14/06/2025
ভারতে কিছু নাম রয়েছে, যেগুলো কেবল ব্যবসার সঙ্গেই যুক্ত নয়, মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে তাদের কর্ম, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার মাধ্যমে। সেই নামগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে TATA গোষ্ঠী শীর্ষস্থানীয়। আবারও তারা প্রমাণ করল—কেন কোটি কোটি ভারতীয় আজও তাদের প্রতি অগাধ আস্থা ও ভালোবাসা রাখে।
সম্প্রতি আমেদাবাদ বিমানবন্দরে এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে প্রাণ হারান অনেক যাত্রী, আহত হন বহু মানুষ এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় একটি মেডিক্যাল কলেজের। এ ঘটনা সমগ্র জাতিকে শোকস্তব্ধ করে তোলে। অথচ এই কঠিন পরিস্থিতিতেও যে সংস্থা নিঃশব্দে, নির্লোভভাবে, সম্পূর্ণ মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে সামনে এগিয়ে এসে বলল—"আমরা পাশে আছি," সে সংস্থার নাম TATA।
দুর্ঘটনার পর TATA গোষ্ঠীর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ:
প্রতিটি নিহত যাত্রীর পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
আহতদের সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় সংস্থাটি, তা যত ব্যয়বহুলই হোক না কেন।
শুধু তাই নয়, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মেডিক্যাল কলেজটি পুনঃনির্মাণের দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নেয় TATA গোষ্ঠী—তা কোনও সরকারি নির্দেশ বা চাপ ছাড়াই।
এমন পদক্ষেপ সাধারণত দেখা যায় না কোনও কর্পোরেট হাউসের তরফ থেকে। TATA চাইলেই বলতে পারত, “এটা যান্ত্রিক ত্রুটি, আমরা দায়ী নই” অথবা “তদন্তের পরে দেখা যাবে দোষ কার ছিল।” কিন্তু তারা দায়িত্ব এড়ানোর পথে যায়নি। বরং আগেভাগেই তাদের সহানুভূতি, মানবিকতা এবং নৈতিকতার পরিচয় দিয়েছে।
ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত তাদের মহানুভবতা:
TATA গোষ্ঠীর মানবিক উদাহরণ আজকের ঘটনা নয়। তারা আগেও একাধিকবার প্রমাণ করেছে—মানবতার পাশে দাঁড়ানোই তাদের নীতিগত মূলমন্ত্র।
২০০৮ সালের মুম্বই তাজ হোটেল জঙ্গি হামলা ছিল ভারতের ইতিহাসের এক ভয়ংকর অধ্যায়। এই হামলায় বহু মানুষ প্রাণ হারান, কর্মচারীরাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু TATA হোটেল কর্তৃপক্ষ একটিও কর্মীকে ছাঁটাই করেনি। বরং তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের চিকিৎসা, শিক্ষাব্যয় ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছিল পুরোপুরি। এমন মহানুভবতা কোনো আইন দ্বারা বাধ্য নয়, এটি আসে হৃদয় থেকে।
করোনা মহামারীর সময়, যখন সারা দেশ দিশেহারা ছিল, TATA গোষ্ঠী নিজ খরচে বহু জায়গায় অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি করেছিল। হাসপাতাল ও কোভিড সেন্টারগুলিতে সরবরাহ করেছিল প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সরঞ্জাম। হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিল TATA।
নেতৃত্ব মানে কেবল ব্যবসা নয়
TATA গোষ্ঠীর প্রতিটি পদক্ষেপ আজ এক অনন্য নেতৃত্বের চিত্র তুলে ধরে—যেখানে ব্যবসার আগে মানুষ, মুনাফার আগে নৈতিকতা এবং উন্নতির আগে মানবিকতা। তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, বড় সংস্থা হওয়া মানেই কেবল পুঁজির পরিমাণ নয়, বরং দায়িত্ববোধ, মূল্যবোধ এবং সাহসিকতা। TATA গোষ্ঠী কখনোই তাদের দায় এড়ায়নি, বরং তাদের দায়িত্ব অনেক ক্ষেত্রেই আইনের ঊর্ধ্বে নৈতিকতার ভিত্তিতে বিস্তৃত হয়েছে।
রতন টাটার আদর্শ ও প্রভাব
এই সবকিছুর মূলে আছেন রতন টাটা—যাঁর জীবন, দৃষ্টিভঙ্গি এবং নেতৃত্ব TATA গোষ্ঠীর প্রতিটি স্তরে আজও প্রতিফলিত হয়। ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, রতন টাটা বারবার তা দেখিয়েছেন। তিনি বারবার বলেছেন—"I don’t believe in taking right decisions. I take decisions and then make them right." আজ তাঁর অনুপস্থিতিতেও তাঁর গড়ে তোলা আদর্শ এক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
ভারতের মতো একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল দেশে, এমন কিছু প্রতিষ্ঠান সত্যিকারের ভরসা জোগায় যাদের উপর মানুষ চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারে। TATA গোষ্ঠী তাদের মধ্যে অন্যতম নয়—বরং শ্রেষ্ঠ। তারা আজ আবারও দেখিয়ে দিল—দায়িত্ব মানে আদালতের রায় নয়, দায়িত্ব মানে নৈতিকতার প্রতি প্রতিশ্রুতি।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, যখন অনেক কর্পোরেট সংস্থা মুনাফার দৌড়ে নীতিকে বিসর্জন দিচ্ছে, তখন TATA গোষ্ঠীর এমন মানবিকতা নিঃসন্দেহে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এমন এক সময়ে, আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি TATA গোষ্ঠীকে এবং সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই স্বর্গীয় রতন টাটাকে—যাঁর দূরদর্শিতা ও মানবিক নেতৃত্ব আজকের ভারতবর্ষকে আরও বেশি মানবিক করে তুলেছে।
TATA শুধু একটি নাম নয়, এটি এক আস্থা, এক বিশ্বাস, এক মূল্যবোধের প্রতীক।