
03/04/2025
বেকারত্বের দিনগুলো
রাহুলের সকালগুলো শুরু হয় দেরিতে। ঘড়িতে দশটা বাজলেও তার জন্য সেটা কোনো তফাত গড়ে না, কারণ অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই, ক্লাস করার চাপ নেই, এমনকি কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিংও নেই। শুধু একটা মোবাইল, কিছু অনলাইন জব পোর্টালের নোটিফিকেশন, আর বাবা-মায়ের নীরব দৃষ্টি—যা তার চেয়ে বেশি কথা বলে।
তিন বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার সময় সে ভেবেছিল, ভালো একটা চাকরি পেতে দেরি হবে না। কিন্তু এখন সেই আশাবাদ ফিকে হয়ে গেছে। বন্ধুদের অনেকেই ভালো জায়গায় সেটল করেছে। কেউ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে, কেউবা সরকারি চাকরিতে। শুধু রাহুলের ভাগ্যই যেন আটকে গেছে কোনো এক অদৃশ্য দেয়ালে।
চাকরির জন্য প্রতিদিন আবেদন করে, ইন্টারভিউয়ের ডাকও মাঝে মাঝে আসে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না। কখনো অভিজ্ঞতার অভাব, কখনো অতিরিক্ত যোগ্যতার দোষে বাদ পড়ে যায়। এসব শুনতে শুনতে তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যেতে চায়, কিন্তু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নেয়।
একদিন বিকেলে রাহুল ছাদে বসে ছিল, হঠাৎ পাশের ফ্ল্যাটের আনিস ভাই ডেকে বললেন,
— "কিরে, আজকাল কেমন চলছে?"
রাহুল ম্লান হেসে বলল, "চলার মতো চলছে ভাই।"
— "তুই তো ভালো লেখালিখি করিস, ফ্রিল্যান্সিংটা চেষ্টা করে দেখেছিস?"
— "ভাবছি, কিন্তু কনফিডেন্স পাচ্ছি না।"
— "শোন, বসে থাকলে কিছু হবে না। কাজ করতে থাক, একসময় দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।"
সেদিন রাতেই রাহুল ল্যাপটপ খুলে কিছু কনটেন্ট রাইটিংয়ের কাজ খুঁজতে শুরু করল। একটা-দুটো প্রজেক্ট পেতে দেরি হলো, কিন্তু ধীরে ধীরে তার আয় বাড়তে লাগল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝতে পারল, হয়তো চাকরি পাওয়া এত সহজ নয়, কিন্তু থেমে গেলে চলবে না।
সে সিদ্ধান্ত নিল, অপেক্ষা নয়—নিজেই নিজের পথ তৈরি করবে। চাকরির বাজার যেমনই হোক, কাজের সুযোগ সবসময় থাকে, শুধু খুঁজে নিতে হয়।