04/07/2025
মহারাণী অহল্যাবাঈ হোলকার - (৩১শে মে ১৭২৫ - ১৩ই আগস্ট ১৭৯৫ )ছিলেন ভারতের মারাঠা মালওয়া রাজ্যের হোলকার রাণী। তিনি তাঁর রাজধানী নর্মদা নদীর তীরে ইন্দোরের দক্ষিণে মহেশ্বর অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যান।
অহল্যাবাঈ ৩১শে মে ১৭২৫ সালে চৌন্ডী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, বর্তমানকালে এটি মহারাষ্ট্রের আহমদনগর জেলায়। তাঁর বাবা মানকোজি রাও শিন্দে গ্রামের পাটিল ছিলেন। সেই সময় মহিলারা বিদ্যালয়ে যেতেন না, কিন্তু অহল্যাবাঈয়ের বাবা তাকে পড়তে ও লিখতে শিখিয়েছিলেন।
ইতিহাসে তাঁর প্রবেশ একটি দুর্ঘটনার মতই ছিল : মল্লার রাও হোলকর, মারাঠা পেশোয়া বালাজী বাজি রাও এর সেবায় নিয়োজিত একজন সেনাপতি এবং মালওয়া অঞ্চলের শাসক ছিলেন।
তিনি একবার পুণে যাওয়ার পথে চৌন্ডি গ্রামে থামেন এবং, কিংবদন্তি অনুযায়ী আট বছর বয়সী অহল্যাবাঈকে গ্রামের মন্দিরের সেবায় নিযুক্ত দেখেন। তার ভক্তি এবং চরিত্র মহিমা অনুধাবন করে, তিনি মেয়েটিকে তাঁর পুত্র খান্দেরাও (১৭২৩–১৭৫৪) এর বধূ হিসাবে হোলকার অঞ্চলে নিয়ে আসেন। ১৭৩৩ সালে তাঁর খান্দেরাও হোলকর এর সঙ্গে বিবাহ হয়।
তিনি ১৭৪৫ সালে তাঁদের পুত্র মালেরাও এবং ১৭৪৮ সালে কন্যা মুক্তাবাঈ এর জন্ম দেন। মালেরাও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন এবং ১৭৬৭ সালে অসুস্থতার কারণে মারা যান।
অহল্যাবাঈ একটি ঐতিহ্য ভেঙ্গেছিলেন, যখন তিনি তাঁর মেয়ের বিবাহ একজন সাহসী কিন্তু দরিদ্র যশবন্তরাও এর সঙ্গে দেন। যশবন্তরাও ডাকাতদের পরাজিত করতে সফল হয়েছিলেন।
১৭৫৪ সালে কুমহের দুর্গ অবরোধের সময় তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। ১৭৫৪ সালে ইমাদ-উল-মুল্ক মুঘল সম্রাট আহমদ শাহ বাহাদুরের মীর বখশীর অনুরোধে কুমহের দুর্গ অবরোধ করেন। খান্দেরাও কুমহের এর যুদ্ধে একটি খোলা পাল্কিতে বসে তাঁর সৈন্যদের পরিদর্শন করছিলেন, তখন জাট সেনাবাহিনীর ছোঁড়া একটি কামানের গোলার আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
১৭৫৪ সালে খান্দেরাও এর মৃত্যুর পর তাঁর পিতা মল্লার রাও তাঁর স্ত্রী অহল্যাবাঈকে সতী হওয়া থেকে বিরত করেন। মল্লার রাও হোলকর ১৭৬৬ সালে তাঁর ছেলে খান্দেরাও এর মৃত্যুর ১২ বছর পর মারা যান। ১৭৬৬ সালে মল্লার রাও এর পৌত্র এবং খান্দেরাও এর একমাত্র পুত্র মালেরাও হোলকর অহল্যাবাঈ এর কর্তৃত্বাধীনে ইন্দোরের শাসক হন, কিন্তু তিনিও কয়েক মাসের মধ্যেই ৫ই এপ্রিল ১৭৬৭ সালে মারা যান।
তাঁর পুত্রের মৃত্যুর পর অহল্যাবাঈ ইন্দোরের শাসক হন। তিনি আক্রমণকারীদের লুটপাট থেকে তাঁর রাজ্য রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে যুদ্ধে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেন। তিনি তুকোজিরাও হোলকরকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।
রানী অহল্যাবাঈ ছিলেন একজন মহান এবং অগ্রণী মন্দির নির্মাতা। তিনি সারা ভারতে শত শত মন্দির ও ধর্মশালা নির্মাণ করেছিলেন।
কাশীর জ্যোতির্লিঙ্গ আদি বিশ্বেশ্বর বা বিশ্বম্ভর নামে পরিচিত ছিল : যা জ্ঞানবাপী কূপের জলে ছিল। ঔরঙ্গজেব মূল মন্দির ধ্বংস করলে রাজমাতা অহল্যাবাঈ হোলকার নতুনরূপে শ্রী বিশ্বনাথ প্রতিষ্ঠা করেন।
সদাচারের প্রতিমূর্তি মহারাণী অহল্যাবাঈ হোলকার সর্বদা মহিলা জগতের প্রেরণাস্রোত হয়ে থাকবেন। তিনি তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরের মৃত্যুর পরে কেবল তাঁর রাজ্যের শাসন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি, তিনি এমন একটি শাসনের উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন যার প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের আদর্শ হতে পারে।
জন্মদিবসে আপনার শ্রী'চরণে শত শত প্রণাম 🙏