
20/10/2025
বিয়ের পর কবি হুগলিতে বসবাস শুরু করেন। ঐ সময় তাঁকে অর্দ্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হয়েছে। তিনি ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। 'বাংলা সাহিত্যে নজরুল' গ্রন্থের রচয়িতা আজাহারউদ্দিন লিখেছেন, তৎকালীন কংগ্রেস সংগঠকরা কবির জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। 'বাংলা সাহিত্যে নজরুল' গ্রন্থের রচয়িতা গানের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর জন্য কবিকে হুগলিতে আনেন। কিন্তু নিজেদের কাজ গুছিয়ে নেওয়ার পর তেমন পূর্বের মতো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। হুগলি থেকে নদীয়ায় আনার সময়েও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির কথা উক্ত গ্রন্থে পাওয়া যায়। বোঝাই যায় পারিবারিক অভাব অনটন, সঙ্গীদের বোঝাপড়ার অস্বচ্ছতা সত্বেও কবি হাসি মুখে তার কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু তার সমস্যা সংকট ইত্যাদি নিয়ে ভাবার মতো মানুষের সংখ্যা ছিল সেদিন খুবই অল্প। তা নিয়ে তার অভিযোগও ছিল না কোন দিন। তাঁর 'কবিত্ব শক্তি হোঁচট খায়নি কোনদিন' ঝরণা ধারার মতো অবিরাম গতিতে প্রবাহিত হয়েছে। এই সময়েই, সৃষ্টি হয়েছে 'মুক্তিকাম', 'দীপান্তরের বন্দিনী', 'আশু প্রয়াণ গীতি', 'চিত্তনামা', 'ফাল্গুনী', 'বিদায় স্মরণে', 'পূবের হাওয়া', 'ঝড়', 'বধূবরণ' প্রভৃতি। তাঁর বিরুদ্ধে নানা কুৎসার জবাব দিতে কবি এই সময়েই 'আমার কৈফিয়ত' কবিতাটি লেখেন। কৃষ্ণনগরেও তাঁর আর্থিক সংকট মোচন হল না। কিন্তু কবিতার স্রোতস্বিনী বইল সব কুল ছাপিয়ে। কৃষ্ণনগরেই কবি বহু বিখ্যাত কবিতার সাথে 'কুহেলিকা' ও 'মৃত্যু ক্ষুধা' উপন্যাস লেখেন। এই সময়েই তিনি 'গণবাণী' পত্রিকায় 'রেডফ্লাগ' ও 'আন্তর্জাতিকে'র অনুবাদ প্রকাশ করেন। নিরন্ন নিপীড়িত উৎপীড়িতের দুঃখ বেদনাকে ফুটিয়ে তোলেন তাঁর রচনাগুলিতে। 'ফনিমনসা', 'সর্বহারা', 'প্রলয় শিখা','সন্ধ্যা' প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ তার সাক্ষ্য বহন করে। এতসত্বেও কবিকে প্রায় শূন্য হাতে কৃষ্ণনগর ত্যাগ করে কলকাতায় আসতে হয়।
(তথ্যসূত্র: বিপ্লবী জনমত ম্যাগাজিন; নজরুল জন্মশতবার্ষিকী সংখ্যা)
#সত্যেরপথ #মহানশিক্ষা #নজরুল #অনুপ্রেরণা