27/08/2025
ধলহারাতে প্রথমবারের মতো গণেশ পূজার শুভ সূচনা : ভক্তিমুখর পরিবেশে জমকালো আয়োজন
নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশপুর
কেশপুর থানার ১৩ নম্বর অঞ্চলের ধলহারাতে এবার প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো গণেশ পূজা। গ্রামের একদল উৎসাহী যুবকের উদ্যোগে আয়োজিত এই পূজোয় গ্রামজুড়ে বিরাজ করছিল এক অনন্য আনন্দমুখর পরিবেশ। ভক্তদের ঢল, সাজসজ্জার বাহার এবং আয়োজনের জাঁকজমক দেখে মনে হচ্ছিল, ছোট্ট এই গ্রামটি যেন পরিণত হয়েছে উৎসবের এক মিলনমেলায়।
গতকাল সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজোর সূচনা হয়। কেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অমিত মুখার্জি ফিতে কেটে এই গণেশ পূজার শুভ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, পূজা কমিটির সদস্য, গ্রামবাসী ও বহু দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্তদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
আজ সকালে ঠিক সকাল সাতটায় গ্রামবাসী ও ভক্তদের অংশগ্রহণে আয়োজিত হয় এক বর্ণাঢ্য নগর পরিক্রমা। শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, ঢাকের বাদ্য এবং ভক্তিমূলক গান-বাজনার মধ্যে দিয়ে শোভাযাত্রাটি গ্রামের প্রধান রাস্তা অতিক্রম করে বাবা বটেশ্বর মন্দিরের পুকুরে পৌঁছায়। সেখানে ধর্মীয় আচার মেনে পুকুরের জল সংগ্রহ করে ঘট উত্তোলনের মাধ্যমে পূজোর মূল আচার শুরু হয়। গ্রামের যুবকেরা সজ্জিত ধুপ, প্রদীপ ও ফুলের থালা নিয়ে শোভাযাত্রায় সামিল হন।
পুজো সফল করতে গ্রামের মানুষ একযোগে এগিয়ে এসেছেন। কেউ ঠাকুরের উপকরণ, কেউ আবার অন্ন ও বস্ত্র দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। পুজো মণ্ডপ সাজাতে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা গেছে অপরিসীম উদ্দীপনা। আলোকসজ্জা, ফুলের তোড়া ও রঙিন ব্যানারে সজ্জিত মণ্ডপে ভক্তদের ভিড় ছিল উপচে পড়া। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম দিনের আরতি, যেখানে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকলে মিলিত হয়ে প্রার্থনায় অংশ নেন।
পূজা উপলক্ষে কমিটির পক্ষ থেকে প্রায় ১,০০০ ভক্তকে নাড়ু বিতরণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পূজায় আগত ভক্তদের জন্য ছিল বিশেষ মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন। গ্রামের রাস্তার পথচারী থেকে শুরু করে দূরদূরান্ত থেকে আগত পূণ্যার্থীদেরও খিচুড়ির ভোগ খাওয়ানো হয়। পুজোর আয়োজনকারীদের মধ্যে ছিল এক ধরনের আন্তরিকতা ও ভক্তদের প্রতি শ্রদ্ধার ছাপ।
পুজো আয়োজন কমিটির সভাপতি প্রদীপ ঘোষ আনন্দ প্রকাশ করে বলেন,
“এই প্রথমবার আমরা ধলহারাতে গণেশ পূজা আয়োজন করলাম। গ্রামবাসীদের সাহায্য ও সহযোগিতায় যে পরিমাণ সমর্থন পেয়েছি, তা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আগামী বছর থেকে আমরা এই পূজো আরও বড় করে, আরও জাঁকজমকপূর্ণভাবে করার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমরা চাই এই পূজা শুধু ধলহারায় নয়, কেশপুরের অন্যান্য গ্রামেও এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক।”
পূজা আয়োজন কমিটির পক্ষ থেকে ধলহারার প্রতিটি পরিবার, প্রত্যেক দাতা ও স্বেচ্ছাসেবককে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। যারা ঠাকুর, অন্ন, বস্ত্র, শ্রম ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সহায়তায়ই সম্ভব হয়েছে এই বিশাল আয়োজন।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই গণেশ পূজোকে ঘিরে ধলহারার গ্রামে যে মিলনমেলার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে আগামী দিনের জন্য এক নতুন প্রেরণা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, “এমন আনন্দ, এমন উৎসব এর আগে আমাদের গ্রামে দেখা যায়নি। এবার থেকে প্রতিবছরই আরও বড় পরিসরে গণপতি বাপ্পার আগমন উদ্যাপন করা হবে।”