28/11/2024
ধন্যি মেয়ে নামটার সাথে বেশ কিছু ফ্যাক্টর জড়িত এবং সব কটা ফ্যাক্টর বেশ হেভি মানে ভারী। প্রথম কথা সিনেমা হিসাবে এটা সুপারহিট। কিন্তু সুপারহিট শব্দটা একটা ক্ষনিকের শব্দ। এখন তো দশদিন সিনেমা হলে থাকলে এই তকমা দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আগে হিসাবটা ছিল হফতার। চার হফতা, আট হফতা মানে মাঝারি হিট, পঁচিশ হফতা হলে সিলভার জুবিলি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই সিনেমাটা সেইসবকে ছাপিয়ে মানুষের মনে স্থান নিয়েছে কয়েকটা যুগ পেরিয়ে আজো প্রাসঙ্গিকভাবে। সিনেমার আরেকটি ফ্যাক্টর ছিলেন উত্তমকুমার। তিনি এই ছবিকে আলাদা লেভেলে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাকিরাও কেউ কম নয়, অর্থাৎ সাবিত্রী চ্যাটার্জী, জহর রায়, রবি ঘোষ, জয়া ভাদুড়ি, পার্থ মুখোপাধ্যায় প্রমুখদের অভিনয় আমরা ভুলি নি। ছবির পরিচালক ছিলেন অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়। আমার আরেকটি বাড়তি প্রাপ্তি ছিল এই সিনেমার শুটিং স্পট ঘুরে আসবার। ফলে এই ছবি নিয়ে একটা আলাদা অনুভূতি সবসময় ছিল। ছবির আরেকটি ফ্যাক্টর হল ফুটবল যা খেলাকে ছাপিয়ে বাঙালীর আবেগ হয়ে আছে, কতটা আছে তা আজো ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের অন্ধ ভক্তদের দেখলে বোঝা যায়।
কলকাতায় ফেসিলিটি জব প্লেসমেন্ট নামে একটি সংস্থা আছে। এই সংস্থাটি বেকার যুবক যুবতীদের রুটিরুজির বন্দোবস্ত করে আসছে বেশ কয়েক বছর যাবৎ। সংস্থার কর্ণধার দেবজিৎ কুন্ডু, যে এই সংস্থার কর্নধার হবার পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে লেখালিখি দ্বারা আলাদা পরিচিতি তৈরী করেছে। দেবজিৎ একজন আয়োজক হিসাবেও নিজেকে তুলে ধরেছে। প্রতি বছর একটি করে অনুষ্ঠানের আয়োজন সে নিজের উদ্যোগে ও খরচে করে থাকে। সেখানে গুনীজনেদের সম্বর্ধনা দেয়া হয়। এবার যেমন সম্বর্ধিত হলেন হংসরাজ ছবির কুশীলবেরা। অর্থাৎ ছবির নায়ক অরিন্দম গাঙ্গুলী, টিয়া ওনার বোন স্বর্ণালী গাঙ্গুলী, শামু দা বাসুদেব পাল প্রমুখেরা। আমার সৌভাগ্য, ২০২১ সালে এই সংস্থার কাছে আমিও সম্মাননা পেয়েছি। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান মানেই কিছু কাঠ কাঠ কমার্শিয়াল কথাবার্তা এটাই জানতাম। এখানে দেবজিৎ ব্যাতিক্রমী হতে পেরেছে। ওসবের নামগন্ধ ওর অনুষ্ঠানে থাকে না। এছাড়া কিছু নতুন প্রতিভাদের সুযোগ দেয় দেবজিৎ। সেই সুযোগ কাজে লাগাবার দায়িত্ব কিন্তু সেই ব্যাক্তির। যাহোক ও অনেকদিন ধরেই আমাকে একটা স্টল দিতে বলে আসছিল। এদ্দিন পারিনি নানান ব্যস্ততায়। এবার সেটা পারলাম। ফলে বেশ কিছু উত্তম পুস্তক মানুষের হাতে তুলে দিতে পারা গেল। তারচেয়েও বড় কথা বহু পুরানো নতুন বন্ধুদের সাথে মনের মেলবন্ধন তৈরী করা গেল। দেবজিৎকে ও তার স্ত্রী সঙ্গীতাকে এত সুন্দর আয়োজনের জন্য সাধুবাদ জানাই ও আশা রাখি আগামী বছরগুলোতেও এই ধারাবাহিকতাকে তাঁরা অব্যহত রাখবেন।
এবার আসল কথায় আসি। অর্থাৎ নাটকটির প্রসঙ্গে। বাড়তি কিছু প্রত্যাশা নিয়ে না গেলেও নাটকটি কিন্তু আমার প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। একটা কালজয়ী সিনেমা যা মানুষের অস্থিমজ্জায় ঢুকে গিয়েছে তাকে তুলে ধরার সময় তুলনার জায়গাটা সব সময় আসবে কিন্তু পরিচালক ও কুশীলবেদের স্ট্যাটেজির প্রশংসা করি যে তারা ছবিটিকে কপি না করে নিজেদের নিজস্বতা নিয়ে কাজ করে গিয়েছেন। নাট্যকার মানবেন্দ্র মজুমদারকে সাধুবাদ। ছবির কথা যে মনে পড়ছিল না সেটা নয়। কিন্তু এই টিমের সকলেই ভরপুর প্রয়াস করেছেন আলাদাভাবে নিজেদের ছাপ রাখার। প্রজেক্টরে ফুটবল খেলাটা আর্টিস্টিকালি দেখানোটা এই নাটকের সবথেকে মাস্টার স্ট্রোক যা নাটকটিকে আরো ভালো লাগায়। মূল চরিত্র কালী দত্তের ক্যারেক্টারে দেবজিৎ বেশ ব্যাক্তিত্বময়। উত্তমকুমারের রোল করার সময় কিছুটা প্রভাব আসা স্বাভাবিক কিন্তু ওর চরিত্রায়নে সেটা খুব কমই দেখা গেল, যা মন্দ লাগেনি। অভিনয়ে সত্যিই আত্মবিশ্বাস ও দাপট দুটোই ছিল। মনসার রোলে ওর মেয়ে দেবাঙ্গীতার অভিনয় প্রশংসনীয়। বাকিদের অভিনয়ও খুবই ভাল বিশেষত তোতলা ভটচাযের চরিত্র, গুরুদেবের চরিত্র, কালীবাবুর স্ত্রীর চরিত্র ভীষন ভাল লেগেছে। গোবর্ধন চৌধুরীর রোলে পরিচালক অলোক দে অনবদ্য। বাকিরাও সকলেই নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। প্রতিবছর একটি করে চলচ্চিত্রকে মঞ্চায়ন করে দেবজিৎ আমাদের প্রত্যাশাকে একটা ভাল জায়গায় নিয়ে গিয়েছে তা আজকের দর্শকসমাগমই বলে দিচ্ছিল। আগামী দিনেও স্বর্ণযুগের কোন একটা চলচ্চিত্রের মঞ্চরূপ ওর কাছে পাবো আশা রাখি।
Asthir Kabi [ UttamKumar & GoldenEra ]