
19/09/2025
" গুমনামী বাবার ডি.এন.এ. রিপোর্ট জানাজানি হলে দেশে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হবে ... "
অভিষেক হালদারঃ নেতাজীর অন্তর্ধান সম্পর্কিত ভারত সরকারের তৃতীয় ও সর্বশেষ তদন্ত কমিশন জাস্টিস মনোজ মুখার্জীর নেতৃত্বাধীন মুখার্জী কমিশন' ১৯৪৫ সালের ১৮ ই আগস্ট তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু ঘটেনি' দাবি করার পাশাপাশি' অন্তর্ধানের পর নেতাজী কোথায় গেলেন এই বিষয়েও কিছুদূর তদন্ত চালিয়েছিল। কিন্তু, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের চূড়ান্ত অসহযোগিতা তদন্তকে ফলপ্রসূ হতে দেয়নি। এমনকি, মুখার্জী কমিশনের রিপোর্ট কংগ্রেস সরকার গ্রহণ পর্যন্ত করেনি। যাই হোক, মুখার্জী কমিশনের তদন্তে উঠে আসে উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদের অযোধ্যার এক সন্ন্যাসীর নাম -'ভগবানজি',
মিডিয়া যাকে নাম দেয় --- 'গুমনামী বাবা'। এই সন্ন্যাসীকে স্থানীয়রা আত্মগোপনে থাকা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলে জানতেন। এমনকি, ১৯৪১ সালের ১৭ ই জানুয়ারি গভীর রাতে সুভাষ এলগিন রোডের বাড়ি থেকে বেপাত্তা হওয়ার আগে সুভাষের রাজনৈতিক জীবনে যারা সহকর্মী ছিলেন তাদের একাংশ এই সন্ন্যাসীর সাথে যোগাযোগ রেখে চলতেন এবং এই বাঙালি সন্ন্যাসীর জন্মদিনে ২৩ শে জানুয়ারি এককালের সুভাষ ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সন্ন্যাসীর ডেরায় হাজির হতেন। ১৯৮৫ সালের ১৬ ই সেপ্টেম্বর লোকচক্ষুর আড়ালে স্বাধীন ভারতে প্রায় তিন তিনটে দশক কাটানো সন্ন্যাসীর মহাপ্রস্থানের পর রামভবনে তাঁর ঘরে একটি দেশলাই বাক্সে পাওয়া দাঁতের ডি.এন.এ. পরীক্ষা তদন্তকারী জাস্টিস মুখার্জী কলকাতা ও হায়দ্রাবাদের সরকারী ল্যাবরেটরি থেকে করিয়েছিলেন। হায়দ্রাবাদের ল্যাবরেটরি জানিয়েছিল যে পর্যাপ্ত নমুনা না পাওয়া যাওয়ায় কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে, কলকাতার ল্যাবরেটরি জানায় যে নমুনা নেতাজী পরিবারের ডি.এন.এ. 'র সাথে মিলছে না। এই কারণেই, জাস্টিস মুখার্জী তাঁর রিপোর্টে ১৯৪৫ সালের ১৮ ই আগস্ট নেতাজীর বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তত্ত্বের মিথ্যা ফানুসকে উড়িয়ে দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও নেতাজীর অন্তিম পরিণতি সম্পর্কে কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। যদিও, নেতাজি গবেষক অম্লান কুসুম ঘোষ এর তথ্যচিত্র 'ব্ল্যাকবক্স অব হিস্ট্রি'তে ক্যামেরার সামনে জাস্টিস মুখার্জী তথাকথিত গুমনামী বাবা সম্পর্কে মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন --- "আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর উনিই নেতাজী।" গত ২০২০ সালে মিশন নেতাজীর সদস্য নেতাজি অনুরাগী সায়ক সেনের আরটিভি এর জবাবে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার জানায় যে গুমনামী বাবার ডি.এন.এ. রিপোর্টের ইলেক্ট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
ইলেক্ট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট কি ?
এটা অনেকটা এক্স রে রিপোর্টের প্লেটের মত। অর্থাৎ, নমুনা পরীক্ষার পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট যার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এখন এই রিপোর্টটি পাওয়া যাচ্ছে না এই কথার দুটো অর্থ হতে পারে --- মুখার্জী কমিশনের তদন্তকালে কলকাতার কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরি আদতে পরীক্ষাটি না করেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল। সেসময় পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এসেছিল এবং সরকারের চাপে নেগেটিভ রিপোর্ট প্রকাশ করতে হয়েছিল। তাই, আজ ইলেক্ট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্টটি চেপে যাওয়া হচ্ছে।
গতকাল সায়কের আরেকটি আর.টি.আই. এর জবাবে সরকারের জবাবের মধ্যে দ্বিতীয় সম্ভাবনার ইঙ্গিত স্পষ্ট।অর্থাৎ, মুখার্জী কমিশনের তদন্তকালে কলকাতার ল্যাবরেটরিতে গুমনামী বাবা ও নেতাজীর ডি.এন.এ. হুবহু মিলে গিয়েছিল। সেইজন্যেই, সরকারের চাপে কলকাতার ল্যাবরেটরি তদন্ত কমিশনের কাছে মিথ্যে রিপোর্ট পেশ করেছিল। আর, আজ সরকার 'গুমনামী বাবাই নেতাজি' এই সত্যটি সরাসরি বলতে না পেরে পরোক্ষভাবে বলছে --- "গুমনামী বাবার ডি.এন.এ. রিপোর্ট জানাজানি হলে দেশে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হবে ... "