
15/04/2025
বাংলা নববর্ষ কেন পালিত হয়?
নববর্ষের আনন্দে ভাসে বঙ্গজীবন—সে এক চিরন্তন উৎসব, যেখানে পুরাতনের গ্লানি ধুয়ে-মুছে নবতর স্বপ্নে স্নান করে মানবমন। বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ, শুধুই একটি দিন নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতিচ্ছবি—যেখানে বাঙালির হৃদয় দোলায়িত হয় নতুন সূর্যের আলোয়, নতুন জীবনের আহ্বানে।
পয়লা বৈশাখের মূল উৎস খুঁজতে গেলে আমাদের ফিরতে হবে মুঘল সম্রাট আকবরের যুগে। সে সময় কৃষি কর আদায়ের সুবিধার্থে একটি নতুন সৌর বর্ষপঞ্জির সূচনা হয়—যার নাম ‘ফসলি সাল’। এই বর্ষপঞ্জির প্রথম দিনই ছিল পয়লা বৈশাখ। যদিও সময়ের সঙ্গে তার আকার ও রূপ বদলেছে, কিন্তু আজও এই দিনটি বাংলার কৃষিজীবী সমাজ থেকে শুরু করে শহরের নাগরিক সমাজে এক অভিন্ন উল্লাসের দিন হয়ে আছে।
এ যেন এক আত্মার উৎসব—বছরজুড়ে জমে থাকা ক্লান্তি, হতাশা আর বেদনার পরতে পরতে এদিন বাঙালি খুঁজে নেয় নবজীবনের আশ্বাস। "এসো হে বৈশাখ, এসো এসো"—রবীন্দ্রনাথের এই কালজয়ী আহ্বান যেন প্রতিটি মনকে জাগিয়ে তোলে। পুরোনো বছরের হিসেব মিটিয়ে, নতুন খাতা খোলা হয়—জীবনের হিসেবেও যেন এক নতুন পাতা উন্মোচিত হয়। ব্যবসায়ীরা আয়োজন করেন ‘হালখাতা’, বাড়িতে বাড়িতে চলে মিষ্টিমুখ, আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়।
পয়লা বৈশাখ মানে শুধুই ধর্মীয় আচার নয়—এটি সব ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সকলের উৎসব। এটি বাঙালির আত্মপরিচয়, বাঙালির একতাবোধের প্রতীক। এই দিনটিতে রঙিন পোশাকে সেজে, আলপনা এঁকে, মঙ্গল শোভাযাত্রায় পা মেলায় হাজারো মানুষ। বাংলা গানের সুরে, ঢাকের তালে, উৎসব যেন এক বহমান নদীর মতো জীবনের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে পড়ে।
নববর্ষের এই উদ্যাপন কেবলই আনন্দের উপলক্ষ নয়, এটি একটি পুনর্জাগরণ। এই দিনে বাঙালি শপথ নেয়—অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর, সংস্কৃতির আলো জ্বালিয়ে রাখার, ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আমরা এক, আমরা বাঙালি।
বছরের প্রথম সূর্যোদয়ে যখন আকাশ রাঙিয়ে ওঠে, তখন যেন বাঙালির হৃদয়েও আলো ছড়িয়ে পড়ে। পয়লা বৈশাখ মানে, শূন্য ক্যানভাসে নতুন জীবনের রং দিয়ে আবার আঁকা—আশার, সাহসের, ভালোবাসার ছবি।
তাই বাংলা নববর্ষ পালিত হয় শুধু ক্যালেন্ডারের একটি দিন হিসেবে নয়, বরং এক আত্মিক উত্থান ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের উৎস হিসেবে—যেখানে মানুষ মানুষকে কাছে টেনে নেয়, এবং বলে—“শুভ নববর্ষ!” 🌸📜✨
#নতুনশুরু #ভালোবাসারপাঠ #নতুনআলো #শুভনববর্ষ১৪৩২ #কলকাতা