02/10/2025
🫡🙏
শাহরুখ খানের নাম শুনলেই প্রথমেই যে ছবিটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে তা হলো—বলিউডের কিং খান, কোটি ভক্তের হৃদয়ের রাজা। কিন্তু তাঁর স্ত্রী গৌরী খানের গল্পটা একেবারেই আলাদা।
একসময় তাঁকে মানুষ চিনতো শুধু নায়ক শাহরুখ খানের স্ত্রী হিসেবে। সেই পরিচয় নিঃসন্দেহে গৌরবের, কিন্তু একইসাথে অস্বস্তিরও। কারণ, একজন নারী হিসেবে তাঁর নিজের অস্তিত্ব, নিজের স্বপ্ন, নিজের প্রতিভাকে তুলে ধরা তখন অনেক কঠিন ছিলো।
গৌরী ছোটবেলা থেকেই শিল্পকলা ও ফ্যাশনের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। বিয়ের পর মুম্বাইয়ের ব্যস্ত জীবনে এসে তিনি বুঝলেন, কেবলমাত্র সুপারস্টারের স্ত্রী হয়ে বেঁচে থাকা তাঁর জন্য যথেষ্ট নয়। ভেতরে ভেতরে তাঁকে তাড়িত করছিলো নিজের কিছু গড়ার তাগিদ। তাই তিনি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীতে “Gauri Khan Designs” নামে নিজের প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান।
শাহরুখ খানের মতো তারকার স্ত্রী হওয়া যেমন একটি সুবিধা, তেমনি এটি এক ধরনের চাপও বটে। চারপাশের সবার কৌতূহল ছিল, “নায়কের স্ত্রী কাজ করলে সেটা কেমন হয়?”
অনেকে ভেবেছিলেন হয়তো কেবল নাম আর প্রভাবেই এগোবেন গৌরী। কিন্তু তিনি সময়ের সাথে প্রমাণ করেছেন যে তাঁর জায়গা তিনি প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই অর্জন করেছেন।
আজ গৌরী খান ভারতের অন্যতম সেরা ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। তাঁর কাজের প্রশংসা করেন শুধু সাধারণ মানুষ নন, বলিউডের প্রথম সারির তারকারাও।
করণ জোহর, রণবীর কাপুর, জ্যাকলিন ফার্নান্দেজ, ক্যাটরিনা কাইফসহ অসংখ্য তারকার বাড়ির অন্দরসজ্জা করেছেন তিনি। শুধু সেলিব্রিটি নয়, মুম্বাইয়ের নামকরা অফিস ও রেস্তোরাঁগুলিও তাঁর কাজের সাক্ষী।
গৌরীর কাজের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে আজ তাঁর পরামর্শ ফি-ই ৬ লাখ টাকা। যদি ফ্ল্যাট সাজাতে হয়, তবে খরচ দাঁড়ায় ৬০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকার মধ্যে। আর বাংলো সাজানোর জন্য তিনি নেন ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত। এত বিপুল পারিশ্রমিক কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়। এর পেছনে আছে প্রায় দুই দশকের শ্রম, দৃষ্টিভঙ্গি, আর নিজের স্বতন্ত্র স্টাইল।
তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমি হয়তো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ডিজাইনার হতে পারবো না। তবে আমি একটা কিছু হতে চেয়েছিলাম, সেটা হয়তো পেরেছি। একজন নারীর আত্মসম্মান বোধ থাকা জরুরি।”
এই কথাগুলো তাঁর জীবনদর্শনের প্রতিফলন। তিনি সহজেই পারতেন শাহরুখ খানের স্ত্রী হিসেবে বিলাসিতায় দিন কাটাতে। কিন্তু গৌরী বেছে নিয়েছেন কঠিন পথ যেখানে আছে শ্রম, চ্যালেঞ্জ, আর স্বপ্ন পূরণের আনন্দ।
২০০২ সালের পর থেকে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। তবে সত্যিকার অর্থে স্বীকৃতি পেতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় ২০ বছর। শেষ তিন-চার বছরে তাঁর কাজ দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। এই ধৈর্য, এই অধ্যবসায়ই তাঁকে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছে।
গৌরীর সাফল্যের গল্প নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা। কারণ এখানে আছে স্পষ্ট বার্তা—আপনি যদি নিজেকে প্রমাণ করতে চান, তাহলে কোনো পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকার দরকার নেই। পরিবার, সমাজ, কিংবা চারপাশের চাপ যাই থাকুক, নিজের পরিচয় গড়ে তোলা সম্ভব।
গৌরীর জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—কেউ যদি চায়, তবে যে কোনো অবস্থান থেকে নতুন পথ তৈরি করা যায়। শুধু সাহস থাকতে হবে। তিনি দেখিয়েছেন, একজন নারী শুধুমাত্র সংসারের রানী হয়েই নয়, শিল্প ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে নিজের নামও অমর করে রাখতে পারেন।
আজ গৌরী খান শুধু শাহরুখ খানের স্ত্রী নন, তিনি নিজেই একটি ব্র্যান্ড, একটি নাম, একটি আস্থা।
©️ An Animesh
পোস্ট ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করবেন please
🚨 অনুমতি ছাড়া লেখা কপি পেস্ট করবেন না।
#গৌরীখান #ইন্টেরিয়রডিজাইন #নারীশক্তি