https://www.youtube.com/@BeyondRoutine85

Beyond Routine, KOLKATA (2025)

01/11/2025

কাল সুপার কাপ ডার্বির পর প্রেস কনফারেন্সে মোলিনা বলেছেন যে দল তিনি গঠন করেননি, তাকে বিদেশী বেছে দিয়েছে ম্যানেজমেন্ট।বিরাট বড় স্টেটমেন্ট।
হ্যাঁ, ওনার নিজেরও অনেক সমস্যা আছে। যেমন ওনার কোনো প্ল্যান বি নেই, রোজ একই গতে বাঁধা সময়ে সাবস্টিটিউশন, জঘন‍্য গেম রিডিং। এগুলোর সব কটাই সত্যি। কিন্তু এগুলো শুধুই "টিপ অফ দা আইসবার্গ"। মূল সমস্যা আরো গভীরে।

প্রথমত, গ্রেগ স্টুয়ার্ট চলে যান সেটা কখনোই চাননি মলিনা, কারণ স্বাভাবিকভাবেই গ্রেগ স্টুয়ার্টই ছিল এই দলের মূল চালিকাশক্তি। তবুও গ্রেগ চলে যাওয়ায় ম‍্যানেজমেন্টের কাছে তার লাইক ফর লাইক বিকল্প চেয়েছিলেন মোলিনা। সেটা তো তিনি পাননি বটেই, তার জায়গায় ম্যানেজমেন্ট মোলিনাকে ধরিয়ে দিয়েছে রবসন। যে কিনা আদতে একজন উইঙ্গার।
তবুও আমি বিশ্বাস করি, এই স্কোয়াড নিয়েও আরেকটু ভালো ফুটবল খেলাতে পারতেন মোলিনা। কিন্তু ভারতীয় ফুটবলে একটা অমোঘ সত‍্য হল, যদি দলে একজন বিদেশি প্লেমেকার বা নিদেনপক্ষে একটা বিদেশী নাম্বার ৮ না থাকে, তাহলে মিডফিল্ডের দখল হারাবেই সেই দল। ঠিক এটাই ঘটেছে মোহনবাগানের সাথেও।

মোলিনার নিশ্চই দোষ আছে, কিন্তু এই বিপর্যয়ের সিংহভাগ দায় ম্যানেজমেন্টের। মোলিনার সবচেয়ে বড় ভুল যে উনি নরম স্বভাবের, হাবাসের মতো কঠিন নন। হাবাসও একই পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলেন, কিন্তু ম‍্যানেজমেন্টের পুতুল হয়ে থাকতে চায়নি। তখনই ওনাকে সরিয়ে দেওয়া হয় “হেলথ ইস্যু”র অজুহাতে, যেটা পরে হাবাস নিজেই জানান যে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলছে ম‍্যানেজমেন্ট।

কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালেই পাজী। ম্যানেজমেন্টের চালাকিটা ঠিক এখানেই।যখন ফেরান্দোকে বাদ দিয়ে তারা হাবাসকে আনে, তখন যেহেতু দল গাড্ডায় পড়েছিল তাই হাবাসকে দেওয়া হল পূর্ণ স্বাধীনতা। হাবাস সবার আগে হুগো বুমোকে আনরেজিস্টার করে তার জায়গায় জনি কাওকোকে আনলেন। ফলস্বরূপ দল শিল্ড জিতল।
তারপরই যখন কাজ হাসিল হয়ে গেল তখনই ম্যানেজমেন্ট হাবাসের ডানা কেটে দিল। হাবাস যেটা সহ‍্য করেননি। মোলিনা সেটাই সহ‍্য করে নিয়েছেন। এটাই তফাৎ। মোলিনা নিজের চাকরি বাঁচাতে এই সিজনের শুরুতে ম্যানেজমেন্টের সাথে আপোষ করেছেন। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হল না। সেই তার চাকরি গেল। এখনো অফিশিয়ালি কিছু হয়নি তবে কাল তিনি প্রেস কনফারেন্সে পিছুটান না রেখে যা যা বলেছেন তা এটাই প্রমাণ করে যে উনি জানেন যে ওনার চাকরি আর বেশিদিন নেই।

এবারের মরশুমে একের পর এক ভুল করে গেছে ম‍্যানেজমেন্ট। প্রথমে তারা প্রি-সিজনে দেরি করল।
কারণ হিসাবে বলল যে তারা নাকি ডুরান্ড কাপে ফোকাস করছে। ডুরান্ডটাই নাকি প্রি সিজন।সেটা তো হলই না। বরং ডুরান্ডের প্রথম ম‍্যাচে অধিকাংশ বিদেশীরা এসেই পৌঁছাতে পারেনি। তারপর ডুরান্ড থেকে ছিটকে যাওয়ার পর ম‍্যানেজমেন্ট বলল, এখন ACL2 এর প্রস্তুতি চলছে, ইনজুরির ভয়ে তাই প্রি-সিজনে জোর দেওয়া হয়নি। আমরা সমর্থকরা বোকার মত সেটাও মেনে নিলাম।
তারপর দেখা গেল এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর প্রথম ম‍্যাচ হেরে দল ইরানই গেল না। খবর আছে মোলিনা যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কিছু অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় যেতে রাজি হযননি। আর এই গোটা ঘটনাতে ম্যানেজমেন্ট কোচের বদলে সেইসব অস্ট্রেলিয়ান প্লেয়ারদের পক্ষেই দাঁড়ায়। এতে সেইসব অস্ট্রেলিয়ানরা আরো প্রশ্রয় পেল। তারপর আই এফ এ শিল্ডের মত একটা টুর্নামেন্টে কোনমতে বিশাল কায়েথের হাত ধরে টাইব্রেকারে জয়ের পর সুপারকাপে ফের এক্সপোজ হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ান বিদেশীদের জারিজুরি। আজ আমরা আক্রমণভাগে এত টাকা খরচা করেও সুপার কাপ থেকে ছিটকে গেলাম। একটাও গোল না খেয়ে। এর দায় সেইসব অস্ট্রেলিয়ান প্লেয়ারদের এবং ম্যানেজমেন্টকে নিতেই হবে।

আমরা ভাল করেই জানি যে এখন মোলিনা সহজ বলির পাঁঠা হবে। ওকে সরিয়ে দিক, সমস্যা নেই।
কিন্তু সমস্ত মোহনবাগান সমর্থকদের বলছি আসল দোষ ঢাকতে আপনারা ম্যানেজমেন্টকে ছেড়ে দেবেন না। তাদের এবং তাদের PR টিমদের চিনে নিন। এখন ম‍্যানেজমেন্টের হয়ে কেউ তাঁবেদারি করলে তাদের এই প্রশ্নগুলো করুন। চেপে ধরুন তাদের।
আমরা বহুদিন ধরে আমাদের ইউটিউব লাইভে এসব বলছি। লোকে তখন আমাদের গালাগাল করেছে। বলেছে আমরা দলের পাশে নেই। দলের ভালো চাই না। কেবল খুঁত ধরি। কিন্তু এখন তারা দেখছে যে আমরা যা যা বলেছি একে একে সেই সব কথা সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে।
কিন্তু বিশ্বাস করুন। আমরা একেবারেই খুশি নই । আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হোক এটা চাইনি, মনে প্রাণে চাইছিলাম মোহনবাগান সব ট্রফি জিতুক।

তাই আবারও আমাদের আন্তরিক আবেদন,
সব মোহনবাগান সমর্থকেরা বুঝে নিক, আসল দোষ কার। মোলিনার দোষ তিরিশ শতাংশ হলে কিন্তু ম্যানেজমেন্টের দোষ সত্তর শতাংশ।
ওরা যেন আর আপনাদের আবারও বোকা বানাতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করুন।
জয় মোহনবাগান 💚❤️