08/06/2025
পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্যে শ্রাবণী পালকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ♥️🙏🏻👇
#দুষ্প্রাপ্য_রোমাঞ্চ_২৫ - এটি একটি গল্পের সংকলন। এই সংকলনটি সম্পাদনা করেছেন লেখক #অমিতাভ_চক্রবর্তী মহাশয়। বইটি প্রকাশিত হয়েছে #দীপ_প্রকাশনী থেকে........ মূল্য ₹৩৫০
📒 বইতে বিভিন্ন ধরনের ২৫ টি গল্প রয়েছে। ধীরেন্দ্রলাল ধর থেকে আরম্ভ করে একালের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র পাল, মঞ্জিল সেন, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় সকলেই আছেন। রহস্য থেকে শুরু করে অলৌকিক, গোয়েন্দা থেকে শুরু করে কল্প-বিজ্ঞান, সমস্ত ধরনের কাহিনিই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই বইতে।
📒 এবার বলবো, বইটি পড়ে আমার কেমন লাগলো। এর সাথে তুলে ধরবো বেশ কিছু গল্প....
প্রথম যে গল্পটা নিয়ে কথা বলবো সেটা হলো
✓ “ফাঁসির পর” এই গল্পের শুরুতেই দেখা যায় প্রিয়সুখবাবু মতিহারির সাবজজ থেকে পাটনার ছোটো আদালতের বড়ো জজ হয়ে এলেন। বেশিদিনের জন্য নয়, মাত্র দু'মাসের জন্য। এরপর চাকরির মেয়াদ ফুরিয়ে গেল, অবসর নিতে হবে....
এই শেষের দু'মাসে একটা শক্ত কেস তিনি চালালেন, এক প্রসিদ্ধ ডাকাতের মামলা। দাগি আসামি পালিয়ে বেড়িয়ে বহু দিন বাদে ধরা পড়েছে। এর নামে সতেরোটা খুন-জখমের কেস, আর চুরি-ডাকাতি যে কত তার কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। ডাকাত মশাইয়ের নামটি বেশ, রঘুনন্দন আনন্দ-প্রসাদ!
রঘুর ফাঁসির হুকুম হল। প্রিয়সুখবাবু কলম দিয়ে নাম সই করে কলম ছুড়ে ফেলে এজলাস থেকে বেরিয়ে এলেন। এই ছিল তাঁর কাজের শেষ দিন। প্রিয়সুখবাবু যখন কলকাতায় আসবার তোড়জোড় করছে, ঠিক সেই সময় ‘রঘুনন্দন' জেল থেকে পালিয়ে যায়। আর জেলকর্তারা মিছামিছি রটিয়েছেন 'যে তার ফাঁসি হয়ে গেছে-নিজেদের চাকরি যাওয়ার ভয়ে। রঘুর যত আক্রোশ এবার প্রিয়সুখবাবুর উপর। সে সুবিধা খুঁজে বেড়াচ্ছে, এবং ওঁত পেতে অপেক্ষা করছে.....
‘প্রিয়সুখবাবু’ কি পারবে ‘রঘুনন্দন'-এর হাত থেকে রক্ষা পেতে?? জানতে হলে অবশ্যই এই গল্পটি পড়তে হবে!
✓ “দু'ফোঁটা রক্ত” রাত প্রায় বারোটা নাগাদ প্রিয়নাথ অধিকারীর ওখান হতে নিমন্ত্রণ খেয়ে কিরীটি এসে শুয়েছিল এবং টেলিফোনের মূহুর্মুহু শব্দে ঘুম যখন ভাঙল রাত তখনও শেষ হয়নি। ঠিক সেই সময় টেলিফোনটা এলো ....
প্রিয়নাথবাবু মারা গেছেন।'স্তম্ভিত বিস্মিত কিরীটিকে আর দ্বিতীয় প্রশ্নের অবকাশ মাত্রও না দিয়েই অকস্মাৎ যেমন তারের বুকে শব্দতরঙ্গ জেগে উঠেছিল তেমনি অকস্মাৎই আবার নিশ্চুপ হয়ে গেল'। প্রিয়নাথবাবু বয়স সত্তরের কাছাকাছি হলেও অকৃতদার কর্মঠ প্রিয়নাথের শরীরে কোথাও বার্ধক্য তার দাঁত বসাতে পারেনি। এখনও অটুট স্বাস্থ্য। মাত্র ঘণ্টা পাঁচেক আগেও কিরীটি ভদ্রলোককে জীবিত দেখে এসেছে। সন্ধ্যা হতে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত এবং সাড়ে নয়টায় আহারাদির পর রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত একসঙ্গে বসে দাবা খেলেছে। তারপর শুভরাত্রি জানিয়ে বিদায় নিয়ে এসেছে। এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমন কী হল যে হঠাৎ তিনি মারা গেলেন?? আর কেই বা ফোন করলে এবং অমন করে হঠাৎ কথা না শেষ করে ফোন ছেড়েই বা দিল কেন? ভীষণ interesting গল্প! আর শেষটা উফ্...
✓ “শেষ পর্যন্ত” রাত তখন ন'টা; ক্লাবেই সদ্য খাওয়া-দাওয়া সেরে ক্লাবের দোতলার বারান্দায় নিরালা কোণে চেয়ারে বসে ক্ষিতীশ চক্রবর্তী সিগার সেবন করছেন। ক্লাবের বয় এসে জানাল, 'এক সাহেব এসেছেন...দেখা করতে চান।' ক্ষিতীশের যেন চমক ভাঙল। এসেছেন ইন্সপেক্টর শেখর সান্যাল, ক্যালকাটা পুলিশ ডি.জি...এখানে বলে রাখি ক্ষিতীশের বন্ধু করুণাময়। পুলিশ জানায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজার করুণাময় মিত্র তিনি নিরুদ্দেশ, ক্ষিতীশ খুব আশ্চর্য-বোধ করেন এবং ভাবেন বয়স হয়েছে... বিচক্ষণ মানুষ... অত বড়ো ব্যাঙ্কের ম্যানেজার, দায়িত্ববোধ আছে। তিনি নিরুদ্দেশ হবেন কিন্তু কেনো?? এই কেনো এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে গোপন তথ্য। তা জানতে হলে অবশ্যই গল্পটি পড়তে হবে!
✓ “অভিনেত্রী” দর্শকদের হাততালির মধ্যে ড্রপসিন পড়ে গেল। চমৎকার অভিনয় করেছে বন্দনা ও অরুণাংশু। যদিও এই দৃশ্যে নায়ক-নায়িকা একটু বাড়াবাড়িই করেছে বলে অনেকের ধারণা, তবুও খুব খারাপ লাগেনি তাঁদের। আর একটিমাত্র দৃশ্য বাকি। এই দৃশ্যেই ঘটনার পরিণতি। ড্রপসিনের ওপাশ থেকে শেষ দৃশ্যের মঞ্চ সাজানোর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মৃদু কথাবার্তার আওয়াজ ভেসে আসছে এপাশে। দপ করে নিভে গেল অডিটোরিয়ামের আলো। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দর্শকবৃন্দ। মিনিটখানেক কেটে গেল। কিন্তু কেউ ঢুকল না স্টেজের ভেতর.......ওপাশ থেকে শোনা গেল পরিচালকের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর 'কই, বন্দনা কোথায়? শেষে পর্যন্ত পরিচালক নিজেই ছুটলেন বন্দনাকে ডেকে আনতে। ধনী পিতার একমাত্র আদুরে কন্যা বন্দনার প্রাণহীন দেহ পড়ে আছে ড্রেসিং-রুমের মেঝেয়। চোখদুটো বিস্ফারিত। মুখের দু'কষ বেয়ে ঝরে পড়ছে ক্ষীণ রক্তের ধারা.... এই কয়েক মুহূর্তের মধ্যে কি এমন ঘটলো ড্রেসিং-রুমে ? হত্যাকাণ্ডের কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। কেবলমাত্র একটি চশমা... এর সাহায্যেই হত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে হবে পুলিশকে। কে বন্দনার হত্যাকারী ? আর কেনই বা এই হত্যা হলো তা জানতে হলে অবশ্যই গল্পটি পড়তে হবে!
✓ “রক্তের সম্পর্ক” এই গল্পটা বেশ অন্যরকম। দুই ভদ্রলোক পুরীর সমুদ্রের ধারে বসে কথা বলছে। প্রথম ভদ্রলোক বলে চলেছে তার আবিস্কারের কথা, আর দ্বিতীয় ভদ্রলোক অবাক হয়ে শুনে যাচ্ছে সেই গল্প......গল্পে কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ নেই। প্রথম ভদ্রলোক ‘রক্ত নিয়েই গবেষণা করেছে’। এবং একটা নয় বরং দুটো আবিষ্কার ও করেছেন। 'যে তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছিলেন তার মূল বক্তব্য হল প্রত্যেক মানুষের রক্তের গঠনে তার নিকট আত্মীয়দের রক্তের একটা মিল থাকবেই'। আর দ্বিতীয় আবিষ্কারটি ছিলো, প্রথম আবিস্কারের পরিক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য নিজের ছেলেকেই বেছে নিয়ে ছিলো........
আর তার ফল হয়েছিলো সাংঘাতিক! সেটাই জানতে হলে অবশ্যই গল্পটি পড়তে হবে।
✓ “হাতের রেখায় খুন” অনুপম আর অসিত এসেছে দার্জিলিং-এ। দার্জিলিং-এ যেহেতু এই সময় সিজেন চলছে তাই হোটেল আর পাওয়া গেলো না! হেটেলের গেটের বাইরে স্যুটকেস আর বেডিং রেখে তারা দু'জন ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছিলো। একজন স্যুট পরা ভদ্রলোক অনুপমকে দেখে হঠাৎ থেমে দাঁড়িয়ে বললেন, 'আরে? অনুপম না?'
অনুপম লাফিয়ে উঠে বলল, 'অনিল চৌধুরী!'
অনিলের বাড়িতে ওঠে অনুপম আর অসিত।
অনুপম জ্যোতিষী। যারা তাকে হাত দেখায় তাদের মতে, অনুপম নাকি দারুণ ভবিষ্যৎ গণনা করতে পারে। অনুপম, অনিল চৌধুরীর ও ভবিষ্যৎ গননা করে জানান যে তোমার বউ হবে খুনি!' অনিলের হাতে নাকি ভীষণই স্ট্রং সাইন আছে। কোষ্ঠীতেও। কিন্তু অনিল চৌধুরী অনুপমকে তার বউ সম্পর্কে বিস্তারিত জানায় এবং প্রশংসাই করে। অনুপম এই ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না, এর পর ই সেই চরম সত্যির সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় অনিল চৌধুরীর বউ মিনতিকে। এবং
মিনতিও সবটা মেনে নিতে বাধ্য হয়.....
কি ছিলো সেই চরম সত্যি জানতে হলে অবশ্যই গল্পটি পড়তে হবে!
✓ “নিয়তি পুরুষ” এই গল্পে কোনো চরিত্রের নাম উল্লেখ নেই। তবে মূখ্য চরিত্রে যে রয়েছে তার সাথে ঘটে চলে সব অদ্ভুত ঘটনা, প্রতিবারই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আছে। আর এইই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে তার নিয়তি পুরুষের কারণে, কে এই নিয়তি পুরুষ?? কেনোই বা প্রতিবার তার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনছে?? কি রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এর পিছনে? জানতে হলে অবশ্যই গল্পটি পড়তে হবে!
📒 প্রতিটি গল্পের ঘটনাগুলো ভীষণই রোমাঞ্চকর এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বাংলা সাহিত্য এই ধরনের গল্পের জন্য বেশ সমৃদ্ধ। বিভিন্ন লেখকের লেখা এই ধরনের গল্পেসমগ্ৰে যেমন থ্রিলার, সাসপেন্স, এবং রহস্যের উপাদান রয়েছে, তেমনই কিছু বই বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় নতুনত্বের পরিচয় দেয়। এই বই ঠিক তেমনিই একটি.......
এই বইতে যেমন রয়েছে রহস্যের উপাদান, রোমাঞ্চের অনুভূতি, এবং থ্রিলারের টান টান অনুভব ......অনেক গল্পে গোয়েন্দার কাজ, পুলিশি তদন্ত, এবং অপরাধের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। সত্যিই অনবদ্য একটি সংকলন। অনেক দিন পর আবারও একটি ছোট গল্পের বই পড়লাম। অভিজ্ঞতা ভীষণ ভালো সেটাই আমার রিভিউ এর মাধ্যমে আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম। ধন্যবাদ 🙂 🙏🏻
#রিভিউ #গল্প #আলোচনা #পাঠক_পতিক্রিয়া