26/08/2025
আজ হারুণ আল রশিদ-এর শুভ জন্মদিন। সৃষ্টিসুখ থেকে প্রকাশিত হয়েছে হারুণ আল রশিদ-এর ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টের সংকলন 'দারুণ আল কিতাব'।
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ - অর্ণব দে
==========
একসময় হারুণ আল রশিদ ফেসবুকে আমার বন্ধুর বন্ধুর বন্ধু ছিলেন। তাঁর প্রথম লেখা কবে পড়েছিলাম আর মনে নেই। তবে ফেসবুক পোস্টগুলো এক জায়গায় করে তাঁর এই বইটা করার ব্যাপারে হাতেপায়ে ধরাধরি করতে হয়েছিল মনে আছে। চেয়েচিন্তে ফোন নাম্বার জোগাড় করেছিলাম। সেদিন নতুন একটা ফ্ল্যাট খোঁজার চেষ্টায় বেরিয়েছি ব্যাঙ্গালোরের রাস্তায়। তার মাঝেই ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে তাঁকে ফোনে ধরলাম। কারণ সেদিন রোববার। তিনি জানিয়েছিলেন রোববার সকালে তিনি ফ্রি (বিনামূল্য নন, ফাঁকা আর কী)। তা জিজ্ঞাসা করলেন – “আমায় কী করতে হবে?” আমি জানালাম, ওঁর পছন্দসই ফেসবুক পোস্টগুলো একটা ওয়ার্ড ডকুমেন্টে গুছিয়ে পাঠাতে হবে। তদ্দিনে প্রকাশক হিসাবে আমার বদনাম তিনি শুনেছেন। তাই একটু গড়িমসি করছেন ফোনের ওদিকে। আর আমি এদিকে চিঁড়ে ভেজানোর চেষ্টা করছি। সেটা বুঝতে পেরে দু-একটা শর্ত চাপানোর চেষ্টা করলেন। “আমার লেখায় কিন্তু স্মাইলি থাকে। ওগুলো থাকবে তো?” আমি জানালাম, থাকবে। তারপর আবার বললেন, “আমি টমটম আর জিয়াকে বইটা উৎসর্গ করতে চাই।” টমটম আর জিয়া কারা আমার জানার কথা নয়। তবু ঘাঁটালাম না। ওঁর বই, উনি মার্গারেট থ্যাচার আর বাবা রামদেবকেও উৎসর্গ করতে পারেন। সংক্ষেপে জানালাম, “ডান।” আবার জিজ্ঞাসা, “আর কী থাকবে?” আমি একটু ঘাড় চুলকে বললাম, “কৃতজ্ঞতা থাকতে পারে। তবে আপনি কারও প্রতি কৃতজ্ঞ না হলে সেটা বাদ দেওয়া যায়।” ওদিক থেকে হাসলেন খানিক। বুঝলাম, কথাটা মনে ধরেছে। যাই হোক, এইভাবে শুরু হল বইয়ের কাজ।
একদিন ফোন করে বললাম, “বইয়ের নাম দারুণ আল কিতাব থাক। হারুণ আল রশিদের সঙ্গে মিলবে বেশ।” উনি বললেন, “থাক।” আরেকদিন বললাম, “বইয়ের শুরুতে ওই লেখাটা দিতে চাই।” জানালাম কোন লেখাটা। উনি কল্পতরু – “থাক।” মনে আছে, কলকাতা বইমেলা ২০১৭-য় এক প্রৌঢ়া আমায় পাকড়াও করে শুরুর সেই লেখাটা পড়িয়েছিলেন – “তুমি পড়েছ বইয়ের শুরুতে কী লেখা আছে?” আমিও একই রকম উৎসাহে জিজ্ঞাসা করলাম, “কী লেখা আছে বলুন তো।” উনি পড়ে শোনালেন – “সৎ লেখা মানে কী? বলি তাহলে। যে লেখা টাকা ধার নিয়ে শোধ দেয়। মানে লিখতে ছাপতে পয়সা তো লাগে। সেই পয়সা যে লাগায়, সে যখন সেই নগদরাশি ফেরত পায়, তখন বলা হয়ে থাকে ‘এই লেখা সৎ’। ইয়ার্কি না!”
যাক, আমি বাদেও একজন অন্তত নির্মল আনন্দ পেয়েছিলেন। তা তাঁকে আরও কিছুটা আনন্দ দিতে সুজিতের ফিল্মের ঘটনাটা পড়তে বললাম। তিনি স্টলের বাইরে পাতা চেয়ার বসে পড়তে শুরু করলেন। আর মাঝে মাঝেই হাসি। সেই যে একটা জায়গায় আছে না – “একদম কচি পাঁঠা। কখনও ফিলিমে পার্ট তো করেইনি, প্লাস জীবনে কোনও প্রেশার সিচুয়েশানেরও সামাল দেয়নি। সে একদম ঝোল হবার জন্য রেডি পাঁঠা।” সেটা পড়ে তিনি আবার আমায় ডেকে শোনাতে গেলেন। আমি অন্য কার সঙ্গে কথা বলছিলাম, দেখি তিনি পাশে বসা ভদ্রলোককে শোনাতে শুরু করলেন। তারপর আরেক প্রস্থ হাসি। আমি যেমন ফেসবুকে কয়েকটা পোস্ট পড়ে তাঁর লেখাগুলো আরও অনেকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছিলাম, তেমনই অনেক পাঠক তাঁর পাশের জনের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন হারুণ আল রশিদের লোক হাসানো কাজ-কারবার।
কোথা থেকে কী যে হয়ে যায় তাঁর লেখায়। মূলত স্মৃতিকথা। কিন্তু “ভূত কিছুতেই রান্না থামাতে না পেরে ওপর থেকে সেই মাংসের কড়াইয়ের ওপর ছ্যার ছ্যার করে মুতে দিল...” এমন কথা অবলীলায় আর কাউকে লিখতে দেখি না। বা সেই হড়পা বানের অভিজ্ঞতা, তাঁবুর মধ্যে বসে গঞ্জিকাসেবন চলছে আর বৃষ্টির জল পা-হাঁটু-পেট ছাপিয়ে উঠছে। খুবই সাধারণ কিছু উপাদান দিয়ে গড়া সুর্যিয়াল সব ফ্রেম।
অর্ণব জানা নিজের মতো করে বইটার প্রচ্ছদ আর অলংকরণ করেছিল। পুরো কাজটাই সুন্দর হয়েছিল। কিন্তু কোনও কারণে প্রচ্ছদটা ঠিক মনের মতো হচ্ছিল না। কী যেন একটা নেই। একটু এদিক সেদিক ঘুরে শেষের দ্বারস্থ হলাম সুমিত রায়ের। সুমিতদা আরবি ক্যালিগ্রাফির টানে বইটার নামাঙ্কণ করে দিয়েছিলেন। পঞ্চাশে পঞ্চাশের আগের পর্বে লিখেছিলাম বইয়ের প্রচ্ছদ দেব না। কিন্তু এই বই তার প্রচ্ছদ ছাড়া কোনোমতেই সম্পূর্ণ নয়। তাই বইটার প্রচ্ছদ আর নামাঙ্কণ রইল।
শেষে বলি, অনেক পাঠকেরই কৌতূহল হারুণ আল রশিদ আসলে কে, কী তাঁর আসল নাম? সত্যি বলতে কী, ভদ্রলোক তাঁর নাম বলেছিলেন বটে, কিন্তু আমার মনে নেই। কারণ ওই কেজো নামটা মনে রাখতে চাইনি। আমার মতো আরও কিছু পাঠকের কাছে তিনি খলিফা। ওইভাবেই থাকুন।
--- রোহণ কুদ্দুস
==========
বইটির প্রাপ্তিস্থান ও অন্যান্য বিবরণী কমেন্টে রইল।