12/11/2024
গল্পের নাম - 'কচুরি ও দুধ চা' !
দুঃসময়ে কাউকে পাশে পাওয়া যায় না। বড় একা লাগে। সত্যি তাই। এই উপলব্ধি লাল্টু বাবু করলেন শ্যামবাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে। আসলে সকালে কচুরি টা খাওয়ার পর গরম মালাই চা টা পেটে পড়তেই পেটের ভিতর টা কেমন গুড় গুড় করতে শুরু করলো। থাইল্যান্ড এর ম্যাসাজারদের মত কেউ যেন পেটে মোচড় দিচ্ছে। এদিকে সুলভ শৌচালয় যে যাবে তার জন্য তার কাছে টাকা নেই, নেই বলা ভুল। পকেটে তার 500 টাকার নোট। সুলবে গিয়ে দুর্লভ 500 টাকা দিলে সেখানের কর্মরত লোকটি যে চ্যাঁচা মিচি করবেন তাতে এই প্রকৃতির ডাক আরো প্রকট হতে পারে । এর পর তাকে ঢুকতে না দিলে পুরো ল্যাজে গোবরে অবস্থা হবে , মানে ল্যাজে সত্যি গোবর লেগে যাবে এমন অবস্থা। ঠিক এই সময় লাল্টু বাবুর বুদ্ধি খুললো , তার মাথায় এলো তার মেয়ের শ্বশুর বাড়ি তো কাছেই, মানিকতলায়। সেখানে গিয়ে কাজ টা সেরে নিলেই হয়। শ্যামবাজার থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে 50 টাকা বেশি দিয়ে লাল্টু বাবু পৌঁছলেন মেয়ের শ্বশুর বাড়ি। বাবাকে দেখে মেয়ে আনন্দে আত্মহারা, তার শাশুড়ি মা বলছে বাবা কে বসতে দাও, জল মিষ্টি দাও। কিন্তু লাল্টু বাবুর সেসব দিকে কান নেই। সে মেয়ে কে জিজ্ঞেস করলো হ্যাঁ রে মা তোদের বাথরুম টা কোনদিকে? মেয়ে বললো বাবা বাথরুম তো এই দিকে কিন্তু আমার শ্বশুর মশাই ঢুকেছেন , ওনার একটু টাইম লাগে, চিন্তা নেই পা ধুতে হবে না। লাল্টু বাবুর তো এই কথা শুনে মাথা বন বন করে ঘুরছে, কপাল ঘামে ভিজে যাচ্ছে ,মুখ টা বেঁকে বাংলার 5 এর মত হয়ে যাচ্ছে। মেয়ে জিজ্ঞেস করলো বাবা খুব গরম লাগছে বলো??? এসি চালিয়ে দেব???? লাল্টু বাবুর মুখে কোনো কথা নেই।
পা দুটো কে আঁটোসাঁটো করে দাঁত চেপে ঢোক গিলে বললেন তোদের একটাই বাথরুম?
মেয়ে বললো না আরেকটা আছে তিন তলায় । এই কথা শোনা মাত্র মেয়ে কে পিছনে ফেলে বাবা দৌড়োলো তিন তলায়। বাথরুম ফাঁকা পেয়ে কোনো রকমে জামা কাপড় ছেড়ে বসতেই , উফঃ কি শান্তি। এই শান্তি যেন কোনো কিছুতে নেই। দু দিন আগেই তার বউ তাকে বলেছিল পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে যা শান্তি তা আর অন্য কিছুতে নেই। লাল্টু বাবু সেই কথায় সম্মতি জানিয়েছিলেন, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কোনো পাহাড় টাহার নয় , কমোডের উপর বসার মত শান্তি আর কোনো কিছুতে নেই। যাই হোক কাজ তো হলো , কিন্তু এই শান্তি যে আবার অশান্তি তে পরিণত হবে সেটা লাল্টু বাবু জানতেন না। ফ্ল্যাশ করলেন কিন্তু পুরো জিনিস টা গেল না। অর্ধেক থেকে গেল। এদিকে বাইরে থেকে জামাই বাবাজি হাঁক পেরেছেন - বাবা আপনার হলে বলবেন উপরের বাথরুমে আমি যাবো। মহা মুশকিল জামাই বাথরুমে ঢুকে শ্বশুরের প্রসাদ দেখবে তা কি করে হয়। লাল্টু বাবু আবার ফ্লাশ করলেন তাতেও গেল না, বালতি করে জল দিলেন তাতেও গেল না আবার ফ্ল্যাশ করলেন কিন্তু একি! জল নেই। কল খুললেন জল নেই। ট্যাঙ্কের জল উনি মনে একাই এই কাজে শেষ করে দিয়েছেন। কি করবেন বুঝতে পারছেন না লাল্টু বাবু, একটু আগে যেই বাথরুম কে শান্তির জায়গা মনে হচ্ছিল নিমেষে সেই বাথরুম টাই সব থেকে ভয়ের জায়গায় পরিণত হল।
জল কোথায় পাবেন লাল্টু বাবু এখন ???? কি বলবেন বাইরে অপেক্ষা করা জামাই কে??? কিছু বুঝতে না পেরে নিজের লাইফলাইন বউ কে ফোন করে ফিস ফিস করে সব টা বললেন। বউ সব টা শুনে মুখ ঝামটা দিয়ে বললো- কতবার বলেছি কচুরির সঙ্গে দুধ চা খাবে না কিছুতে তো শুনবে না। ঠিক হয়েছে।
লাল্টু বাবু - ঠিক বেঠিক পরে বিচার করবে, আগে আমায় বাঁচাও । আমি ফেরার পথে তোমার জন্য ভালো ক্লিপ, লিপস্টিক নিয়ে যাবো।
বউ- ঠিক আছে দেখছি।
বউ ফোন টা রেখে দেওয়ার 5 মিনিটের মধ্যে বাথরুম এর দরজায় ঠক ঠক
লাল্টু বাবু - কে ?? আমার একটু টাইম লাগছে আর কি।
মেয়ের শ্বশুর - কেন লাগছে শুনেছি । 3 বালতি জল এনেছি নিয়ে নিন। আর শুনুন এই পরম পূজনীয় জিনিসটার ব্যাপারে কিছু বলতে লজ্জা করবেন না। এমন ঘটনা আপনার মত আমার ও হয়েছিল। আরে দাদা এই কমোড টায় জল ঢাললে একবারে যায়না বলেই তো আমরা নিচের বাথরুম টা বেশি ব্যবহার করি। যাক হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিন।
লাল্টু বাবু তাই করলো। তার পর নিচে নেমে দেখে সে কি দারুন খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। প্লেট ভর্তি কচুরি আর সঙ্গে এক কাপ দুধ চা !!!!