31/08/2025
❝শ্রীমতী রাধারাণীর লীলামহিমা❞
#ভুলোকে শ্রীরাধার আবির্ভাব!!!
(৫ম পর্ব)
পৃথিবীতে শ্রীমতী রাধারাণীর আবির্ভাব প্রসঙ্গে বিভিন্ন শাস্ত্রে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা দেখা যায়। এর একটি কারণ হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন কল্পে বিভিন্ন রকমের আবির্ভাব ঘটেছে।
গর্গ মুনির কন্যা গার্গীকে পৌর্ণমাসী দেবী শ্রীমতী রাধারাণীর যে আবির্ভাব-তত্ত্ব বলেছিলেন, সেই তত্ত্ব শ্রীল রূপ গোস্বামী তাঁর শ্রীললিতমাধব গ্রন্থে বিধৃত করেছেন। এই আবির্ভাব সম্বন্ধে পৌর্ণমাসী বিশদভাবে অবগত ছিলেন, কেননা তিনি ভগবানের সকল লীলাবিলাসের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা করেন। তিনি এই তথ্য কেবল যশোদা মাতা ও রোহিণী দেবীকে জানিয়েছিলেন।
বিন্ধ্য পর্বত বিশালায়তন হিমালয় পর্বতের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিল, কারণ হিমালয় পার্বতীকে তাঁর কন্যা হিসাবে পাওয়ায় মহাদেব শিবকে জামাতা হিসাবে লাভ করার সুযোগ পেয়েছিল। বিন্ধ্য পর্বত এজন্য এমন একজন সৌভাগ্যবতী কন্যাকে লাভ করতে চেয়েছিল, যাঁর স্বামী মহাদেবকেও যুদ্ধে পরাস্ত করতে পারবে, এবং এইভাবে সে রাজেন্দ্র (রাজাধিরাজ) পদ লাভ করতে পারবে। তাঁর এই অভিলাস পুরণের সংকল্প করে বিন্ধ্য পর্বত ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কঠোর তপস্যা করতে থাকে। কিছু কাল পর ব্রহ্মা তাঁর কাছে আবির্ভূত হয়ে তাঁর অভিলষিত বর প্রার্থনা করতে বলে। কিন্তু 'তথাস্তু' বলে বরদানের পর ব্রহ্মা চিন্তা করতে লাগলেন, "এমন কোন ব্যক্তি আছেন যিনি মহাদেবকে যুদ্ধে পরাজিত করতে পারেন? এটি অসম্ভব...।" কিন্তু বর তিনি ইতিমধ্যেই অনুমোদন করেছেন, সেজন্য তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। তারপর তিনি উপলব্ধি করলেন যে ভুলোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলা সংঘটিত করার সময় সমাগত হয়েছে: কেবল তিনিই মহাদেবকে রণে পরাভূত করতে পারেন। ব্রহ্মা ভাবলেন, "কৃষ্ণের নিত্য লীলাসঙ্গিনী হচ্ছেন শ্রীমতী রাধারাণী। যদি বিন্ধ্য-পর্বত রাধারাণীকে তাঁর কন্যা হিসাবে লাভ করতে পারে, তাহলেই কেবল আমার বর ফলপ্রসূ হতে পারে। কিন্তু কেমন করে সেটা ঘটতে পারে? শ্রীমতী কীর্তিদা রাধারাণীর নিত্য মাতা। কিভাবে বিন্ধ্য তাঁকে কন্যা হিসাবে পেতে পারে?"
তাঁর বর কিভাবে ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে চিন্তান্বিত হয়ে ব্রহ্মা শ্রীমতী রাধারাণীকে পরিতুষ্ট করার জন্য কঠোর তপস্যা শুরু করলেন। যখন তিনি তাঁর প্রতি প্রীত হলেন, তখন ব্রহ্মা তাঁকে বিন্ধ্য পর্বতের কন্যারূপে আবির্ভূত হতে অনুরোধ জানালেন। রাধারাণী সম্মত হলেন, এবং তখন যোগমায়া দেবী ইতিমধ্যেই রাজা বৃষভানু ও চন্দ্রভানুর স্ত্রী-দ্বয়ের গর্ভে থাকা রাধারাণী ও চন্দ্রাবলীকে বিন্ধ্য পর্বতের স্ত্রীর গর্ভে স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করলেন।
এর ফলে বিন্ধ্য-ভার্যা দুটি পরমা সুন্দরী কন্যার জন্মদান করলেন। ইতিমধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। ভগবানের আদেশে বসুদেব শিশুপুত্র কৃষ্ণকে গোকুলে নিয়ে গেলেন এবং সেখানে যশোদার কাছে রাখলেন, যিনি ইতিমধ্যেই একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দান করেছিলেন। বসুদেব কৃষ্ণকে সেখানে রেখে পরিবর্তে ভগবৎ আজ্ঞানুসারে যশোদার কন্যাটিকে নিলেন এবং তাঁকে নিয়ে মথুরার কারাগারে ফিরে এলেন, যেখানে তাঁকে ও দেবকীকে কংস বন্দী করে রেখেছিল।
দেবকীর অষ্টম সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে শুনে তৎক্ষণাৎ কংস কারাগারে এল এবং দেবকীর কোল থেকে ঐ কন্যাটিকে বলপূর্বক হত্যার উদ্দেশ্যে কেড়ে নিল। কংস যখন তাঁকে পাথরের উপর আঘাত করতে উদ্যত হল, কন্যাটি তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে গিয়ে যোগমায়া দেবী রূপে তাঁর সামনে আবির্ভূতা হলেন।
তিনি সরবে ঘোষণা করলেন, "কংস! তুমি তোমার পূর্বজন্মে ছিলে কালনেমি দৈত্য। যুদ্ধে তোমাকে যিনি তাঁর চক্রদ্বারা তোমাকে হত্যা করেন, মহান বিজ্ঞগণ যাঁকে দেবতাগণেরও পরম পূজ্য রূপে জানেন, যিনি অখিল জগতের কারণ, আজ তিনি সর্বজীবের আনন্দবিধান করতে এই ধরণীতে আবির্ভূত হয়েছেন।
"কংস! তুমি আরও একটি বিষয় জেনে রাখো: আমার থেকেও মহীয়সী ও আকর্ষণীয়া-অষ্ট মহাশক্তি আগামীকাল এই ভুলোকে প্রকটিত হবেন। তাঁদের নাম হচ্ছে রাধা, চন্দ্রাবলী, ললিতা, বিশাখা, পদ্মা, শৈব্যা, শ্যামলা এবং ভদ্রা। এই আটজনের মধ্যে দুটি কন্যা তাঁদের মহা গুণাবলীর জন্য সুপ্রসিদ্ধা হবেন। যিনিই কন্যাদ্বয়কে বিবাহ করবেন তিনি হবেন পরম সৌভাগ্যশালী: তিনি হবেন রাজেন্দ্র, এবং তিনি এত শক্তিশালী হবেন যে তিনি মহাদেবকেও যুদ্ধে পরাজিত করতে পারবেন।"
একথা বলে যোগমায়াদেবী সেখান থেকে অন্তর্হিত হয়ে বিন্ধ্য পর্বতের উদ্দেশ্যে গমন করলেন।
কংস যখন যোগমায়াদেবীর এইসব কথা শুনল, সে পুতনাকে আদেশ করল সমস্ত নবজাত ছেলে-সন্তানকে হত্যা করতে আর শিশুকন্যাদেরকে অপহরণ করে নিয়ে আসতে। রাজা কংসের আজ্ঞানুসারে পুতনা যখন সদ্যোজাত শিশুর সন্ধান করছিল, তখন সে দুটি পরমা সুন্দরী কন্যা সন্ত ানকে দেখতে পায়।
বিন্ধ্য পর্বতের স্ত্রী দুই কন্যা সন্তানের জন্মাদান করলে বিন্ধ্য পর্বত শিশুকন্যা দুটির জন্য সংস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। দুই কন্যাকে যজ্ঞস্থলে রেখে একজন ব্রাহ্মণ যজ্ঞানুষ্ঠান করছিলেন। গগনচারী পুতনা যজ্ঞস্থলে দুই রূপবতী কন্যাকে দেখতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ তাঁদেরকে ভূমি থেকে তুলে নিয়ে আকাশ মার্গে উড়ে পালাতে লাগল। এতে বিন্ধ্যরাজ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে ব্রাহ্মণকে ঐ রাক্ষসীকে মন্ত্রোচারণ দ্বারা হত্যা করতে বললেন। রাজার আদেশে ব্রাহ্মণ মন্ত্রপাঠ করতে লাগলেন, যার ফলে আকাশচারী পুতনা ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে পড়তে লাগল। দুই শিশুকন্যাকে ধরে রাখা তাঁর পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ল, এবং তাঁদের একজনকে সে নীচে নদীতে ফেলে দিল। ঐ নদী বিদর্ভ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বিদর্ভরাজ ভীষ্মক এই কন্যাকে পেয়ে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁকে নিজের কাছে রাখলেন।
সে সময় জাম্ববান বিন্ধ্য ও গোবর্দ্ধন পর্বতে বাস করছিলেন। বিন্ধ্যরাজের আদেশে জাম্ববান বিদর্ভে গিয়ে সেই কন্যাকে ফিরিয়ে নিয়ে এলেন। তিনি চন্দ্রাবলী নামে সুবিদিতা হলেন।
পুতনা যখন অপর কন্যাটিকে তাঁর বাহুলগ্না করে নিয়ে উড়ে যাচ্ছিল, মন্ত্র প্রভাবে সে ক্রমশঃ আর শক্তিহীন হয়ে পড়তে লাগল। ব্রজে পৌঁছানোর পর পুতনা আর চলতে না পেরে ভূমিতে পতিত হল। সেই সময় পৌর্ণমাসী দেবী পুতনার কাছ থেকে ঐ শিশু কন্যাকে নিয়ে মুখরার কাছে অর্পণ করে তাঁকে বললেন, "এই কন্যা তোমার জামাতা বৃষ্ণভানুর সন্তান, সুতরাং তুমি এঁর লালন-পালন করো।"
এইভাবে সেইদিন হতে ঐ কন্যা বৃষ্ণভানু-কন্যা রাধা নামে সুবিদিতা হলেন। পৌর্ণমাসী পুতনার কাছ থেকে আরও পাঁচটি শিশু কন্যাকে উদ্ধার করেন। তাঁরা হচ্ছেন ললিতা, পদ্মা, ভদ্রা, শৈব্যা এবং শ্যামা।
এইভাবে শ্রীমতী রাধারাণী ও চন্দ্রাবলী তাঁদের নিত্যসহচরী সখীগণ সহ ভুলোকে আবির্ভূতা হলেন। নারদ মুনি এই সংবাদ পৌর্ণমাসীকে প্রদান করেছিলেন।
এই গ্রন্থে শ্রীমতী রাধারাণীর আবির্ভাবের আরেকটি কাহিনী রয়েছে। একবার সূর্যদেব গোলোকশ্বরীকে তাঁর কন্যারূপে লাভ করার অভিলাষে ভগবান শ্রীহরির আরাধনা করেন। ভগবান সূর্যদেবের প্রতি প্রসন্ন হয়ে তাঁর অভিলাষ পূর্ণ করতে সম্মত হন। ভুলোকে গোকুল মহাবনে রাভেল নামে একটি গ্রাম আছে। ঐ গ্রামে গোপগণের একজন রাজা ছিলেন, যাঁর নাম মহাভানু। তাঁর পাঁচ পুত্র ছিল : চন্দ্রভানু, রত্নভানু, বৃষভানু, শুভানু এবং প্রতিভানু। তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন বিনম্র, আত্মসংযমী এবং মহান বৈষ্ণব। তাঁদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বৃষভানু রাজসিংহাসনে আরোহণ করার জন্য মনোনীত হল। এই বৃষভানু ছিলেন সূর্যদেব (ভানুদেব) হতে অভিন্ন। রাজা বৃষভানু ভগবান শ্রীহরির প্রীতিসাধনের জন্য শত শত রাজসূয় যজ্ঞ করে, এবং যথাবিধি ধর্মাচরণ পূর্ণরূপে সম্পাদন করতে থাকেন। তিনি ছিলেন রাজর্ষি, এবং তাঁর মহান গুণাবলীর জন্য তিনি সকলের শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠেছিলেন।
সেই সময়ে ব্রজে আরেকজন ঐশ্বর্যশালী গোপ বাস করতেন, যাঁর নাম ছিল বিন্দু। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল মুখরা। মুখরার গর্ভে বিন্দুর পাঁচটি সন্ত ান ছিল: ভদ্র-কীর্তি, চন্দ্রকীর্তি, মহাবল, মহাকীর্তি এবং শ্রীদাম। তাঁর কন্যাদের নাম ছিল ভানুমুদ্রা, কীর্তিমতি এবং কীর্তিদা। কিছু পুরাণ অনুসারে কীর্তিদার অপর একটি নাম হচ্ছে কলাবতী।
বৃষভানুরাজা বিন্দু-দুহিতা কীর্তিদাকে বিবাহ করেন। কিন্তু বহু বছর অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের কোনো সন্তান হল না। তাঁরা উভয়ে এজন্য অত্যন্ত বিমর্ষ-চিত্তে মহাদুঃখে দিনাতিপাত করতে লাগলেন। সন্ত ান কামনায় তাঁরা বহু বছর যজ্ঞ, দান, ব্রত, বিশেষ পূজার্চনা করলেন এবং বিভিন্ন তীর্থে ভ্রমণ করলেন। কিন্তু তাতে তাঁরা তাঁদের অভিলাষ চরিতার্থ করতে সফল হলেন না।
অবশেষে মহা সাধ্বী কীর্তিদা তাঁর স্বামীকে দেবী কাত্যায়নীর পূজা করার পরামর্শ দিলেন। তাঁর পরামর্শ অনুসারে, মহারাজ বৃষভানু যমুনাতীরস্থ গোবর্দ্ধন পর্বতের পাদপীঠে কাত্যায়নী দেবীর পূজা করতে শুরু করলেন। তিনি দীর্ঘকাল মৌনব্রত ও উপবাস পালন করতে লাগলেন।
একদিন যখন তিনি নিবিষ্ট চিত্তে ব্রতপালন করছিলেন, তখন রাজা বৃষভানু একটি নেপথ্য কণ্ঠধ্বনি শুনতে পানঃ
হরিনাম বিনা বৎস কর্ণশুদ্ধির্ণ জায়তে।
তস্মাৎ শ্রেয়স্করং রাজন হরি নামানুকীর্তনম্ ।
গৃহান হরিনামানি যথা ক্রমং বিনিদিতা।
"হে বৎস! হরিনাম গ্রহণ ব্যতীত কর্ণশুদ্ধি হয় না। শ্রীহরির নামানুকীর্তন হচ্ছে সর্বাপেক্ষা শুভদ, মঙ্গলপ্রদ। যথাযথ ক্রমে হরিনাম গ্রহণ করো।"
তখন মহারাজ বৃষভানু যমুনা নদী তটে স্থিত ক্রতু মুনির আশ্রমে গমন করলেন এবং তাঁর নিকট থেকে হরিনাম গ্রহণ করলেন। ক্রতু মুনি তাঁকে ভগবানের দিব্য নাম গ্রহণের বিবিধ নিয়ম বিধি বললেন। রাজাকে প্রদত্ত ক্রতুমুনি প্রদত্ত মন্ত্রটি ছিল:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ॥
তারপর ক্রতুমুনি রাজাকে বললেন,
ইতি ষোড়শকং নামাং ত্রিকাল কল্মষাপহম্।
নাতঃ পরতরোপায়ঃ সর্ববেদেষু বিদ্যতে ॥
(ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ, উত্তরা খণ্ড, রাধা-হৃদয়) রাজাকে মহামন্ত্র প্রদানের পর ক্রতু মনি বৃষভানুকে বললেন,
শাক্তো বা বৈষ্ণবো বাপি সৌরো বা শৈব এব চ।
গাণপত্যো লভতে কর্ণশুদ্ধিং নামানুকীর্তনাৎ ॥
শাক্ত, শৈব, সৌর, বৈষ্ণব কিংবা গাণপত্য-সাধক যেমনই হোক, কেবল হরিনামনুকীর্তনই তাঁর শ্রুতিকে পবিত্র করতে পারে, কর্ণশুদ্ধি সম্পাদন করতে পারে। কেউ যদি প্রথমেই হরিনাম গ্রহণ করে কর্ণকে শুদ্ধ না করে, তাহলে অন্য কোনো মন্ত্রই কোনো ফল দান করে না। যার কর্ণরন্ধ্র দিয়ে শ্রীহরির অপ্রাকৃত নামের শব্দতরঙ্গ প্রবেশ করেনি, তাঁর কর্ণদ্বয় নীচ কুলোজাত শবরদের মতোই অপবিত্র। হে রাজন! আমি
আপনাকে যে হরিনাম প্রদান করলাম, সেই হরিনামের মহিমা শুকদেবের দ্বারা জিজ্ঞাসিত হয়ে শ্রীল ব্যাসদেব কীর্তন করেছেন। এমনকি ব্রহ্মাও অঙ্গিরা মুনিকে এই হরিনাম মহামন্ত্র জপের পন্থা শিক্ষা দিয়েছেন। আপনার কর্তব্য হচ্ছে পূর্ণ অভিনিবেশ সহকারে এই মন্ত্র জপ-কীর্তন করা।"
ক্রতু মুনির কাছ থেকে মহামন্ত্র গ্রহণ করে রাজা বৃষভানু তাঁকে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করে যমুনা তটে তাঁর ব্রত পালন-স্থানে এসে প্রগাঢ় ভক্তি সহকারে ঐ মন্ত্র জপ করতে লাগলেন।
কিছু কাল পরে রাজা বৃষভানুর প্রতি প্রীত হয়ে দেবী কাত্যায়নী তাঁর সামনে আবির্ভূতা হলেন। রাজা তাঁকে প্রণাম করে অনেক স্তব-স্তুতি করলেন। দেবী তাঁকে তাঁর অভিলাষ প্রার্থনা করতে বললে রাজা বললেন, "আপনার দর্শনমাত্রে আমার সকল অভীষ্ট পূর্ণ হয়েছে। তবু হে দেবী! যদি আপনি আমার প্রতি প্রসন্না হয়ে কোনো বর প্রদান করতে চান, তাহলে আমি আর বরের কথা কি বলব, আপনি তো আমার হৃদয়ের সকল অভিলাষ জানেন!"
মহারাজ বৃষভানুর এই কথা শ্রবণ করে দেবী কাত্যায়নী তাঁকে একটি স্বর্ণ ডিম্বাকৃতি বাক্স দিলেন, যা সহস্র সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল প্রভা বিকীরণ করছিল। কাত্যায়নী দেবী অন্তর্হিতা হলেন। মহারাজ বৃষভানু পরম উৎফুল- অন্তরে গৃহে ফিরে এলেন।
এর কিছু কাল পর তাঁদের হরিনামের প্রতি সেবার জন্য-যা ছিল কীর্তিদা ও বৃষভানুর ব্রতের সার-শ্রীমতী রাধারাণী শুভদিনে শুভক্ষণে আবির্ভূতা হলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত কোমলাঙ্গ এবং চম্পকবর্ণা, পরম রূপান্বিতা।
রাধারাণীর আবির্ভাবের তৃতীয় বর্ণনাটি এইরকমঃ
একবার রাজা বৃষভানু যমুনার জলে নিমজ্জিত হয়ে ভগবানের ধ্যান করছিলেন। সে সময় একটি সহস্রদল কমল জলপ্রবাহে ভাসতে ভাসতে তাঁর দিকে এসে তাঁর শরীরে স্পর্শ করল। যখন তিনি নয়ন উন্মীলন করলেন, তিনি ঐ কমলের মধ্যে শায়িত একটি তপ্তকাঞ্চন বর্ণা শিশু কন্যাকে হাত-পা সঞ্চালন করতে দেখলেন। যেহেতু রাজার কোনো সন্ত ান ছিল না, সেজন্য এই কন্যাকে পেয়ে তিনি অত্যন্ত খুশী হলেন। তিনি কন্যাটিকে নিয়ে এসে কীর্তিদার কাছে দিলেন। এইভাবে শ্রীমতী রাধারাণী তাঁর নিত্য মাতা-পিতা কীর্তিদা সুন্দরী ও মহারাজ বৃষভানুর ভুলোকের গৃহে আবির্ভূতা হয়েছিলেন।