Suprokash

Suprokash বাংলা সাহিত্যের প্রকাশনা। সুপ্রকাশ আগামীতে হয়ে উঠতে চায় সার্বিক সাংস্কৃতিক উদ্যোগ।

বাংলা সাহিত্যের প্রকাশনা। আলোকবৃত্তের বিপ্রতীপে থাকা মানুষের আখ্যান, ধ্রুপদী কথাসাহিত্য, চিন্তাপ্রধান গদ্য এবং স্মৃতি জুড়ে থাকা মানুষের ইতিহাসের কথা বলাই সুপ্রকাশের স্বনির্বাচিত দায়।

পাহাড়, তার শ্রম, লড়াই আর নিসর্গের ইতিহাস বাংলা ভাষায় এর আগে এত যত্ন করে কখনো লেখা হয়নি। ...............................
01/07/2025

পাহাড়, তার শ্রম, লড়াই আর নিসর্গের ইতিহাস বাংলা ভাষায় এর আগে এত যত্ন করে কখনো লেখা হয়নি। ...................................
"পেশক বা পাশোকের কথা হচ্ছিল। পুরোনো বনের জায়গায় এখন সেগুনবাগান, অন্য গাছ একটাও নেই। এক বর্ষাকালটা ছাড়া বাকি সময়টা পেশকে ইদানীং রঙও ধরে না সেরকম। বৃষ্টির জল পেলে সেগুনপাতা জ্যান্ত হয়ে ওঠে নীচের জমিতে এক-আধটা ঘাস গজায়, কিছু মাটিছোঁয়া লতাগুল্ম, কিছু ছোটো গাছ। বৃষ্টি না থাকলে সবটা শুকনো, বিবর্ণ, ন্যাড়া।
সেগুন গাছ মাটি থেকে এত জল টানে যে অন্য উদ্ভিদ সেগুনবাগানে জন্মাতে পারে না। পেশকের প্রথম চড়াই শেষ করলে পেশক চা বাগান, গ্রাম। ওই জায়গাটায় একটা টিলার ওপরে পেশকের পুরোনো বাংলোটা ছিল। পারিলিং থেকে কালিম্পঙ, সিকিম, তিব্বত যেদিকেই যাওয়া হোক, পেশক বাংলোটা যাত্রাবিরতির পছন্দসই জায়গা ছিল। ফিকে সবুজ কাঠের পুরোনো বাড়িটাকে আমিও দেখেছি, স্বপ্নের মতো মনে পড়ে। অথবা দেখিনি।

কিংবা চোখ দিয়ে না হলেও মন দিয়ে দেখেছি। কোথায় চোখের দেখা শেষ আর মনের দেখা শুরু, কে বলতে পারে!

পেশকের বন বা বাংলো কিছুই এখন নেই। বন কাটা হয়ে গেছে কোনকালে, বাংলোটা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রথম গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সময়। অথচ দিব্যি দেখতে পাই, টিলার ওপরে পেশকের সবুজ কাঠের বাংলো, তার সামনের ঘন বনের মধ্য দিয়ে সরু পাকদণ্ডী তিস্তায় পৌঁছেছে। সেই পাকদণ্ডী দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একের পর এক মাল বোঝাই খচ্ছরের সারি, ভুটিয়া-নেপালি-শেরপা কুলির দল, মালের বোঝায় ঝুঁকে পড়া। তার পিছনে কি সামনে ঘোড়ায় চেপে সাহেবদের দল, অভিযাত্রী, রাজপুরুষ, সৈন্য, পবর্তারোহী। কে নেই সেখানে! জোসেফ ডাল্টন হুকার, যিনি প্রথম দার্জিলিং আর সিকিমের গাছপালার দীর্ঘ তালিকা বানিয়েছিলেন; এল এ ওয়াভেল, যিনি পায়ে হেঁটে সিকিম ও দার্জিলিং হিমালয়ের প্রায় সবকটা উঁচু পাহাড়ে ঘুরেছিলেন, লামাইজম বা তিব্বতি মহাযান বৌদ্ধধর্ম নিয়ে প্রামাণ্য বই লিখেছিলেন, বারবার মনে করিয়েছিলেন এলাকার পুরোনো লোকজন, গাছপালা, জঙ্গলকে বাঁচিয়ে রাখার কথা।

পেশক থেকে পথ উঠে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। ওঠার সময় ডানদিকের ঢাল নেমে যাচ্ছে। রংগীতে, বাঁদিকের ঢাল তিস্তায়। চা এবং দুধ পুড়িয়ে তৈরি করা ছোটো ছোটো গোল গোল প্যাঁড়ার জন্য বিখ্যাত লগড় চা বাগান ছাড়িয়ে আরো খানিক চড়াই উঠলে একলা নিঃঝুম লামাহাটা, যেখানে এখন পর্যটনের ঢল, ফলে রাস্তার পাশের বাড়িগুলো বড় এবং পাকা, বড় বড় পাইন গাছের গুঁড়ি নীল সাদা, গুঁড়ি ঘিরে বাঁধানো সিমেন্টের বেদী, এখানে ওখানে বাচ্চাদের খেলা করবার ও বড়োদের ছবি তুলবার মতো রঙে স্লিপ, বেঞ্চি, এটা সেটা।

এই রঙিন নতুন লামাহাটা তৈরি হবার আগে পুরোনো লামাহাটা ছিল সত্যিকারের মেঘের দেশ। ওই পথ দিয়ে যেতে আসতে কতবার যে দেখেছি পাইনগাছের গুঁড়িতে গুঁড়িতে লতিয়ে উঠছে পুরু সাদা মেঘ, এত ঘন যে গাছের মাথা দেখা যায় না। পাইনবনের পাশে সেই মেঘের বাগানে লম্বালম্বি টাঙানো আছে রঙিন বৌদ্ধ প্রার্থনা পতাকার সারি, লাল নীল হলুদ সবুজ, সে পতাকায় লেখা 'ওম মণিপদ্মে হুম'।"

'সময় ভ্রমণ
দার্জিলিঙ : পাহাড় ও সমতলের গল্পগাছা'
থেকে.............................
সৌমিত্র ঘোষ

প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
অলংকরণ : শুভশ্রী দাস, অদ্বয় দত্ত

মুদ্রিত মূল্য : ৫৬০ টাকা

সুপ্রকাশ

সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'নৈশ অপেরা' পড়ে মতামত জানিয়েছেন পায়েল দত্ত। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নি...
01/07/2025

সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'নৈশ অপেরা' পড়ে মতামত জানিয়েছেন পায়েল দত্ত। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।......................................................
নৈশ অপেরা || শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
সুপ্রকাশ, ৫৪০ টাকা

“মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়;
অতীতের থেকে উঠে আজকের মানুষের কাছে
প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে...”
- জীবনানন্দ দাশ

'শেষ মৃত পাখি'-র অসামান্য অভিঘাতে বিহ্বল পাঠক হৃদয় প্রায় তিন বছর অপেক্ষায় ছিল এমনই কোনো বৃহৎ রহস্যপোন্যাসের, যেখানে ফিরে আসবে ব্যস্ত শহর থেকে দূরে অবস্থিত ছোট একটি জনপদ ও তার দীর্ণ বাসিন্দাদের বিষাদ পরম্পরার আখ্যান আর সেই বিষাদের মধ্যে এসে পড়বে তনয়া – জার্নালিস্ট তনয়া, যে নিজের বিবিধ বিষণ্ণতার সঙ্গে ক্রমাগত লড়াইয়ে প্রায় বিপর্যস্ত থেকেও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও সত্যানুসন্ধানের অমোঘ টানে জড়িয়ে পড়ে সেই পরম্পরার ভেতরে এবং অনিবার্য মানবিক সংবেদের ফলে আরও গভীর বিষণ্ণতার মধ্যে তলিয়ে যেতে থাকে। অপরাধ এখানে নিমিত্ত, যদিও একমাত্র নিমিত্ত নয়।

অতঃপর বেলা পড়ে আসা নির্জন বর্ষণশ্রান্ত আষাঢ়ের দিনে, না দেখা এবং নাম না জানা এক পাখির তীব্র ও তীক্ষ্ণ চিৎকার সহযোগে উড়ে যাওয়ার মাঝে – চিৎকারের গতিপথে যে উড়ান অনুভব করা গেল মাত্র – শুরু করা এই বিষাদ আখ্যান ধীরে কিন্তু নিশ্চিত ভাবে আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতে থাকল এক অখ্যাত গঞ্জের বিষণ্ণ বৃষ্টি ও কুয়াশা মাখা কয়েকটি নিঝুম দিন রাত ও অমীমাংসিত, অ্যাবসার্ড অথচ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কিছু রহস্যের মধ্যে – যার সমাধান না হওয়াই হয়ত ভালো ছিল।

উপন্যাসের কাহিনী সেই অর্থে খুব অভিনব নয়। নব্বইয়ের সময়কালে আপাত অখ্যাত এক গঞ্জে বসবাসকারী একটি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবারে ভরা দুপুর বেলা সবার চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে যায় একটি শিশু – যে আর ফিরে আসেনি কোনোদিন। তবুও সে বারবার ফিরে এসেছে, দেখা দিয়েছে পরিবারটির বাসিন্দাদের। কখনও একা, কখনো সকলকে একসাথে। কখনও বা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন মানুষকেও। এই ঘটনার ছ' বছর আগে গঞ্জ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল আরও একটি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মেয়ে। সেও আর ফিরে আসেনি কোনোদিন, তবুও বারবার ফিরে এসেছে, বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখা দিয়েছে গোটা কমিউনিটির প্রায় সমস্ত মানুষকে। পাঠককে বিশ্বাস করতে হবে এই কাহিনীতে এতটুকু অলৌকিকতা নেই। তাহলে কীভাবে ? বলা ভালো, কেন ? এই অনুসন্ধানই আসলে উপন্যাসের নির্যাস।

অনুসন্ধানের চরিত্রটুকু হৃদয়ঙ্গম করার সুবিধার্থে উপন্যাস থেকে কয়েক লাইন তুলে দেওয়া যাক।

|| “ক্রিস কেন হারিয়ে গেল, এটাই আসল।... আমরা মাথার চুল ছিঁড়ি অপরাধ কীভাবে ঘটল আর কীভাবে অপরাধীকে ধরা হবে সেই নিয়ে। কিন্তু কেন একটা অপরাধ ঘটল, তার ফলশ্রুতি কী হতে পারে, একটা খুন করার পরে মানুষ একইরকম থাকে কি না, সেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ... আমি মানুষের ক্ষয় নিয়ে ইন্টারেস্টেড। কেন একজন মানুষ নৈরাশ্যের মধ্যে ক্ষয়ে যেতে যেতেও নিজেকে গ্রেস পাবার সান্ত্বনায় ভোলায়। যদি ভোলায়-বা, সে তার পরে একটা অপরাধ কীভাবে করতে পারে ? কীভাবে অপরাধী তৈরি হয় ?...”||

এই আপাত সাধারণ ঘটনা পরম্পরা‌ ও তার ইতিহাস অনুসন্ধানের পেছনে লুকিয়ে থাকে বংশানুক্রমিক পাপ ও তার ইডিপাসীয় বিবর্তনের করুণ আলেখ্য। রহস্য উদঘাটনের পর্যায়ে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় বহুস্তরীয় ঘটনাবলীর বিবিধ লুকানো অবয়ব। পাপ কখনোই একমাত্রিক নয় and the characters can never be fully black or white. গল্পের চরিত্রগুলোও, অতএব, বহুবর্ণীয় কারুকার্যে বিন্যস্ত। পড়তে পড়তে প্রত্যেকটি চরিত্রের সঙ্গে – তাদের বিবিধ মানবিক ও চারিত্রিক দোষ গুণ উন্মত্ততা নির্বিশেষে – অদ্ভুত সংযোগ তৈরি হতে থাকে। অপরাধী চোখের সামনেই আছে, এই সত্য সিদ্ধান্তে স্থির থেকেও পাঠক মন যেন তা থেকে দৃষ্টি দূরেই রাখতে চায়। অথচ অনুসন্ধিৎসা – মানব চরিত্রের যা অবশ্যম্ভাবী বৈশিষ্ট্য – বারেবারে বিপথগামী দৃষ্টিকে মূলস্রোতে সঞ্চরমান রাখার প্রয়াস করে।

কাহিনীর অন্যতম শক্তিশালী দিক তার সার্থক আবহ সৃষ্টি। একটি চরিত্র তাই গল্প বলার ফাঁকে বলে – ‘ডিটেকটিভ গল্প শুনবেন এদিকে আবহ তৈরি হবে না, এ হয় নাকি ?’ সমস্ত কাহিনী জুড়ে ঘন কুয়াশা ও ঘ্যানঘেনে বৃষ্টির অনুষঙ্গ এক চাপা বিষাদ ও লুকিয়ে রাখা প্রাচীন পাপের অভিঘাতকে পাঠকের দৃষ্টি সমীপে উপস্থাপন করে। লেখকের অসম্ভব স্মার্ট গদ্য ও কাহিনীর ততোধিক বুদ্ধিদীপ্ত চলন পাঠককে এই সিদ্ধান্তে উপনীত করায় যে 'শেষ মৃত পাখি' শুধুই কোনো একদিবসীয় সাময়িক ফর্মের সম্ভাবনা নয়, পরন্তু স্থায়ী ও দীর্ঘ ক্লাসের উত্তরাধিকার নিয়েই শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য বাংলা সাহিত্যের জঁর ফিকশনের আঙিনায় ব্যাট করতে নেমেছেন।

পাঠকালে 'পুরুষ' (উত্তম পুরুষ - মধ্যম পুরুষ - প্রথম পুরুষ) ও কাল (অতীত - বর্তমান, অতীতের ভেতর অতীত অথবা বর্তমানের ভেতর বর্তমান) -এর ক্রমাগত সঞ্চরণ, প্রতি অনুচ্ছেদ এমনকি প্রতি বাক্যে অবাধ অনায়াস ক্রমাগত যাতায়াত পাঠকের অখন্ড মনোযোগ দাবি করে। মুহূর্তের জন্য মনোযোগ ছিন্ন হলে গল্পের স্থান কাল পাত্রের খেই হারিয়ে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা। বস্তুত এ যেন সময়ের অভ্যন্তরে ধরে রাখা আরও এক প্রাচীন সময়ের বিষাদগাথা, এক চরিত্রের অভ্যন্তরে অন্য কোনো চরিত্রের ছায়া, হারিয়ে যাওয়া আর ফিরে আসার মধ্যে অনপনেয় দূরত্ব এবং নৈকট্যের খোয়াব বন্দিশ।

রহস্য ও তার অনুসন্ধানের দিকটি ছাড়াও যে দিকটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে তা হল গঞ্জ – যা আমাদের অত্যন্ত চেনা একটি অঞ্চল, ঝাড়খন্ডের সুপরিচিত একটি পাহাড়-মালভূমি সম্বলিত ভূখন্ড এবং পর্যটকদের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গন্তব্য, ফলতঃ নাম না নিলেও যাকে সহজেই চিনে নেওয়া যায় – অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কমিউনিটির আবাস হিসেবে তার ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক বিবরণ, যদিও তা পরিমিত ও কাহিনীর রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী সীমিত। এই অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কমিউনিটির সঙ্গে স্থানীয় ও মূলনিবাসী জনজাতির আর্থ সামাজিক সম্পর্কটি অত্যন্ত যথাযথ ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে উপন্যাসে। অবিনাশ যাদব বা অ্যালফ্রেড হেমব্রমদের শোষিত হওয়ার যে চিরকালীন লিগ্যাসি সেটিও বোঝা যায় উক্ত চরিত্রগুলির নিজস্ব জবানবন্দীতে এবং তা আরও গভীরভাবে বোঝা যায় মুন্না, সমর দোসাদ অথবা নির্মলার করুণ পরিণতিতে। আর কে না জানে, শোষণ রাজনৈতিক অস্থিরতা বয়ে আনে এবং এই অস্থিরতার ফলশ্রুতিতে ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে জনপদটির সার্বিক স্থানীয় বৈশিষ্ট্য। বিক্রি হয়ে যাওয়া একের পর এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কটেজ, গুটিকয় প্রাচীন অ্যাংলো মানুষ যাদের শরীরে নীল রক্তের উপস্থিতি অথচ আক্ষরিক অর্থেই তাদের কোথাও যাওয়ার নেই, প্রাচীন এই জনপদে বিষাদ কূপের মধ্যে পচে মরাই হয়তো তাদের নিয়তি। এই নিয়তি তাদের স্বহস্ত নির্মিত, কারণ এই নিয়তি তাদের প্রাচীন পাপেরই ফলাফল।

গোটা কাহিনীতে আবহ সঙ্গীতের মতো অজস্র ফিসফিসানি জুড়ে তৈরি হয়েছে এক অলীক নৈঃশব্দ্য, শেষে গিয়ে যা এক অনুচ্চার বিস্ফোরণ ঘটায়। পাঠক – যথারীতি – স্তব্ধ হয়, কাঁদে, বিলাপ করে, ভাবে 'কেন সব জানা হলো, না জানা থাকাই ছিল ভালো!' ফিরে আসা প্রাচীন পাপ অথবা রহস্যের উন্মোচন সহ্য করা সহজ হয় না মোটেও। তবু গল্প জুড়ে এক আশ্চর্য ভালোবাসা টপিংয়ের মতো ছড়িয়ে থাকে। একটা গঞ্জ, তার স্মৃতি, তার ঘনিয়ে আসা জঙ্গল, তার ভেতর গুটিকয় মানুষের পাগলামো আর নৃশংসতা অভিশাপের মতো, নাছোড় স্মৃতির মতো, শোকের গ্রন্থিগুলোর খুলতে না পারা গিঁটের মতো, অনপনেয় বেদনার মতো জড়িয়ে রাখে পাঠককে।

উপন্যাস শেষ হলে বই বন্ধ করে চোখ বুজে কিছুক্ষণ স্তব্ধ বসে থাকে মূঢ় পাঠক। ঘোর কাটতে সময় লাগবে তার।

অতঃপর শুরু হবে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গোনা ফের। তনয়ার জন্য, তার সঙ্গে অন্য কোনো বিষাদক্লিন্ন উন্মোচনের জন্য হৃদয়ভার নিয়েও অপেক্ষা করবে সে।

সুপ্রকাশ প্রকাশিত অলোক সান্যালের উপন্যাস 'নষ্ট চাঁদের আলো' পড়ে লিখেছেন তন্বিশ্রী মাঝি। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের ট...
30/06/2025

সুপ্রকাশ প্রকাশিত অলোক সান্যালের উপন্যাস 'নষ্ট চাঁদের আলো' পড়ে লিখেছেন তন্বিশ্রী মাঝি। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। .........................

পড়া শেষ হলো অলোক সান্যাল রচিত ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস "নষ্ট চাঁদের আলো"। তবে এটিকে শুধুই ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস বললে ভুল হবে, এটি একটি দুর্ধর্ষ থ্রিলারও বটে। অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা এই উপন্যাসে একদিকে যেমন উঠে এসেছে নিজেদের সভ্য বলে দাবি করা ইংরেজদের কলঙ্কিত অধ্যায় , অপরদিকে সমান্তরাল ভাবে গল্পে এসেছে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সেই অতীতের খোঁজে ফিরে চলা এক দুর্দমনীয় নারী এমা মিলারের গল্প।

উপন্যাসটি দুটি ভিন্ন সময়কে সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছে - একদিকে কুইন অ্যানের শাসনকালে আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে জলদস্যুদের, বিশেষ করে আটলান্টিকের ত্রাস ব্ল্যাকবিয়ার্ডের উত্থান, এবং শেষে ওক্রেকোক খাঁড়ির যুদ্ধে রয়েল নেভির হাতে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের মৃত্যু এবং তাঁর লুকানো ঐশ্বর্য নিয়ে গড়ে ওঠা নানান কিংবদন্তি , অপরদিকে বর্তমান সময়ে লন্ডনে এমা মিলারের সেই ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ফ্ল্যাগশিপ "কুইন অ্যানিস রিভেঞ্জ" খুঁজে পাওয়ার দুঃসাহসিক অভিযান এবং তাকে কেন্দ্র করে দুর্যোগের ঘনঘটা। ঘটনাপ্রবাহের ক্ষেত্রে লেখনীর ভাষা বেশ নজর কাড়ে। সময় যত এগিয়েছে ততোই রুদ্ধশ্বাস হয়ে উঠেছে উপন্যাসের ঘটনাক্রম।

উপন্যাসের শুরুতেই ধরা পড়ে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আমদানি করে ইংল্যান্ডের নানা শহরে বেচা ক্রীতদাসদের উপর ইংরেজদের অকথ্য অত্যাচারের কাহিনী। সমুদ্রের অসীম জলরাশির মধ্যে একটুকরো জাহাজের ডেকে সেই অত্যাচার নষ্ট করে দেয় চাঁদের আলোর মনোমুগ্ধকর শোভা। শুধু আফ্রিকার ক্রীতদাসরাই নন, ইংরেজদের দ্বারা সমান ভাবে শোষিত ও অত্যাচারিত হন নেটিভ আমেরিকানরাও। সেই কাহিনী পাঠকের অন্তঃস্থলে রক্তক্ষরণ করতে বাধ্য করে। কিন্তু সেই একই সময়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে শয়তান বলে দাবি করা জলদস্যু যেনো পাঠকের অনেক কাছের একজন হয়ে উঠেছে, যাঁর কাছে জাতি - বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই মানুষ। লুঠ হওয়া জাহাজের ক্রীতদাস তাই নিজ ক্ষমতাবলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদেরই একজন হয়ে ওঠে । এমা মিলারের দুঃসাহসিক অভিযানের শেষে যে বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করে তা হলো মানুষের লোভের পরিণাম। এছাড়া কাহিনীর মোড়কে জন্মান্তরের বিষয়টিও পাঠককে মুগ্ধ করে।

উপন্যাসটি পড়ার সময় একটি সিরিজের কথা বিশেষ ভাবে মাথায় আছে, সেটি হলো - "পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান"। বিশেষ করে জাহাজের বর্ণনায়, জলদস্যুদের বর্ণনায় পাঠকের চোখের সামনে যেনো জীবন্ত হয়ে ওঠে প্রতিটি চরিত্র। এছাড়াও আরও যে বিষয়টি উপন্যাসটি পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে তা হলো ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস বিশেষ করে তৎকালীন ইংল্যান্ডের ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান। বিশেষ করে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, কুইন অ্যান এবং পরবর্তীকালে প্রথম জর্জ এর শাসনকালে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা, পার্লামেন্টে হুইগ এবং টোরি এই দুই রাজনৈতিক দলের ভূমিকা, বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নরদের ভূমিকা , রাজকর্মচারীদের সামাজিক অবস্থান - এই সবকিছুই উঠে এসেছে উপন্যাসের প্রতিটি পাতায়। তাই এ সম্পর্কে সাধারণভাবে কিছু ধারণা না থাকলে উপন্যাসটি পড়তে একটু অসুবিধা হতে পারে বলে আমার অভিমত। তাই আমার মতো সাধারণ পাঠকের জন্য লেখক যদি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফুটনোট ব্যবহার করতেন তবে বেশ উপকার হতো বলেই মনে হয়।

সামগ্রিকভাবে উপন্যাসটি বেশ সুখপাঠ্যই মনে হয়েছে আমার কাছে। দুটি ভিন্ন সময়কে যেভাবে লেখক নিজ দক্ষতায় মিলিয়েছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। টাইম মেশিনে চেপে অষ্টাদশ শতকের ইংল্যান্ডে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসার জন্য অবশ্যই হাতে তুলে নিতে পারেন অলোক সান্যালের এই উপন্যাস "নষ্ট চাঁদের আলো"।

উপন্যাস - নষ্ট চাঁদের আলো
লেখক - অলোক সান্যাল
প্রকাশনা - সুপ্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য - ₹ ৫৯০/-

অক্ষর-চরিত্র ও জ্ঞাপন-বাণিজ্য : এক অন্তহীন এপিটাফ। পর্ব ১৯। অনন্ত জানাসম্পূর্ণ পড়ার লিঙ্ক কমেন্টে।
29/06/2025

অক্ষর-চরিত্র ও জ্ঞাপন-বাণিজ্য : এক অন্তহীন এপিটাফ। পর্ব ১৯। অনন্ত জানা
সম্পূর্ণ পড়ার লিঙ্ক কমেন্টে।

অকূলের কাল। পর্ব ১৯। লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামীসম্পূর্ণ পড়ার লিঙ্ক কমেন্টে।
29/06/2025

অকূলের কাল। পর্ব ১৯। লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী
সম্পূর্ণ পড়ার লিঙ্ক কমেন্টে।

সৌভাগ্যশলাকা। ধারাবাহিক উপন্যাস। পর্ব ১৯। লিখছেন অলোক সান্যালসম্পূর্ণ পড়ার লিঙ্ক কমেন্টে।
29/06/2025

সৌভাগ্যশলাকা। ধারাবাহিক উপন্যাস। পর্ব ১৯। লিখছেন অলোক সান্যাল
সম্পূর্ণ পড়ার লিঙ্ক কমেন্টে।

সময় ভ্রমণে দার্জিলিঙ : পাহাড় ও সমতল। পর্ব ৪৩। লিখছেন সৌমিত্র ঘোষসম্পূর্ণ পড়ার লিঙ্ক কমেন্টে।
29/06/2025

সময় ভ্রমণে দার্জিলিঙ : পাহাড় ও সমতল। পর্ব ৪৩। লিখছেন সৌমিত্র ঘোষ
সম্পূর্ণ পড়ার লিঙ্ক কমেন্টে।

ছবিকথা : ৪৮ছবি : অদ্বয় দত্তনির্মুখোশ ডট ইনের ছবিকথা বিভাগের জন্য ছবি পাঠাতে পারেন আপনিও। মেইল করতে পারেন  এই মেইল আইডি ...
29/06/2025

ছবিকথা : ৪৮
ছবি : অদ্বয় দত্ত

নির্মুখোশ ডট ইনের ছবিকথা বিভাগের জন্য ছবি পাঠাতে পারেন আপনিও। মেইল করতে পারেন এই মেইল আইডি তে : [email protected]। বিষয়ে লিখবেন : ছবিকথা। মনোনীত হলে প্রকাশ পাবে।

ছবিকথা ছবিকথা : আটচল্লিশ Admin Nirmukhosh June 29, 2025 0 Author Admin Nirmukhosh administrator See author's posts Continue Reading Previous ছবিকথা : সাতচল্লিশ More Stories ছবিকথা ছবিকথা : সাতচল.....

সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস 'অনন্যবর্তী' পড়ে গুডরিডস্-এ মতামত জানিয়েছেন শতাব্দী। আমরা নিজেদের টাইমলাইন ...
29/06/2025

সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস 'অনন্যবর্তী' পড়ে গুডরিডস্-এ মতামত জানিয়েছেন শতাব্দী। আমরা নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।.........................................................
চারিদিক অশান্ত। যুদ্ধের দামামা, রোগের ঘনঘটা। কঠিন কিছু, কষ্টের কিছু পড়তে ইচ্ছে করছিল না। কোন ধরনের পূর্বধারণা ছাড়াই অনন্যবর্তী হাতে তুলে নিয়েছিলাম। লেখকের আহাম্মকের খুঁদকুড়ো পড়ার ভরসা ছিল। সে ভরসা বিফলে যায় নি।

কিছু নবীন, কিছু প্রবীণ মানুষের গল্প এটি। সময়টা কয়েক দশক আগের হলেও সম্পূর্ণ উপন্যাস জুড়ে যে স্মিত আবহাওয়া বিরাজমান ছিল, তা সাধারণত এমন ধরনের উপন্যাসে থাকে না।

উপন্যাসটি হালকা নয়, গভীর জীবনকথার অভাব আছে এমনও নয়, কিশোর কাহিনীও নয়, আপাদমস্তক বড়দেরই। কিন্তু সেইসব বড়দের জন্য যারা জীবনকে দেখেন সহজ চোখে। অকারণ জটিলতা পার হতে পারেন যারা। যারা সমস্ত যান্ত্রিকতা পার হয়েও রোবট হয়ে পড়েন না নিজে, বরং ভবিষ্যত তা যত অল্প দিনেরই হোক না কেন, তার স্বপ্ন দেখেন।

এক দঙ্গল ছেলেপেলে। পড়াশোনাতে অসাধারণ না হলেও মন্দ নয়। তাদের স্কুল থেকে কলেজ অবধি সময়টা উপন্যাসে এসেছে। তার মধ্যে শোভন আর তনয় একটু বিশেষ। তাদের পরিবার আর প্রেমের কথা বিস্তারিতভাবে এসেছে। আবার শোভন আর তনয়ের বাবাও বন্ধুস্থানীয়। তাদের সাথে আরো রয়েছেন গ্রামীণ কম্পাউন্ডার ফণীভূষণ আর স্বাধীনচেতা নীরদ।

চাকরিতে অবসরের পর এই চার বন্ধু মিলে শটিডাঙ্গায় একটা খামার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন।

নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে জীবন চলতে থাকে সকলের। ট্র্যাজেডি থাকলেও খুব মোটা দাগে নয়। জীবনের সাধারণ দিকগুলোই ছুঁতে চেয়েছেন লেখক। গড়পড়তা একদল মানুষের জীবন। কিন্তু গড়পড়তার মধ্যেও বিশেষ। তাই শোভনের বাবা যখন শোভনকে উপদেশ দেন জীবনে খুব বড়লোক না হতে— আমরা অবাক হই না।

মাঝি কাল্লুর সাথে ছেলেদের বন্ধুত্বে কিংবা গ্রামীণ নাইট স্কুল, হেলথ প্রোগ্রাম চালানোতে ওদের উৎসাহ আমাদের তারুণ্যের কাল মনে করিয়ে দেয়। আনোয়ারার চমৎকার রান্নার স্বাদ যখন সকলে নেন, তখন ভেদরেখাটুকু মুছে দেয়ারও একটা প্রয়াস চোখে পড়ে।

সহজ সাধারণ ভাষায় সাধারণ কিছু মানুষের গল্পটা আমার দিনটা সুন্দর করে দিয়েছে। লেখককে ধন্যবাদ।..................................................
অনন্যবর্তী
দুর্লভ সূত্রধর
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
মুদ্রিত মূল্য : ৩২০ টাকা
প্রকাশক : সুপ্রকাশ

সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'নৈশ অপেরা' পড়ে মতামত জানিয়েছেন অর্ণব কর। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদ...
29/06/2025

সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'নৈশ অপেরা' পড়ে মতামত জানিয়েছেন অর্ণব কর। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।.......................................................
পাঠ প্রতিক্রিয়া :
"নৈশ অপেরা"
লেখক : শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
প্রকাশক : সুপ্রকাশ প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ : জুন, ২০২৫
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৪১০
মুদ্রিত মূল্য : ৫৪০ টাকা

গতকাল বইটি পড়া শেষ করেছি। এখনও তার রেশ কাটেনি। উপন্যাস শেষ, রহস্য উন্মোচিত কিন্তু তবু যেন আমি দুপাশে জঙ্গলঘেরা ডেগাডেগি নদীর ধারে নির্জনে একাকী বসে আছি। উপন্যাসের স্থানীয় চরিত্রগুলো আমার চারপাশ দিয়ে ছায়া আবছায়ার মতন ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনও নিঃশব্দে পাশে এসে বসছে। কখনও পিছনে এসে দাঁড়াচ্ছে। কখনও কারো গলার আওয়াজ শুনে সেরকমই কোনো ছায়ার পিছু পিছু আমি হয়তো জঙ্গলে ঘেরা উঁচু নিচু পথ দিয়ে পাড়ি দিয়েছি তিতিরকান্না মাঠের দিকে।
আমি বাকিদের মতন উদ্ধৃতি তুলে তুলে গতে বাঁধা নিয়মে পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে পারিনা। আমার নিজের বক্তব্যই যতটা সংক্ষেপে হয় লিখে বোঝাতে চেষ্টা করি। স্পয়লার যাতে না দিয়ে ফেলি সেই দিকেও সর্বদা সতর্ক থাকতে হয়।
লেখকের লেখা আরেকটি রহস্য উপন্যাস দার্জিলিং এর পটভূমিকায় "শেষ মৃত পাখি" পড়ে শিহরিত হয়েছিলাম। থ্রিলার পড়ে যদি thrilled ই না হলাম তো সেই থ্রিলারের সার্থকতা কোথায়? কিন্তু না। শাক্যজিৎ বাবু সেক্ষেত্রে কোনো অভিযোগের জায়গা রাখেননি ওই উপন্যাসে। এমন অদ্ভুতভাবে রহস্যকাহিনী টি উপস্থাপিত হয়েছিল যে সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। তবে এই উপন্যাসটি, মানে "নৈশ অপেরা" কি সেই থ্রিল ধরে রাখতে ব্যর্থ হোলো? সেকথায় পরে আসছি। আমি আবারও ফিরে যাচ্ছি ঝাড়খণ্ডের ডেগাডেগি নদীর তীরে সেই ভেঙে পড়া টাউনটিতে। ভাঙাচোরা বাড়ি। ভেঙে পড়া কিছু মানুষ। ভগ্নপ্রায় চার্চ। আর একটি অর্ধ ভগ্ন কটেজ। প্রকৃতির যে বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, যেভাবে দিয়েছেন, পড়তে পড়তে প্রতি মুহূর্তে ওই জায়গার সাথে একাত্ম হয়ে যেতে হয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর লেখা পড়ে প্রকৃতির সাথে বারংবার একাত্ম হয়েছি পূর্বে। বুদ্ধদেব গুহর লেখাতেও এই ছোটনাগপুরের মালভূমি অঞ্চলের প্রাকৃতিক বর্ণনা উঠে এসেছে । সেই বর্ণনায় একাত্ম হয়েছে প্রেম ও প্রকৃতি। কিন্তু এই উপন্যাসের প্রাকৃতিক বর্ণনার পরতে পরতে রয়েছে শিহরণ। হরর ছায়াছবিতে পরিচালক যেমন দর্শকদের ভয় দেখানোর আবহ তৈরি করার প্রভূত সুযোগ পান। কেউ ভয় দেখাতে পারেন কেউ পারেন না। কিন্তু লেখনীর মাধ্যমে গা ছমছমে আবহ তৈরি করা কিংবা এমন একটা আবহ তৈরি করা যেটা পড়ে মুহূর্তে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে এমনটা কিন্তু সবাই পারেন না। শাক্যজিৎ পেরেছেন এবং সফল ভাবেই পেরেছেন । সূচনা থেকেই সেই আবহ তৈরি করতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রাকৃতিক বর্ণনা এবং তার সাথে একটা অজানা ভয়ের আশঙ্কা। অদ্ভুত একটা গা শিরশিরানি অনুভূতি তিনি ধরে রাখেন সমগ্র প্রথম পর্ব জুড়ে। প্রথম পর্বে গল্প এমন জট পাকায় পাঠকের একসময় মনে হবে একটা লুপের মধ্যে যেন হারিয়ে যাচ্ছেন ক্রমাগত। চোরাবালিতে গেঁথে যাওয়ার মতন। মনে হবে এই রহস্যের সমাধান কি আদৌ সম্ভব? কীকরে সম্ভব? যেখানে ঘটনা ঘটে গেছে বহু বছর আগে। তার অনেক ক্লু অনেক সাক্ষ্য প্রমাণই হারিয়ে গেছে। তার পরেও কি তনয়া পারবে এই রহস্যের কিনারা করতে?
হ্যা তনয়া। তনয়া ভট্টাচার্য। "শেষ মৃত পাখি" উপন্যাসের সেই সাংবাদিক আবারো ফিরে এসেছেন এই রহস্য কাহিনী তে। পেশায় তিনি গোয়েন্দা নন কিন্তু পূর্বের হত্যা রহস্যের সফলতায় তার উপর এখন মানুষের আস্থা বেড়েছে। তাই তাকে না চাইতেও জড়িয়ে পড়তে হয় কাহিনীর মায়াজালে। জড়িয়ে পড়তে হয় বারবারা, অ্যারন, এডওয়ার্ড, মনীষা, জেনিফার, ডলোরেস, মার্গারেট, ফ্রেডরিক, অবিনাশ, রেভারেন্ড সবার সাথে। আরো দুটি চরিত্র না থেকেও তনয়া কে ঘিরে ছিল সর্বদা, সেই ক্রিস এবং অ্যাগনেস।
উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্বে জট ছাড়ানোর পর্ব চলে। এই পর্বটি প্রথম পর্বের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট কিন্তু উত্তেজনার মাপকাঠি একই ছিল। অন্তত আমার কাছে তাই ছিল। "শেষ মৃত পাখি" - র সাথে সবকিছু তুলনা করলে হবে কেন? দুটো উপন্যাস তো একই রকম ভাবে এগিয়ে যেতে পারেনা। তাহলে আর পাঠকরা গ্রহণ করবেন কেন? এই উপন্যাসের ক্ষেত্রে তনয়া শেষ অবধি যেই সিদ্ধান্তে আসেন সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত অভিমত। এই রহস্যের সমাধান কেউ অন্যরকম ভাবে করলেও করতে পারত সেটাও যে ঠিক বলতে পারি তা নয়। কারন পরে আমরা পাঠকরা জানতে পেরেছি তনয়া সত্যসন্ধানী হিসেবে কতটা সঠিক ছিল। তবু তার কাছে শেষ অবধি এক দুটো জিনিস অধরা রহস্য হয়েই থেকে যায় যেটা আমরা পাঠকেরা শেষে গিয়ে জানতে পারি কিন্তু তনয়া জানতে পারেন না। এটাই ওনার জন্যে একটু আক্ষেপ। কিছু ক্ষেত্রে না পাওয়া টাও হয়তো অনেক বেশি পাওয়া হয়ে যায়। যাদের কথা ভেবে তনয়া দিবারাত্র এক করেছে তারা তনয়া কে কাছে টেনেও ভুল বুঝে দূরে সরিয়েছে বারংবার। আর আগনেস? সেই কিশোরীটির কথা ভেবে হৃদয় মুচড়ে ওঠে প্রতি মুহূর্তে। কি পেলো মেয়েটি তার সারা জীবনে? এত আঘাত এত কষ্ট কি সত্যিই তার প্রাপ্য ছিল? কোথাও গিয়ে যেন অ্যাগনেসের এই ব্যথা এই যন্ত্রণা তনয়াকে ছুঁয়ে যায়।
"হা হা বাতাস , শাল সেগুনের প্রহরা ও নির্জন টিলা তোমাকে মনে করাবে মৃত সমাধিদের কাহিনী।"
সত্যিই এই উপন্যাস শেষ করার পরেও মনে করাতে থাকে সেই গঞ্জ, সেই sanctuary homestay , সেই তিতিরকান্নার মাঠ, রহস্যঘেরা জলাভূমি ও জোহার হালে।
তনয়া কে আমরা নিশ্চই খুব শিগগিরই আবার পাবো শাক্যজিতের পরবর্তী রহস্য কাহিনী তে। কিন্তু "নৈশ অপেরা"— এই আবহ , এই মায়া কিন্তু আরো কিছুদিন ছড়িয়ে থাকবে দেহ মনে।

সুপ্রকাশ প্রকাশিত অলোক সান্যালের উপন্যাস 'নষ্ট চাঁদের আলো' পড়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউটিউব চ্যানেল তন্বীর বইকথন।...
28/06/2025

সুপ্রকাশ প্রকাশিত অলোক সান্যালের উপন্যাস 'নষ্ট চাঁদের আলো' পড়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউটিউব চ্যানেল তন্বীর বইকথন।

রইলো সেই আলোচনাটি।

...

আত্মকেন্দ্রিক অথচ আত্মবোধ ও ‘আত্মদীপ’-শূন্য সাম্প্রতিক বিভ্রমের মধ্যেও প্রথমত এবং শেষত একটা কথা বলা খুব জরুরি যে, আত্মঘ...
27/06/2025

আত্মকেন্দ্রিক অথচ আত্মবোধ ও ‘আত্মদীপ’-শূন্য সাম্প্রতিক বিভ্রমের মধ্যেও প্রথমত এবং শেষত একটা কথা বলা খুব জরুরি যে, আত্মঘোষণায় আমাদের বিশ্বাস নেই। তবু সুপ্রকাশ-এর লক্ষ্যটিকে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বঙ্গদর্শনের পত্রসূচনা’র মতো করে জানিয়ে রাখা ভালো। তাতে আত্মপক্ষ সমর্থনের গ্লানি থাকলেও কৈফিয়ৎ দেওয়ার প্রয়াস এ কারণেই করা গেল যে, ইতিহাসের ধারাবাহিকতার প্রশ্নে এ ধরণের কথনের কিছু মূল্য থাকলেও থাকতে পারে।

যদিও সুপ্রকাশ প্রকাশনা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে ২০১৮ সালের কলকাতা বইমেলা থেকে বলেই আমাদের কাছের বন্ধুরা জানেন, (আমাদের চারটি বই এই বইমেলাতে প্রকাশিত হয়), কিন্তু সুপ্রকাশ আদৌ নতুন প্রকাশনা নয়। বিগত শতকের নয়ের দশকে, ১৯৯০তে—‘কথাচিত্রকর দীনেন্দ্রকুমার রায়’ বইটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে সুপ্রকাশ শুরু হয়েছিল।

তারও আগে ছিল সলতে পাকানোর ইতিহাস। সে গল্পে যেতে গেলে আমাদের চলে যেতে হবে সাতের দশকে মেট্রোপলিটন কলকাতা থেকে একশো কিলোমিটার দূরে এক মফস্বল শহরে। একদিকে ভেঙে পড়া সামন্ততান্ত্রিক অভিজাত্য, অন্যদিকে ওপার বাংলা থেকে সব হারিয়ে আসা উদ্বাস্তু-জীবন ও রাজনৈতিক জীবনের অস্থিরতা ভেতরে নিয়ে তখন এক বিচিত্র বৈপরীত্যের জনপদ মফস্বল শহরগুলি। একদিকে খাদ্য আন্দোলনের উত্তাপ ছুঁয়ে থাকা শহরের বাতাসে ছুরি,গুলি, বোমা অজ্ঞাতবাসের গল্প ভেসে বেড়ায়, অন্যদিকে সন্ধে-ছোঁয়া বিকেলে পাড়ায় পাড়ায় কান পাতলেই শোনা যায়, ‘আয় তবে সহচরী’ কিংবা ‘ভরা থাক স্মৃতিসুধায়’। অনেক না-থাকার মধ্যেও একটা বিরাট অস্তিত্বের অভিমান ছিল গোটা শহর জুড়ে, বিশেষত তরুণদের মধ্যে। যার ফলে একদল ছেলে অবিরত ‘লড়ে যায়’।— একগুচ্ছ নাটকের দল নিয়মিত কাজ করে চলে, বের হতে থাকে পত্রিকার পর পত্রিকা, স্থানীয় সংবাদপত্রগুলি জাগিয়ে রাখে কৌতূহল, একেবারেই তরুণদের নিজস্ব শক্তিতে আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক উৎসব। এখানেই আটের দশকের শুরুতে জন্ম নিয়েছিল 'প্রতিভাস' পত্রিকা (পরে নাম পরিবর্তন করে হয় 'আজকের প্রতিভাস'), পরে সেই পত্রিকারই প্রকাশনা, সুপ্রকাশ। ১৯৯০-১৯৯৭ কালপর্বে সুপ্রকাশ গণনীয় সংখ্যক গ্রন্থ ও পুস্তিকা প্রকাশ করতে পেরেছিল।

সু্প্রকাশ নামটা রেখে ২০১৭ সালে যখন নতুনভাবে প্রকাশনার কাজ শুরু হয়, তখন আমরা নামের সঙ্গে সঙ্গে পূর্বতন সুপ্রকাশের উদ্দেশ্য-বিধেয়কেও মনে রেখেছিলাম। এই পর্যায়ে আমাদের প্রথম প্রকাশনা ‘মজনু মোস্তাফা কবিতা সংগ্রহ’। মজনু মোস্তাফা—ছদ্মনামের আড়ালে থাকা নির্মাল্যভূষণ ভট্টাচার্য সেই আশ্চর্য গোত্রের কবি, স্বল্পপঠিত হলেও যাঁর কবিতার ভরবেগ প্রচণ্ড। আজীবন কবিদের, তরুণ লেখকদের স্বজন ছিলেন, লালন করেছিলেন ক্ষীণতনু পত্র-পত্রিকার যাবতীয় উদ্যোগকে। ১৯৮০-তে অকালপ্রয়াণের আগে একটিমাত্র কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছিল—‘উনিশ যন্ত্রণা’। মৃত্যুর পরে ‘মজনু মোস্তাফার কাব্যগ্রন্থ’। সেই কাব্যগ্রন্থ ও তাঁর ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য কবিতা নিয়ে ‘মজনু মোস্তাফা কবিতা সংগ্রহ’ প্রকাশ করে সংস্কৃতিকর্মীর প্রজন্মান্তরের দায় পালন করেছে সুপ্রকাশ।

এই বইটির সঙ্গেই প্রকাশিত হয়, ‘সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ’। সাহিত্যক্ষেত্রে প্রায় অচর্চিত সমর ভট্টাচার্য জন্মেছিলেন অবিভক্ত নদীয়ার মেহেরপুরে। দেশবিভাগের ধাক্কায় এপার বাংলায় এসেও শৈশবের ফেলে আসা মেহেরপুরের স্মৃতিকে সমর নিজের সৃজনবিশ্বে কখনও ছেড়ে যেতে পারেননি। আজীবন ছিলেন ক্ষীণতনু। নাবালক ছেলেমেয়ে নিয়ে হারিয়েছিলেন স্ত্রীকে। শ্রমনিষিক্ত বেদনাও তাঁর সংবেদী কলমটিকে, তাঁর কলমের কথক-সুরটিকে স্তব্ধ করতে পারেনি। লিখেছেন কম। ‘সৌদামিনীর দিনকাল’ নামে তাঁর গল্পগ্রন্থ, পাণ্ডুলিপি ও পত্র-পত্রিকার পাতা থেকে সযত্ন সম্পাদনায় গ্রন্থনা করা হয়েছে ‘সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ’। দারিদ্র্য, অসুস্থতার সঙ্গে সঙ্গে অস্বীকৃতি জীবৎকালে তো বটেই, মৃত্যুর পরেও সমরের পিছু ছাড়েনি (অকালপ্রয়াণ ২০০২ সালে)। এ কাজ ছিল আমাদের প্রজন্মান্তরের দায়।

সুপ্রকাশের প্রথম থেকেই লক্ষ্য, আলোকবৃত্তের বিপ্রতীপে থাকা বিষয়, মানুষ ও সমাজের স্বতঃশ্চল অন্তঃপ্রক্রিয়ায় এই যে আমাদের বর্তমান সংস্কৃতির অবয়ব— তার ধূলিধূসর ইতিহাস ও তার নেপথ্য কারিগরদের কথা তুলে আনা। যাঁদের কথা কোনো ইতিহাস বইতে লেখা থাকে না, যাঁদের কৃতিকে ইচ্ছাকৃত তাচ্ছিল্যে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়, যাঁদের পরিকল্পনামাফিক বাইরে রাখা হয় রশ্মিকেন্দ্রের— অথচ যাঁদের শ্রম-মেধা-আত্মত্যাগকে আত্মসাৎ করেই মিথ্যে মেকাপে গড়ে তোলা হয় আমাদের সংস্কৃতির বৈভব— তাঁদের কথা বলাই সুপ্রকাশের স্বনির্বাচিত দায়।

সুপ্রকাশের প্রকৃত লক্ষ্য-মোক্ষ অনুধাবনে তার পুস্তক-তালিকাটি সহায়ক হতে পারে।

বাহুল্য হলেও উল্লেখ করা প্রয়োজন, সুপ্রকাশ ছাপাখানা বা পরিবেশক নয়। বই ছাপা, বাঁধাই, পরিবেশনা আর বিপণন বাদ দিলে যা পড়ে থাকে, সেটাই একটা প্রকাশনার চরিত্র হওয়া উচিত। সুপ্রকাশ সে অর্থেই চরিত্রগত দিক থেকে একটি প্রকাশনা। এবং সুপ্রকাশ মনে রাখে—

"কোনো শিল্পের সমস্যা শুধু আঙ্গিকের বা বহনযোগ্যতার নয়, মূল প্রশ্নটা মতাদর্শ ভিত্তিক সংগঠিত চলমানতার।"
(— নদীয়া জেলার নাট্যচর্চা/সুপ্রকাশ)

Address

16, Radhanath Mallik Lane
Kolkata
700012

Opening Hours

Monday 12am - 8pm
Tuesday 12pm - 8pm
Wednesday 12pm - 8pm
Thursday 12pm - 8pm
Friday 12pm - 8pm
Saturday 12pm - 8pm

Telephone

+919477530440

Website

http://suprokashbooks.com/

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Suprokash posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Suprokash:

Share

Category