15/10/2023
বিদেশের মাটিতে উমা-কে বরণ করার প্রস্তুতি কেমন চলছে? জার্মানি-র বার্লিন থেকে জানাচ্ছেন Berlin Sarbojonin Durgotshob-এর এক সদস্য।
-----
কোন দিন নর্থ আর কোন দিন সাউথ? কারুর বাড়িতে বসে আড্ডা নাকি হোল নাইট ঠাকুর দেখা? এবার পুজোয় কলকাতাতে কে কে আছে আর কে কে নেই? হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুদের গ্রুপে যখন এইসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে, সুদূর জার্মানির রাজধানী বার্লিনে থাকা আমি সেই "কে কে নেই"-দের দলে। এবারও পুজোয় কলকাতাতে থাকতে পারছিনা।
হ্যাঁ একটু খারাপ লাগছে নিশ্চই, কিন্তু পুজো একদম মিস করবো না। কেনো? এবার আমার পুজো কাটবে বার্লিন সর্বজনীন দুর্গোৎসব-এর মণ্ডপে। বাঙালির দুর্গা পুজোর আমেজ বজায় রাখতেই "ইগনাইট ই.ভি."-র উদ্যোগে আমরা সুদূর জার্মানির রাজধানী বার্লিনে এই নিয়ে তৃতীয়বার আয়োজন করছি দুর্গা পুজো।
বিদেশের পুজো তো খালি উইকএন্ড-এ হয়, ওতে কি আর মন ভরে? বার্লিন সর্বজনীন দুর্গোৎসব-এর পুজো হয়ে নিয়ম আর রীতি মেনে, ৫ দিন ধরে। অক্টোবর ২০ থেকে ২৪, ২০২৩ আমাদের পুজো হবে বার্লিনের শ্রী গণেশ হিন্দু মন্দিরের প্রাঙ্গণে। ষষ্ঠীর বোধন থেকে কুমারী পুজো, অষ্টমীর সন্ধি পুজো থেকে সিঁদুর খেলা, কিছুই বাদ যায় না। এবছরও এইসব তো থাকছেই, তার সাথে রয়েছে অনেক কিছু।
বিদেশের মাটিতে কিভাবে এত আয়োজন সম্ভব হচ্ছে? কতটা আলাদা বিদেশের পুজো? পুজোর আয়োজক "ইগনাইট ই.ভি."-র সদস্য-সদস্যারা নিজেদের সাধ্য মত আর্থিক অবদানে আয়োজন করেন এই পুজো। জাহাজে করে শিল্পী মিন্টু পাল-এর গড়া প্রতিমা এসছে কুমারটুলি থেকে। জার্মানির কাস্টমস-এর নিয়মের গণ্ডি পেরিয়ে দশকর্মাও ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে বার্লিনে। তফাৎ বলতে এইটুকুই, তাছাড়া এই পুজো পশ্চিমবাংলার আর পাঁচটা বারোয়ারী পুজোর মতোই। পুজো হবে সব নিয়ম মেনেই। পুরুতমশাই আসছেন ডুসেলডর্ফ থেকে, তিনি খাঁটি বাঙালি। মোট কথা ষোলো আনা বাঙালিয়ানা বজায় থাকছে বার্লিনেও।
১৬-ই জুলাই বার্লিনের শ্রী গণেশ হিন্দু মন্দিরে খুঁটি পুজো দিয়ে সূচনা হয় এই বছরের পুজো। তারপর একে একে যোগ দেন বার্লিনের বাঙালি তথা অবাঙ্গলিরাও। পুজো পরিচালনার কমিটিও তৈরি হয়। কেউ পুজো আচারে আবার কেউ সাংস্কৃতিক বিভাগে, কেউ বা আবার ভোগ এবং অতিথিদের পেট পুজোর ব্যাপারটায় রেখেছেন সতর্ক নজর। একশোজনেরও বেশি বাঙালি ও অবাঙালি মিলে আমাদের এই দল - কেউ কলেজ পড়ুয়া, কেউ আবার চাকরিরত। যে যার কাজের ফাঁকেই সময় বার করে হাত মেলাচ্ছে বার্লিন সর্বজনীন দুর্গোৎসব-কে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে।
জার্মানিতে ভারতের রাষ্ট্রদূত, শ্রী পর্ভাথানেনি হরিশ, এই পুজোর উদ্বোধন করবেন। পুজোর ৫ দিন সন্ধেবেলা থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান - নাচ, গান, আবৃত্তি ইত্যাদি। এছাড়াও থাকছে জার্মান ভাষায় ভারতীয় বাচ্চাদের অভিনীত জার্মান শিশু নাটিকা। এই সবই হবে বার্লিনের শ্রী গণেশ হিন্দু মন্দিরের প্রাঙ্গণে। এই বছরের বিশেষ চমক হতে চলেছে মণ্ডপের বাইরের ফুড স্টল গুলি। নানাবিধ দেশীয় খাবার এর সাথে এই ফুড স্টল গুলো চালাবেন আমাদের সদস্য-সদস্যারা ও বার্লিনের বুকে থাকা দেশী রেস্তোরাঁ গুলো। এক জায়গায় অনেক রকমের দেশী খাবারের স্বাদ নিতে আসতেই হবে বার্লিন সর্বজনীন দুর্গোৎসব-এর পুজোয়। এর পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য জন্য থাকছে লাঞ্চ এবং ডিনার, তাও আবার বিনামূল্যে, সৌজন্যে বার্লিনের কিছু ভারতীয় রেস্তোরাঁরা।
দুর্গোৎসবের পাশাপাশি রয়েছে পুজো বার্ষিকী, নাম 'বার্লিন বার্ষিকী'। তাতে থাকছে সদস্য-সদ্যসা ও কচিকাঁচাদের লেখা কবিতা, ছোট গল্প, অঙ্কন ইত্যাদি।
এখন থেকেই বেশ পুজো পুজো ভাব বার্লিনে। অনেকেই দেশ থেকে অনিয়েছেন ধুতি-পাঞ্জাবি ও শাড়ি। চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়াও। পূজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে। নাচে, গানে, আড্ডায়, আলাপে, সম্পূর্ণ দেশী ভাবেই উদযাপন করবো আমরা আমাদের গর্বের এই পূজো। আর শুধু বাঙালি নয়, "ইগনাইট ই.ভি." এর তরফ থেকে বার্লিন সর্বজনীন দুর্গোৎসবে, সাদর আমন্ত্রণ রইলো সকলের জন্য।