31/12/2024
নব্বই দশক নিয়ে নাকি আমরা অযথা আদিখ্যেতা করি! সবারই ছোটবেলা নস্টালজিক তা সে যে দশকই হোক না কেন- এরকম কথা বহু জায়গায় বহুবার শুনেছি। তারপরেও মানুষ নব্বই দশক নিয়ে মাতামাতি করে কেন?
অনেক অনেক কারনের মধ্যে একটা হলো এই নীচের ছবিটা।
আমরা যারা নাইন্টি'স কিডস, আমরা জানি নীচের এই ছবিটা থেকে কীভাবে আমরা দশ টাকায় একশটার মেসেজ কার্ডে পৌঁছেছিলাম, আবার আজ কীভাবে যেন ম্যাজিকাল এই সোশাল মিডিয়ার "whats on your mind" এ এসে দাঁড়িয়েছি।
আমাদের ছোটবেলায় আমরা এক মাস আগে থেকে টাকা চাইতে শুরু করতাম বাড়িতে কার্ড কেনার জন্য। ১৯৯৮/৯৯ এ পঞ্চাশ পয়সায় হাতের তালুর সাইজের ছোট্ট কার্ড পাওয়া যেত। খান কয়েক কেনা হতো একই রকম ছবি দেওয়া, যেগুলো জাস্ট ফ্রেন্ড দের দেওয়ার জন্য। সব একই ছবি, যাতে কারো কম বেশি না লাগে। লাল গোলাপের গোছার নীচে রিবন বাঁধা টেডি, অথবা সুইজারল্যান্ডের চোখ জুড়ানো পটভূমি, বেশির ভাগ এই থিমের কার্ডই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে থাকতো৷ গোলাপের রঙ বদলাতো আর সুইজারল্যান্ডের জায়গায় জোড়া রাজহাঁস কখনও দীঘি তে ঘুরতো...
বেস্ট ফ্রেন্ডের কার্ড টা হতো একটু স্পেশাল, সাইজে বড়, সামান্য বেশি দাম, হয়তো খুললে ভিতরে আরেকটা ভাঁজ থাকতো, আজকালকার থ্রিডি স্টাইলে- অথবা গোলাপের উপর থাকতো বেশ চকচকে অভ্রের আস্তরণ। খামের উপর অভ্র মেশালো কালি দিয়ে গোটা গোটা করে লেখা হতো বন্ধুর নাম।
ভিতরে থাকতো কাঁচা হাতের লেখায় বন্ধুর জন্য শুভেচ্ছাবার্তা-
"একটি গাছে দুটি ফুল,
ফুল দুখানি লাল
তোমার আমার বন্ধুত্ব
থাকবে চিরকাল।" অথবা,
"কলকাতার সাইকেল
বর্ধমানের টিউ,
তোমায় আমি ভালোবাসি
আই লাভ ইউ"
"To" আর "From" এ প্রাপক আর প্রেরকের নাম প্রায়শই উলটো করে বসতো ছোটবেলায়, তাতে অবশ্য শুভেচ্ছার উষ্ণতা অথবা অভিনন্দনের আনন্দ এক ফোঁটাও কমতো না।
আরেকটু বড় হতে হাতে পেলাম মিউজিক বাজা কার্ড, খুব স্পেশাল মানুষ টার জন্য লুকিয়ে কিনে দুরুদুরু বুকে আর কাঁপা হাতে নাম লেখা হতো কার্ডের ভিতর, তারপর মুখবন্ধ খাম খুলে প্রিয় মানুষ যখন খুলতো কার্ডটা, তখনই টি টি সুরে বেজে উঠতো "দিল নে ইয়ে কাহা হায় দিল সে..মহব্বত হো গ্যায়ি হে তুমসে.." প্রিয় মানুষের মুখে তখন যে হাসি ফুটে উঠতো সে হাসি আর দেখিনা আমরা....
আর্চিসের কার্ড ছিলো রীতিমতো লোভনীয় বস্তু, যে পেত আর যে দিতো দুজনেই তখন সেলেব্রিটি।
চেয়ে চেয়ে হাতে নিয়ে পঁচিশ অথবা পঞ্চাশ টাকার সেই কার্ড আমরা দেখতাম অবাক হয়ে, আর পরের বছর কেউ যেন আমাকেও দেয়! এই প্রার্থনা করতাম৷
কত অল্প চাওয়া আর অল্প আনন্দেই আমাদের ছোটবেলাটা ম্যাজিক্যাল হয়ে থাকতো..
এখনও গ্রিটিংস কার্ড পাওয়া যায়, কিন্তু সে কার্ড নিয়ে দেবো কাকে? ডিজিটাল শুভেচ্ছার যুগে সেই সহজ সরল গ্রিটিংস কার্ডের বন্ধুগুলো হারিয়ে গেছে, সোশাল মিডিয়ার শুভেচ্ছা আর নিউ ইয়ার মিমসের ভিড়ে।
এই যেমন আজ ও, স্মৃতিচারণ করছি সেই সোশাল মিডিয়াতেই, তা সে যতই একটা দশ টাকার কার্ডে গোটা গোটা অক্ষরে লিখতে ইচ্ছে হোক, "HAPPY NEW YEAR"
সংগৃহীত
Found on Google from sujnaturelover.wordpress.com