Society of Social Scientists - SOSS

Society of Social Scientists - SOSS Society of Social Scientists is a Social organisation with an academic purpose.

22/09/2025

From Marxism to Humanism- By G.P.Bhattacharjee

1.Roy’s conversion to Marxism- মানবেন্দ্রনাথ রায়- এর মার্ক্সবাদ গ্রহন।।
তাঁর জন্ম ১৮৮৭ সালে এবং ১৪ বছর বয়সী ছাত্র হিসাবে তিনি বাঙালির আন্ডারগ্রাউন্ড বিপ্লবী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন, যা শ্রী অরবিন্দ, তাঁর ভাই বারিন ঘোষ, রাসবিহারীi বোস, যতীন মুখোপাধ্যায়- বাঘা যতীন নামে যিনি বেশি পরিচিত,- এর মতো অসাধারণ ক্ষমতার মানুষের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল, এখানে মাত্র কয়েকজন সর্বোচ্চের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিপ্লবীদের তৎকালীন অর্থ ও অস্ত্রের প্রয়োজন ছিল এবং তাদের মূলত ডাকাতির মাধ্যমে এগুলি পাওয়ার চেষ্টা করছিল। নরেন্দ্রনাথ এই ধরনের কার্যকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, যা জাস্টিস রাওলাটের (1918) সিডিশন কমিটির রিপোর্টে সম্পূর্ণরূপে নথিভুক্ত রয়েছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ 1914 সালে শুরু হওয়ার পর, বঙ্গ বিপ্লবীরা জার্মানির সাথে একটি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন, এবং তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জার্মান সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পান। সুতরাং ১৯১৫ সালের এপ্রিল মাসে নরেন্দ্রনাথ, সি. মার্টিন নাম ধারণ করে, ব্যাটাভিয়া চলে যান এবং বঙ্গের জন্য জার্মান অস্ত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। নরেন্দ্রনাথ জুন মাসের মাঝামাঝি ভারতে ফিরে আসেন, এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে মিলে জার্মান অস্ত্র গ্রহণের একটি বিস্তারিত ব্যবস্থা করেন এবং এটি সঠিকভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করেন। তবে, অস্ত্রগুলি আসেনি, এবং আগস্টে নরেন্দ্রনাথ দ্বিতীয়বার ব্যাটাভিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন, এবং তিনি ১৯৩০ সালের ডিসেম্বর আগে পর্যন্ত ভারতে ফিরতে পারেন নি।
ভারতের বাইরে ১৫ বছরের এই সময়কালকে মোটামুটি তিনটি অসম দৈর্ঘ্যের পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়- ১) দূর প্রাচ্যের পর্যায় (অগাস্ট 1915-1916), ২) আমেরিকান পর্যায় (1916-1919 নভেম্বর), এবং ৩) ইউরোপীয় পর্যায় (1919-1930 ডিসেম্বর)।

দূর প্রাচ্যের পর্ব ছিল অস্ত্রের সন্ধানের একটি সময়। এই সন্ধানটি কেবল একটি ব্যর্থতা ছিল না, এটি একটি পাঠও (শিক্ষা) ছিল, এবং নারেন্দ্রনাথ কেবল জার্মানদের সঙ্গে হতাশ হন নি, বরং ষড়যন্ত্রে ভারতের নেতাদের যেমন রাসবিহারী বোস, হেরাম্বলাল গুপ্ত, ড. চন্দ্র চক্রবর্তী এবং অন্যান্যদের প্রতি হতাশ হন। নরেন্দ্রনাথ তাদের সবকিছুতে এগিয়ে গিয়েছিলেন এবং সবার সম্পর্কে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছিলেন। নিজের লক্ষ্য অনুসরণ করে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছালেন, যেখানে তিনি সমাজতন্ত্রের নতুন আইডিয়ার সাথে সংযোগে আসেন, যা তার জন্য বেশ আকর্ষণীয় ছিল। তিনি ১৯১৬ সালে সান ফ্রান্সিসকো তে অবতরণ করেন, এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পালো অল্টো শহরে যান। সেখানে তিনি ধনাগোপাল মুখার্জির সাথে দেখা করেন, যিনি নরেন্দ্রনাথের বিপ্লবী সহকর্মী যাদুগোপালের ছোট ভাই। ধনাগোপাল তাকে অতীত পরিচয় ভুলে যেতে এবং নতুন মানুষের মতো জীবন শুরু করতে পরামর্শ দেন, এবং তিনিই মনাবেন্দ্রনাথ রায়(M.N.Roy) -এই নামটি দেন। যথার্থভাবেই, রায় লিখেছিলেন, "এম. এন. রায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে জন্মগ্রহণ করেন”। তখন তিনি প্রায় ২৯ বছরের একজন যুবক।
রায় এরপর নিউ ইয়র্কে চলে যান এবং সেখানে প্রবীণ ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা লাজপত রায়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হন, লাজপত প্রচার সফরে আমেরিকা গিয়েছিলেন এবং ভারতীয় স্বাধীনতার পক্ষে কিছু আমেরিকান জনগণের সমর্থন জিততে সক্ষম হয়েছিলেন। লাজপতের সাথে রায় নিউ ইয়র্কের সমাজতন্ত্রীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যদিও দুজনই তাদের ধারণার বিপক্ষে ছিলেন। রায় তাঁর স্মৃতিতে লিখেছেন যে লাজপত মার্কস ও অন্যান্য সমাজতন্ত্রী ক্লাসিকের বই কিনেছিলেন। রায় সেই বইগুলি অধ্যয়ন করেন এবং শেষ পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হন, এবং নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরিতে মার্কস পড়তে যেতে শুরু করেন। এইভাবে, রায় স্মরণ করেন যে তিনি শীঘ্রই সমাজতন্ত্র গ্রহণ করেছিলেন, বস্তুবাদী দর্শন বাদে, যা ছিল তাঁর শেষ আশ্রয় ।
রায় এবং অনেক অন্যান্য ভারতীয় নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারত-জার্মান ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত থাকায় গ্রেপ্তার হন। রায় প্যারোলে মুক্তি পান এবং মেক্সিকোতে পালিয়ে যান। মেক্সিকোতে রায় মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট, জেনারেল ক্যারাঞ্জার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং এটি তার রাজনৈতিক কার্যক্রম অনুসরণ করার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। এদিকে রায় 'দ্য হাই ওয়ে টু ডিউরেবল পিস' (The High way to Durable Peace) শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন যে বিশ্ব শান্তি উপনিবেশের মুক্তির উপর বেশি নির্ভর করে, পুঁজিবাদকে উৎখাত করার তুলনায়। বইটিতে মনরো নীতি নিয়ে একটি অধ্যায় ছিল এবং এটি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের দ্বারা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়। মেক্সিকো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সেই সময় বন্ধুত্মপূর্ণ ছিল না, এবং জেনারেল কারাঞ্জা রায়-এর বইয়ে মেক্সিকোর দৃষ্টিকোণকে প্রতিরক্ষা হিসাবে খুঁজে পান। মেক্সিকোতে একটি সমাজতান্ত্রিক পার্টি ছিল, যার সাথে রায় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে রেখেছিলেন। রায় একটি বিশাল তহবিলের অধিকারী ছিলেন যা তাকে জার্মানরা দিয়েছিল, এবং তিনি এই টাকা সমাজতান্ত্রিক পার্টির সহায়তার জন্য ব্যবহার করেন।

মেক্সিকো সমাজতান্ত্রিক পার্টি কয়েকটি পাম্পলেট (pamphlet )প্রকাশ করেছিল, যার বেশিরভাগই রায়ের দ্বারা লেখা হয়েছিল, এবং তাকে পার্টির অফিসের সম্পাদক ও পার্টির প্রচারনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
যখন রায় মেক্সিকোতে ছিলেন, তখন রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং মাইকেল বোরোদিন মেক্সিকোতে এসে নতুন শাসন ব্যবস্থা জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেন। তিনি সমাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ করেন এবং রায়ের আমন্ত্রণে তার সাথে থাকার জন্য আসেন এবং রায় তাকে অর্থ সাহায্যও করেন। তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন এবং বোরোদিনের মাধ্যমে রায় সম্পূর্ণরূপে মার্ক্সবাদী হয়ে উঠেন । মেক্সিকোর সমাজতান্ত্রিক দল তখন কমিউনিস্ট দলে পরিণত হয়, যা কমিন্টার্নের প্রথম বিশ্ব কংগ্রেস দ্বারা প্রকাশিত ম্যানিফেস্টো সমর্থন করে। দলটি মস্কোতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্ব কংগ্রেসে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং রায়কে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে নির্বাচিত করা হয়। এইভাবে রাশিয়ার বাইরে প্রথম কমিউনিস্ট দল গঠিত হয় এবং রায় তার রাজনৈতিক কর্মজীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের প্রান্তে এসে দাঁড়ালেন।
নভেম্বর ১৯১৯ সালের শুরুর দিকে রায় মস্কোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন, এবং বছরের শেষে তিনি বার্লিনে আসেন অস্ত্রের খোঁজে নয় বরং একটি নতুন ধরনের বিপ্লব দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে।

Notes:

1. M. N. Roy's Memoirs; Bombay: Allied Publishers: 1964, p. 22.

2. Ibid, p. 24

চলবে।

Society of Social Scientists is a Social organisation with an academic purpose.

31/08/2025

প্রেস রিলিজ

দুদিন ব্যাপী জাতীয় সেমিনার(১১-১২ আগস্ট,২০২৫) অনুষ্ঠিত হল ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউস সংলগ্ন সেমিনার রুমে। রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতায় এই সেমিনারের বিষয়বস্তুর প্রস্তাবক ছিল সোসাইটি ফর ফাস্ট জাস্টিস , ত্রিপুরা ।

বিভাগীয় অধ্যাপকগন ও ত্রিপুরা সোসাইটির কয়েকজনকে নিয়ে একটি অর্গানাইজিং সেমিনার কমিটি গঠন করা হয়। অধ্যাপক ভি.ডারলঙ সেমিনার কমিটির কনভেনার নিযুক্ত হন, এবং সোসাইটির পক্ষে কো- কনভেনার নিযুক্ত হয় শ্রী অরিজিৎ চক্রবর্তী। কমিটির সদস্য হিসাবে থাকেন সোসাইটির সভাপতি ডক্টর অঞ্জলি চক্রবর্তী, সহসভাপতি ডক্টর প্রফেসর চন্দ্রিকা বসু মজুমদার, এডভোকেট অমৃতলাল সাহা, ডক্টর বিপ্লব দেবনাথ, আইন বিভাগের শিক্ষক ডক্টর মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী, বিভাগের গবেষনারত পাঁচজন স্কলার এবং অন্যান্য ।
সেমিনারের বিষয়বস্তু‌ছিল-Access to Justice and the Rule of Law, with especial reference to Northeast." (ন্যায় বিচারের অধিকার ও আইনের শাসনে, উত্তর পূর্বাঞ্চলের অবস্থান।
প্রথম দিন:
উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হয় (১১আগসট) বেলা ১-৩০ মিনিটে। উদ্বোধন করেন ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর গঙ্গাপ্রসাদ প্রসেন। সঙ্গীত পরিবেশন করে সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীগন। স্বাগত ভাষন দেন‌ বিভাগীয় প্রধান ও অর্গানাইজিং কমিটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক অলক ভট্টাচার্য ।

স্পেশাল গেস্ট হিসাবে বক্তব্য রাখেন মুম্বাই ফোরাম ফর ফাস্ট জাস্টিস -এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং ট্রাস্টীর চেয়ারম্যান শ্রী ভগবানজি রায়ানি। তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিল - Why we need Reforms of Indian Judiciary and Public Interest Litigation (PIL). পাচঁ কোটির পেন্ডিং মামলার প্রেক্ষিতে বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন। নিজে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলেও দুর্বল দুর্বল মানুষেরপাশে দাঁড়াতে একশোর বেশি পি. আই. এল মামলা করেন এবং অধিকাংশ মামলায় জয় লাভ করেন কিন্তু দুঃখের বিষয়, জয় লাভ সত্ত্বেও বাস্তবায়ন ঘটেছে কম.. পরবর্তী বক্তব্য রাখেন দিল্লীতে আমন সত্য ট্রাস্টের প্রধান ও ন্যাশনাল ফেডারেশন অব সোসাইটিস ফর ফাস্ট জাস্টিস -এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর রাজ কছরু। তাঁর বক্তব্য ছিল - Court Management Systems and Access to Justice. বিভিন্ন টেকনোলোজিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে আদালত পরিচালনার কাজ সহজ করে মামলার বোঝা কমানো যায়, সেই সঙ্গে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ কমানো যায়। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় তিনি নালসা (NLASA ) অনুমোদিত জম্মু-কাশ্মীর ও ঝাড়খন্ড -এর দুটি প্রজেক্টের কথা বলেন, যেখানে ইউনিভার্সাল ওমেন হেল্প লাইন ১৮১ নং , এবং ওয়ান স্টপ সেন্টার (OSC ) চালু হয়েছে।। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য আইন পরিষেবা কতৃপক্ষ উন্নত টেকনোলজির সাহায্যে এরকম প্রকল্প নিতে পারে।
এই সেমিনারের প্রধান অতিথি - হাইকোর্টের অনারেবল চীফ জাস্টিস- টি অমরনাথ গৌর, যিনি রাজ্য আইন পরিষেবারও প্রধান, তাঁর উপস্থিতি এই সেমিনারের শীর্ষক বিষয়ের জন্য জরুরি ছিল। ত্রিপুরা হাইকোর্টের পেনডেনসি পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত মামলা নিস্পত্তিতে ত্রিপুরা বিচার ব্যবস্থার শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এর প্রধান কারন হল, ত্রিপুরার বিচারক, আইনজীবী ও আইন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত সকলের মিলিত সহযোগিতা। তিনি অবশ্য একথা বলেন যে, ফোরাম ফর ফাস্ট জাস্টিস -এন জি ও হিসেবে যে কাজ করছে , সেটা নিশ্চই খুব ভাল দিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে ত্রিপুরার ছাত্র ছাত্রীদের গবেষণা মূলক কাজের জন্য সারা দেশে ত্রিপুরার সুনামের উল্লেখ করেন। তাছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার করে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক সুনাম অর্জন করেছে । স্বাগত ভাষনে বিভাগীয় প্রধান আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারের অর্থ ব্যাখ্যা করেন। প্রাচীন দার্শনিক প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের ধারনায় ন্যায় বিচারকে একটি সুস্থ দেহের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ভারসাম্য ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। মনিপুর থেকে আগত শিশু অধিকার ও সুরক্ষা কর্মী ডক্টর রবিন রোয়ামি মনিপুর রাজ্যে হেল্প লাইন গুলির অকার্যকারিতা এবং শিশুদের দুরবস্থার কথা বলেন। তাদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজে তার এন. জি. ও কিভাবে চেষ্টা করছে, সেই সম্পর্কে আলোকপাত করেন। সভাপতির ভাষণ রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর গঙ্গাপ্রসাদ প্রসিন। ত্রিপুরা সোসাইটি ফর ফাস্ট জাস্টিস -র সভাপতি অবসর প্রাপ্ত এসোসিয়েট অধ্যাপক ডক্টর অঞ্জলি চক্রবর্তী ধন্যবাদ জ্ঞাপন বার্তায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, বহির্রাজ্য থেকে আগত অতিথি , সহযোগী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, আইনবিভাগ, ছাত্র, গবেষক এবং এই সেমিনারকে সফল করতে শিক্ষক -অশিক্ষক সকল কর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। প্রথমে ত্রিপুরা সোসাইটি গড়ে তোলার ব্যকগ্রাউন্ড স্মরন করেন। ফোরাম প্রতিষ্টাতা ভাগাবানজি রায়ানি ভারতের অন্যান্য রাজ্যে কাজ করছিলেন, কিন্তু উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রবেশ করতে পারছিলেন না । আজ তাঁকে এখানে আনতে পারার জন্য ডক্টর চক্রবর্তী সন্তোষ অনুভব করছেন। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন সমস্ত আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছাত্রসমাজ, কারন ভবিষ্যতের দায়িত্ব তাদের । তবে তারা যেন মনে রাখে যে সমাজ বিযুক্ত ক্যারিয়ার গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজে সমস্যা থাকবে, সচেতন ভাবে সমস্যাকে গ্রহণ করতে হবে, তবেই তার মোকাবেলা সম্ভব। লক্ষ্য সমস্যার সমাধান করা, উদাসীনতা নয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে।

তারপর শুরু হয় এক ঘন্টার প্রথম টেকনিকাল সেশন। বিষয়- Effciency and Performance of the Help lines in two north eastern states – Manipur and Tripura চেয়ার পার্সন ছিলেন প্রফ রাজ্ কচরু , এবং বক্তা ছিলেন ডক্টর রবিন। মনিপুরে চিলড্রেন হেল্প লাইন এর কার্যকারিতার বিষয়ের উপর তিনি ফোকাস করেন।

প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত অনুষ্ঠানটি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন বিভাগীয় অধ্যাপক ভি. ডারলং।

-১২ অগাষ্ট,২০২৫,- দ্বিতীয় দিনে দ্বিতীয় টেকনিক্যাল সেশন শুরু হয় বেলা দশটায়।

বিষয় ছিল -হোয়াই আর্জেন্ট নিড অফ ফ্রি লিগাল এইড ক্লিনিক ? (Why urgent need of free legal aid clinic) । প্রাক্তন হাইকোর্ট জাস্টিস স্বপনচন্দ্র দাস। স্বপনচন্দ্র বাবু বিচারবিভাগীয় বিষয়ে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি হিউমেন রাইটস কমিশন ও পুলিশ কমিশনের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। দুজন বক্তার প্রথম বক্তা শ্রী প্রবীণ প্যাটেল ফোরাম ফর ফাস্ট জাস্টিস এর একজন অন্যতম ট্রাস্টি, এবং ন্যাশনাল কনভেনর। তাঁর আলোচ্য বিষয় ছিল -বিচারাধীন বন্দিদের জন্য ন্যায়বিচার এবং জেল ব্যবস্থার সংস্কার সাধন (Justice for under traial Prisoners: Reformation of Jail ) । দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন শ্রী অমরজিৎ দে। অমরজিৎ ত্রিপুরা জুডিশিয়াল সার্ভিসের একজন অফিসার। ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিস অথরিটির পশ্চিম জেলার সেক্রেটারি। তাঁর বিষয় ছিল "একসেস টু জাস্টিস এন্ড দ্যা সিনারিও অফ দ্যা ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিস”( Access to Justice and the scenario of the District Service) ।

তৃতীয় টেকনিকাল সেশনের নির্ধারিত চেয়ারপার্সন ত্রিপুরা আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর যোগেশ প্রতাপ সিং বিশেষ কাজের কারণে আসতে পারেননি। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিভাগীও প্রধান এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সেশনটি পরিচালনা করেন। বিষয় -জুডিশিয়ারি এন্ড হিউমান ট্রাফিকিং (Judiciary and Human Trafficking) ।

এই সেশনের প্রথম বক্তা - ডক্টর মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। তাঁর আলোচ্য বিষয় ছিল "হিউমান ট্রফিকিং ইন দ্য নর্থইস্ট (Human Trafficking in the Northeast)। দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন ডক্টর বিপ্লব দেবনাথ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর।তাঁর আলোচ্য বিষয় ছিল "আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টু সল্ভ দ্য বার্ডেন অফ পেন্ডেন্সি (Artificial Intelligence to solve the burden of Pendency)।

চতুর্থ টেকনিকাল সেশনের বিষয়বস্তু ছিল -"এস্টাব্লিশমেন্ট অফ ল থুরু এওয়ারনেস এন্ড ইন্টারভেনশন অফ পুলিশ" (Establishment of Law through Awareness and intervention of Police) .চেয়ার পার্সন - ডক্টর জিগীষা পূজারী ইকফাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক। প্রথম বক্তা হাইকোর্ট অ্যাডভোকেট অমৃতলাল সাহা। তাঁর আলোচ্য বিষয়- "ফান্ডামেন্টাল রাইটস টু প্রসিডিউর এস্টাব্লিশড বাই ল" (Fundamental Rights to Procedure Established by Law)। দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন ডক্টর জয়ন্ত ধর। ত্রিপুরা ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। তিনি আলোচনা করেন- “এওয়ারনেস অফ ল রিলেটেড টু পুলিশ ফাংশন( Awareness of Law related to Police Function.”।

দুদিনব্যাপী সেমিনারের শেষ অনুষ্ঠান ছিল প্যানেল ডিসকাশন। অংশ গ্রহন করেছে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের পাচঁ জন পি এইচ ডি স্টুডেন্টস। অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় ছিলেন অধ্যাপক ডক্টর নচিকেতা মিত্তাল।

১) শ্রী তুনির ঘোষালের বিষয় - "লিগ্যাল রিফর্মস এন্ড সোশ্যাল জাস্টিস ইন টি লাইভস অফ প্লানটেশন ওয়ার্কফোর্স ইন নর্থইস্ট ইন্ডিয়া"।

২) শ্রীমতি রিয়া শর্মার বিষয় - "ফ্রম মার্জিন টু মেইনস্ট্রিম :ইভালুয়েটিং ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স রাইটস আন্ডার ইন্ডিয়াস নিউ লেবার কোডস ইন ত্রিপুরা " ।

৩)শ্রীমতি নিকিতা রাই - এর বিষয় ছিল- "দ্য ডুয়েল মার্জিনাইলিজেশন অফ নর্থইস্ট মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার্স : রেসিজম এন্ড লিগ্যাল ইনভিসিবিলিটি ইন ইন্ডিয়া "।

৪) ডক্টর মধুমিতা দেবনাথ, অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার . বিষয়- "কনভিক্টেড ওমেন প্রিসনারস ইন জেল"।

৫) সুমন আলীর বিষয়বস্তু- "লিগ্যাল লিটারেসি এন্ড গ্রাসরুট জাস্টিস ইন ত্রিপুরা "।

বি: দ্রষ্টব্য: প্রত্যেক স্কলারের বিষয় উপস্থাপনা সুন্দর হয়েছে,এরা সকলেই ভবিষ্যতের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সোসাইটি ফর ফাস্ট জাস্টিস, ত্রিপুরা শাখার পক্ষ থেকে দুদিনের এই জাতীয় সেমিনারটি সফল করার পিছনে যাদের অবদান অনস্বীকার্য, তাদের সকলকে আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।।

14/06/2025

তৃতীয় অংশ

এ কথা সত্য যে মুঘলরা দীর্ঘকাল ধরে উপজাতীয় রাজাদের উপর তাদের আধিপত্য ধরে রেখেছিল, মূলত ত্রিপুরায় হাতির প্রাচুর্য এবং গুনমানে হস্তী অধিকারের বাসনায় । ১৬২৫ সালে মুর্শিদাবাদের নবাব দিল্লির শাসকের সঙ্গে যোগসাজশে পুনরায় এই দেশ আক্রমণ করে এবার তিনি পরাজিত হন। কিন্তু রাজপরিবারে সিংহাসন লাভের প্রতিযোগীদের মধ্যে ষড়যন্ত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ মুঘলেরা হাতছাড়া করেনি। "সমভূমি অঞ্চলটির এক বৃহত অংশ তারা দখল করে নেয় এবং মুসলমান অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে তা ভাগ করে দেয়[1] । নিম্নভূমির পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশ শাহজাহানের রাজত্বকালে (১৬২৮-৩৯) মুসলমানরা জয় করে। ১৭২৮ খ্রিষ্টাব্দে তারা আবার আক্রমণ করে বিজিত অংশ 'রোশনাবাদ' নামে খাজনা- তালিকায় রাখে। বাংলার শাসকেরা ত্রিপুরার বিজিত অংশে একজন মুসলিম গভর্নর নিয়োগ করেছিল, কিন্তু জনগণ এই অত্যাচারী গভর্নরকে মানতে অস্বীকার করেছিল; বাংলার শাসক তখন পুরনো রাজপরিবারের ‘পুতুল রাজা’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরবর্তী কয়েক বছর ধরে রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিতদের উপর মুঘল প্রভাব বজায় রেখেছিল। তাই অনেকে মনে করেন ত্রিপুরা তখন “একটি মুঘল প্রদেশ ছিল” [2] , কিন্তু পার্বত্য অঞ্চল রাজার দখলে ছিল । "মুসলমান ধর্ম পার্বত্য ত্রিপুরায় অগ্রগতি করতে পারেনি ; ধর্মান্তরিত মুসলমানেরা হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, যে হিন্দুরা কোনও না কোনও কারণে জাতপাত হারিয়েছে। ব্রিটিশ পলিটিক্যাল এজেন্টের মতে- মুহাম্মদ (সাঃ) এর আধিপত্য কালে ধর্মান্তরিতরা 'হয় স্বার্থের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে, নয় সহিংসতার দ্বারা তাদের প্রাচীন ধর্ম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল'[3] । আফগান, পাঠান ও মুঘলদের ঘন ঘন আক্রমণ ও হস্তক্ষেপের কারণে ধর্মান্তর প্রক্রিয়া সমগ্র বাংলা ও আসামের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যকে প্রভাবিত করে। বর্তমান অধিবাসীদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন বর্তমান অঞ্চল সংলগ্ন অবিভক্ত পূর্ববঙ্গ থেকে; এক দশকেরও বেশি সময় ধরে (১৭৪৮-১৭৬০) ত্রিপুরার স্থানীয় ডি-ফ্যাক্টো মুসলিম শাসকের (সমসের গাজী) শাসনামলে স্থানীয়দের ধর্মান্তরকরণ চলে এবং সমভূমিতে ইসলাম প্রচার বৃদ্ধি পেতে থাকে । দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের প্ররোচনা এবং রাজপরিবারের দুর্বলতার সুযোগে সমসের গাজী নামে একজন স্থানীয় মুসলমান রাজাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে প্রশাসনিক শক্তি দখল করেছিল। ১৭৪৮ সালে ত্রিপুরা রাজবংশকে উৎখাত করে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত প্রশাসনিক ক্ষমতা অব্যাহত রাখে। ১৭৬০ সালে বাংলার সুবেদারের হাতে গাজীর পতনের পর রাজা কৃষ্ণমাণিক্য পুনরায় সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেন। কিন্তু কোষাগার শূন্য থাকায় তিনি ফৌজদারের প্রতি আনুগত্য জানাতে অপারগ হওয়ায় আবার তাঁকে সামরিক পদক্ষেপের হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। এমতাবস্থায় চট্টগ্রামে ব্রিটিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির অফিস ত্রিপুরা রাজ্য দখলের সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে। রাজার অনুরোধে, কোম্পানি পূর্বের শাসকদের দখলীকৃত সমতল ভূমির উপর রাজার জমিদারি- অধিকার বহাল রাখার অনুমতি দেয়. মুসলিম শাসকেরা এই দখলি- জায়গার নামকরণ করেছিল 'চাকলা রোশোনাবাদ'। "মুসলমানরা কখনো পাহাড় নিয়ে মাথা ঘামায়নি, কিন্তু তারা সমতলভূমিকে রাজস্ব হিসেবে মূল্যায়ন করেছে এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেছে[4]। ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি ত্রিপুরায় পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে কিস্তিতে দেড় লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে। মাণিক্য শাসনের এই সময়ে (১৭৬০-১৭৮৩) রাজ্যের রাজধানী উদয়পুর থেকে আগরতলা-গোমতী নদী উপত্যকা থেকে হাওড়া নদী উপত্যকায় স্থানান্তর করা হয়। ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে ভূমির রাজনৈতিক সীমানা ঘন ঘন পরিবর্তন হয়েছিল। তবে ১৭৬১ সাল থেকে রাজ্যটির শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীলতা বজায় ছিল । তখন থেকে আধুনিক যুগের শুরু হল।

মুসলিম শাসকদের সাথে সংঘর্ষ ও যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস শেষ করার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।তা হল - "ত্রিপুরা পূর্বে মুসলমানদের দ্বারা লুণ্ঠিত ও বিজিত হলেও এর স্বাধীনতা প্রকৃতপক্ষে নির্বাপিত হয়নি। ত্রিপুরেশ্বর বা ত্রিপুরার রাজা তাঁর স্বনাম অঙ্কিত মুদ্রা প্রচলিত রেখেছিলেন। মেজর চার্লস স্টেয়ার্ট [5] তাঁর 'দ্যা ‘হিস্ট্রি অব বেঙ্গল…..’ গ্রন্থে এ কথা লিখেছেন। জানা যায় যে উপজাতীয় সার্বভৌম এবং মুসলিম শাসকদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও ছিল। দ্বিতীয়ত, রাজমালা অনুসারে, নবাব মুর্শিদকুলি খানের 'বিক্রম' (বীরত্ব, সাহস, বীরত্ব এবং শক্তি) গল্প শুনে ত্রিপুরার রাজা তাকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে (১১১৮ ত্রিপুরা যুগ) হাতি এবং হাতির দাঁত উপহার দিয়েছিলেন। বিনিময়ে নবাব ত্রিপুরেশ্বরকে "খেলাত" (উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের পোশাক) উপহার দেন। আর প্রতি বছরই দুই প্রধানের মধ্যে এমন আদান-প্রদান হতো” (সিনহা : রাজমালা, পৃষ্ঠা ৭০)। মোহামেডান শাসকদের রাজপরিবারের প্রতি উপজাতীয় রাজার সহানুভূতির একটি প্রমাণ এখানে উল্লেখ করার দাবি রাখে। বাংলার গভর্নর সুজা[6] (সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র, ) আওরঙ্গজেবের ষড়যন্ত্রের কাছে 'কির্গা (KIRGA) 'র যুদ্ধে পরাজিত হন এবং মুঙ্গের দুর্গে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখান থেকে ধাওয়া খেয়ে তিনি ঢাকার মতো স্থান সফর করে অর্ধ হাজার অশ্বারোহী নিয়ে ত্রিপুরা পাহাড় হয়ে আরাকানের[7] দিকে যাত্রা করেন। মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে, সুলতান সুজা ব্রহ্মপুত্র নদী পার হয়ে পার্বত্য রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী রাঙ্গামাটি হয়ে আরাকানের দিকে যাত্রা করেন। রাজমালার লেখকরা এই ইতিহাসকে বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। ত্রিপুরা পর্বতে সুজার আগমনের কথা শুনে ঔরঙ্গজেব ত্রিপুরার রাজার কাছে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ চিঠি পাঠান[8]। সেই চিঠিতে লেখা ছিল, ত্রিপুরার রাজা যেন আওরঙ্গজেবের শত্রুকে নিজের শত্রু মনে করে সুজাকে গ্রেফতার করে মুঙ্গের দুর্গে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এই চিঠি আসার আগেই সুজা আরাকানে এসে হাজির। এই সময়ে ত্রিপুরার মহারাজ গোবিন্দ মাণিক্য আপন ভাইয়ের দ্বারা সিংহাসনচ্যুত হয়ে চট্টগ্রামের পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য প্রদেশে বসবাস করছিলেন। রাজমালা অনুসারে সুজার সঙ্গে গোবিন্দ মাণিক্যের সাক্ষাৎ ঘটে এবং গোবিন্দ মাণিক্য তাঁকে অত্যন্ত স্নেহের সাথে গ্রহণ করে যতটা সম্ভব সাহায্য করতে চেষ্টা করেন।. কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে; সুজা গোবিন্দ মাণিক্যকে তার নিজের মূল্যবান তলোয়ার "নিমছা" এবং একটি হীরার আংটি উপহার দিয়েছিলেন। রাজমালার দাবি অনুসারে, সিংহাসন ফিরে পাওয়ার পর গোবিন্দমানিক্য বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ সুজার নামে শাহ সুজা মসজিদ’[9] নির্মাণ করেন। আমরা মনে করি, এ ধরনের ঘটনা রাজপরিবারে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হতো এবং মুসলমানদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন করে তুলতে পারেনি (সিংহ: ১৮৯৭) । রাজার মুসলিম প্রজারা বাঙালি হিন্দুদের মতো সমতল ও পার্বত্য ত্রিপুরায় বাস করত।

১৯৩৬ সাল পর্যন্ত অধিকাংশ কৃষককে চাকলা-রোশনাবাদ থেকে আনা হতো। এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করার দাবি রাখে যে, ঘন ঘন মুসলিম আক্রমণ সত্ত্বেও সকল প্রজার প্রতি উপজাতীয় রাজারা ছিলেন বৈষম্যমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ। আফগান মুসলিমদেরও রাজকীয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। রাজাদের মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি মুসলমানদের বিশাল বসতি স্থাপন এবং বাঙালি ও উপজাতিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্য -বন্ধনের অবকাশ দেয়। ত্রিপুরার প্রশাসনের ওপর মুসলিম শাসকদের ব্যাপক প্রভাব ছিল, বিশেষ করে শেরশাহ প্রবর্তিত ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা ছোটখাটো পরিবর্তন ও সংযোজন নিয়ে ত্রিপুরায় আজও অব্যাহত আছে। কয়েক শতাব্দীর দীর্ঘ যাত্রায় রাজতান্ত্রিক শাসন থেকে আধুনিক প্রজাতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত ইউনিয়নের অংশ রূপে ত্রিপুরার প্রশাসনিক কাঠামো অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। ১৯৫৬ সালের নভেম্বর মাসে এই পার্বত্য দেশকে 'সি' শ্রেণীভুক্ত রাজ্য এবং ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি ত্রিপুরাকে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেয়া হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা ভারত ইউনিয়নের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য, কিন্তু মহান ঐতিয্যবাহী ।।

[1] Hunter, A Statistical Account of Hill Tipperah .p. 467

[2] Ibid p.466

[3] Ibid

[4] Tripura District Gazeteer: 1975

[5] Charles Stewart (1764-1837) was a soldier andoriental scholar. His book- The History of Bengal: From the First Mohammedan invasion Until the Virtual Conquest of that country by the English, A.D1757.

[6] মোঘল রাজপুত্র, মির্জা শাহ সুজার জন্ম -২৩ জুন ১৬১৬ আজমীরে এবং মৃত্যু ৭ ফেব্রুয়ারী ,১৬৬১ মায়ানমার (বার্মা)-এর রাখাইন তথা আরাকান প্রদেশে, তবে তাঁর কোন সমাধি নেই। শাহ সুজা বাংলা, বিহার ও উড়িশ্যার গভর্নর/ সুবাদার (১৬৪১- ১৬৬০)। ঢাকা ছিল তাঁর রাজধানী।

[7] আরাকান- ত্রিপুরার পার্শ্ববর্তি দেশ মিয়ানমার (বার্মা)-এর রাখাইন রাজ্যের ঐতিহাসিক ভৌগোলিক নাম। ১৯৮৯ সালে প্রাচীন নামের পরিবর্তন করা হয়।

[8] এ নিয়ে দ্বিমত আছে. মহারাজা গোবিন্দ মানিক্যর সময়কালে শাহ সুজার সাথে কিছু ঘটনা ও সম্পর্ক থাকলেও সেই সময়ে তাদের মধ্যে সরাসরি সাক্ষাতের কোন ঐতিহাসিক নথি পাওয়া যায় না.

[9] " মহারাজ গোবিন্দ মানিক্য (১৬৬০-৬১, ১৬৬৭--১৬৭৬) কুমিল্লা নগরীর মুসলিম প্রজা সাধারণের জন্য বন্ধু সুজার নামে এই মসজিদ নির্মাণ করেন" ।



ক্রমশ

Society of Social Scientists is a Social organisation with an academic purpose.

14/06/2025

২য় অংশ

আঞ্চলিক রুক্ষ প্রকৃতির কারণে রাজ্যটিতে পর্যাপ্ত রেলওয়ে ব্যবস্থা নেই। দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থা রাষ্ট্র ও জনগণের অগ্রগতির জন্য একটি প্রকৃত সমস্যা ছিল। সাম্প্রতিককালে রেললাইন ও বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক [1] স্থাপনের মাধ্যমে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখানকার আবহাওয়া বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মতো। সুদূর অতীত থেকেই কৃষি মানুষের জীবনের প্রধান অবলম্বন। প্রাথমিক খাত অর্থাৎ কৃষিতে রাজ্যের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৬৪ শতাংশ, আর দেশীয় উৎপাদনের (এসডিপি) প্রায় ৪৮ শতাংশ । ত্রিপুরায় বিভিন্ন উদ্যানজাত পণ্য, চা, রাবার, ইত্যাদির সাথে প্রচলিত জুম চাষ ও স্থায়ী কৃষি -উভয়ই পদ্ধতিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে; বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখানে শিল্পখাত অনুন্নত রয়ে গেছে। আর আমরা জানি যে কোন দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, রাজনৈতিক সীমানা, প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদ এবং জীবিকার অর্থনৈতিক উপায়ের মতো বিষয়গুলি বাসিন্দাদের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী লোকেরা দুটি প্রভাবশালী জাতিগত গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত: যেমন প্রথমে বাঙালি, যারা সমতলের মানুষ' এবং যারা দুটি প্রধান ধর্মে বিশ্বাসী - হিন্দু ধর্ম ও ইসলাম; কিছু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বাঙালি আছে।. দ্বিতীয় প্রভাবশালী জাতি গোষ্ঠী হল আদিবাসী, যারা পার্বত্য অঞ্চল ও সমতলের অধিবাসী, বিভিন্ন ভাষা ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ; এছাড়া জীবিকা ও ব্যবসা সূত্রে আরও একটি জনগোষ্ঠী রয়েছে, যারা অ-বাঙালি ও অনুপজাতি- যারা বিভিন্ন প্রদেশের লোক, যেমন বিহার, উড়িষ্যা, কেরালা, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, পাঞ্জাব, অন্ধ্র প্রদেশ । হিন্দু ও মুসলমান ছাড়াও ত্রিপুরায় খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ এবং শিখ, জৈন তুলনামূলক ছোট-ছোট সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বাস করে। বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানরা ছিল অবিভক্ত বাংলা থেকে আসা অভিবাসী। বাংলা ছিল মধ্যযুগীয় ইসলামী শাসনের সর্বোচ্চ শক্তি। বাঙালি মুসলমানরা পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলা, বিশেষত সীমান্ত অঞ্চল থেকে ত্রিপুরায় আসে এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ভূমিতে বসতি স্থাপন করে। সারা রাজ্য জুড়ে তাদের বসবাস ছিল । .একসময়, ত্রিপুরার রাজারা বিভিন্ন পেশার বাঙালি হিন্দু-মুসলমান উভয় জাতিগোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যা ত্রিপুরার পার্বত্য ও টিলা ভূমির চাষাবাদ ও অর্থনীতির বিকাশে সহায়তা করেছিল। রাজধানী আগরতলাসহ বিভিন্ন উপ-জেলায় রাজারা তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। রাজ্যের আর্থিক ও সামাজিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই তারা একাজ করেছে। ভারত বিভাগের পরেও পূর্ব বাংলার পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতিদের সাথে সমতল ভূমি থেকে বাঙালি জনগোষ্ঠীর আগমন অব্যাহত ছিল। এই সমতল ভূমি পূর্বে ত্রিপুরার রাজা শাসিত এবং রাজস্বের উৎস ছিল। উপজাতিদের বিরোধিতার চাপ সত্ত্বেও রাজপরিবার বাঙালির প্রবেশকে প্রত্যাখ্যান করেনি। বাঙালি শরণার্থীরা বসতি স্থাপনে রাজনৈতিক দলের সমর্থন ও আন্দোলন সাহায্য করেছিল, বিশেষত কমিউনিস্ট পার্টি যুক্তি দেখিয়ে বলে যে ত্রিপুরার ভূমি ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে ত্রিপুরা আরও বেশি লোককে জায়গা দিতে পারে[2] ।

'বাঙালি মুসলমান' বলে পরিচিত মুসলমানরা ত্রিপুরায় অভিবাসী[3] (immigrants) এবং ধর্মান্তরিত স্থানীয় মুসলমান। তারা ইসলাম অনুসারী, জাতি, ভাষা ও বংশানুক্রমে তারা 'বাঙালি' হিসেবে পরিচিত। অবিভক্ত ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অ-বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানরা চাকরি ও ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে ত্রিপুরা আসতেন। 'তারা সংখ্যায় নগণ্য[4] ছিলেন, এখনও তারা, বিশেষত অ-বাঙ্গালী মুসলমান সংখ্যায় বেশি নন।. পার্শ্ববর্তী মণিপুর রাজ্য থেকে উল্লেখযোগ্য মণিপুরী জনগোষ্ঠী মধ্যযুগ থেকেই ত্রিপুরায় বসতি স্থাপন করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ত্রিপুরী রাজপরিবারের সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। আসামের বরাক উপত্যকার ‘মেইতেই’ মুসলমান বা 'পাঙ্গাল'দের একটি ছোট দল মণিপুরের "সাত বছরেরবিপর্যয়"[5] -এর পরে ত্রিপুরায় বসতি স্থাপন করেছিল। মণিপুর ও আসামের সীমান্ত এলাকা সংলগ্ন উত্তর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঙ্গালদের বসবাস। উত্তর জেলা সীমান্তবর্তী এলাকা--ধর্মনগর ও কৈলাসহর এলাকায় আসামের বাঙালিদের যাতায়াত রয়েছে।

ভাষা: ত্রিপুরা রাজ্যে বাঙালিরা প্রভাবশালী ভাষাগত গোষ্ঠী, দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজাতি ভাষা গোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার ( ৩১,৯৯,২০৩) হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মের বাঙালিদের সংখ্যা ছিল ৬৭.১৪ শতাংশ তথা ২১,৪৭,৯৪৪ (আদমশুমারি:২০০১)। ত্রিপুরী (কক-বরক/ চীনা-তিব্বতি)[6] ভাষাগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ১৮.৫১ শতাংশ (৫,৯২,২৫৫)। বাংলা ছিল রাজপরিবারের প্রাচীন রাষ্ট্রভাষা এবং ককবরক ছিল উপজাতিদের সাধারণ ভাষা। এই দুটি ভাষা বর্তমান রাজ্যের সরকারী ভাষা হিসাবে স্বীকৃত। মুসলমানদের বৃহত্তম সংখ্যা বাংলা ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত। তারা ‘বাঙ্গালী হিন্দুদের’ মতো 'বাঙ্গালী মুসলমান'। মণিপুরী, হিন্দি, অসমিয়া প্রভৃতি অন্যান্য সম্প্রদায়ে মুসলমান ধৰ্মাবলম্বী আছে, কিন্তু তাদের পৃথক হিসাব পাওয়া দুস্কর। মণিপুরী মুসলমান তথা পাঙ্গালরা উত্তর পূর্বাঞ্চলের তিব্বতি -বার্মা ভাষার অন্তর্ভুক্ত মণিপুরী ভাষার অন্তর্গত।

খ) উত্তর- পূর্ব ভারতে মুসলমানদের আগমন: ত্রিপুরায় মুসলিম বসবাসের সূচনা -সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক নোট ।

আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে ত্রিপুরার ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল ১৫৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে, রাজা ধর্ম মাণিক্য কর্তৃক ভূমি-অনুদানপ্রাপ্ত তাম্রশাসনের মাধ্যমে। একমাত্র রাজমালা[7] প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগ উভয়েরই বর্ণনা দিয়েছে। রাজমালা পঞ্চদশ শতাব্দীতে অর্থাৎ ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দে সংকলিত ও রচিত হয়, অর্থাৎ কোন সুনির্দিষ্ট কালের রচনা নয়। ইংরেজ ঐতিহাসিক ডব্লিউ, ডব্লিউ হান্টারের মতে, টিপ্রাদের ইতিহাস দুটি স্বতন্ত্র সময়কালের সাথে সম্পর্কিত - ঐতিহ্যবাহী সময় তথা প্রাচীন কাল এবং মধ্যযুগীয় সময়- (১৪০৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে), এই ইতিহাসে রাজমালা রচয়িতা ও মহামেডান ঐতিহাসিক উভয়ের অবদান আছে[8] । রাজমালা অনুসারে এই ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম ছিল ভারতের পৌরাণিক মহাকাব্যে উল্লিখিত একটি প্রাচীন শিকারি-উপজাতি কিরাত ভূমি। সরকারী কালানুক্রমিক বিবরন অনুসারে প্রাক-ত্রিপুরী রাজবংশ গোমতী নদীর তীরে মগ রাজ্য (অথবা, লিকা রাজ্য) ছিল। ত্রিপুরীদের আগমনের আগে ত্রিপুরার উত্তরাঞ্চলের শাসক ছিল বাচাল নামে আরেক উপজাতি গোষ্ঠী । ত্রিপুরী রাজবংশের তিপরা গোষ্ঠী অষ্টম শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়েছিল এবং পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ধরে প্রশাসনিক সংহতি ও প্রসার অর্জন করেছিল। কিন্তু মধ্যযুগে ত্রিপুরার ইতিহাস ছিল বাংলা ও দিল্লির শাসকদের বেশ কয়েকটি আক্রমণের ('ট্রাবল') ইতিহাস- ১২০৪- ১৭৬৫ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ত্রিপুরা ভূখণ্ডে মুসলিম জনবসতির সঠিক সন -তারিখ জানা যায়না, তবে নিশ্চিতভাবে ত্রয়োদশ শতাব্দীর আগে নয়। রাজমালায় উদ্ধৃত একটি ঘটনা থেকে জানা যায়, ১২৪০ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরী ও বাংলার মুসলিম শাসকদের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের যৌক্তিক কারণ ছিল ত্রিপুরা রাজা সিলেটের এক অবাধ্য সামন্ত নেতা হীরাবন্ত খানের বিরুদ্ধে তার বাহিনী প্রেরণ করেছিলেন, তখন হীরাবন্তকে প্রশ্রয়দানকারী তুর্কি শাসক ত্রিপুরার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী পাঠান। 'ত্রিপুরী বাহিনী দুর্বল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হলেও উত্তর-পূর্বের রাজাদের নৈতিক সমর্থন পেয়ে কুশিয়ারা নদীর তীরে যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলমান বাহিনীকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়[9]।

ত্রিপুরায় মুসলিম বসতি স্থাপনের প্রাথমিক ইতিহাস সন্ধানে আরও দেখা যায় যে বিষয়টি ত্রয়োদশ শতকে বাংলা ও দিল্লি থেকে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে মুসলিম আক্রমনের সাথে সম্পর্কিত। ১২০৫-৬ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের সুলতান কর্তৃক প্রথমে আসাম আক্রমন, ফল স্বরূপ আসামের নিকটবর্তী সিলেট অঞ্চল মুসলমানদের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়। ১২৭৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার শাসন দখল করার পর ১২৭৯ সালে তুগ্রল (TUGRAL) প্রথমবার হাতি লাভের উদ্দেশ্যে ত্রিপুরা আক্রমণ করেন। এছাড়া রাজমালা থেকে একটি ঘটনা উদ্ধৃত করা হয় যে ১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দের দিকে গৌড়ের সুলতান তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে ত্রিপুরা আক্রমণ করেন, যাতে রাজপুত্র রত্ন'ফাহ ভাইদের পরাজিত করে পিতার রাজ্য জয় করতে পারেন। বাংলার সুলতান তাকে মাণিক্য (যার অর্থ মুক্তা) উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন, ত্রিপুরার রাজারা তখন থেকেই এই উপাধি ধরে রেখেছেন। রত্নফার রাজত্ব কালে বিভিন্ন ধর্ম ও পেশার হিন্দু মুসলিমকে নিয়ে আসা হয় এবং তাদের চিরস্থায়ী বসবাসেরও ব্যবস্থা করা হয়।

১৩৪৫ খৃস্টাব্দে ত্রিপুরা দ্বিতীয়বার তুঘলক রাজবংশ (১৩২০-১৪১৩) দ্বারা আক্রান্ত হয়; শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ (১৩০১-১৩২২ খ্রি.) ক্ষুদ্র হিন্দু রাজ্যগুলোকে পরাজিত করে সিলেট, ময়মনসিংহ, সোনারগাও, সাতগাঁও ও কুমিল্লায় তার শাসন বিস্তার করেন। তিনি ত্রিপুরা-সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের সমতল অঞ্চল দখল করেন।‘ চতুর্দশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে মুলিম বাংলা ত্রিপুরার প্রথম প্রতিবেশী হয়ে উঠে’[10]।

ভারতে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যযুগীয় ইতিহাসে হিন্দু রাজাদের পরাজয় ও পতন এবং মুসলিম শাসকদের বিজয়ের কথা লিপিবদ্ধ করেছে। ত্রিপুরা রাজ্য, প্রধানত সমতল ভূমি, বেশ কয়েকবার মহামেডান শাসকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। বর্তমান বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলই একসময় ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল, সেখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রিপুরা রাজাদের

'খনন করা পুকুর-দীঘি, নির্মাণ করা রাস্তাঘাট, হাটবাজার মন্দির মসজিদ স্কুল ভবন' ছাড়াও হিন্দু ব্রাহ্ম্ন পরিবারকে বহু গ্রাম দান ইত্যাদি সেই সাক্ষ্য বহন করে[11]. । ভারত বিভাগের পরে সরাইল পরগনা , লোয়াগড় ও কৈলাগড়/ কসবা পূর্ব বাংলার মানচিত্রে চলে যায় । কিন্তু তাদের শাসন কখনো পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করেনি। অর্থাৎ ‘হিল-টিপারা’ কখনও মহামেডানদের দ্বারা বিজিত হয়নি। ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দের আগেই সম্রাট জাহাঙ্গীরের মুঘল সেনাবাহিনী ত্রিপুরার উপজাতীয় রাজাকে পরাজিত করে রাজধানী উদয়পুর (তৎকালীন রাঙ্গামাটি) দখল করে নেয় এবং আড়াই বছর ধরে 'সামরিক কায়দায়' দখল চলতে থাকে। মহামারী রোগ, গভীর বন এবং নদীর উপর রাস্তা ও সেতুর অভাবসহ প্রতিকূল প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জমি ছাড়তে বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী এখানেই অবস্থান করেছিল। কিন্তু "১৬২০ সালের মহামারী হানাদার বাহিনীকে উদয়পুর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছিল"[12] ।

[1] ২০২৪ সালে হাসিনা সরকার পতনের আগে পর্যন্ত

[2] ভারতের পার্লামেন্টে ত্রিপুরা কমুনিস্ট উপজাতি নেতা দশরথ দেববর্মনের বক্তৃতা

[3] ইমিগ্র্যান্ট - অভিবাসী তাদের বলা হচ্ছে যারা স্থায়ী ভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে নুতন জায়গায় বসতি স্থাপন করে।

[4] Tripura District Gazeteer:1975

[5] Seven years devastation in Manipurfrom 1819-1826

[6] Kok Borok is a common language of 19 tribes of Tripura

[7] Rajmala- the chronological history of tribal rulers of Tipparha kingdom

[8] Hunter, p 463

[9] Singh, K.C.: Rajmala (in Begali) quoted by Ganchowdhury,1985

[10] Gan Chowdhury: A Political History of Tripura, 1985. P. 18

[11] Jum Journal: ফিরে দেখা ইতিহাস -মুকুল ত্রিপুরা, ২০২০

[12] Gan Chowdhury: A Political History of Tripura, 1985

ক্রমশ

Society of Social Scientists is a Social organisation with an academic purpose.

Address

Kolkata

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Society of Social Scientists - SOSS posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share