11/03/2024
মীরার স্বপ্ন পূরণ
❤️🤍❤️
একটি মেয়ে ছিলো তার নাম মিরা, সে ছবি আঁকতে খুব ভালোবাসত, তার ইচ্ছে ছিলো সে অনেক বড়ো চিত্র শিল্পী হবে। কিন্তু তার বাবা ছিলো একজন ছোটো খাটো সাধারণ ব্যাবসায়ী, আর মা ছিলো গৃহিণী তিনি ছিলেন একজন উচ্চ শিক্ষিতা মহিলা, তার বাবার বাড়ীর পরিস্থিিতির চাপে পড়ে সে আর চাকরি করতে পারেনি , বিয়ে হয়ে যায় তার গ্রামে সেখানে মেয়েদের চাকরি বাকরি করা সমাজের চক্ষে খারাপ, তাই আর সে চাকরী করতে পারলো না, এখন সে একজন গৃহিণী, বাড়ীর কাজ কর্ম করে আর কয়েক টা টিউশন পড়িয়ে তার দিন চলে যায়,আর তার একটা ভাই ছিলো সে ছিলো জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী, মীরা ছিলো ক্লাস টুয়েলভ এর ছাত্রী, লেখা পড়াতেও, যেমন সুন্দর ছিলো, তেমনিই ছবি আঁকতেও তার দারুন প্রতিভা ছিলো, সে চায় সে ছবি আঁকা নিয়েই এগবে ভবিষ্যতে। কিন্তু টাকারও তো প্রযোজন , তার বাবা যেহেতু সামান্য রোজকারের উপর দিয়ে সংসার চালায় এতে তো আর তার ইচ্ছে পূরন হবে না তাকে কিছু তো একটা করতেই হবে তার ইচ্ছে পূরণের জন্য এবং ভাই তার অসুস্থ বৃদ্ধ বয়সে তার বাবা, মা কে কে দেখবে এইসব নিয়ে সে সবসময় ভাবতো। একদিন সে স্কুল থেকে বাড়ী ফিরে যাওয়ার পথে তার কানে আসে একটা মাইকের আওয়াজ গাড়িতে করে অনাউন্স হচ্ছে যে তাদের বাড়ীর সামনে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বড়ো অঙ্কন প্রতিযোগিতা হবে অনেক বড়ো বড়ো শিল্পীরা আসবে, যে এই প্রতিযোগিতা তে প্রথম স্থান অর্জন করতে পারবে তাকে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে এবং বিনামুল্যে আর্ট কলেজের ভর্তির সুযোগ পাবে। এটা শুনা মাত্রই , মীরা আনন্দে আত্মহারা, এটাই তার সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না, সে ভাবে যে সে সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। যদি সে প্রথম হতে পারে তার ভাইয়ের চিকিৎসাও করতে পারবে, আর তার ইচ্ছেপূরণ করতে পারবে। সেই মতোই সে কাজ করলো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করানোর জন্য নাম নথিভুক্ত করে দিলো, আর দুদিন পরই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে মীরা ভয়ও পাচ্ছে সে পারবে কিনা, দেখতে দেখতে দুদিন পার হয়ে গেল মীরা গিয়েছে সেই প্রতিযোগিতায়, বাইরে থেকে অনেক নামকরা সব শিল্পী এসেছে, এবং তার মতো আরো কতো প্রতিযোগী , এইসব দেখে মীরা একটু নার্ভাস হয়ে যায়, আর ভাবতে থাকে আমি কি পারবো?তারই মধ্যে সেখানের একজন শিল্পী মীরাকে লক্ষ করে আর দেখে যে সে ভয় পাচ্ছে, তিনি মীরার কাছে এগিয়ে গিয়ে তাকে বলে, মামনি তুমি কি ভয় পাচ্ছো? মীরা হালকা মাথা নেড়ে বললো নাহ, সেই শিল্পীর নাম দিলীপ মল্লিক, তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেলেন তুমি ভয় পেওনা, তুমি পারবে, তারপর তার নাম জিজ্ঞেস করলো এবং বললো তুমি বাড়ি যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে একবার দেখা করবে, এই বলে তিনি চলে গেলেন, প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো সবাই আঁকতে শুরু করে দিয়েছে, অঙ্কন শেষের পর, সেই ব্যক্তির কথা মতো মীরা তার সাথে দেখা করতে যায়, লোকটি মীরা তার সাথে দেখা করতে গিয়েছে দেখে তিনি খুব খুশি হলেন, তিনি কলকাতার একজন নামকরা শিল্পী, তার স্ত্রী সন্তান একটা অ্যাকসিডেন্ট এ মারা গেছে এখণ তিনি একাই থাকেন। তার ইচ্ছে ছিলো তার মেয়েকেও সে তার মতো একজন চিত্র শিল্পী করবে কিন্তু সে ইচ্ছে তার পূরণ হলো না, তিনি মীরার মধ্যেই যেনো তার মেয়ে কে দেখতে পেলো, মীরার প্রতি তার কেমন যেন একটা মায়া কাজ করছিলো, মনে হচ্ছিলো তার মিঠাই যেনো তার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, দিলীপ মল্লিক এর মেয়ের নাম ছিলো মিঠাই, মীরা যেনো হুবহু তার মেয়ে মীরার মতোই দেখতে, তার চোখে একটু হালকা জল এলো মীরা কে দেখে এবং তার পরিবার সমন্ধে জানতে চাইলে মিরা তার পরিবার এর কথা বললো, তিনি বললেন মা তুমি আমার ফোন নাম্বার টা রাখো যদি কখনো তোমার প্রযোজন হয় আমার এই নম্বরে যোগযোগ করবে , কখনো যদি কোনো সাহায্যর প্রয়জন হয় আমাকে জানিও, ,মিরা লোকটির দিকে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল এবং একটি প্রণাম করলো, তারপর তিনি মীরাকে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিলো, মীরাও হালকা হেসে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিলো, ওই প্রতিযোগীতার ফলাফল ঘোষণা করা হবে দুই সপ্তাহ পর, তাদের মধ্যে কি সে সেরা হতে পারবে? জানতে হলে শুনতে থাকুন,
তারপর মীরা বাড়ী ফিরে আসার সময় দেখে রাস্তার একটা অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে , দেখে সেই গাড়ির পেছনে তার পাড়ার দুজন কাকু বাইক নিয়ে সেই গাড়ীর পেছনে যাচ্ছে, হটাত তাকে দেখে গাড়ি থামিয়ে দেয়, আর বলে মিরা তুই তাড়াতা়রি বাড়ি যা, এই কথা শুনে মিরা কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেল আর তাড়াতাড়ি করে বাড়ি গেলো, বাড়ি তে গিয়ে দেখে তাদের বাড়িতে অনেক লোক জড়ো হয়ে ছে, আর তার মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে মাটিতে আর তার ভাই কাঁদছে, আর কয়েক জন পাড়ার মহিলা তার মায়ের চোখে মুখে জল ছিটাছে, জ্ঞান ফেরাবার জন্য, এইসব দেখে সে তো আরো ঘাবড়ে যায় আর ভয় পেয়ে যাই, কি হয়েছে বুজতে পারছে না, আর তার বাবাকেও সে বাড়িতে দেখতে পাচ্ছে না, তারপর সে সেই মহিলা দের জিজ্ঞেস করলো কি হয়ছে? তাদের মধ্যে একজন কাদতে কাদতে বললো সর্বনাশ হয়ে গেছে রে তোর বাবার accident হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, বাঁচানো যাবে কিনা জানি না, আর তোর মা এই শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেচ্ছে, এই শুনে মিরা কাদতে শুরু করে দিলো, কি করবে সে এবার ভেবে পাচ্ছে না, কিছুক্ষন পর তার মায়ের জ্ঞান ফিরলো , তারপর তারা হাসপাতালে গেলো তার বাবাকে দেখতে, হাসপাতালে গিয়ে দেখে তাদের পাড়ার সেই দুটো কাকু অপ্রেশন থিয়েটার এর বাইরে বসে আছে, মীরা ছুট্টে গিয়ে বলে আমার বাবা কোথায়, তারা বললো যে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার একটু পর ডক্টর বেরিয়ে এসে বললেন I'm sorry, মীরা বললো কি হয়েছে ডক্টর বাবু আমার বাবা কেমন আছে, ডক্টর বললেন আমি দুঃখিত very critical condition ছিলো, উনাকে বাঁচাতে পারলাম না, এটা শুনে সে কান্নায় ভেঙে পড়লো, তার বাবাকে সে খুব ভালোবাসত, তারপর তারা তার বাবাকে বাড়িতে নিয়ে গেলো, আর শেষকাজ করলো,তার ভাই অসুস্থ থাকার জন্য তাকেই তার বাবার শেষ কাজ করতে হলো, আর কিছুদিন পরই তার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, তারপর আবার তার মা, ভাই কে দেখতে হবে এইসব নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে যায় সে, কি করে কি করবে, সে ভাবলো যে তার বাবার ব্যাবসা টা সে শুরু করবে নাহলে সংসার টা কীভাবে চলবে, তারপর সে তার পড়াশোনার পাশাপাশি তার বাবার ব্যাবসা টাও দেখতো, আর কালকেই তার সেই অঙ্কন প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হবে, তারপর দিন সকালে সে সেইখানে পৌঁছে যায় আর ভাবে এতো জন প্রতিযোগীর মধ্যে আমি মনে হয় প্রথম স্থান অর্জন করতে পারব না, আজকেও সেইদিনের সব শিল্পীরা এসেছে, আর সেই দিলীপ মল্লিক মহাশয় ও এসেছেন। এবার ফলাফল ঘোষণার পালা, আগে তৃতীয় স্থান অধিকারীর নাম ঘোষণা করা হলো, তারপর দ্বিতীয় জনের, এবার প্রথম স্থান অধিকারীর নাম ঘোষণা করা হবে মীরার বুক ধক ধক করছে, কে প্রথম হয়েছে ভাবছে, আর তারই মধ্যে ঘোষণা হলো প্রথম স্থান অধিকার করেছে মিরা সরকার। মীরা শুনে পুরো কান্না করে দিয়েছে, সে ভাবতেই পারেনি এটা, আর সে 1 লক্ষ টাকা পুরস্কার পেলো এবং সঙ্গে বিনামূল্যে আর্ট কলেজে ভর্তির সুযোগ। এ যেনো দুঃখের মধ্যেও একটা আনন্দের সংবাদ, তারপর তার সামনে এসে দাঁড়ায় দিলীপ মল্লিক, তিনি বললেন মা আমি সব জানি তোমার ব্যাপারে, তোমার উপর দিয়ে কতো টা ঝড় গিয়েছে আমি সব জানি, আসার সময় এই এলাকার মানুষদের মুখে শুনেছি, এবং তোমার প্রতিভা সম্পর্কেও শুনেছি, তুমি চিন্তা করো না, আমি তোমার পাশে আছি তুমি আমার মেয়ের মতন। মা রে তোর মধ্যে আমি আমার মেয়ে কে খুঁজে পেয়েছি, আজ থেকে তুই আমার মেয়ে, এটা শুনে মীরাও কেঁদে ফেললো, তারপর তিনি মীরাকে বললেন তোর আর তোর পরিবারের দায়িত্ব আমি নিলাম, তুই আমার সাথে কলকাতায় চল, মিরা তার মা আর তার ভাইকে নিয়ে কলকাতায় চলে গেল এবংসেখানে একটি বাড়ী ভাড়া করে তার মা ও ভাইকে নিয়ে থাকার জন্য, দিলীপ বাবু তার মায়ের জন্যে একটি চাকরির ব্যাবস্থা করে দেয়, তার মা একটা চাকরী পেয়ে গেলো এবং সে আর্ট কলেজে ভর্তি হয়ে গেল, আর তার সেই পুরস্কারে টাকায় এবং দিলীপ বাবুর সাহায্যে তার ভাইয়ের চিকিৎসাও করালো , এবং তার ভাইকে একটি ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো। কিছু বছর পর সে একজন নামকরা শিল্পী হয়ে যায়, তারপর সে একজন ডক্টর কে বিয়ে করে নেয়, তাকে এখণ এক ডাকে সবাই চিনে চিত্রশিল্পী মিরা সরকার। সত্যি এইসব কিছু সম্ভব হলো সেই ভগবান রূপি সেই দিলীপ মল্লিক এর জন্য, নাহলে আজ সে এই পর্যায়ে আসতে পারতো না, উনার মধ্যে সে তার বাবাকে দেখতে পায়।
Written by-Hira Bid