09/09/2025
‘প্রিয় মমতা দিদুন, আমি আমার মাকে কাছে চাই...।’ পাঁচ বছরের ছেলে চিঠি লিখল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কারণ, সে শুনেছে, তিনিই একমাত্র পারেন মাকে তার কাছে ফিরিয়ে আনতে। ঐতিহ্য দাশ থাকে আসানসোলে বাবার সঙ্গে। মা থাকেন সেই উত্তর দিনাজপুরে। সেখানে স্কুলে পড়ান তার মা। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। মাকে ছেড়ে ছোট্ট ঐতিহ্য থাকতে পারে না। সকালে ঘুম ভাঙার পরে কিংবা রাতে শুতে যাওয়ার সময়ে মনে হয়, যদি মাকে জড়িয়ে ধরতে পারত। ব্যথা লাগলে বা কেউ বকলে মনে হয়, মা যদি এখন কাছে থাকত! কিন্তু তা সম্ভব হয় না। কারণ মা আর ছেলের মাঝে কয়েকশো কিলোমিটারের দূরত্ব।
প্রাথমিকের শিক্ষিকা স্বাগতা পাইন ২০২১ সালে ১৬৫০০ পদে পোস্টিং পান উত্তর দিনাজপুরের রহতপুর এফপি স্কুলে। স্বাগতা জানান, ২০২১ সালে নিজ জেলা থেকে দূরবর্তী জেলায় কর্মরত হন প্রায় ৬০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা, যারা পরিবার-পরিজন ছেড়ে পড়ে আছেন জীবন-জীবিকার টানে।কারও বৃদ্ধ পিতা-মাতা,শ্বশুর-শাশুড়ী অসুস্থ আবার কেউ কেউ নিজেও শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তিনি আরও জানান,প্রথমে সন্তানকে তাঁর কাছেই রেখেছিলেন। কিন্তু ওর অ্যাজ়মার সমস্যা আছে। শীতে ওখানে খুবই কষ্ট হতো। আর দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে চিকিৎসার সুবিধাও কম। তাই ঠিক করেন, তাকে আসানসোলে বাড়িতেই রাখবেন।স্বাগতা আরও জানান,অন্য চাকরির সাথে আমাদের সবথেকে বড় পার্থক্য হল আমাদের শনি বার ছুটি থাকে না, এত দূর থেকে শুধু রবিবার একদিনে গিয়ে ফিরে আসা অসম্ভব!প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতে,২০১৭ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে দূরত্বের জন্য স্পেশাল ট্রান্সফারের অর্ডার জারি হয়।
কিন্তু মাকে ছেড়ে ছোট্ট ঐতিহ্য থাকতে পারে না। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখেছে ঐতিহ্য। মুখ্যমন্ত্রীকে সম্বোধন করেছে ‘মমতা দিদুন’ বলে। লিখেছে, ‘উত্তর দিনাজপুরে আমার মা প্রাইমারি দিদিমণি। আমাদের ছেড়ে ওখানে থাকে। অনেক দিন পর পর বাড়ি আসে। আমি, বাবা আর দাদুর সঙ্গে বাড়িতে থাকি। আমার খুব কষ্ট হয় মাকে ছাড়া। তুমি তাড়াতাড়ি আমার মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেবে। আর যেন আমাকে ছেড়ে না যায়।’ (লেখা অপরিবর্তিত)
স্বাগতার স্বামী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কর্মরত। স্বাগতার বাপের বাড়ি ইন্দপুরের বনকাটি গ্রামে। তিনি জানান, ছেলের এই কর্মকাণ্ড দেখে অবাক তাঁরা। ভাবতেই পারেননি এমনটা ও লিখতে পারে। তবে তাঁর অনুমান, বদলির জন্য অনেক দপ্তরে চিঠি লিখে আবেদন করেছেন ওর সামনে বসেই। সেটা দেখেই অনুকরণের চেষ্টা করছে ছোট্ট ঐতিহ্য।
ঐতিহ্যর কথায়, ‘মা যাতে কাছে চলে আসে তাই মমতা দিদুনকে চিঠি লিখেছি। মা তো বলেছিল, মমতা দিদুনই পারে মাকে আমার কাছে এনে দিতে।’ ঐতিহ্য এও ভেবে রেখেছে, মা কাছে চলে এলে, মমতা দিদুনকে চিঠি লিখে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ও জানাবে।
এই রকম ঐতিহ্য এই ৬০০০ শিক্ষক শিক্ষিকার ঘরে ঘরে আছে। প্রত্যেক ঐতিহ্য ই চায় মায়ের কোলে ঘুমাতে, বাবার হাত ধরে ঘুরতে।