
23/08/2025
কৌশিকীতে তুই মা তারা🌺
'কাল'-কে ওই রাঙ্গা চরণে যিনি স্থান দিয়েছেন তিনি দেবী কালিকা । কখনও তিনি প্রলয়কারীনি দেবী - কখনও মা , কখনও মেয়ে । রাঢ় বাংলার ইতিহাস বলে ওই রাঙ্গা চরণকে ভক্তির সুতোয় গেথেছিলেন রামকৃষ্ণ থেকে রামপ্রসাদ , রামপ্রসাদ থেকে বামাক্ষ্যাপা । বামা অর্থাৎ বাম দিকে যিনি অধিষ্ঠাত্রী, ক্ষ্যাপা অর্থাৎ সাধক ।
ক্যালেন্ডারের পাতা বলছে সালটা ১৮৩৩ , সময় টা ফাল্গুন মাস, আটলার এক চালা ঘরে জন্ম হলো বামাচরণ চট্টোপাধ্যায়। ১৯১১ সালের ১৮ই জুলাই যখন তিনি দেহ রাখলেন তখন তিনি পূণ্য সাধক বামাক্ষ্যাপা । মাঝখানে চলে গিয়েছে ৭৮ বছর, এই সময়কালে মা ছেলের কাণ্ড রাঢ় বাংলায় বেশ সমৃদ্ধি লাভ করেছে । সমসাময়িক কালে গঙ্গার তীরে ছোট ঠাকুরের খ্যাতিও দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে বেশ ছড়িয়ে পড়েছে । গুরু স্বামী কৈলাশপতি ও বেদাজ্ঞ মক্ষদানন্দর হাত ধরে আটলার সেই ছোট্ট ছেলেটা ডুব দিয়েছিল ভক্তির সাগরে, তন্ত্র সাধনে । সেই সাগরের রোমন্থনেই যেন অমৃতের কলস ।
নাটোরের মহারানীর স্বপ্নাদেশএ দেখা দিলেন দেবী তারা । অদৃষ্টের পূর্ব নির্ধারিত নিয়মেই নিজ সাধন বলে কালক্রমে দেব শিশু বামাকেই স্থান দেওয়া হল মন্দিরে । ধর্মের ষাঁড়দের দাপাদাপি কে দারকার জলে ছুঁড়ে ফেলে সব দর্প চূর্ণ করে পঞ্চমুন্ডির আসন লাভ করলেন সাধক বামাক্ষ্যাপা । যেন পঞ্চমুন্ডির আসন চাতকের ন্যায় অপেক্ষা করছিল বামার জন্য ।
১৯ বছরের তরুণ যুবক নরেন ছোট ঠাকুরের সংস্পর্শে আসার পর আধ্যাত্মিক ভাবে ভাবিত হয়ে কলেজের বন্ধু শরৎচন্দ্র চক্রবর্তি কে নিয়ে ছুটলেন আটলা । বন্ধু শরৎচন্দ্র তাকে জিজ্ঞাসা করলেন ' তুমি তো ঠাকুরের দেখা পেয়েছ, আবার কেন ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ দেখতে চাও ,' উত্তরে নরেন জানালো ' ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ দের চারটি অবস্থা বালকবৎ, জড়বৎ , উন্মাদবৎ এবং পিশাচবৎ । ছোট ঠাকুরের মধ্যে চতুর্থ ভাব টি অনুপস্থিত ছিল - পূর্ণ যোগী বামা জানালেন এই 'যুবক একদিন ধর্মের মুখ উজ্জ্বল করবে' ।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ এর সঙ্গে সাক্ষাৎ এর পর বামা বলেছিল ' ফেরার পথেই ট্রেন থেকে দেখতে পাবে, এক বিশাল মাঠ। সেই মাঠের মাঝখানে একটা ছাতিম গাছ আছে। তার নিচে বসে ধ্যান করবে দেখবে মনের ভিতর আনন্দের জ্যোতি জ্বলে উঠবে। 'ওখানে একটা আশ্রম বানাও দেখি' । ফেরার পথে রেলগাড়িতে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই ছাতিম গাছ খুঁজে পেলেন যা বর্তমানে শান্তিনিকেতন নামে প্রসিদ্ধ ।
সালটা ১৯০১ , স্বাধীনতার গনগনে আঁচে আইনজীবী আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ছুটলেন তারাপীঠ । বয়সের ভারে নিমজ্জিত বামার সামনে দাঁড়াতেই, তিনি বললেন - ' যারে শালা তোর ইচ্ছা পূর্ণ হবে , তুই শালা জজ হবি । সালটা ১৯০৪ কলকাতা হাইকোর্ট বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হলেন বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ।
এহেন যোগী , তন্ত্র সাধক বামাকে আমার প্রণাম , তার বড়মা কেও।।
অবশ্যই ভুল ত্রুটি মার্জনীয় । 🙏