26/06/2025
:2
যার পরিবার কষ্ট করে, অশেষ ত্যাগ স্বীকার করে সন্তানকে পড়িয়েছেন, তার একটাই স্বপ্ন ছিল — সন্তান যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, নিজের পায়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু যদি সেই সন্তান কিছু না হতে পারে?
যদি শত চেষ্টা করেও সে বারবার ব্যর্থ হয়?
তখন সমাজ শুধু বলে — "সে পারল না",
কিন্তু কেউ ভাবে না কেন পারল না।
সে চেষ্টা করেছে, হয়তো অনেক বেশি করেছে, কিন্তু তার পথের বাঁধাগুলো কেউ দেখেনি।
তার স্বপ্নগুলো হয়তো বারবার ভেঙেছে — অর্থের অভাবে, সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে, অথবা সমাজ ও পরিবারের অব্যক্ত চাপের তলায়।
এমন মানুষদের সমাজ সহজেই দাগিয়ে দেয় —
"পড়ালেখা করেও কিছুই হলো না",
"আর পাঁচজন পারছে, সে কেন পারছে না?"
এই প্রশ্নগুলোর ভেতরেই লুকিয়ে থাকে হাজারটা উপেক্ষা, ব্যঙ্গ, এবং অবমাননা।
সময় গড়াতে গড়াতে এমন মানুষরা নিজের ডিগ্রি বলতেও লজ্জা পায়।
কারণ তখন কেউ না কেউ টিপ্পনি কাটে —
"এই পড়াশোনার জন্য এই সামান্য কাজ?"
আর তখন সেই সন্তান ভাবে —
"আমার তো জীবনটাই ব্যর্থ, এত পড়েও কিছুই করতে পারলাম না…"
এভাবেই সে হারিয়ে যায়।
নিজেকে আর খুঁজে পায় না।
এখানেই বোঝা যায় —
স্কুল, শিক্ষক, সমাজ, পরিবার, এমনকি পাড়ার পরিবেশ — সব মিলেই একটি সন্তানের ভবিষ্যৎ তৈরি করে।
শুধু পড়াশোনা নয়, সঠিক দিশা, মানসিক সহায়তা, একটা ভালো পরিবেশ — এই জিনিসগুলো ছাড়া কেউ ভিতরে ভিতরে গড়ে উঠতে পারে না।
হ্যাঁ, কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, যারা সব প্রতিকূলতা ঠেলে সামনে এগিয়ে যায়।
কিন্তু সংখ্যাটা খুবই কম।
বেশিরভাগই হারিয়ে যায় কষ্টের ভিড়ে, ভুল বোঝাবুঝির অন্ধকারে।
আর যখন বয়স বাড়ে, উপলব্ধি হয় —
তখন আর কিছুই করার থাকে না।
শুধু একটা প্রশ্ন সারাজীবন তাড়া করে ফেরে —
"আমি কি সত্যিই ব্যর্থ, নাকি আমার স্বপ্নগুলোকে ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছিল?"
💔 পরিবার, সমাজ, বন্ধুবান্ধব — সবাই প্রশ্ন তোলে,
“তুই কি এই কাজের জন্যই এত পড়েছিস?”
আর এই কথাগুলো তাকে আরও গুটিয়ে দেয়।
একসময় সে নিজেও ভাবতে শুরু করে —
"আমি বোধহয় সত্যিই ব্যর্থ।"
সে আর নিজের ডিগ্রি নিয়েও গর্ব করতে পারে না।
কারণ তাচ্ছিল্যের সুরে কেউ না কেউ বলে দেয় —
"এই পড়াশোনার দামই বা কী হলো!"
🌱
একজন ভালো শিক্ষকের একটা কথা একটা শিশুকে জীবনভর পথ দেখাতে পারে।
একটা উৎসাহ, একটা প্রশংসা তার বিশ্বাস গড়ে দিতে পারে।
আর সেই জায়গাতেই যাদের পরিবারে সঠিক দিশা, পরামর্শ বা মানসিক সমর্থন নেই — তারা অনেকসময় হেরে যায়।
তাই আমরা অনেক সময় বলি, "ওমুক স্কুলে পড়ে কি কেউ ডাক্তার হতে পারে না?"
হ্যাঁ, হতে পারে, কিন্তু সেটা কঠিন, কারণ স্কুল, শিক্ষক, পরিবেশ — সবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সবসময় ব্যতিক্রম মানুষ থাকবে, যারা প্রতিকূলতা জয় করে সাফল্য পায়, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুব কম।
বেশিরভাগ মানুষ যখন উপলব্ধি করে, তখন হয়তো সময়টা হাতছাড়া হয়ে গেছে।
তখন আর কিছুই করার থাকে না — শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস থেকে যায়,
“যদি একটু ভালো পরিবেশ পেতাম… যদি কেউ পাশে থাকত…”
স্বপ্ন, চেষ্টা, সমাজ এবং বাস্তবতা।
আমরা অনেকেই চেষ্টা করি, কিন্তু সবাই পৌঁছাতে পারি না।
কারণ সবার শুরু এক জায়গা থেকে হয় না।
তাই যারা পিছিয়ে পড়েছে, তারা ব্যর্থ নয় — বরং তারা লড়াকু।
তাদের দরকার সমর্থন, বোঝাপড়া আর একটু মানবিকতা।