অন্তরীপ Antareep

অন্তরীপ Antareep Antareep is the fastest growing most loved new generation Bengali Publication and Magazine.

25/06/2025

ইয়ালি ড্রিম ক্রিয়েসনস-এর ভারতবিখ্যাত চিত্রকাহিনি 'ক্যারাভান'-এর ঘটনাক্রম যেখানে শেষ হচ্ছে ঠিক সেখান থেকেই শুরু হচ্ছে একটি নতুন অধ্যায়— 'ক্যারাভান প্রতিশোধ'। প্রতিশোধ ও পরিত্রাণের এক রুদ্ধশ্বাস গাথা বলবে এই কাহিনি। আসিফ ও দুর্গা রক্তলোলুপ ভ্যাম্পায়ারদের ভয়ঙ্কর আক্রমণ থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে; খুব শীঘ্রই তারা বুঝতে পারে— সব বিপদের কারণ অতিপ্রাকৃত নয়, কিছু ভয়ের উৎস আসলে মানুষই। 'ক্যারাভান প্রতিশোধ: ১ম পর্ব' হল ক্যারাভান মহাগাথার শেষ অধ্যায়ের প্রথম পর্ব— পরিণতির আখ্যান। সুপ্রসিদ্ধ কমিকস-লেখক শমীক দাশগুপ্ত রচিত, ভারতবিখ্যাত শিল্পী গৌরব শ্রীবাস্তব অঙ্কিত ও প্রসাদ পট্টনায়েক বর্ণিত 'ক্যারাভান প্রতিশোধ: ১ম পর্ব' চিত্রকাহিনিটি আজ প্রকাশিত হল। এই বিশেষ প্রচ্ছদচিত্রটি করেছেন সৌমিন প্যাটেল, কমিকস-কাহিনি চিত্রনাট্যটি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় রূপান্তর করেছেন সৌমেন চট্টোপাধ্যায়।

ক্যারাভান প্রতিশোধ: ১ম পর্ব
কাহিনি ও চিত্রনাট্য: শমীক দাশগুপ্ত
চিত্ররূপ: গৌরব শ্রীবাস্তব
বর্ণ সংযোজন: প্রসাদ পট্টনায়েক
প্রচ্ছদশিল্পী: সৌমিন প্যাটেল
চিত্রনাট্য ভাষান্তর: সৌমেন চট্টোপাধ্যায়
অক্ষরসজ্জা: অভিষেক বিশ্বাস
মুদ্রিত মূল্য: ৩০০.০০ টাকা

শ্যামল সমৃদ্ধিশালী ভারতভূমি আমাদের দেশ। যুগে যুগে এই ভূমিতে আছড়ে পড়েছে বহিরাগত লুঠেরার আক্রমণ। বারংবার তারা তলোয়ারের ...
24/06/2025

শ্যামল সমৃদ্ধিশালী ভারতভূমি আমাদের দেশ। যুগে যুগে এই ভূমিতে আছড়ে পড়েছে বহিরাগত লুঠেরার আক্রমণ। বারংবার তারা তলোয়ারের ধারে ছিন্নভিন্ন করেছে ভারতের শান্তিসমৃদ্ধির জীবন, লুণ্ঠন করেছে তার সম্পদ, ধ্বংস করেছে তার যাপনধর্ম। কিন্তু ভারতবর্ষ বীরপ্রসবিনীও বটে, তাই যুগে যুগে ভারতমাতার সন্তানেরা প্রাণ পণ করে রুখে দাঁড়িয়েছে এই বিদেশি আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে। ইতিহাসের জটিল গোলকধাঁধায় আজ হয়তো দেশমাতৃকার সেইসব বীরসন্তানের প্রতিরোধ-গাথা অর্ধবিস্মৃত, খণ্ডলুপ্ত। তবুও অসীম সাহসিকতায় গড়ে তোলা সেইসব প্রতিরোধ কালের কুটিল গতির মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে নির্দিষ্ট করেছে আমাদের বর্তমান অস্তিত্বকে।
এই লেখাগুলি ভারতভূমির সেই বিস্মৃত বীরেদের উদ্দেশে শ্রদ্ধার্ঘ্য। আজ রানি দুর্গাবতীর আত্মবলিদান দিবসে সেই বীর-আত্মার স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্তরীপ-কথা ব্লগ-এ প্রকাশিত হল তমোঘ্ন নস্কর রচিত ধারাবাহিক 'প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান'-এর চতুর্থ পর্বটি— মা দুর্গা। প্রতি সপ্তাহে আসবে একটি নতুন পর্ব।

প্রতিরোধে বীর ভারত-সন্তান - তমোঘ্ন নস্কর লিঙ্ক পান Facebook X Pinterest ইমেল অন্যান্য অ্যাপ  রানি দুর্গাবতীপ্রতিরোধে বীর ভারত...

24/06/2025
এই যুদ্ধের ফলাফল অনিশ্চিত। অতিশয় অনিশ্চিত।     মহাকাল যেন এই মহাযুদ্ধ নিজের চোখে দেখার জন্যই আজ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলর...
24/06/2025

এই যুদ্ধের ফলাফল অনিশ্চিত। অতিশয় অনিশ্চিত।
মহাকাল যেন এই মহাযুদ্ধ নিজের চোখে দেখার জন্যই আজ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলরামকে।
দ্রুত উচ্চারণে বলরাম বললেন, “এই মুহূর্তে একটি রথ প্রস্তুত করো। আমি এই যুদ্ধ স্বচক্ষে দেখতে চাই।”
বলরামের হাত দু’টি অসম্ভব উত্তেজনায় চেপে ধরলেন রেবতী। বললেন, “কেন যাবে তুমি বলদেব? এই যুদ্ধে তুমি কোনও পক্ষেই নেই। যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে। এই শেষ মুহূর্তে…”
বহুদিন পর আজ সোজা হয়ে দাঁড়ালেন বলরাম। তাঁর দীর্ঘচ্ছন্দ বৃষস্কন্ধ দেহটি আজ জীর্ণ হয়েছে। তবু এক মুহূর্তের জন্য তিনি যেন ফিরে গেলেন যৌবনের সেই দিনগুলিতে। প্রিয়তমার দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে তিনি বললেন, “দুই শিষ্যের মধ্যে যুদ্ধ নয়, রেবতী। সমগ্র আর্যাবর্তের পক্ষে এ এক ক্রান্তিলগ্ন। যুগান্তরের আহ্বান এসে পৌঁছেছে। এখন আর দূরে থাকা সম্ভব নয়। তুমি দ্বারকায় ফিরে যাও। কুরুক্ষেত্রের অন্তিম মুহূর্ত কাকে গ্রাস করে, তা দেখেই আমার শান্তি হবে হয়তো। কে জানে, হয়তো পৃথিবীও শান্ত হবে এই অন্তিম রক্তস্নানে।”
তারপর দৃঢ় পদে এগিয়ে গেলেন ইতিমধ্যেই প্রস্তুত হয়ে যাওয়া রথের দিকে।

জীবনের অন্তিম ব্যর্থতাটুকু যেন এখানেই অপেক্ষা করছিল বলরামের জন্য।

তাঁর সম্মুখেই গদাযুদ্ধ হল ভীম আর দুর্যোধনের মধ্যে। প্রভাস থেকে কুরুক্ষেত্রের নিকটবর্তী সমন্তপঞ্চক পর্যন্ত আসার পথে সারথির কাছ থেকেই তিনি শুনতে পেয়েছিলেন যুদ্ধের সমস্ত ইতিবৃত্ত। শুনেছিলেন, কীভাবে একে একে পতন হয়েছে কৌরব পক্ষের সেনাপতিদের। শল্য ছাড়া, সম্মুখযুদ্ধে তাঁদের মধ্যে একজনেরও পরাজয় ঘটেনি। ছলনার আশ্রয় নিতে হয়েছে পাণ্ডবদের। আর কী আশ্চর্য, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই তার পশ্চাতে যে মস্তিষ্কটি ক্রিয়াশীল ছিল— তা কৃষ্ণের!
আর এইবার তাঁর সম্মুখেই আরও এক চরম অন্যায় ঘটে গেল। গদাযুদ্ধের নিয়ম ভঙ্গ করে দুর্যোধনের ঊরুদেশে আঘাত করলেন ভীম। বহুকাল পূর্বে, দ্যূতসভায় যেদিন চরম অপমানিত হয়েছিলেন দ্রৌপদী, সেইদিন ভীম প্রতিজ্ঞা করেছিলেন— একদিন তিনি দুর্যোধনের ঊরু ভগ্ন করে দেবেন।
আজ বলরামের সামনেই কৃষ্ণ সেই প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দিলেন অর্জুনকে। তারই ইঙ্গিতে যুদ্ধনীতির চরম অবমাননা করে ভীম ভয়ংকর আঘাত করলেন দুর্যোধনের ঊরুতে। তারপর ভূতলে নিপতিত দুর্যোধনের মাথা পা দিয়ে মাড়িয়ে দিলেন তিনি।
বহুদিন পর নিজের অভ্যন্তরে সেই আদিম মহান ক্রোধ অনুভব করলেন বলরাম। ‌এত বৎসরের জমে থাকা অভিমান আজ যেন অগ্নিরূপ ধারণ করে জ্বলে উঠল লেলিহান শিখায়। চিরসঙ্গী লাঙলটিকে আজ বহুদিন পর কর্ষণ করার জন্য নয়, যুদ্ধ করার জন্য তুলে নিলেন বলরাম। ভীম কেন, ভূভারতে এমন কেউ নেই, যে ক্রুদ্ধ বলরামের গতি রোধ করতে পারে। ‌মহা হুংকারে ভীমের দিকে ধেয়ে গেলেন বলরাম! আজ তিনি এই প্রবঞ্চকের বক্ষ বিদীর্ণ করে দেবেন। সেই রুদ্রমূর্তির সামনে আতঙ্কে স্থাণু হয়ে গেলেন মহাবল ভীমসেন; আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন অন্য পাণ্ডব ভ্রাতা ও যাদবরা।
কিন্তু এবারও তাঁকে নিরস্ত করলেন সেই কৃষ্ণ। দুই হাতের আশ্চর্য শক্তিশালী অথচ কোমল আলিঙ্গনে অগ্রজকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। গতি স্তব্ধ হল বলরামের। তাঁর ছলনাময় যুক্তির সম্মুখে মাথা নত করতে হল বলরামকে।
কয়েক মুহূর্ত নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন বলরাম। তারপর চোখ তুলে তাকিয়ে চাইলেন চারিদিকে। কারওর মুখে কোনও লজ্জার রেখা নেই। তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে একদল পরিতৃপ্ত মানুষ, যারা এইমাত্র অন্যায় যুদ্ধে ভূপতিত করেছে একজন একক যোদ্ধাকে।
স্খলিত কণ্ঠে বলরাম বললেন, “কৃষ্ণ! আমাকে রথের কাছে নিয়ে চলো। আমি দ্বারকায় ফিরে যেতে চাই। তুমি যুদ্ধ করো, ভ্রাতা। জয়ী হও। পাণ্ডবেরা রাজা হোক। আরও একবার তারা তোমাকে অর্ঘ্য নিবেদন করুক। আমাকে বিদায় দাও ভাই। এখানে বোধহয় আমাকে আর মানাচ্ছে না। আমি বরং সত্যই শস্যক্ষেত্রে ফিরে যাই।”

অথ সংকর্ষণ কথা
(অন্তিম পর্ব)
রাজা ভট্টাচার্য
অলংকরণ: রঞ্জন দত্ত
-----------------------------------------------------------------------------
শেষ হল এক দীর্ঘ অভিযাত্রা।

অন্তরীপ জুন সংখ্যায় শেষ হল ‘অথ সংকর্ষণ কথা’-র পথ চলা। মহাভারতের উপেক্ষিত বলরাম নয়, পুরাণে কৃষ্ণের সহকারী অগ্রজ নয়; কিংবদন্তি আর ইতিহাসের অনুপুঙ্খে যে মহানায়কের প্রকীর্ণ অনুষঙ্গ ছড়িয়ে আছে আজও— এ তাঁর কথা। তিনি যা হতে চেয়েছেন, যা হতে পারতেন— তার ইতিবৃত্ত। এই উপন্যাস আসলে সমগ্র মানবজাতির অভিযাত্রার সম্ভাব্য ইতিবৃত্ত।

সদ্য প্রকাশিত হয়েছে অন্তরীপ জুন ২০২৫ সংখ্যাটি। গল্প, কবিতা, ধারাবাহিক উপন্যাস দিয়ে সাজানো অন্তরীপ জুন ২০২৫ সংখ্যাটি নিশ্চিত করার জন্য আজই আগাম অর্ডার করুন আপনার নিকটবর্তী সংবাদপত্র বিক্রেতা, অথবা ম্যাগাজিন কর্নার-এ। আপনার এলাকাতে পত্রিকাটি পেতে কোনওরকম অসুবিধা হলে যোগাযোগ করুন এই নম্বরে: ৭৬০২৬২০৮০০, ৮৬১৭৭২৮৫০০, ৮২৫০৪৬৪৪৮০।

ঘরে বসে বিশেষ ছাড়সহ অনলাইন-এ সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন এই লিংক-এ: https://tinyurl.com/5ev93rkk

22/06/2025

জানেন কি, ভারতের কমিক্স জগতের কিংবদন্তি Pran Kumar Sharma-কে "Walt Disney of India" বলা হয়?
তিনি ছিলেন চাচা চৌধুরী, সাবু, পিংকি, বিল্লু-র মতো জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর স্রষ্টা। হাস্যরস, বুদ্ধিমত্তা আর সমাজচেতনায় ভরা তাঁর কমিক্স ভারতজুড়ে কোটি কোটি পাঠকের প্রিয় হয়ে উঠেছিল।

বারাসাত রেলওয়ে সাধনা বুক স্টল-এ এখনও 'চাচা চৌধুরী সমগ্র ১' বইটির প্রথম মুদ্রণের কিছু কপি পাওয়া যাচ্ছে বিশেষ ২২.৫% ছাড়...
22/06/2025

বারাসাত রেলওয়ে সাধনা বুক স্টল-এ এখনও 'চাচা চৌধুরী সমগ্র ১' বইটির প্রথম মুদ্রণের কিছু কপি পাওয়া যাচ্ছে বিশেষ ২২.৫% ছাড়সহ, আগ্রহী পাঠক-বন্ধুরা আজই সংগ্রহ করুন।

#চাচা_চৌধুরী_সমগ্ৰ প্রথম খন্ড ২২.৫০% ছাড়সহ ৮৫২ টাকায় পেয়ে যান আমাদের স্টলে। আপনার কপিটি সংগ্রহ করতে ফোন করুন👇👇
বারাসাতে প্রাপ্তিস্থান:- বারাসাত রেলওয়ে সাধনা বুক স্টল , বারাসাত জংশন, ৩ নং প্লাটফর্ম, স্থাপিতঃ-১৯৮৪,
📲 090883 72004

সাক্ষাৎকার থেকে স্মৃতিকথা, সত্যজিৎ-সৃষ্টির বিশ্লেষণী নিবন্ধ, ছবি, অলঙ্করণ, বাতিল পোস্টার, বিজ্ঞাপনী চিত্র, অনুবাদ, আলোচন...
22/06/2025

সাক্ষাৎকার থেকে স্মৃতিকথা, সত্যজিৎ-সৃষ্টির বিশ্লেষণী নিবন্ধ, ছবি, অলঙ্করণ, বাতিল পোস্টার, বিজ্ঞাপনী চিত্র, অনুবাদ, আলোচনা, সমালোচনা ছাড়াও একাধিক অন্তরঙ্গ স্মৃতিচারণ ও নানান অজানা তথ্যে সাজিয়ে তোলা হয়েছে 'একাই ১০০' গ্রন্থটিকে। সঙ্গে রয়েছে হাফ-ডজনেরও বেশি বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ।
আকর্ষণীয় ছাড়সহ 'একাই ১০০' গ্রন্থটি পাওয়া যাচ্ছে কলেজস্ট্রিটসহ জেলার সমস্ত অগ্রণী পুস্তকবিপণিগুলিতে; অনলাইন খরিদের ঠিকানা: https://antareep.in/antareep/product/ekai-eksho

চরাচর প্লাবিত হচ্ছে প্রবল বর্ষণে। স্বাভাবিক নয় এ বর্ষণ, যেন ঈশ্বরের ক্রোধ অম্বুজাল ছিন্ন করে বর্ষিত হচ্ছে বারিবিন্দুরূপে...
21/06/2025

চরাচর প্লাবিত হচ্ছে প্রবল বর্ষণে। স্বাভাবিক নয় এ বর্ষণ, যেন ঈশ্বরের ক্রোধ অম্বুজাল ছিন্ন করে বর্ষিত হচ্ছে বারিবিন্দুরূপে। সে বর্ষণশব্দের সহচর হয়ে রয়েছে অবিশ্রান্ত ভেকরব। সমগ্র নবদ্বীপের দাদুর কুল যেন কী এক উন্মত্ত বাসনায় চতুর্দিক কম্পিত করছে কর্কশ আহ্বানধ্বনিতে।
বর্ষণপ্রাবল্যে সন্ধ্যাবেলা তুলসীবেদিতে দীপ প্রজ্জ্বলন সম্ভব হয়নি। শ্বেত আকন্দের গোড়ায় পিপীলিকা-স্তূপ সে বর্ষণে ধ্বস্ত। প্রতিবেশী মুকুন্দ শর্মার পুরাতন গৃহপ্রাচীরখানি ঝড়ের আঘাতে ধসে পড়ল। সে শব্দে শ্বশ্রূমাতা বুঝি চমকিত হয়ে উঠলেন। বৃদ্ধার অনিদ্রারোগ। নিদ্রাদেবী বিদায় নিয়েছেন বুঝি চিরতরে তাঁর নয়ন হতে। সামান্য শব্দেই তাঁর হৃৎকম্প উপস্থিত হয়। প্রায়ান্ধ বৃদ্ধা, পুত্রনাম ধরে চিৎকার করে ওঠেন।
খিড়কিদ্বারের কবাট দু’টি উন্মত্ত বাত্যাঘাতে শব্দ করে উন্মুক্ত হয়-বন্ধ হয়। অর্গলটি নষ্ট হয়েছে বেশ কিছুদিন। সূত্রধর শ্রীদাম সহজেই সমস্যার সমাধান করতে পারে, কিন্তু তাতে তিন-চার কপর্দিকা ব্যয় হবে। শ্রীদাম অবশ্য অর্থ যাচনা করে না, অর্থ প্রদান করতে গেলে অস্বীকার করে গ্রহণ করতে। বলে, “মা তোমাদের ঘরের কাজ করে দিছি, স্বর্গে আমার থান পাকা হয়ে গেল। ট্যাকা-কড়ির কথা তুলোনি মা।”
মা। সকল সমস্যার সমাধান আছে, এ সমস্যার কোনও সমাধান নেই। এই বয়সেই সে আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের মাতৃস্থানীয়া রূপে পরিগণিত হতে আরম্ভ করেছে। সে পথ চললে পথচারীরা সসম্ভ্রমে সরে যায়— সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে। গঙ্গাতীরে এই সেদিন পর্যন্ত সে সখীদের সঙ্গে খেলে বেড়িয়েছে— আজ প্রভাতে সে পথে চলতে চলতে অবগুণ্ঠনখানি ঈষৎ স্খলিত হয়েছিল অসাবধানতায়, রমাকান্ত আচার্যের গৃহিণী শশব্যস্তে সেটিকে পুনঃস্থাপিত করে বললেন, “মাগো, কিছু মনে করো না মাগো। ছেলেপুলে তোমার বরে বেঁচেবত্তে থাকুক।”
আশ্চর্য! মাত্র কয়েক বৎসর পূর্বেই এই আচার্যদের উদ্যানে সদলে পুষ্পচয়ন করতে গিয়ে আচার্য গৃহিণীর কত কটূক্তি সহ্য করতে হয়েছে তাকে। তবে কেবল আচার্য গৃহিণীই কেন? আবাল্য পরিচিত মানুষের দৃষ্টিতে সে লক্ষ করতে পারে অপরিচয়ের বিস্ময়, অনতিক্রম্য সম্ভ্রম। দিবসকালে তার শ্বশুরগৃহের প্রাঙ্গণ পূর্ণ থাকে পরিচিত-অপরিচিত মানুষের ভিড়ে। দূর-দূরান্ত হতে আসে এয়োস্ত্রী, বিধবা, গর্ভবতী নারীর দল। তার একটি স্পর্শে, একবিন্দু পাদোদকে নাকি বিবাগি স্বামী প্রত্যাবর্তন করবে— রোগোপশম হবে— সন্তানটি সুস্থ জন্ম নেবে।
কয়েকদিন পূর্বে সে ভিড়ে একজনের উপর তার দৃষ্টি পড়ে। এক তরুণী, শীর্ণ দেহে মুখচ্ছবিটি ভারী করুণ। অন্যদের মতো সে আপন সমস্যার কথা বলতে উন্মুখ নয়, নিশ্চুপে সলজ্জ দণ্ডায়মান দ্বারপার্শ্বে। কেবল তার আয়ত চক্ষু দু’টি হয়ে অশ্রুপাত হচ্ছে অঝোরে।
নিস্তারিণী দাসী এসেছিল পাটুলি গ্রাম হতে, পাদোদক সংগ্রহ করার জন্য। তার পুত্রটির মারণ জ্বর। বৈদ্য হরিনামের বিধান দিয়েছেন। নিস্তারিণী অতি মৃদুস্বরে বলল, “মাগো, ও মুখপুড়ির সোয়ামি ঘরে থাকে না। বড্ড বারদোষ। তুমি মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করো মাগো।”
তার নিজের অন্তর হতে উঠে আসছিল চিৎকৃত ক্রন্দন এক। তার আশীর্বাদে নাকি হতভাগিনীর স্বামী প্রত্যাবর্তন করবে, এত শক্তি তার আশীর্বাদের! সে তো আপনজন, নিজের মানুষটিকেই ধরে রাখতে পারেনি। উদ্‌গত অশ্রু মার্জনা করে সে ওই তরুণীটিকে নিকটে আহবান করে। মস্তকে স্নেহস্পর্শ দেয়, দু’টি মিষ্ট কথা বলে।
মানুষজন বিদায় হলে তাকে উঠতে হয়। শ্বশ্রূমাতার অন্নগ্রহণের সময় হল। দৃষ্টি হারিয়েছেন তিনি, পুত্রবধূর হস্তেই অন্নগ্রহণ করেন। বিধবা মানুষের একবেলার খাদ্য। সে নিজেও ভেবেছিল সেভাবেই চলবে— কিন্তু সমর্থ শরীর খাদ্য যাচনা করে। তাই তাকে সন্ধ্যায় পুনরায় নিজের জন্য দু’টি আয়োজন করতে হয়।
অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা ব্রহ্মোত্তর ভূমি থেকেই হয়ে যায়। শ্বশুর সে ব্যবস্থা করে গেছেন। কিন্তু ঘরে পুরুষমানুষ না থাকলে যা হয়— প্ৰণামোন্মুখ সহস্র মানুষ উপস্থিত থাকলেও সংসারসমস্যার সমাধান হয় না।
তার পিতা বলেছিলেন, “কেন আর ওখানে পড়ে থাকবি মা? শাশুড়িকে নিয়ে উঠে আয় আমাদের কাছে। ও ভাঙা ঘরে আর কী-বা আছে তোর?”
সে সম্মত হয়নি। শ্বশুরভিটা তার। এ ভিটা ত্যাগ করে গিয়ে শ্বশ্রূমাতা শান্তি পাবেন না। এখানেই তাঁর স্বামী, দুই পুত্র, তাদের সমস্ত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সে স্মৃতিই এখন অসহায়া বৃদ্ধার সম্বল। বাইরে ঝড়ের দাপট বাড়ে। সে নতমস্তকে নিশ্চুপ হয়ে আসীন। ভ্রাতাদের সংসার এখন তার পিতৃগৃহে। সে সংসারে শান্তিলাভ করবে না সে-ও। স্বামী সোহাগিনি বউদিদিরা তাকে কৃপাদৃষ্টিতে দেখবে, সে সহ্য করতে পারবে না।
মাঝে মাঝে বড়ো ক্ষোভ হয় সেই মানুষটার উপরে। ফুলশয্যার রাতে, কিশোরী বধূটির অবগুণ্ঠন সরিয়ে স্বামী বললেন, “তোমার চোখদুটো ঠিক তোমার দিদির মতো। সে একদম তোমার মতো করেই তাকাত।”
যত্নে পরিমার্জিত মৃত্তিকাপ্রাচীরে প্রদীপের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে যেন। উন্মুক্ত গবাক্ষপথ দিয়ে আম্রমুকুলের সুবাস বহন করে আনছে মৃদু বাতাস। সম্মুখে দাঁড়িয়ে গৌরদেহী সুপুরুষ স্বামী। তাঁর রূপ-গুণ-পাণ্ডিত্যের খ্যাতি তাঁকে ইতিমধ্যেই এই কিশোরীটির মনে দেবতার আসনে বসিয়েছিল। এই মায়াবী রাতে, সেই দেবতা তার মৃত সপত্নীর উল্লেখ করেই উদাস হয়ে গেলেন। তারপর যে কয়দিন তিনি গৃহাশ্রমে ছিলেন— নববধূটি তাঁর মন-শরীরের নাগাল পায়নি। তারপর তো একদিন তিনি চলে গেলেন— এ জন্মের মতো।
বাইরে বর্ষণবেগ হ্রাস পেয়েছে ক্রমে। সিক্ত মৃত্তিকা হতে উত্থিত হচ্ছে জলার্দ্র সুবাস। গৃহপার্শ্বের প্রাচীন অশ্বত্থবৃক্ষটির পত্রদলের আশ্রয় ত্যাগ করে শেষবৃষ্টির বারিবিন্দুগুলি ভূমিতে পতিত হচ্ছে— টুপটাপ টুপটাপ। হঠাৎই শচীদেবী কাতরভাবে বলে উঠলেন, “কেরে, নিমাই এলি নাকি বাপ? নিমাই, অ নিমাই।” বৃদ্ধার আর্তনাদ সিক্ত অন্ধকারের বুক চিরে গৃহত্যাগী পুত্রের সন্ধান করে বেড়াচ্ছে অবিরত।
***

অকস্মাৎ নিদ্রা টুটেছে সে মানুষটির। স্বপ্ন। স্বপ্নই তো! স্বপ্ন কি এত স্পষ্ট হয় কখনও? কিন্তু না, স্বপ্নই এ দৃশ্যপট। শচীদেবী আর ইহজগতে নেই। পুত্রের সন্ধান অসম্পূর্ণ রেখেই পরপারে যাত্রা করেছেন চিরদুর্ভাগিনী। এ সংবাদ আনয়ন করেছে দামোদর পণ্ডিত। মা বিদায় নিয়েছেন। সমস্ত জীবন শোকতাপে জর্জরিত হয়েছেন শচীদেবী— অবশেষে তাঁর সকল যন্ত্রণার অবসান ঘটেছে।
তা হলে, তা হলে নীলাচলে আর কী-ই বা রয়েছে তাঁর জন্য! মাতৃ-আজ্ঞাতেই নীলাচলে এতদিন বাস করেছেন তিনি, মানুষটি ভাবলেন। অস্থির বোধ হচ্ছে তাঁর। এ অস্থিরতার বোধ বেশ কিছুদিন ধরেই অধিকার করে রয়েছে তাঁর হৃদয়-মস্তিষ্ক। এ অস্থিরতা বোধ তাঁর মানসিক শান্তি হরণ করেছে, সম্ভবত হরণ করেছে তাঁর মানসিক ভারসাম্যও।
এ জীবন তো যাচনা করেননি তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকটে। তাঁর একটিমাত্র প্রার্থনা ছিল কেবল— জম্বুদ্বীপের সমস্ত প্রান্তে হরিনামের প্রচার ও প্রসার। কিন্তু সে প্রচারে লাভ হল কি কিছু? আজ তিনি সন্ন্যাসী কৃষ্ণচৈতন্য এক অবতাররূপে পূজিত। কিন্তু অবতাররূপে পরিগণিত হওয়ার কোনও বাসনা ছিল না তাঁর। এ অবতারত্ব তাঁকে আবদ্ধ করেছে শৃঙ্খলে। দান করেছে অস্থিরতা, মানসিক বৈকল্য।
আজ কেউই নেই, যাঁকে তিনি মনের কথা বলতে পারেন অকপটে। হরিদাস ঠাকুর মর্তকায়া ত্যাগ করে গোলোকধামে গমন করেছেন। নিত্যানন্দ সুদূর খড়দহে। আচার্য অদ্বৈত... আচার্য অদ্বৈত কি তাঁর উপর কোনও কারণে রুষ্ট? মানুষটি বুঝে উঠতে পারেন না। আজ সহস্রভক্তপরিবৃত হয়েও তিনি একা। দেবমূর্তির মতো একা, শূন্যগর্ভ মন্দিরের মতো একা।
তিনি জানেন উন্মত্তভাব দেখা দিচ্ছে তাঁর আচার ব্যবহারে। ক্রমবর্ধমান অস্থিরতায় তিনি ভূমিতে লুটিয়ে ক্রন্দন করেন, উন্মাদের মতো গম্ভীরার কক্ষপ্রাচীরে মুখ ঘষেন, বাহ্যজ্ঞান হারান ক্ষণে ক্ষণে। তাঁর ভক্তরা ভাবে ঐশ্বরিক আবেশ ঘটেছে, দিব্যোন্মাদ হয়েছেন মহাপ্রভু। তিনি মনোমধ্যে কেবল হরিনাম জপ করেন। শ্রীহরির উদ্দেশে বলেন, “হে নিঠুর, কথা কও। পথ দেখাও তুমি নিঠুর হে।”
পথনির্দেশ লাভ হয়নি। কোন পথে যেতে হবে তাঁকে, তিনি বুঝে উঠতে পারেন না। নবদ্বীপে প্রত্যাবর্তন করবেন? সেখানে হয়তো অভাগিনী বিষ্ণুপ্রিয়া তাঁরই অপেক্ষায় রত, এখনও। ওই অভাগিনীর প্রতি কি অন্যায় করলেন তিনি? জগৎসংসারকে পরম সুখের পথ নির্দেশ করতে গিয়ে কি তিনি সংসারসুখ হরণ করলেন নবদ্বীপের ওই কিশোরীটির নিকট হতে? অস্থিরতা আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে তাঁর।
না নবদ্বীপে প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়। আচার্য অদ্বৈত সংবাদ প্রেরণ করেছেন জগদানন্দের মাধ্যমে, প্রহেলিকার অন্তরালে।

‘বাউলকে কহিহ, লোক হইল আউল,
বাউলকে কহিহ, হাটে না বিকায় চাউল।
বাউলকে কহিহ, কাজে নাহিক আউল
বাউলকে কহিহ, ইহা কহিয়াছে বাউল॥’

জগদানন্দের মুখে এই প্রহেলিকা শ্রবণে কেউই তার অর্থ উদ্ধার করতে পারেননি। পেরেছেন একমাত্র মহাপ্রভু, আর সে মুহূর্ত থেকে তাঁর অস্থিরতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটি অতল বিষণ্ণতা, এক সর্বগ্রাসী হতাশা।
‘বাউল’ যে ‘চাউল’ দান করে এসেছে রাঢ়-গৌড়ের জনগণে, তা আর তারা চায় না। মহাপ্রভুর গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম ক্রমে জনমানসে গুরুত্ব হারাচ্ছে। ‘আউল’ কাজে এল না। নিত্যানন্দ আজ নবদ্বীপের বৈষ্ণব ধর্মের কেন্দ্র হতে দূরে। অদ্বৈত আচার্যের ধারণা, বৈষ্ণব আন্দোলনের দায়িত্ব নিতে শ্রীপাদ ব্যর্থ হয়েছেন।
না, কোনও লাভ নেই নবদ্বীপে প্রত্যাবর্তন করে। সমস্তই ব্যর্থ হল তবে। এই আন্দোলন, এই জন-জাগরণ, এই সাম্যবাদ— যন্ত্রণাবিদ্ধ হৃদয়ে মানুষটি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন, “পথ দেখাও প্রভু, এ অন্ধকূপ হতে মুক্তির পথ দেখাও।”
---------------------------------------------------------------------
অভীক মোহন দত্ত রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস 'নিঠুর হে' এখন পাওয়া যাচ্ছে কলকাতাসহ জেলার বিভিন্ন অগ্রণী গ্রন্থবিপণিতে। অন্তরীপের নিজস্ব ওয়েবসাইট-এ বিশেষ ২৫% ছাড়সহ বইটি পাওয়া যাচ্ছে জুন মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত, অর্ডার করার জন্য ক্লিক করুন এই লিংক-এ: https://tinyurl.com/nhjnpe46

আমাজন-এ অর্ডার করার জন্য আগ্রহী পাঠক অর্ডার করতে পারেন এই লিংক-এ:
আদিপর্ব: https://shorturl.at/t4hrE
অন্তপর্ব: https://shorturl.at/OHxWy

বৈচিত্র্য ডট ইন-এ এখনও 'চাচা চৌধুরী সমগ্র ১' বইটির প্রথম মুদ্রণের কিছু কপি পাওয়া যাচ্ছে। আগ্রহী পাঠক-বন্ধুরা আজই সংগ্রহ...
21/06/2025

বৈচিত্র্য ডট ইন-এ এখনও 'চাচা চৌধুরী সমগ্র ১' বইটির প্রথম মুদ্রণের কিছু কপি পাওয়া যাচ্ছে। আগ্রহী পাঠক-বন্ধুরা আজই সংগ্রহ করুন।

Order Link: https://boichitro.in/product/chacha-chowdhury-samagra-1-pran/

Whatsapp: 096744 80588

বারাসতের 'কথক'-এ এখনও 'চাচা চৌধুরী সমগ্র ১' বইটির প্রথম মুদ্রণের কিছু কপি পাওয়া যাচ্ছে। আগ্রহী পাঠক-বন্ধুরা আজই সংগ্রহ ...
20/06/2025

বারাসতের 'কথক'-এ এখনও 'চাচা চৌধুরী সমগ্র ১' বইটির প্রথম মুদ্রণের কিছু কপি পাওয়া যাচ্ছে। আগ্রহী পাঠক-বন্ধুরা আজই সংগ্রহ করুন।

Address

19/2 Radhanath Mallick Lane
Kolkata
700012

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when অন্তরীপ Antareep posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to অন্তরীপ Antareep:

Share

Category