25/08/2025
একটা ছোটো ঘটনা বলি, বেশ কয়েক বছর আগের কথা যাদবপুরের এক প্রাক্তনী ইয়াং ইংরাজির অধ্যাপক বেশ নামডাক করেছেন৷ একটি সরকারি কলেজে পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি সরকারি চাকরির প্রস্তুতির ইংরাজি পড়াতেন। তাতে তাঁর যা আয় হত, তিনি চাইলে নিজেই একটা ছোটোখাটো কলেজ খুলে নিতে পারতেন৷ সারা বাংলা থেকে তাঁর কাছে ছাত্রছাত্রীর পড়তে আসত (মে বি এখনও আসে) তাঁর ব্যাচে জায়গা পেতে গেলে কয়েক মাস আগে নাম লেখাতে হত। আমার এক বান্ধবী তাঁর কাছে ভর্তি হয়। গরীব বাড়ির মেয়ে, পড়াশুনোয় দারুণ। পরিশ্রম করে এম এ কমপ্লিট করেছে৷ পড়াশুনো ছাড়া কিছুই বুঝত না। আমি ফেসবুকে রাজনীতি নিয়ে লিখতাম বলে আমাকেও বকাঝকা করত৷ পড়াশুনো নিয়ে থাকতে বলত৷ হঠাৎ দেখলাম সে কথায় কথায় সব কিছুর জন্য রাষ্ট্রকে দোষারোপ করা শুরু করেছে৷
পরীক্ষা হচ্ছে না, রাষ্ট্র দায়ী। বাবার চোখের অপারেশন হচ্ছে না রাষ্ট্র দায়ী৷ বৃষ্টি হচ্ছে না, রাষ্ট্র দায়ী। এমনকি মাঝে একবার তার প্রেমিকের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যও রাষ্ট্রকে দায়ী করল!
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কী ভাবে?
বলল
-এই যে মানুষের মরালিটি এখন তলানিতে এটাও পুঁজিবাদের এফেক্ট। পুঁজিবাদ মানুষ অসৎ করে।
- কিন্তু তোর প্রেমিক তো SFI করত কলেজে! ও কী করে পুঁজিবাদী হল!
একটু থেমে বলল,
- পুঁজিবাদের হাত থেকে কেউই ছাড় পায় না!
এই সিম্পটমগুলো আমি বেশ চিনি। হঠাৎ কী মনে করে বললাম,
- শোন না আমিও না ইংরাজিটা পড়তে যাবো, তোদের স্যারকে বলে একদিন ব্যবস্থা করা যায়? জাস্ট একটা দিন এই একটা চ্যাপ্টার আমার একটু বুঝতে হত...
কয়েকদিন পর বান্ধবীর ব্যবস্থা মতো ক্লাসে ঢোকার সুযোগ হল। ভদ্রলোক যুবক, সপ্রতিভ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। গলায় একটা টোন তৈরি করে স্পষ্ট ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন। মানতে অসুবিধে নেই ভদ্রলোক বেশ ভালো পড়ান। আমার মতো সাহিত্যফ্রিক ছেলেও বেশ তন্ময় হয়ে গেল পড়ানো শুনতে শুনতে। কথা বলা, উদাহরণ, এক্সপ্লানেশন এর মাধ্যমে এক অদ্ভুত জগৎ তৈরি করতে পারেন ভদ্রলোক, যেন চোখের সামনে সব জিনিসগুলো ঘটছে৷ ইংরাজি সাহিত্যে ভারতীয় লেখক মুলক রাজ আনন্দের একটি অসাধারণ কাজ আছে, 'আনটাচেবল' সেটার রেফারেন্স টেনে কিছু জিনিস বেশ ভালো করে বোঝাচ্ছিলেন ভদ্রলোক। তারপর সেখান থেকে অযোধ্যা, রামমন্দির, আরএসএস, হিন্দুত্বে ঢুকলেন৷ তারপর দারুন সব প্রোপাগাণ্ডা দিয়ে হিন্দুত্ব, রাম, রাষ্ট্র, আরএসএস সবার বাপবাপান্ত করতে শুরু করলেন।
রাম মন্দির গড়তে চাওয়া কতবড় অপরাধ, একটা জাতি কতটা অসভ্য হলে এসবে টাকা নষ্ট করতে চায়, ইত্যাদি প্রভৃতি৷ লেনিনের মতো মানুষ থাকলে এসবকে শায়েস্তা করে দিত৷ লেনিনের দেশ আজও কতটা শিক্ষিত, মানবিক ও উন্নত এসব বলতে লাগলেন৷
লেনিন শব্দটা শুনেই আমার মাথায় সুমমমম করে একটা বুদ্ধি খেলে গেল৷
জিজ্ঞেস করলাম, স্যার এসব মন্দির বানানোতে টাকা পয়সা প্রচুর নষ্ট হয় বলছেন?
- তা নয়ত? এর আউটকাম কী?
- ঠিক, স্যার, আরও জানেন স্যার এমনও লোক আছে তাদের ধর্মগুরুর মৃত্যুর পরও বছরের পর বছর তার শরীর সংরক্ষণ করতে ৫-৬ কোটিটাকা করে খরচ করে।
- ভাবো, কতটা ইউসলেস। এই টাকা ২০ বছর জমলে একটা হাসপাতাল হয়ে যায়। প্রতিবছর কিছু দামী চিকিৎসা সামগ্রী কেনা যায়...
- হ্যাঁ স্যার
- আচ্ছা, এটা কোন ধর্মগুরুর শরীর বলতো?
- বাবা লেনিন, রেডস্কোয়ার মস্কোতে আছে এই লেনিন টম্ব৷ প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে লেনিনের দেশ, লেনিনের শরীর সংরক্ষণে...
হঠাৎ করে রুমে পিন ড্রপ সাইলেন্স তৈরি হয়েছিল। বাম অধ্যাপকের মুখটা থ্রিইডিয়টস সিনেমায় ভাইরাসের মতো হয়ে গিয়েছিল। পেনসিল নিয়ে র্যাঞ্চোর প্রশ্ন শুনে ভাইরাসের যে রকম অবস্থা হয়েছিল।
এবার বিষয় হচ্ছে, মাওবাদী, নকশাল, অতিবামদের বড় হা রা মি পনা হচ্ছে, এরা যখন ২০ টা কু কুরের মতো ঘিরে ধরে কাউকে মা রে তখন সেটা বিপ্লব, শ্রেণী সংগ্রাম। এদের কেউ পাল্টা মা রলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা হয়ে যায় মানবতার হ ত্যা, শিক্ষাঙ্গনে হা ম লা৷
বাংলায় ABVP শেষ ৬০ বছরে যদি ভালো কিছু করে থাকতে পারে তাহলে সেটা হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাওবাদী, নকশালদের ঠিক ওদের ভাষাতে জবাব দেওয়া৷
কিন্তু প্রশ্নটা হল যাদবপুরের মতো গুটি কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের পর বছর মাওবাদী তৈরি করছে কারা? ক্যানসারের পচা সেলটা কোথায়?
অপারেশনটা সেখানে জরুরি৷
এরা কেউ শিক্ষক, কেউ সাংবাদিক, কেউ চিকিৎসক, কেউ অধ্যাপক, কেউ নাট্যকার, কেউ অভিনেতা, কেউ গায়ক, কেউ রাজনীতিবিদ, কেউ ইতিহাসবিদ।
এরা ভয়ঙ্কর, এরা কখনও গান বাঁধবে আমরা অন্য কোথাও যাবো না এদেশেতেই থাকবো, অথচ হিন্দুরা নিজের দেশে মাটি হারা হলে চুপ থাকবে।
এদের মধ্যে কোনও রোমিলা থাপার, সমস্ত ইতিহাসকে মিথ্যে প্রমাণ করে লিখবে, কাশ্মীর বরাবর মু স লিম দের ছিল...
ঠিক ভোট আসার আগেই দেখবেন, এরা অ্যাক্টিভ হয়ে যায়। এদের একটু ধোঁয়া দেওয়া হয়, শাসক দলের তরফ থেকে। বাবা বাছা করা হয়। কারণ এরাই তো ভোটের আগে লেসার ইভিল তৃণমূলের হয়ে 'নো ভোট্টু বিজেপি' ক্যাম্পেন করবে। তাই এদের বাঁচিয়ে রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তাঙ্গন করে দেওয়া তো তৃণমূলেরই দান।
অনেকেই জানেন, তাও একটা মজার তথ্য দিই
পড়াশোনা, গবেষণা নয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বারবার খবরে এসেছে খুন, মারপিট, ঘেরাওয়ের জন্য।
ওয়েবকুপার অনুষ্ঠান ঘিরে বাম-তৃণমূল মারপিট ভাঙচুর করা হল শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি৷
কয়েকদিন আগেই যাদবপুরের উপাচার্য ও অধ্যাপকদের ঘেরাও করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রামের পুজো করতে গিয়ে বাম-অতি ছাত্রদের আক্রমণের মুখে পড়ে ABVP
গত বছর সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরে ঝামেলা হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে
২০২৩ এ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে আক্রান্ত হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী..
২০২৩ সালে র্যাগিং-এ খুন হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্বপ্নদ্বীপ কুণ্ডু
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিসিটিভি বসাতে না দেওয়ার অভিযোগ অতিবামদের বিরুদ্ধে!
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে টবে গাঁজা চাষের অভিযোগ ওঠে!
২০১৯ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র গাড়িতে হামলা..
'বুদ্ধা ইন আ ট্রাফিক জ্যাম' ছবি দেখাতে গিয়ে যাদবপুর ক্যাম্পাসে আক্রান্ত হন বিবেক অগ্নিহোত্রী...
শে খ র ভা র তী য়