20/05/2025
♦️ তোমার বৃহস্পতি বার ...🌺
তুমি যেই বৃহস্পতিবার কড়া ভাষায় কাটাছেঁড়া করে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে সমস্ত লেনাদেনার ইতি টেনে সোজা চলে গিয়েছিলে অহংকারী ট্রেনের মতো, সেই বৃহস্পতিবারে আমার মন খারাপ হয়নি একটুও। আমি সবকিছু শুনে তালগাছ হয়ে গিয়ে ছিলাম। সকালের নাস্তা শেষ করেছিলাম ডিম দিয়ে, অফিসে গিয়েছি তারপর। অফিসের ছেলেটা খুব ভালো চা বানিয়েছে সেদিন ওরে খুশি হয়ে কুড়ি টাকা বকশিশ দিয়েছি। দুপুরের দিকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলাম। তুমি আর নেই অমন কোনো দুঃখ খচখচ করে ওঠেনি মনের এফোঁড়ওফোঁড় কোথাও। দুঃখ খচখচ করে উঠলো রাতে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বালিশে মাথা রাখার পর বালিশের কোণাকাণি হতে ছাড়পোকার মতো বেরিয়ে আসলো দুঃখ। কামড়িয়ে, মুচড়িয়ে, চিবিয়ে, খামছে ক্ষতবিক্ষত করলো সে রাতে দুঃখরা আমায়। হাতের কাছে তোমাকে পাওয়া হয়নি বলার জন্য, দেখো লক্ষিটি তোমার না থাকায় দুঃখ কি বিশ্রীভাবে কাটাকুটি করছে জীবনের বুকে।
বিচ্ছেদের বয়স তখন সবেমাত্র এক সাপ্তাহ। তোমার অপেক্ষায় আমার ফুরায় না, ফোনের দিকে চেয়ে থাকি। কললিষ্ট চ্যাক করি। একটা মেসেজ আসলে ধক করে ওঠে বুক। এই বুঝি তুমি একটা মেসেজ দিয়ে বললে, আমার ভুল হয়েছে আর কোথাও যাবো না। ওরকম কিছুই হয়নি। দিনটা কোনোরকম কাজেকর্মে কেটে গেলেও রাত হলে ই বুকের উপর উঠে বসতো যন্ত্রণা, চোখ জেনে যেতো বুকের ব্যাথা, হাতের উল্টো পিঠের সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে চোখ ভিজিয়ে যেতো কি যেনো এক কান্নায় তারপর। হায়। একটু আধটু করে নষ্ট হচ্ছিলাম রোজ আমি, কেউ জানে না, কেউ বুঝে না।
বিচ্ছেদের বয়স যখন একমাস তখন আমি আর আমার মাঝে নেই, চোখ ঢুকে গেলো খোড়লে কালশিটে দাগ নিয়ে, চুল লম্বা হয়েছে, দাড়িগোঁফ ঢেকে নিয়েছে সমস্ত মুখ, ঠোঁট রঙ হারিয়েছে পুড়ে ডজন ডজন সিগারেটের নির্মম অত্যাচারে। বাবার কড়া ধমক আমি তুরিতে উড়িয়ে দিয়ে নষ্টাদের খাতায় নাম লিখালাম নিজের। আমি যখন রোজ আত্মহত্যার অংক কষে চলে ছিলাম, মা সে হিসাবে গড়মিল বাঁধিয়ে আমাকে ভালোবাসতে শুরু করলো খুব। মায়ের মুখের দিকে তাকালে মায়া হয়, কী নিয়ে বাঁচবে মানুষটা আমি জীবনের বুকে ব্লেড চালিয়ে দিলে। কে মুছে দিবে চোখের জল যদি আমার হাত দু'টি নিথর হয়ে যায়। আমি নিজেকে বুঝাতে শুরু করেছিলাম একটু আঁধটু।
বিচ্ছেদে বয়স যখন দু'মাস তখন তোমার ফিরে আসার সম্ভবনা শূন্যের কোটায়। আমি হারালাম তোমাকে এটা মগজে গেঁথে গেলো আলফিনের মতো। আমি যে পথেই যাই সেই পথেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকো তুমি। স্মৃতিরা তর্জুনি আঙুল ধরে আমায় হুটহাট নিয়ে চলে যায় এমন সব কষ্টের নরকের দরজার পাশে, আমি দাউদাউ করে পুড়ে যাই অথচ আমি কাঁদতে পারিনা। কাঁদলে মা জেনে যাবে আমি ভুলতে পারিনি তোমায়, বাবা ফের কড়া ধমক দিবে। সময় সব ক্ষত মুছে দিবে এমন অতিসাধারণ একটা শান্তনা পকেটে নিয়ে আমি হাটছি বাঁচার জন্য। উপায় খুঁজছিলাম কেমন করে ভুলা যায় তোমাকে।
বিচ্ছেদের বয়স যখন তিন মাস গড়ালো হঠাৎ একদিন জানতে পারলাম তুমি শেষমেষ বিয়ে করে নিয়েছো। আমি আবার ভেঙেচুরে গেলাম খুব। কে জানতো? যে রাতে তুমি নতুন মানুষের ঠোঁটে চুমু খাওয়াতে ব্যাস্ত ছিলে, ঠিক সে সময় একটা যুবকের পবিত্র ঠোঁট নিকটিনের হামলায় নাস্তানাবুদ হয়েছে। কে জানতো? সে রাতে যন্ত্রনা নামের প্রেমিকার চুমুতে দিশেহারা হয়ে একটু আশ্রয় চেয়েছিল পৃথিবীর কাছে একটা যুবক। কে ই বা জানতো? সে রাতে বিধাতার দিকে প্রশ্নবিদ্ধের আঙুল তুলে একটা যুবক নাস্তিক হয়ে উঠেছিলো মদের বতল আকড়ে ধরে। এতবেশি ঝড়বৃষ্টি হয়েছে সে রাতে আমি কাঁদলাম চিৎকার করে। যে কান্না কেউ শুনতে পায় না, শুধু নিরবে ভাসিয়ে দিয়ে যায় আমার শুদ্ধ নরম বুক। হাল্কা হলাম তারপর।
বিচ্ছেদের বয়স যখন চার মাস হয়ে গেলো তখন তুমি চমৎকার সংসারী। শাড়ির কুঁচি সামলাতে না পারা তুমি গোটা একটা সংসার সামলাচ্ছো। এক সাকালে নিজেকে ধরে বেঁধে আয়নার সামনে দাড় করালাম। একটা কাঁটাছেড়া হিসাব কষলাম ঠান্ডা মেজাজে। তুমি সুখেই আছো, আমি ভালো নেই। তোমার রাত রঙীন হয় আদরে, আমার রাত লুট করে নিয়ে যায় চাপা যন্ত্রণা। তুমি ঘুমাও শান্তিতে আমি চোখের হাতে পায়ে ধরেও একচিমটি ঘুম খুঁজে পাই না। তোমার সকাল শুরু হয় চুমু খেয়ে আমার সকাল শুরু হয় শুঁকনো ঠোঁটে সিগারেট ঠেসে। তোমার বিকালে নেমে আসে গান, কবিতা, চকলেট, ফুল, অথচ আমার সমস্ত বিকাল চুরি করে নিয়ে যায় কানা কাকের দল। তুমি বুমি করলে আসে মিষ্টির ব্যাগ, কাগজে মুড়ানো নতুন অতিথির নাম, আর আমি বুমি করলে আসে রক্ত। যোগ বিয়োগ গুন ভাগ শেষে হিসাব করে দেখলাম তোমাকে ভুলতে গিয়ে নিজেকে নষ্ট করা পৈশাচিক আনন্দ ছাড়া কিছুই নয়। বরং তোমায় বুকে বয়ে নিয়ে স্মৃতিদের পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে পথ চলতে হবে। বাচঁতে হবে।
বিচ্ছেদের বয়স যখন পাঁচ মাস আমি বদলে গেলাম দারুণ ভাবে। সেদিন বৃহস্পতিবার ছিল ভালবাসা দিবস। মায়ের জন্য একটা ফুল কিনে বাসায় ফিরলাম সন্ধ্যায়। জড়িয়ে ধরে মাকে বললাম ' ভালোবাসি' মা। মা একটা চুমু খেলো তারপর। বিশ্বাস করো মায়ের একটা চুমু আমাকে এত বেশি কঠিন করে তুলেছে যে তোমার দেওয়া দুঃখরা একজোট হয়ে হামলা করেও আমায় আর ভাঙতে পারেনি কোনোদিন।
এক রত্তিও না।
এক চিমটিও না।
তুমি সুখের তাগিদে ছেড়ে গেলে, আমি বাঁচার তাগিয়ে ছেড়ে আসি, তুমি বলো জীবন আগে না সুখ আগে? জীবন না সুখ? জীবন না সুখ? জীবন না সুখ?
❤️🌺💙