বারা ভারতের হিন্দু-মুসলিম, আদিবাসীদের জীবনকে অতিষ্ঠ করেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। তাই সব ঐতিহাসিকগণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শাসনামলকে দাসত্বের জীবন হিসেবেই সাব্যস্ত করেছেন। বহু ত্যাগ ও কোরবানীর বিনিময়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশ স্বাধীন হয়। যদি ব্রিটিশরা না এই দেশে রাজত্ব করত, তাহলে দেশ বিভাগ হত না। তাদের বিভাজনের রাজনীতির জন্য দেশভাগের রাস্তা প্রশস্ত হয়। আর দেশীয় রাজনীতিকদের ভুলের মাশুল এর জন্য দিতে হয়েছে।

আরএসএস ও তার আগে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু মহাসভা তাদের কর্মকাণ্ডে হিন্দুত্ববাদী নয়, আসলে ব্রাহ্মণ্যবাদী, মনুবাদী রাষ্ট্র গঠনের জন্য ব্রিটিশ বিরোধী লড়াই থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। সাভারকার ১৯২০ সালে গ্রেপ্তার হন। তখন থেকেই তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে স্বাধীনতার আন্দোলনকে বিপথগামী করতে উদ্যত হন। ১৯৩৭ সালে সাভারকার নজরবন্দি দশা থেকে মুক্ত হলে হিন্দু মহাসভার সভাপতি হন। তিনি সরাসরি ১৯৪২-এর ''ভারত ছাড়ো'' আন্দোলনের বিরোধিতা করেন। ৩১ আগস্ট ১৯৪২-তে সাভারকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশে তখন হিন্দু মহাসভার সদস্যরা যে ক'টি প্রাদেশিক, স্থানীয় ও আঞ্চলিক সরকারি প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন, সেগুলো থেকে পদত্যাগ করেননি। অথচ কংগ্রেসি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি গান্ধীর নির্দেশে পদ স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছিলেন।
১৯৪২ সালে দেশব্যাপী ''ভারত ছাড়ো'' গণ-অভ্যুত্থানের সময় সাভারকার হিন্দু যুবকদের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হওয়ার ডাক দেয়। যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের হয়ে বিভিন্ন রণাঙ্গনে লড়বে। আরএসএস-এর প্রধান গোলওয়ালকার স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিদ্রুপ করে গেছেন। একে ''মুসলিম তোষণ''-এর সঙ্গে তুলনা করে বুদ্ধিবৃত্তিক অজ্ঞতা দেখিয়েছেন। অবশ্য এটা অজ্ঞতা নয়, খুবই পরিকল্পনা করে একথা বলেছেন। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪২ সালে। এর বন্দি সেনানায়কদের লালকেল্লা বিচারের সময় গোলওয়ালকার একটা কথাও খরচ করেননি। বোম্বের নৌ-বিদ্রোহের সময় চুপচাপ ছিলেন। অথচ আরএসএস-এর কার্যালয় মহারাষ্ট্রের নাগপুরে।

গোলওয়ালকার ও হেডেগেওয়ার এককেন্দ্রিক, চূড়ান্ত কর্তৃত্ববাদী ও পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। তাদের ''রাষ্ট্র দর্শন'' হল অথরিটোরিয়ান ''রাষ্ট্রবাদী'' দর্শন। এর প্রেরণা তারা পেয়েছে ফ্যাসিবাদী মুসোলিনী ও নাৎসীবাদী হিটলারের কাছ থেকে। আরএসএস মুখে হিন্দুত্ব-এর কথা বললেও, তাদের রাজনীতি পাশ্চাত্য অনুকরণে গড়ে উঠেছে। তাদের কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র কাঠামো ও অবিকল ইউরোপীয় জাতি রাষ্ট্রবাদের কপি ছাড়া কিছুই নয়। যার উৎপন্ন হয়েছে ঔপনিবেশিক উৎপাদন হিসেবে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে আরএসএস-এর শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। ''এক দেশ এক ভোট'' চাচ্ছে কেন? সবকিছুতেই আত্মকেন্দ্রিকতার জিগির কেন? আসলে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র কায়েম করতে চাওয়া হচ্ছে। যেখানে তামাম সংখ্যালঘু, দলিত, হরিজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের কোন সম্মান, মর্যাদা ও নাগরিক অধিকার থাকবে না। নাগরিকত্ব হুমকির সম্মুখীন হতে থাকবে, যেমন সিএএ ও এনআরসি আন্দোলনের সময় দেখা গিয়েছিল। সংসদ, বিচারব্যবস্থা, মিডিয়া, নির্বাচন কমিশন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিজেদের আয়ত্তে আনতে চাইছে। ভাগবত ১৫ আগস্টকে সুচিন্তিতভাবে ও সুপরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার দিন হিসেবে মানতে চাচ্ছেন না। এক ঢিলে অনেক পাখি মারার এটা কৌশল।

13/01/2025

সম্পাদকীয় ১২/০১/২০২৫
ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল
শর্তহীন ইনসাফ কায়েম করা

ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার অন্যতম লক্ষ্য হল ইনসাফ কায়েম করা। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস হল তাওহীদ। তাওহীদ একত্ববাদের নাম। মহান স্রষ্টা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও গুণাবলীতে কোন সত্তার অংশী স্থাপন করা যাবেই না। যদি কেউ করে থাকে তাহলে ব্যক্তি অংশীবাদী বলে সাব্যস্ত হবে। অংশীবাদকে ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় 'শিরক'। শিরক হল জঘন্যতম চিন্তা-ভাবনার নামান্তর।

প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস স্থাপন যখন মানুষ করে বা মানবগোষ্ঠী করে থাকে, তাদের দ্বারা সমাজে ইনসাফ কায়েম করার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। আল্লাহ সবচেয়ে সুবিচারক। আল্লাহ তার সৃষ্টির ওপর এতটাই দয়াশীল ও করুণাপ্রবণ যে, তাই তিনি কারোর ওপর কোনপ্রকার বাড়াবাড়ি করেন না। তিনি জুলুমকে নিজের ওপর অবৈধ করে নিয়েছেন। জুলুম বা অত্যাচার মানেই বে-ইনসাফি কার্যকলাপ।

আল্লাহর সৃষ্টিতে সর্বত্র ভারসাম্যপূর্ণতা রয়েছে। কোথাও কোনপ্রকার ভারসাম্যহীনতার লেশমাত্র নেই। আল্লাহ সবকিছুকেই ত্রুটি-মুক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। উদ্দেশ্যপূর্ণভাবেই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবিধানও ভারসাম্যপূর্ণ, সমতা রয়েছে। এখানে ইসলাম আল্লাহর দেওয়া মানবজাতির জন্য অনুগ্রহ স্বরূপ, অর্থাৎ রহমত। মানবজাতির জীবনে ইনসাফ কায়েমই হল ইসলামী জীবন বিধানের উদ্দেশ্য। মৌল বিশ্বাস, চিন্তা-ভাবনা, জীবনবিধানের মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে ইনসাফ কায়েম করা যায় না।
তাওহীদি ধর্ম হিসেবে ইসলাম পৃথিবীতে ইনসাফ কায়েম করতে বদ্ধপরিকর। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ইনসাফ হল শর্তহীন। শর্তহীন হল এই অর্থে যে- কোন ধর্ম, বর্ণ, বংশ, গোত্র, জাতি, ভৌগোলিকতার ভিত্তিতে ইনসাফ করা বা না-করার বিষয়টি এখানে পরিত্যাজ্য। বর্ণ, বংশ, ধর্ম, জাতি, এলাকা, অঞ্চল বা ভৌগোলিকতার অন্তর্ভুক্ত সকল মানুষকে ইনসাফ দিতে হবে। ইনসাফ প্রত্যেকের লাভ করা তার জন্মগত অধিকার।

ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার এই অনিন্দ্য সুন্দর বৈশিষ্ট্য ইসলামী জীবনবিধানকে এত মহীয়ান করেছে। মুশকিল হল মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতি কেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা ইসলামী সমাজব্যবস্থা বা রাষ্ট্রব্যবস্থার এই আদর্শ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক টানাপড়েনে ইনসাফ সবার ওপর করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং দেখা গেছে, মুসলিম জাতীয়তাবাদী পলিটিক্স অন্যান্যদের মতো করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনুকরণ করতে গিয়ে ইনসাফের গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। ফলত অমুসলিম জনগণ ইসলামের ইনসাফ-প্রিয় রাষ্ট্রীয় চিন্তাধারার আলোকচ্ছটাকে বুঝে উঠতে পারেনি। ইসলাম আর মুসলিমদের ব্যবহারিক রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে পৃথক পৃথকভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনি।

অমুসলিমদের কাছে ইসলামের সামাজিক সুবিচারের ধারণাকে প্রামাণ্য দলিল আকারে উপস্থাপন করতে হবে। মুসলিমদের ত্রুটি-বিচ্যুতিকে সংশোধন করতে হবে। কোন দেশে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে পাশ্চাত্য ধাঁচের রাজনৈতিক চর্চা ও তার থেকে উদ্ভূত সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী চিন্তা-ভাবনার ফলে সৃষ্ট টানাপড়েনকে বুঝতে হবে। মুসলিমদের ভুলকে ভুল হিসেবে সাব্যস্ত করতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে যে সকল ইসলামপন্থী দল ইসলামের সামাজিক সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতাকে এই সরেজমিনে প্রতিষ্ঠা করতে দায়িত্বশীল, তাদের কার্যকলাপকে মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সঠিক মূল্যায়ন করা একান্ত দরকার। ইসলামের এক সোনালি অতীত ইতিহাস আছে। সুবিচারমূলক ও ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্র নির্মাণের বাস্তব নমুনা হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সময়ে দুনিয়া অবলোকন করেছে। এই ইতিহাসকে কেউ কোনমতে চেষ্টা করেও অস্বীকার করতে পারবে না। মানুষদের বিভ্রান্ত করে পার পাবে না। কেননা, ইতিহাস নিরপেক্ষ। দলিল-প্রমাণ ছাড়া ইতিহাস হয় না। নৈবর্ক্তিক ইতিহাস চর্চার কাজ হল ঐতিহাসিকদের।

হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর দুনিয়া থেকে বিদায়ের পর তাঁর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সত্যানুসারী খলিফারা সেই আদর্শের পথ থেকে বিচ্যুত হননি। হযরত আবু বকর, হযরত ওমর ফারুখ থেকে শুরু করে হযরত আলী পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত ছিল। সাম্প্রদায়িক সমস্যার উদ্ভব হয়নি তাঁদের শাসনামলে। বর্ণ, ধর্ম ও জাতীয়তার ভিত্তিতে ইনসাফের বিষয়টির রাষ্ট্রীয় অনুশীলন হয়নি। অর্থাৎ ইনসাফ শর্তহীন ছিল। সেই ইতিহাস হল পৃথিবীবাসীর জন্য মাইলফলক।

আজকের যুগে লোকেরা সমাজতন্ত্র, পশ্চিমা জাতীয়তাবাদ, পুঁজিবাদ-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর চর্চা করে থাকে। এইসব নীতি ও চিন্তা-ভাবনার ভিত্তিতে কোন দল আন্দোলন করলে বা রাজনৈতিক বিপ্লব করতে চাইলে সুবিচার, ন্যায়পরায়ণতা জনগণ কতটা পাবে, সেই বিষয়ে অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা অতটা হয় না। কিন্তু কোন আদর্শপরায়ণ ইসলামপন্থী দল রাজনৈতিক বিপ্লবে অংশগ্রহণ করলেই মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘুদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হবার জুজু দেখানো হয়। অথচ আধুনিক পাশ্চাত্য মতবাদগুলি গত কয়েক শতক ধরে গোটা দুনিয়াকে নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে বিষময় ফল তৈরি করেছে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে মানুষ। গণতন্ত্রে মানুষের অধিকার কীভাবে পদদলিত হচ্ছে, তা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট। দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধেছে। অনৈতিক আচরণের ব্যাপকতা ক্রম প্রসারমান। সাংস্কৃতিক দেউলিয়াপনার শিকার রাষ্ট্রের কর্মকর্তা থেকে আমজনতা। সমাজতান্ত্রিক কাঠামোতে সোভিয়েত ইউনিয়নের দৈন্যদশা প্রকটমান। তার ফলে গত শতকের নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেল। সমাজতন্ত্রের পথ বেয়ে কমিউনিজমে উত্তরণ ব্যর্থ হয়ে গেল, অধরা রয়ে গেল।
ইসলামের সোনালি অতীত যখন রয়েছে, আর প্র্যাকটিক্যালি যখন ইনসাফপূর্ণ সমাজের রূপরেখা বিশ্ব দেখেছে, তখন দুনিয়া কেন ইসলামের অনুসরণে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে ভুগতে থাকবে। আসলে কয়েকটি স্বার্থান্বেষী দল, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদীরা এবং অংশীবাদী ধর্মীয় নেতারা মানুষদের নিজ নিজ স্বার্থেই ও আধিপত্যকে ধরে রাখতে ইসলাম সম্পর্কে ভুল প্রচার করছে।

মুসলিম দেশগুলির উচিত ইসলামের ভিত্তিতে সামাজিক সুবিচারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে বিশ্ববাসীর সামনে ইসলামের সত্যকে তুলে ধরা। এটা তাদের বিশ্বাসগত দায়িত্ব। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে বিবেকের পাহারাদার ও জনগণের পাহারাদার দল, নেতা, কর্মী, রাষ্ট্রীয় কর্ণধারগণ, কর্মচারীরা হয়ে থাকেন। আল্লাহর প্রতি জবাবদিহীর তীব্র চেতনাকে তাদের ইনসাফ-প্রিয় করে তোলে। ন্যায়, ইনসাফ তাদের মজ্জাগত তাই হয়ে যায়।

30/12/2024

সম্পাদকীয় ২৯/১২/২০২৪

সম্প্রীতি রক্ষায় সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে

পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য যাতে বজায় থাকে তার জন্য নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনো দেশের নাগরিক সমাজ তথা সুশীল সমাজ রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বিপর্যয় মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই দৃষ্টিকোণকে সামনে রেখে সুশীল সমাজকে কার্যকর পন্থা অবলম্বন করতে হবে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে পশ্চিমবাংলাকে অস্থির করে তোলার একটা ফন্দি আঁটা হচ্ছে। এতে মিডিয়ার একাংশের যেমন হাত আছে, তেমনি রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক কার্যকলাপ বিশেষভাবে দায়ী।

প্রকৃতপক্ষে প্রতিবেশী ওই দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের যে খবর এখানে চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে, তার ফলে পরিবেশ কিছুটা নেতিবাচক হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব ছিল বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবার। প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এবং ঘটনার আসল তাৎপর্য কী, কী পরিমাণে ঘটনা ঘটেছে, তা জনসমক্ষে তুলে আনা। কিন্তু সেই কাজ প্রকৃত অর্থে হয়নি। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনুস বলেছিলেন, ভারত সরকার চাইলে সাংবাদিক বা অন্যদের পাঠাতে পারতেন এই দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন কেমন হচ্ছে তার তদন্ত করার জন্য। তিনি বলেছেন, এটা তো মুক্ত অঞ্চল। যে কেউ আসতে পারে। দেখতে পারে। অনুসন্ধান চালাতে পারে।

সেই সুযোগ নিতে পারা যেত। ঘটনার প্রকৃত অনুসন্ধান করার অনেক সুযোগ আছে। স্রেফ রাজনীতি না করে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু সে কাজ হয়নি। পশ্চিমবাংলার মিডিয়া দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং কিছু কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তাদের কায়েমি স্বার্থ, রাজনৈতিক স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য পরিবেশকে জলঘোলা করার চেষ্টা করেছে। কী কারণে পশ্চিমবাংলার সুশীল সমাজ এই বিষয়ে এগিয়ে এলেন না, তারা অনেকটাই ম্রিয়মাণ রইলেন, নীরবতা অবলম্বন করলেন, তা ভাবিয়ে তুলেছে।

তবে ময়দানে অনেকেই নেমে এসেছেন। তার মধ্যে কবির সুমন অন্যতম। শান্তি সেতু নাম দিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছেন। উভয় বাংলার মধ্যে এবং উভয় দেশের মধ্যে, বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে হৃদয়ের সম্পর্ককে জোড়ার জন্য কাজ করছেন। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ না দিয়ে পারা যায় না। আসল সমস্যা হল, এপার বাংলার সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষ মনে হয় আওয়ামী লীগের পতনকে মেনে নিতে পারছেন না। আওয়ামী লীগ কোনকালেই বাংলাদেশের হিন্দুদের কল্যাণ আকাঙ্ক্ষী ছিল না; বরং তাদের ওপর অত্যাচার সাতচল্লিশের পর থেকে নানা ওছিলায় করেছে। হিন্দুদের শত্রু সম্পত্তি ভেবে দখল করেছে। আর নিপীড়ন করে অন্য রাজনৈতিক দলের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের হিন্দুরা সেই কথা বার বার বলে এসেছেন। এখন আরো জোরে বলছেন।

তথাপি এই বাংলার সাংবাদিক ও রাজনীতিকদের কর্ণকুহরে পৌঁছচ্ছে না। এর রহস্য না জানার কথা নয়। হাসিনা সরকার যে একটা খুনি সরকার ছিল, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। চরম স্বৈরাচারী সরকার ছিল। খুনের রাজনীতি আওয়ামী লীগের মজ্জাগত। হাসিনা প্রতিশোধপরায়ণ এক মহিলা। গোটা বাংলাদেশ আজ তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাস্তি দেবার সর্বাত্মক আওয়াজ উঠেছে। কোন অবস্থাতেই হাসিনার জায়গা বাংলাদেশে আর হবে না, পরিস্থিতি তাই বলছে। এই অবস্থায় ভারতের উচিত হাসিনাকে পরিত্যাগ করে যে সরকার ক্ষমতায় আসুক না কেন, তার সঙ্গে সুসম্পর্ক করা। ভূ- রাজনৈতিক স্বার্থেই করা দরকার।

পশ্চিমবাংলায় যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পালে হাওয়া দিচ্ছে, তাদের মুখোশ জনগণের খুলে দেওয়া দরকার। আমরা আশা করি, এই বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে যারা চাচ্ছে, তাদের মনোবাসনা কখনোই পূর্ণ হবে না।

Address

27/B, Lenin Sarani, Kolkata 13
Kolkata
700013

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when সাপ্তাহিক মীযান - Weekly Mijan posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to সাপ্তাহিক মীযান - Weekly Mijan:

Share