কবিতার আলো

কবিতার আলো একটি ত্রৈমাসিক সম্পূর্ণ কবিতার উপর গবেষণামূলক ট্যাবলয়েড।

"ছবি লোকে দেখে। ছবি দেখানোর সুযোগ যতদিন খোলা থাকবে, ততদিন মানুষকে দেখাতে আর নিজের পেটের ভাতের জন্য ছবি করে যাব। প্রতিবাদ...
04/11/2025

"ছবি লোকে দেখে। ছবি দেখানোর সুযোগ যতদিন খোলা থাকবে, ততদিন মানুষকে দেখাতে আর নিজের পেটের ভাতের জন্য ছবি করে যাব। প্রতিবাদ করা শিল্পীর প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব। শিল্প ফাজলামি নয়। যারা প্রতিবাদ করছে না তারা অন্যায় করছে। শিল্প দায়িত্ব। আমার অধিকার নেই সে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার। শিল্পী সমাজের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। সে সমাজের দাস। এই দাসত্ব যদি স্বীকার করে তবে সে ছবি করবে।’' -- এই কথাগুলো আজকের মেরুদণ্ডহীণ বুদ্ধিজীবীদের দেখে যেন আরো বেশি করে প্রয়োজনীয় মনে হয়। যাইহোক সেসব নিয়ে বলার জন্য এই লেখা নয়। উপরের লাইন কটা যাঁর, আজ তাঁর জন্মদিন। চলচ্চিত্রকার হিসেবে আজও অবিস্মরণীয় তিনি। তবে চলচ্চিত্রে আসার কথা ছিল না তাঁর, কেননা তাঁর স্বপ্নের সমস্তটা জুড়ে ছিল নাটক। হ্যাঁ উপরের কথাগুলো কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের। তিনি সিনেমাতে এসেছিলেন একটাই কারণে, কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন সিনেমা একসাথে বহু মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। আর তিনি সর্বদাই সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন তাঁর চলচ্চিত্রকে। আজ এই প্রখ্যাত ব‍্যক্তিত্বর জন্মদিবস। ১৯২৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর ঢাকার জিন্দাবাজারে হৃষিকেশ দাশ লেনের এক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। তাঁর বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হলেও কবিতা ও নাটক লিখতেন। মা ইন্দুবালা দেবী। বাবা-মায়ের এগারোতম এবং কনিষ্ঠ সন্তান তিনি। রাজশাহী কলেজ থেকে আই.এ. এবং বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। ১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় তাঁরা চলে আসেন অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। ১৯৫০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এম.এ. কোর্স শেষ করে পরীক্ষা না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। তাঁর বড় ভাই ওই সময়ের খ্যাতিমান এবং ভিন্ন ধারার লেখক মনীশ ঘটক ছিলেন ইংরেজির অধ্যাপক এবং সমাজকর্মী। আইপিটিএ থিয়েটার মুভমেন্ট এবং তেভাগা আন্দোলনে মনীশ ঘটক সম্পৃক্ত ছিলেন। মনীশ ঘটকের কন্যা মহাশ্বেতা দেবী সমাজচিন্তক। যিনি পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত হয়েছিলেন।

ঋত্বিকের সৃজনশীলতার শুরু কবি এবং গল্পলেখক হিসেবে। এরপর তিনি মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হন আর তারপর চলে যান গণনাট্যের দিকে। কিন্তু এখানে এসেও থিতু হননি তিনি। চলে গেছেন সেলুলয়েডের হাতছানিতে চলচ্চিত্রের দিকে। তাঁর যুক্তি ছিল "একসঙ্গে লক্ষ মানুষের কাছে নিজের কথা এখুনি বলতে চলচ্চিত্রই একমাত্র মাধ্যম।" ঋত্বিকের ভাষ্যমতে তিনি সিনেমার প্রেমে পড়েননি কোনোদিন, তাঁর বলার কথাগুলো কত কম সময়ে কত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, সেই মাধ্যমটাই খুঁজে গেছেন। সিনেমার চেয়ে ভালো কোনো মাধ্যম খুঁজে পেলে সিনেমাকে "লাথি মেরে" চলে যেতেও পিছপা হতেন না তিনি।

চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিকই একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিজের চিত্রনাট্য,পরিচালনা ও প্রযোজনায় নির্মিত ছবিতে নিজেরই চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

‘নাগরিক’ তাঁর প্রথম সিনেমা হলেও প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা নয়। ‘নাগরিক’ বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবনের টানাপোড়নের গল্প। যে গল্প, যে জীবনবোধ, যে তিক্ততা ঋত্বিক দেখেছেন, কোনো ভণিতা না করেই তা বলে গেছেন নাগরিকে। পুরো সিনেমার কাজ শেষ করেও পরে অর্থাভাবে সিনেমাটি আর মুক্তি পায় না (১৯৫২ সালে)। সাতাশ বছরের ঋত্বিকের প্রথম সিনেমা ‘নাগরিক’ মুক্তি পায় তাঁর মৃত্যুর পরে, ১৯৭৭ সালে। ১৯৫৫ সালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা নিয়ে তৈরি করলেন ডকুমেন্টারি ছবি ‘ওঁরাও’।
১৯৫৮ সালে তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম সিনেমা ‘অযান্ত্রিক’। ছবিটির নির্মাণের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছিলেন ঋত্বিক। ছয় থেকে সাতবার কেবল স্ক্রিপ্টই বদলেছিলেন। তাঁর এতো পরিশ্রম বৃথা যায়নি। বাংলা সিনেমার জগতে এটি এখনো এক অবিস্মরনীয় সিনেমা। ‘অযান্ত্রিক’ এক অন্যরকম গল্পের নাম। মানুষ এবং যন্ত্রের ভালোবাসার গল্প এটি। বিমল এবং তার ট্যাক্সি ‘জগদ্দল’ সিনেমার নায়ক-নায়িকা। বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তিনি বললেন এক পরাবাস্তব গল্প। ঋত্বিক বাঙালিকে এক নতুন ঘরানার সিনেমা উপহার দিলেন। নাগরিকের ব্যর্থতার পর মুষড়ে যাওয়া ঋত্বিককে খ্যাতি এনে দিল অযান্ত্রিক। অযান্ত্রিকের বিষয়বস্তু নির্ধারণে তিনি দেখিয়েছেন অতুলনীয় সাহস। জগদ্দলকে অনুভূতিপ্রবণ এক সত্তা হিসেবে কল্পনা করে, তার মধ্যে মানুষিক প্রতিক্রিয়া আরোপ করে সে যুগের দর্শকের কাছে উপস্থাপনের সাহস দেখিয়েছেন ঋত্বিক। ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায় ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’। বাড়ি থেকে পালানো এক ছেলের চোখে শহরকে দেখার গল্প। নাকি ঋত্বিকের গল্পই এটি? তিনি নিজেও তো কয়েকবার পালিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। সে যাই হোক, এটি তাঁর গল্প না হলেও নিজের বাড়ি থেকে পালানোর অভিজ্ঞতার যথার্থ ব্যবহার করেছেন এই সিনেমায়। এরপর একে একে মুক্তি পায় ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ইত্যাদি। এগুলোর প্রথম তিনটি সিনেমাকে ত্রয়ী বলা হয়। দেশভাগের ফলে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে যে শরণার্থী সমস্যা তৈরি হয় তাই-ই ছিল ত্রয়ীর মূল বিষয়বস্তু। ঋত্বিক দেখিয়েছেন দেশভাগ কি করে কোটি কোটি পরিবারকে উদ্বাস্তু করেছে।

১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় ঋত্বিকের শেষ ছবি ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’। এই সিনেমাটি ঋত্বিকের আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্র। মূল চরিত্র একজন মাতাল বুদ্ধিজীবী নীলকণ্ঠ বাগচী, যে তার বন্ধুদের মত সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে নিজেকে বিক্রি করে দেয়নি। নীলকণ্ঠ চরিত্রে অভিনয় করেন ঋত্বিক স্বয়ং। সিনেমাটি ঋত্বিকের আত্মজীবনীমূলক হলেও এটা ১৯৪৭ এর দেশভাগ, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আর নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সময়ের একটি নির্মোহ-নির্মম সমালোচনাও বটে। সুশীল লেখক সত্যজিৎ বসু যখন তাকে বলছেন বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা,নীলকণ্ঠ বাগচীর কণ্ঠে তখন চরম উপহাসের সেই অবিস্মরনীয় ডায়ালোগ, "ভাবো,ভাবো,ভাবা প্র্যাক্টিস করো।”

ঋত্বিক ঘটক বাম ঘরানার রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁর সিনেমাতে সে আদর্শের ছাপ স্পষ্ট। মানুষের জীবনের অভাব-অনটন আর দারিদ্র্যতার চরম রূপ বার বার ধরা দিয়েছে তাঁর ক্যামেরায়। এত বিস্তৃতভাবে নীচুতলার মানুষের গল্প বাঙলা সেলুলয়েডের ফিতায় আজ অব্দি আর কেউ বলেননি।

ঋত্বিক বাঙালির চিত্রপরিচালক ছিলেন। তাঁর ক্যামেরায় উঠে এসেছে বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতি,বাঙালির ধর্মবিশ্বাস,আচার-অনুষ্ঠান,সর্বোপরি বাঙালির জীবনবোধ। শুধু বাঙালিরই নয়,আদিবাসীদের যাপন চিত্রও ফুটে উঠেছে তাঁর সিনেমায়। সত্যজিৎ রায় ঋত্বিকের ‘বাঙালি’ পরিচয়কে তাঁর সবচাইতে ‘গুরুত্বপূর্ণ দিক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "ঋত্বিক মনেপ্রাণে বাঙালি পরিচালক ছিল,বাঙালি শিল্পী ছিল– আমার থেকেও অনেক বেশি বাঙালি। আমার কাছে সেইটেই তার সবচেয়ে বড়ো পরিচয় এবং সেইটেই তার সবচেয়ে মূল্যবান এবং লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য।"
ঋত্বিক কতটা তীব্রভাবে বাঙালি ছিলেন, ঋত্বিক কতখানি নিবিড়ভাবে বাংলার মানুষের ছিলেন তার সবচাইতে বড় প্রমাণ সত্যজিৎ রায়ের এই অকপট সাক্ষ্য।

মূলত পরিচালক হিসেবে খ‍্যাত হলেও সাহিত‍্যিক হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন‍্যসাধারণ। ঋত্বিক ঘটকের গল্পসংগ্রহ'-- যেখানে ঋত্বিক কুমার ঘটকের লেখা ছোটগল্পগুলি সংকলিত আছে। এটি কবি প্রকাশনী ও গ্রন্থিক প্রকাশন সহ বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে তাঁর লেখা বিভিন্ন গল্প রয়েছে। এছাড়া তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে 'মানুষ এবং আরও কিছু' (১৯৭৬), 'যুক্তি তক্কো আর গপ্পো' (১৯৭৭), 'জ্বালা' (নাটক) এবং 'দলিল' (১৯২৫)। এই বইটি বিভিন্ন অনলাইন ও অফলাইন বইয়ের দোকানে পাওয়া যায়, যেমন গ্রন্থিক প্রকাশন।

১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯৪৭ সালের দেশভাগের মর্মবেদনা নিয়ে শরণার্থী হয়ে কলকাতায় চলে আসা — এসব ঘটনা প্রবাহ ঋত্বিকের জীবন দর্শনকে বহুল প্রভাবিত করে। সমাজের বিদ্যমান এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে তৈরি হয় তাঁর বিদ্রোহী মন। পরবর্তীকালে তাঁর শিল্প সৃষ্টিতেও প্রভাব ফেলে এই অনুভূতিগুলো।

দেশ ভাগের বিষয়টা কোনোদিনই মেনে নিতে পারেননি তিনি।একসময় চিৎকার করে বলেছিলেন, “মাতামাতি! বাংলাকে ভেঙে চুরমার করে দিল, আর মাতামাতি! বিক্ষুব্ধ সময়ে মুজরো করব? এটা বদমাইসি! চাই, খুব বেশি করে চাই দুই বাংলার সংস্কৃতিকে এক ফ্রেমে আঁটতে। প্রতিবাদ করাটা দরকার। কিন্তু শালা বুঝল না কেউ।”

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ঋত্বিক কাউকেই কাছে পাননি, মৃত্যুর সময় স্ত্রী সুরমাও ছিলেন বহু দূরে। বিশৃঙ্খল আর বেপরোয়া জীবন আস্তে আস্তে তাঁকে শেষ করে দিচ্ছিলো। ঋত্বিকের শেষ সময়গুলোর সাক্ষী ছিলেন আরেক প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন। তাঁর ভাষায়, “শেষ ক-টা বছর ঋত্বিকের বেঁচে থাকাটাই একটা বিরাট অঘটন।” অসুখে ধুঁকে ধুঁকে ১৯৭৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি রাত ১১.০৫ এ মারা যান আজন্ম ভবঘুরে ভবা। মৃণাল সেন সুরমা ঘটককে খবর পাঠালেন, ‘Ritwik Ghatak expired’। কিন্তু... এক্সপায়ার্ড ঋত্বিক ঘটক তাঁর সৃষ্টির অমরত্বের মহিমায় আজও বাঙালিকে ভাবার প্র্যাকটিস করাচ্ছেন। ক্রমাগত বলেই চলেছেন, “ভাবো, ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো...”

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সফল প্রতিচ্ছবি প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের নাম বাংলার সংস্কৃতিমনষ্ক প্রতিটি ম...
01/11/2025

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সফল প্রতিচ্ছবি প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের নাম বাংলার সংস্কৃতিমনষ্ক প্রতিটি মানুষেরই অতি পরিচিত। এই স্বনামধন্য সাহিত্যিক, মূলত শিশুশিল্পী হিসেবে বহুল জনপ্রিয় হলেও সামাজিক কাহিনিকার হিসেবেও তাঁর স্বমহিমায় বিরাজমান থেকেছেন।

ব্রিটিশ রাজ অধিকৃত তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী, অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহে, ১৯৩৫ সালের ২রা নভেম্বর অর্থাৎ আজকের দিনে এই বিখ্যাত সাহিত্যিকের জন্ম হয়। দেশ ভাগের আগুন থেকে রক্ষা পেতে মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে এপার বাংলায় অর্থাৎ অধুনা পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে বাধ্য হন। এরপর তাঁর পিতার চাকরীসুত্রে তাঁরা বিহার,আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে থেকেছেন। নিজ কর্মক্ষেত্রে এই সাহিত্যিক প্রথম জীবনে একজন শিক্ষকের ভূমিকা পালন করলেও, বর্তমানে তিনি বাংলার অন্যতম বিখ্যাত সংবাদ পত্রিকা "আনন্দবাজার" এর একজন অত্যন্ত উল্ল্যেখযোগ্য সদস্য। এছাড়াও বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা ''দেশ" এর সঙ্গেও বহুল ভাবে যুক্ত তিনি।

শ্রী শ্রী অনুকূলচন্দ্রের দীক্ষিত শিষ্য, শীর্ষেন্দু বাবুর বহু সামাজিক ও আধ্যাত্মিক চেতনামূলক কাহিনীতেই, "র-স্বা" র উল্ল্যেখ পাওয়া যায়, যার মূল অর্থ হল "রাধা-স্বামী", অর্থাৎ সাহিত্যিকের মধ্যে আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা প্রবল ভাবে পরিলক্ষিত হয় তাঁর লেখনীর মাধ্যমেই। লেখকের লেখা বেশ কিছু মুল্যবান ভ্রমণ কাহিনীতেও তাঁর পরিশীলিত লেখনীর ছাপ সুস্পষ্ট পাওয়া যায়। তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ তাঁর লিখিত শিশু ও কিশোর উপন্যাস ও গল্পগুলি, যেগুলি "অদ্ভুতুড়ে" সিরিজ হিসেবে "আনন্দ" প্রকাশনা সংস্থা থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম গল্প "জলতরঙ্গ" শিরোনামে ১৯৫৯ সালে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে ঐ একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে "ঘুণ পোকা" নামক তাঁর প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাস "মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি"। শবর দাশগুপ্ত তাঁর সৃষ্ট অন্যতম জনপ্রিয় একটি গোয়েন্দা চরিত্র। তাঁর সৃষ্টি সম্ভারগুলি,

#উপন্যাস
◆ যাও পাখি ১৯৭৬
◆ উজান
◆ কাগজের বউ
◆ কীট
◆ ক্ষয়
◆ চোখ
◆ জাল
◆ দিন যায়
◆ দূরবীন
◆ পারাপার
◆ ফুলচোর
◆ বিকেলের মৃত্যু
◆ মানবজমিন
◆ ঘুণ পোকা
◆ আশ্চর্য ভ্রমণ
◆ রঙীন সাঁকো
◆ পাপ
◆ তিন হাজার দুই
◆ নয়নশ্যামা
◆ হৃদয়বৃত্তান্ত
◆ নানা রঙের আলো
◆ গয়নার বাক্স
◆ অসুখের পরে
◆ গতি
◆ প্রজাপতির মৃত্যু ও পুর্নজন্ম
◆ দ্বিতীয় সত্তার সন্ধানে
◆ আদম ইভ ও অন্ধকার
◆ নীচের লোক উপরের লোক
◆ ক্রীড়াভূমি
◆ সম্পত্তি
◆ তিথি
◆ পার্থিব
◆ চক্র
◆ আলোয় ছায়ায়
◆ আলোর গল্প ছায়ার গল্প
◆ ঋণ
◆ কাপুরুষ
◆ কালো বেড়াল সাদা বেড়াল
◆ গুহামানব
◆ দ্বিচারিনী
◆ নীলু হাজরার হত্যা রহস্য
◆ পিদিমের আলো
◆ ফজল আলি আসছে
◆ মাধব ও তার পারিপার্শ্বিক
◆ লাল নীল মানুষ
◆ শ্যাওলা
◆ শিউলির গন্ধ
◆ সাঁতারু ও জলকন্যা
◆ সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে
◆ ছায়াময়
◆ দৃশ্যাবলী
◆ বোধন ও বিসর্জন
◆ এই সব পাপটাপ
◆ হাটবার
◆ চেনা অচেনা
◆ যুগলবন্দী
◆ সেই আমি
◆ বাসস্টপে কেউ নেই
◆ কাছের মানুষ
◆ হরিপুরের হরেককান্ড
◆ বাঙালের আমেরিকা দর্শন
◆ একাদশীর ভূত
◆ ওয়ারিশ
◆ চারদিক
◆ গোলমাল
◆ আক্রান্ত
◆ ফেরীঘাট
◆ মাধুর জন্য
◆ জোড়বিজোড়
◆ বড়সাহেব
◆ নেকলেস
◆ নরনারী কথা
◆ খুদকুঁড়ো

#অদ্ভুতুড়ে_সিরিজ
◆ মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি - ১৯৭৮
◆ গোঁসাইবাগানের ভূত - ১৯৭৯
◆ হেতমগড়ের গুপ্তধন - ১৯৮১
◆ নৃসিংহ রহস্য - ১৯৮৪
◆ বক্সার রতন - ১৯৮৪
◆ ভুতুড়ে ঘড়ি - ১৯৮৪
◆ গৌরের কবচ - ১৯৮৬
◆ হিরের আংটি - ১৯৮৬
◆ পাগলা সাহেবের কবর - ১৯৮৭
◆ হারানো কাকাতুয়া - ১৯৮৭
◆ ঝিলের ধারে বাড়ি - ১৯৮৮
◆ পটাশগড়ের জঙ্গলে - ১৯৮৯
◆ গোলমাল - ১৯৮৯
◆ বনি - ১৯৯০
◆ চক্রপুরের চক্করে - ১৯৯০
◆ ছায়াময় - ১৯৯২
◆ সোনার মেডেল - ১৯৯৩
◆ নবিগঞ্জের দৈত্য - ১৯৯৪
◆ কুঞ্জপুকুরের কাণ্ড - ১৯৯৫
◆ অদ্ভুতুড়ে - ১৯৯৬
◆ পাতালঘর - ১৯৯৬
◆ হরিপুরের হরেক কাণ্ড - ১৯৯৭
◆ দুধসায়রের দ্বীপ - ১৯৯৭
◆ বিপিনবাবুর বিপদ - ১৯৯৮
◆ নবাবগঞ্জের আগন্তুক - ১৯৯৯
◆ ষোলো নম্বর ফটিক ঘোষ - ২০০০
◆ গজাননের কৌটো - ২০০১
◆ ঝিকরগাছায় ঝঞ্ঝাট - ২০০২
◆ রাঘববাবুর বাড়ি - ২০০৩
◆ মোহন রায়ের বাঁশি - ২০০৪
◆ সাধুবাবার লাঠি - ২০০৫
◆ ঘোরপ্যাঁচে প্রাণগোবিন্দ - ২০০৫
◆ ডাকাতের ভাইপো - ২০০৭
◆ অঘোরগঞ্জের ঘোরালো
ব্যাপার - ২০০৮
◆ উঁহু - ২০০৯
◆ গোলমেলে লোক - ২০১০
◆ বটুকবুড়োর চশমা - ২০১১
◆ ময়নাগড়ের বৃত্তান্ত - ২০১১
◆ অষ্টপুরের বৃত্তান্ত - ২০১২
◆ মদন তপাদারের বাক্স - ২০১২
◆ সর্বনেশে ভুল অঙ্ক - ২০১৪
◆ ভলু যখন রাজা হল - ২০১৫
◆ হাবু ভুঁইমালির পুতুল - ২০১৬
◆ নন্দীবাড়ির শাঁখ - ২০১৭
◆ জং বাহাদুর সিংহের নাতি - ২০১৭
◆ আসমানির চর - ২০১৮
◆ গড় হেকিমপুরের রাজবাড়ি - ২০১৯

#গল্প
◆ একটুখানি বেঁচে থাকা
◆ গঞ্জের মানুষ
◆ উকিলের চিঠি
◆ ঘণ্টাধ্বনি
◆ হারানো জিনিস
◆ লড়াই
◆ মশা
◆ একটা দুটো বেড়াল
◆ বাঘ
◆ খানাতল্লাস
◆ ক্রিকেট
◆ ভেলা
◆ চিড়িয়াখানা
◆ শুক্লপক্ষ
◆ হাওয়া-বন্দুক
◆ খবরের কাগজ
◆ তৃতীয় পক্ষ
◆ ইচ্ছে
◆ পুনশ্চঃ
◆ কথা
◆ পুরোনো চিঠি
◆ হরীতকী
◆ বনমালীর বিষয়
◆ সূত্রসন্ধান
◆ আশ্চর্য প্রদীপ
◆ ঘরের পথ
◆ প্রিয়া মধুবন
◆ আমি সুমন
◆ দৈত্যের বাগানে শিশু
◆ ট্যাংকি সাফ
◆ লুলু
◆ ওষুধ
◆ বন্দুকবাজ
◆ জমা খরচ
◆ অনুভব
◆ সুখের দিন
◆ গর্ভনগরের কথা
◆ খগেনবাবু
◆ সাঁঝের বেলা
◆ সংবাদ
◆ অপেক্ষা
◆ হাওয়া বদলের চিঠি
◆ ভাগের অংশ
◆ দেখা হবে
◆ সম্পূর্ণতা
◆ খেলা
◆ বৃষ্টিতে নিশিকান্ত
◆ চিঠি
◆ জ্যোৎস্নায়
◆ মাসী
◆ হলুদ আলোটি
◆ প্রতীক্ষার ঘর
◆ উত্তরের ব্যালকনি
◆ সাপ
◆ স্বপ্নের ভিতরে মৃত্যু
◆ আত্মপ্রতিকৃতি
◆ মৃণালকান্তির আত্মচরিত
◆ ভুল
◆ চারুলালের আত্মহত্যা
◆ আমাকে দেখুন
◆ কার্যকারণ
◆ তোমার উদ্দেশে
◆ অবেলায়
◆ সেই আমি
◆ খেলার ছল
◆ পটুয়া নিবারণ
◆ সাদা ঘুড়ি
◆ উড়োজাহাজ
◆ কীট
◆ বয়স
◆ রাজার গল্প
◆ সোনার ঘোড়া
◆ মুনিয়ার চারদিক
◆ ডুবুরী
◆ নীলুর দুঃখ
◆ সাধুর ঘর
◆ সুখ দুঃখ
◆ আমরা
◆ শেষবেলায়
◆ পুরনো দেওয়াল
◆ চিহ্ন
◆ বন্ধুর অসুখ
◆ কয়েকজন ক্লান্ত ভাঁড়
◆ ছবি
◆ দূরত্ব
◆ ঝড়
◆ সাইকেল
◆ সম্পর্ক
◆ মনে থাকা
◆ পয়মন্ত
◆ দুর্ঘটনা
◆ দৌড়
◆ বিয়ের রাত
◆ মুহূর্ত
◆ লক্ষ্মীপ্যাঁচা
◆ ঘরজামাই
◆ নবদূর্গা
◆ হ্যাঁ
◆ জন্ম
◆ সংসার
◆ বানভাসি
◆ হাতুড়ি
◆সংলাপ
◆ কৈখালির হাটে
◆ ক্রীড়াভূমি
◆ রাজার বাগানে
◆ নসিরাম
◆ বুদ্ধিরাম
◆ গন্ধটা খুব সন্দেহজনক

এছাড়াও তাঁর সৃষ্ট জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র "শবর"কে কেন্দ্র করে রচিত প্রাপ্তবয়স্ক উপন্যাসগুলিও পাঠক মহলে সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। এই উপন্যাসগুলি এবং অদ্ভুতুড়ে সিরিজ এর বহু কাহিনিই সেলুলয়েডের পর্দায় ছায়াছবি রূপে বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ আত্মপ্রকাশ করে চলেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য,

◆ আজব গাঁয়ের আজব কথা
◆ বাঁশিওয়ালা
◆পাতালঘর
◆ গোঁসাইবাগানের ভূত
◆ দোসর
◆ কাগজের বৌ
◆ গয়নার বাক্স
◆ ছায়াময়
◆ সাধুবাবার লাঠি
◆ মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি
◆ ঈগলের চোখ
◆ আসছে আবার শবর
◆ হীরের আংটি
◆আশ্চর্য প্রদীপ
◆ এবার শবর

সাহিত্যে তাঁর অবদানকে বেশ কিছু পুরষ্কার দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছে। সেগুলি হলো,

◆ বিদ্যাসাগর পুরস্কার (১৯৮৫) -
◆ শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য।
◆ আনন্দ পুরস্কার (১৯৭৩ ও ১৯৯০)
◆ সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৮৮)-
মানবজমিন উপন্যাসের জন্য।
◆ বঙ্গবিভূষণ (২০১২)

এই স্বনামধন্য বর্ষীয়ান সাহিত্যিক আজ ৮৯ তম জন্মতিথি তে পদার্পণ করলেন। আজকের এই শুভ দিনটিতে "কবিতার আলো" পরিবারের পক্ষ থেকে সাহিত্যিকের প্রতি রইল জন্মদিনের আন্তরিক শ্রদ্ধার্ঘ‍্য।।

ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম রোম্যান্টিক কবি জন কিটস। লর্ড বায়রন ও পার্সি বিশি শেলির সাথে সাথে তিনিও ছিলেন দ্বিতীয় প্রজন্মে...
31/10/2025

ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম রোম্যান্টিক কবি জন কিটস। লর্ড বায়রন ও পার্সি বিশি শেলির সাথে সাথে তিনিও ছিলেন দ্বিতীয় প্রজন্মের রোমান্টিক কবিদের অন‍্যতম। জন কিটস ১৭৯৫ সালের ৩১ অক্টোবর অর্থাৎ আজকের দিনে লন্ডনের মুরগেটের এক আস্তাবলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা থমাস কিটস এবং মা ফ্রান্সিস জেনিং। ২০০ বছর আগের কথা। লন্ডন শহরের প্রাণকেন্দ্রে ছিল একটি আস্তাবল। এমনি একটি আস্তাবলের পরিচালক ছিলেন টমাস কিটস। নিচে ছিল আস্তাবল, আর তার উপরে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন টমাস। স্ত্রী ছিলেন ওই আস্তাবলের মালিকের মেয়ে। কাজের প্রয়োজনে টমাসকে যেতে হতো মালিকের বাড়িতে। সেখানেই দুজনের দেখা, তারপর প্রেম, একদিন বিবাহ। বিবাহের এক বছর পর ১৭৯৫ সালের অক্টোবর মাসে টমাস কিটস ও ফ্রান্সিস জেনিং দম্পতির প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। যথাসময়ে শিশুর নামকরণ করা হলো জন কিটস।

কবিতা ছাড়া কিটস কোনো গদ্য লেখার চেষ্টা করেননি। তাঁর কবিতা ইন্দ্রিয় বিষয়বস্তু কেন্দ্রিক। তাঁর কাব্যজীবন ছিল মাত্র ছয় বছর (১৮১৪-১৮১৯)। অর্থাৎ তাঁর উনিশ বছর বয়স থেকে চব্বিশ বছর বয়স পর্যন্ত। তাঁর মৃত্যুর মাত্র চার বছর আগে তাঁর সৃষ্টিগুলো প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সমালোচকদের দৃষ্টিতে তাঁর কবিতা খুব একটা উচ্চ মর্যাদা পায়নি। তবে তাঁর মৃত্যুর পর কবিতাগুলো সঠিক মূল্যায়ন পেতে শুরু করে। ১৮১৭ সালে ৩০ টি কবিতা ও সনেটের সমন্বয়ে Poems শিরোনামে প্রকাশিত হয় কিটসের কাব্য সংকলন। এই কবিতাগুচ্ছ কিটসকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিদের পাশে স্থান দিয়েছে। কিটসের বিখ্যাত কবিতা গুলোর মধ্যে রয়েছে 'The Eve of St Agnes', 'La Belle Dame Sans Merci', 'Ode to a Nightingale', 'To Autumn', 'Ode On A Gracian Urn' ইত্যাদি। ইংরেজি ভাষায় পাঁচটি বিখ্যাত Ode এর মধ্যে 'Ode to a Nightingale' অন্যতম। 'Ode On A Gracian Urn' এ কিটসের একটি বিখ্যাত উক্তি হলঃ "Beauty is truth, truth beauty that is all Ye know on earth, and all ye need to know." উনিশ শতকের শেষ দিকে তিনি অন্যতম জনপ্রিয় ইংলিশ কবি হিসেবে স্বীকৃতি পান। পরবর্তীকালে অসংখ্য কবি-সাহিত্যিকের ওপর তাঁর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। হোর্হে লুইস বোর্হেসের মতে, কিটসের লেখার সাথে প্রথম পরিচয় তাঁর সাহিত্যিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।

কিটস প্রথমে এনফিল্ডের একটি স্কুলে ভর্তি হন। দিন-রাত পড়াশোনা নিয়ে থাকেন। মাঝে মাঝে মনের খেয়ালে কবিতা লেখেন। ১৫ বছর বয়সে স্কুলের পড়া শেষ হলো। কিটসের অভিভাবকের ইচ্ছা কিটস ডাক্তারি পড়বেন। ডাক্তারি পড়ার জন্য ভর্তি হলেন মেডিকেল কলেজে। কিন্তু যার মনের মধ্যে জেগে উঠেছে কবিতার নেশা, হাসপাতালের ছুরি কাঁচি ওষুধ রোগী তার ভালো লাগবে কেন। সৌভাগ্য সেই সময় তার স্কুলের বন্ধু কাউডেন ক্লার্ক কিটসকে নিয়ে গেলেন সেই সময়ের খ্যতিমান তরুণ কবি লে হান্টের কাছে। হান্টের সাথে পরিচয় কিটসের জীবনে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। হান্ট কিটসের কবিতা পড়ে মুগ্ধ হলেন, তাঁকে আরো কবিতা লেখার জন্য উৎসাহিত করলেন। হান্ট একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন। সেই পত্রিকাতেই কিটসের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হলো। এখানে কিটসের পরিচয় হলো শেলির সাথে। আর ডাক্তারির মোহে নিজেকে বেঁধে রাখতে পারলেন না। অভিভাবকের উপদেশ অগ্রাহ্য করে ১৮১৬ সালে মেডিকেল কলেজ ছেড়ে দিয়ে পরিপূর্ণ ভাবে কবিতায় মনোনিবেশ করেন। ১৮১৮ সালে কিটসের ভাই টম মারাত্মকভাবে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন এবং কিটস তার সেবা যত্ন করেন। কিন্তু টম ডিসেম্বরে মারা যান। এর পরে কিটস তার বন্ধু চার্লস ব্রাউনের হ্যাম্পস্টেডর বাসায় চলে আসেন। এখানে এসে কিটস ফ্যানি ব্রন নামে ১৮ বছরের এক তরুণী প্রতিবেশীর প্রেমে পড়ে যান। ফ্যানি ব্রন, সুন্দরী এক প্রাণোচ্ছল তরুণী। ফ্যানি তার মায়ের সাথে ব্রাউনের বাড়ির ভাড়াটিয়া হয়ে এসেছিল। কয়েক দিনের পরিচয়ে ভালো লেগে গেল দুজনের। কিটস ফ্যানিকে বিবাহ করতে চাইলেন। ফ্যানি সম্মত হলেও সংসার অভিজ্ঞ মিসেস ব্রন তৎক্ষণাৎ কোনো সম্মতি দিলেন না। বললেন, আগে কিটস স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক তারপর বিয়ে হবে। কিটস স্থির করলেন যেমন করেই হোক তাকে অর্থ উপার্জন করতেই হবে। স্বাস্থ্য আগের মতো ভালো যাচ্ছিল না। কিন্তু মনের অদম্য শক্তিতে কিটস লিখে চললেন একের পর এক কবিতা। এর পর থেকেই কিটসের সৃষ্টিশীল সময়ের সূচনা হয়। প্রকৃতপক্ষে কিটসের জীবনের সমস্ত শ্রেষ্ঠ কবিতাই এই সময়ে লেখা।

অল্পদিনের মধ্যে কিটস প্রকাশ করলেন তার প্রথম কবিতা সংকলন। সকলের মনে আশা ছিল এই বই নিশ্চয়ই জনপ্রিয় হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য কিটসের, পরিচিত কিছু লোকজন ছাড়া এই বইয়ের একটি কপিও বিক্রি হলো না। প্রথম কাব্য সংকলনের ব্যর্থতায় সাময়িক আশাহত হলেন কিটস। কিন্তু অল্পদিনেই নতুন উৎসাহে শুরু করলেন কাব্য সাধনা। লেখা হলো প্রথম দীর্ঘ কবিতা এন্ডিমিয়ন। এ এক অসাধারণ কবিতা। এই কবিতার প্রথম লাইনের মধ্যেই কিটসের জীবন দর্শন ফুটে উঠেছে, "A thing of beauty is joy forever." -- কিটস আশা করেছিলেন তার এই কবিতা নিশ্চয়ই খ্যাতি পাবে। কিন্তু তৎকালীন দুটি পত্রিকা ব্ল্যাকউড ম্যাগাজিন এবং কোয়াটার্লি রিভিউ তীব্র ভাষায় কিটসের নামে সমালোচনা করল। জঘন্য সে আক্রমণ। এই তীব্র বিদ্বেষপূর্ণ সমালোচনা প্রকৃতপক্ষে কিটসের মানসিক শক্তিকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল। তা ছাড়াও আর্থিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না কিটসের। কিটসের শরীর যতই ভেঙে পড়ছিল ততই ফ্যানি তার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। তার সাজগোজ হাসি, অন্য ছেলেদের সাথে মেলামেশা কিটস সহ্য করতে পারতেন না। তাঁর সমস্ত অন্তর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত।

লন্ডনে ফিরে এলেন কবি জন কিটস। একদিন বাইরে বেড়াতে বেরোলেন তিনি। বাড়িতে ফিরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এল, সেই সাথে কাশি। এক ঝলক রক্ত উঠে এল মুখ দিয়ে। কিটস বললেন, একটি মোমবাতি নিয়ে এস। ব্রাউন মোমবাতি নিয়ে আসতেই কিটস কিছুক্ষণ রক্তের দিকে চেয়ে বললেন, এই রক্তের রং আমি চিনি, এ রক্ত উঠে এসেছে ধমনী থেকে। এই রক্ত আমার মৃত্যুর সমন। ডাক্তার এল। সে যুগে যক্ষ্মার কোনো চিকিৎসা ছিল না। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে শিরা কেটে কিছুটা রক্ত বের করে দেয়া হলো। কিন্তু তাতে কোনো সুফল দেখা গেল না। তখন তার বয়স মাত্র পঁচিশ। গলার স্বর ভেঙে গিয়েছিল, মাঝে মাঝেই জ্বর হতো, গলা দিয়ে রক্ত উঠে আসত, এই সময় তার সৃষ্টির উৎসও ফুরিয়ে আসছিল।

১৮২০ সালের শুরুর দিকে কিটসের যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। ওই বৎসরের জুলাই মাসে তার কবিতার দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশ হয় কিন্তু তখন সে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেপ্টেম্বরে উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে কিটস ও তার বন্ধু জোসেফ সেভার্ন ইতালি গমন করেন। তারা আশা করেছিলো এতে কিটসের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। তারা যখন রোমে পৌঁছন তখন কিটস অসুস্থতার কারণে বিছানায় পড়ে যান। কিটসের বন্ধু সেভার্ন তাঁকে যথাসাধ্য সেবা যত্ন করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ১৮২১ সাল। সমস্ত দিন কেমন আচ্ছন্ন ছিলেন কিটস। রাত তখন প্রায় এগারোটা, মাথার পাশে বসে ছিল বন্ধু সেভার্ন। আস্তে আস্তে কিটস বললেন, "আমাকে তুলে ধর, আমার মৃত্যু এগিয়ে এসেছে। আমি শান্তিতে মরতে চাই, তুমি ভয় পেয়ো না-ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, অবশেষে মৃত্যু এল।" ২৫ বছর বয়সে ১৮২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী ইতালীর রোমে সেভার্নের কোলেই চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়লেন চিরসুন্দরের কবি কিটস। মৃত্যুৃর পর তাঁকে রোমের প্রটেস্টান্ট সিমেটারিতে কবর দেয়া হয়। তাঁর সমাধিলিপিতে লেখা রয়েছেঃ "Here lies One Whose Name was writ in Water." দুই বছর পরে এই সমাধিক্ষেত্রেই সমাধি দেয়া হয় আরেক তরুণ কবি শেলিকে।

কবিতায় কল্পনার সৌন্দর্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন কিটস। সৌন্দর্যই ছিল তাঁর কাছে শেষ সত্য, আর কল্পনার মধ্য দিয়েই তাতে উপনীত হওয়া যায় বলে মনে করতেন তিনি। মাত্র ২৫ বছর বয়সে শেষ হয়ে গিয়েছিলেন জন কিটস। ইতিহাস বলছে, যক্ষ্মাই কেড়ে নিয়েছিল এই তরুণ কবির প্রাণ। কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে, কিটসের এই অকাল মৃত্যুর পেছনে অনেকাংশেই দায়ী ছিলেন তাঁর পানাসক্ত মা ফ্রান্সেস কিটস। অন্তত এমনটাই মনে করেন লন্ডনের কিটস ফাউন্ডেশনের প্রধান অধ্যাপক নিকোলাস রো। তবে সব বিতর্ক পেরিয়ে এটাই সত্যি, অকালে চলে গিয়েছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিক কবি জন কিটস অনেক ক্ষত নিয়ে, আর তাঁর ভবিষ্যতের গুণমুগ্ধদের অনেক আক্ষেপ দিয়ে।।

 #তারার_জন্ম সুকুমার রায়"ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল!!" অথবা, "শুনেছ কি বলে গেল সীতানাথ বন্দ্যো?   আকাশের গায়ে নাকি টকটক গ...
29/10/2025

#তারার_জন্ম
সুকুমার রায়

"ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল!!"
অথবা,
"শুনেছ কি বলে গেল সীতানাথ বন্দ্যো?
আকাশের গায়ে নাকি টকটক গন্ধ ?"

ছেলেবেলায় বহুল পঠিত এহেন চিরস্মরণীয় বহু গল্প,ছড়া ও কবিতার স্মরণীয় স্রষ্টা, প্রবাদ প্রতিম কবি,শিল্পী এবং সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের আজ জন্মদিবস। ১৮৮৭ সালে আজকের দিনে অর্থাৎ ৩০শে অক্টোবর কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সুকুমার ছিলেন বাংলার আরেক প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর পুত্র। সুকুমারের মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন‍্যা। তাঁর আদিনিবাস বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা) কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে। সুবিনয় রায় ও সুবিমল রায় তাঁর দুই ভাই। এ ছাড়াও তাঁর তিনবোন ছিল, তাঁরা হলেন সুখলতা, পুণ্যলতা ও শান্তিলতা।

আপামর বঙ্গবাসীর এক সহজ সরল কৌতুক রসসিক্ত কাব্যের সঙ্গে হাতেখড়ি হয় সুকুমার রায়ের লেখনীর দ্বারা। বঙ্গ মননের এক দর্পণ রূপে মনে করা হয় তাঁর স‍ৃষ্টিগুলিকে। কারণ তাঁর রচনায়, আঁকায়, সমাজের প্রচলিত ভাব ধারার মধ্যে যা কিছু খারাপ, কটূ, সেই সব কিছুর বিরূদ্ধে এক প্রতিবাদ ফুটে উঠতো সর্বদা, কিন্তু সেই প্রতিবাদের ভাষা হত কৌতুকপূর্ণ, যা পড়ে ৮ থেকে ৮০ আজও অনাবিল আনন্দ পায়। তিনি নির্ভেজাল হাস্যরসাত্বক ছড়া ও গল্পের মাধ্যমে শিশু মনের সুকোমল হৃদয়বৃত্তিকে ছুঁয়ে যেতেন। রচনা করেছেন অসংখ্য কাব্য ও কাহিনীর, যেগুলির মধ্যে প্রধান সাদৃশ্যই হলো নির্মল হাস্যরস, যা অচিরেই বিষাদগ্রস্থ মনেও নির্ভেজাল আনন্দের বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হত। বিখ্যাত কাব্য সঙ্কলন, "আবোল তাবোল" এর রচয়িতাকে ভোলে, এমন সাধ্য বোধকরি কোন বাঙালিরই নেই আজ অবধি।

বাঙালির অতি প্রিয় সাহিত্যিক, শিল্পী ও পরিচালক সত্যজিৎ রায় হলেন সুকুমার রায়ের সুপুত্র।

সুকুমার রায়, বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি করে গেছেন এক অনুনকরণীয় সম্ভার, সেইসঙ্গে চিত্রকলায়ও সমান পারদর্শী ছিলেন এই বহুমূখী প্রতিভাধর মানুষটি।

১৯২৩ সালে ১০ই সেপ্টেম্বর কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এই প্রবাদপ্রতীম সাহিত‍্যিক, সেই সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না।
তাঁর সৃষ্টির মাঝেই চিরঅমরত্ব লাভ করেছেন তিনি, তাই সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের পার্থিব দেহের মৃত্যু ঘটলেও, তিনি আজীবন এই বঙ্গ মননে এক চির বিস্ময়কর প্রতিভা হিসেবেই অমর হয়ে থাকবেন।।

প্রকাশিত হল এমাসের ব্লগজিন৷ কলমচিদের শুভকামনা জানাই৷ পড়ুন ও শেয়ার করে অন্যদের পড়ান।
28/10/2025

প্রকাশিত হল এমাসের ব্লগজিন৷ কলমচিদের শুভকামনা জানাই৷ পড়ুন ও শেয়ার করে অন্যদের পড়ান।

রাত্রি শীতল হলে দিনের সূচনা হয়। রাত্রির পাখিগুলো দিনের আলোতে ফেরে। জলত্রাসে ফিরে আসে নদীর  কোলাহল। শিশিরের মৃত্.....

 #তারার_জন্ম যোগীন্দ্রনাথ সরকারযোগীন্দ্রনাথ সরকার একজন খ্যাতনামা বাঙালি শিশুসাহিত্যিক। ২৮শে অক্টোবর অর্থাৎ আজকের দিনে তি...
27/10/2025

#তারার_জন্ম
যোগীন্দ্রনাথ সরকার

যোগীন্দ্রনাথ সরকার একজন খ্যাতনামা বাঙালি শিশুসাহিত্যিক। ২৮শে অক্টোবর অর্থাৎ আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রায় একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর বইগুলি ছোটদের মনোরঞ্জন করে আসছে। ছোটদের অক্ষর পরিচয় থেকে সাহিত্যরস পরিবেশনের এক আকর্ষণীয় ও অভিনব কৌশল অবলম্বন করে তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যে পথিকৃতের সম্মান লাভ করেন। বাংলা শিশু সাহিত‍্যের অন‍্যতম শ্রেষ্ঠ ছড়াকার হিসেবেও অভিহিত করা হয় তাঁকে।

১৮৬৬ সালের ২৮শে অক্টোবর দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার নেতড়াতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি নিবাস যশোহর। তাঁর পিতার নাম নন্দলাল সরকার। নন্দলাল সরকার যশোরের একটি দরিদ্র কায়স্থ পরিবারের মানুষ ছিলেন। তিনি পরবর্তী কালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে থাকতে আরম্ভ করেন। বিখ্যাত চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ নীলরতন সরকার যোগীন্দ্রনাথ সরকারের দাদা। যোগীন্দ্রনাথ সরকার ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী ছিলেন। দেওঘর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কলকাতা সিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি নিজের প্রথাগত পড়াশোনা শেষ করতে পারেন নি।

সিটি কলেজিয়েট স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করতে আরম্ভ করেন মাত্র পনের টাকা বেতনে। এ সময় থেকেই তিনি শিশু সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হন এবং শিশুসাহিত্য রচনা করতে আরম্ভ করেন। আজগুবী ছড়া রচনায় তিনি খুব দক্ষ ছিলেন। তাঁর সংকলিত বই হাসি ও খেলা ১৮৯১ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি সখা, সখী, মুকুল, বালকবন্ধু, বালক, সন্দেশ প্রভৃতি ছোটদের পত্রিকায় লিখতেন। তিনি মুকুল পত্রিকাটি সম্পাদনাও করেছিলেন।

তিনি ছবির সাহায্য অক্ষর চেনাতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তাঁর কবিতাগুলির সাথে সুন্দর ছবি থাকত যা ছোটদের মনে এক কল্পনার জগৎ সৃষ্টি করত। ছোটদের জন্য লেখা বিদেশী উদ্ভট ছন্দ ও ছড়ার অনুসরনে তিনি হাসি রাশি নামে একটি সচিত্র বই প্রকাশ করেন। এর সাথে সাথেই ১৮৯৯ সালে তাঁর সংকলিত খুকুমনির ছড়া প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত হাসিখুসি (১৮৯৭ সালে প্রকাশিত) বইটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর রচিত ও সংকলিত ৩০টি ছোটদের গল্প ও ছড়ার বইয়ের মধ্যে ছড়া ও ছবি, রাঙাছবি, হাসির গল্প, পশুপক্ষী, বনে জঙ্গলে, গল্পসঞ্চয়, শিশু চয়নিকা হিজিবিজি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর সম্বন্ধে বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, “বাংলার মাটিতে এমন একজন মানুষ অন্ততঃ জন্মেছেন, যিনি একান্তভাবে ছোটদের লেখক, সেই সব ছোটদের, যারা কেঁদে কেঁদে পড়তে শিখে, পরে হেসে হেসে বই পড়ে।”

ছোটদের উপযোগী ২১টি পৌরানিক বই এইসময় তিনি রচনা করেছিলেন। সেগুলি হল, ‘কুরুক্ষেত্র’ (১৯০৯), ‘শকুন্তলা’, ‘সাবিত্রী সত্যবান’, ‘সীতা’ (১৯১০), ‘ধ্রুব’ (১৯১৫), ‘ছোটদের রামায়ণ’ (১৯১৮), ‘ছোটদের মহাভারত’ (১৯১৯), ‘দৈত্য ও দানব’ (১৯২০) প্রভৃতি। এছাড়াও জ্ঞানমুকুল, সাহিত্য, চারুপাঠ, শিক্ষাসঞ্চয় প্রভৃতি ১৩-১৪টি স্কুলপাঠ্য বইও রচনা করেছিলেন তিনি। ১৯০৫ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর বন্দেমাতরম্ বলে একটি জাতীয় সঙ্গীত সংগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

১৮৯৬ সালে তিনি যোগীন্দ্রনাথ সিটি বুক সোসাইটি নামে প্রকাশনা সংস্থা স্থাপন করেন। এই প্রকাশনা সংস্থা থেকেই উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর প্রথম বই 'ছেলেদের রামায়ণ' প্রকাশিত হয়েছিল। নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যর শিশুদের বই ‘টুকটুকে রামায়ণ’ এবং কুলদারঞ্জন রায়ের লেখা ‘ইলিয়াড’ এই পাবলিকেশন থেকেই প্রকাশিত হয়।

১৯২৩ সালে প্রবল কর্মব্যস্ততার ফলে উচ্চরক্তচাপজনিত কারণে মস্তিষ্কের শিরা ছিঁড়ে জ্ঞান হারান তিনি। বহু চিকিৎসার পর প্রাণরক্ষা পেলেও শরীরের ডান ভাগ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়। কিন্তু অসুস্থতার মধ্যেও তিনি তাঁর রচনা ও প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যান। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ১৯৩৬ সালে তাঁর শেষ সংকলন 'গল্প সঞ্চয়' প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত মোট গ্রন্থের সংখ্যা ৭৮টি।

১৯৩৭ সালের ২৬শে জুন ৭১ বছর বয়সে মৃত্যু হয় যোগীন্দ্রনাথ সরকারের।।

 #দীপাবলি
20/10/2025

#দীপাবলি

19/10/2025

কবিতার আলোর জন্মদিন যাপনে প্রিয় দাদা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের বিলম্বিত হলেও আন্তরিক শুভেচ্ছা বার্তা।

মহিলা-কলেজের সভামঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন ধবধবে সাদা পোশাকের দীর্ঘকায় এক মানুষ। ঈর্ষণীয় বাকভঙ্গিতে সকলে মন্ত্রমুগ্ধ। কথায় কথায় ...
18/10/2025

মহিলা-কলেজের সভামঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন ধবধবে সাদা পোশাকের দীর্ঘকায় এক মানুষ। ঈর্ষণীয় বাকভঙ্গিতে সকলে মন্ত্রমুগ্ধ। কথায় কথায় বললেন তিনি, ‘‘পড়াশোনায় আমি কোনও দিন দ্বিতীয় হইনি।’’ একটু থামলেন, শ্রোতারা একটু বিস্মিত! উচ্চারিত হল পরবর্তী বাক্যটি, ‘‘অবশ্য প্রথমও হইনি কোনও দিন।’’ তুমুল করতালি আর অট্টহাস‍্যে ফেটে পড়ল কলেজ-হল। ইনি হলেন প্রখ‍্যাত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। আজ তাঁর জন্মদিবস। ১৯২৪ সালের ১৯শে অক্টোবর অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে, অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার চান্দ্রা গ্রামে তাঁর জন্ম। নীরেন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘‘সেখান থেকে সব চেয়ে কাছের রেল-ইস্টিশানটিও ছিল চব্বিশ মাইল দূরে।... বাড়ির সংখ্যা বিশ থেকে বাইশের মধ্যে। পাকা বাড়ি সাকুল্যে একটি। তাও দোতলা নয়, একতলা...’’ এমন এক পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণেই হয়তো প্রকৃতি ও মানুষ, তাঁর কবিতার এই দুই সত্তার সত্তার সম্পৃক্তকরণ ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। পরে এক সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘যেমন বিশ্বপ্রকৃতি, তেমনি মানবপ্রকৃতি। এ-দুয়ের যোগসম্পর্ক এতই নিবিড় যে,একটায় যখন আস্থা হারাই, তখন অন্যটাতেও আস্থা থাকে না।’’ আর, হয়তো সেই কারণেই তাঁর কবিতার বইয়ের নাম দেন ‘নীরক্ত করবী’, ‘উলঙ্গ রাজা’ কিংবা ‘অন্ধকার বারান্দা’।

বাংলা কবিতায় যে-সময়ে তাঁর আবির্ভাব, তখনও রবীন্দ্রনাথের দ‍্যুতি ও প্রভাব থেকে বাংলার কবিকুল পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেননি। অনেকেই তোড়জোড় শুরু করেছেন রবীন্দ্রপ্রভাব মুক্ত হতে, কিন্তু সফল হচ্ছেন না! ক্রমে ঘরে বাইরে বহুমাত্রিক সঙ্কট, আর সেই সঙ্কটের বাতাবরণেই জন্ম হল ত্রিশ-পরবর্তী কবিকুলের, সেইসঙ্গে নীরেন্দ্রনাথেরও। তাঁর কলমে বিদ্রোহ বা বিপ্লবের জন্য প্রত্যক্ষ হুঙ্কার হয়তো ছিল না, কিন্তু ছিল মানুষ, সমাজ ও দেশের জন্য অপরিসীম ভালবাসা। আর এতেই যৌবন পেরনোর আগেই হয়ে উঠলেন খ্যাতিমান, জনপ্রিয়, সাহিত্যের প্রিয় জন। একেবারে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা, চার পাশের দেখা-জানা জগৎ, কথা বা কাহিনিতে মানুষকে জড়িয়েই তাঁর কবিতা। অনেকটাই গল্পের প্রকৃতিতে রচিত ‘বাতাসী’, ‘হ্যালো দমদম’, ‘কলকাতার যিশু’, ‘জঙ্গলে এক উন্মাদিনী’, ‘স্বপ্নে দেখা ঘর-দুয়ার’ বা ‘কলঘরে চিলের কান্না’-র মতো অজস্র কবিতা মানুষের মুখে মুখে ফিরে সৃষ্টি ও স্রষ্টাকে আজ ইতিহাস করে দিয়েছে।

দীর্ঘকায় মানুষটির কাজের তালিকাটিও ছিলো সুদীর্ঘ। শিক্ষা-শেষে শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতার কাজ। ‘প্রত্যহ’, ‘মাতৃভূমি’, ‘অ্যাডভান্স’, ‘ভারত’, ‘কিশোর’, ‘সত্যযুগ’ প্রভৃতি পত্রপত্রিকায় কাজের পর ১৯৫১-তে আনন্দবাজার সংস্থায় যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নীরেন্দ্রনাথকে দেখা গেল তুখড় সাংবাদিক হিসেবেই। আড্ডা-আলাপে বৈঠকি বাঙালির রসবোধে টইটম্বুর, সভায়-সমাবেশে স্পষ্টবাদী, দৃঢ়চেতা। ক্রিকেট ও ফুটবল-পাগল মানুষটি যৌবনে খেলার মাঠে যতখানি ক্ষিপ্র, ঠিক ততখানিই তাঁর ক্ষিপ্রতা, যখন তিনি ‘আনন্দমেলা’ পত্রিকার সম্পাদক। কঠিন সম্পাদক কিংবা কোমল মানুষ ছাড়াও নীরেন্দ্রনাথের আরও বহু কাজের জন্য শুধু বাংলা কবিতার মানুষ নন, বাংলাভাষার প্রত্যেকেই চিরকাল ঋণী থাকবেন তাঁর কাছে। বাংলা ভাষার বানান রীতি ও সাধারণ-মান্য ব্যাকরণের ভাবনায় তিনি আজীবন কাজ করে গিয়েছেন। ‘বাংলা কী লিখবেন, কেন লিখবেন’ কিংবা সম্পাদক ও লেখকদের জন্য একটি অভিধান রচনা ও সঙ্কলন তার সাক্ষ্য বহন করে। তাঁর ‘কবিতার ক্লাস’ বা ‘কবিতার কী ও কেন’ বই দু’টিও কবিতার অনুরাগীর কাছে মূল্যবান। বাংলা ও ইংরেজি, দুই ভাষায় তাঁর ব্যুৎপত্তি সর্বজনবিদিত। অনুবাদের ক্ষমতা ছিল আশ্চর্য, বিশেষ করে ছোটদের জন্য অনুবাদের বেলায় তাঁর সৃষ্টিপ্রতিভার বিকাশ আজও অবাক করে দেয়। তাঁর কর্মজীবন আমাদের জানায় যে, বেহিসেবি, অলস, আপনভোলা, উদাসীন জাতীয় নানা অভিধায় কবিকুল চির দিন চিহ্নিত হলেও, সে অভিধাই শেষ কথা নয়।
অন্নদাশঙ্কর রায়ের মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতির পদে তাই তাঁকেই দেখলাম আমরা। দেখলাম সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় মানুষ তাঁকে বার বার টানছেন। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (’৭৪), আনন্দ পুরস্কার (’৭৬), শরৎস্মৃতি পুরস্কার (’৯৬), প্রভৃতি অজস্র সম্মানে বাংলা ও বাঙালি তাঁকে ভূষিত করেছে তাঁর নানাবিধ সাহিত্যকীর্তির জন্য। ২০১৭ সালে পেয়েছেন ‘বঙ্গবিভূষণ’।

তিনি লিখেছেন অজস্র গদ্য, তা সে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান শোনার অভিজ্ঞতাই হোক বা সত্যজিতের চিত্র-আলোচনা। লিখেছেন অজস্র গ্রন্থসমালোচনা, প্রথম জীবনের আত্মকাহিনি ‘নীরবিন্দু’, একাধিক রহস্য উপন্যাস। ছড়া ও কবিতায় শিশু মনের হালকা দুয়ার হাতের হালকা চাপে সরিয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন ছোটদের ‘এক আশ্চর্য পৃথিবী’।

দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ৯৪ বছর বয়সে চিরপ্রস্থান ঘটে এই কিংবদন্তীর। ২০১৮ সালের ২৫শে ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।।

17/10/2025

কবিতার আলো'র জন্মদিন যাপনে প্রিয় কবি ও ছায়াবৃত্ত পত্রিকার সম্পাদক হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় দাদার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছাবার্তা...

17/10/2025

কবিতার আলো'র জন্মদিন যাপনে প্রিয় কলমচি ভাস্কর সরকার এর পক্ষ থেকে নিবেদন...

17/10/2025

কবিতার আলো'র জন্মদিন যাপনে কিছু কথা প্রিয় সাহিত্য সাথি শৌভিক গাঙ্গুলী এর পক্ষ থেকে...

Address

165/A, Criper Road , PO/Konnagar, Dist/Hooghly, PIN/
Konnagar
712235

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when কবিতার আলো posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share