28/10/2025
চুপ করে বসে থাকার বান্দা বাসিত কোনও দিনই ছিল না। তাই গা-ঢাকা দেওয়া অবস্থাতেও নিজের মতো করে ছক কষে নেয় সে। যতবার তাকে রাশ টানতে বলে সাজ্জাদ, ততবারই সে বলে, ‘বড়া কুছ করনা হ্যায়।’ দেখতে দেখতে শীত নেমে আসে কাশ্মীরে। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) কাশ্মীরে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গিদের নতুন তালিকা বের করে। তাতে দেখা যায়, সাজ্জাদ-বাসিত একাসনে। বস্তুত যে পোস্টার পড়েছিল দেওয়ালে দেওয়ালে, তাতে সাজ্জাদের আগে বাসিতের নাম। সঙ্গে একমুখ দাড়ি, ঠোঁটে হাসি দেওয়া ছবি। মাথার দাম দু’জনেরই ১০ লক্ষ টাকা করে। উপত্যকায় তখন নিজের প্রভাবে সাজ্জাদকে অনেকটা পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে বাসিত। গোয়েন্দা থেকে পুলিশ বা সেনা — সকলের পয়লা নম্বর টার্গেট হয়ে ওঠে টিআরএফ-এর ‘ছোটা’। ততদিনে অন্তত ১৮ জন পুলিশকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়ে গিয়েছে তার।
কিন্তু তখনও আস্তিনে কী লুকিয়ে রেখেছে, কাউকে টের পেতে দেয়নি বাসিত। দীর্ঘদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও, নিজের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের সব খবরাখবর সে রাখত নিয়মিত। আর সেই ইনপুট থেকেই বাসিত বেছে নিয়েছিল তার পরের টার্গেট।
কাশ্মীর পুলিশের যে ক’জন অফিসারকে জঙ্গিরা সমঝে চলত, তাঁদের একেবারে উপরের দিকে ছিল একটা নাম — ইনস্পেক্টর মশরুর আহমেদ ওয়ানি। পেশিবহুল চেহারা, শরীরে আসুরিক শক্তি। এক ঝলক দেখলে প্রথমেই যে প্রশ্নটি মাথায় আসে — ‘এঁকে এত দিন কেন দেখেননি বলিউডের কেউ!’ হ্যান্ডসাম শব্দটাও গুনে গুনে দশ গোল খাবে মানবে মশরুরের স্মার্টনেসের সামনে।
প্রাণবন্ত, তরুণ অফিসার ছিলেন পরিবার এবং ফোর্সের প্রাণভোমরা। অপারেশনে যাওয়ার সময়ে গলা খুলে ‘বর্ডার’ সিনেমার গান গাইতেন। অপারেশন থেকে ফেরার পথেও গান। আর প্রিয় ছিল ক্রিকেট। বিরাট কোহলির অন্ধ ভক্ত। প্রতি রবিবার শ্রীনগরে নিজের বাড়ির পাশে ইদগা মাঠে ক্রিকেট খেলতেন তিনি। এই রুটিনে ছেদ পড়েনি কখনও। বাড়িতেও তখন খুশির মহল। নতুন অতিথি আসছে যে!
অক্টোবর ২৯, ২০২৩। রবিবার। মশরুর ক্রিকেট খেলছেন ইদগা মাঠে। সার্ভিস রিভলবারও সঙ্গে নেই। মাঠের পাশে সজোরে ব্রেক কষে দাঁড়াল একটা কালো গাড়ি। নেমে এল বাসিত!
তারপর...?
হাড় হিম করা এক একটা অপারেশন। একের পর এক হত্যাকাণ্ড-ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরী হচ্ছিলো কাশ্মীরকে ঘিরে...
সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন 'পহেলগাওঁ : ষড়যন্ত্রের নীল নকশা' বইটি থেকে। পাওয়া যাচ্ছে কলেজ স্ট্রিট সহ সর্বত্র।