14/03/2025
কীভাবে পালন করবেন গৌর পূর্ণিমা ব্রত?
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কলিযুগে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু রূপে এসেছেন। এই বিষয়ে বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, তন্ত্র, স্মৃতি শাস্ত্রে নানা ভবিষ্যৎবাণী মহাপ্রভুর আবির্ভাবের আগেই প্রদত্ত হয়েছে। (এই পোস্টের কমেন্টে তা উল্লেখ করা হয়েছে) অতএব শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু যেহেতু স্বয়ং কৃষ্ণ, তাই তাঁর আবির্ভাব তিথি পালন করাও কৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি পালনের মতো গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি কৃষ্ণের থেকে মহাপ্রভু অধিক কৃপালু বলে, এই উৎসব পালনের কোনো বিকল্প নেই।
তাই যারা কেবল দোলপূর্ণিমা পালন করবেন, অথচ গৌর পূর্ণিমা কীভাবে পালন করতে হয় বিষয়ে অনভিজ্ঞ, তাদের জন্য আজকের আলোচনা।
গৌর পূর্ণিমা ব্রত পালন কর্তব্য কেন?
ভগবানের আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে ব্রত ও উৎসব পালন করা সকলেরই কর্তব্য। যেহেতু শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, তাই গৌর পূর্ণিমা ব্রত পালন অবশ্য করণীয়।
কারা এই ব্রত পালন করতে পারে?
১. ৮ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত কলের জন্যেই একাদশী এবং অন্যান্য বিষ্ণুব্রত পালন বাধ্যতামূলক।
২. কোনো রকম অশৌচ থাকলেও এই ব্রত পালন করতে হব। পদ্মপুরাণে [উত্তরখণ্ড, ৫১।৭-৮] বলা হয়েছে,
সূতকেঽপি ন ভোক্তব্যং নাশৌচ চ জনাধিপ।
যাবজ্জীবং ব্রতমিদং কর্ত্তব্যং পুরুষর্ষভ॥
~“জন্মাশৌচ বা মৃতাশৌচেও বিষ্ণুব্রতে ভোজন করিবে না। হে পুরুষশ্রেষ্ঠ! যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন এ বিষ্ণুব্রত পালন করা কর্তব্য।”
কখন ও কতক্ষণ এই ব্রত পালন করতে হয়?
যেহেতু পরমেশ্বর ভগবান শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু দোলপূর্ণিমা তিথিতে সন্ধ্যায় আবির্ভূত হয়েছেন, তাই শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি জন্মাষ্টমীর মতো গৌর পূর্ণিমা তিথিও একাদশীর মতোই পালন করতে হবে। উত্তম বিধি হলো, পরদিন সকাল পর্যন্ত নির্জলা ব্রত, অন্যথায় পর্যন্ত কমপক্ষে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস পালন করতে হবে। এরপর অনুকল্প গ্রহণ করা যাবে। যারা একান্তই অসমর্থ তারা একাদশীর মতোই পালন করতে পারেন।
শিশু, বৃদ্ধ, নির্জলায় অসমর্থ, গর্ভবতী ও অসুস্থদের জন্য কী বিধান?
মহাভারতে [উদ্যোগপর্ব, ৩৯।৭০] বলা হয়েছে,
অষ্টৈতান্যব্ৰতঘ্নানি আপো মূলং ফলং পয়ঃ।
হরির্ব্রাহ্মণকাম্যা চ গুরোর্বচনমৌষধম্॥
~ ফল, মূল, ক্ষীর, ঘৃত, ব্রাহ্মণের নির্দেশ, গুরুর বচন ও ঔষধ এই আটটি ব্রত-নাশক নহে।
অতএব শিশু, বৃদ্ধ, নির্জলায় অসমর্থ, গর্ভবতী ও অসুস্থরা ফল-জল প্রভৃতি অনুকল্প গ্রহণ করে উপবাস করতে পারবেন। এমনকি অসুস্থরা প্রয়োজনীয় ঔষধও সেবন করতে পারবেন। এছাড়াও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বর্ণিত হয়েছে, উপবাসাসমৰ্থশ্চ ফলমূলজলং পিবেৎ। অর্থাৎ, উপবাসে অসমর্থ হইলে, ফল-মূল ভোজন ও জল পান করিবেন।
• উপবাসে কি কি নিয়ম পালন করতে হবে?
১. আগের দিন রাতে তাড়াতাড়ি আহার করা ও নিদ্রা যাওয়া।
২. (যারা নিরামিষ ভোজী নন) তাদের উচিত আগেরদিন নিরামিষ গ্রহণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
৩. গৌর পূর্ণিমার দিন যত দ্রুত সম্ভব ঘূম থেকে উঠে পড়া। ব্রাহ্মমুহূর্ত হলো সর্বোত্তম। অন্যথায় সূর্যোদয়ের সময় উঠতে চেষ্টা করতে হবে।
৪. সকালেই স্নান সমাপন করে ভগবানের হরে কৃষ্ণ কীর্তন করতে করতে মঙ্গল আরতি করা।
৫. তুলসী পূজা ও জলদান করা।
৬. শ্রীশিক্ষাষ্টকম্ পাঠ করা
৭. শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ যেন সকলেই হরে কৃষ্ণ জপ ও কীর্তন করে, তাই জপ মালায় আজ বেশি বেশি হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করা এবং কীর্তন করা।
৮. সাধুদের মুখে (সরাসরি সম্ভব না হলে অনলাইনেও সম্ভব, যেমন ইউটিউবে Mayapur TV Bangla) শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর লীলাকথা শ্রবণ করা।
৯. এভাবে গৌর স্মরণ, গৌর কীর্তন করে দিন অতিবাহিত করা, সম্ভব হলে নিকটবর্তী মন্দিরে গিয়ে ভক্তসঙ্গ করা।
১০. সন্ধ্যায় সম্ভব হলে গৌর নিত্যানন্দের শ্রী বিগ্রহ বা চিত্রপটে পঞ্চামৃত দ্বারা অভিষেক করা অথবা মন্দিরে অভিষেক দর্শন করা।
১১. অভিষেকের পর অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করা যাবে।
১২. অভিষেকাদি অনুষ্ঠানের সময় হরে কৃষ্ণ কীর্তন করা।
তাহলে আবির খেলব কখন?
আবির ভগবানের শ্রী চরণে নিবেদন করে নিজেরা এক অপরের মস্তকে লাগিয়ে দেওয়ার বিধান। সকালে বা বিকালে শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ ও শ্রীশ্রী গৌর-নিতাইয়ের চরণে আবির নিবেদন করা যেতে পারে।
পরদিন বিশেষ কিছু?
তযেহেতু শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের পরদিন তাঁর পিতা শ্রীল জগন্নাথ মিশ্র মহোৎসব করেছিলেন, তাই পরদিন মহাপ্রভুর প্রিয় নানা শাক-সবজি ব্যাঞ্জন রান্না করে ভোগ নিবেদন করে গ্রহণ করতে হবে।
সর্বোপরি যত বেশি সম্ভব হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করতে হবে। কেননা এর দ্বারাই শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু সবথেকে বেশি সন্তুষ্ট হন। বিশেষত এই দুইদিন যা করা যেতে পারে —
১. প্রতিদিনের তুলনায় বেশি সংখ্যক হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করা। যেমন কেউ ১৬ মালা জপ করেন, তিনি ২৪, ৩২, ৬৪ বা এরকম করতে পারেন। আবার যারা ৮ মালা জপ করেন তারাও ১২, ১৬, ২৪ ইত্যাদি করতে পারেন। এগুলো কেবল উদাহরণ হিসেবে বলা হলো। যাদের দিনব্যাপী সময় আছে, তারা অবশ্যই বেশি বেশি
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতে পারেন।
২. একাকী অথবা ভক্তসঙ্গে হরে কৃষ্ণ কীর্তন করতে পারেন।
৩. গৃহে অথবা মন্দিরে নাম সংকীর্তনে অংশ নিতে পারেন।
৪. পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে গৃহে সংকীর্তন, নগর সংকীর্তন করতে পারেন।
৫. সাধু মুখে হরি কথা শুনতে হবে।
৬. অভিষেক প্রভৃতি অনুষ্ঠানের সময়েও হরে কৃষ্ণ কীর্তন করতে হবে।